Tuesday, January 31, 2017

Salat

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ 

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে

৩৪৪। হাদীসঃ উম্মুর মো'মেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, মহান আল্লাহ যখন নামায ফরয করেছেন, তখন তা দু'দু'রাকাআত করেই ফরয করেছেন। স্বগৃহে থাকা অবস্থায হোক অথবা সফরে হোক। অতঃপর সফর অবস্থার দু'রাকআত ঠিকই রাখা হয়েছে আর স্বগৃহে থাকা অবস্থায় দু'রাকআত বাড়ানো হয়েছে।

কাপড় পরিহিত অবস্থায় নামায ওয়াজিব হওয়ার বিবরণ


মহান আল্লাহর বাণী-.............

অর্থঃ "সকল প্রকার নামায এবং তাওয়াফের সময় সৌন্দর্য গ্রহণ করাঃ অর্থাৎ কাপড় পরিধান কর।

একটি মাত্র কাপড় পড়ে নামায পড়া যায়েজ। সালমা ইবনে আকওয়া থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন "তোমরা তহবন্দটি কাটা দিযে হলেও সেলাই করে নাও। এ হাদিসটির সনদে আপত্ত্বি আছে। যে কাপড় পরে স্ত্রী সঙ্গম করা হয়েছে, তা পড়ে নামায পড়া জায়েয। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উলঙ্গ ব্যক্তিকে কাবা শরীফে তাওয়াফ করতে নিষেধ করেছেন।

৩৪৫। হাদীসঃ হযরত উম্মে আতিয়া (রাঃ) বলেন, আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে, আমরা যেন হায়েজা মহিলা এবং পর্দানশীল মহিলাদের ঈদের দিন বাড়ী থেকে বের করে নিয়ে আসি। তা হলে তারা মুসলমানদের জামাআতে এবং দোয়ায় শরীক হবেন, কিন্তু হায়েজা মহিলাগণ ঈদগাহে নামাযের স্থান থেকে দূরে থাকবেন। এতদশ্রবণে এক মহিলা বললেন, হে আল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাদের কারো কাছে যদি ওড়না জাতীয় চাদর না থাকে, তবে সে কি করবে? তখন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সঙ্গী মহিলা তার চাদরের এক অংশ তাকে পরিয়ে নিয়ে আসবে।

নামায অবস্থায় গর্দানে ইজার বেধে নেয়া

৩৪৬। হাদীসঃ হযরত মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদের  (রাঃ) বলেন, হযরত জাবের (রাঃ) এক সময় মাত্র একটি ইজার পরিধান করে নামায পড়েছেন, যা তার গর্দানের সাথে বাধা ছিল। অথচ তার অপরাপর কাপড়গুলো আলনায় রাখা ছিল। এ অবস্থা দেখে কেউ প্রশ্ন করলেন, আপনি মাত্র একটি ইজার পরিধান করে নামায পড়লেন (অথচ আপনার অপরাপর কাপড়গুলো আলনায় সুরক্ষিত আছে)। তিনি বললেন, আমি এরুপ করছি, কারণ তোমার মত যারা আহমক আছে তারা দেখবে। আরে শুন! জনাব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যমানায় আমাদের কার কাছে দু'টি কাপড় একত্রে ছিল? (অর্থাৎ এ সময় অধিকাংশ সাহাবাযে কেরামই মাত্র এক কাপড়ে নামায আদায় করেছেন)।

৩৪৭। হাদীসঃ হযরত মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদের (রাঃ) বলেন, আমি হযরত জাবের (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি এক কাপড়ে নামায আদায় করেছেন এবং বলেছেন, আমি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এক কাপড়ে নামায পড়তে দেখেছি।
৩৪৮। হাদীসঃ হযরত ওমর ইবনে আবী সালামা (রাঃ) বলেন, কোন কোন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক কাপড় পড়ে নামায আদায় করে, যার উভয় কিনারা তিনি দুই স্কন্ধের উপর ফেলে রেখেছেন।
৩৪৯। হাদীসঃ হযরত ওমর ইবনে আবী সালামা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি, তিনি হযরত উম্মে সালামার ঘরে এক কাপড় পরিধান করে নামায আদায় করছেন, যার দুই কিনারা দু’স্কন্ধের উপর ফেলে রাখা হয়েছিল।

৩৫০। হাদীসঃ হযরত উমর ইবনে আবু সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এক কাপড় জড়িয়ে উম্মে সালামা (রাঃ)-এর ঘরে নামায আদায় করতে দেখেছি, যার উভয় প্রান্ত তাঁর কাঁধের উপর রেখেছিলেন।
৩৫১। হযরত আবু মোররা (রাঃ) নিজের মনিব হযরত উম্মে হানী বিনতে আবী তালেব (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন, আমি ফতহে মক্কার দিন নবী করীম সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাত করার জন্য গেলে দেখতে পেলাম, তিনি গোসল করছেন আর হযরত ফাতেমা (রাঃ) তাঁকে পর্দা করে আছেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাজির হয়ে প্রথমে সালাম করলাম। তিনি পর্দার ভেতর থেকে বললেন, ইনি কে? উত্তরে আমি বললাম, আমি উম্মে হানী বিনতে আবী তালেব। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, উম্মে হানীর জন্য খোশ আমদেদ! আমি দেখতে পেলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোসল সেরে এসে এক কাপড়ে সমস্ত শরীর ঢেকে আট রাকআত নামায আদায় করেছেন। নামায শেষে আমি তাঁকে সম্বোধন করে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমার মায়ের ছেলে অর্থাৎ আমার ভাই আলী (রাঃ) বলেন, তিনি ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করতে পারবেন যাকে আমি আশ্রয় দিয়েছি। আর তিনি হলেন ইবনে হোবায়রা। এতচ্ছ্রবণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উম্মে হানী বিনতে আবী তালেব! তুমি যাকে আমান দিয়েছ আমরাও তাকে আমান দিলাম। হযরত উম্মে হানী আরো বলেন, এটা ছিল 'চাশত'-এর সময়।
৩৫২। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এক কাপড় পরিধান করে নামায পড়া সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেকের কি দু'কাপড় আছে? অর্থাৎ এক কাপড়ে নামায পড়া জায়েয।
৩৫৩। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ইরশাদ করেছেন, "তোমাদের কেউ এমন এক কাপড়ে নামায পড়বে না, যার কিছু অংশ কাঁধে নেই" (এতে সতর খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে)।

৩৫৪। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ)-থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে এক কাপড়ে নামায পড়বে সে যেন উক্ত কাপড়ের দু'দিক উভয় দিকে (ডান দিকের আচল বাম দিকে এবং বাম দিকের আচল ডান দিকে) ছেড়ে দেয়।
৩৫৫। হাদীসঃ হযরত সাঈদ ইবনুল হারেস (রাঃ) বলেন, আমি একদা হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে এক কাপড় পরে নামায আদায় সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এক সফরে (বাওয়াত যুদ্ধে) আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হয়েছিলাম। রাতে এক প্রয়োজনে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে উপস্থিত হলে দেখতে পেলাম, তিনি নামায আদায় করছেন। তখন আমার পরনে মাত্র একটি কাপড় ছিল। আমি অামার কাপড় শরীরের সাথে জড়িয়ে নিলাম, তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পার্শ্বে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করলাম। নামায শেষে তিনি আমাকে বললেন, হে জাবের! রাতে কেন হঠাৎ করে আসলে? আমি তাঁর খেদমতে আমার প্রয়োজনের কথা বললাম। যখন আমরা কর্থাবার্তা সমাপ্ত করলাম তখন তিনি বললেন, হে জাবের! তুমি কাপড় এমনভাবে জড়িয়ে নিয়েছ কেন, যা দেখতে পাচ্ছি? আমি বললাম, হুযুর! আমার পরনে মাত্র একটি কাপড়, তাই এমনভাবে জড়িয়ে নিয়েছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কাপড় যদি বড় হয় তখন জড়িয়ে নিবে। আর যদি ছোট হয়, তখন তহবন্দ হিসেবে পরিধান করবে।
৩৫৬। হাদীসঃ হযরত সাহল (রাঃ) বলেন, পুরুষ ব্যক্তিরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এমনভাবে নামায আদায় করতেন যে, তাদের 'ইজারগুলো' স্কন্ধের উপর বাঁধা থাকত, যেমন ছোট বালকদেরকে কাঁধের উপর থেকে বেঁধে ইজার পরিধান করানো হয়। আর মহিলাদেরকে বলা হত, পুরুষরা সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে না বসা পর্যন্ত তোমরা সেজদা থেকে মাথা উত্তোলন করবে না।
৩৫৭। হাদীসঃ হযরত মুগীরা বিন শো'বা (রাঃ) বলেন, এক সফরে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, হে মুগীরা! পানির পাত্র লও। আমি পানির পাত্র হাতে নিলাম। অতঃপর তিনি যেতে লাগলেন, এমন কি অামাদের দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলেন এবং প্রাকৃতিক প্রয়োজন পুরণ করলেন। প্রয়োজন মিটাবার পর তিনি অযু করার ইচ্ছা করলেন। তখন তাঁর পরিধানে একটি শামী জুব্বা ছিল। তিনি হাত জুব্বার আস্তিনের মধ্য দিয়ে বের করতে চাইলেন, কিন্তু তা সংকীর্ণ হওয়ায় অবশেষে হাত জুব্বার নীচ দিয়ে বের করলেন। অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর  হাতে পানি ঢাললাম, আর তিনি নামাযের অযুর ন্যায় পুর্ণ অযু করলেন এবং নিজের মোজার উপর মাসেহ করলেন। তারপর নামায আদায় করলেন।
৩৫৮। হাদীসঃ হযরত আমর ইবনে দীনার (রাঃ) বলেন, আমি হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বর্ণনা করেছেন, কোরায়শরা যখন খানায়ে কাবার নির্মাণ করছিল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরায়শদের সাথে পাথর বহন করে নিয়ে আসতেন। সে সময় তাঁর পরনে ছিল একটি চাদর। তাঁর চাচা আব্বাস (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! তুমি যদি ইজার খুলে ফেলে তা কাঁধের উপর পাথরের নীচে রাখতে, তা হলে খুব ভাল হত। চাচার কথায় ইজার খুলে ফেলে কাঁধের উপর রাখা মাত্রই তিনি বেহুশ হয়ে পড়ে গেলেন। হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, এ ঘটনার পর থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আর কখনো উলঙ্গ দেখা যায়নি। 
৩৫৯। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এক কাপড়ে নামায পড়া জায়েয কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেকেই কি দু'কাপড় পায়?

