Recitation । তেলাওয়াত
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে
١ يٰاَ يُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اَوْفُوْا بِالْعُقُوْدِ ۚ اُحِلَّتْ لَكُمْ بَهِيْمَةُ الْاَنْعَامِ اِلَّا مَا يُتْلٰى عَلَيْكُمْ غَيْرَ مُحِلِّى الصَّيْدِ وَاَنْتُمْ حُرُمٌ ۗ اِنَّ اللّٰهَ يَحْكُمُ مَا يُرِيْدُ
১. হে ঈমানদার বান্দারা! তোমরা যারা ঈমান এনেছো তোমরা ওয়াদাসমূহ পূরণ করো ( মনে রেখো); তোমাদের জন্যে চার পা বিশিষ্ট পোষা জন্তু বৈধ করা হয়েছে, তবে সেসব জন্তু ব্যতীত, যা (বিবরণসহ একটু পরেই) তোমাদের পড়ে শোনানো হচ্ছে, ইহরাম (বাঁধা) অবস্থায় (কিন্তু এসব বৈধ জন্তু) শিকার করা বৈধ মনে করো না; (অবশ্যই) আল্লাহ পাক যা চান সে আদেশই তিন জারি করেন।
1. Oh you who believe ! fulfill (all) obligations. Lawful unto you (for food) are all beasts of cattle with the exceptions named: but animals of the chase are forbidden while you are in the sacred precincts or in the state of pilgrimage: for Allah doth command according to his will and plan.
٢ يٰاَ يُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُحِلُّوْا شَعَائِرَ اللّٰهِ وَلَا الشَّهْرَ الْحَرَامَ وَلَا الْهَدْىَ وَلَا الْقَلَائِدَ وَلَا اٰمِّيْنَ الْبَيْتَ الْحَرَامَ يَبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِّنْ رَّبِّهِمْ وَرِضْوَانًا ۚ وَاِذَا حَلَلْتُمْ فَاصْطَادُوْا ۚ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَاٰنُ قَوْمٍ اَنْ صَدُّوْكُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اَنْ تَعْتَدُوْا ۘ وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى ۖ وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوْا اللّٰهَ ۖ اِنَّ اللّٰهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
২. হে ঈমানদার বান্দারা! তোমরা মহান আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অসম্মান করো না, সম্মানিত মাসগুলোকেও (যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্যে) কখনো বৈধ বানিয়ে নিয়ো না, (আল্লাহর নামে উৎসর্গীকৃত জন্তুসমূহ ও যেসব জন্তুর গলায় (উৎসর্গের চিহ্ন হিসাবে) পট্টি বেধে দেয়া হয়েছে, যারা মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে আল্লাহর পবিত্র (কাবা) ঘরের দিকে রওয়ানা দিয়েছে (তাদের তোমরা অসম্মান করো না), তোমরা যখন ইহরামমুক্ত হবে তখন তোমরা শিকার করতে পারো, (বিশেষ) কোনো একটি জাতির বিদ্বেষ-(এমন বিদ্বেষ যার জন্যে) তারা তোমাদের আল্লাহ পাকের পবিত্র মসজিদে আসার পথ বন্ধ করে দিয়েছিল, যেন তোমাদের (কোনো রকম) সীমালঙ্ঘন করতে প্ররোচিত না করে, তোমরা (শুধু) নেক কাজ ও তাকওয়ার ব্যাপারেই একে অন্যের সহযোগিতা করো, পাপ ও বাড়াবাড়ির কাজে (কখনো) একে অপরের সহযোগিতা করো না, সর্বাবস্থায়ই আল্লাহ পাককে ভয় কারো, কারণ আল্লাহ পাক (পাপের) দন্ডদানের ব্যাপারে অত্যান্ত কঠোর!
2. Oh you who believe! violate not the sanctity of the rites of Allah, nor of the sacred month, nor of the animals brought for sacrifice, nor the garlands that mark out such animals, nor the people resorting to the sacred House, seeking of the bounty and good pleasure of their Lord, But when you are clear of the sacred precincts and of the state of pilgrimage, you may hunt and let not the hatred of some people in (once) shutting you out of the sacred mosque lead you to transgression (and hostility on your part), Help you one another in righteousness and piety, but help you not one another in sin and rancour: fear Allah: for Allah is strict in punishment.
Spelling check needed
৩. মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত ও যে জন্তু আল্লাহ পাক ব্যতীত অন্য কারো নামে যবাই (কিংবা উৎসর্গ) করা হয়েছে, (তা সবই) তোমাদের ওপর অবৈধ করা হয়েছে, শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরা, আঘাত খেয়ে মরা, ওপর থেকে পড়ে মরা, শিংয়ের আঘাতে মরা, হিংস্র জন্তুর খাওয়া জন্তুও (তোমাদের জন্যে অবৈধ), তবে তোমরা তা যদি (জীবিত অবস্থায় পেয়ে) যবাই করে থাকো (তাহলে তা অবৈধ নয়)। পূজার বেদীতে বলি দেয়া জন্তুও অবৈধ, (লটারী কিংবা) জুয়ার তীর নিক্ষেপ করে ভাগ্য নির্ণয় করা (হারাম), এর সব কয়টাই হচ্ছে বড়া গুনাহের কাজ, আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীন (নির্মূল করা) সম্পর্কে হতাশ হয়ে পড়েছে, সুতরাং তোমরা তাদের ভয় করো না, বরং আমাকেই ভয় করো; আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম, আর তোমাদের ওপর আমার (প্রতিশ্রুত) নেয়ামতও আমি পূর্ণ করে দিলাম, তোমোদের জন্যে জীবন বিধান হিসাবে আমি ইসলামকেই মনোনীত করলাম; (হারামের ব্যাপারে মনে রেখো,) যদি কোনো ব্যক্তিকে ক্ষুধার তাড়নায় (অবৈধ কেতে) বাধ্য করা হয়, কিন্তু (ইচ্ছা করে) সে কোনো পাপের দিকে ঝুঁকে পড়তে না চায় (তার ব্যাপারটা ভিন্ন), অবশ্যই আল্লাহ পাক ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
৪. তারা আপনার নিকট থেকে জানতে চায় কোন কোন জিনিস তাদের জন্যে হালাল করা হয়েছে? আপনি (তাদের) বলুন, সব ধরনের পাক-সাফ বস্তুই ৯তোমাদের জন্যে) বৈধ করা হয়েছে এবং সেসব শিকারীর (জন্তু ও পাখীর) ধরে আনা (জন্তু এবং পাখী)-ও তোমরা খাও, যাদের তোমরা (শিকার করার নিয়ম) শিক্ষা দিয়েছো, যেবাবে আল্লাহ পাক তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, (তবে) এর ওপর অবশ্যই আল্লাহ পাকের নাম নেবে, তোমরা মহান আল্লাহকেই ভয় করো; আল্লাহ পাক দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
৫. আজ তোমাদের জন্যে সমস্ত পাক জিনিস হালাল করা হলো; যাদের ওপর আল্লাহর কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে তাদের খাবারও তোমাদের জন্যে হালাল, আবার তোমাদের খাদ্যদ্রব্যও তাদের জন্যে হালাল, (চরিত্রের) সংরক্ষিত দূর্গে অবস্থানকারী মু'মিন নারী ও তোমাদের আগে যাদের কিতাব দেয়া হয়েছিলো, যখন তোমরা (তাদের) মোহরানা আদায় করে দেবে, সেসব (আহলে কিতাব) সতী সাব্ধী নারীরাও (তখন তোমাদের জন্যে বৈধ হয়ে যাবে), তোমরা (থাকবে চরিত্রের) রক্ষক হয়ে, কামনা চরিতার্থ করে কিংবা গোপন অভিসারী (উপপত্নী) বানিয়ে নং; যে কেউই ঈমান অস্বীকার করবে, তার (জীবনের) সমস্ত কর্মই নিস্ফল হয়ে যাবে এবং শেষ বিচারের দিনে সে হবে (চরমভাবে) ক্ষতিগ্রস্তদের একজন।
৬. হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরা যখন নামাযের জন্যে দাঁড়াবে-তোমরা তোমাদের (পুরো) মুখমন্ডল ও কনুই পর্যন্ত তোমাদের হাত দুটো ধুয়ে নেবে, অতঃপর তোমাদের মাথা মাসেহ করবে এবং পা দুটো গোড়ালি পর্যন্ত (ধুয়ে নেবে,) কখনো যদি (এমন বেশী) নাপাক হয়ে যাও (যাতে গোসল করা ফরয হয়ে যায়), তাহলে (গোসল করে ভালোভাবে) পাক হয়ে নেবে, যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে পড়ো কিংবা তোমরা যদি সফরে থাকো, অথবা তোমাদের কেউ যদি মলমূত্র ত্যাগ করে আসে অথবা যদি নারী সম্ভোগ করে থাকো (তাহলে পানি দিয়ে পবত্রিতা অর্জন করো), আর যদি পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি নিয়ে তায়াম্মুম করে নাও, (আর তায়াম্মুমের নিয়ম হচ্ছে, সেই পবিত্র) মাটি দিয়ে তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত মাসে কে রনেবে; (মূলত) মহান আল্লাহ কখনো (পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে) তোমাদের কষ্ট দিতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পাক-পবিত্র করে দিতে এবং (এভাবেই) তিনি তোমাদের ওপর তাঁর নেয়ামতসমূহ পূর্ণ করে দিতে চান, যাতে করে তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারে।
৭. তোমাদের ওপর আল্লাহ পাকের নেয়ামতসমূহ তোমরা স্মরণ করো এবং তোমাদের নিকট থেকে যে পাকা প্রতিশ্রুতি তিনি গ্রহণ করেছিলেন )সে কথাও ভুলে যেয়ো না), যখন তোমরা (তাঁর সঙ্গে অঙ্গীকার করে) বলেচিলে (সে আমাদের প্রভু), আমরা (তোমার কথা) শুনলাম এবং (তা) মেনে নিলাম, তোমরা আল্লাহ পাক তোমাদের মনে যা কিছু আছে সে সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন।
Spelling check needed
৩. মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত ও যে জন্তু আল্লাহ পাক ব্যতীত অন্য কারো নামে যবাই (কিংবা উৎসর্গ) করা হয়েছে, (তা সবই) তোমাদের ওপর অবৈধ করা হয়েছে, শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরা, আঘাত খেয়ে মরা, ওপর থেকে পড়ে মরা, শিংয়ের আঘাতে মরা, হিংস্র জন্তুর খাওয়া জন্তুও (তোমাদের জন্যে অবৈধ), তবে তোমরা তা যদি (জীবিত অবস্থায় পেয়ে) যবাই করে থাকো (তাহলে তা অবৈধ নয়)। পূজার বেদীতে বলি দেয়া জন্তুও অবৈধ, (লটারী কিংবা) জুয়ার তীর নিক্ষেপ করে ভাগ্য নির্ণয় করা (হারাম), এর সব কয়টাই হচ্ছে বড়া গুনাহের কাজ, আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীন (নির্মূল করা) সম্পর্কে হতাশ হয়ে পড়েছে, সুতরাং তোমরা তাদের ভয় করো না, বরং আমাকেই ভয় করো; আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম, আর তোমাদের ওপর আমার (প্রতিশ্রুত) নেয়ামতও আমি পূর্ণ করে দিলাম, তোমোদের জন্যে জীবন বিধান হিসাবে আমি ইসলামকেই মনোনীত করলাম; (হারামের ব্যাপারে মনে রেখো,) যদি কোনো ব্যক্তিকে ক্ষুধার তাড়নায় (অবৈধ কেতে) বাধ্য করা হয়, কিন্তু (ইচ্ছা করে) সে কোনো পাপের দিকে ঝুঁকে পড়তে না চায় (তার ব্যাপারটা ভিন্ন), অবশ্যই আল্লাহ পাক ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
৪. তারা আপনার নিকট থেকে জানতে চায় কোন কোন জিনিস তাদের জন্যে হালাল করা হয়েছে? আপনি (তাদের) বলুন, সব ধরনের পাক-সাফ বস্তুই ৯তোমাদের জন্যে) বৈধ করা হয়েছে এবং সেসব শিকারীর (জন্তু ও পাখীর) ধরে আনা (জন্তু এবং পাখী)-ও তোমরা খাও, যাদের তোমরা (শিকার করার নিয়ম) শিক্ষা দিয়েছো, যেবাবে আল্লাহ পাক তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, (তবে) এর ওপর অবশ্যই আল্লাহ পাকের নাম নেবে, তোমরা মহান আল্লাহকেই ভয় করো; আল্লাহ পাক দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
৫. আজ তোমাদের জন্যে সমস্ত পাক জিনিস হালাল করা হলো; যাদের ওপর আল্লাহর কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে তাদের খাবারও তোমাদের জন্যে হালাল, আবার তোমাদের খাদ্যদ্রব্যও তাদের জন্যে হালাল, (চরিত্রের) সংরক্ষিত দূর্গে অবস্থানকারী মু'মিন নারী ও তোমাদের আগে যাদের কিতাব দেয়া হয়েছিলো, যখন তোমরা (তাদের) মোহরানা আদায় করে দেবে, সেসব (আহলে কিতাব) সতী সাব্ধী নারীরাও (তখন তোমাদের জন্যে বৈধ হয়ে যাবে), তোমরা (থাকবে চরিত্রের) রক্ষক হয়ে, কামনা চরিতার্থ করে কিংবা গোপন অভিসারী (উপপত্নী) বানিয়ে নং; যে কেউই ঈমান অস্বীকার করবে, তার (জীবনের) সমস্ত কর্মই নিস্ফল হয়ে যাবে এবং শেষ বিচারের দিনে সে হবে (চরমভাবে) ক্ষতিগ্রস্তদের একজন।
৬. হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরা যখন নামাযের জন্যে দাঁড়াবে-তোমরা তোমাদের (পুরো) মুখমন্ডল ও কনুই পর্যন্ত তোমাদের হাত দুটো ধুয়ে নেবে, অতঃপর তোমাদের মাথা মাসেহ করবে এবং পা দুটো গোড়ালি পর্যন্ত (ধুয়ে নেবে,) কখনো যদি (এমন বেশী) নাপাক হয়ে যাও (যাতে গোসল করা ফরয হয়ে যায়), তাহলে (গোসল করে ভালোভাবে) পাক হয়ে নেবে, যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে পড়ো কিংবা তোমরা যদি সফরে থাকো, অথবা তোমাদের কেউ যদি মলমূত্র ত্যাগ করে আসে অথবা যদি নারী সম্ভোগ করে থাকো (তাহলে পানি দিয়ে পবত্রিতা অর্জন করো), আর যদি পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি নিয়ে তায়াম্মুম করে নাও, (আর তায়াম্মুমের নিয়ম হচ্ছে, সেই পবিত্র) মাটি দিয়ে তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত মাসে কে রনেবে; (মূলত) মহান আল্লাহ কখনো (পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে) তোমাদের কষ্ট দিতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পাক-পবিত্র করে দিতে এবং (এভাবেই) তিনি তোমাদের ওপর তাঁর নেয়ামতসমূহ পূর্ণ করে দিতে চান, যাতে করে তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারে।
৭. তোমাদের ওপর আল্লাহ পাকের নেয়ামতসমূহ তোমরা স্মরণ করো এবং তোমাদের নিকট থেকে যে পাকা প্রতিশ্রুতি তিনি গ্রহণ করেছিলেন )সে কথাও ভুলে যেয়ো না), যখন তোমরা (তাঁর সঙ্গে অঙ্গীকার করে) বলেচিলে (সে আমাদের প্রভু), আমরা (তোমার কথা) শুনলাম এবং (তা) মেনে নিলাম, তোমরা আল্লাহ পাক তোমাদের মনে যা কিছু আছে সে সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন।
