بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে
মহান আল্লাহর বাণীঃ ...........
হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম! লোকেরা আপনাকে হায়েজের আহকাম সস্পর্কে প্রশ্ন করছে। আপনি তাদেরকে বলে দিন, তা অপবিত্র। তাই হায়েজের দিনগুলোতে তোমরা মহিলাদের থেকে পৃথক থেকো, পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। যখন তারা হায়েজ থেকে পবিত্র হবে, তখন তাদের সাথে মেলামেশার জন্য এসো, যেভাবে আল্লাহ নির্দেশ করেছেন। যেহেতু আল্লাহ তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জকারীকে ভালাবাসেন।
মহিলাদের হায়েজ দেখা দেলে তার হুকুম
২৯১। হাদীসঃ হযরত কাসেম ইবনে মুহাম্মদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, বিদায় হজ্জে আমরা কেবল হজ্জে উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলাম। যখন আমরা সরফ নামক স্থানে উপস্থিত হলাম, তখন আমার হায়েজ দেখা দেয়। সে সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমার কাছে তাশরীফ আনলেন তখন আমি কাঁদছিলাম। তিনি আমার কান্না দেখে বললেন, তোমার কি হয়েছে? হায়েজ দেখা দিয়েছে কি? আমি বললাম, হাঁ! তিনি বললেন, এ এমন এক অবস্থা যা মহা আল্লাহ আদম (আঃ)-এর মেয়েদের উপর অত্যাবশ্যক করেছেন। তাই তোমার জন্য হুকুম হল, অন্য হাজীগণ হজ্জের যেসব কাজ করেন তুমিও তাই করো। তবে বায়তুল্লাহর তওয়াফ করবে না। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, সে দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযওয়াজে মোতাহ হারাতের পক্ষ হতে গরু কোরবানী করেছিলেন।
২৯২। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি হায়েজ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাথা চিরুনি দ্বারা অাঁচড়াতাম।
২৯৩। হাদীসঃ হযরত ওরওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তাঁকে এক সময় প্রশ্ন করা হয়েছিল, মহিলাদের হায়েয দেখা দেলে তারা স্বামীর খেদমত করতে পারে কি না, অথবা অমাাদের নিকট আসতে পারে কি না? অথচ তারা অপবিত্র। হযরত ওরওয়া (রাঃ) বলেলে, এ সব কিছুই আমাদের জন্য সহজ। তারা আমাদের খেদমত করতে পারে। এ ব্যাপারে কোন অসুবিধা নেই। তিনি আরো বলেন, উম্মুল মো'মেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) আমাকে খবর দিয়েছেন, তিনি হায়েজ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাথায় চিরুনি করতেন। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে ই'তেকাফে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর হুজরার কাছে এগিয়ে দিতেন। আর হযরত আয়েশা (রাঃ) হুজরা থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাথা চিরুনি দ্বারা অাঁচড়ে দিতেন। অথচ হযরত আয়েশা (রাঃ) সে সময় হায়েজ অবস্থায় ছিলেন।
২৯৪। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি সফিয়া (রাঃ)-কে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কোন সময় আমার কোলে টেক লাগাতেন, আমি তখন হায়েজ অবস্থায়, আর তিনি কোরআন তেলাওয়াত করতেন।
২৯৫। হাদীসঃ হযরত উম্মুল মো'মেনীন হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে একটি পশমী চাদরের উপর শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ আমার হায়েজ দেখা দিলে আমি গোপনে বিছানা ছেড়ে উঠে হায়েজের কাপড় পরে নিলাম। হুযুর সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পরনে হায়েজের কাপড় দেখে বললেন, তোমার নেফাস এসে গেছে কি? আমি বললাম, হাঁ। হুযুর সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পুনরায় বিছানায় ডাকলেন। আমি তাঁর সাথে সে অবস্থায়ই পশমী চাদরে শয়ন করলাম।
২৯৬। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্র থেকে গোসল করেছি, যখন আমাদের উভয়ের উপর পবিত্রতার গোছল ওয়াজিব ছিল। আবার কোন কোন সময় হুযুর সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে হায়েয অবস্থায় ইজার পরিধান করতে আদেশ করতেন, তিনি ইজারের উপর দিয়ে আমার শরীরের সাথে শরীর লাগিয়ে শয়ন করতেন (অর্থাৎ হায়েজ অবস্থায়ও আমরা একত্রে শয়ন করতাম)। আবার কখনো কখনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ই'তেকাফ অবস্তায় মাথা আমার কাছে বের করে দিতেন। আমি তাঁর মাথা ধৌত করে দিতাম, তখনো আমি হায়েজ অবস্থায় ছিলাম।
২৯৭। হাদীসঃ উম্মুল মো'মেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, উম্মাহাতুল মো'মেনীনের কেউ যদি হায়েজগ্রস্তা হতেন, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তাঁর সাথে একত্রে শোয়ার ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি হায়েজের আধিক্যের সময় তাঁকে ইজার বাঁধার জন্য বলতেন। তারপর তিনি তাঁর শরীরের সাথে শরীর লাগিয়ে শয়ন করতেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে তার বিশেষ অঙ্গের মালিক হতে পারে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় বিশেষ অঙ্গের মালিক হয়েছেন?