হযরত ওমর (রাঃ)-কে জনৈক ব্যক্তি ও প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মহান আল্লাহ যখন তোমাদের কাউকে সুযোগ প্রধান করেন, তখন সুযোগের সদ্বব্যবহার করবে। আল্লাহর দেয়া কাপড়গুলো যেন লোকেরা ব্যবহার করে নামায আদায় করে। যেমন-(১) ইজার ও চাদর, (২) ইজার ও জামা, (৩) ইজার ও কাবা, (৪) পায়জামা ও চাদর, (৫) পায়জামা ও জামা (৬) পায়জামা ও কাবা, (৭) হাফ প্যান্ট ও কাবা, (৮) হাফ প্যান্ট ও জামা ইত্যাদি। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা, হযরত ওমর (রাঃ) আরো বলেছেন, হাফ প্যান্ট ও চাদর।
৩৬০। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, এহরামকারী কি কাপড় পরিধান করবে? একদা জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এহরামকারী পরিধান করতে পারবে না (১) জামা, (২) পায়জামা, (৩) বুরনুস (লম্বা টুপি), (৪) জাফরা এবং ওয়ারস (হলুদ বর্ণের এক প্রকার সুগন্ধ ফুল) দ্বারা রঞ্জিত কাপড়, (৫) আর যে ব্যক্তি জুতা পাবে না সে তার (চামড়ার) মোজা পায়ের উপরিভাগের হাড়ের নীচে কেটে ব্যবহার করতে পারবে।
৩৬১। হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, 'ইশতেমালুস সাম্মা' হতে এবং লজ্জাস্থানের উপর কিছু পরিধান না করে এক কাপড় দ্বারা শরীর আবৃত করা হোক।
৩৬২। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'প্রকারের বেচাকেনা 'মুলামাসাহ' ও 'মুনাবাজাহ' হতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরো নিষেধ করেছেন 'ইশতেমালুস সাম্মা' এবং এক কাপড়ে শরীর আবৃত করা থেকে।
৩৬৩। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, বিদায় হজ্জের আগের বৎসর যে হজ্জ হয়েছিল, ঐ হজ্জে নহরের দিন মিনাতে যারা বিজ্ঞপ্তি প্রচার করবেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মধ্যে আমাকেও হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর সাথে পাঠিয়েছিলেন, যেন আমরা মিনাতে এ কথা প্রচার করে দেই, এ বৎসরের পর আর কোন মুশরিক হজ্জ করতে এবং কোন উলঙ্গ ব্যক্তি বায়তুল্লাহর তওয়াফ করতে পারবে না। হোমায়দ বিন আবদুর রহমান বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের পেছনে হযরত আলী (রাঃ)-কেও মক্কায় পাঠিয়ে দিলেন যেন তিনি সূরা বারাআতের প্রচার করেন। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, অতঃপর কোরবানীর দিন মিনাতে উপস্থিত জনতার কাছে আমাদের সাথে হযরত আলী (রাঃ) ও প্রচার করেছিলেন-এ বৎসরের পর আর কোন মুশরিক হজ্জ করতে এবং কোন উলঙ্গ ব্যক্তি বায়তুল্লাহর তওয়াফ করতে পারবে না।
৩৬৪। হাদীসঃ হযরত মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদের (রাঃ) বলেন, একদা আমি হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হলাম। আমি দেখতে পেলাম, তিনি এক কাপড় জড়িয়ে নামায আদায় করছেন। অথচ তাঁর চাদরখানা আলনায় রক্ষিত আছে। নামায শেষে আমি তাঁকে বললাম, হে আবু আবদুল্লাহ! আপনি এভাবে এক কাপড় জড়িয়ে নামায পড়ছেন, অথচ আপনার চাদরখানা আলনায় রক্ষিত আছে, এর কারণ কি? তিনি বললেন, হাঁ। তা হলে তোমাদের মত মূর্খরা যেন আমাকে দেখতে পায়। শুন! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি, তিনি এমনিভাবে এক কাপড়ে নামায পড়েছেন।
৩৬৫। হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বর যুদ্ধে শরীক ছিলেন। আমরা খায়বরের নিকটে পৌছলে তিনি আমাদেরকে নিয়ে অন্ধকারের মধ্যেই ফজরের নামায আদায় করেন অতঃপর উঠের উপর আরোহণ করেন। আবু তালহাও সওয়ার হলেন এবং আমি তাঁর পেছনে সওয়ার হলাম। তারপর আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বরের গলি দিয়ে রওয়ানা হলেন। সে সময় আমার হাঁটু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উরুর সাথে স্পর্শ করছিল। তখন আল্লাহর নবী উরু থেকে ইজার গুটিয়ে নিলেন। এমনকি আমি উরুর সাদা রং পর্যন্ত দেখতে পেলাম। যখন তিনি খায়বরের গ্রামে প্রবেশ করলেন তখন বললেন-
.......................-আল্লাহু আকবার। খায়বর ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা যখন কোন কওমের আঙ্গিনায় পৌছি, তখন সেই কওমের সকাল খুবই খারাপ হয়। এ বাক্য তিনি তিন বার বলেছেন।
বর্ণনাকারী আনাস (রাঃ) বলেন, খায়বরের অধিবাসীরা সকাল বেলা নিজেদের কাজকর্মে বের হয়েছিল। অামাদেরকে দেখতে পেয়ে তারা বলল! "আরে মুহাম্মদ এসে গেছে)-" হাদীস বর্ণনাকারী আবদুল আযীয বলেন, আমাদের কোন কোন সাথী বলেছেন, তারা আরো বলেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে খামীস (সৈন্য দল)ও এসে গেছে।
বর্ণনাকারী বলেন, অবশেষে খায়বর শক্তির মাধ্যমেই বিজয় হয়েছে। সে যুদ্ধে কয়েদীদেরকে যখন একত্রিত করা হল, তখন হযরত দাহইয়া কালবী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাযির হয়ে বললেন, হে আল্লাহর নবী! কয়েদীদের মধ্য হতে একজন বান্দী আমাকে প্রদান করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও, কয়েদীদের মধ্য হতে তোমার পছন্দমত যে কোন একজন বান্দী নিয়ে যাও। তিনি হযরত সফিয়া বিনতে হুয়াই বিন আখতাবকে নিয়ে নিলেন। এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি বনু কোরায়যা ও বনু নযীরের সর্দার হুয়াই বিন আখতাবের কন্যা সফিয়াকে হযরত দাহইয়া (রাঃ)-কে দিলেন, অথচ সফিয়া তো আপনি ব্যতীত অন্য কারো জন্য উপযুক্ত নয়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আচ্ছা 'দাহইয়াকে' তাকে সহকারে ডাক। অতঃপর দাহইয়া (রাঃ) হযরত সফিয়া সহ আসলে নবী করীম দাহইয়া (রাঃ)-কে বললেন, হে দাহইয়া! তুমি কয়েদীদের মধ্য হতে তাকে ছাড়া অন্য যেকোন বান্দী নিয়ে যাও।
বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত সফিয়াকে আযাদ করেন এবং বিবাহ করেন। হযরত সাবেত (রাঃ) হযরত আনাস (রাঃ)-কে বলেলেন, হে আবু হামযা! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত সফিয়া (রাঃ)-কে মহরানা কি দিয়েছেন। তিনি বললেন, স্বয়ং হযরত সফিয়া (রাঃ)-এর ব্যক্তিসত্তা। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে আযাদ করেন, তারপর বিবাহ করেন। বর্ণনাকারী আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম পথিমধ্যে থাকা অবস্থায়ই হযরত উম্মে সোলায়েম (রাঃ) 'হযরত সফিয়া (রাঃ)-কে দুলহান বানিয়ে সে রাত্রেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে পাঠিয়ে দেন। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নব দুলহা হয়ে ভোর করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার কাছে খানার যা কিছু আছে সে যেন তা নিয়ে আসে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম চামড়ার একটা দস্তরখানা বিছালেন। সুতরাং কেউ খেজুর, কেউ ঘৃত নিয়ে আসল। হযরত আবদুল আযীয বলেন, আমার ধারণা, হযরত আনাস (রাঃ) ছাতুর কথাও উল্লেখ করেছেন। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর এ সব কিছু মিলিয়ে 'মালিদাহ' তৈরি করা হল। এ ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিবাহের অলীমা।
৩৬৬। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামায আদায় করতেন, তখন মুসলমান মহিলাগণ তাঁর সাথে জামাআতে শরীক হতেন এমন অবস্থায় যে, তাঁদের মাথা হতে পা পর্যন্ত সমগ্র শরীর চাদরে জড়িয়ে রাখতেন। নামায শেষে তাঁরা নিজ নিজ ঘরে চলে যেতেন, তাঁদেরকে কেউ চিনতে পারতেন না।
৩৬৭। হাদীসঃ হযরত উম্মুল মো'মেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম খামিসাহ নামক এক প্রকার কাল পশমী চাদর পরিধান করে নামায আদায় করেন, যাতে কিছু নকশা ছিল। নামাযে হঠাৎ একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দৃষ্টি নকশার প্রতি পড়েছে নামায শেষে তিনি সাহাবাদেরকে বললেন, তোমরা এ কাপড়টি আবু জাহমের কাছে নিয়ে যাও। এর পরিবর্তে তার কাছ থেকে একটা 'আনবেজানী' চাদর নিয়ে এস (এক প্রকার মোটা চাদর যাতে নকশা ছিল না)। যেহেতু এ নকশীদার চাদর এখনই আমাকে নামাযে বাধা সৃষ্টি (হুজুরে কালব বিনষ্ট) করেছে।
হযরত আয়েশা (রাঃ) আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমি নামাযে থাকা অবস্থায় উক্ত চাদরের নকশার প্রতি নজর পড়েছিল, তাই আমার ভয় হচ্ছে, এটা পরিধান করলে আমার হুজুরে কালব বিনষ্ট করবে।
৩৬৮। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর একখানা হালকা পাতলা পশমী রঙ্গিন নকশাওয়ালা পর্দার কাপড় ছিল, যা দ্বারা তিনি হুজরার এক কিনারায় পর্দা করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তোমার এ পর্দা আমার সম্মুখ থেকে সরাও। যেহেতু তার নকশাগুলো নামাযে বার বার আমার সম্মুখে ভেসে আসে (যাতে আমার হুজুরে কালব নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়)।
৩৬৯। হাদীসঃ হযরত ওকবা ইবনে আমের (রাঃ) বলেন, এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একটা রেশমী 'কা'বা' হাদিয়া দেয়া হয়েছিল। তিনি তা পরিধান করে নামায আদায় করেন। নামায শেষে তিনি তা খুব অপছন্দ সহকারে খুলে ফেলে বললেন, মুত্তাকীদের এটা পরিধান করা উচিত নয়।
৩৭০। হাদীসঃ হযরত আবু জোযায়ফা (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে লাল রংয়ের চামড়ার তাবুতে দেখতে পেলাম। আমি সে সময় হযরত বেলাল (রাঃ)-কেও দেখলাম। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য অযুর পানি নিয়ে আসছেন। আর মানুষদেরকে দেখতে পেলাম, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যবহৃত অযুর পানি সংগ্রহ করার জন্য খুব ভিড় জমিয়েছেন। সুতরাং যিনি উক্ত পানির কিছু অংশ পেয়েছেন তিনি তা নিজ মুখমন্ডলে মাসেহ করছেন। আর যিনি কিছুই পাননি তিনি সঙ্গী সাথীদের হাতের ভিজা অংশ থেকে কিছু মাসেহ করে নিচ্ছেন।
অতঃপর আমি হযরত বেলাল (রাঃ)-কে দেখতে পেলাম, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর 'আনাযা' নামক ছোট লাঠি হাতে নিলেন এবং তা মাঠের এক প্রান্তে সুতরা হিসেবে গেড়ে দিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাল রংয়ের একখানা চাদর গায়ে জড়িয়ে বের হন এবং 'আনাযা'কে সুতরা বানিয়ে উপস্থিত লোকদেরকে নিয়ে দু'রাকআত নামায আদায় করেন। আমি আরো দেখতে পেলাম, বিভিন্ন মানুষ এবং চতুষ্পদ জন্তু 'আনাযার' সম্মুখ দিয়ে যাতায়াত করছে।
৩৭১। হাদীসঃ হযরত আবু হাযেম (রাঃ) বলেন, এক সময় লোকেরা হযরত সাহল ইবনে সা'দ (রাঃ)-কে মসজিদে নববীর মিম্বর সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন, তা কিসের তৈরী। তিনি বলেন, বর্তমানে এ প্রসঙ্গে বেশি জানার মত আমি ছাড়া আর কেউ নেই (অর্থাৎ, সাহাবাদের অধিকাংশই ইন্তেকাল করে গেছেন)।
যাক, মসজিদে নববীর মিম্বরখানা ছিল 'গাবাহ' নামক জঙ্গলের 'ঝাউ বৃক্ষের' কাঠ দ্বারা নির্মিত। যা আয়েশা আনসারিয়া নামক মহিলার 'মায়মুন' নামক এক গোলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য তৈরী করেছিলেন। মিম্বরখানা তৈরি করার পর যখন তা মসজিদে নববীতে এনে স্বস্থানে রাখা হল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবলার দিকে মুখ করে তার উপর দন্ডায়মান হলেন এবং নামাযের জন্য তাকবীর বললেন, উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত মিম্বরের উপর দন্ডায়মান হয়ে কেরাআত পাঠ করলেন, তারপর রুকু করলেন, সাহাবায়ে কেরাম তাঁর পেছনে রুকু করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে মিম্বর থেকে নীচে নেমে এসে একটু সরে দাঁড়ালেন। তারপর যমীনের উপর সেজদা করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় মিম্বরের উপর এসে দ্বিতীয় রাকআতের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। তারপর কেরাআত পাঠ করলেন এবং রুকু করলেন, রুকু শেষে মাথা উঠালেন, তারপর মিম্বর থেকে নীচে নেমে এসে একটু সরে গিয়ে যমীনের উপর সেজদা করলেন (এ ভাবে দুরাকআত নামায সমাপ্ত করলেন)। এ হল মিম্বরের ঘটনা।
৩৭২। হাদীসঃ হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত, হিজরী ৫ম সালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সময় ঘোড়ার উপর থেকে পড়ে গিয়ে পায়ের গোছা অথবা কাঁধ মোবারকে জখমী হলেন। এ কারণে উম্মহাতুল মো'মেনীনের থেকে এক মাস পর্যন্ত পৃথক থাকার ইচ্ছা করলেন বা হলফ করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচু এক কামরায় অবস্থান নিলেন, যার সিঁড়ি ছিল খেজুর বৃক্ষের কাঠ। সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে দেখাশুনা করার জন্য তথায় আসতেন। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে নিয়ে বসে বসে আর সবাই দাঁড়িয়ে নামায আদায় করলেন। সালাম ফিরাবার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে বললেন, ইমাম বানানো হয়েছে যাতে লোকেরা তার একতেদা (অনুসরণ) করে। তাই ইমাম যখন তাকবীর বলবেন তখন তোমরাও তাকবীর বলবে। ইমাম যখন রুকু করেন তখন তোমরাও রুকু করবে। ইমাম সেজদা করলে তোমরাও সেজদা করবে। ইমাম দাঁড়িয়ে নামায পড়লে তোমরাও তার সাথে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে (ইমাম বসে নামায পড়লেও মুক্তাদীরা অবশ্যই দাঁড়িয়ে নামায পড়বে, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত হুজরা থেকে ২৯ তারিখে বের হয়ে আসেন। তখন সাহাবাগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তো এক মাসের জন্য হলফ করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ মাস ঊনত্রিশ দিনের।
৩৭৩। হাদীসঃ হযরত উম্মুল মো'মেনীন হযরত মায়মুন (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কোন সময় নামায পড়তেন আর আমি হায়েজ অবস্থায় তাঁর সম্মুখে শুয়ে থাকতাম। যখন তিনি সেজদায় যেতেন তখন তাঁর কাপড় আমার শরীর স্পর্শ করত। তিনি আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুরের ছোট চাটাইয়ের উপর নামায পড়তেন।
৩৭৪। হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তাঁর নানী মুলাইকা (রাঃ) এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর বাড়ীতে খাওয়ার দাওয়াত করেন, যা তিনি বিশেষভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্যই করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাড়ীতে গিয়ে খানা খেলেন, তারপর আমাদেরকে বললেন, তোমরা উঠ, আমি তোমাদেরকে নিয়ে নামায পড়ব।
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, আমি উঠে একখানা চাটাই নিয়ে আসলাম, যা বেশি ব্যবহার করার কারণে কালো হয়ে গিয়েছিল। তাই আমি তা পানি দ্বারা ধৌত করলাম, তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে দণ্ডায়মান হলেন। আমি এবং এতীম (ইবনে আবী যমীরা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে কাতার বেঁধে দাঁড়ালাম। আর আমাদের পেছনে বৃ্দ্ধা নানী কাতার করে দাঁড়ালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে দু'রাকাআত নামায আদায় করেন, তারপর সেখান থেকে প্রস্থান করেন।
৩৭৫। হাদীসঃ হযরত মায়মুনা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট চাটা্ইয়ের উপরও নামায আদায় করতেন।
৩৭৬। হযরত উম্মুল মো'মেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কখনো কখনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে ফরাশ বিছিয়ে শুয়ে পড়তাম। তিনি আমার হুজরায় নামায পড়া অবস্থায় আমার পা কেবলার দিকে থাকত। তিনি যখন সেজদায় যেতেন তখন হাত দ্বারা আমাকে স্পর্শ করলে আমি পদদ্বয় গুটিয়ে ফেলতাম। আবার যখন তিনি সেজদা থেকে উঠে দাঁড়াতেন তখন আমি আমার পদদ্বয় আবার লম্বা করে বিছিয়ে দিতাম। হযরত আয়েশা (রাঃ) আরো বলেন, ঘরে তখন কোন বাতি ছিল না।
৩৭৭। হাদীসঃ হযরত ওরওয়া (রাঃ) বলেন, আয়েশা (রাঃ) তাঁকে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর হুজরায় নামায পড়তেন তখন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর কেবলার মধ্যে নিজ বিছানায় জানাযার ন্যায় শুয়ে থাকতেন।
৩৭৮। হাদীসঃ হযরত ওরওয়া (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন স্বীয় হুজরায় নামায পড়তেন, তখন হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর কেবলার মধ্যখানে ঐ বিছানার পাশে শুয়ে পড়তেন, যে বিছানায় তাঁরা নিদ্রা যেতেন।