৮. হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা আল্লাহর জন্যে (সত্য ও) ন্যায়ের ওপর সাক্ষী হযে অবিচলভাবে দাঁড়িয়ে থাকো, (মনে রাখবে, বিশেষ) কোনো জাতির দুশমনী যেন তোমাদের এমনভাবে প্ররোচিত না করে যে, (এর ফলে) তোমরা (তাদের সাথে) ন্যায় ও ইনসাফ করবে না। তোমরা ন্যায়বিচার করো, কারণ এ (কাজ)-টি (আল্লাহ পাককে) ভয় করে চলার অধিক নিকটতর; তোমরা মহান আল্লাহ পাককে ভয় করো; অবশ্যই আল্লাহ পাক তোমাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞাত রয়েছেন।
৯. যারা ঈমান আনে এবং নেক কাজ করে, আল্লাহ পাক তাদের সবাইকে (এই বলে) প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন (যে,) তাদের জন্যে (তাঁর নিকট বিশেষ) মাফ ও মহাপুরস্কার রয়েছে।
১০. (অন্যদিকে) যারা কুফরী করেচে এবং আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করছে, তার সবাই হচ্ছে দোযখের অধিবাসী।
১১. হে ঈমানদার ব্যক্তিরা! তোমাদের ওপর আল্লাহর নেয়ামত স্মরণ করো, যখন একটি জনগোষ্ঠী তোমাদের বিরুদ্ধে হাত ওঠাতে উদ্যত হয়েচিলো, তখন আল্লাহ পাক তাদের সে তাহ তোমাদের ওপর (আক্রমণ করা) থেকে সংযক করে দিলেন, অতঃপর তোমরা আল্লাহ পাককে ভয় করো, মু'মিনদের তো আল্লাহ পাকের ওপরই বরসা করা উচিত।
১২. মহান আল্লাহ বনী ইসরাঈলদের (কাছ থেকে আনুগত্যের) অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন, অতঃপর আমি (এ কাজের জন্যে) তাদের মধ্য থেকে বারো জন সর্দার নিযুক্ত করলাম; আল্লাহ পাক তাদের বললেন, অবশ্যই আমি তোমাদরে সাথে আছি, তোমরা যদি নামায প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত আদায় করো, আমার রাসূলরে ওপর ঈমান আনো এবং (দ্বীনের কাজে যদি) তোমরা তাদের সাহায্য-সহযোগীতা করো, (সর্বোপরি) মহান আল্লাহকে তোমরা যদি উত্তম ঋণ প্রদান করো, তাহলে অবশ্যই আমি তোমাদের পাপসমূহ মোচন করে দেবো এব তোমাদের আমি এমন এক জান্নাতে প্রবেশ করোবো যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়, এরপর যদি কোনো ব্যক্তি (আল্লাহকে) অস্বীকার করে, তাহলে সে সরল পথ থেকে বিচ্যুত হযে পড়বে।
১৩. (অতঃপর) তাদের সে অঙ্গীকার ভংগ করার জন্যে আমি তাদের ওপর অভিশাপ অবতীর্ণ করেচি এবং তাদের হ্রদয় কঠিন করে দিয়েছি (তাদের চরিত্রই ছিলো), তারা (মহান আল্লাহর) কালামকে তার নির্দিষ্ট অর্থ তেকে সরিযে নিয়ে বিকৃত করে দিতো, (হেদায়াতের) যা কিছু তাদের শিক্ষা দেয়া হয়েছিলো তার অধিকাংশ কথাই তারা ভুলে গেলো; প্রতিনিয়ত তুমি তাদের দেখতে পাবে, তাদের সামান্য একটি অংশ ব্যতীত অধিকাংশ মানুষই (আল্লাহর সাথে) বিশ্বাসঘাতকতা কে রচলেছে, অতএব তুমি তাদের মাফ করে দাও, (যথাসম্ভব) তুমি তাদের (সংস্রব) এড়িয়ে চলো; অবশ্যই আল্লাহ পাক কল্যাণকামী মানুষদের ভালোবাসেন।
১৪. আমি তো তাদের (নিকট থেকেও আনুগত্যের) অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম, যারা বলে, আমরা খৃষ্টান (সম্প্রদায়ের লোক), অতঃপর এরাও (সে অঙ্গীকার সম্পকির্ত) অধিকাংশ কথা ভুলে গেলো যা তাদের স্মরণ করানো হয়েছিলো, অতঃপর আমিও তাদের (পরস্পরের) মধ্যে কেয়ামত পর্যন্ত (এক স্থায়ী) শত্রুতা ও বিদ্বেষের বীজ পবন করে দিলাম; অচিরেই আল্লাহ পাক তাদের বলে দেবেন (দুনিয়ার জীবনে) তারা যা কিচু উদ্ভাবন করতো।
১৫. হে আহলে কিতাবরা! তোমাদের নিকট আমার (পক্ষ থেকে) রাসূল এসেছে, (আগের) কিতাবের যা কিচু তোমরা এতাদিন গোপন করে রেখেছিলে তার অনেক কিছুই সে তোমাদের বলে দিচ্ছে, আবার অনেক কিচু এস এড়িয়েও যাচ্ছে; তোমাদের কাছে (এখন) তো মহান আল্লাহর পক্ষ তেকে আলোকবর্তিকা এবং সুস্পষ্ট কিতাবও এসে উপস্থিত হয়েছে।
১৬. যে আল্লাহর আনুগত্য করে তার সন্তুষ্টি লাব করতে চায়, এরা দ্বারা আল্লাহ পাক তার শান্তি ও নিরাপত্তার পথ বাতলে দেন, অতঃপর তিনি ত৭ার অনুমতিক্রমে তাদের (জাহেলিয়াতের) অন্ধকার থেকে (ঈমানের) আলোতে বের করে আনেন, আর (এভাবেই) তাদের তিনি সঠিক পথে পরিচালিত করেন।
১৭. নিম্চয়ই তারা কুফরী করেছে, যারা বলেছে, মারইয়ামের পুত্র মাসীহই আল্লাহ; (হে মুহাম্মদ!) আপনি তাদের বলুন, আল্লাহ পাক যদি মারইয়াম পুত্র মাসীহ, তার মা ও গোটা বিশ্ব-চরাচরে যা কিছু আছে সব কিছুও ধ্বংস করে দিতে চান, এমন কে আছে যে আল্লাহ পাকের নিকট তেকে এদের রক্ষা করতে পারে? এ আকাশমালা, ভূমন্ডল ও এর মধ্যবর্তী স্থানে যা কিচু আছে, তার সার্বভৌমত্ব (এককবাবে) মহান আল্লাহর জন্যেই (নির্দিষ্ট); তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন; আল্লাহ পাক সকল বিষয়ের ওপর একক ক্ষমতাবান।
১৮. ইহুদী ও খৃষ্টনারা বলে আমরা আল্লাহর সন্তান এবং তাঁর প্রিয়পাত্র; আপনি (তাদের বলুন, তাহলে তিনি কেন তোমাদের গুনাহের জন্যে তোমাদের দন্ড প্রদান করবেন; (মূলত) তোমরা (সবাই হচ্ছো তাদের মধ্য তেকে কতিপয়) মানুষ, যাদের আল্লাহ পাক সৃষ্টি করেছেন, আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাদের যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন আবার যাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি প্রদান করেন; আসমানসমূহ ও যামীনের মধ্যবর্তী সব কিছুর একক প্রভু আল্লাহ পাকের জন্যেই ৯নির্দিষ্ট), সবকিছুকে তাঁর দিকেই ফিরে যেতে হবে।
১৯. হে আহলে কিতাবরা! রাসূলদের আগমন ধারার ওপরই আমার (পক্ষ থেকে) তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছে, সে তোমাদের জন্রে (আমার কথাগুলো) সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করছে, যাতে করে তোমরা (বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে) একথা বলতে না পারো যে, আমাদের কাছে (জান্নাতের) সুসংবাদ বহনকারী ও (দোযখের) সতর্ককারী (হিসেবে) কেউ তো আগমন করেনি, (আজ তো সত্যি সত্যিই) তোমাদের কাছে সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারী (একজন রাসূল) এসে গেছে, বস্তুত আল্লাহ পাক সকল বিষয়ে শক্তিমান।
২০. (স্মরণ করো!) যখন মূসা তার জাতিকে বলেছিলো, তে আমার জাতির লোকেরা, আল্লাহ পাক তোমাদের ওপর যে নেয়ামত অবতীর্ণ করেছেন তা তোমরা স্মরণ করে,া যখন তিনি তোমাদের মাজে বহু নবী পয়দা করেছেন, তিনি তোমাদের (এ যমীনের) শাসনকর্তা বানিয়েছেন, এছাড়াও তিনি তোমাদের এমন সব নেয়ামত দান করেছেন যা (এ) সৃষ্টিকুলে (এর আগে) তিনি আর কাউকে দান করেননি।
২১. হে আমার সম্প্রদায়, আল্লাহ পাক তোমাদের জন্যে যে পবিত্র ভূখন্ড লিখে রেখেছেন তোমরা তাতে প্রবেশ করো এবং (এ অগ্রাভিযানে) কখনো পশ্চাদাপসরণ করো না; তারপরও তোমরা যদি ফিরে আসো তাহলে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
২২. তারা বললো, হে মূসা! (আমরা কিবাবে সেই জনপদে প্রবেম করবো), সেখানে (তো) এক দোর্দন্ড প্রতাপশালী জাতি রয়েছে, তারা সেখান থেতে বেরিয়ে না এলে আমরা কিচুতেই সেকানে প্রবেম করবো না, তারা সেখান থেকে বেরিয়ে এলে আমরা (অবশ্যই) প্রবেশ করবো।
২৩. যারা আল্লাহ পাককে ভয় করচিলো, তাদের (এমন) দু'জন লোক, যাদের ওপর আল্লাহ পাক দয়া করেচিলেন, (এগিয়ে এসে) বললো, তোমরা (সদর) দরজা দিয়েই তাদের (জনপদে) প্রবেশ করো, আর ৯একবার) সেকানে প্রবেশ করলেই তোমরা জয়ী হবে, তোমরা যদি (সত্যিকার অর্থে) মুমিন হও তাহলে মহান আল্লাহর ওপরই ভরসা করো।
২৪. তারা (আরো) বললো, হে মূসা! সেই (শক্তিশালী) লোকেরা যতক্ষণ (পর্যন্ত) সেখানে থাকবে, ততক্ষণ আমরা কোনো অবস্থায়ই সেখানে প্রবেশ করবো না, (বরং) তুমিই যাও, তুমি ও তোমার প্রভু উভয়ে মিলে যুদ্ধ করো, আমরা এখানেই বসে রইলাম।
২৫. (তাদের কথা শুনে) মূসা বললো, হে (আমার) প্রভু (তুমি তো জানো), আমার নিজের এবং আমার ভাই ব্রতীত আর কারো ওপর আমার আধিপত্য চলে না, অতএব আমাদের মাজে ও এই নাফরমান লোকদের মাঝে তুমি একটা মীমাংসা করে দাও।
২৬. আল্লাহ পাক বললেন, (হ্যাঁ, তাই হবে, আগামী) চল্লিশ বছর পর্যন্ত সে (জনপদ) তাদের জন্যে নিষিদ্ধ করে দেয়া হলো, (এ সময়ে) তারা উদভ্রান্ত হয়ে পৃথিবীতে এদিক সেদিক গুরে বেড়াবে; সুতরাং তুমি এই নাফরমান লোকদের ওপর কখনো দুঃখ করো না।
২৭. (হে মুহাম্মদ!) আপনি এদের নিকট আদমের দুই পুত্রের গল্পটি যথাযথভাবে মুনিয়ে দিন! (গল্পটি ছিলো,) যখন তারা দুই জনই (আল্লাহর নামে) কোরবানী পেশ করলো, তখন তাদের মধ্যে একজনের নিকট থেকে কোরবানী কবুল করা হলো, আরেকজনের কাছ থেকে তা কিছুতেই কবুল করা হলো না, (যার কোরবানী কবুল করা হয়নি) সে বললো, আমি অবশ্যই তোমাকে মেরে ফেলবো (যার কোরবারনী কবুল করা হলো), সে বললো, াাল্লাত পাক তো শুধু পরহেযগার লোকদের নিকট তেকেই ৯কোরবানী) কবুল করেন।
২৮. (হিংসার বশবর্তী হয়ে) তুমি যদি আজ আমাকে হত্যা করার জন্যে আমার দিকে তোমার হাত বাড়াও, তাহলে আমি (কিন্তু) তোমাকে হত্যার করার জন্যে তোমার প্রতি আমার হাত বাড়িয়ে দেবো না, কারণ আমি সৃষ্টিকুলের প্রভুকে ভয় করি।
২৯. আমি (বরং) চাইবো, তুমি আমার পাপ ও তোমার গুনাহের (বোঝা) একাই তোমার (মাথার) ওপর উঠিয়ে নাও এবং (এভাবেই) তুমি দোযখের অধিবাসী হয়ে পড়ো, (মূলত) এ হচ্ছে অত্যাচারীর (যথার্থ) কর্মফল।
৩০. শেষ পর্যন্ত তার কুপ্রবৃত্তি তাকে নিজ ভাইয়ের হত্যার কাজে উষ্কানি দিলো, অতঃপর সে তাকে খুন করেই ফেললো এবং (এ কাজের ফলে) সে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেলো।
৩১. অতঃপর আল্লাহ পাক (সেখানে) একটি কাক পাঠালেন, কাকটি (হত্যাকারীর সামনে এসে) মাটি খুঁড়তে লাগলো, উদ্দেশ্য, তাকে দেখানো কিতাবে সে তার ভাইয়ের লাশ লুকিয়ে রাখবে; (এটা দেখে) সে (নিজে নিজে) বলতে লাগলো, হায়! আমি তো এই কাকটির চাইতেও অক্ষম হয়ে পড়েছি, আমি তো আমার ভাইয়ের লাশটাও গোপন করতে পারলাম না, তাপর সে সত্যি সত্যিই (নিজের কৃতকর্মের জন্যে) অনুতপ্ত হলো।
৩২. (পরবর্তীকালে) ওই (ঘটনার) জন্যেই আমি বনী ইসরাঈলদের জন্যে এই বিধান জারি করলাম যে, কোনো মানুষকে খুন করার কিংবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ (করার শাস্তি বিধান) ব্যতীত (অন্য কোনো কারণে) কেউ যদি কাউকে খুন করে, সে যেন গোটা মানব জাতিকেই হত্যা করলো; (আবার এমনিবাবে) যদি কেউ একজনের প্রাণ রক্ষা করে তবে সে যেন গোটা মানব জাতিকেই বাঁচিয়ে দিলো; এদের নিকট আমার রাসূলেরা সুস্পষ্ট নিদর্মন নিয়ে এসেছিলো, তারপরও এদের অধিকাংশ লোক ও যমীনের বুকে সীমালঙ্ঘনকারী হিসেবেই থেকে গেলো।
৩৩. যারা আল্লাহ পাক ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং (আল্লাহর) যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টির অপচেষ্টা করে, তাদের জন্যে নির্দিষ্ট শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদের খুন করা হবে কিংবা তাদের শূলবিদ্ধ করা হবে, অথবা বিপরীত দিক তেকে তাদের হাত-পা কেটে ফেলা হবে, কিংবা দেশ থেকে তাদের নির্বাসিত করা হবে; এ অপমানজনক শাস্তি তাদের দুনিয়ার জীবনের (জন্যে, তাছাড়া) আখিরাতে তাদের জন্যে ভয়াবহ শাস্তি তো রয়েছেই।
৩৪. তবে (এটা তাদের জন্যে নয়,) যাদের ওপর তোমাদের আধিপত্য স্থাপিত হবার আগেই তারা তাওবা করেছে, তোমরা জেনে রেখো, আল্লাহপাক একান্ত ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়।
৩৫. হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো, মহান আল্লাহকে বয় করো এবং তাঁর দিকে (ধাবিত হওয়ার জন্যে) উপায় খুঁজতে থাকো (তার বিশেষ একটি উপায় হচ্ছে), তোমরা আল্লাহর পথে জেহাদ করো, সম্ভবত তোমরা সফলকাম হতে পারবে।
৩৬. আর যারা ঈমান আনতে অস্বীকার করেছে, (কেয়ামতের দিন) পৃথিবীর সমুদয় ধন-দৌলতও যদি তাদের করায়ত্ত থাকে-(তার সাথে আরো) যদি সমপরিমাণ সম্পদ তাদের নিকট থাকে, (এ সম্পদ) মুক্তিপণ হিসেবে দিয়েও যদি সে কেয়ামতের দিন দোযখের মাস্তি থেকে মুক্তি পেতে চায় (তাও সম্ভব হবে না), তার কাছ থেকে (এর কিছুই সেদিন) গ্রহণ করা হবে না, তাদের জন্যে (সেদনি) কোর শাস্তি নির্ধারিত থাকবে।
৩৭. তারা (সেদিন) দোযখের শাস্তি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইবে, কিন্তু (কোনো অবস্থায়ই) তারা সেকান থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না, তাদের জন্যে স্থায়ী শাস্তি নির্দিষ্ট হয়ে আছে।
৩৮. পুরুষ ও নারী এদের যে কেউই চুরি করবে, তাদের হাত দুটো কেটে ফেলো, এটা তাদেরই কর্মফল এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত দণ্ড; আল্লাহ পাক মহাশক্তিশালী ও প্রবল প্রজ্ঞাময়।
৩৯. (হ্যাঁ,) যে ব্যক্তি (এ জঘন্য) অত্যাচার করার পর (আল্লাহ পাকের কাছে) তাওবা করবে এবং নিজের সংশোধন করে নেবে, অবশ্যই আল্লাহ পাক তার তাওবা কবুল করবেন; আল্লাহ পাক ঃিসনেদহে বড় ক্ষমাশীল ও দয়াময়।
৪০. তুমি কি (একথা) জানো না, এই আকামমন্ডলী ও যমীনের একক সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহ পাকের জন্যে: তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে শাস্তি দেন, আবার যাকে ইচ্ছা তাকে তিনি মাফ করে দেন; (কেননা) সব কিছুর ওপর তিনিই হলেন একক ক্ষমতাবান।