২৯৮। হাদীসঃ হযরত মায়মুনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবিদের কারো সাথে শোয়ার ইচ্ছা করলে তাঁকে বলতেন, তুমি ইজার ব্যবহার কর। অতঃপর তিনি তাঁর সাথে শয়ন করতেন।
২৯৯। হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহা অথবা ঈদুল ফেতরের দিন ঈদগাহে রওনা হলেন। পথিমধ্যে তিনি যখন মহিলাদের কাছে দিয়ে যেতে লাগলেন, তখন তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, হে মহিলা দল! তোমরা আল্লাহর রাস্তায় সদকা কর, যেহেতু আমি তোমাদের অনেককেই দোযখি পাচ্ছি। তখন তাঁরা আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কি কারণে আমাদের এ অবস্থা? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা বেশি বেশি লা'নত অভিশাপ বর্ষণ কর, স্বামীদের অকৃজ্ঞতা প্রকাশ কর। আমি জ্ঞান ও ধর্মের দিক থেকে তোমাদের চেয়ে এত কম অন্য আর কাউকে দেখিনি। তোমাদের কেউ কেউ একজন বুদ্ধিমান জ্ঞানবান ব্যক্তির জ্ঞান বিনষ্ট করতেও সিদ্ধহস্ত। তাঁরা পুনরায় আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের দ্বীন ও জ্ঞানের কমতিটা কি? তিনি ইরশাদ করলেন, একজন মহিলার সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্যর অর্ধেক নয় কি? তারা বললেন হাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটাই তোমাদের জ্ঞানের কমতি। পুনরায় বললেন, তোমরা যখন হায়েজগ্রস্ত হও তখন নামায আদায় কর না এবং রোযাও রাখ না, ঠিক নয় কি? তাঁরা বললেন, হাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ হল তোমাদের দ্বীনের কমতি।
৩০০। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে হজ্জের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলাম। আমরা সারিফ নামক স্থানে পৌছলে আমি ঋতুবতী হই। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে আমাকে কাঁদতে দেখলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কাঁদছ কেন? আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! এ বছর হজ্জ না করাই আমার জন্য পছন্দনীয়। তিনি বললেন, সম্ভবত তুমি ঋতুবর্তী হয়েছ। আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এ তো আদম-কন্যাদের জন্যে আল্লাহর নির্ধারিত করেছেন। তুমি পাক হওয়া পর্যন্ত অন্যান্য হাজীদের মত সমস্ত কাজ করে যাও, কেবল কা'বার তাওয়াফ করবে না।
৩০১। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা হযরত ফাতেমা বিনতে আবু হোবায়েশ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি কখনো পবিত্র হতে পারি না, আমি কি নামায ছেড়ে দিব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, এটা এক বিশেষ রগের রক্ত, হায়েজের রক্ত নয়। সুতরাং যখন তোমার হায়েজ দেখা দিবে তখন নামায ছেড়ে দিবে। যখন হায়েজের মুদ্দত চলে যাবে, তখন রক্ত ধুয়ে ফেলবে, তারপর নামায আদায় করবে।
৩০২। হাদীসঃ হযরত আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক সময় জনৈকা মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের মধ্যকার কোন মহিলার কাপড়ে যদি হায়েজের রক্ত লেগে যায়, তখন সে কি করবে? এ ব্যাপারে আপনার কি অভিমত? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তোমাদের কারো কাপড়ে যদি হায়েজের রক্ত লেগে যায়, তখন আঙ্গুল অথবা নখ দ্বারা তা রগড়ে উঠাবে, তারপর পানি দ্বারা ধৌত করে নিয়ে উক্ত কাপড়ে নামায আদায় করতে পারবে।
৩০৩। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমাদের কেউ অপবিত্র হলে স্বীয় কাপড় থেকে নখ অথবা আঙ্গুল দ্বারা হায়েজের রক্ত ঘর্ষণ করে উঠাতেন। তারপর তা ধৌত করতেন। তারপর বাকি কাপড়ে পানি ছিটিয়ে দিতেন, অতঃপর সে কাপড়ে নামায আদায় করতেন।
৩০৪। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ই'তেকাফ করেন। সাথে তাঁর বিবিও ইতেকাফ করেন। তিনি ইসতেহাযার শিকার হন, তাই সর্বদা রক্ত দেখতে পেতেন। কোন কোন সময় রক্তের অাধিক্যের কারণে তিনি নীচে চিলমতি ব্যবহার করতেন। রাবী ইকরিমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত আয়েশা (রাঃ) এক সময় লাল রংয়ের পানি দেখতে পেলেন। তখন বললেন, এটা এমন এক রং যা অমুক মহিলার তার ইস্তেহাযার সময় দেখতে পায়।
৩০৫। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তাঁর এক বিবি ই'তেকাফ করছিলেন। তিনি ই'তেকাফ অবস্থায় রক্ত এবং হলুদ বর্ণের পানি দেখতে পেতেন। চিলমচি তাঁর নীচে থাকত, তিনি এ অবস্থায় নামায আদায় করতেন।
৩০৬। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, কোন এক উম্মুল মো'মেনীন এক সময় ই'তেকাফ করেন। তখন তিনি ইস্তেহাযার শিকার হয়েছিলেন।
৩০৭। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমাদের কারো কাছেই এক কাপড় ব্যতীত অন্য কাপড় ছিল না, যে কাপড়ে হায়েজের দিনগুলো অতিবাহিত হত। সুতরাং যদি পরিহিত কাপড়ে হায়েজের রক্ত লেগে যেত তা হলে থু থু দ্বারা তা ভিজিয়ে তারপর নখ দ্বারা ঘর্ষণ করে উঠাতাম।
৩০৮। হযরত উম্মে আতিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, অামাদেরকে নিষেধ করা হত আমরা যেন মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের অধিক শোক না করি। তবে স্বামী মারা গেলে চার মাস দশ দিন শোক প্রকাশের আদেশ করা হয়েছে। সে সময় আমরা যেন সুরমা, খোশবু এবং রঙ্গিন কাপড় ব্যবহার না করি। তবে আসব নামক কাপড় ব্যবহার করা যাবে (আসব এক প্রকার ইয়ামানী চাদর, যা আরবের মহিলারা সব সময় ব্যবহার করত)। আর যখন আমাদের কেউ হায়েজ থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করবে (তখন সে যেন কুসতে আজফার নামক খোশবু ব্যবহার করে। কুসতে আজফার এক প্রকার খোশবু, যা মহিলাদের ত্বক মমৃণ ও তরতাজা রাখে)। আর জানাযার পেছনে পেছনে যেতে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে।