৩৭৯। হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে নামায পড়তাম। অামাদের কেউ কেউ কঠিন রৌদ্রে বা গরমের কারণে সেজদার জায়গায় কাপড়ের অাঁচল রেখে তার উপর সেজদা করতেন।
৩৮০। হাদীসঃ হযরত সাঈদ ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন, আমি হযরত আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো জুতা পরিহিত অবস্থায় নামায আদায় করেছেন কি-না? উত্তরে তিনি বলেন, হাঁ পড়েছেন।
৩৮১। হাদীসঃ হযরত হাম্মাম ইবনুল হারেস (রাঃ) বলেন, আমি জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি প্রস্রাব করার পর অযু করে তারপর মোজার উপর মাসেহ করেছেন, তারপর দাঁড়িয়ে নামায আদায় করেছেন। তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এরুপ করতে দেখেছি। ইব্রাহীম বলেন, এটা লোকদের কাছে আশ্চর্য মনে হত। কারণ সর্বশেষ যারা ইসলাম গ্রহণ করেছেন, জারীর তাঁদের একজন।
৩৮২। হাদীসঃ হযরত মুগীরা ইবনে শুবা (রাঃ) বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য অযুর পানি নিয়ে আসলাম। তিনি অযু শেষে মোজার উপর মাসে করেন এবং নামায আদায় করেন।
৩৮৩। হাদীসঃ হযরত হোযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণি, তিনি কয়েক ব্যক্তিকে দেখেছেন, যারা রুকু সেজদাগুলো পুরোপুরি আদায় করে না। তাই নামায শেষে হোযায়ফা (রাঃ) তাদেরকে বললেন, তোমরা তো নামায পড়নি। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা, তিনি আরো বলেছেন, যদি তোমরা মারা যাও, তা হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নতের উপর তোমাদের মৃত্যু হবে না।
৩৮৪। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায আদায় করতেন তখন সেজদায় স্বীয় বাহুদ্বয় এমন বিস্তৃত করে রাখতেন, যাতে তাঁর বগলের সাদা রং পর্যন্ত দেখা যেত।
৩৮৫। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে আমাদের নামায আদায় করবে, আমাদের কেবলার দিকে মুখ করবে এবং আমাদের জবাইকৃত জন্তুর গোশত খাবে, সে এমন এক মুসলমান, যার জন্য রয়েছে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আশ্রয়। সুতরাং আল্লাহর যিম্মায় কেউ খেয়ানত করো না।
৩৮৬। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত কালেমা তাইয়্যেবা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'র স্বীকারোক্তি না দিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সাথে জেহাদ করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। সুতরাং যখন তারা তার স্বীকারোক্তি দিবে এবং মাদের নামায আদায় করবে, আমাদের কেবলার দিকে রোখ করবে এবং আমাদের জবাইকৃত জন্তুর গোশত খাবে, তখন তাদের জান মাল আমাদের উপর হারাম হয়ে যায়, তবে তাদের জান মালের হক অনুসারে (যেমন কেসাস দিয়ত) আর তাদের হিসাব আল্লাহর উপর। অন্য বর্ণনামতে হযরত আনাস (রাঃ)-কে মায়মুন ইবনে সাইয়্যাহ প্রশ্ন করেছিলেন, হে আবু হামযা! মানুষের জান মাল কিসে হারাম হয়? উত্তরে হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, যখন কোন ব্যক্তি এ কথার সাক্ষ্য দিবে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং আমাদের কেবলা দিকে রোখ করবে, আমাদের নামায আদায় করবে এবং আমাদের জবাইকৃত জন্তুর গোশত খাবে, তখন সে এমন মুসলমান হবে, যার উপর শরীঅতের হুকুম আহকাম এমনভাবে বর্তাবে, যা অন্যান্য মুসলমানের উপর বর্তায় এবং তার উপর ঐ সমস্ত দায়িত্ব অর্পিত হবে যা অন্যান্য মুসলমানের উপর অর্পিত হয়।
৩৮৭। হাদীসঃ হযরত আবু আইউব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন তোমরা মলমূত্র ত্যাগ করার স্থানে যাবে; তখন কেবলা দিকে মুখ করো না এবং কেবলার দিকে পিঠও দিয়ো না; বরং তোমরা পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে মুখ করে মলমূত্র ত্যাগ করো (এ হুকুম মদীনাবাসীদের জন্য)
হযরত আবু আইউব আনসারী (রাঃ) আরো বলেন, আমরা শাম দেশে এসে দেখতে পেলাম তথাকার টয়লেটগুলো কেবলার দিকে মুখ করে তৈরী করা হয়েছে। তখন আমরা মলমূত্র ত্যাগের সময় একটু ঘুড়িয়ে বসতাম এবং মহান আল্লাহর কাছে এস্তেগফার করতাম।
৩৮৮। হাদীসঃ হযরত আমর ইবনে দীনার (রাঃ) বলেন, আমরা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ)-কে সে ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম, যিনি ওমরার জন্য বায়তুল্লাহ শরীফের তওয়াফ করেছেন এবং সাফা মারওয়ার সাঈ করেননি, তিনি কি তার বিবির কাছে আসতে পারবেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় আগমন করার পর সাত বার বায়তুল্লআহ শরীফের তওয়াফ ও মাকামে ইব্রাহীমের পেনে দু'রাকাআত নামায আদায় করেন এবং সাফা মারওয়ার মধ্যে সাঈ করেন। আর তোমাদের জন্য রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মধ্যে উত্তম আদর্শ। আমরা হযরত জাবের (রাঃ)-কে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সাফা মারওয়া সাঈ না করা পর্যন্ত কেউ যেন বিবির নিকটবর্তী না হয়।
৩৮৯। হযরত আমর ইবনে দীনার (রহঃ) বলেন, আমরা জাবের ইবনে আব্দুল্লাহকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে দৌড়াবার পূর্বে স্ত্রী সহবাস করবে না।
৩৯০। হাদীসঃ হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ)-এর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম খানায়ে কা'বায় প্রবেশ করেছেন। ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি খানায়ে কাবার দিকে অগ্রসর হলাম। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম খানায়ে কাবা হতে বের হয়ে আসেন। আমি তখন হযরত বেলাল হাবশী (রাঃ)-কে দেখতে পেলাম, তিনি খানায়ে কাবার দরজার দু'পাটের মধ্যবর্তী স্থানে দণ্ডায়মান আছেন। আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম খানায়ে কাবার মধ্যে কোন নামায আদায় করেছেন কি না? তিনি বললেন, হাঁ, খানায়ে কাবার মধ্যে ঢুকতে বাম পার্শ্বস্থিত দু'খাম্বার মধ্যবর্তী স্থানে দুরাকাআত, তারপর খানায়ে কাবা হতে বের হয়ে সম্মুখে এসে (মাকামে ইব্রাহীমে) দু'রাকআত নামায আদায় করেছেন।
৩৯১। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম খানায়ে কা'বায় প্রবেশ করে তাকে প্রত্যেক দিকে দোআ করেন, কিন্তু কোন নামায আদায় করেননি। এমনকি তিনি বের হয়ে আসলেন। তিনি খানায়ে কা'বা হতে বের হয়ে আসার পর কা'বার সম্মুখে (মাকামে ইব্রাহীমে) এসে দু'রাকআত নামায আদায় করে বললেন, এটাই হল কেবলা।
৩৯২। হাদীসঃ হযরত বারা বিন আযেব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আসার পর বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে ফিরে ষোল অথবা সতর মাস পর্যন্ত নামায আদায় করেন। অপরদিকে তিনি খানায়ে কা'বার দিকে ফিরে নামায পড়তে ভালবাসতেন। অতঃপর মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের আয়াত অবতীর্ণ করলেন-.........
অর্থঃ "হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আসমানের প্রতি আপনার বার বার তাকানোর অবস্থা আমি অবলোকন করেছি।"
অতঃপর তিনি কেবলার দিকে মুখ করেন। অথচ মানুষের মধ্যে একদল জাহেল (ইহুদী) বলছে, হযরত মুহাম্মদ এবং তার অনুসারীগণ এতদিন যে কেবলার দিকে ফিরে নামায আদায় করেছেন, তাদেরকে তা হতে কিসে ফিরিয়েছে? অথচ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছেঃ
..............
অর্থঃ হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি তাদেরকে বলে দিন, মাশরেক মাগরেব সবদিকই আল্লাহর। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকেই সেরাতে মুসতাকীমের প্রতি হেদায়াত করেন।
কেবলা পরিবর্তনের সময় এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে নামায আদায় করেছিলেন। নামায শেষে তিনি বের হয়ে আসেন। তিনি আসরের সময় এক দল আনসারের বাম দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তাদেরকে দেখতে পেলেন, তারা পূর্ববৎ বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামায আদায় করছেন। তিনি তাদেরকে বললেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে একনই নামায আদায় করে এসেছেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম খানায়ে কা'বার দিকে ফিরে নামায আদায় করেছেন। এ খবর শুনতে পেয়ে তাঁরা সবাই বায়তুল মোকাদ্দোসের দিক থেকে ফিরে কেবলার দিকে মুখ করে নামায আদায় করেন।
৩৯৩। হাদীসঃ হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভ্যাস ছিল, সওয়ারী যে দিকেই ফিরত তিনি তার উপর নামায আদায় করতেন, কিন্তু যখন ফরয নামায আদায়ের ইচ্ছা করতেন, তখন সওয়ারী হতে নেমে কেবলার দিকে মুখ করে নামায আদায় করতেন।
৩৯৪। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায আদায় করেন। বর্ণনাকারী হযরত ইব্রাহীম বলেন, আমার জানা নেই, নামাযে বাড়িয়েছেন না কমিয়েছেন। যাক, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম ফিরালেন তখন সাহাবাদের পক্ষ হতে বলা হল, হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! নামাযের মধ্যে কিছু ঘটেছে কি-না? তিনি বললেন, তা কি? সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হুযুর! আপনি তো নামায এরুপ এরুপ আদায় করেছেন। এতদ্রশ্রবণে তিনি সাথে সাথে পা মুড়িয়ে কেবলার দিকে রোখ করে পর পর দু'টি সেজদা করে সালাম ফিরান। সালাম ফিরাবার পর যখন তিনি পুনরায় আমাদের দিকে মুখ করলেন, তখন ইরশাদ করলেন, নামাযের মধ্যে নতুন কিছু ঘটলে নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে সে সেম্পর্কে খবর দিতাম। তবে তোমরা জেনে রেখো, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ, তোমরা যেমন ভুলে যাও, আমিও তেমনি ভুলে যাই। সুতরাং আমি যদি কখনো ভুল করি, তোমরা আমাকে তাসবীহের মাধ্যমে তা শুধরে দিও। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি নামাযে সন্দেহের বশবর্তী হয়, সে (সঠিক মতামতের জন্য) নামাযের মধ্যে খুব চিন্তা ভাবনা করে তারপর ধাণা অনুসারে যেন নামায পূর্ণ করে, তারপর সালাম ফিরিয়ে দু'টি সেজদা করে নেয়।
৩৯৫। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, আমীরুল মো'মেনীন হযরত ওমর (রাঃ) বলেছেন, তিনটি কাজে আমি আমার প্রভুর সাথে ঐকমত্যে পৌছেছি, যা নিম্নরুপ-
(১) আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলেছিলাম, যদি আমরা মাকামে ইব্রাহীমকে নামাযের স্থান হিসেবে নির্দিষ্ট করতাম, অতঃপর কোরআনে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে-
.................... অর্থাৎ তোমরা মাকামে ইব্রাহীমকে নামাযের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো।
(২) আমি এক সময় আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যদি আপনি উম্মাহাতুল মো'মেনীনকে পর্দা করার আদেশ করতেন। যেহেতু অনেক নেককার বদকারই তাদের সাথে কথা বলে থাকে, তখনই পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হয়।
(৩) এক সময় উম্মাহাতুল মো'মেনীন স্বীয় আত্মমর্যাদাবোধের উপর একত্রিত হয়েছিলেন। তখন আমি তাদেরকে বলেছিলা, যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদেরকে তালাক প্রদান করেন, হতে পারে তাঁর প্রভু তোমাদের চেয়েও অতি উত্তম এবং আনুগত্যশীল মহিলাদেরকে তাঁর বিবি হিসেবে প্রদান করতে পারেন। তখন এ সম্পর্কে কোরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়।
৩৯৬। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন, এক সময় সাহাবায়ে কেরাম মসজিদে কো'বায় ফজরের নামায আদায় করছিলেন। এ সময় আব্বাদ ইবনে বিশর তথায় আগমন করে বললেন, এ রাত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। তাঁকে আদেশ করা হয়েছে তিনি যেন নামাযের মধ্যে কেবলার দিকে মুখ করেন। এতদশ্রবণে উপস্থিত সবাই কেবলার দিকে মুখ ঘুরিয়ে নামায আদায় করলেন, সে সময় তাঁদের চেহারা শামের দিকে ছিল।
৩৯৭। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের নামায পাঁচ রাকআত আদায় করেন। তখন সাহাবাগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! নামাযের মধ্যে কোন রাকআত বাড়ানো হয়েছে কিনা? তিনি বললেন, কি? সাহাবাগণ আরজ করলেন, আপনি তো নামায পাঁচ রাকআত আদায় করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনই পা মোবারক মুড়িয়ে কেবলার দিকে মুখ ফেরান এবং দু'বার সেজদা করেন। অর্থাৎ সেজদায়ে সাহু আদায় করেন।
৩৯৮। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে কেবলার দিকে পাতলা কফ অথবা নাকের সর্দি দেখতে পেলেন।এ দেখে তার কাছে খুবই খারাপ মনে হল। এমনকি তাঁর চেহারায় এর প্রতিক্রিয়া দেখা গেল। অতঃপর তিনি উঠে গিয়ে হাত দ্বারা তা মাটিতে দাফন করেন। তারপর ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন সে একান্তভাবে তার প্রভুর সাথে মনের কথা বলতে থাকে। অথবা বলেছেন, প্রভু তখন তার এবং কেবলার মধ্যে বিরাজমান থাকেন। সুতরাং তোমাদের কেউ যেন কেবলার দিকে থুথু ইত্যাদি না ফেলে, বরং যদি একান্তই থুথু ইত্যাদি ফেলতে হয়, তা হলে বাম দিকে অথবা নীচের দিকে ফেলবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় চাদরের অাঁচল হাতে নিলেন, তাতে থুথু ফেললেন। অতঃপর সাহাবাগণ পরস্পর এভাবে দেখালেন, তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা এরুপ করবে।
৩৯৯। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীর কেবলার দিকে দেয়ালে থুতু অথবা কফ দেখতে পেলেন। অতঃপর তিনি নিজ হাতে তা মাটিতে দাফন করেন। তারপর সাহাবাদের দিকে ফিরে বললেন, তোমাদের কেউ যখন নামায পড়ে, তখন সে যেন কেবলার দিকে থুথু বা কফ না ফেলে। যেহেতু নামায অবস্থায় আল্লাহ তার সম্মুখে থাকেন।
৮০০। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা কেবলার দিকের দেয়ালে নাকের শ্লেষ্মা, থুথু অথবা কফ দেখতে পেয়ে নিজ হাতে তা দাফন করেন। (ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, কোন ভিজা নোংরা নাপাক বস্তু পা দ্বারা মাড়ালে পা ধৌত করে নিবে। শুকনা হলে ধৌত করতে হবে না।
৪০১। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা এবং আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীর দেয়ালে কফ দেখতে পেলেন। অতঃপর একটা কংক্রিট হাতে নিয়ে তা দ্বারা কফ মাটিতে দাফন করলেন। তারপর বললেন, তোমাদের কেউ যদি কফ ইত্যাদি ফেলতে ইচ্ছা করে, সে যেন কেবলার দিকে অথবা নিজের ডান দিকে তা না ফেলে। বরং বাম দিকে অথবা বাম পায়ের নিচে ফেলবে।
৪০২। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা এবং আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীর দেয়ালে কফ দেখতে পেলেন। অতঃপর একটা কংক্রিট হাতে নিয়ে তা দ্বারা কফ মাটিতে দাফন করলেন। তারপর বললেন, তোমাদের কেউ যদি কফ ইত্যাদি ফেলতে ইচ্ছা করে, সে যেন কেবলার দিকে অথবা নিজের ডান দিকে তা না ফেলে। বরং বাম দিকে অথবা বাম পায়ের নিচে ফেলবে।
৪০৩। হাদীসঃ আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন তার সামনে এবং ডানে থুথু না ফেলে। বরং তার বাঁ দিকে অথবা বাঁ পায়ের নিচের দিকে ফেলবে।
৪০৪। হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মো'মেন যখন নামায পড়ে, তখন সে তার প্রভুর সাথে মনের গোপন কথা বলতে থাকে। সুতরাং সে যেন সম্মুখে অথবা ডান দিকে থুথু ইত্যাদি না ফেলে; বরং বাম দিকে অথবা পায়ের নিচে ফেলবে।
৪০৫। হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের সম্মুখ দিকে নাকের শ্লেষ্মা দেখতে পেয়ে কংক্রিট দ্বারা তা দূর করেন। তারপর তিনি নিষেধ করলেন মানুষ যেন তার সম্মুখে অথবা ডান দিকে থুথু ইত্যাদি না ফেলে; বরং বাম দিকে অথবা পায়ের নিচে ফেলে।
৪০৬। হাদীসঃ হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন, মসজিদে থুথু ফেলা গুনাহের কাজ। তার কাফফারা হল মাটির নিচে দাফন করা।