৪১. হে রাসূল, যারা দ্রুতগতিতে কুফরীর পথে ধাবিত হচ্ছে, তারা যেন তোমাকে দুঃখ না দেয়, এরা সে দলের (লোক) যারা মুখে বলে, আমরা ঈমান এনছি, কিন্তু (সত্যিকার অর্থে) তাদের অন্তর কখনো ঈমান আনেনি, আর (তাদের ব্যাপারও নয়) যারা ইহুদী তারা মিথ্যা কথা শোনার জন্যে (সদা) কান খাড়া করে রাখে এবং (তাদের বন্ধু সম্প্রদায়ের) যেসব লোক কখনো তোমার নিকট আসেনি, এরা সেই অপর সম্প্রদায়টির জন্যেই নিজেদের কান খাড়া করে রাখে; পরিবর্তে আল্লাহর কিতাবের কথাগুলো আপন জায়গায় (বিন্যস্ত) থাকার পরেও এরা তা বিকৃত করে বেড়ায় এবং (অন্যদের কাছে) এরা বলে, (হ্যাঁ) যদি এ (ধরনের কোনো) বিধান তোমাদের দেয়া হয় তাহলে তোমরা তা গ্রহণ করো, আর সে ধরনের কিছু না দেয়া হলে তোমরা (তা থেকে) সাবধান থেকো; (আসলে) আল্লাহ পাক যার পথচু্যতি চান, তাকে আল্লাহর (পাকড়াও) থেকে বাঁচানোর জন্যে তুমি তো কিছুই করতে পারো না; এরাই হচ্ছে সেসব (হতভাগ্য) লোক, আল্লাহ পাক কখনো যাদের অন্তরগুলোকে পাক-পবিত্র করার এরাদা পোষণ করেন না, তাদের জন্যে পৃথিবীতে (যেমনি) রয়েছে অপমান (ওলাঞ্চনা), আখিরাতেও (তেমনি) তাদের জন্যে অপেক্ষা করছে ভয়াবহ শাস্তি।
৪২. (ইহুদীদের চরিত্র হচ্ছে), এরা (যেমন) মিথ্যা কথা শুনতে অভ্যস্ত, (তেমনি) এরা অবৈধ মাল খেতেও ওস্তাদ; অতএব এরা যদি কখনো (কোনো বিচার নিয়ে) আপনার নিকট আসে তাহলে আপনি (চাইলে) তাদের বিচার করতে পারেন কিংবা তাদের উপেক্ষা করেন। যদি আপনি তাদের ফিরিয়ে দেন তাহলে (নিশ্চিত কাকুন), এরা আপনার কোনেই অনিষ্ট করতে পারবে না, তবে যদি আপনি তাদের বিচার ফয়সালা করতে চান তাহলে অবশ্যই ন্যায়বিচার করবেন; নিঃসন্দেহে আল্রাহ পাক ন্যায় বিচারকদের ভালোবাসেন।
৪৩. এসব লোক কিভাবে আপনার কাছে বিচারের ভার নিয়ে উপস্থি হবে, যখন তাদের নিজেদের কাছেই (আল্লাহর পাঠানো) তাওরাত মজুদ রয়েছে, তাতেও তো (বিচার-আচার সংক্রান্ত) আল্লাহর বিধান আছে, (আপনি যা কিছুই করুন না কেন) একটু পরেই তারা আপনার নিকট থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, এরা আসলেই (মহান আল্লাহর কিতাবের ব্যাপারে) ইমানদার নয়।
৪৪. নিঃসন্দেহে আমি (মূসার কাছে) তাওরাত অবতীর্ণ করেছি, তাতে (তাদের জন্যে) পথনির্দেশ ও আলোকবর্তিকা বর্তমান চিলো, আমার নবীরা যারা আমার বিধানেরই অনুবর্তন করতো, ইহুদী সম্প্রদায়কে এ (হেদায়াত) মোতাবেকই আইন-কানুন প্রদান করতো, (নবীদের পর তাদের) জ্ঞানসাধক ও ধর্মীয় পন্ডিতরাও (এ অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করতো), কারণ (নবীর পর) আল্লাহর কিতাব সংরক্ষণ করার দায়িত্ব এদরই দেয়া হয়েছিলো, তারা (নিজেরাও) ছিলো এর (প্রত্যক্ষ) সাক্ষী, সুতরাং তোমরা মানুষদের ভয় না করে একান্তবাবে আমাকেই ভয় করো, আর আমার আয়াতসমূহ সামান্য মূল্যে বিক্রি করে দিয়ো না; যারা আল্লাহর অবতীর্ণ করা আইন অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করে না, তারাই (হচ্ছে) কাফের।
৪৫. (তাওরাতের) সেকানে আমি তাদের জন্যে বিধান অবতীর্ণ করেছিলাম যে, (তাদের) জানের পরিবর্তে জান, চোখের পরিবের্ত চোখ নাকের পরিবর্তে নাক, কানের পরিবর্তে কান, দাঁতের পরিবর্তে দাঁত, (শাস্তি প্রয়োগের সময় এই শারীরিক) যখমটাই কিন্তু আসল দন্ড (বলে বিবেচিত হয়); অবশ্য (বাদী পক্ষের) কেউ যদি এই দন্ড মাফ করে দিতে চায়, তাহলে তা তার নিজের (পাক খাতার) জন্যে কাফফারা (হিসেবে গণ্য) হবে; আর যাবাই আল্লাহর অবতীর্ণ করা বিধান অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করেনা, তারাই অত্যাচারী।
৪৬. এ ক্রমধারায় অতঃপর আমি মারইয়াম পুত্র ঈসাকে পাঠিয়েছি, (সে সময়) আগে তেকে তাওরাতের যাি কিছু (অবশিষ্ট) ছিলো, সে ছিলো তার সত্যতা স্বীকারকারী, আর আমি তাকে ইনজীল দান করেছি, তাতে ছিলো হেদায়াত ও নূর; তখন তাওরাতের যা কিছু (তার নিকট বর্তমান ছিলো-ইনজীল (কিতাব) তার সত্যতাও সে স্বীকার করেছে, (তদুপরি) তাতে আল্লাহভীরু লোকদের জন্যে পথনির্দেশ ও উপদেশ (মজুদ) ছিলো।
৪৭. ইনজীলের অনুসারীদের উচিত এর ভেতর আল্লাহ পাক যা কিছু অবতীর্ণ করেছেন তার ভিত্তিতে বিচার ফয়সালা করা; (কারণ) যারাই আল্লাহর অবতীর্ণ করা আইনের ভিত্তিতে বিচার করেনা তারাই ফাসেক।
৪৮. (হে মুহাম্মদ) আমি তোমার প্রতি সত্য (দ্বীন) সহএ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, (আগের) কিতাবসমূহের যা কিছু (অবিকৃত অবস্থায়) তার সামনে মজুদ রয়েছে, এ কিতাব তার সত্যতা স্বীকার করে (শুধু তাই নয়), এ কিতাব (তার ওপর) হেফাযতকারীও বটে! (সুতরাং) আল্লাহ পাক যেসব বিধি বিধান অবতীর্ণ করেছেন তার ভিত্তিতেই আপনি তাদের মধ্যে বিচার ফয়সালা করুন, আর (এ বিচারের সময়) আপনার নিজের কাছে যা সত্য (দ্বীন) এসেছে, তার থেকে সরে গিয়ে তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করবেন না; আমি তোমাদের প্রতিটি (জাতির) জন্যে শরীয়ত ও কর্মপন্থা নির্ধারণ করে দিয়েছি; আল্লাহ পাক চাইলে তোমাদের সবাইকে একই উম্মত বানিয়ে দিতে পারতেন; বরং তিনি তোমাদের যা দিয়েছেন তার ভিত্তিতে তোমাদের যাচাই বাছাই করে নিতে চেয়েছেন, অতএব ভালো কাজে তোমরা সবাই প্রতিযোগীতা করো; (কারণ) আল্লাহ পাকের দিকেই হবে তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তনস্থল, (একানে) তোমরা যেসব বিষয় নিয়ে মতভেদ করতে, (অতঃপর) তিনি অবশ্যই তা তোমাদের (স্পষ্ট করে) বলে দেবেন।
৪৯. (অতএব, হে মুহাম্মদ!) আপনার ওপর আল্লাহ পাক যে আইন-কানুন অবতীর্ণ করেছেন আপনি তারই ভিত্তিতে এদের মাঝে বিচার ফয়সালা করুন এবং কখনো তাদের খেয়াল খুশীল অনুসরণ করবেন না এবং তাদের থেকে সাবধান খাকুন, যা কিছু আল্লাহ পাক আপনার ওপর অবতীর্ণ করেছেন তার কোনো কোনো বিষয়ে যেন তারা কখনো আপনাকে ফেতনায় না ফেলতে পারে; অতঃপর (আপনার ফয়সালায়) যদি এরা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে জেনে রাখুন, আল্লাহ পাক তাদের নিজেদেরই কোনো গুনাহের জন্যে তাদের কোনো রকম মসিবতে ফেলতে চান; মানুষের মাঝে (আসলে) অধিকাংশই হচ্ছে অবাধ্য।
৫০. তবে কি তারা পুনারায় জাহেলিয়াতের বিচার ব্যবস্থা তালাশ করছে? অথচ যারা (আল্লাহকে) দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, তাদের নিকট আল্লাহ পাকের চাইতে উত্তম বিচারক আর কে হতে পারে?
৫১. হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা (কখনো) ইহুদী-খৃষ্টানদের নিজেদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। (কারণ) এরা নিজেরা (সব সময়ই) একে অপরের বন্ধু; তোমাদের মধ্যে কেউ যদি (কখনো) এদের কাউকে বন্ধু বানিয়ে নেয় তাহলে সে তাদেরই দলভূক্ত হয়ে যাবে; আর আল্লাহ পাক কখনো অত্যচারী সম্প্রদায়কে হেদায়াত দান করেন না।
৫২. অতঃপর যাদের মনে (মুনাফিকীর) ব্যাধি রয়েছে তাদের আপনি দেখবেন, তারা (বিশেষ) তৎপরতার সাথে এই বলে তাদের সাথে মিলিত হচ্ছে যে, আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে, কোনো বিপর্যয় এসে আমাদের ওপর আপতিত হবে; পরে হয়তো আল্লাহ (তোমাদের কাছে) বিজয় নিয়ে আসবেন কিংবা তাঁর কাছ তেকে অন্য কিছু (অনুগ্রহ তিনি দান করবেন), তখন (তা দেখে এ) লোকেরা নিজেদের মনের ভেতর যে কপটতা লুকিয়ে রেখেছিলো, তার জন্যে ভীষণ অনুতপ্ত হবে।
৫৩. (তখন) ঈমানদার লোকেরা বলবে, এরাই কি চিলো সেসব মানুষ, যারা মহান আল্লাহর নামে বড় বড় কসম করতো (যে), তারা অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে আছে; (এ আচরণের ফলে) তাদের কার্যকলাপ বিনষ্ট হয়ে গেলো, অতঃপর তারা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হযে পড়লো।
৫৪. হে মানুষ! তোমরা যারা মহান আল্লাহর ওপর ঈমান এনছো, তোমাদের মধ্যে কোনো লোক যদি নিজের দ্বীন (ইসলাম) তেকে (মুরতাদ হয়ে) ফিরে আসে (তাতে আল্লাহ পাকের কোনো ক্ষতি নেই,) তবে আল্লাহ পাক অচিরেই (এখানে) এমন এক জাতির উত্থান ঘটাবেন যাদের তিনি ভালোবাসবেন, তারাও তাঁকে ভালোবাসবে, (তারা হবে) মু;মিনদের প্রতি কোমল ও কাফেরদের প্রতি কঠোর, তারা মহান আল্লাহর পথে সংগ্রাম করবে, কোনো নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া তারা করবে না; (মূলত) এ (সাহসটুকু) হচ্ছে মহান আল্লাহর একটি অনুগ্রহ, যাকে চান তাকেই তিন তা দান করেন; আল্লাহ পাক প্রাচুর্যময় ও প্রজ্ঞার অাঁধার।
৫৫. তোমাদের একমাত্র পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন আল্লাহ পাক, তাঁর রাসূল এবং সেসব ঈমানদার লোকেরা, যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে, (সর্বোপরি আল্লাহ পাকের সামনে যারা) সদা অবনমিত থাকে।
৫৬. আর যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক, তাঁর রাসূল ও ঈমানদারদের নিজের বন্ধুরুপে গ্রহণ করবে (তারা যেন জেনে রাখে), কেবলমাত্র আল্লাহ পাকের দল্ই বিজয়ী হবে।
৫৭. হে ঈমানদার লোকেরা, তোমাদের আগে যাদের (আল্লাহ পাকের) কিতাব দেয়া হয়েছিলো, তাদের মধ্যে যারা তোমাদের দ্বীনকে বিদ্রুপ ও খেল-তামাশার বন্তুতে পরিণত করে রেখেছে, তাদের এবং কাফেরদের কখনো তোমরা নিজেদের বন্ধু বানিয়ো না, যদি তোমরা সত্যিকার অর্থে মু'মিন হয়ে থাকো তবে একমাত্র মহান আল্লাহকেই (বন্দু বানাও এবং তাঁকেই) ভয় করো।
৫৮. যখন তোমরা (মানুষদের) নামাযের জন্যে ডাকো, তখন এই ডাককে এরা হাসি-তামাশা ও খেলোর বস্তু বানিয়ে দেয়; এরা হচ্ছে এমন এক জাতি, যারা (হক-বাতিলের) কিছুই বোঝে না।
৫৯. (হে রাসূল!) আপনি এদের বলুন, তোমরা যে আমাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিচ্ছো, তার কারণ এই যে, আমরা আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছি এবং আমাদের ওপর আগে ও বর্তমানে যা কিচু অবতীর্ণ করা হয়েছে তার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি! (আসলে) তোমাদের অধিকাংশ (মানুষই) হচ্ছে অমান্যকারী ও অবাধ্য।
৬০. (হে রাসূল!) আপনি বলুন, আমি কি তোমাদের বলে দেবো-আল্লাহর নিকট তেকে সবচাইতে নিকৃষ্ট পুরস্কার কে পাবে? সে লোক (হচ্ছে,) যার ওপর আল্লাহ পাক লা'নত দিয়েছেন, যার ওপর আল্লাহর কো্রাধ রয়েছে এবং যাদের কিছু লোককে তিনি বানর, (কিছু লোককে) শূকরে পরিণত করে দিয়েছেন, যারা মিথ্যা মা'বুদের আনুগত্য স্বীকার করেছে; এবাই হচ্ছে সেসব লোক, (আখিরাতে) যাদের অবস্থান হবে অত্যন্ত নিকৃষ্ট এবং (দুনিয়াতেও) এরা সরল পথ থেকে (বহুদূরে) বিচ্যুত হয়ে পড়েছে।
৬১. তারা যখন তোমার সামনে আসে তখন বলে, আমরা ঈমান এনছি, (আসলে) তারা তোমার কাছে কুফরী নিয়েই প্রবেম করছিলো এবং তা নিয়েই তোমার নিকট থেকে তারা বেরিয়ে গেছে; (তারা মনের ভেতর) যা কিছু লুকিয়ে রেখেছিলো আল্লাহ পাক সে ব্যাপারে পূর্ণ জ্ঞাত রয়েছেন।
৬২. তাদের অনেককেই আপনি দেখতে পাবেন-পাপ, (আল্লাহর সাথে) বিদ্রোহ ও অবৈধ সম্পদ ভোগ করার কাঝে এরা একে অণ্যের সাথে প্রতিযোগীতা করে চলেছে; এরা যা করে (মূলত) তা বড়ই নিকৃষ্ট কাজ!
৬৩. (কতো ভলো হতো এদের) ধর্মীয় নেতা ও পণ্ডিত ব্যক্তিরা যদি এদের এসব পাপের কথা ও অবৈধ সম্পদ ভোগ করা থেকে বিরত রাখতো! (কারণ) এরা যা কিছু (সংগ্রহ) করছে তা বড়ই জঘন্য!
৬৪. ইহুদীরা বলে, মহান আল্লাহর (দানের) হাত বাঁধা পড়ে গেছে, (আসলে) তাদের নিজেদের হাতই বাঁধা পড়ে গেছে, আর তারা যা কিছু বলেছে সে জন্যে তাদের ওপর আল্লাহ পাকের লানত অবতীর্ণ করা হয়েছে। আল্লাহর তো (দুনিয়া আখেরাতের ) উভয় হাতই মুক্ত, যেভাবে তিনি চান সেভাবেই তিনি দান করেন। (পৃকৃত ঘটনা হচ্ছে), তোামার প্রভুর পক্ষ তেকে যা কিচু তোমার ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা তাদের অনেকেরই সীমালঙ্ঘন ও কুফরীকে অবশ্যই বাড়িয়ে দিয়েছে; (ফলে) আমি তাদের মাঝে কেয়ামত পর্যন্ত একটা শত্রুতা ও পরস্পর বিদ্বেষ সঞ্চার করে দিয়েছি; যখনি তারা যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছে, আল্লাহ পাক তখনি তা নিভিয়ে দিয়েছেন, তোরা (বার বার) এ যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টির প্রয়াস পেয়েছে; আসলে আল্লাহ পাক বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের মোটেই পচন্দ করেন না।
৬৫. যদি আহলে কিতাবরা ঈমান আনতো এবং (আল্লাহকে) ভয় করতো, তবে অবশ্যই আমি তাদের পাপখাতা মুছে দিতাম এবং তাদের আমি অবশ্যই নেয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাতাম।
৬৬. যদি তারা তাওরাত ও ইনজীল (তথা তার বিধান) প্রতিষ্ঠা করতো, আর যা তাদের ওপর তাদের প্রভুর নিকট তেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে তার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতো, তাহলে তারা রিযিক পেতো তাদের মাথার ওপরের (আসমান) তেকে ও তাদের পায়ের নীচের (যমীন) থেকে; তাদের মধ্যে অবশ্য একদল (ন্যায় ও) মধ্যপন্থী লোক রয়েছে, তবে তাদের অধিকাংশই হচ্ছে এমন, যাদের কর্মকান্ড খুবই নিকৃষ্ট!