৩০৯। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা জনৈকা মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হায়েজ থেকে পবিত্রতার গোসল প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি হায়েজ থেকে কিভাবে পবিত্রতার গোসল করতে হবে সে সম্পর্কে বললেন, প্রথমে তুলা অথবা পশমী কাপড়ের এক টুকরা লও। তারপর তাতে মেশক অথবা অন্য কোন খোশবু লাগাও। তারপর তা দ্বারা পবিত্রা অর্জন কর। মহিলা বলল, আমি কিভাবে পবিত্রা অর্জন করব? তিনি পুনরায় বললেন, তুমি তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করো। তারপরও মহিলা বলল কিভাবে আমি পবিত্রতা অর্জন করব? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সোবাহানাল্লাহ, তুমি পবিত্রতা অর্জন করো।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি উক্ত মহিলাকে টেনে নিয়ে বললাম, যে যে স্থানে তোমার হায়েজের রক্ত লেগেছে, তালাশ করে করে তুমি মেশকযুক্ত কাপড়ের টুকরা দ্বারা সে স্থানে মালিশ করবে।
৩১০। হাদীসঃ উম্মুল মো'মেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা জনৈক আনসারী মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করল, হুযুর! আমি কিভাবে হায়েজ থেকে পবিত্রতার গোসল করব? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি মেশক অথবা সুগন্ধযুক্ত তুলা বা পশমের এক টুকরা কাপড় নিবে। তারপর তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। এ বাক্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন বার বললেন। অতঃপর লজ্জা অনুভব হল। তাই দৃষ্টি মহিলার দিক থেকে অন্য দিকে ফিরিয়ে নিলেন। তাঁকে আবারো বললেন, তুমি তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করো। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন অতঃপর আমি তাকে টেনে নিয়ে আসলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ বাক্য দ্বারা যা ইচ্ছা করেছেন সে সম্পর্কে বলে দিলাম।
৩১১। হাদীসঃ হযরত ওরওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, উম্মুল মো'মেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, আমি বিদায় হজ্জে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এহরাম বেধেছিলাম। যারা হজ্জে তামাত্তোর নিয়ত করেছে এবং কোরবানীর জন্তু সাথে নিয়ে আসেনি। আয়েশা (রাঃ) বলেন, এহরামের পর তাঁর হায়েজ দেখা দিল এবং তিনি পবিত্র হতে পারলেন না। এমতাবস্থায় আরাফার রাত্রি এসে গেল। তখন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ রাত তো আরাফার রাত। আমি তো ওমরার এহরাম বেঁধে হজ্জে তামাত্তো'র নিয়ত করেছি। এখন আমি কি করব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি মাথার চুল খুলে ফেল এবং চিরুনি করে ওমরা ছেড়ে দাও। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি তাই করলাম। যখন আমি হজ্জের কাজ পুর্ণ করলাম তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসাবার রাতে হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবী বকর (রাঃ)-কে আদেশ করলেন, তিনি আমাকে ঐ ওমরার কাযা স্বরুপ (যার আমি এহরাম বেঁধেছিলাম) তানয়ীম থেকে ওমরা করালেন।
৩১২। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমরা যিলহজ্জ চাঁদের নিকটবর্তী সময়ে হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যে ওমরার এহরাম বাঁধার ইচ্ছা রাখে সে যেন তা করে। আমি যদি কোরবানীর জানোয়ার সাথে নিয়ে না আসতাম তা হলে ওমরার এহরাম বাঁধতাম। অতঃপর কিছু সংখ্যক লোক ওমরার, আবার কিছু সংখ্যক লোক হজ্জের এহরাম বাঁধলেন। যারা ওমরার ইহরাম বেধেছিলেন আমি তাদের একজন। অতঃপর যখন আরাফার দিন আসল তখন আমি হায়েজা হয়ে পড়লাম। আমি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরজ করলাম। তিনি আমাকে বললেন, তুমি ওমরার নিয়ত ছেড়ে দাও এবং মাথার চুল ছেড়ে দাও, তাতে চিরুনি কর। তারপর হজ্জের ইহরাম বাঁধ। সুতরাং আমি তাই করলাম। অতঃপর যখন হাসাবার রাতি এলো(মিনার পরের রাত), তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সাথে আমার ভাই হযরত আবদুর রহমান (রাঃ)কে পাঠালেন। আমি মাকামে তানয়ীমে গেলাম। তথায় আমি যে ওমরা ছেড়ে দিয়েছিলাম তার এহরাম বাঁধলাম। হযরত হেশাম (রঃ) বলেন, এ সব কিছুর মধ্যে কোন প্রকার হাদী, রোযা অথবা সদকা কিছুই ছিল না।
৩১৩। হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রেওয়ায়াত করেন, তিনি ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মায়ের রেহেমে (গর্ভাশয়ে) একজন ফেরেশতা নিযুক্ত রেখেছেন। মায়ের গর্ভাশয়ে যখন কোন বীর্য ঢুকে, তখন উক্ত ফেরেশতা আল্লাহর কাছে আরজ করেন, হে আল্লাহ! বীর্য় কি করা যাবে? যদি আদেশ হয়, সম্মুখে পরিচালনা কর, তখন গর্ভাশয়ের মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর যতদিন বীর্য হিসেবে থাকার নির্দেশ দেন তা বীর্য থেকে যায়। তারপর আস্তে আস্তে যখন তা জমাট রক্তে রুপান্তরিত হয়, তখন ফেরেশতা বলেন, হে রাবী তাআলা! এখন তা জমাট রক্তে রুপান্তরিত হয়েছে? তারপর আদেশ হলে তাকে গোশতের টুকরায় রুপান্তরিত করা হয়। তখন উক্ত ফেরেশতা পুনরায় ইয়া রব! এখন তা গোশতের টুকরায় রুপান্তরিত হয়েছে। অতঃপর মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি কৌশল পূর্ণত্বে রুপ দেয়ার ইচ্ছা করলে ফেরেশতাকে তা পরিচালনা করার নির্দেশ দেন। তখন ফেরেশতা আবার আরজ করেন, হে প্রভু! এখন তো তা পূর্ণতা লাভ করেছে, তাতে রুহ দেয়ার সময় হয়েছে। এখন তা কি পুরুষ হবে না মহিলা? তারপর এও যখন সমাপ্ত হয়, তখন ফেরেশতা পুনরায় আরজ করেন, হে বারী তা'আলা। একখ তা বদকার হবে না-নেককার হবে? এর আদেশ হলে পুনরায় প্রশ্ন করেন, তার রিযিক কি হবে? এরও আদেশ হলে পুনরায় আরজ করেন, এখন তার হায়াত কত দিন হবে? এরও আদেশ হলে ফেরেশতা তার পরিচর্যা করতে থাকেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, এসব কিছু মায়ের উদরে থাকা অবস্থায়ই নির্ধারিত হয়।