৪০৭। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে রেওয়ায়াত করেন, তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায়, সে যেন তার সম্মুখের দিকে থুথু ইত্যাদি না ফেলে। যেহেতু সে যতক্ষণ নামাযে থাকে ততক্ষণ প্রভুর সাথে মনের গোপন কথা আলাপ করতে থাকে। তদ্রুপ সে যেন তার ডান দিকেও থুথু ইত্যাদি না ফেলে যেহেতু তার ডান দিকে ফেরেশতা থাকে; বরং বাম দিকে অথবা পায়ের নীচে থুথু ইত্যাদি ফেলবে। তারপর তা মাটিতে দাফন করে দিবে।
৪০৮। হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার দিকে (দেওয়ালে) কফ দেখে তা নিজ হাতে মুছে ফেললেন আর তাঁর চেহারায় অসন্তোষ প্রকাশ পেল। বা সে কারণে তার চেহারায় অসন্তোষ প্রকাশ পেলো এবং এর প্রতি তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ পেল। তিনি বললেন, যখন তোমাদের কেউ নামাযে দাঁড়ায়, তখন সে তার রবের সঙ্গে চুপে চুপে কথা বলে। অথবা (বলেছেন) তখন তার রব কিবলা ও তার মাঝখানে থাকেন। কাজেই সে যেন কিবলার দিকে থুথু না ফেলে, বরং (প্রয়োজনে) তার বাঁ দিকে বা পায়ের নীচে ফেলবে। তারপর তিনি চাদরের কোণ ধরে তাতে থুথু ফেলে এক অংশের উপর অপর ভাঁজ করে দিলেন এবং বললেন অথবা প্ররুপ করবে।
৪০৯। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত মুসল্লীদেরকে সম্বোধন করে বললেন, তোমরা কি এ স্থানে আমার সম্মুখ দিকে দেখতে পাচ্ছ? (অর্থাৎ তোমরা মনে কর আমি তোমাদের ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে কিছুই জানি না। যেহেতু আমি কেবলার দিকে ফিরে আছি।) আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমাদের সেজদা, তোমাদের রুকু কোন কিছুই আমার কাছে গোপ নয়। আমি নিশ্চিতভাবে তোমাদেরকে পেছন থেকেও দেখতে পাচ্ছি (যেমন সম্মুখ থেকে দেখতে পাই)
৪১০। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে নামায আদায় করেন। তারপর মিম্বরে আরোহন করে বললেন, হে সাহাবাগণ! নামায অবস্থায় এবং রুকুর মধ্যে নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে এমনভাবে দেখতে পাই, যেমন এখন দেখতে পাচ্ছি।
৪১১। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম 'মসজিদে বনী যুরাইক' পর্যন্ত দু'টি ঘোড়ার প্রতিযোগীতার ব্যবস্থা করেন। একটি ঘোড়া যা 'হাফয়া' নামক স্থান থেকে ঘাস ইত্যাদি খেয়ে মোটা তাজা হয়েছে (হাফয়ার দূরত্ব সানিয়াতুল বেদা পর্যন্ত) দ্বিতীয় ঘোড়াটি 'সানিয়াতুল বেদা' হতে ঘাস ইত্যাদি খায়নি। এ প্রতিযোগীতায় হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) জয়যুক্ত হয়েছিলেন।
৪১২। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মসজিদে উপস্থিত পেলাম। তাঁর সাথে আরো কিছু লোক ছিল। আমি দাঁড়িয়ে রইলে তিনি আমাকে বললেন, তোমাকে আবু তালহা পাঠিয়েছেন? আমি বললাম, হাঁ। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত লোকদেরকে বললেন, তথায় পৌছা পর্যন্ত তোমরা আমার সাথে চল। অতঃপর আমি সেখানে পৌছা পর্যন্ত তাঁদের আগে আগে চললাম।
৪১৩। হাদীসঃ হযরত সাহল বিন সা'দ (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কেউ যদি তার বিবির সাথে অন্য পুরুষকে দেখতে পায়, সে কি তাকে হত্যা করতে পারে, এ ব্যাপারে আপনার কি অভিমত? অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত স্বামী স্ত্রীযুগলে মসজিদে 'লেআন' করালেন, আমি তথায় উপস্থিত ছিলাম।
৪১৪। হাদীসঃ হযরত ইতবান ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সময় তাঁর বাড়িতে তাশরীফ আনলেন। অতঃপর তাঁকে বললেন, তোমার ঘরে কোন স্থান আমার নামায পড়ার জন্য তুমি পছন্দ করছ। তখন আমি এক জায়গার দিকে ইঙ্গিত করলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে নামাযের জন্য তাকবীর বললেন। আমরা তাঁর পেছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি দু'রাকআত নফল নামায আদায় করেন।
৪১৫। হাদীসঃ হযরত মাহমুদ ইবনে রবী আনসারী (রাঃ) বলেন, হযরত ইতবান ইবনে মালেক (রাঃ)-যিনি নবী করীম সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আনসার সাহাবীদের মধ্যে একজন বদরী সাহাবী ছিলেন। তিনি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম! বর্তমানে আমার দৃষ্টিশক্তি লোপ পেয়েছে। আমি আমার গোত্রের ইমামতি করছি। যখন বৃষ্টি বাদল দেখা দেয় তখন আমার গ্রোত্রের এবং আমার বাড়ীর মধ্যস্থ মাঠ পানিতে ভরপুর হয়ে যায়। তখন বার্ধক্যহেতু আমি মসজিদে এসে তাদেরকে নিয়ে নামায আদায় করতে অক্ষম হয়ে পড়ি। তাই আমি পছন্দ করছি, আপনি যদি আমার রে হাজির হয়ে কোন এক স্থানে নামায আদায় করতেন, তা হলে আমি সে স্থানকে আমার নামাযের জন্য মুসল্লা হিসেবে নির্দিষ্ট করতাম। বর্ণনাকারী বলেন, এতদশ্রবণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, ইনশাআল্লাহ আমি তা করব। হযরত ইতবান (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরদিন দ্বিপ্রহরের সময় হযরত আবু বকর (রাঃ) সহ আমার বাড়ীতে তাশরীফ আনলেন। তারপর তিনি আমার ঘরে নামায আদায় করার জন্য অনুমতি চাইলে আমি অনুমতি প্রদান করলাম।
হযরত ইতবান (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ করা মাত্রই অপেক্ষা না করে বললেন, হে ইতবান! আমি তোমার ঘরের কোন স্থানে নামায পড়া তুমি পছন্দ করছ? তখন আমি তাঁকে ঘরের এক কিনারায় নামায পড়ার জন্য ইঙ্গিত করা মাত্রই তিনি তাকবীর বললেন, আমরা তাঁর পেনে কাতার বেঁধে দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি সেখানে দু'রাকআত নামায আদায় করলেন, তারপর সালাম ফিরালেন। বর্ণনাকারী আরো বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে যেতে চাইলে আমি তাঁকে খাযিরা খাওয়ার জন্য বারণ করলাম, যা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্যই তৈরি করিয়েছিলাম। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর মহল্লার লোকজন ঘরে এসে একত্রিত হয়ে বসলেন। তখন উপস্থিত লোকদের মধ্য হতে একজন বললেন, 'মালেক ইবনে দুখাইশান' কোথায়, তাকে তো দেখছি না? তাদের মধ্যকার আরেকজন বললেন, সে তো মোনাফেক, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে পছন্দ করে না। রাসূল সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বললেন, তোমরা এরুপ বলো না, সে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" উচ্চারণ করেছে। সাহাবাগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এ সম্পর্কে অধিক অবগত। আমরা তো তাকে মুনাফিকদের সাথে উঠাবসা করতে এবং পরামর্শ দিতে দেখি।
রাসূল সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদে করলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা দোজখের উপর তাকে হারাম করেছেন। অর্থাৎ সে জাহান্নামে চিরকালের জন্য প্রবেশ করবে না।
৪১৬। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কোন কাজ সাধ্যানুসারে ডান দিক থেকে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন। যেমন-অযু করা, মাথা চরানো, জুতা পরিধান করা ইত্যাদি।
৪১৭। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, হযরত উম্মে হাবীবা এবং উম্মে সালামা (রাঃ) নাসারাদের ঐ ইবাদতখানা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন, যা তাঁরা হাবশায় দেখতে পেয়েছিলেন। ইবাদতখানাতে ছিল বিভিন্ন প্রতিমূর্তি। তাঁরা এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এ সম্পর্কে আলোচনা করলে তিনি বললেন, নাসারাদের অবস্থা হল, যখন তাদের মধ্যকার কোন ভাল লোক মারা যে, তখন তারা তার কবরের উপর মসজিদ তৈরী করত এবং তাতে মৃত ব্যক্তির প্রতিমূর্তি স্থাপন করত। কেয়ামতে আল্লাহর কাছে তারা সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট ব্যক্তি হবে।
৪১৮। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করার পর প্রথমত মদীনার উঁচু এলাকার এক গোত্রে অবতরণ করেন। যাদেরকে বলা হত 'বনু আমর ইবনে আওফ।' তিনি সেখানে চব্বিশ দিন অবস্থান করনে। অতঃপর নিজের মাতুল 'বনী নাজ্জার' গোত্রের কাছে লোক পাঠান। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভালোভাবে অভ্যর্থনা করে নিয়ে যান। তাদের তলোয়ারগুলো খাপের মধ্যে ছিল। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, আমার মনে হয়, আমি এখনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পাচ্ছি, তিনি তাঁর কাসওয়া উটনীর উপর আরোহণ করে আছেন এবং হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁর পেছনে রয়েছেন। আর 'বনু নাজ্জার' গোত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ তাঁকে চুতস্পার্শ্ব থেকে বেষ্টন করে আছেন। অবশেষে তিনি হযরত আবু আ্ইউব আনসারী (রাঃ)-এর বাড়ীর আঙ্গিনায় সওয়ারী হতে অবতরণ করেন।
যেখানে নামাযের সময় হত সেখানেই নামায পড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বড়ই পছন্দনীয় ছিল। এমনকি তিনি বকরীর আস্তাবলে পর্যন্ত নামায পড়তেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে একটি মসজিদ তৈরী করার আদেশ করেন। অতঃপর তিনি বনু নাজ্জার নেতৃবৃন্দের কাছে লোক পাঠান। তারা উপস্থিত হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন, হে নাজ্জার বংশের লোকগণ! তোমাদের এ বাগানটি আমার কাছে মূল্য নিয়ে বিক্রি কর। তারা বললেন, আল্লাহর শপথ! আমরা আমাদের বাগান মূল্য নিয়ে বিক্রি করব না। আমরা এর মূল্য চাই না; বরং আল্লাহর কাছে এর প্রতিদান চাই।
হযরত আনাস (রাঃ) আরো বলেন, আমি তোমাদের বলছি, সেখানে ছিল জাহেলী যুগের মুশরিকদের কবর ও শস্যক্ষেত্র। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের কবরসমূহ সম্পর্কে আদেশ হলে তা মিটিয়ে দেয়া হল এবং খেজুর বৃক্ষসমূহ সম্পর্কে আদেশ করা হলে তা কেটে ফেলা হল। অতঃপর মসজিদের কেবলার দিকে খেজুর বৃক্ষগুলো (তিন হাত অন্তর অন্তর) খাড়া করে গেড়ে দেয়া হল। পার্শ্বের দিকে পাথর বসিয়ে দেখা হল (সে সময় কেবলা ছিল শাম দেশের দিকে এবং মসজিদটি দৈর্ঘ্যে প্রস্থে প্রায় একশত হাত করে লম্বা ছিল) সাহাবায়ে কেরাম কবিতার পংক্তি গাইতে গাইতে মসজিদের জন্য পাথর বহন করে নিয়ে আসতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁদের সাথে পাথর বহন করতেন এবং বলতেন "আখেরাতের কল্যাণই একমাত্র কল্যাণ। তাই হে আল্লাহ! আপনি আনসার ও মহাজিরদেরকে ক্ষমা করুন।"
৪১৯। হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বকরীর আস্তাবলে নামায পড়তেন। বর্ণনাকারী শো'বা বলেন, আমি আবু তাইয়াহকে পরে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ তৈরির পূর্বে বকরীর আস্তাবলেও নামায পড়েছেন।
৪২০। হাদীসঃ হযরত নাফে (রঃ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ)-কে তাঁর উটের কাছে নামায পড়তে দেখেছি এবং তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এরুপ করতে দেখেছি।
৪২১। হাদীসঃ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, এক সময় সূর্যগ্রহণ দেখা দিলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে নিয়ে নামায আদায় করেন। তারপর বললেন, আমাকে নামাযের মধ্যে দোযখ দেখানো হয়েছে। আমি আজকের মত এরুপ ভীতিপূর্ণ দৃশ্য আর কখনো দেখিনি।
৪২২। হাদীসঃ হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে রেওয়ায়াত করেন, তোমরা নিজেদের থাকার ঘরেও নামায পড়বে। সেগুলোকে কবর বানাবে না (অর্থাৎ কবরের ন্যায় থাকার ঘরকে ইবাদতশূন্য রাখবে না, বরং থাকার রেও বিভিন্ন প্রকার ইবাদত করা উত্তম)
৪২৩। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যেখানে আল্লাহর আযাব নাযিল হয়েছে, তোমরা সে সকল স্থানে যাবে না, তবে ক্রন্দনরত অবস্থায় যেতে পারে। যদি তোমরা এ ভয়ে কাঁদতে না পার যে, তাদের উপর যে আযাব অবতীর্ণ হয়েছিল তোমাদের উপর তা অবতীর্ণ হবে, তা হলে সেখানে প্রবেশ করো না।
৪২৪। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক সময় হযরত উম্মে সালামা (রা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নাসারাদের এক ইবাদতখানা সম্পর্কে আলোচনা করলেন, যা তিনি হাবশায় দেখে এসেছিলেন, যার নাম চিল মারিয়াহ। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে সে সমস্ত মূর্তি বা ছবি সম্পর্কেও আলোচনা করেন যা তিনি তাতে দেখেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, নাসারা এমন এক সম্প্রদায়, যখন তাদের মধ্যকার কোন সৎলোক মারা যায় তখন তারা তার কবরের উপর একটি মসজিদ তৈরি করে এবং তাতে মৃতের ছবি বা মূর্তি স্থাপন করে। তারা আল্লাহর সৃষ্ট জীবের মধ্যে সবচাইতে নিকৃষ্ট।
৪২৫। হাদীসঃ হযরত ওবায়দুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে ওতবাহ (রাঃ) বলন, হযরত আয়েশা এবং আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকালের পূর্বমূহূর্তে 'খামিসা' নামক কাল চাদরখানা দ্বারা নিজের মূখমন্ডল ঢাকতেন। চাদরের কারণে যখন খুব বেশি গরম অনুভূত হত, তখন তা খুলে ফেলতেন। পুনারায় আবার তা টেনে দিতেন। এমনি অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইহুদী এবং নাসারাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ অবতীর্ণ হোক। তারা তাদের নবী (আঃ)-এর কবরগুলোকে মসজিদ হিসেবে গ্রহণ করেছে (বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বাক্য দ্বারা সাহাবাদেরকে ইহুদীদের ক্রিয়াকলাপ থেকে ভীতি প্রদর্শন করনে)
৪২৬। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইহুদীদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করুন। তারা তাদের নবী (আঃ)-এর কবরগুলোকে মসজিদরুপে গ্রহণ করেছে। অর্থাৎ ইবাদতখানা বানিয়েছে।
৪২৭। হাদীসঃ হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাত (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মহান আল্লাহ আমাকে এমন পাঁচটি বস্তু প্রদান করেছেন, যা আমার পূর্বেকার কোন নবীকে দেয়া হয়নি।
(১) এক মারে রাস্তার দূরত্ব পর্যন্ত আমার ভয় ভীতি বিস্তার করে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে (২) এ ধরাপৃষ্ঠকে আমার জন্য মসজিদরুপে পবিত্র করে দেয়া হয়েছে। আমার উম্মতের যে কেউ যে কোন স্থানে নামাযের সময় হলে তথায় নামায আদায় করতে পারে। (৩) গনীমতের মাল আমার জন্য হালাল করা হয়েছে (৪) অন্যান্য নবীদেরকে বিশেষভাবে তাদের গোত্রের কাছেই প্রেরণ করা হয়েছে। আর আমাকে সারাবিশ্বের সকল গোত্রের লোকদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। (৫) আর আমাকে শাফাআতে কোরবার অধিকার দেয়া হয়েছে।
৪২৮। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আরবের কোন এক গোত্রের এক কাল দাসী ছিল। আযাদ করে দেয়ার পরও দাসীটি সে গোত্রেই বসবাস করত। তিনি বলেছেন, একদিন উক্ত গোত্রের একটি ছোট বালিকা এমন অবস্থায় ঘর থেকে বের হল যে, তার গলায় অথবা কাঁধে ছিল একখানা হার, যা চামড়ার উপর মনিমুক্তা খঁচিত ছিল। উক্ত বালিকা হারটি হারিয়ে ফেলে অথবা তা পড়ে যায়। স্থান দিয়ে একটি ছোট চিল উড়ে যাবার সময় পড়ে থাকতে দেখে গোশত মনে করে ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। দাসী বলেন, অতঃপর গোত্রের লোকেরা তা খোঁজাখুঁজি করল, কিন্তু কোথাও পেল না। তারা আমাকে সন্দেহ করে দোষারোপ করল। তারপর তারা আমার কাছে তা তালাশ করতে লাগল। এমন কি তারা আমার গোপন স্থানে পর্যন্ত তা তালাশ করে। মহিলা বলেন, এতদসত্ত্বেও আমি তাদের গোত্রেই থাকতে লাগলাম। হঠাৎ দেখা গেল, ছোট চিলটি পুনরায় তাদের এলাকার উপর দিয়ে যাবার সময় হারটি ফেলে গেল। যা তাদের মধ্যেই এসে পড়ে। অতঃপর আমি তাদেরকে বললাম, তোমরা তো এ জন্যই আমাকে দোষারোপ করেছিলে। তোমরা ধারণা করেছিলে, আমি তা অপহরণ করেছি। অথচ আমি তা হতে পূত পবিত্র। এ ঘটনার পরও দাসী সেখানেই অবস্থান করতে লাগলেন।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় হিজরত করে আসার পর এক সময় উক্ত দাসী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাজির হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে। মসজিদে নববীতে তার জন্য একটি খীমা অথবা ছোট ঘর নির্দিষ্ট ছিল, সেখানে সে থাকত। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, মসজিদে থাকা অবস্থায় সে প্রায়ই আমার কাছে আসা যাওয়া করত, কথাবার্তা বলত। সে আমার কাছে এসে বসার পূর্বেই বলত, হারের দিনটি ছিল আমার প্রভুর পক্ষ থেকে একটি আশ্চর্য ঘটনা। আর তা কাফেরদের দেশের ঘটনা। আল্লাহ আমাকে নাজাত দিয়েছেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি একদিন তাকে প্রশ্ন করলাম, তোমার অবস্থা কি? তোমাকে দেখছি কোন দিনই আমার কাছে এসে বস না; বরং বসার পূর্বেই তুমি এ ধরনের কথাগুলো বল, এর কারণ কি? অতঃপর সে পূর্ণ ঘটনা আমাকে বর্ণনা করে।