৬৭. হে রাসূল! যা কিছু আপনার ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে তা আপনি (অন্যের কাছে) পৌছে দিন, যদি আপনি (তা) না করেন তাহলে আপনি তো (মানুষদের কাছে) তার বার্তা পৌছে দিলেন না! আল্লাহ পাক তোমাকে মানুষের (অনিষ্ট) থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন; নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কখনো কোনো অবাধ্য জাতিকে পথ প্রদর্শন করেন না।
৬৮. আপনি (তাদের) বলুন, হে আহলে কিতাবরা! যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাওরাত, ইনজীল ও তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা প্রতিষ্ঠিত না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত (মনে করতে হবে), তোমরা কোনো কিচুর ওপরই প্রতিষ্ঠিত নেই; তোমার প্রভুর কাছ তেকে যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে তা তাদের অনেকেরই সীমালঙ্ঘন ও কুফরী বাড়িয়ে দেবে, সুতরাং আপনি এই কাফের জাতির জন্যে মোটেই আফসোস করবেন না।
৬৯. নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনছে এবং যারা চিলো ইহুদী, সাবেরী, খৃস্টান-(এদের) যে কেউই এক আল্লাহ পাক ও শেষ বিচার দিনের ওপর ঈমান আনবে এবং সৎকর্ম করবে, তাদের কোনো ভয় নেই, (আখিরাতেও) তাদের কোনো দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতে হবে না।
৭০. বনী ইসরাঈলের কাচ থেকে আমি (আনুগত্যের) অঙ্গীকার আদায় করে নিয়েছিলাম এবং (সে মোতাবেক) আমি তাদের নিকট রাসূলদের প্রেরণ করেচিলাম; কিন্তু যখনি কোো রাসূল তাদের কাছে এমন কিছু (বিধান) নিয়ে উপস্থিত হয়েছে, যা তাদের পছন্দসই ছিলো না, তখনি তারা (এ রাসূলদের) একদলকে মিথ্যাবাদী বলেছে, আরেক দলকে তারা খুন করেছে।
৭১. তারা ধরে নিয়েছিলো, (এতা কিছু করা সত্ত্বেও) তাদের জন্যে কোনো বিপর্যয় থাকবে না, তাই তারা (সত্য গ্রহণ করার ব্রাপারে) অন্ধ ও বধির হয়ে থাকলো, তারপরও আল্লাহ পাক তাদের ওপর ক্ষমাপরবশ হলেন, অতঃপর তাদের অনেকেই আবার অন্ধ ও বধির হয়ে গেলো; তারা যা কিচু করেছে আল্লাহ পাক তা পর্যবেক্ষণ করছেন।
৭২. নিশ্চয়ই তারা কাফের হয়ে গেছে যারা ৯একথা) বলেছে, আল্লাহ হচ্ছেন মারইয়ামের পুত্র মাসীহ; অথচ মাসীহ (নিজেই একথা) বলেছে যে, হে বনী ইসরাঈল! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদাত করো; যিনি আমারও প্রভু, তোমাদেরও প্রভু; মূলত যে কেউই আল্লাহর সাথে শরীক করবে, আল্লাহ পাক তার ওপর বেহেস্ত হারাম করে দেবেন, আর তার (স্থায়ী) ঠিকানা হবে জাহান্নাম; এ অত্যচারীদের (সেদনি) কোনো সাহায্যকারীই থাকবে না।
৭৩. তারাও কুফরী করেছে যারা বলেছে, তিন জনের মধ্যে তৃতীয় জন হচ্ছেন আল্লহ। অথচ এক আল্লাহ পাক ব্যতীত আর কোনো ইলাহ নেই; তারা যদি এখনো তাদের এসব (অলীক) কথাবার্তা থেকে ফিরে না আসে, তবে তাদের মাঝে যারা ৯একথা বলে) কুফরী করেছে, তাদের অবশ্যই কঠিন যন্ত্রণাদায়ক আযাবে পেয়ে যাবে।
৭৪. তারা কি মহান আল্লাহর কাছে তাওবা করবে না? (কখনো কি) তারা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? আল্লাহ পাক অতীব ক্ষমাশীল ও দয়াময়।
৭৫. মারইয়াম পুত্র মাসীহ তো রাসূল ব্যতীত কিছুই চিলো না, তার আগেও (তার মতো) অনেক রাসূল গত হয়েছে; তার মা চিলো এক সত্যনিষ্ঠ মহিলা; তারা (মা ও ছেলে) উভয়ই (আরদু'দশটি মানুষের মতো করেই) খাবার খেতো, আপনি লক্ষ্য করে দেখুন, আমি কিভাবে (আমার) আয়াতগুলো খুলে কুলে বর্ণনা করছি, আপনি দেখুন, কিভাবে তারা সত্যবিশুখ হয়ে যাচ্ছে।
৭৬. আপনি বলুন, তোমরা কি মহান আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কিছুর ইবাদাত করচো যা তোমাদের কোনো ক্ষতি কিংব াউপকার কিছুই করার ক্ষমতা রাখেনা; (প্রকৃতপক্ষে) আল্লাহ পাক (সব কিছুই) শোনেন এবং (সব কিছুই) জানেন।
৭৭. আপনি বলুন, হে আহলে কিতাবরা, তোমরা কখনো নিজেদের দ্বীনের ব্যাপারে অন্যায় বাড়াবাড়ি করো না, (মাসীহের ব্যাপারে) তোমরা সেসব জাতির খেয়ালখুশীর অনুসরণ করো না, যারা তোমাদের আগেই পথব্রষ্ট হয়ে গেছে এবং তারা অনেক লোককেই গোমরাহ করে দিয়েছে, আর তারা নিজেরাও সহজ সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে।
৭৮. নবী ইসরাঈলদের আরো যারা (মাসীহের ব্যাপারে মহান আল্লাহর এ ঘোষণা) অস্বীকার করেছে, তাদের ওপর দাউদ ও মারইয়াম পুত্র ঈসার মুখ তেকে লা'নত দেয়া হয়েছে; কেননা, তারা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে এবং সীমালঙ্ঘন করেছে।
৭৯. তারা যেসব গর্হিত কাজ করতো তা থেকে তারা একে অপরকে বারণ করতো না, তারা যা করতো নিঃসন্দেহে তা ছিলো নিকৃষ্ট।
৮০. তুমি তাদের মাঝে এমন বহু লোককে দেখতে পাবে, যারা (ঈমানদারদের বদলে) কাফেরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতেই বেশী আগ্রহী, অবম্য তারা নিজেরা যা কিছু অর্জন করে সামনে পঠিয়েছে তাও অতি নিকৃষ্ট, এ জন্যে আল্লাহ পাক তাদের ওপর ক্রোধান্বিত হয়েছেন, এ লোকেরা চিরকাল আযাবেই নিমজ্জিত থাকবে।
৮১. তারা যদি সত্যিই আল্লাহ পাক, (তাঁর) নবী ও তাঁর প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার প্রতি যথাযথ ঈমান আনতো, তাহলে এরা কাফেরদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতো না, কিন্তু তাদের তো অধিকাংশ লোকই হচ্ছে পাপী।
৮২. অবশ্যই তোমরা ঈমানদারদের সাথে শত্রুতা রব্যাপারে ইহুদী ও মুশরিকদেরই বেশী কঠোর (দেখতে) পাবে, (অন্যদিকে) মু'মুমিনদের সাথে বন্ধুত্বের ব্যাপারে তোমরা সেসব লোককে (কিছুটা) নিকটতর পাবে, যারা বলেছে আমরা কৃস্টান; এটা এ কারণে যে, (তখনো) তাদের মধ্যে দমীূয় পন্ডিত ব্যক্তি ও সংসারবিরাগী ফকীর-দরবেশরা মজুদ ছিলো, অবশ্যই এ ব্যক্তিরা অহংকার করে না।
৮৩. রাসূলের ওপর যা কিছু অবতীর্ণ করা হয়েছে তা যখন এরা শোনে, তখন সত্য চেনার কারণে তুমি এদের অনেকের চোখকেই দেখতে পাবে অশ্রুসজল, (নিবেদিত হয়ে) তারা বলে ওঠে, হে আমাদের প্রভু, আমরা ঈমান এনছি, তুমি আমাদের (নাম) সত্যের সাক্ষ্যদাতাদের দলে লিখে নাও।
৮৪. আল্লাহ পাকের কাছ থেকে আমাদের নিকট যা কিছু সত্য এসছে তার ওপর আমরা ঈমান আনবো না কেন? (অথচ) আমরা এ প্রত্যাশা করি যে, আমাদের প্রভু আমাদের সৎকর্মশীলদের দলভুক্ত করে দেবেন,
৮৫. অতঃপর তারা যা বললো সেজন্যে আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট হয়ে (আখিরাতে) তাদের এমন এক বেহেশত দান করবেন, যার তলদেশ দিয়ে (অমীয়) ঝর্ণাধারা প্রবাহমান থাকবে, সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী; আর এটাই হচ্ছে নেককার লোকদের (যথার্থ) পুরস্কার।
৮৬. অপরদিকে যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতগুলো যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, তারা সবাই হবে দোযখের অধিবাসী।
৮৭. হে ঈমানদার লোকেরা! আল্লাহ পাক তোমাদের জন্যে যে পবিত্র জিনিসগুলো বৈধ করে দিয়েছেন, তোমরা সেগুলো (নিজেদের জন্যে) অবৈধ করে নিয়ো না, আর কখনো (হারামের) সীমালঙ্ঘন করো না; অবশ্যই আল্লাহ পাক সীমালঙ্ঘনকারীদের পচন্দ করেন না।
৮৮. আল্লাহ পাক তোমাদের যে বৈধ ও পবিত্র রিযিক দান করেছেন তোমরা তা খাও এবং (এ ব্যাপারে) সে আল্লাহ পাককে ভয় করো, যাঁর ওপর তোমরা ঈমান এনছো।
৮৯. আল্লাহ পাক তোমাদের অর্থহীন শপথের জন্যে তোমাদের পাকড়াও করবেন না, কিন্তু যে কসম তোমরা জেনে বুঝে করো তার ব্রাপারে আল্লাহ পাক অবশ্যই তোমাদের পাকাও করবেন, অতঃপর তার কাফফারা হচ্ছে দশজন গরীব মিসকীনকে মধ্যম মানের খাবার খাওয়ানো, যা তোমরা (সচরাচর) নিজেদের পরিবার পরিজনদের খাইয়ে থাকো, যে ব্যক্তি (এর কোনোটাই) পাবে না, তার জন্যে (কাফফারা হচ্ছে) তিন দিন রোযা ৯রাখা); কসম ভাঙলে তোমাদের (কসম ভাঙ্গার) এ হচ্ছে কাফফারা; (অতএব) তোমরা তোমাদের শপথসমূহ রক্ষা করো; আল্লাহ পাক এভাবেই তাঁর আয়াতসমূহ তোমাদের নিকট বিশদভাবে বর্ণনা করেন যাতে করে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে পারো।
৯০. হে মানুষ! তোমরা যারা ঈমান এনেছো (তোমরা জেনে রেখো), মদ, জুয়া, পূজার বেদী ও ভাগ্যনির্ণায়ক শর হচ্ছে গৃণিত শয়তানের কাজ , অতএব তোমরা তা (সম্পূর্ণরুপে) বর্জন করো, আশা করা যায় তোমরা মুক্তি পেয়ে যাবে।
৯১. শয়তান এ মদ ও জুয়ার মধ্যে (ফেলে) তোমাদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে নিতে চায় এবং এবাবে সে তোমাদের মহান আল্লাহর স্মরণ ও নামায তেকে দূরে সরিয়ে রাখে, তোমরা কি (এ কাজ তেকে) ফিরে আসবে না?
৯২. তোমরা (সর্ববিষয়ে) মহান আল্লাহর আনুগত্য করো, আনুগত্য করো (তাঁর) রাসূলের, (মদ ু জুয়ার ধ্বংসকারীতা েথেকে) সাবধান থেকো, আর তোমরা যদি (রাসূলের নির্দেশনা থেকে) মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে জেনে েখো, আমার রাসূলের দায়িত্ব হচ্ছে সুস্পষ্টভাবে (আমার কথাগুলো) পৌছে দেয়া।
৯৩. যারা ঈমান এনছে এবং নেক কাজ করেছে, (এ নিষেধাজ্ঞা জারির আগে) তারা যা কিছু কেয়েছে তার জন্যে তাদের ওপর কোনোই পাক নেই, (হ্যাঁ, ভবিষ্যতে) যদি তারা সাবধান থাকে, (আল্লাহর ওপর) ঈমান আনে এবং নেক আমল করে, অতঃপর (আল্লাহ পাকের নিষেধ থেকে) তারা সাবধান থাকে, (একইভাবে যতক্ষণ পর্যন্ত) তারা ঈমান আনবে ও নেক আমল করবে, অতঃপর আল্লহ পাককে ভয় করবে ও সততার নীতি অবলম্বন করতে থাকবে (আল্লাহ পাক অবশ্যই তাদের ক্ষমা করে দেবেন, কেননা); আল্লাহ পাক সৎকর্মশীল মানুষদের ভালোবাসেন।
৯৪. হে ঈমানদার লোকেরা! ৯ইহরাম বাঁধা অবস্থায়) আল্লাহ পাক অবশ্যই এমন কিচু শিকারের বস্তু দিয়ে তোমাদের পরীক্ষা নেবেন, যেগুলো তোমরা সহজেই নিজেদের হাত ও বর্শা দ্বারা ধরতে পারো, যেন মহান আল্লাহ এ কথা ভালো করে জেন নিতে পারেন যে, কে তাঁকে গায়বের সাথে ভয় করে, সুতরাং এরপরও যদি কেউ সীমালঙ্ঘন করে, তার জন্যে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
১৫. হে আহলে কিতাবরা! তোমাদের নিকট আমার (পক্ষ থেকে) রাসূল এসেছে, (আগের) কিতাবের যা কিচু তোমরা এতাদিন গোপন করে রেখেছিলে তার অনেক কিছুই সে তোমাদের বলে দিচ্ছে, আবার অনেক কিচু এস এড়িয়েও যাচ্ছে; তোমাদের কাছে (এখন) তো মহান আল্লাহর পক্ষ তেকে আলোকবর্তিকা এবং সুস্পষ্ট কিতাবও এসে উপস্থিত হয়েছে।
১৬. যে আল্লাহর আনুগত্য করে তার সন্তুষ্টি লাব করতে চায়, এরা দ্বারা আল্লাহ পাক তার শান্তি ও নিরাপত্তার পথ বাতলে দেন, অতঃপর তিনি ত৭ার অনুমতিক্রমে তাদের (জাহেলিয়াতের) অন্ধকার থেকে (ঈমানের) আলোতে বের করে আনেন, আর (এভাবেই) তাদের তিনি সঠিক পথে পরিচালিত করেন।
১৭. নিম্চয়ই তারা কুফরী করেছে, যারা বলেছে, মারইয়ামের পুত্র মাসীহই আল্লাহ; (হে মুহাম্মদ!) আপনি তাদের বলুন, আল্লাহ পাক যদি মারইয়াম পুত্র মাসীহ, তার মা ও গোটা বিশ্ব-চরাচরে যা কিছু আছে সব কিছুও ধ্বংস করে দিতে চান, এমন কে আছে যে আল্লাহ পাকের নিকট তেকে এদের রক্ষা করতে পারে? এ আকাশমালা, ভূমন্ডল ও এর মধ্যবর্তী স্থানে যা কিচু আছে, তার সার্বভৌমত্ব (এককবাবে) মহান আল্লাহর জন্যেই (নির্দিষ্ট); তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন; আল্লাহ পাক সকল বিষয়ের ওপর একক ক্ষমতাবান।
১৮. ইহুদী ও খৃষ্টনারা বলে আমরা আল্লাহর সন্তান এবং তাঁর প্রিয়পাত্র; আপনি (তাদের বলুন, তাহলে তিনি কেন তোমাদের গুনাহের জন্যে তোমাদের দন্ড প্রদান করবেন; (মূলত) তোমরা (সবাই হচ্ছো তাদের মধ্য তেকে কতিপয়) মানুষ, যাদের আল্লাহ পাক সৃষ্টি করেছেন, আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাদের যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন আবার যাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি প্রদান করেন; আসমানসমূহ ও যামীনের মধ্যবর্তী সব কিছুর একক প্রভু আল্লাহ পাকের জন্যেই ৯নির্দিষ্ট), সবকিছুকে তাঁর দিকেই ফিরে যেতে হবে।
১৯. হে আহলে কিতাবরা! রাসূলদের আগমন ধারার ওপরই আমার (পক্ষ থেকে) তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছে, সে তোমাদের জন্রে (আমার কথাগুলো) সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করছে, যাতে করে তোমরা (বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে) একথা বলতে না পারো যে, আমাদের কাছে (জান্নাতের) সুসংবাদ বহনকারী ও (দোযখের) সতর্ককারী (হিসেবে) কেউ তো আগমন করেনি, (আজ তো সত্যি সত্যিই) তোমাদের কাছে সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারী (একজন রাসূল) এসে গেছে, বস্তুত আল্লাহ পাক সকল বিষয়ে শক্তিমান।
২০. (স্মরণ করো!) যখন মূসা তার জাতিকে বলেছিলো, তে আমার জাতির লোকেরা, আল্লাহ পাক তোমাদের ওপর যে নেয়ামত অবতীর্ণ করেছেন তা তোমরা স্মরণ করে,া যখন তিনি তোমাদের মাজে বহু নবী পয়দা করেছেন, তিনি তোমাদের (এ যমীনের) শাসনকর্তা বানিয়েছেন, এছাড়াও তিনি তোমাদের এমন সব নেয়ামত দান করেছেন যা (এ) সৃষ্টিকুলে (এর আগে) তিনি আর কাউকে দান করেননি।