৩১৪। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বিদায় হজ্জের সময় বের হয়েছিলাম।আমাদের কেউ ইহরাম বেঁধেছিল উমরার আর কেউ বেঁধেছিল হজ্জের। আমরা মক্কায় এসে পৌছলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যারা উমরার ইহরাম বেঁধেছে কিন্তু কুরবানীর পশু সাথে আনেনি, তারা যেন ইহরাম খুলে ফেলে। আর যারা ইহরাম বেঁধেছে ও কুরবানীর পশু সাথে এনেছে, তারা যেন কুরবানী করা পর্যন্ত ইহরাম না খোলে। আর যারা হজ্জের ইহরাম বেঁধেছে তারা যেন হজ্জ পূর্ণ করে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, এরপর আমার হায়েজ শুরু হয় এবং আরাফার দিনেও তা বহাল থাকে। আমি শুধু উমরার ইহরাম বেঁধেছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বেণী খোলার, চুল অাঁচড়িয়ে নেওয়ার এবং উমরার ইহরাম ছেড়ে হজ্জের ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দিলেন। আমি তাই করলাম। এরপর আবদুর রহমান ইবনে বকর (রাঃ)-কে আমার সাথে পাঠালেন। তিনি আমাকে তান'ঈম থেকে আমার আগের পরিত্যক্ত উমরার পরিবর্তে উমরা করতে নির্দেশ দিলেন।
৩১৫। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ফাতেমা বিনতে আবী হোবায়েশ (রাঃ)-এর এস্তেহাযার রোগ ছিল। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি তাকে বলেছেন, এটা রগনিঃসৃত রক্ত, হায়েজের রক্ত নয়। সুতরাং হায়েজ দেখা দিলে তুমি নামায ছেড়ে দিবে। হায়েজ শেষে গোসল করে পবিত্র হয়ে নামায পড়বে (অর্থাৎ এস্তেহাযা অবস্থায় যথারীতি নামায আদায় করবে)।
৩১৬। হযরত মুআযাহ বিনতে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জনৈকা মহিলা এক সময় হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে বললেন, কারো হায়েজ দেখা দেয়ার পর যখন সে পবিত্র হয় তখন কি সে তার হায়েজকালীন নামাযগুলোর কাযা আদায় করতে হবে? হযরত আয়েশা (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি কি হারুরিয়া? (হারুরিয়া খারেজী সম্প্রদায়ের একটি উপদল)। তিনি আরো বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যমানায় তিনি অমাাদেরকে হায়েজকালীন নামাযের কাযা আদায় করার আদেশ করেননি। অথবা তিনি বলেছেন, আমরা এরুপ করতাম না (অর্থাৎ হায়েজের দিনগুলোর নামায কাযা করতে হবে না)।
৩১৭। হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে একই চাদরে শায়িত ছিলাম। হঠাৎ আমার হায়েজ দেখা দিলে আমি গোপনে বিছানা ছেড়ে এসে হায়েজের কাপড় পরিধান করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার এ অবস্থা দেখে বললেন, তোমার কি হায়েজ দেখা দিয়েছে? আমি বললাম, হাঁ। অতঃপর তিনি আমাকে বিছায় ডেকে চাদরের নিচে স্থান দিলেন। হযরত উম্মে সালমা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা অবস্থায়ও তাঁকে চুম্বন করেছেন। তিনি আরো বলেন, আমি এবং নবী করীম সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্র হতে পানি নিয়ে পবিত্রতার গোছল করতাম।
৩১৮। হাদীসঃ হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিন বলেন, এক সময় আমি ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই চাদরের নীচে শুয়েছিলাম, আমার হায়েজ শুরু হলো। তখন আমি চুপিসারে বেরিয়ে গিয়ে হায়েজের কাপড় পরে নিলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি হায়েজ আরম্ভ হয়েছে? আমি বললাম হাঁ। তিনি আমাকে ডেকে নিলেন এবং আমি তাঁর সঙ্গে একই চাদরের নীচে শুয়ে পড়লাম।
৩১৯। হাদীসঃ হযরত হাফসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যুবতীদেরকে ঈদের ময়দানে যেতে নিষেধ করতাম। এক মহিলা আসলেন এবং বসরার কসরে বনী খলফে উঠলেন। তিনি তার বোন থেকে একখানা হাদীস বর্ণনা করেন (যে বোনের স্বামী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বারটি যুদ্ধে এবং বোন তার স্বামীর সাথে ছয়টি যুদ্ধে শরীক হয়েছিলেন। তিনি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমরা আহতদের সেবা শুশ্রুষা করতাম, অসুস্থদের যত্ন নিতাম। আমার উক্ত বোন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করেছিলেন, হুযুর! আমাদের কারো যদি চাদর না থাকে তখন বের হওয়া কি দোষণীয়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সাথী মহিলা যেন তাকে তার চাদর পরিধান করায়। তারা ভাল কাজে এবং মো'মেনদের দোআয় যেমন ইস্তেস্কার নামাযে যেন শরীক হয়। অতঃপর হযরত উম্মে আতিয়া (রাঃ) আগমন করলে আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম, আপনি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ ধরনের কথা বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, আমার পিতা তাঁর উপর কোরবান হোক, আমি এরুপ বলতে শুনেছি। তার উম্মে আতিয়ার অভ্যাস ছিল, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এমন কোন আলোচনা করতে না, যাতে "আমার পিতা তাঁর প্রতি কোরবান হোক" না বলতেন। তিনি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যুবতী, পর্দানশীল এবং হায়েজা মহিলাগণ বের হতে পারবে, তারা ভাল কাজে এবং মুসলমানদের দোআয় শরীক হতে পারবে তবে নামাযের স্থান থকে দূরে থাকবে। হযরত হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, হায়েযা মহিলাগণও কি বের হবেন? তখন হযরত উম্মে আতিয়া (রাঃ) বললেন, যে সকল মহিলার হায়েজ দেখা দেয় তারা কি আরাফাতের ময়দানে এবং এরুপ অন্যান্য স্থানে উপস্থিত হন না?