৪২৯। হযরত নাফে (রঃ) বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) মসজিদে নববীতে নিদ্রা যেতেন। তখন তিনি ছিলেন অবিবাহিত যুবক, তাঁর কোন পরিবার ছিল না।
৪৩০। হাদীসঃ হযরত সাহল বিন সা'দ (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে বললেন, তোমার চাচার ছেলে (অর্থাৎ তোমার স্বামী) কোথায়? তিনি বললেন, আব্বা! আমাদের মধ্যে কিছু কথা কাটাকাটি হয়েছে। তাই তিনি রাগান্বিত হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেছেন। ঘরে দুপুর বেলার আরাম (কায়লুলা) করেননি।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে বললেন, দেখ তা সে কোথায় আছে? সে এসে বলল, হুযুর! তিনি মসজিদে ঘুমাচ্ছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে এসে দেখলেন, হযরত আলী (রাঃ) কাত হয়ে শুয়ে আছেন। তাঁর চাদরখানা গায়ের উপর থেকে পড়ে যাওয়ায় গায়ে মাটি লেগে গেছে। এ অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর শরীর থেকে মাটি মুছতে মুছতে বললেন, হে আবু তোরাব উঠ, হে আবু তোরাব উঠ (এরপর থেকেই তাঁর উপনাম আবু তোরাব প্রসিদ্ধি লাভ করে। আবু তোরাব অর্থ মাটির পিতা)
৪৩১। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি আসহাবে সুফফার এমন সত্তর জন সাহাবায়ে কেরামকে দেখেছি, যাঁদের কারো কাছে হয়ত চাদর অথবা ইজার অথবা কম্বল ছিল, যা তাঁরা ঘাড়ে বেঁধে রাখতেন। আর তাও এত ছোট ছিল যে, হয়ত কারো নিসফে সাক হাঁটুর নীচে অর্ধেক পর্যন্ত, কারো টাখনু পর্যন্ত পড়ত এবং তাঁরা এক হাতে মধ্যখানে ধরে রাখতেন, যাতে তাদের লজ্জাস্থান দেখা না যায়। অর্থাৎ খুবই অভাবের মধ্যে তাঁরা দিনাতিপাত করতেন।
৪৩২। হাদীসঃ হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাজির হয়ে দেখলাম, তিনি মসজিদে আছেন। হযরত মেসআর (রাঃ) বলেন, আমার ধারণা, হযরত 'মাহারেব' বলেছেন তিনি 'চাশতের' সময় এসেছিলেন। তিনি জাবের (রাঃ)-কে বললেন, তুমি দু'রাকআত নামায পড়ে নাও। সে সময় আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কিছু টাকা পাওনা ছিলাম। তিনি আমার পাওনা পরিশোধ করে দিলেন এবং কিছু বেশিও দিলেন।
৪৩৩। হাদীসঃ হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে বসার পূর্বেই দু'রাকআত (দুখুলুল মসজিদ) নামায পড়ে নিবে।
৪৩৪। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ যে মোসাল্লাতে নামায পড়েছিল, যতক্ষণ পর্যন্ত সে অযু অবস্থায় ঐ মোসাল্লায় অবস্থান করতে থাকে, ফেরেশতারা তার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত দোআ করতে থাকেন। ফেরেশতাগণ বলতে থাকেন, "হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর, তার প্রতি রহম কর।"
৪৩৫। হাদীসঃ হযরত নাফে (রঃ) বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) তাঁকে খবর দিয়েছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় মসজিদে নববীর ভিত্তিপ্রস্তর ইট দ্বারা করা হয়েছিল আর ছাদ খেজুরের ডাল দ্বারা আচ্ছাদিত এবং খুঁটি ছিল খেজুর কাঠের। হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁর খেলাফত আমলে কিছুই বাড়াননি। হযরত ওমর (রাঃ) তাঁর খেলাফত আমলে তাতে কিছু পরিবর্তন করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যমানার ভিত্তির উপর তিনি তা ইট ও খেজুর কাঠ দ্বারা পূর্ণ:নির্মাণ করেছিলেন এবং তার খুঁটিগুলোও পুনরায় খেজুর বৃক্ষের কাঠ দ্বারা বদলে দিলেন। অতঃপর হযরত ওসমান (রাঃ) তাঁর খেলাফতকালে তাতে পরিবর্তন পরিবর্ধন করেন। তিনি মসজিদে নববীকে অনেক বড় করেন। মসজিদের দেয়াল নকশী পাথর ও চুন সুরকি দ্বারা তৈরী করেন। খুঁটিগুলোও নকশী পাথর দ্বরা তৈরী করেন এবং ছাদ সাজ নামক এক প্রকার কাঠ দ্বারা তৈরি করান। কোরআনের বাণী-মুশরিকদের জন্য আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করা জায়েজ নয়।
৪৩৬। হাদীসঃ হযরত ইকরিমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক সময় হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) আমাকে এবং তাঁর পুত্র আলী ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বললেন, তোমরা হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর কাছে যাও এবং তাঁর কাছ থেকে হাদীস শ্রবণ কর। আমরা তাঁর কাছে গেলাম। তিনি তখন বাগান পরিচর্যা করছিলেন। আমাদেরকে দেখতে পেয়ে তিনি নিজের চাদর হাতে নিলেন এবং তা দ্বারা শরীর আচ্ছাদতি করলেন, তারপর হাদীস বর্ণনা আরম্ভ করলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি মসজিদে নববীর ভিত্তিপ্রস্তরের আলোচনায় এসে বললেন, মসজিদে নববীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় আমরা প্রত্যেকে একটি করে ইট বহন করে নিয়ে আসতাম। আর হযরত আম্মার (রাঃ) দু'দুটো ইট বহন করে নিয়ে আসতনে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আম্মার (রাঃ)-এর এ অবস্থা দেখতে পেলেন, তখন তাঁর বদন থেকে মাটি ঝাড়তে লাগলেন আর বললেন, আম্মারের জন্য আফসোস! তাকে একটি বিদ্রোহী দল হত্যা করবে, সে তাদেরকে বেহেশতের দিকে আর তারা তাকে দোযখের দিকে আহবান করবে। বর্ণনাকারী বলেন, এতদশ্রবণে আম্মার (রাঃ) বললেন, আমি মহান আল্লাহর দরবারে ফেতনা ফাসাদ থেকে পরিত্রাণ কামনা করছি।
৪৩৭। হাদীসঃ হযরত সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মহিলার নিকট লোক পঠিয়ে বললেন, তুমি তোমার গোলাম কাঠমিস্ত্রীকে বল, সে যেন আমার বসার জন্যে কাঠের মিম্বর তৈরি করে দেয়।
৪৩৮। হাদীসঃ হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক মহিলা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি কি আপনার বসার জন্যে কিছু তৈরি করে দিব? আমার এক কাঠমিস্ত্রী গোলাম আছে। তিনি বললেন, যদি তোমার ইচ্ছা হয়। তারপর তিনি একটি মিম্বর তৈরি করিয়ে দিলেন।
৪৩৯। হাদীসঃ হযরত ওবায়দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত ওসমান (রাঃ) যখন মসজিদে নববী ভেঙ্গে নতুন ভাবে তৈরি করছিলেন, তখন অনেকেই এ ব্যাপারে অনেক কিছু মন্তব্য করেন। তখন হযরত ওসমান (রাঃ) তাদেরকে বললেন, হে লোকেরা! তোমরা মসজিদের ব্যাপারে অনেক কিছুই বলেছ। অথচ আমি রাসূলে খোদা সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি (আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য) একখানা মসজিদ তৈরি করবে (বর্ণনাকারী বুকাইর বলেন, আমার ধারণা, তিনি বলেছেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য), মহান আল্লাহ বেহেশতে তার জন্যে অনুরুপ একখানা ঘর তৈরি করবেন।
৪৪০। হাদীসঃ হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি এক সময় মসজিদের মধ্য দিয়ে তীর নিয়ে যাচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন, তুমি তীরের অগ্রভাগ হাতে ধরে নাও।
৪৪১। হাদীসঃ হযরত আবু বোরদা (রাঃ) তাঁর পিতা আবদুল্লাহ থেকে রেওয়ায়াত করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, যারা তীর ধনুক ইত্যাদি সহকারে আমাদের মসজিদ অথবা আমাদের বাজার দিয়ে যাতায়াত করবে, তারা যেন তীরের অগ্রভাগ হাতে ধরে নেয়। তাতে তীর কোন মুসলমানকে জখম করবে না।
৪৪২। হাদীসঃ হযরত আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) হযরত হাসসান বিন সাবেতুল আনসারী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, তিনি হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ)-কে সাক্ষ্য প্রদান করার জন্য বলেন, আমি আপনাকে আল্লাহর নামে কসম দিচ্ছি, আপনি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, হে হাসসান! তুমি রাসূলুল্লাহর পক্ষ হতে জবাব দাও এবং তিনি আরো বলেছেন, হে আল্লাহ! তুমি তাকে রুহুর কুদুসস অর্থাৎ জিব্রাঈলের মাধ্যমে সাহায্য কর। তখন আবু হোরায়রা (রাঃ) বললেন, হাঁ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এরুপ বলতে শুনেছি।
৪৪৩। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার হুজরার দরজায় দণ্ডায়মান দেখতে পেলাম। তখন সুদানের হাবশীগণ যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে মসজিদে খেলছিল। আমি তাদের খেলা দেখার জন্য অগ্রসর হলে তিনি নিজের চাদর দ্বারা আমাকে পর্দা করে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
ইব্রাহীম ইবনুল মোনযের (রাঃ) হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে অন্য সনদে আরো বাড়িয়ে বলেন, হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি, তখন হাবশীরা যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে মসজিদে খেলা করছিল।
৪৪৪। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, এক সময় হযরত বারীরা (রাঃ) আমার কাছে কিছু সাহায্য কামনা করে। তখন আমি বললাম, তুমি চাইলে আমি তোমার পরিবারের লোকদেরকে তোমার মূল্য দিয়ে দিতে পরি, কিন্তু শর্ত হল, তোমার পরিত্যক্ত সম্পদ মার হবে। তখন তার পরিবারবর্গ হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে বললেন, হাঁ, আপনি ইচ্ছা করলে বোরায়রার কিতাবতের (মুক্তি চুক্তির) বকেয়া টাকা এ শর্তের উপর পরিশোধ করে দিতে পারেন।
সুফিয়ান অন্য বর্ণনায় কোন কোন সময় বলেছেন, আপনি ইচ্ছা করলে তার বকেয়া পরিশোধ করে তাকে আযাদ করে দিতে পারেন। তখন তার পরিত্যক্ত সম্পদ আপনারই হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে আগমন করলে আমি তাকে উপরোক্ত ঘটনা অবহিত করলাম। তিনি বললেন, -তুমি তা কর, তারপর আযাদ কর। যেহেতু যে আযাদ করবে, পরিত্যক্ত সম্পদের মালিক সে-ই হবে।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের মিম্বরে গিয়ে দাঁড়ালেন। অন্য বর্ণনামতে হযরত সুফিয়ান বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের মিম্বরে আরোহণ করে বললেন, লোকদের কি হয়েছে, তারা বেচাকেনায় এমন কিছু শর্ত জুড়ে দেয় যা আল্লাহর কিতাবে (কোরআনে) নেই। হে সাহাবাগণ! তোমরা জেনে রেখো, বেচাকেনায় এরুপ মর্তারোপ করবে না যা আল্লাহর কিতাবে নেই, তা গ্রহণীয় নয়, যদিও সে উক্ত শর্ত একশত বারও করে।
৪৪৫। হযরত কা'ব ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি একদা মসজিদে নববীতে ইবনে আবী হাদরাদ (মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা)-এর কাছে পাওনা এ ব্যাপারে কথাবার্তার এক পর্যায়ে উভয়ের আওয়াজ বড় হয়ে গেল, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনতে পান। তিনি ঘর থেকে বের হয়ে হুজরার পর্দা খুলে ডাকলেন, হে কা'ব! তখন কা'ব বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি হাজির। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার ঋণ এরুপ এরুপে কমিয়ে দাও, এ কথা বলে তিনি তাঁর দিকে ইশারা করলেন, অর্থাৎ অর্ধেক কমিয়ে দাও। তখন কা'ব (রাঃ) বললেন, হুযুর! আমি কমিয়ে দিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও তুমি এখন তার কাছে তা চাও।
৪৪৬। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একজন (কালো পুরুষ অথবা মহিলা) সর্বদা মসজিদে নববী ঝাড়ু দিত। সে হঠাৎ করে মারা গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে না পেয়ে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, সে কোথায়? সাহাবাগণ আরজ করলেন, হুযুর! সে তো মারা গেছে। তিনি এ খবর জানতে পেয়ে বললেন, তোমরা অমাাকে কেন তার মৃত্যুর সংবাদ দিলে না? আচ্ছা! এখন আমাকে তার কবর সম্পর্কে খবর দাও। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের কাছে উপস্থিত হয়ে তার নামাযে জানাযা আদায় করেন।
৪৪৭। উম্মুল মো'মেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন সূরা বাকারায় 'সুদ' সম্পর্কিত আয়াত অবতীর্ণ হল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে গিয়ে সাহাবাদেরকে উক্ত আয়াত পাঠ করে শুনান তারপর, সে দিনই মদের ব্যবসাও হারাম করেন।
৪৪৮। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, এক মহিলা অথবা এক পুরুষ মসজিদে নববীর খাদেম হিসেবে ঝাড়ু দিত। আমার ধারণা, তিনি মহিলাই ছিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস আলোচনা করে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  তাঁর কবরের উপর নামাযে জানাযা আদায় করেন।
৪৪৯। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এক খবিস জ্বিন এক রাতে নামাযের একাগ্রতা বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে আমার উপর আক্রমণ চালায়। মহান আল্লাহ আমাকে তার উপর বিজয়ী হওয়ার ক্ষমতা প্রদান করেন। তারপর আমি তাকে কাবু করে মসজিদের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখার ইচ্ছা করলাম, যাতে ভোর হলে আমরা সবাই তা দেখতে পাব। কিন্তু তখন আমার ভাই হযরত সোলায়মান (আঃ)-এর কথা আমার স্মরণ হল, তিনি বলেছেন, হে আমার পালনকর্তা! আমাকে এমন রাজত্ব রাজ ক্ষমতা প্রদান কর, যা আমার পরে অন্য কারো জন্যে সম্ভব না হয় রাবী রাওহ বলেন, তাই তাকে পর্যুদস্ত করে ছেড়ে দেওয়া হল।
৪৫০। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল অশ্বারোহী সৈন্য নজদ এলাকায় পাঠান। তারা তথাকার বনু হানাফিয়া গোত্রের এক ব্যক্তিকে পাকড়াও করে নিয়ে আসেন, যার নাম সুমামা ইবনে উসাল। অতঃপর তারা তাকে মসজিদের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে এসে তাকে দেখতে পেয়ে বললেন, তোমরা 'সুমামাকে’ ছেড়ে দাও। অতঃপর 'সুমামা' মসজিদের নিকটবর্তী খেজুর বাগানে গিয়ে গোসল করেন, তারপর মসজিদে প্রবেশ করে বলেন-
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল।
৪৫১। হাদীসঃ হযরত উম্মুল মো'মেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, খন্দকের যুদ্ধে হযরত সা'দ উবনে মাআয (রাঃ)-এর গর্দানের শাহরগে তীর অথবা তলোয়ারের আঘাত লেগেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে তাঁর জন্য তাঁবুর ব্যবস্থা করেন, যাতে কাছে থেকে তাঁর দেখাশুনা করতে পারেন। সাহাবাগণ তাঁর ব্যাপারে আশা নিরাশার মধ্যে ছিলেন। হঠাৎ করে প্রবাহিত রক্ত তাঁদেরকে বিচলিত করে, যা হযরত সাদ (রাঃ)-এর ক্ষতস্থান থেকে নির্গত হতে শুরু করেছিল। মসজিদে তাঁর পার্শ্বেই বনী গেফার লোকদের একটি তাবু ছিল। তারা হযরত সা'দ (রাঃ)-এর তাঁবুতে অবস্থানকারীদেরকে ডেকে বললেন, হে তাঁবুর লোকজন! তোমাদের তাঁবুর মধ্য হতে আমাদের দিকে এগুলো কি আসছে? হঠাৎ করে দেখা গেল, হযরত সা'দ (রাঃ)-এর ক্ষতস্থান থেকে অবিরত ধারায় রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। অবশেষে হযরত সা'দ (রাঃ) সে রক্তক্ষণের কারণেই ইন্তেকাল করেন।
৪৫২। হাদীসঃ হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, বিদায় হজ্জে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে আরজ করলাম, আমি অসুস্থতাবোধ করছি, কিভাবে বায়তুল্লাহর তওয়াফ করব? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি উটের উপর আরোহণ করে লোকদের পেছনে থেকে তওয়াফ করো। উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি সে ভাবেই বায়তুল্লাহর তওয়াফ করলাম। সে সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পার্শ্বেই নামায আদায় করছিলেন এবং নামাযে সূরা ওয়াততুর তেলাওয়াত করছিলেন।
৪৫৩। হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, এক অন্ধকার রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের দু'ব্যক্তি (নামায শেষে) তাঁর সমীপে থেকে বাড়ির দিকে রওয়ানা হন, যাঁদের একজনের নাম আব্বাদ ইবনে বিশর এবং অন্যজন আমার ধারণা মতে সায়দ বিন হুযায়র (রাঃ)। তাঁরা বাড়ি যাওয়ার পথে উভয়ের সম্মুখে দু'টি বস্তু চেরাগের ন্যায় আলো দিয়ে যাচ্ছিল। তখন তাঁরা পৃথক হয়ে গেলেন তখন তাঁদের প্রত্যেকের সাথে বাড়ি আসা পর্যন্ত একটি করে চেরাগের ন্যায় বস্তু আলো দিয়ে যাচ্ছিল।