২১. হে আমার সম্প্রদায়, আল্লাহ পাক তোমাদের জন্যে যে পবিত্র ভূখন্ড লিখে রেখেছেন তোমরা তাতে প্রবেশ করো এবং (এ অগ্রাভিযানে) কখনো পশ্চাদাপসরণ করো না; তারপরও তোমরা যদি ফিরে আসো তাহলে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
২২. তারা বললো, হে মূসা! (আমরা কিবাবে সেই জনপদে প্রবেম করবো), সেখানে (তো) এক দোর্দন্ড প্রতাপশালী জাতি রয়েছে, তারা সেখান থেতে বেরিয়ে না এলে আমরা কিচুতেই সেকানে প্রবেম করবো না, তারা সেখান থেকে বেরিয়ে এলে আমরা (অবশ্যই) প্রবেশ করবো।
২৩. যারা আল্লাহ পাককে ভয় করচিলো, তাদের (এমন) দু'জন লোক, যাদের ওপর আল্লাহ পাক দয়া করেচিলেন, (এগিয়ে এসে) বললো, তোমরা (সদর) দরজা দিয়েই তাদের (জনপদে) প্রবেশ করো, আর ৯একবার) সেকানে প্রবেশ করলেই তোমরা জয়ী হবে, তোমরা যদি (সত্যিকার অর্থে) মুমিন হও তাহলে মহান আল্লাহর ওপরই ভরসা করো।
২৪. তারা (আরো) বললো, হে মূসা! সেই (শক্তিশালী) লোকেরা যতক্ষণ (পর্যন্ত) সেখানে থাকবে, ততক্ষণ আমরা কোনো অবস্থায়ই সেখানে প্রবেশ করবো না, (বরং) তুমিই যাও, তুমি ও তোমার প্রভু উভয়ে মিলে যুদ্ধ করো, আমরা এখানেই বসে রইলাম।
২৫. (তাদের কথা শুনে) মূসা বললো, হে (আমার) প্রভু (তুমি তো জানো), আমার নিজের এবং আমার ভাই ব্রতীত আর কারো ওপর আমার আধিপত্য চলে না, অতএব আমাদের মাজে ও এই নাফরমান লোকদের মাঝে তুমি একটা মীমাংসা করে দাও।
২৬. আল্লাহ পাক বললেন, (হ্যাঁ, তাই হবে, আগামী) চল্লিশ বছর পর্যন্ত সে (জনপদ) তাদের জন্যে নিষিদ্ধ করে দেয়া হলো, (এ সময়ে) তারা উদভ্রান্ত হয়ে পৃথিবীতে এদিক সেদিক গুরে বেড়াবে; সুতরাং তুমি এই নাফরমান লোকদের ওপর কখনো দুঃখ করো না।
২৭. (হে মুহাম্মদ!) আপনি এদের নিকট আদমের দুই পুত্রের গল্পটি যথাযথভাবে মুনিয়ে দিন! (গল্পটি ছিলো,) যখন তারা দুই জনই (আল্লাহর নামে) কোরবানী পেশ করলো, তখন তাদের মধ্যে একজনের নিকট থেকে কোরবানী কবুল করা হলো, আরেকজনের কাছ থেকে তা কিছুতেই কবুল করা হলো না, (যার কোরবানী কবুল করা হয়নি) সে বললো, আমি অবশ্যই তোমাকে মেরে ফেলবো (যার কোরবারনী কবুল করা হলো), সে বললো, াাল্লাত পাক তো শুধু পরহেযগার লোকদের নিকট তেকেই ৯কোরবানী) কবুল করেন।
২৮. (হিংসার বশবর্তী হয়ে) তুমি যদি আজ আমাকে হত্যা করার জন্যে আমার দিকে তোমার হাত বাড়াও, তাহলে আমি (কিন্তু) তোমাকে হত্যার করার জন্যে তোমার প্রতি আমার হাত বাড়িয়ে দেবো না, কারণ আমি সৃষ্টিকুলের প্রভুকে ভয় করি।
২৯. আমি (বরং) চাইবো, তুমি আমার পাপ ও তোমার গুনাহের (বোঝা) একাই তোমার (মাথার) ওপর উঠিয়ে নাও এবং (এভাবেই) তুমি দোযখের অধিবাসী হয়ে পড়ো, (মূলত) এ হচ্ছে অত্যাচারীর (যথার্থ) কর্মফল।
৩০. শেষ পর্যন্ত তার কুপ্রবৃত্তি তাকে নিজ ভাইয়ের হত্যার কাজে উষ্কানি দিলো, অতঃপর সে তাকে খুন করেই ফেললো এবং (এ কাজের ফলে) সে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেলো।
৩১. অতঃপর আল্লাহ পাক (সেখানে) একটি কাক পাঠালেন, কাকটি (হত্যাকারীর সামনে এসে) মাটি খুঁড়তে লাগলো, উদ্দেশ্য, তাকে দেখানো কিতাবে সে তার ভাইয়ের লাশ লুকিয়ে রাখবে; (এটা দেখে) সে (নিজে নিজে) বলতে লাগলো, হায়! আমি তো এই কাকটির চাইতেও অক্ষম হয়ে পড়েছি, আমি তো আমার ভাইয়ের লাশটাও গোপন করতে পারলাম না, তাপর সে সত্যি সত্যিই (নিজের কৃতকর্মের জন্যে) অনুতপ্ত হলো।
৩২. (পরবর্তীকালে) ওই (ঘটনার) জন্যেই আমি বনী ইসরাঈলদের জন্যে এই বিধান জারি করলাম যে, কোনো মানুষকে খুন করার কিংবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ (করার শাস্তি বিধান) ব্যতীত (অন্য কোনো কারণে) কেউ যদি কাউকে খুন করে, সে যেন গোটা মানব জাতিকেই হত্যা করলো; (আবার এমনিবাবে) যদি কেউ একজনের প্রাণ রক্ষা করে তবে সে যেন গোটা মানব জাতিকেই বাঁচিয়ে দিলো; এদের নিকট আমার রাসূলেরা সুস্পষ্ট নিদর্মন নিয়ে এসেছিলো, তারপরও এদের অধিকাংশ লোক ও যমীনের বুকে সীমালঙ্ঘনকারী হিসেবেই থেকে গেলো।
৩৩. যারা আল্লাহ পাক ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং (আল্লাহর) যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টির অপচেষ্টা করে, তাদের জন্যে নির্দিষ্ট শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদের খুন করা হবে কিংবা তাদের শূলবিদ্ধ করা হবে, অথবা বিপরীত দিক তেকে তাদের হাত-পা কেটে ফেলা হবে, কিংবা দেশ থেকে তাদের নির্বাসিত করা হবে; এ অপমানজনক শাস্তি তাদের দুনিয়ার জীবনের (জন্যে, তাছাড়া) আখিরাতে তাদের জন্যে ভয়াবহ শাস্তি তো রয়েছেই।
৩৪. তবে (এটা তাদের জন্যে নয়,) যাদের ওপর তোমাদের আধিপত্য স্থাপিত হবার আগেই তারা তাওবা করেছে, তোমরা জেনে রেখো, আল্লাহপাক একান্ত ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়।
৩৫. হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো, মহান আল্লাহকে বয় করো এবং তাঁর দিকে (ধাবিত হওয়ার জন্যে) উপায় খুঁজতে থাকো (তার বিশেষ একটি উপায় হচ্ছে), তোমরা আল্লাহর পথে জেহাদ করো, সম্ভবত তোমরা সফলকাম হতে পারবে।
৩৬. আর যারা ঈমান আনতে অস্বীকার করেছে, (কেয়ামতের দিন) পৃথিবীর সমুদয় ধন-দৌলতও যদি তাদের করায়ত্ত থাকে-(তার সাথে আরো) যদি সমপরিমাণ সম্পদ তাদের নিকট থাকে, (এ সম্পদ) মুক্তিপণ হিসেবে দিয়েও যদি সে কেয়ামতের দিন দোযখের মাস্তি থেকে মুক্তি পেতে চায় (তাও সম্ভব হবে না), তার কাছ থেকে (এর কিছুই সেদিন) গ্রহণ করা হবে না, তাদের জন্যে (সেদনি) কোর শাস্তি নির্ধারিত থাকবে।
৩৭. তারা (সেদিন) দোযখের শাস্তি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইবে, কিন্তু (কোনো অবস্থায়ই) তারা সেকান থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না, তাদের জন্যে স্থায়ী শাস্তি নির্দিষ্ট হয়ে আছে।
৩৮. পুরুষ ও নারী এদের যে কেউই চুরি করবে, তাদের হাত দুটো কেটে ফেলো, এটা তাদেরই কর্মফল এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত দণ্ড; আল্লাহ পাক মহাশক্তিশালী ও প্রবল প্রজ্ঞাময়।
৩৯. (হ্যাঁ,) যে ব্যক্তি (এ জঘন্য) অত্যাচার করার পর (আল্লাহ পাকের কাছে) তাওবা করবে এবং নিজের সংশোধন করে নেবে, অবশ্যই আল্লাহ পাক তার তাওবা কবুল করবেন; আল্লাহ পাক ঃিসনেদহে বড় ক্ষমাশীল ও দয়াময়।
৪০. তুমি কি (একথা) জানো না, এই আকামমন্ডলী ও যমীনের একক সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহ পাকের জন্যে: তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে শাস্তি দেন, আবার যাকে ইচ্ছা তাকে তিনি মাফ করে দেন; (কেননা) সব কিছুর ওপর তিনিই হলেন একক ক্ষমতাবান।
৪১. হে রাসূল, যারা দ্রুতগতিতে কুফরীর পথে ধাবিত হচ্ছে, তারা যেন তোমাকে দুঃখ না দেয়, এরা সে দলের (লোক) যারা মুখে বলে, আমরা ঈমান এনছি, কিন্তু (সত্যিকার অর্থে) তাদের অন্তর কখনো ঈমান আনেনি, আর (তাদের ব্যাপারও নয়) যারা ইহুদী তারা মিথ্যা কথা শোনার জন্যে (সদা) কান খাড়া করে রাখে এবং (তাদের বন্ধু সম্প্রদায়ের) যেসব লোক কখনো তোমার নিকট আসেনি, এরা সেই অপর সম্প্রদায়টির জন্যেই নিজেদের কান খাড়া করে রাখে; পরিবর্তে আল্লাহর কিতাবের কথাগুলো আপন জায়গায় (বিন্যস্ত) থাকার পরেও এরা তা বিকৃত করে বেড়ায় এবং (অন্যদের কাছে) এরা বলে, (হ্যাঁ) যদি এ (ধরনের কোনো) বিধান তোমাদের দেয়া হয় তাহলে তোমরা তা গ্রহণ করো, আর সে ধরনের কিছু না দেয়া হলে তোমরা (তা থেকে) সাবধান থেকো; (আসলে) আল্লাহ পাক যার পথচু্যতি চান, তাকে আল্লাহর (পাকড়াও) থেকে বাঁচানোর জন্যে তুমি তো কিছুই করতে পারো না; এরাই হচ্ছে সেসব (হতভাগ্য) লোক, আল্লাহ পাক কখনো যাদের অন্তরগুলোকে পাক-পবিত্র করার এরাদা পোষণ করেন না, তাদের জন্যে পৃথিবীতে (যেমনি) রয়েছে অপমান (ওলাঞ্চনা), আখিরাতেও (তেমনি) তাদের জন্যে অপেক্ষা করছে ভয়াবহ শাস্তি।
৪২. (ইহুদীদের চরিত্র হচ্ছে), এরা (যেমন) মিথ্যা কথা শুনতে অভ্যস্ত, (তেমনি) এরা অবৈধ মাল খেতেও ওস্তাদ; অতএব এরা যদি কখনো (কোনো বিচার নিয়ে) আপনার নিকট আসে তাহলে আপনি (চাইলে) তাদের বিচার করতে পারেন কিংবা তাদের উপেক্ষা করেন। যদি আপনি তাদের ফিরিয়ে দেন তাহলে (নিশ্চিত কাকুন), এরা আপনার কোনেই অনিষ্ট করতে পারবে না, তবে যদি আপনি তাদের বিচার ফয়সালা করতে চান তাহলে অবশ্যই ন্যায়বিচার করবেন; নিঃসন্দেহে আল্রাহ পাক ন্যায় বিচারকদের ভালোবাসেন।
৪৩. এসব লোক কিভাবে আপনার কাছে বিচারের ভার নিয়ে উপস্থি হবে, যখন তাদের নিজেদের কাছেই (আল্লাহর পাঠানো) তাওরাত মজুদ রয়েছে, তাতেও তো (বিচার-আচার সংক্রান্ত) আল্লাহর বিধান আছে, (আপনি যা কিছুই করুন না কেন) একটু পরেই তারা আপনার নিকট থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, এরা আসলেই (মহান আল্লাহর কিতাবের ব্যাপারে) ইমানদার নয়।
৪৪. নিঃসন্দেহে আমি (মূসার কাছে) তাওরাত অবতীর্ণ করেছি, তাতে (তাদের জন্যে) পথনির্দেশ ও আলোকবর্তিকা বর্তমান চিলো, আমার নবীরা যারা আমার বিধানেরই অনুবর্তন করতো, ইহুদী সম্প্রদায়কে এ (হেদায়াত) মোতাবেকই আইন-কানুন প্রদান করতো, (নবীদের পর তাদের) জ্ঞানসাধক ও ধর্মীয় পন্ডিতরাও (এ অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করতো), কারণ (নবীর পর) আল্লাহর কিতাব সংরক্ষণ করার দায়িত্ব এদরই দেয়া হয়েছিলো, তারা (নিজেরাও) ছিলো এর (প্রত্যক্ষ) সাক্ষী, সুতরাং তোমরা মানুষদের ভয় না করে একান্তবাবে আমাকেই ভয় করো, আর আমার আয়াতসমূহ সামান্য মূল্যে বিক্রি করে দিয়ো না; যারা আল্লাহর অবতীর্ণ করা আইন অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করে না, তারাই (হচ্ছে) কাফের।
৪৫. (তাওরাতের) সেকানে আমি তাদের জন্যে বিধান অবতীর্ণ করেছিলাম যে, (তাদের) জানের পরিবর্তে জান, চোখের পরিবের্ত চোখ নাকের পরিবর্তে নাক, কানের পরিবর্তে কান, দাঁতের পরিবর্তে দাঁত, (শাস্তি প্রয়োগের সময় এই শারীরিক) যখমটাই কিন্তু আসল দন্ড (বলে বিবেচিত হয়); অবশ্য (বাদী পক্ষের) কেউ যদি এই দন্ড মাফ করে দিতে চায়, তাহলে তা তার নিজের (পাক খাতার) জন্যে কাফফারা (হিসেবে গণ্য) হবে; আর যাবাই আল্লাহর অবতীর্ণ করা বিধান অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করেনা, তারাই অত্যাচারী।
৪৬. এ ক্রমধারায় অতঃপর আমি মারইয়াম পুত্র ঈসাকে পাঠিয়েছি, (সে সময়) আগে তেকে তাওরাতের যাি কিছু (অবশিষ্ট) ছিলো, সে ছিলো তার সত্যতা স্বীকারকারী, আর আমি তাকে ইনজীল দান করেছি, তাতে ছিলো হেদায়াত ও নূর; তখন তাওরাতের যা কিছু (তার নিকট বর্তমান ছিলো-ইনজীল (কিতাব) তার সত্যতাও সে স্বীকার করেছে, (তদুপরি) তাতে আল্লাহভীরু লোকদের জন্যে পথনির্দেশ ও উপদেশ (মজুদ) ছিলো।
৪৭. ইনজীলের অনুসারীদের উচিত এর ভেতর আল্লাহ পাক যা কিছু অবতীর্ণ করেছেন তার ভিত্তিতে বিচার ফয়সালা করা; (কারণ) যারাই আল্লাহর অবতীর্ণ করা আইনের ভিত্তিতে বিচার করেনা তারাই ফাসেক।
৪৮. (হে মুহাম্মদ) আমি তোমার প্রতি সত্য (দ্বীন) সহএ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, (আগের) কিতাবসমূহের যা কিছু (অবিকৃত অবস্থায়) তার সামনে মজুদ রয়েছে, এ কিতাব তার সত্যতা স্বীকার করে (শুধু তাই নয়), এ কিতাব (তার ওপর) হেফাযতকারীও বটে! (সুতরাং) আল্লাহ পাক যেসব বিধি বিধান অবতীর্ণ করেছেন তার ভিত্তিতেই আপনি তাদের মধ্যে বিচার ফয়সালা করুন, আর (এ বিচারের সময়) আপনার নিজের কাছে যা সত্য (দ্বীন) এসেছে, তার থেকে সরে গিয়ে তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করবেন না; আমি তোমাদের প্রতিটি (জাতির) জন্যে শরীয়ত ও কর্মপন্থা নির্ধারণ করে দিয়েছি; আল্লাহ পাক চাইলে তোমাদের সবাইকে একই উম্মত বানিয়ে দিতে পারতেন; বরং তিনি তোমাদের যা দিয়েছেন তার ভিত্তিতে তোমাদের যাচাই বাছাই করে নিতে চেয়েছেন, অতএব ভালো কাজে তোমরা সবাই প্রতিযোগীতা করো; (কারণ) আল্লাহ পাকের দিকেই হবে তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তনস্থল, (একানে) তোমরা যেসব বিষয় নিয়ে মতভেদ করতে, (অতঃপর) তিনি অবশ্যই তা তোমাদের (স্পষ্ট করে) বলে দেবেন।
৪৯. (অতএব, হে মুহাম্মদ!) আপনার ওপর আল্লাহ পাক যে আইন-কানুন অবতীর্ণ করেছেন আপনি তারই ভিত্তিতে এদের মাঝে বিচার ফয়সালা করুন এবং কখনো তাদের খেয়াল খুশীল অনুসরণ করবেন না এবং তাদের থেকে সাবধান খাকুন, যা কিছু আল্লাহ পাক আপনার ওপর অবতীর্ণ করেছেন তার কোনো কোনো বিষয়ে যেন তারা কখনো আপনাকে ফেতনায় না ফেলতে পারে; অতঃপর (আপনার ফয়সালায়) যদি এরা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে জেনে রাখুন, আল্লাহ পাক তাদের নিজেদেরই কোনো গুনাহের জন্যে তাদের কোনো রকম মসিবতে ফেলতে চান; মানুষের মাঝে (আসলে) অধিকাংশই হচ্ছে অবাধ্য।
৫০. তবে কি তারা পুনারায় জাহেলিয়াতের বিচার ব্যবস্থা তালাশ করছে? অথচ যারা (আল্লাহকে) দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, তাদের নিকট আল্লাহ পাকের চাইতে উত্তম বিচারক আর কে হতে পারে?