৩২০। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, ফাতেমা বিনতে আবু হুবায়েশ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি সর্বদা ইস্তেহাযা অবস্থায় থাকি, কখনো পবিত্র হইনা। তাহলে আমি কি নামায ছেড়ে দিব? উত্তরে তিনি বললেন, না। এটা হলো রগনিঃসৃত রক্ত । বরং তুমি হায়েযের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে নামায ছেড়ে দাও। তারপর গোসল করে নামায পড়তে থাক।
৩২১। হাদীসঃ হযরত উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা মেটে ও হলুদ রং হায়েজের মধ্যে গণ্য করতাম না।
৩২২। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত যয়নাব (রাঃ)-এর বোন উম্মে হাবীবা বিনতে জাহাশ (রাঃ)-এর ইস্তেহাযার রোগ দীর্ঘ সাত বৎসর পর্যন্ত লেগে ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি তাকে গোসল করার জন্য আদেশ করেন। আরো বললেন, এটা রগনিঃসৃত রক্ত বিশেষ। অতঃপর হযরত উম্মে হাবীবা (রাঃ) প্রতি নামাযের জন্যই গোসল করতেন।
৩২৩। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, বিদায় হজ্জের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলা হল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! উম্মুল মো'মেনীন হযরত সফিয়া বিনতে হুয়াই হায়েজা হয়েছেন। এতদশ্রবণে তিনি বললেন, বোধহয় সে অামাদেরকে মক্কা থেকে বের হতে বিরত রাখবে। সে কি তোমাদের সাথে তওয়াফে যিয়ারত আদায় করেনি? তখন তাঁরা বললেন, হাঁ। হুযুর সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হলে তোমরা এখন মক্কা থেকে মদীনায় যাত্রা কর।
৩২৪্ হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হায়েজার জন্য অবকাশ দেয়া হয়েছে, তারা তওয়াফে সফরের পূর্বে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবে। এ হাদীস জানার পূর্বে হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) বলতেন, হায়েজা মহিলাগণ তওয়াফে সফরের পূর্বে নিজ দেশ ফিরে যেতে পারবে না। অতঃপর আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, তোমরা নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবে। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম হায়েজা মহিলাদের জন্য অবকাশ দিয়েছেন।
৩২৫। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হায়েজ দেখা দিলে তোমরা নামায ছেড়ে দিবে। আর যখন হায়েজ চলে যাবে তখন রক্ত ধৌত করে নিবে, তারপর নামায আদায় করবে।
৩২৬। হাদীসঃ হযরত সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক মহিলা নেফাসের মুদ্দতের মধ্যে পেট বেদনার কষ্টে মারা গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযার নামায আদায় করেন এবং তার মাঝ বরাবর দাঁড়ান
৩২৭। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন শাদ্দাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি আমার খালা হযরত মায়মুনা (রাঃ)-কে বলত শুনেছি, তিনি হায়েজা ছিলেন, তাই নামায আদায় করতেন না। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামায আদায়ের স্থানের কাছে শুয়ে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট একটি চাটাইয়ে নামায আদায় করছিলেন। যখন সেজদায় যেতেন তখন তাঁর কাপড়ের কিচু অংশ আমার শরীরের সাথে লেগে যেত (এতে তিনি কোন দোষ মনে করেননি)।
২৯৫। হাদীসঃ হযরত উম্মুল মো'মেনীন হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে একটি পশমী চাদরের উপর শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ আমার হায়েজ দেখা দিলে আমি গোপনে বিছানা ছেড়ে উঠে হায়েজের কাপড় পরে নিলাম। হুযুর সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পরনে হায়েজের কাপড় দেখে বললেন, তোমার নেফাস এসে গেছে কি? আমি বললাম, হাঁ। হুযুর সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পুনরায় বিছানায় ডাকলেন। আমি তাঁর সাথে সে অবস্থায়ই পশমী চাদরে শয়ন করলাম।
২৯৬। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্র থেকে গোসল করেছি, যখন আমাদের উভয়ের উপর পবিত্রতার গোছল ওয়াজিব ছিল। আবার কোন কোন সময় হুযুর সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে হায়েয অবস্থায় ইজার পরিধান করতে আদেশ করতেন, তিনি ইজারের উপর দিয়ে আমার শরীরের সাথে শরীর লাগিয়ে শয়ন করতেন (অর্থাৎ হায়েজ অবস্থায়ও আমরা একত্রে শয়ন করতাম)। আবার কখনো কখনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ই'তেকাফ অবস্তায় মাথা আমার কাছে বের করে দিতেন। আমি তাঁর মাথা ধৌত করে দিতাম, তখনো আমি হায়েজ অবস্থায় ছিলাম।
২৯৭। হাদীসঃ উম্মুল মো'মেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, উম্মাহাতুল মো'মেনীনের কেউ যদি হায়েজগ্রস্তা হতেন, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তাঁর সাথে একত্রে শোয়ার ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি হায়েজের আধিক্যের সময় তাঁকে ইজার বাঁধার জন্য বলতেন। তারপর তিনি তাঁর শরীরের সাথে শরীর লাগিয়ে শয়ন করতেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে তার বিশেষ অঙ্গের মালিক হতে পারে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় বিশেষ অঙ্গের মালিক হয়েছেন?