৪৫৪। হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে খোতবা দিলেন। খোতবায় তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তাঁর এক বান্দাকে এখতিয়ার প্রদান করেছেন, দুনিয়া এবং আথেরাতের মধ্যে সে যা ইচ্ছা গ্রহণ করতে পারে। অতঃপর সে আখেরাত গ্রহণ করেছে। এতদশ্রবণে হযরত আবু বকর (রাঃ) কেঁদে ফেলেন। তখন আমি মনে মনে বলতে লাগলাম, এ বৃদ্ধ কেন কাঁদছেন? যদি আল্লাহ পাক কাউকে এরুপ একতিয়ার দিয়ে থাকেন, সে দুনিয়া অথবা আখেরাত গ্রহণ করবে, অতঃপর সে আখেরাত গ্রহণ করেছে (এতে কাঁদবার কি আছে)। অবশেষে দেখা গেল, সে বান্দা ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু বকর (রাঃ) ছিলেন আমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে সান্ত্বনা প্রদান করে বললেন, হে আবু বকর! তুমি কেঁদো না। সাহচর্য ও সম্পদ দ্বারা আমার প্রতি সর্বাপেক্ষা ইহসানকারী হলেন হযরত আবু বকর। যদি আমি আমার উম্মতের মধ্যে কাউকে খলীল হিসেবে গ্রহণ করতাম, তা হলে আবু বকরকেই গ্রহণ করতাম; বরং ইসলামের ভ্রাতৃত্ব এবং বন্ধুত্বই যথেষ্ট। আজ থেকে মসজিদে ব্যক্তিগত কোন দরজা থাকবে না, সবই বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে আবু বকরের দরজা বন্ধ করা হবে না।
৪৫৫। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে অসুস্থাতায় ইন্তেকাল করেনসে অসুস্থতায় একদিন তিনি এক টুকরা কাপড়ে মাথা বেঁধে হুজরা থেকে মসজিদে তাশরীফ রাখেন। অতঃপর মিম্বরে বসে মহান আল্লাহর হামদ ও সানা পাঠ করে বললেনসাহাবাদের মধ্যে এমন কেউ নেইযে তার জান মাল দ্বারা আবু বকর ইবনে আবু কুহাফা (রাঃ) হতে আমার প্রতি অধিক ইহসান করেছেন। যদি আমি কাউকে খলীলরুপে গ্রহণ করতামতা হলে আবু বকরকেই গ্রহণ করতামবরং ইসলামের ভ্রাতৃত্ব বন্ধুত্বই সর্বাপেক্ষা উত্তম। আবু বকরের দরজা ব্যতীত এ মসজিদে সকল ছোট দরজা আজ থেকে বন্ধ করে দাও।
৪৫৬। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতফতহে মক্কার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় আগমন করার পর খানায়ে কা'বার দ্বার রক্ষক হযরত ওসমান বিন তালহাকে ডেকে পাঠান। অতঃপর দরজা খোলা হলে নবী করীম সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লামবেলালউসামা ইবনে যায়েদ এবং ওসমান বিন তালহা (রাঃ) খানায়ে কাবা'র মধ্যে প্রবেশ করেন। তারপর দরজা বন্ধ করে দেয়া হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খানায়ে কাবা'য় কিছুক্ষণ অতিবাহিত করেন। তারপর সবাই বের হয়ে আসেন। ইবনে ওমর (রাঃ) বলেনআমি তাড়াতাড়ি করে তাদের কাছে গেলাম। হযরত বেলাল (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলামরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতক্ষণ খানায়ে কা'বা কি করেছেনবেলাল (রাঃ) বললেনতিনি খানায়ে কা'বায় নামায পড়েছেন। আমি পুনরায় তাঁকে জিজ্ঞেস করলামতিনি কোন দিকে নামায আদায় করেছেনতখন বেলাল (রাঃ) বললেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই খুঁটির মধ্যবর্তী স্থানে নামায আদায় করেছেন। ইবনে ওমর (রাঃ) বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত রাকআত নামায আদায় করেছেনএ প্রশ্ন করতে আমি ভুলে গেছি।
৪৫৭। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেনএক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল অশ্বারোহী সৈন্য নজদ এলাকায় পাঠান। তারা বনু হানাফিয়া গোত্রের সুমামা বিন উসালকে পাকড়াও করে নিয়ে আসেন। অতঃপর তারা মসজিদে নববীর খুঁটিসমূহের একটির সাথে তাকে বেঁধে রাখেন।
৪৫৮। হাদীসঃ হযরত সায়েব ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি একদা মসজিদে নববীতে দণ্ডায়মান ছিলাম। হঠাৎ কে যেন আমার উপর একটি কংকর নিক্ষেপ করেন। আমি নজর করে দেখিহযরত ওমর (রাঃ) তথায় অবস্থান করছেন। তিনি আমাকে বললেনতুমি গিয়ে ঐ দু'টি লোককে আমার কাছে নিয়ে আস। আমি তাদেরকে নিয়ে আসলাম। হযরত ওমর (রাঃ) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেনতোমরা কোন গোত্র অথবা কোন স্থান থেকে এসেছতারা বললআমরা তায়েফের অধিবাসী। তখন হযরত ওমর (রাঃ) বললেনতোমরা যদি মদীনা শহরের অধিবাসী হতেতা হলে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে শাস্তি দিতাম। যেহেতু তোমরা মসজিদে নববীতে বড় বড় আওয়াজে কথা বলেছ।
৪৫৯। হাদীসঃ হযরত কা'ব ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে তিনি ইবনে আবু হাদরাতের কাছে তাঁর প্রাপ্য সম্পর্কে মসজিদে নববীতে তাগাদা করেন। এতে উবয়ের আওয়াজ উচু হয়ে গেল। এমন কি সে আওয়াজ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘর থেকে শুনতে পেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরের পর্দা সরিয়ে তাদের দিকে বের হয়ে এলেন এবং কা'ব ইবনে মালিককে ডেকে বললেনহে কা'ব! উত্তরে কা'ব বললেনলাব্বায়কা ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশারা করলেন যেতোমার প্রাপ্য থেকে অর্ধেক ছেড়ে দাও। কাব (রাঃ) বললেনইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তাই করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ ইবনে আবু হাদরাদ (রাঃ)কে বললেনউঠ এবার (বাকী) ঋণ পরিশোধ কর।
৪৬০। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে উপবিষ্ট থাকা অবস্থায় একদা জনৈক ব্যক্তি তাঁকে প্রশ্ন করলেনরাত্রি বেলায় নামায আদায় সম্পর্কে আপনার অভিমত কিতিনি ইরশাদ করলেনদু'দু রাকআত করে আদায় করবে। নামায পড়তে পড়তে যদি কেউ মনে করে ভোর হয়ে গেছেতখন সে শেষ দু'রাকআতের সাথে আরো এক রাকআত পড়ে নিবে। উক্ত নামায তার সকল নামাযকে বিজোড় করে দিবে। বর্ণনাকারী হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) আরো বলেনতোমরা তোমাদের রাত্রির শেষে নামায বিজোড় আদায় করো। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রির শেষ নামায বিজোড় আদায় করার আদেশ করেছেন (অর্থাৎ বেতের নামায রাত্রির সব নামায শেষে আদায় করা উত্তম)
৪৬১। হাদীসঃ হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মসজিদে খোতবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে উপস্থিত হযে বললেনহুযুর! রাত্রির নামায কিভাবে আদায় করবতিনি বললেন দু'দু রাকআত করে আদায় করবে। নামায আদায় করতে করতে যন তুমি ভয় করবেভোর হয়ে গেছেতখন শেষ বারে আরো এক রাকআত বাড়িয়ে নিবে। উক্ত নামায তোমার সমুদয় নামায বিজোড় করে দিবে।
৪৬২। হাদীসঃ হযরত আবু ওয়াকেদুল লাইসী (রাঃ) হতে বর্ণিতএক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে সাহাবাদেরকে নিয়ে আলোচনারত ছিলেন। এমন সময় তিন ব্যক্তি আগমন করে। তন্মদ্ধ্যে দু'জন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর  মজলিসে শরীক হল এবং অপর ব্যক্তি চলে গেল। যে দু'জন মজলিসে শরীক হলতাদের একজন মজলিসের কিছু খালি জায়গা দেখে তথায় বসে গেল। আর অপরজন মজলিসের পেছনে গিয়ে বসল। আর তৃতীয় ব্যক্তি মজলিস ত্যাগ করে চলে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আলোচনা হতে অবসর হলেনতখন সাহাবাদেরকে বললেনআমি কি তোমাদেরকে তিন ব্যক্তির অবস্থা সম্পর্কে খবর দেব নাতাদের একজন আল্লাহর কাছে স্থান চেয়েছেআল্লাহ তাকে স্থান করে দিয়েছেন। অপরজন লজ্জাবোধ করেছেতাই আল্লাহও তার জন্য লজ্জাবোধ করেছেন। অর্থাৎ তাকে সওয়াব থেকে মাহরুম করবেন না। আর তৃতীয় জন আল্লাহ ও রাসূলের যিকির থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেতাই আল্লাহও তাকে সওয়াব থেকে বিরত রেখেছেন।
৪৬৩। হাদীসঃ হযরত আব্বাদ ইবনে তামীম (রঃ) তাঁর চাচা থেকে বর্ণনাতিনি এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেলেনতিনি মসজিদে নববীতে চিৎ হয়ে এক পায়ের উপর অন্য পা রেখে শুয়ে আছেন।
৪৬৪। হাদীসঃ উম্মুল মো'মেনীন হয়রত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি যখন ছোট, আমার পিতা-মাতাকেও চিনতে অক্ষম, তখনই তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তখন থেকে একদিনও অতিবাহিত হত না; বরং প্রতিদিনই সকাল সন্ধ্যা দুবেলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বাড়ীতে তাশরীফ রাখতেন। অতঃপর বিশেষ এক সময় আমার পিতা হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর মনে মসজিদ তৈরির আকাঙ্কা হল, তাই তিনি নিজের বাড়ির চত্বরে রাস্তার পার্শ্বে একখানা মসজিদ তৈরি করেন। তথায় তিনি নামায আদায় করতেন, কোরআন তেলাওয়াত করতেন, মুশরিকদের সন্তান সন্তুতি এবং পরিবার পরিজন সেখানে এসে তাঁর অবস্থা অবলোকন করত এবং আশ্চর্যবোধ করত। হযরত আবু বকর (রাঃ) ছিলেন একজন অধিক ক্রন্দনশীল ব্যক্তি। কোরআন তেলাওয়াতকালে তিনি ক্রন্দন সামলাতে পারতেন না। তাঁর এ অবস্থা মুশরিকদের কোরায়ম নেতৃবৃন্দকে বিচলিত করে দেয়।
৪৬৫। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রেওয়ায়াত করেন, তিনি ইরশাদ করেছেন, ঘরে অথবা বাজারে একা একা নামায আদায় করার চেয়ে জামাআতের সাথে আদায় করার মর্যাদা পঁচিশ গুণ বেশি। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, তোমাদের কেউ যখন অযু করে এবং উত্তমভাবে অযু করে, তারপর নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসে, সে মসজিদে আসা পর্যন্ত যতবার পা ফেলবে, প্রত্যেক কদমের পরিবর্তে তার এক মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। আর মসজিদে প্রবেশ করার পর যখন সে নামাযে মগ্ন হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত সে নামায আদায় করে ততক্ষণ ফেরেশতা বা তার জন্য দোআ করতে থাকে। তারা বলেন, হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ! তুমি তার প্রতি রহম কর। ফেরেশতাদেরকে কষ্ট না দেয়া পর্যন্ত তারা এরুপ দোআ করতে থাকে। ফেরেশতাদেরকে কষ্ট দেয়ার অর্থ, অযু বিনষ্ট হওয়া। অর্থাৎ অযু নষ্ট হলে ফেরেশতাগণ তার জন্য দোআ বন্ধ করে দেয়।
৪৬৬। হাদীসঃ হযরত ইবনে উমর বা ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাতের আঙুল আর এক হাতের আঙুলে প্রবেশ করান। আসিম ইবনে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আসিম ইবনে মুহম্মাদ (রঃ) বলেন, আমি এ হাদীস আমার পিতা থেকে শুনেছিলাম, কিন্তু আমি তা স্মরণ রাখতে পারিনি। এরপর এ হাদীসটি আমাকে ঠিকভাবে বর্ণনা করেন ওয়াকিদ (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে। তিনি বলেন, আমার পিতাকে বলতে শুনেছি যে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, হে আবদুল্লাহ ইবনে আমর! যখন তুমি নিকৃষ্ট লোকদের সাথে অবস্থান করবে, তখন তোমার অবস্থা কি হবে?
৪৬৭। হাদীসঃ হযরত আবু মূসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রেওয়ায়াত করেন, তিনি ইরশাদ করেছেন, এক মো'মেন অপর মো'মেনের জন্য প্রাচীর সদৃশ। তারা একে অপরকে শক্তিশালী করে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের আঙ্গুলসমূহ পরস্পর মিলান।
৪৬৮। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে যোহর অথবা আসরের নামায আদায় করেন।
ইবনে সিরীন বলেন, হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) সে নামাযের নাম উল্লেখ করেছিলেন, কিন্তু  আমি তা ভুলে গেছি। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে দু'রাকআত নামায আদায় করেন। তারপর সালাম ফিরিয়ে মসজিদের এক কিনারায় আড়াআড়িভাবে রক্ষিত একটি কাঠের সাথে টেক লাগিয়ে ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে ডান হাতের পিঠের উপর ডান গাল মোবারক রেখে খুব ক্রোধান্বিত অবস্থায় দাঁড়ান। সে সময় যারা তাড়াহুড়া করে বের হওয়ার তারা করে মসজিদের দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলেন। আর মসজিদে যারা অবশিষ্ট ছিলেন তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলেন, নামায কসর পড়া হয়েছে না-কি? উপস্থিত সাহাবাদের মধ্যে হযরত আবু বকর এবং ওমর (রাঃ)ও ছিলেন। তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ ক্রোধান্বিত অবস্থায় তাঁর সাথে কথা বলতে ভয় করলেন। উপস্থিত সাহাবাদের মাঝে খেরবাক নামক জনৈক ব্যক্তি ছিলেন। যাঁর হাত সাধারণ মানুষের হাত থেকে লম্বা ছিল। এ জন্য তাকে বলা হত যুলইয়াদাইন। তিনি আদবের সাথে হুযুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি কি ভুল করেছেন, না নামায কসর করা হয়েছে। তিনি বললেন, আমি ভূল করিনি এবং আমার ধারণা মতে নামায কসরও করা হয়নি। কিছুক্ষণ পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ্য করে বলেন, যুলইয়াদাইন যা বলেছে ঘটনা এরুপ না-কি? সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মুখে অগ্রসর হয়ে বাকী নামায আদায় করেন। তারপর সালাম ফিরেয়ে পুনরায় তাকবীর বলে পূর্বের সেজদার ন্যায় অথবা তার চেয়ে কিছু লম্বা সেজদা করলেন। তারপর তাকবীর বলে সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে পুনরায় তাকবীর বলে পূর্ববঃ সেজদা করেন তারপর তাকবীর বলে সেজদা থেকে মাথা উঠান। ইবনে সিরীন (রাঃ)-কে কোন কোন সময় লোকেরা প্রশ্ন করেছেন, তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদা করেছেন কি-না? তিনি বলেন, আমাকে খবর দেয়া হয়েছে, ইমরান ইবনে হোসাইন (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষে সেজদা করেছেন।
৪৬৯। হাদীসঃ হযরত মূসা বিন ওকবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সালেম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি মদীনার পথে বিভিন্ন স্থানে এসে চিন্তা ভাবনা করে সে সকল স্থানে নামায আদায় করেছেন। তিনি বর্ণনা করেন, তাঁর পিতা আবদুল্লাহ (রাঃ) সে সকল স্থানে নামায আদায় করতেন। আর তিনি (ইবনে ওমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছেন, তিনি সে সব স্থানে নামায আদায় করেছেন। আর হযরত নাফে (রাঃ) ইবনে ওমর (রাঃ) ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি সে সকল স্থানে নামায আদায় করেছেন। আমি হযরত সালেম (রাঃ)-কে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি হযরত নাফে'র মতই সকল স্থানের কথা বলেছেন, তবে তাঁরা উভয়ে শরফে রাওহা’ নামক স্থানের মসজিদ সম্পর্কে মতপাথর্ক্য করেছেন।
৪৭১। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, ফতহে মক্কার সময় যখন আমি প্রায় বালেগ হওয়ার নিকটবর্তী; সে সময় আমি একটি গর্দভীর উপর আরোহণ করে এসেছিলাম। আমি দেখতে পেলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে নামায আদায় করছেন। তথায় কোন দেয়াল ছিল না। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে একটা সুতরা ছিল। আমি গর্দভীর উপর আরোহণ করে কোন এক কাতারের সম্মুখ দিয়ে চলে গেলাম, তারপর গর্দভী থেকে অবতরণ করে সেটিকে বিচরণ করতে ছেড়ে দিয়ে নিজে কাতারে দাঁড়িয়ে গেলাম কিন্তু আামার এ কাজে কেউই অসম্মতি জ্ঞান করেননি।