৫১. হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা (কখনো) ইহুদী-খৃষ্টানদের নিজেদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। (কারণ) এরা নিজেরা (সব সময়ই) একে অপরের বন্ধু; তোমাদের মধ্যে কেউ যদি (কখনো) এদের কাউকে বন্ধু বানিয়ে নেয় তাহলে সে তাদেরই দলভূক্ত হয়ে যাবে; আর আল্লাহ পাক কখনো অত্যচারী সম্প্রদায়কে হেদায়াত দান করেন না।
৫২. অতঃপর যাদের মনে (মুনাফিকীর) ব্যাধি রয়েছে তাদের আপনি দেখবেন, তারা (বিশেষ) তৎপরতার সাথে এই বলে তাদের সাথে মিলিত হচ্ছে যে, আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে, কোনো বিপর্যয় এসে আমাদের ওপর আপতিত হবে; পরে হয়তো আল্লাহ (তোমাদের কাছে) বিজয় নিয়ে আসবেন কিংবা তাঁর কাছ তেকে অন্য কিছু (অনুগ্রহ তিনি দান করবেন), তখন (তা দেখে এ) লোকেরা নিজেদের মনের ভেতর যে কপটতা লুকিয়ে রেখেছিলো, তার জন্যে ভীষণ অনুতপ্ত হবে।
৫৩. (তখন) ঈমানদার লোকেরা বলবে, এরাই কি চিলো সেসব মানুষ, যারা মহান আল্লাহর নামে বড় বড় কসম করতো (যে), তারা অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে আছে; (এ আচরণের ফলে) তাদের কার্যকলাপ বিনষ্ট হয়ে গেলো, অতঃপর তারা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হযে পড়লো।
৫৪. হে মানুষ! তোমরা যারা মহান আল্লাহর ওপর ঈমান এনছো, তোমাদের মধ্যে কোনো লোক যদি নিজের দ্বীন (ইসলাম) তেকে (মুরতাদ হয়ে) ফিরে আসে (তাতে আল্লাহ পাকের কোনো ক্ষতি নেই,) তবে আল্লাহ পাক অচিরেই (এখানে) এমন এক জাতির উত্থান ঘটাবেন যাদের তিনি ভালোবাসবেন, তারাও তাঁকে ভালোবাসবে, (তারা হবে) মু;মিনদের প্রতি কোমল ও কাফেরদের প্রতি কঠোর, তারা মহান আল্লাহর পথে সংগ্রাম করবে, কোনো নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া তারা করবে না; (মূলত) এ (সাহসটুকু) হচ্ছে মহান আল্লাহর একটি অনুগ্রহ, যাকে চান তাকেই তিন তা দান করেন; আল্লাহ পাক প্রাচুর্যময় ও প্রজ্ঞার অাঁধার।
৫৫. তোমাদের একমাত্র পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন আল্লাহ পাক, তাঁর রাসূল এবং সেসব ঈমানদার লোকেরা, যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে, (সর্বোপরি আল্লাহ পাকের সামনে যারা) সদা অবনমিত থাকে।
৫৬. আর যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক, তাঁর রাসূল ও ঈমানদারদের নিজের বন্ধুরুপে গ্রহণ করবে (তারা যেন জেনে রাখে), কেবলমাত্র আল্লাহ পাকের দল্ই বিজয়ী হবে।
৫৭. হে ঈমানদার লোকেরা, তোমাদের আগে যাদের (আল্লাহ পাকের) কিতাব দেয়া হয়েছিলো, তাদের মধ্যে যারা তোমাদের দ্বীনকে বিদ্রুপ ও খেল-তামাশার বন্তুতে পরিণত করে রেখেছে, তাদের এবং কাফেরদের কখনো তোমরা নিজেদের বন্ধু বানিয়ো না, যদি তোমরা সত্যিকার অর্থে মু'মিন হয়ে থাকো তবে একমাত্র মহান আল্লাহকেই (বন্দু বানাও এবং তাঁকেই) ভয় করো।
৫৮. যখন তোমরা (মানুষদের) নামাযের জন্যে ডাকো, তখন এই ডাককে এরা হাসি-তামাশা ও খেলোর বস্তু বানিয়ে দেয়; এরা হচ্ছে এমন এক জাতি, যারা (হক-বাতিলের) কিছুই বোঝে না।
৫৯. (হে রাসূল!) আপনি এদের বলুন, তোমরা যে আমাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিচ্ছো, তার কারণ এই যে, আমরা আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছি এবং আমাদের ওপর আগে ও বর্তমানে যা কিচু অবতীর্ণ করা হয়েছে তার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি! (আসলে) তোমাদের অধিকাংশ (মানুষই) হচ্ছে অমান্যকারী ও অবাধ্য।
৬০. (হে রাসূল!) আপনি বলুন, আমি কি তোমাদের বলে দেবো-আল্লাহর নিকট তেকে সবচাইতে নিকৃষ্ট পুরস্কার কে পাবে? সে লোক (হচ্ছে,) যার ওপর আল্লাহ পাক লা'নত দিয়েছেন, যার ওপর আল্লাহর কো্রাধ রয়েছে এবং যাদের কিছু লোককে তিনি বানর, (কিছু লোককে) শূকরে পরিণত করে দিয়েছেন, যারা মিথ্যা মা'বুদের আনুগত্য স্বীকার করেছে; এবাই হচ্ছে সেসব লোক, (আখিরাতে) যাদের অবস্থান হবে অত্যন্ত নিকৃষ্ট এবং (দুনিয়াতেও) এরা সরল পথ থেকে (বহুদূরে) বিচ্যুত হয়ে পড়েছে।
৬১. তারা যখন তোমার সামনে আসে তখন বলে, আমরা ঈমান এনছি, (আসলে) তারা তোমার কাছে কুফরী নিয়েই প্রবেম করছিলো এবং তা নিয়েই তোমার নিকট থেকে তারা বেরিয়ে গেছে; (তারা মনের ভেতর) যা কিছু লুকিয়ে রেখেছিলো আল্লাহ পাক সে ব্যাপারে পূর্ণ জ্ঞাত রয়েছেন।
৬২. তাদের অনেককেই আপনি দেখতে পাবেন-পাপ, (আল্লাহর সাথে) বিদ্রোহ ও অবৈধ সম্পদ ভোগ করার কাঝে এরা একে অণ্যের সাথে প্রতিযোগীতা করে চলেছে; এরা যা করে (মূলত) তা বড়ই নিকৃষ্ট কাজ!
৬৩. (কতো ভলো হতো এদের) ধর্মীয় নেতা ও পণ্ডিত ব্যক্তিরা যদি এদের এসব পাপের কথা ও অবৈধ সম্পদ ভোগ করা থেকে বিরত রাখতো! (কারণ) এরা যা কিছু (সংগ্রহ) করছে তা বড়ই জঘন্য!
৬৪. ইহুদীরা বলে, মহান আল্লাহর (দানের) হাত বাঁধা পড়ে গেছে, (আসলে) তাদের নিজেদের হাতই বাঁধা পড়ে গেছে, আর তারা যা কিছু বলেছে সে জন্যে তাদের ওপর আল্লাহ পাকের লানত অবতীর্ণ করা হয়েছে। আল্লাহর তো (দুনিয়া আখেরাতের ) উভয় হাতই মুক্ত, যেভাবে তিনি চান সেভাবেই তিনি দান করেন। (পৃকৃত ঘটনা হচ্ছে), তোামার প্রভুর পক্ষ তেকে যা কিচু তোমার ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা তাদের অনেকেরই সীমালঙ্ঘন ও কুফরীকে অবশ্যই বাড়িয়ে দিয়েছে; (ফলে) আমি তাদের মাঝে কেয়ামত পর্যন্ত একটা শত্রুতা ও পরস্পর বিদ্বেষ সঞ্চার করে দিয়েছি; যখনি তারা যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছে, আল্লাহ পাক তখনি তা নিভিয়ে দিয়েছেন, তোরা (বার বার) এ যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টির প্রয়াস পেয়েছে; আসলে আল্লাহ পাক বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের মোটেই পচন্দ করেন না।
৬৫. যদি আহলে কিতাবরা ঈমান আনতো এবং (আল্লাহকে) ভয় করতো, তবে অবশ্যই আমি তাদের পাপখাতা মুছে দিতাম এবং তাদের আমি অবশ্যই নেয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাতাম।
৬৬. যদি তারা তাওরাত ও ইনজীল (তথা তার বিধান) প্রতিষ্ঠা করতো, আর যা তাদের ওপর তাদের প্রভুর নিকট তেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে তার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতো, তাহলে তারা রিযিক পেতো তাদের মাথার ওপরের (আসমান) তেকে ও তাদের পায়ের নীচের (যমীন) থেকে; তাদের মধ্যে অবশ্য একদল (ন্যায় ও) মধ্যপন্থী লোক রয়েছে, তবে তাদের অধিকাংশই হচ্ছে এমন, যাদের কর্মকান্ড খুবই নিকৃষ্ট!
৬৭. হে রাসূল! যা কিছু আপনার ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে তা আপনি (অন্যের কাছে) পৌছে দিন, যদি আপনি (তা) না করেন তাহলে আপনি তো (মানুষদের কাছে) তার বার্তা পৌছে দিলেন না! আল্লাহ পাক তোমাকে মানুষের (অনিষ্ট) থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন; নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কখনো কোনো অবাধ্য জাতিকে পথ প্রদর্শন করেন না।
৬৮. আপনি (তাদের) বলুন, হে আহলে কিতাবরা! যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাওরাত, ইনজীল ও তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা প্রতিষ্ঠিত না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত (মনে করতে হবে), তোমরা কোনো কিচুর ওপরই প্রতিষ্ঠিত নেই; তোমার প্রভুর কাছ তেকে যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে তা তাদের অনেকেরই সীমালঙ্ঘন ও কুফরী বাড়িয়ে দেবে, সুতরাং আপনি এই কাফের জাতির জন্যে মোটেই আফসোস করবেন না।
৬৯. নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনছে এবং যারা চিলো ইহুদী, সাবেরী, খৃস্টান-(এদের) যে কেউই এক আল্লাহ পাক ও শেষ বিচার দিনের ওপর ঈমান আনবে এবং সৎকর্ম করবে, তাদের কোনো ভয় নেই, (আখিরাতেও) তাদের কোনো দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতে হবে না।
৭০. বনী ইসরাঈলের কাচ থেকে আমি (আনুগত্যের) অঙ্গীকার আদায় করে নিয়েছিলাম এবং (সে মোতাবেক) আমি তাদের নিকট রাসূলদের প্রেরণ করেচিলাম; কিন্তু যখনি কোো রাসূল তাদের কাছে এমন কিছু (বিধান) নিয়ে উপস্থিত হয়েছে, যা তাদের পছন্দসই ছিলো না, তখনি তারা (এ রাসূলদের) একদলকে মিথ্যাবাদী বলেছে, আরেক দলকে তারা খুন করেছে।
৭১. তারা ধরে নিয়েছিলো, (এতা কিছু করা সত্ত্বেও) তাদের জন্যে কোনো বিপর্যয় থাকবে না, তাই তারা (সত্য গ্রহণ করার ব্রাপারে) অন্ধ ও বধির হয়ে থাকলো, তারপরও আল্লাহ পাক তাদের ওপর ক্ষমাপরবশ হলেন, অতঃপর তাদের অনেকেই আবার অন্ধ ও বধির হয়ে গেলো; তারা যা কিচু করেছে আল্লাহ পাক তা পর্যবেক্ষণ করছেন।
৭২. নিশ্চয়ই তারা কাফের হয়ে গেছে যারা ৯একথা) বলেছে, আল্লাহ হচ্ছেন মারইয়ামের পুত্র মাসীহ; অথচ মাসীহ (নিজেই একথা) বলেছে যে, হে বনী ইসরাঈল! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদাত করো; যিনি আমারও প্রভু, তোমাদেরও প্রভু; মূলত যে কেউই আল্লাহর সাথে শরীক করবে, আল্লাহ পাক তার ওপর বেহেস্ত হারাম করে দেবেন, আর তার (স্থায়ী) ঠিকানা হবে জাহান্নাম; এ অত্যচারীদের (সেদনি) কোনো সাহায্যকারীই থাকবে না।
৭৩. তারাও কুফরী করেছে যারা বলেছে, তিন জনের মধ্যে তৃতীয় জন হচ্ছেন আল্লহ। অথচ এক আল্লাহ পাক ব্যতীত আর কোনো ইলাহ নেই; তারা যদি এখনো তাদের এসব (অলীক) কথাবার্তা থেকে ফিরে না আসে, তবে তাদের মাঝে যারা ৯একথা বলে) কুফরী করেছে, তাদের অবশ্যই কঠিন যন্ত্রণাদায়ক আযাবে পেয়ে যাবে।
৭৪. তারা কি মহান আল্লাহর কাছে তাওবা করবে না? (কখনো কি) তারা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? আল্লাহ পাক অতীব ক্ষমাশীল ও দয়াময়।
৭৫. মারইয়াম পুত্র মাসীহ তো রাসূল ব্যতীত কিছুই চিলো না, তার আগেও (তার মতো) অনেক রাসূল গত হয়েছে; তার মা চিলো এক সত্যনিষ্ঠ মহিলা; তারা (মা ও ছেলে) উভয়ই (আরদু'দশটি মানুষের মতো করেই) খাবার খেতো, আপনি লক্ষ্য করে দেখুন, আমি কিভাবে (আমার) আয়াতগুলো খুলে কুলে বর্ণনা করছি, আপনি দেখুন, কিভাবে তারা সত্যবিশুখ হয়ে যাচ্ছে।
৭৬. আপনি বলুন, তোমরা কি মহান আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কিছুর ইবাদাত করচো যা তোমাদের কোনো ক্ষতি কিংব াউপকার কিছুই করার ক্ষমতা রাখেনা; (প্রকৃতপক্ষে) আল্লাহ পাক (সব কিছুই) শোনেন এবং (সব কিছুই) জানেন।
৭৭. আপনি বলুন, হে আহলে কিতাবরা, তোমরা কখনো নিজেদের দ্বীনের ব্যাপারে অন্যায় বাড়াবাড়ি করো না, (মাসীহের ব্যাপারে) তোমরা সেসব জাতির খেয়ালখুশীর অনুসরণ করো না, যারা তোমাদের আগেই পথব্রষ্ট হয়ে গেছে এবং তারা অনেক লোককেই গোমরাহ করে দিয়েছে, আর তারা নিজেরাও সহজ সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে।
৭৮. নবী ইসরাঈলদের আরো যারা (মাসীহের ব্যাপারে মহান আল্লাহর এ ঘোষণা) অস্বীকার করেছে, তাদের ওপর দাউদ ও মারইয়াম পুত্র ঈসার মুখ তেকে লা'নত দেয়া হয়েছে; কেননা, তারা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে এবং সীমালঙ্ঘন করেছে।
৭৯. তারা যেসব গর্হিত কাজ করতো তা থেকে তারা একে অপরকে বারণ করতো না, তারা যা করতো নিঃসন্দেহে তা ছিলো নিকৃষ্ট।
৮০. তুমি তাদের মাঝে এমন বহু লোককে দেখতে পাবে, যারা (ঈমানদারদের বদলে) কাফেরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতেই বেশী আগ্রহী, অবম্য তারা নিজেরা যা কিছু অর্জন করে সামনে পঠিয়েছে তাও অতি নিকৃষ্ট, এ জন্যে আল্লাহ পাক তাদের ওপর ক্রোধান্বিত হয়েছেন, এ লোকেরা চিরকাল আযাবেই নিমজ্জিত থাকবে।
৮১. তারা যদি সত্যিই আল্লাহ পাক, (তাঁর) নবী ও তাঁর প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার প্রতি যথাযথ ঈমান আনতো, তাহলে এরা কাফেরদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতো না, কিন্তু তাদের তো অধিকাংশ লোকই হচ্ছে পাপী।
৮২. অবশ্যই তোমরা ঈমানদারদের সাথে শত্রুতা রব্যাপারে ইহুদী ও মুশরিকদেরই বেশী কঠোর (দেখতে) পাবে, (অন্যদিকে) মু'মুমিনদের সাথে বন্ধুত্বের ব্যাপারে তোমরা সেসব লোককে (কিছুটা) নিকটতর পাবে, যারা বলেছে আমরা কৃস্টান; এটা এ কারণে যে, (তখনো) তাদের মধ্যে দমীূয় পন্ডিত ব্যক্তি ও সংসারবিরাগী ফকীর-দরবেশরা মজুদ ছিলো, অবশ্যই এ ব্যক্তিরা অহংকার করে না।
৮৩. রাসূলের ওপর যা কিছু অবতীর্ণ করা হয়েছে তা যখন এরা শোনে, তখন সত্য চেনার কারণে তুমি এদের অনেকের চোখকেই দেখতে পাবে অশ্রুসজল, (নিবেদিত হয়ে) তারা বলে ওঠে, হে আমাদের প্রভু, আমরা ঈমান এনছি, তুমি আমাদের (নাম) সত্যের সাক্ষ্যদাতাদের দলে লিখে নাও।
৮৪. আল্লাহ পাকের কাছ থেকে আমাদের নিকট যা কিছু সত্য এসছে তার ওপর আমরা ঈমান আনবো না কেন? (অথচ) আমরা এ প্রত্যাশা করি যে, আমাদের প্রভু আমাদের সৎকর্মশীলদের দলভুক্ত করে দেবেন,
৮৫. অতঃপর তারা যা বললো সেজন্যে আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট হয়ে (আখিরাতে) তাদের এমন এক বেহেশত দান করবেন, যার তলদেশ দিয়ে (অমীয়) ঝর্ণাধারা প্রবাহমান থাকবে, সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী; আর এটাই হচ্ছে নেককার লোকদের (যথার্থ) পুরস্কার।
৮৬. অপরদিকে যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতগুলো যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, তারা সবাই হবে দোযখের অধিবাসী।
৮৭. হে ঈমানদার লোকেরা! আল্লাহ পাক তোমাদের জন্যে যে পবিত্র জিনিসগুলো বৈধ করে দিয়েছেন, তোমরা সেগুলো (নিজেদের জন্যে) অবৈধ করে নিয়ো না, আর কখনো (হারামের) সীমালঙ্ঘন করো না; অবশ্যই আল্লাহ পাক সীমালঙ্ঘনকারীদের পচন্দ করেন না।
৮৮. আল্লাহ পাক তোমাদের যে বৈধ ও পবিত্র রিযিক দান করেছেন তোমরা তা খাও এবং (এ ব্যাপারে) সে আল্লাহ পাককে ভয় করো, যাঁর ওপর তোমরা ঈমান এনছো।
৮৯. আল্লাহ পাক তোমাদের অর্থহীন শপথের জন্যে তোমাদের পাকড়াও করবেন না, কিন্তু যে কসম তোমরা জেনে বুঝে করো তার ব্রাপারে আল্লাহ পাক অবশ্যই তোমাদের পাকাও করবেন, অতঃপর তার কাফফারা হচ্ছে দশজন গরীব মিসকীনকে মধ্যম মানের খাবার খাওয়ানো, যা তোমরা (সচরাচর) নিজেদের পরিবার পরিজনদের খাইয়ে থাকো, যে ব্যক্তি (এর কোনোটাই) পাবে না, তার জন্যে (কাফফারা হচ্ছে) তিন দিন রোযা ৯রাখা); কসম ভাঙলে তোমাদের (কসম ভাঙ্গার) এ হচ্ছে কাফফারা; (অতএব) তোমরা তোমাদের শপথসমূহ রক্ষা করো; আল্লাহ পাক এভাবেই তাঁর আয়াতসমূহ তোমাদের নিকট বিশদভাবে বর্ণনা করেন যাতে করে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে পারো।
৯০. হে মানুষ! তোমরা যারা ঈমান এনেছো (তোমরা জেনে রেখো), মদ, জুয়া, পূজার বেদী ও ভাগ্যনির্ণায়ক শর হচ্ছে গৃণিত শয়তানের কাজ , অতএব তোমরা তা (সম্পূর্ণরুপে) বর্জন করো, আশা করা যায় তোমরা মুক্তি পেয়ে যাবে।
৯১. শয়তান এ মদ ও জুয়ার মধ্যে (ফেলে) তোমাদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে নিতে চায় এবং এবাবে সে তোমাদের মহান আল্লাহর স্মরণ ও নামায তেকে দূরে সরিয়ে রাখে, তোমরা কি (এ কাজ তেকে) ফিরে আসবে না?