২৯৮। হাদীসঃ হযরত মায়মুনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবিদের কারো সাথে শোয়ার ইচ্ছা করলে তাঁকে বলতেন, তুমি ইজার ব্যবহার কর। অতঃপর তিনি তাঁর সাথে শয়ন করতেন।
২৯৯। হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহা অথবা ঈদুল ফেতরের দিন ঈদগাহে রওনা হলেন। পথিমধ্যে তিনি যখন মহিলাদের কাছে দিয়ে যেতে লাগলেন, তখন তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, হে মহিলা দল! তোমরা আল্লাহর রাস্তায় সদকা কর, যেহেতু আমি তোমাদের অনেককেই দোযখি পাচ্ছি। তখন তাঁরা আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কি কারণে আমাদের এ অবস্থা? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা বেশি বেশি লা'নত অভিশাপ বর্ষণ কর, স্বামীদের অকৃজ্ঞতা প্রকাশ কর। আমি জ্ঞান ও ধর্মের দিক থেকে তোমাদের চেয়ে এত কম অন্য আর কাউকে দেখিনি। তোমাদের কেউ কেউ একজন বুদ্ধিমান জ্ঞানবান ব্যক্তির জ্ঞান বিনষ্ট করতেও সিদ্ধহস্ত। তাঁরা পুনরায় আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের দ্বীন ও জ্ঞানের কমতিটা কি? তিনি ইরশাদ করলেন, একজন মহিলার সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্যর অর্ধেক নয় কি? তারা বললেন হাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটাই তোমাদের জ্ঞানের কমতি। পুনরায় বললেন, তোমরা যখন হায়েজগ্রস্ত হও তখন নামায আদায় কর না এবং রোযাও রাখ না, ঠিক নয় কি? তাঁরা বললেন, হাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ হল তোমাদের দ্বীনের কমতি।
৩০০। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে হজ্জের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলাম। আমরা সারিফ নামক স্থানে পৌছলে আমি ঋতুবতী হই। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে আমাকে কাঁদতে দেখলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কাঁদছ কেন? আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! এ বছর হজ্জ না করাই আমার জন্য পছন্দনীয়। তিনি বললেন, সম্ভবত তুমি ঋতুবর্তী হয়েছ। আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এ তো আদম-কন্যাদের জন্যে আল্লাহর নির্ধারিত করেছেন। তুমি পাক হওয়া পর্যন্ত অন্যান্য হাজীদের মত সমস্ত কাজ করে যাও, কেবল কা'বার তাওয়াফ করবে না।
৩০১। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা হযরত ফাতেমা বিনতে আবু হোবায়েশ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি কখনো পবিত্র হতে পারি না, আমি কি নামায ছেড়ে দিব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, এটা এক বিশেষ রগের রক্ত, হায়েজের রক্ত নয়। সুতরাং যখন তোমার হায়েজ দেখা দিবে তখন নামায ছেড়ে দিবে। যখন হায়েজের মুদ্দত চলে যাবে, তখন রক্ত ধুয়ে ফেলবে, তারপর নামায আদায় করবে।
৩০২। হাদীসঃ হযরত আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক সময় জনৈকা মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের মধ্যকার কোন মহিলার কাপড়ে যদি হায়েজের রক্ত লেগে যায়, তখন সে কি করবে? এ ব্যাপারে আপনার কি অভিমত? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তোমাদের কারো কাপড়ে যদি হায়েজের রক্ত লেগে যায়, তখন আঙ্গুল অথবা নখ দ্বারা তা রগড়ে উঠাবে, তারপর পানি দ্বারা ধৌত করে নিয়ে উক্ত কাপড়ে নামায আদায় করতে পারবে।
৩০৩। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমাদের কেউ অপবিত্র হলে স্বীয় কাপড় থেকে নখ অথবা আঙ্গুল দ্বারা হায়েজের রক্ত ঘর্ষণ করে উঠাতেন। তারপর তা ধৌত করতেন। তারপর বাকি কাপড়ে পানি ছিটিয়ে দিতেন, অতঃপর সে কাপড়ে নামায আদায় করতেন।
৩০৪। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ই'তেকাফ করেন। সাথে তাঁর বিবিও ইতেকাফ করেন। তিনি ইসতেহাযার শিকার হন, তাই সর্বদা রক্ত দেখতে পেতেন। কোন কোন সময় রক্তের অাধিক্যের কারণে তিনি নীচে চিলমতি ব্যবহার করতেন। রাবী ইকরিমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত আয়েশা (রাঃ) এক সময় লাল রংয়ের পানি দেখতে পেলেন। তখন বললেন, এটা এমন এক রং যা অমুক মহিলার তার ইস্তেহাযার সময় দেখতে পায়।
৩০৫। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তাঁর এক বিবি ই'তেকাফ করছিলেন। তিনি ই'তেকাফ অবস্থায় রক্ত এবং হলুদ বর্ণের পানি দেখতে পেতেন। চিলমচি তাঁর নীচে থাকত, তিনি এ অবস্থায় নামায আদায় করতেন।
৩০৬। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, কোন এক উম্মুল মো'মেনীন এক সময় ই'তেকাফ করেন। তখন তিনি ইস্তেহাযার শিকার হয়েছিলেন।
৩০৭। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমাদের কারো কাছেই এক কাপড় ব্যতীত অন্য কাপড় ছিল না, যে কাপড়ে হায়েজের দিনগুলো অতিবাহিত হত। সুতরাং যদি পরিহিত কাপড়ে হায়েজের রক্ত লেগে যেত তা হলে থু থু দ্বারা তা ভিজিয়ে তারপর নখ দ্বারা ঘর্ষণ করে উঠাতাম।