৪৭২। হাদীসঃ হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন ঈদের নামায অদায়ের উদ্দেশ্যে বের হলে বর্শা নিয়ে আসার জন্য বলতেন, যা তাঁর সম্মুখে গেড়ে রাখা হত। তিনি তার দিকে ফিরে নামায আদায় করতেন আর সাহাবায়ে কেরাম তাঁর পেছনে দাঁড়াতেন। তিনি সফরেও এরুপ করতেন। হযরত নাফে (রাঃ) বলেন, অতএব ওমরাগণও এটা গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ তারাও নামাযের সুতরার জন্য বর্শা ব্যবহার করতেন।
৪৭৩। হাদীসঃ হযরত আওন ইবনে আবু জুহায়ফা (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে নিয়ে বাতহা নামক স্থানে যোহরের দু'রাকআত ও আসরের দু'রাকআত নামায আদায় করেন। তখন তাঁর সামনে ছড়ি পুঁতে রাখা হয়েছিল। তাঁর সম্মুখ দিয়ে (সুতরার বাইরে) মহিলা ও গাধা চলাচল করতো।
৪৭৪। হাদীসঃ হযরত সাহল ইবনে সা'দ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামাযের মোসাল্লা এবং দেয়ালের মধ্যখানে একটি বকরী যাতয়াতের পথ বাকি থাকত।
৪৭৫। হাদীসঃ হযরত সালামা ইবনুল আকওয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মিম্বরের নিকট মসজিদের দেয়াল এরুপ ছিল যে, তার ফাঁকা স্থান দিয়ে একটি বকরী চলাচল করাও সম্ভব হত না। বর্শার সামনে রেখে নামায আদায় করা-
৪৭৬। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামাযের জন্য সম্মুখে বর্শা গাড়া হত, তিনি সে দিকে ফিরে নামায আদায় করতেন। আনাযা সময় রেখে নামায আদায় করা।
৪৭৭। হাদীসঃ হযরত আবু জোহায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি আমার পিতা হোযায়ফা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, এক সময় দুপুরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা থেকে বের হয়ে আমাদের কাছে তাশরীফ আনলেন। তখন তাঁর জন্য অযুর পানি নিয়ে আসা হল। তিনি অযু করলেন। তারপর আমাদেরকে নিয়ে যোহর ও আসরের নামায আদায় করেন। তখন তাঁর সম্মুখে আনাযা নামক একটি লাঠি সুতরাহ হিসেবে গেড়ে দেয়া হয়েছিল। তখন মহিলা ও গাধা আনাযার পেছন (অর্থাৎ সম্মুখ বা বাইরে) দিয়ে যাতায়াত করত।
৪৭৮। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য বের হতেন, তখন আমি এবং আমার সাথে ছোট এক বালক তাঁর পেছনে পেছনে যেতাম। তিনি প্রয়োজন সেরে আসার পর আমরা তাঁর জন্য পানির পাত্র নিয়ে আসতাম, তা দ্বারা তিনি অযু করতেন।
৪৭৯। হাদীসঃ হযরত আবু জুহায়ফা (রাঃ) বলেন, একদা দুপুর বেলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুরা থেকে আমাদের কাছে তাশরীফ আনলেন। অতঃপর তিনি বাতহা নামক স্থানে আমাদেরকে নিয়ে যোহর ও আসর নামায দু'রাকআত করে আদায় করেন। তখন সম্মুখে আনাযা নামক একটি লাঠি সোতরা হিসেবে গেড়ে দেয়া হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সময় অযু করেন। আর সাহাবায়ে কেরাম তাঁর অযুর ব্যবহৃত পানি তাবারক হিসেবে হাতে মুখে মাসেহ করতে রাগলেন।
৪৮০। হাদীসঃ হযরত আবু ওবায়েদ (রাঃ) বলেন, আমি এক সময় সালাম ইবনুল আকওয়া (রাঃ)-এর কাছে এসে দেখি, তিনি মসজিদে নববীর খুঁটির কাছে নামায আদায় করছেন। আমি তাঁকে বললাম, হে আবু মোসলেম! আমি আপনাকে প্রায়শঃ দেখছি, আপনি খুঁটির কাছে নামায আদায়ের চিন্তা করেন, এর কারণ কি? তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি, তিনি এ খুঁটির কাছে নামায পড়ার চিন্তা করেছেন বা সেখানে নামায আদায় করেছেন।
৪৮১। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বুযুর্গ সাহাবাগণকে বলতে শুনেছি, তাঁরা মাগরিবের আযানের পূর্বে তাড়াহুড়া করে মসজিদের খুঁটির কাছে আসতেন এবং দু'রাকআত নামায পড়তেন। হযরত শোবা আমর থেকে, তিনি আনাস (রাঃ) থেকে আরো বাড়িয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের জন্য বের হয়ে আসা পর্যন্ত সাহাবাগণ এরুপ করতেন।
৪৮২। হাদীসঃ হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, উসামা বিন যায়েদ, ওসমান বিন তালহা এবং বেলাল (রাঃ) খানায়ে কাবার মধ্যে প্রবেশ করার পর অনেকক্ষণ তথায় অবস্থান করেন। যখন তাঁরা বের হয়ে আসলেন থখন আমিই সর্বপ্রথম তাঁদের কাছে গেলাম। আমি হযরত বেলাল (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মুখের দু'খুঁটির মধ্যখানে নামায আদায় করেছেন।
৪৮৩। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, ফতহে মক্কার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খানায়ে কাবায় প্রবেশ করেন। তাঁর সাথে উসামা বিন যায়েদ, বেলাল এবং ওসমান বিন তালহা (রাঃ)ও প্রবেশ করেন। তাঁরা খানায়ে কাবার দরজা বন্ধ করে দিয়ে তথায় অনেক্ষণ অবস্থান করেন। হযরত বেলাল (রাঃ) বের হয়ে আসার পর আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতক্ষণ পর্যন্ত খানায়ে কাবায় কি করেছেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি খুঁটি ডান দিকে অপর একটি খুঁটি বাম দিকে এবং তিনটি খুঁটি পেছনে রেখে তথায় নামায আদায় করেছেন। সময় খানায়ে কা'বার সে ছয়টি খুঁটি ছিল। অপর বর্ণনা মতে ইমাম মালেক (রাঃ) বলেন, দু'টি খুঁটি ডান দিকে রেখে নামায আদায় করেছেন।
৪৮৪। হাদীসঃ হযরত নাফে (রঃ) হতে বর্ণিত, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) যখন খানায়ে কা'বায় প্রবেশ করতেন, তখন খানায়ে কাবার দরজা পেছনে রেখে ভেতরে সোজা সম্মুখের দিকে চলে যেতেন। একনকি তাঁর এবং খানায়ে কাবার দেয়ালের মধ্যে মাত্র তিন গজ ব্যবধান থাকত। তথায় তিনি নামায পড়তেন। তিনি সে স্থানটি ভেবে চিন্তে স্থির করে নিতেন, সে স্থান সম্পর্কে হযরত বেলাল (রাঃ) তাঁকে খবর দিয়েছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথায় নামায আদায় করেছেন। আর বায়তুল্লাহর যে কোন স্থানে নামায আদায় করার ব্যাপারে আমাদের কোন অসুবিধা ছিল না; বরং আমরা যে কোন স্থানেই নামায আদায় করতাম।
৪৮৫। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি কোন কোন সময় সফরে মাল বোঝাই উট চওড়াভাবে রেখে সে দিকে ফিরে নামায আদায় করেছেন। নাফে বলেন, আমি বললাম যখন বাতাস উঠের পিঠের পালকি ঝুঁকিযে দিত, সে ব্যাপারে আপনার অভিমত কি? তিনি বলেন, উক্ত পালকি হাত দ্বারা সোজা করা হত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লামতার শেষ প্রান্তের কাঠের দিকে ফিরে নামায আদায় করতেন। হযরত ইবনে ওমর (রা)-ও এরুপ করতেন।
৪৮৬। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি এক সময় লোকদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, তোমরা কি আমাদের মহিলাদেরকে কুকুর ও গাধার সমকক্ষ মনে করছ? অথচ আমি এক সময় দেখেছি, আমি চৌকির উপর কাত হয়ে শুয়ে ছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে চৌকির মধ্যখানে দাড়িয়ে নামায পড়ছিলেন। এমতাবস্থায় আমি তার সমুমখে আড়াআড়িভাবে শয়ন করা অপছন্দ মনে করলাম। অতঃপর আমি আমার পায়ের দিক থেকে গোপনে বের হয়ে যাওয়ার খেয়াল করলাম। আমি আমার লেপের ভেতর থেকে সংগোপনে পায়ের দিক দিয়ে বের হয়ে গেলাম।
৪৮৭। হাদীসঃ হযরত আবু সালে আসসাম্মান (রাঃ) বলেন, আমি একদা জুমআর দিন হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)-কে নামায পড়তে দেখলাম। তিনি এমন এক বস্তুর আড়ালে নামায পড়ছিলেন, যা মানুষ থেকে তাঁকে পর্দা করে রেখেছিল। অতঃপর বনী আবী মুআইতের এক যুবক তাঁর সম্মুখ দিয়ে পথ অতিক্রম করতে চেয়েছিল। এ সময় তিনি তার বক্ষে ধাক্কা মারেন। অতঃপর উক্ত যুবক এদিক ওদিক তাকায়, কিন্তু নামাযের সম্মুখ দিয়ে পথ অতিক্রম করা ছাড়া সে অন্য কোন রাস্তা পেল না। তাই পুনরায় তাঁর সম্মুখ দিয়ে পথ অতিক্রম করার চেষ্টা করলে হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) তাকে পূর্বের চেয়েও জোরে ধাক্কা মারেন, যাতে সে ব্যাথা পেয়ে মারওয়ান ইবনুল হাকামের দরবারে উপস্ষিত হয়ে হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) এর বিরুদ্ধে নালিশ করে। হযরত আবু সাঈদ (রাঃ)ও তার পেছনে পেছনে মারওয়ানের কাছে গেলেন। মারওয়ান হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু সাঈদ! তোমার এবং তোমার ভ্রাতুষ্পুত্রের মধ্যে কি হয়েছে? হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইরশাদ করতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি এমন বস্তুর আড়ালে নামায পড়ে যা তাকে লোকদের থেকে পর্দা করছে, এমতাবস্থায় কেউ যদি তার সম্মুখ দিয়ে পথ অতিক্রম করতে চায়, তা হলে তাকে বারণ কর (ধাক্কা কার)। যদি সে তা অস্বীকার করে পুনরায় যেতে চায়, তা হলে তাকে কঠিনভাবে প্রহার কর, যেহেতু সে শয়তানের অনুরুপ বা শয়তান।
৪৮৮। হাদীসঃ হযরত বুসর ইবনে সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক সময় যায়েদ ইবনে খালেদ তাঁকে আবু জোহায়মের কাছে পাঠান, যেন তিনি তাঁকে মুসল্লীর সম্মুখ দিয়ে যারা যাতায়াত করে তাদের গুনাহ জিজ্ঞেস করেন-এ সম্পর্কে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কি শুনেছেন? আবু জোহায়ম তদুত্তরে বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মুসল্লীল সম্মুখ দিয়ে যারা যাতায়াত করে, যদি তারা জানত এতে কি গুনাহ হয়, তা হলে মুসল্লীর সম্মুক দিয়ে পথ অতিক্রম করার চেয়ে চল্লিশ দিন দাঁড়িয়ে থাকা তাদের জন্য উত্তম হত। বর্ণনাকারী আবুন নযর (রাঃ) বলেন, বুসর ইবনে সাঈদ (রাঃ) কি চল্লিশ দিন, চল্লিশ মাস, না চল্লিশ বৎসর বলেছেন তা আমার জানা নেই।
৪৮৯। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার তাঁর সামনে নামায নষ্টকারী জিনিসের আলোচনা করা হল। লোকেরা বললো, কুকুর, গাধা ও মহিলা নামায নষ্ট করে দেয়। আযেশা (রাঃ) বললেন, তোমরা আমাদের কুকুরের সমান করে দিয়েছে! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছি, নামায আদায় করছেন আর আমি তাঁর ও কিবলার মাঝে চৌকির উপর কাত হয়ে শুয়ে থাকতাম। কোন কোন সময় আমার বের হওয়ার দরকার হতো এবং তাঁর সামনের দিকে যাওয়া অপছন্দ করতাম। এজন্যে আমি চুপে সরে পড়তাম।
৪৯০। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কোন সময় এমন অবস্থায় নামায আদায় করতেন যখন আমি বিছানায় আড়াআড়িভাবে তাঁর নামাযের সম্মুখে নিদ্রা যেতাম। তিনি শেষ রাত্রে যখন বেতের আদায় করার ইচ্ছা করতেন, তখন আমাকে নিদ্রা থেকে জাগ্রত করতেন, তখন আমিও বেতের আদায় করতাম।
৪৯১। হাদীসঃ হযরত উম্মুল মো'মেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি অনেক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে নিদ্রা যেতাম, ঘুমের ঘরে আমার পদদ্বয় তাঁর কিবলার দিকে সেজদার স্থানে থাকত। যখন তিনি সেজদায় যেতেন তখন হাত মোবারক দ্বারা আমার পা চেপে ধরলে আমি তা গুছিয়ে ফেলতাম। তারপর তিনি যখন দাঁড়িয়ে যেতেন তখন আবার আমি আমার পা বিস্তার করে দিতাম। তিনি বলেন, সে সময় ঘরে কোন বাতি থাকত না।
৪৯২। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক সময় তাঁর কাছে আলোচনা করা হল, নামাযীর সম্মুখ দিয়ে কুকুর, গাধা এবং মহিলাদের যাতায়াত দ্বারা নামায বিনষ্ট হয়। এতদশ্রবণে তিনি বললেন, তোমরা আমাদেরকে কুকুর ও গাধার সাথে তুলনা করছ! আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি, তিনি নামায আদায় করছেন, আমি চৌকির উপর তাঁর এবং কেবলার মধ্যে পাঁজরের উপর কাত হয়ে শোয়া ছিলাম। অতঃপর আমার প্রয়োজন দেখা দিল, তাই আমি সম্মুখে থেকে তাঁকে কষ্ট দেয়া খারাপ মনে করলাম। অতএব আমি আমার পায়ের দিক থেকে গোপনে বের হয়ে গেলাম।
৪৯৩। হাদীসঃ হযরত উম্মুল মো'মেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে ঘুম থেকে উঠে নফল নামায আদায় করতেন। আর আমি কোন কোন সময় তাঁর এবং কেবলার মধ্যে বিছানায় আড়াআড়িভাবে শুয়ে থাকতাম।
৪৯৪। হাদীসঃ হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায পড়ছিলেন। সে সময় তিনি তাঁর মেয়ে হযরত যয়নাব (রাঃ)-এর ছোট মেয়ে উমামা বিনতে যয়নাবকে কাঁধে বহন করছিলেন(যার পিতা আবুল আসবিন বাতিয়াহ বিন আবদে শামস)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সেজদায় যেতেন তখন তাকে কাঁধ থেকে রেখে দিতেন, আবার যখন দাঁড়াতেন তখন কাঁধে বহন করে নিতেন।
৪৯৫। হাদীসঃ হযরত মায়মুনা বিনতে হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার বিছানা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুসাল্লার বরাবর ছিল। আর আমি আমার বিছানায় থাকা অবস্থায় কোন কোন সময় তাঁর কাপড় আমার গায়ের উপর এসে পড়তো।
৪৯৬। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ (রাঃ) বলেন, আমার খালা হযরত মায়মুনা বিনতে হারেস আমাকে খবর দিয়েছেন, তিনি বলেন, আমার বিছানা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মোসাল্লার পার্শ্বে্ই ছিল। কোন কোন সময় তিনি যখন সেজদায় যেতেন, তখন তাঁর কাপড়ের আচল আমার গায়ের উপর পড়ত আর আমি তখন আমার বিচানায়ই (হায়েযা অবস্থায়) ছিলাম।
৪৯৭। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা আমাদেরকে কুকুর ও গাধার সমান করে বড়ই খারাপ করেছ। অথচ আমি নিজকে এ অবস্থায় দেখেছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায আদায়ের সময় আমি তাঁর কিবলার মাঝখানে শুয়ে থাকতাম। তিনি যখন সিজদা করার ইচ্ছা করতেন তখন আমার পা দু'টোতে টোকা দিতেন। আমি তখন আমার পা দু'টো গুটিয়ে নিতাম।
৪৯৮। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খানায়ে কাবার পার্শ্বে দাঁড়য়ে নামায পড়ছিলেন। কোরায়াশদের এক দল তথায় তাদের আড্ডাখানায় একত্রিত হয়েছিল। হঠাৎ তাদের একজন বলল, এ লোকটির দিকে কি তোমরা দেখ না! তোমাদের মধ্যে এমন সাহসী পুরুষ কে আছে, যে অমুক গোত্রে জবাইকৃত উটটির গোবরভর্তি ভুঁড়ি, রক্ত এবং বাচ্চাদানী নিয়ে আসবে, তারপর যখন সে সেজদায় যাবে তখন সেগুলো তার দুস্খন্ধের মর্ধবর্তী স্থানে রাখবে। এতদশ্রবণে উপস্থিত লোকদের মদ্যকার সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট বদবখত ওকবা বিন আবী মুআইত উঠে গিয়ে সেগুলো নিয়ে আসল। অতঃপর সে যখন দেখতে পেল, সেজদায় গিয়েছেন, তখন সেগুলো তাঁর দুস্কন্ধের মধ্যবর্তী স্থানে রেখে দিল। উজুড়ির ভারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদা হতে মাথা উঠাতে না পেরে সেজদায়ই রয়ে গেলেন। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ অবস্থা দেখে হাসতে লাগল। হাসতে হাসতে একে অপরের উপর গড়াগড়ি খেতে লাগল।