৯২. তোমরা (সর্ববিষয়ে) মহান আল্লাহর আনুগত্য করো, আনুগত্য করো (তাঁর) রাসূলের, (মদ ু জুয়ার ধ্বংসকারীতা েথেকে) সাবধান থেকো, আর তোমরা যদি (রাসূলের নির্দেশনা থেকে) মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে জেনে েখো, আমার রাসূলের দায়িত্ব হচ্ছে সুস্পষ্টভাবে (আমার কথাগুলো) পৌছে দেয়া।
৯৩. যারা ঈমান এনছে এবং নেক কাজ করেছে, (এ নিষেধাজ্ঞা জারির আগে) তারা যা কিছু কেয়েছে তার জন্যে তাদের ওপর কোনোই পাক নেই, (হ্যাঁ, ভবিষ্যতে) যদি তারা সাবধান থাকে, (আল্লাহর ওপর) ঈমান আনে এবং নেক আমল করে, অতঃপর (আল্লাহ পাকের নিষেধ থেকে) তারা সাবধান থাকে, (একইভাবে যতক্ষণ পর্যন্ত) তারা ঈমান আনবে ও নেক আমল করবে, অতঃপর আল্লহ পাককে ভয় করবে ও সততার নীতি অবলম্বন করতে থাকবে (আল্লাহ পাক অবশ্যই তাদের ক্ষমা করে দেবেন, কেননা); আল্লাহ পাক সৎকর্মশীল মানুষদের ভালোবাসেন।
৯৪. হে ঈমানদার লোকেরা! ৯ইহরাম বাঁধা অবস্থায়) আল্লাহ পাক অবশ্যই এমন কিচু শিকারের বস্তু দিয়ে তোমাদের পরীক্ষা নেবেন, যেগুলো তোমরা সহজেই নিজেদের হাত ও বর্শা দ্বারা ধরতে পারো, যেন মহান আল্লাহ এ কথা ভালো করে জেন নিতে পারেন যে, কে তাঁকে গায়বের সাথে ভয় করে, সুতরাং এরপরও যদি কেউ সীমালঙ্ঘন করে, তার জন্যে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
৯৫. হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, ইহরাম (বাঁধা) অবস্থায় কখনো শিকার হত্যা করো না, যদি তোমাদের কেউ (এ অবস্থায়) জেনে-বুঝে কেউ তাকে খুন করে (তার জন্যে এর বিনিময় হচ্ছে), সে যে জন্তু খুন করেছে তার সমান পর্যায়ের একটি গৃহপালিত জন্তু কোরবানী হিসেবে কাবায় পৌছে দেবে, (যার) ফয়সালা করবে তোমাদের দু'জন ন্রায়বান বিচারক ব্যক্তি, কিংবা (তার জন্যে) কাফফারা হবে (কয়েকজন) গরীব-মিসকীনকে খাওয়ানো অথবা সমপরিমাণ রোযা রাখা, যাতে করে সে আপন কৃতকর্মের স্বাদগ্রহণ করতে সক্ষম হয়, (এ নিষেধাজ্ঞা জারির আগে) যা কিছু গত হয়ে গেছে আল্লাহ পাক তা মাফ করে দিয়েছেন; কিন্তু ৯এরপর) যদি কেউ (এর) পুনরাবৃত্তি করে, তাহলে আল্লাহ পাক (অবশ্যই) তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নেবেন; আর আল্লাহ পাক পরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণে প্রবল শক্তিমান।
৯৬. তোমাদের জন্যে সমুদ্রের শিকার বৈধ করা হয়েছে এবং তার খাবার হচ্ছে তোমাদের জন্যে (উৎকৃষ্ট) সম্পদ, (মনে রাখবেই), যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা ইহরাম (বাঁধা) অবস্থায় থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত (শুধু) স্থলভাগের শিকারই তোমাদের জন্যে অবৈধ থাকবে; তেমরা ভয় করো আল্লাহ পাককে, যাঁর সমীপে তোমাদের সবাইকে জড়ো করা হবে।
৯৭. আল্লাহ পাক (কানায়ে) কা'বাকে সম্মানিত করেচেন মানব জাতির জন্যে (তার) বিত্তি হিসেবে (তিনি একে প্রতিষ্ঠা করেচেন), একইভাবে তিনি সম্মানিত করেছেন (হজ্জের) পবিত্র মাসগুলোকে, কোরবানীর জন্তুগলোকে এবং (এ উদ্দেশ্যে বিশেষ) পট্টি বাঁধা জন্তুগুলোকে, এসব (বিধান) এ জন্যেই (দেয়া হয়েছে) যাতে করে তোমরা (এ কথা) জেনে নিতে পারো যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর যেখানে যা কিচু আছে মহান আল্লাহ তা সবই জানেন, আর নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সব বিষয়ে সর্বজ্ঞ।
৯৮. তোমরা জেনে রেখো! আল্লাহ পাক শাস্তিদানের ব্যাপারে (যেমনি) কঠোর, (তেমনি পুরস্কারের বেরায়) আল্লাহ পাক অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
৯৯. রাসূলের দায়িত্ব (হেদায়াতের বাণী) পৌছে দেয়া ব্যতীত আর কিচুই নয়, আর তোমরা যা কিচু প্রকাশ করো, যা কিছু গোপন রোখো, আল্লাহ পাক তা সবই জানেন।
১০০. (হে রাসূল!) আপনি বলুন, পাক এবং নাপাক জিনিস কখনো সমান হতে পারে না, নাকাপক জিনিসের প্রাচুর্য যতোই তোমাকে চমৎকৃত করুক না কেন! অতএব, হে জ্ঞানবান মানুষ! তোমরা মহান আল্লাহকে ভয় করো, (আশা করা যায়) তোমরা সফলকাম হতে পারবে।
১০১. হে ঈমানদার লোকেরা! (আল্লাহর নবীর কাছে) এমন সব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করো না, যার উত্তর প্রকাশ করা হলে (তাতে) তোমাদের কষ্ট হবে, অবশ্য কোরআন অবর্তী হবার মুহুর্তে যদি তোমরা সে প্রশপন করো, তাহলে তা তোমাদের কাছে প্রকাশ করা হবে; (এ বিধান জারির) আগে যা কিছু হয়ে গেছে তা আল্লাহ পাক তোমাদের মাফ করে দিয়েছেন; কেননা, আল্লাহ পাক পরম ক্ষমাশীল ও ধৈর্যশীল।
১০২. তোমাদের আগেও কিছু জাতি (তাদের নবীকে এ ধরনের) প্রশ্ন করতো, কিন্তু এর পরক্ষণেই তারা তা অমান্য করতে শুরু করলো।
১০৩. দেবতার উদ্দেশ্যে প্রেরিত (কান ছেঁড়া) 'বহীরা', (দেবতার নামে উৎসর্গীকৃত) 'সায়েরা', (দেবতার উদ্দেশ্যে চেড়ে দেয়া নর ও মাদী বাচ্চা প্রসবকারী) 'ওয়াসীলা' ও (দেবতার উদ্দেশ্যে চেড়ে দেয়া দশ বাচ্চা প্রসবকারিণী উষ্ট্রী) 'হাম'-এর কোনোটাই কিন্তু আল্লাহ পাক নির্দিষ্ট করে দেননি, বরং কাফেররাই ৯এসব কুসংস্কার দিয়ে) আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করে, আর এদের অধিকাংশ লোক তো (সত্য-মিথ্যার তফাৎটুকুও) উপলব্ধি করে না।
১০৪. যখন এদের বলা হয়, মহান আল্লাহ যা কিছু অবতীর্ণ করেছেন তোমরা সেদিকে এসো, (এসো তাঁর) রাসূলের দিকে, (তখন) তারা বলে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের যে বিধানের ওপর পেয়েছি তা-ই আমাদের জন্যে যথেষ্ট; যদিও তাদের বাপ-দাদারা (সত্য-মিথ্যা সম্পর্কে) কিচুই জানতো না এবং তারা হেদায়াতের পথেও চলতো না।
১০৫. হে ঈমানদার লোকেরা! তোমাদের নিজেদের দায়িত্ব তোমাদের নিজেদের ওপর, অপর (কোনো) ব্যক্তি যদি গোমরাহ হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে সে পথব্রষ্ট ব্যক্তি তোমাদের কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা নিজেরা সঠিক পথের ওপর চলতে থাকবে; তোমাদের ফেরার জায়গা (কিন্তু) মহান আল্লাহর দিকেই, এরপর আল্লাহ পাক তোমাদের (সেদিন) বলে দেবেন তোমরা কে কী করছিলে!
১০৬. হে ঈমানদার ব্যক্তিরা! তোমাদের কারো যখন মৃত্যু (সময়) এসে উপস্থিত হয়, ওসিয়ত করার এ মুহুর্তে তোমরা তোমাদের মধ্য তেকে দু'জন ন্যায়পরায়ণ মানুষকে সাক্ষী বানিয়ে রাখবে, আর যদি তোমরা প্রবাসে থাকো এবং এসময় যদি তোমাদের ওপর মৃত্যুর বিপদ এসে পড়ে, তখন বাইরের লোকদের মধ্য থেকে দু'জন ব্যক্তিকে সাক্ষী বানিয়ে নেবে; (তারপর যদি এ ব্যাপারে) তোমাদের কোনো সন্দেহ দেখা দেয়, তাহলে (সাক্ষী) দু'জনকে নামাযের পর আটকে রাখবে, অতঃপর তারা মহান আল্লাহর নামে কসম করে বলবে, আমরা কোনো স্বার্থের খাতিরে এ সাক্ষ্য বিক্রি করবো না, (এর কোনো পক্ষ আমাদের) ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হলেও (নয়), আমরা মহান আল্লাহর (জন্যে এ) সাক্ষ্য গোপন করবো না, (কারণ) আমরা যদি তেমন কিছু করি তাহলে আমরা পাপীদের দলে শামিল হয়ে যাবো।
১০৭. পরে যদি একথা প্রকাশ পায়, এ (বাইরের) দু'জন সাক্ষী অপরাধে লিপ্ত চিলো, তাহলে আগে (যাদের) স্বার্থহানি ঘটেচিলো তাদের মধ্য তেকে দু'জন সাক্ষী তাদের স্থলাবিষিক্ত হবে, তারা (এসে) মহান আল্লাহর নামে শপথ করে বরবে, আমাদের সাক্ষ্য অবশ্যই তাদের সাক্ষ্য অপেক্ষা বেশী সত্যভিত্তিক (হবে), আমরা (সাক্ষ্যের ব্যাপারে) সীমালঙ্ঘন করিনি (আমরা যদি তেমনটি করি), তাহলে আমরা অত্যাচারীদের দলভুক্ত হয়ে পড়বো।
১০৮. এ (পদ্ধতি)-তে বেমী আশা করা যায় যে, তারা ঠিক ঠিক সাক্ষ্য নিয়ে আসবে অথবা তারা অন্ততপক্ষে এ ভয় করবে যে, (তাদের) শপথ আবার অন্য কারো শপথ দ্বারা বাতিল করে দেয়া হবে; তোমরা আল্লাহ পাককে ভয় করো এবং (রাসূলের কথা) শোনো; আল্লাহ পাক কখনো পাপী লোকদের সৎপথে পরিচালিত করেন না।
১০৯. যেদিন আল্লাহ পাক সকল রাসূলকে একত্রিত করে জিজ্ঞেস করবেন, তোমাদের (দাওয়াতের প্রতি মানুষদের পক্ষ থেকে) কিবাবে সাড়া দেয়া হয়েছিলো; তারা বলবে, আমরা তো (তার) কিচুই জানি না; সমস্ত গায়বের বিষয়ে তুমিই পরিজ্ঞাত।
১১০. (মনে করো,) যখন আল্লাহ পাক বললেন, হে মারইয়াম পুত্র ঈসা! আমার সেই নেয়ামতের কথা স্মরণ করো যা আমি তোমাকে ও তোমার মাকে দান করেছিলাম, যখন আমি পবিত্র আত্মা দিয়ে তোমাকে সাহায্য করেছিলাম। তুমি মানুষের সঙ্গে (যেমনি) দোলনায় থাকতে কথা বলতে, (তেমনি বলতে) পরিণত বয়সেও, আমি যখন তোমাকে কিতাব, জ্ঞান-বিজ্ঞান, তাওরাত ও ইনজীল দান করেছিলাম, যখন তুমি আমারই হুকুমে কাঁচা মাটি দিয়ে পাখি সদৃশ আকৃতি বানাতে, অতঃপর তাতে ফুঁ দিতে, আর আমার আদেশক্রমেই তা পাখী হয়ে যেতো, আমারই আদেশে তুমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে নিরাময় করে দিতে, আমারই আদেশে তুমি মৃতদের (কবর থেকে) বের করে আনতে, পরে যখন তুমি তাদের নিকট (নবুওয়্যাতের) এসব নিদর্শন নিয়ে পৌছাল, তখন তাদের মধ্যে যারা (তোমাকে) অস্বীকার করেছিলো তারা বললো, এ নিদর্শনগুলো যাদু ব্যতীত আর কিছুই নয়, তখন আমিই তোমার ৯কোনো অনিষ্ট সাধন) তেকে বনী ইসরাঈলদের নিবৃত্ত করে রেখেছিলাম।
১১১. (আরো মনে করো!) যখন আমি হাওয়ারীদের (অন্তরে) এ প্রেরণা দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার প্রতি ও আমার রাসূলের প্রতি ঈমান আনো, তারা বললো (হে প্রভু), আমরা (তোমার ওপর) ঈমান আনলাম, তুমি (এ কথার) সাক্ষী থেকো যে, আমরা তোমার অনুগত ছিলাম।
১১২. (অতঃপর) যখন এই হাওয়ারীদের দল বললো, হে মারইয়াম-পুত্র ঈসাং তোমার প্রবু কি আসমান তেকে খাবার সজ্জিত একটি খাঞ্চা আমাদের জন্যে পাঠাতে পারেন? ঈসা উত্তর দিলো, (সত্যিই) যদি তোমরা মু'মিন হয়ে থাকো, তাহলে ৯কোনো অহেতুক দাবী পেশ করার ব্যাপারে) তেমরা আল্লাহ পাককে ভয় করো।
১১৩. তারা বললো, আমরা (শুধু এটুকুই) চাই যে, মহান আল্লাহর পাঠানো সেই (খাঞ্চা) থেকে (কিুছু) খাবার খেতে, এতে আমাদের মন পরিতৃপ্ত হয়ে যাবে, (তাছাড়া এতে করে) আমরা এও জানতে পারবো তুমি আমাদের নিকট সঠিক কথা বলেছো, আমরা নিজেরাও এর ওপর সাক্ষী হবো।
১১৪. মারইয়াম-পুত্র ঈসা (আল্লাহর দরবারে) বললো, হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রভু! তুমি আমাদের জন্যে আসমান থেকে খাবার সজ্জিত একটি খাহ্চা ফাঠাও, এ হবে আমাদের জন্যে, আমাদের পূর্ববর্তী ও আমাদের পরবর্তীদের জন্যে তোমার নিকট থেকে (পাঠানো) একটি আনন্দোৎসব; (সর্বোপরি এটা) হবে তোমার (কুদরতের একটি) নিদর্শন, তুমি অমাাদের রিযিক দাও, কারণ তুমিই হচ্ছো উত্তম রিযিকদাতা।
১১৫. আল্লাহ পাক বললেন, হ্যাঁ, আমি তোমাদের ওপর (অচিরেই) তা পাঠাচ্ছি, তবে এরপরও যদি তোমাদের কেউ (আমার ক্ষমতা) অস্বীকার করে, তাহলে তাকে আমি এমন কঠিন শাস্তি দেবো, যা আমি সৃষ্টিকুলের কাউকেই আর দেবো না।
১১৬. যখন আল্লাহ পাক বলবেন, হে মারইয়াম পুত্র ঈসা! তুমি কি কখনো (তোমার) লোকদের (একথা) বলেছিলো যে, তেমরা মহান আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমাকে ও আমার মাকে 'ইলাহ' বানিয়ে নাও! (এ কথার জবাবে) সে বলবে (হে আল্লাহ!), সমগ্র পবিত্রতা তোমার জন্যে, এমন কোনো কথা অমাার পক্ষে শোভা পেতো না, যে কথা বলার আমার কোনো অধিকারই ছিলো না, যদি আমি তাদের এমন কোনো কথা বলতামই, তাহলে তুমি তো অবশ্যই তা জানতে; নিশ্চয়ই তুমি তো জানো আমার অন্তরে যা কিচু আছে, কিন্তু আমি তো জানি না তোমার অন্তরে কি আছে; যাবতীয় গায়ব অবশ্যই তুমি বালো করে অবগত আছো।
১১৭. তুমি আমাকে যা কিছু বলতে আদেশ করেছো আমি তো তাদের তাছাড়া (অন্য) কিছুই বলিনি, (আর সে কথা ছিলো), তোমরা শুধু আল্লাহ পাকের ইবাদাত করো, যিনি আমার প্রভু, তোমাদেরও প্রবু, আমি যতোদিন তাদের মধ্যে ছিলাম, ততোদিন তো আমি ৯নিজেই তাদের কার্যকলাপের) সাক্ষী ছিলাম, কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে তখন তুমিই ছিলে তাদের ওপর একক নেগাহবান, সমস্ত ক্রিয়াকর্মের তুমিই ছিলে একক সা্ক্ষী।