৩০৮। হযরত উম্মে আতিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, অামাদেরকে নিষেধ করা হত আমরা যেন মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের অধিক শোক না করি। তবে স্বামী মারা গেলে চার মাস দশ দিন শোক প্রকাশের আদেশ করা হয়েছে। সে সময় আমরা যেন সুরমা, খোশবু এবং রঙ্গিন কাপড় ব্যবহার না করি। তবে আসব নামক কাপড় ব্যবহার করা যাবে (আসব এক প্রকার ইয়ামানী চাদর, যা আরবের মহিলারা সব সময় ব্যবহার করত)। আর যখন আমাদের কেউ হায়েজ থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করবে (তখন সে যেন কুসতে আজফার নামক খোশবু ব্যবহার করে। কুসতে আজফার এক প্রকার খোশবু, যা মহিলাদের ত্বক মমৃণ ও তরতাজা রাখে)। আর জানাযার পেছনে পেছনে যেতে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে।
৩০৯। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা জনৈকা মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হায়েজ থেকে পবিত্রতার গোসল প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি হায়েজ থেকে কিভাবে পবিত্রতার গোসল করতে হবে সে সম্পর্কে বললেন, প্রথমে তুলা অথবা পশমী কাপড়ের এক টুকরা লও। তারপর তাতে মেশক অথবা অন্য কোন খোশবু লাগাও। তারপর তা দ্বারা পবিত্রা অর্জন কর। মহিলা বলল, আমি কিভাবে পবিত্রা অর্জন করব? তিনি পুনরায় বললেন, তুমি তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করো। তারপরও মহিলা বলল কিভাবে আমি পবিত্রতা অর্জন করব? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সোবাহানাল্লাহ, তুমি পবিত্রতা অর্জন করো।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি উক্ত মহিলাকে টেনে নিয়ে বললাম, যে যে স্থানে তোমার হায়েজের রক্ত লেগেছে, তালাশ করে করে তুমি মেশকযুক্ত কাপড়ের টুকরা দ্বারা সে স্থানে মালিশ করবে।
৩১০। হাদীসঃ উম্মুল মো'মেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা জনৈক আনসারী মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করল, হুযুর! আমি কিভাবে হায়েজ থেকে পবিত্রতার গোসল করব? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি মেশক অথবা সুগন্ধযুক্ত তুলা বা পশমের এক টুকরা কাপড় নিবে। তারপর তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। এ বাক্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন বার বললেন। অতঃপর লজ্জা অনুভব হল। তাই দৃষ্টি মহিলার দিক থেকে অন্য দিকে ফিরিয়ে নিলেন। তাঁকে আবারো বললেন, তুমি তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করো। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন অতঃপর আমি তাকে টেনে নিয়ে আসলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ বাক্য দ্বারা যা ইচ্ছা করেছেন সে সম্পর্কে বলে দিলাম।
৩১১। হাদীসঃ হযরত ওরওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, উম্মুল মো'মেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, আমি বিদায় হজ্জে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এহরাম বেধেছিলাম। যারা হজ্জে তামাত্তোর নিয়ত করেছে এবং কোরবানীর জন্তু সাথে নিয়ে আসেনি। আয়েশা (রাঃ) বলেন, এহরামের পর তাঁর হায়েজ দেখা দিল এবং তিনি পবিত্র হতে পারলেন না। এমতাবস্থায় আরাফার রাত্রি এসে গেল। তখন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ রাত তো আরাফার রাত। আমি তো ওমরার এহরাম বেঁধে হজ্জে তামাত্তো'র নিয়ত করেছি। এখন আমি কি করব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি মাথার চুল খুলে ফেল এবং চিরুনি করে ওমরা ছেড়ে দাও। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি তাই করলাম। যখন আমি হজ্জের কাজ পুর্ণ করলাম তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসাবার রাতে হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবী বকর (রাঃ)-কে আদেশ করলেন, তিনি আমাকে ঐ ওমরার কাযা স্বরুপ (যার আমি এহরাম বেঁধেছিলাম) তানয়ীম থেকে ওমরা করালেন।
৩১২। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমরা যিলহজ্জ চাঁদের নিকটবর্তী সময়ে হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যে ওমরার এহরাম বাঁধার ইচ্ছা রাখে সে যেন তা করে। আমি যদি কোরবানীর জানোয়ার সাথে নিয়ে না আসতাম তা হলে ওমরার এহরাম বাঁধতাম। অতঃপর কিছু সংখ্যক লোক ওমরার, আবার কিছু সংখ্যক লোক হজ্জের এহরাম বাঁধলেন। যারা ওমরার ইহরাম বেধেছিলেন আমি তাদের একজন। অতঃপর যখন আরাফার দিন আসল তখন আমি হায়েজা হয়ে পড়লাম। আমি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরজ করলাম। তিনি আমাকে বললেন, তুমি ওমরার নিয়ত ছেড়ে দাও এবং মাথার চুল ছেড়ে দাও, তাতে চিরুনি কর। তারপর হজ্জের ইহরাম বাঁধ। সুতরাং আমি তাই করলাম। অতঃপর যখন হাসাবার রাতি এলো(মিনার পরের রাত), তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সাথে আমার ভাই হযরত আবদুর রহমান (রাঃ)কে পাঠালেন। আমি মাকামে তানয়ীমে গেলাম। তথায় আমি যে ওমরা ছেড়ে দিয়েছিলাম তার এহরাম বাঁধলাম। হযরত হেশাম (রঃ) বলেন, এ সব কিছুর মধ্যে কোন প্রকার হাদী, রোযা অথবা সদকা কিছুই ছিল না।