এ অবস্থা দেখে জুয়াইরিয়াহ নামক এক দাসী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর কাছে গিয়ে তাঁকে এ ব্যাপারে খবর দিলে তিনি দৌড়ে তথায় চলে আসেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনো সেজদায় ছিলেন। এমনকি হযরত ফাতেমা (রাঃ) কাঁধ থেকে সেগুলো সরিয়ে দেন এবং তিনি কটাক্ষপূর্ণ ভাষায় কাফেরদেরকে গালাগালি করতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায শেষ করলেন, তখন তিনি কাফের নেতৃবৃন্দের প্রতি বদদোআা করে বললেন! "হে আল্লাহ! কোরায়শদের ধ্বংস আপনার উপর নির্ভর করছে। অর্থাৎ আপনি তাদের ধ্বংস করুন।" তিনি তিন বার এ কথাগুলো বলেন। অতঃপর তিনি তাদের নাম ধরে বদদোআ স্বরুপ বললেন, হে আল্লাহ! আমর ইবনে হেশাম (আবু জাহল), ওতবা বিন রবিয়া শায়বা বিন রবিয়া, ওয়ালীদ বিন ওতবা, উমাইয়া বিন ফলফ, ওকবা বিন আবু মুআইত, আম্মারা বিন ওয়ালীদ, এদের প্রত্যেকের প্রতি আপনার ধ্বংস অবতীর্ণ করুন। হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বলেন, আল্লহর শপথ  করে বলছি, বদর যুদ্ধের দিন আমি এদের সবাইকে দেখেছি, তারা মৃতাবস্থায় পড়ে রয়েছে এবং তাদের সবাইকে বদরের কূপে নিক্ষেপ করা হয়েছে। সেদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সম্পর্কে বলেছেন, আসহাবে কোলায়বের প্রতি একের পর এক আল্লাহর লানত করা হয়েছে, অর্থাৎ দুনিয়াতে যেমন তারা যুদ্ধে নিহত হয়েছে, তদ্রুপ আখেরাতেও তাদের জন্য শাস্তি অবধারিত।


0 comments:

Post a Comment

Thanks for your comments.