১১৮. (আজ) তাদের পাপের জন্যে তুমি যদি তাদের শাস্তি দাও (দিতে পারো), কারণ তারা তো তোমারই বান্দা, আর তুমি যদি তাদের মাফ করে দাও (তাও তোমার মর্জি), অবশ্যই তুমি হচ্ছো বিপুল ক্ষমতাশালী, প্রজ্ঞাময়।
১১৯. আল্লাহ পাক বলবেন (হ্যাঁ), এ হচ্ছে সেদিন , যেদিন সত্যবাদীরা ব্যক্তিরা তাদের সততার জন্যে (প্রচুর) কল্যাণ লাভ করবে; (আর সে কল্যাণ হচ্ছে), তাদের জন্যে এমন সুরমা বেহেশত, যার তলদেশ দিয়ে অমীয় ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হতে থাকবে; সেখানে তারা চিরদিন থাকবে; আল্লাহ পাক তাদের ওপর সন্তুষ্ট থাকবেন এবং তারাও আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট থাকবে; (বস্তুত) এ হচ্ছে এক মহাসাফল্য।
১২০. আকাশমন্ডলী ও ভূ-পৃষ্ঠে এবং এর মধ্যবর্তী সকল সৃষ্টিলোকের ভেতর যা কিচু আছে তার সমুদয় বাদশাহী তো মহান আল্লাহর জন্যেই এবং তিনিই সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
৯৬. তোমাদের জন্যে সমুদ্রের শিকার বৈধ করা হয়েছে এবং তার খাবার হচ্ছে তোমাদের জন্যে (উৎকৃষ্ট) সম্পদ, (মনে রাখবেই), যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা ইহরাম (বাঁধা) অবস্থায় থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত (শুধু) স্থলভাগের শিকারই তোমাদের জন্যে অবৈধ থাকবে; তেমরা ভয় করো আল্লাহ পাককে, যাঁর সমীপে তোমাদের সবাইকে জড়ো করা হবে।
৯৭. আল্লাহ পাক (কানায়ে) কা'বাকে সম্মানিত করেচেন মানব জাতির জন্যে (তার) বিত্তি হিসেবে (তিনি একে প্রতিষ্ঠা করেচেন), একইভাবে তিনি সম্মানিত করেছেন (হজ্জের) পবিত্র মাসগুলোকে, কোরবানীর জন্তুগলোকে এবং (এ উদ্দেশ্যে বিশেষ) পট্টি বাঁধা জন্তুগুলোকে, এসব (বিধান) এ জন্যেই (দেয়া হয়েছে) যাতে করে তোমরা (এ কথা) জেনে নিতে পারো যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর যেখানে যা কিচু আছে মহান আল্লাহ তা সবই জানেন, আর নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সব বিষয়ে সর্বজ্ঞ।
৯৮. তোমরা জেনে রেখো! আল্লাহ পাক শাস্তিদানের ব্যাপারে (যেমনি) কঠোর, (তেমনি পুরস্কারের বেরায়) আল্লাহ পাক অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
৯৯. রাসূলের দায়িত্ব (হেদায়াতের বাণী) পৌছে দেয়া ব্যতীত আর কিচুই নয়, আর তোমরা যা কিচু প্রকাশ করো, যা কিছু গোপন রোখো, আল্লাহ পাক তা সবই জানেন।
১০০. (হে রাসূল!) আপনি বলুন, পাক এবং নাপাক জিনিস কখনো সমান হতে পারে না, নাকাপক জিনিসের প্রাচুর্য যতোই তোমাকে চমৎকৃত করুক না কেন! অতএব, হে জ্ঞানবান মানুষ! তোমরা মহান আল্লাহকে ভয় করো, (আশা করা যায়) তোমরা সফলকাম হতে পারবে।
১০১. হে ঈমানদার লোকেরা! (আল্লাহর নবীর কাছে) এমন সব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করো না, যার উত্তর প্রকাশ করা হলে (তাতে) তোমাদের কষ্ট হবে, অবশ্য কোরআন অবর্তী হবার মুহুর্তে যদি তোমরা সে প্রশপন করো, তাহলে তা তোমাদের কাছে প্রকাশ করা হবে; (এ বিধান জারির) আগে যা কিছু হয়ে গেছে তা আল্লাহ পাক তোমাদের মাফ করে দিয়েছেন; কেননা, আল্লাহ পাক পরম ক্ষমাশীল ও ধৈর্যশীল।
১০২. তোমাদের আগেও কিছু জাতি (তাদের নবীকে এ ধরনের) প্রশ্ন করতো, কিন্তু এর পরক্ষণেই তারা তা অমান্য করতে শুরু করলো।
১০৩. দেবতার উদ্দেশ্যে প্রেরিত (কান ছেঁড়া) 'বহীরা', (দেবতার নামে উৎসর্গীকৃত) 'সায়েরা', (দেবতার উদ্দেশ্যে চেড়ে দেয়া নর ও মাদী বাচ্চা প্রসবকারী) 'ওয়াসীলা' ও (দেবতার উদ্দেশ্যে চেড়ে দেয়া দশ বাচ্চা প্রসবকারিণী উষ্ট্রী) 'হাম'-এর কোনোটাই কিন্তু আল্লাহ পাক নির্দিষ্ট করে দেননি, বরং কাফেররাই ৯এসব কুসংস্কার দিয়ে) আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করে, আর এদের অধিকাংশ লোক তো (সত্য-মিথ্যার তফাৎটুকুও) উপলব্ধি করে না।
১০৪. যখন এদের বলা হয়, মহান আল্লাহ যা কিছু অবতীর্ণ করেছেন তোমরা সেদিকে এসো, (এসো তাঁর) রাসূলের দিকে, (তখন) তারা বলে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের যে বিধানের ওপর পেয়েছি তা-ই আমাদের জন্যে যথেষ্ট; যদিও তাদের বাপ-দাদারা (সত্য-মিথ্যা সম্পর্কে) কিচুই জানতো না এবং তারা হেদায়াতের পথেও চলতো না।
১০৫. হে ঈমানদার লোকেরা! তোমাদের নিজেদের দায়িত্ব তোমাদের নিজেদের ওপর, অপর (কোনো) ব্যক্তি যদি গোমরাহ হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে সে পথব্রষ্ট ব্যক্তি তোমাদের কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা নিজেরা সঠিক পথের ওপর চলতে থাকবে; তোমাদের ফেরার জায়গা (কিন্তু) মহান আল্লাহর দিকেই, এরপর আল্লাহ পাক তোমাদের (সেদিন) বলে দেবেন তোমরা কে কী করছিলে!
১০৬. হে ঈমানদার ব্যক্তিরা! তোমাদের কারো যখন মৃত্যু (সময়) এসে উপস্থিত হয়, ওসিয়ত করার এ মুহুর্তে তোমরা তোমাদের মধ্য তেকে দু'জন ন্যায়পরায়ণ মানুষকে সাক্ষী বানিয়ে রাখবে, আর যদি তোমরা প্রবাসে থাকো এবং এসময় যদি তোমাদের ওপর মৃত্যুর বিপদ এসে পড়ে, তখন বাইরের লোকদের মধ্য থেকে দু'জন ব্যক্তিকে সাক্ষী বানিয়ে নেবে; (তারপর যদি এ ব্যাপারে) তোমাদের কোনো সন্দেহ দেখা দেয়, তাহলে (সাক্ষী) দু'জনকে নামাযের পর আটকে রাখবে, অতঃপর তারা মহান আল্লাহর নামে কসম করে বলবে, আমরা কোনো স্বার্থের খাতিরে এ সাক্ষ্য বিক্রি করবো না, (এর কোনো পক্ষ আমাদের) ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হলেও (নয়), আমরা মহান আল্লাহর (জন্যে এ) সাক্ষ্য গোপন করবো না, (কারণ) আমরা যদি তেমন কিছু করি তাহলে আমরা পাপীদের দলে শামিল হয়ে যাবো।
১০৭. পরে যদি একথা প্রকাশ পায়, এ (বাইরের) দু'জন সাক্ষী অপরাধে লিপ্ত চিলো, তাহলে আগে (যাদের) স্বার্থহানি ঘটেচিলো তাদের মধ্য তেকে দু'জন সাক্ষী তাদের স্থলাবিষিক্ত হবে, তারা (এসে) মহান আল্লাহর নামে শপথ করে বরবে, আমাদের সাক্ষ্য অবশ্যই তাদের সাক্ষ্য অপেক্ষা বেশী সত্যভিত্তিক (হবে), আমরা (সাক্ষ্যের ব্যাপারে) সীমালঙ্ঘন করিনি (আমরা যদি তেমনটি করি), তাহলে আমরা অত্যাচারীদের দলভুক্ত হয়ে পড়বো।
১০৮. এ (পদ্ধতি)-তে বেমী আশা করা যায় যে, তারা ঠিক ঠিক সাক্ষ্য নিয়ে আসবে অথবা তারা অন্ততপক্ষে এ ভয় করবে যে, (তাদের) শপথ আবার অন্য কারো শপথ দ্বারা বাতিল করে দেয়া হবে; তোমরা আল্লাহ পাককে ভয় করো এবং (রাসূলের কথা) শোনো; আল্লাহ পাক কখনো পাপী লোকদের সৎপথে পরিচালিত করেন না।
১০৯. যেদিন আল্লাহ পাক সকল রাসূলকে একত্রিত করে জিজ্ঞেস করবেন, তোমাদের (দাওয়াতের প্রতি মানুষদের পক্ষ থেকে) কিবাবে সাড়া দেয়া হয়েছিলো; তারা বলবে, আমরা তো (তার) কিচুই জানি না; সমস্ত গায়বের বিষয়ে তুমিই পরিজ্ঞাত।
১১০. (মনে করো,) যখন আল্লাহ পাক বললেন, হে মারইয়াম পুত্র ঈসা! আমার সেই নেয়ামতের কথা স্মরণ করো যা আমি তোমাকে ও তোমার মাকে দান করেছিলাম, যখন আমি পবিত্র আত্মা দিয়ে তোমাকে সাহায্য করেছিলাম। তুমি মানুষের সঙ্গে (যেমনি) দোলনায় থাকতে কথা বলতে, (তেমনি বলতে) পরিণত বয়সেও, আমি যখন তোমাকে কিতাব, জ্ঞান-বিজ্ঞান, তাওরাত ও ইনজীল দান করেছিলাম, যখন তুমি আমারই হুকুমে কাঁচা মাটি দিয়ে পাখি সদৃশ আকৃতি বানাতে, অতঃপর তাতে ফুঁ দিতে, আর আমার আদেশক্রমেই তা পাখী হয়ে যেতো, আমারই আদেশে তুমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে নিরাময় করে দিতে, আমারই আদেশে তুমি মৃতদের (কবর থেকে) বের করে আনতে, পরে যখন তুমি তাদের নিকট (নবুওয়্যাতের) এসব নিদর্শন নিয়ে পৌছাল, তখন তাদের মধ্যে যারা (তোমাকে) অস্বীকার করেছিলো তারা বললো, এ নিদর্শনগুলো যাদু ব্যতীত আর কিছুই নয়, তখন আমিই তোমার ৯কোনো অনিষ্ট সাধন) তেকে বনী ইসরাঈলদের নিবৃত্ত করে রেখেছিলাম।
১১১. (আরো মনে করো!) যখন আমি হাওয়ারীদের (অন্তরে) এ প্রেরণা দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার প্রতি ও আমার রাসূলের প্রতি ঈমান আনো, তারা বললো (হে প্রভু), আমরা (তোমার ওপর) ঈমান আনলাম, তুমি (এ কথার) সাক্ষী থেকো যে, আমরা তোমার অনুগত ছিলাম।
১১২. (অতঃপর) যখন এই হাওয়ারীদের দল বললো, হে মারইয়াম-পুত্র ঈসাং তোমার প্রবু কি আসমান তেকে খাবার সজ্জিত একটি খাঞ্চা আমাদের জন্যে পাঠাতে পারেন? ঈসা উত্তর দিলো, (সত্যিই) যদি তোমরা মু'মিন হয়ে থাকো, তাহলে ৯কোনো অহেতুক দাবী পেশ করার ব্যাপারে) তেমরা আল্লাহ পাককে ভয় করো।
১১৩. তারা বললো, আমরা (শুধু এটুকুই) চাই যে, মহান আল্লাহর পাঠানো সেই (খাঞ্চা) থেকে (কিুছু) খাবার খেতে, এতে আমাদের মন পরিতৃপ্ত হয়ে যাবে, (তাছাড়া এতে করে) আমরা এও জানতে পারবো তুমি আমাদের নিকট সঠিক কথা বলেছো, আমরা নিজেরাও এর ওপর সাক্ষী হবো।
১১৪. মারইয়াম-পুত্র ঈসা (আল্লাহর দরবারে) বললো, হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রভু! তুমি আমাদের জন্যে আসমান থেকে খাবার সজ্জিত একটি খাহ্চা ফাঠাও, এ হবে আমাদের জন্যে, আমাদের পূর্ববর্তী ও আমাদের পরবর্তীদের জন্যে তোমার নিকট থেকে (পাঠানো) একটি আনন্দোৎসব; (সর্বোপরি এটা) হবে তোমার (কুদরতের একটি) নিদর্শন, তুমি অমাাদের রিযিক দাও, কারণ তুমিই হচ্ছো উত্তম রিযিকদাতা।
১১৫. আল্লাহ পাক বললেন, হ্যাঁ, আমি তোমাদের ওপর (অচিরেই) তা পাঠাচ্ছি, তবে এরপরও যদি তোমাদের কেউ (আমার ক্ষমতা) অস্বীকার করে, তাহলে তাকে আমি এমন কঠিন শাস্তি দেবো, যা আমি সৃষ্টিকুলের কাউকেই আর দেবো না।
১১৬. যখন আল্লাহ পাক বলবেন, হে মারইয়াম পুত্র ঈসা! তুমি কি কখনো (তোমার) লোকদের (একথা) বলেছিলো যে, তেমরা মহান আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমাকে ও আমার মাকে 'ইলাহ' বানিয়ে নাও! (এ কথার জবাবে) সে বলবে (হে আল্লাহ!), সমগ্র পবিত্রতা তোমার জন্যে, এমন কোনো কথা অমাার পক্ষে শোভা পেতো না, যে কথা বলার আমার কোনো অধিকারই ছিলো না, যদি আমি তাদের এমন কোনো কথা বলতামই, তাহলে তুমি তো অবশ্যই তা জানতে; নিশ্চয়ই তুমি তো জানো আমার অন্তরে যা কিচু আছে, কিন্তু আমি তো জানি না তোমার অন্তরে কি আছে; যাবতীয় গায়ব অবশ্যই তুমি বালো করে অবগত আছো।
১১৭. তুমি আমাকে যা কিছু বলতে আদেশ করেছো আমি তো তাদের তাছাড়া (অন্য) কিছুই বলিনি, (আর সে কথা ছিলো), তোমরা শুধু আল্লাহ পাকের ইবাদাত করো, যিনি আমার প্রভু, তোমাদেরও প্রবু, আমি যতোদিন তাদের মধ্যে ছিলাম, ততোদিন তো আমি ৯নিজেই তাদের কার্যকলাপের) সাক্ষী ছিলাম, কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে তখন তুমিই ছিলে তাদের ওপর একক নেগাহবান, সমস্ত ক্রিয়াকর্মের তুমিই ছিলে একক সা্ক্ষী।
১১৮. (আজ) তাদের পাপের জন্যে তুমি যদি তাদের শাস্তি দাও (দিতে পারো), কারণ তারা তো তোমারই বান্দা, আর তুমি যদি তাদের মাফ করে দাও (তাও তোমার মর্জি), অবশ্যই তুমি হচ্ছো বিপুল ক্ষমতাশালী, প্রজ্ঞাময়।
১১৯. আল্লাহ পাক বলবেন (হ্যাঁ), এ হচ্ছে সেদিন , যেদিন সত্যবাদীরা ব্যক্তিরা তাদের সততার জন্যে (প্রচুর) কল্যাণ লাভ করবে; (আর সে কল্যাণ হচ্ছে), তাদের জন্যে এমন সুরমা বেহেশত, যার তলদেশ দিয়ে অমীয় ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হতে থাকবে; সেখানে তারা চিরদিন থাকবে; আল্লাহ পাক তাদের ওপর সন্তুষ্ট থাকবেন এবং তারাও আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট থাকবে; (বস্তুত) এ হচ্ছে এক মহাসাফল্য।
১২০. আকাশমন্ডলী ও ভূ-পৃষ্ঠে এবং এর মধ্যবর্তী সকল সৃষ্টিলোকের ভেতর যা কিচু আছে তার সমুদয় বাদশাহী তো মহান আল্লাহর জন্যেই এবং তিনিই সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
Updating Please Stay With Me
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.