৩১৩। হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রেওয়ায়াত করেন, তিনি ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মায়ের রেহেমে (গর্ভাশয়ে) একজন ফেরেশতা নিযুক্ত রেখেছেন। মায়ের গর্ভাশয়ে যখন কোন বীর্য ঢুকে, তখন উক্ত ফেরেশতা আল্লাহর কাছে আরজ করেন, হে আল্লাহ! বীর্য় কি করা যাবে? যদি আদেশ হয়, সম্মুখে পরিচালনা কর, তখন গর্ভাশয়ের মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর যতদিন বীর্য হিসেবে থাকার নির্দেশ দেন তা বীর্য থেকে যায়। তারপর আস্তে আস্তে যখন তা জমাট রক্তে রুপান্তরিত হয়, তখন ফেরেশতা বলেন, হে রাবী তাআলা! এখন তা জমাট রক্তে রুপান্তরিত হয়েছে? তারপর আদেশ হলে তাকে গোশতের টুকরায় রুপান্তরিত করা হয়। তখন উক্ত ফেরেশতা পুনরায় ইয়া রব! এখন তা গোশতের টুকরায় রুপান্তরিত হয়েছে। অতঃপর মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি কৌশল পূর্ণত্বে রুপ দেয়ার ইচ্ছা করলে ফেরেশতাকে তা পরিচালনা করার নির্দেশ দেন। তখন ফেরেশতা আবার আরজ করেন, হে প্রভু! এখন তো তা পূর্ণতা লাভ করেছে, তাতে রুহ দেয়ার সময় হয়েছে। এখন তা কি পুরুষ হবে না মহিলা? তারপর এও যখন সমাপ্ত হয়, তখন ফেরেশতা পুনরায় আরজ করেন, হে বারী তা'আলা। একখ তা বদকার হবে না-নেককার হবে? এর আদেশ হলে পুনরায় প্রশ্ন করেন, তার রিযিক কি হবে? এরও আদেশ হলে পুনরায় আরজ করেন, এখন তার হায়াত কত দিন হবে? এরও আদেশ হলে ফেরেশতা তার পরিচর্যা করতে থাকেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, এসব কিছু মায়ের উদরে থাকা অবস্থায়ই নির্ধারিত হয়।
৩১৪। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বিদায় হজ্জের সময় বের হয়েছিলাম।আমাদের কেউ ইহরাম বেঁধেছিল উমরার আর কেউ বেঁধেছিল হজ্জের। আমরা মক্কায় এসে পৌছলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যারা উমরার ইহরাম বেঁধেছে কিন্তু কুরবানীর পশু সাথে আনেনি, তারা যেন ইহরাম খুলে ফেলে। আর যারা ইহরাম বেঁধেছে ও কুরবানীর পশু সাথে এনেছে, তারা যেন কুরবানী করা পর্যন্ত ইহরাম না খোলে। আর যারা হজ্জের ইহরাম বেঁধেছে তারা যেন হজ্জ পূর্ণ করে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, এরপর আমার হায়েজ শুরু হয় এবং আরাফার দিনেও তা বহাল থাকে। আমি শুধু উমরার ইহরাম বেঁধেছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বেণী খোলার, চুল অাঁচড়িয়ে নেওয়ার এবং উমরার ইহরাম ছেড়ে হজ্জের ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দিলেন। আমি তাই করলাম। এরপর আবদুর রহমান ইবনে বকর (রাঃ)-কে আমার সাথে পাঠালেন। তিনি আমাকে তান'ঈম থেকে আমার আগের পরিত্যক্ত উমরার পরিবর্তে উমরা করতে নির্দেশ দিলেন।
৩১৫। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ফাতেমা বিনতে আবী হোবায়েশ (রাঃ)-এর এস্তেহাযার রোগ ছিল। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি তাকে বলেছেন, এটা রগনিঃসৃত রক্ত, হায়েজের রক্ত নয়। সুতরাং হায়েজ দেখা দিলে তুমি নামায ছেড়ে দিবে। হায়েজ শেষে গোসল করে পবিত্র হয়ে নামায পড়বে (অর্থাৎ এস্তেহাযা অবস্থায় যথারীতি নামায আদায় করবে)।
৩১৬। হযরত মুআযাহ বিনতে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জনৈকা মহিলা এক সময় হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে বললেন, কারো হায়েজ দেখা দেয়ার পর যখন সে পবিত্র হয় তখন কি সে তার হায়েজকালীন নামাযগুলোর কাযা আদায় করতে হবে? হযরত আয়েশা (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি কি হারুরিয়া? (হারুরিয়া খারেজী সম্প্রদায়ের একটি উপদল)। তিনি আরো বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যমানায় তিনি অমাাদেরকে হায়েজকালীন নামাযের কাযা আদায় করার আদেশ করেননি। অথবা তিনি বলেছেন, আমরা এরুপ করতাম না (অর্থাৎ হায়েজের দিনগুলোর নামায কাযা করতে হবে না)।
৩১৭। হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে একই চাদরে শায়িত ছিলাম। হঠাৎ আমার হায়েজ দেখা দিলে আমি গোপনে বিছানা ছেড়ে এসে হায়েজের কাপড় পরিধান করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার এ অবস্থা দেখে বললেন, তোমার কি হায়েজ দেখা দিয়েছে? আমি বললাম, হাঁ। অতঃপর তিনি আমাকে বিছায় ডেকে চাদরের নিচে স্থান দিলেন। হযরত উম্মে সালমা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা অবস্থায়ও তাঁকে চুম্বন করেছেন। তিনি আরো বলেন, আমি এবং নবী করীম সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্র হতে পানি নিয়ে পবিত্রতার গোছল করতাম।
৩১৮। হাদীসঃ হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিন বলেন, এক সময় আমি ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই চাদরের নীচে শুয়েছিলাম, আমার হায়েজ শুরু হলো। তখন আমি চুপিসারে বেরিয়ে গিয়ে হায়েজের কাপড় পরে নিলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি হায়েজ আরম্ভ হয়েছে? আমি বললাম হাঁ। তিনি আমাকে ডেকে নিলেন এবং আমি তাঁর সঙ্গে একই চাদরের নীচে শুয়ে পড়লাম।
৩১৯। হাদীসঃ হযরত হাফসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যুবতীদেরকে ঈদের ময়দানে যেতে নিষেধ করতাম। এক মহিলা আসলেন এবং বসরার কসরে বনী খলফে উঠলেন। তিনি তার বোন থেকে একখানা হাদীস বর্ণনা করেন (যে বোনের স্বামী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বারটি যুদ্ধে এবং বোন তার স্বামীর সাথে ছয়টি যুদ্ধে শরীক হয়েছিলেন। তিনি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমরা আহতদের সেবা শুশ্রুষা করতাম, অসুস্থদের যত্ন নিতাম। আমার উক্ত বোন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করেছিলেন, হুযুর! আমাদের কারো যদি চাদর না থাকে তখন বের হওয়া কি দোষণীয়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সাথী মহিলা যেন তাকে তার চাদর পরিধান করায়। তারা ভাল কাজে এবং মো'মেনদের দোআয় যেমন ইস্তেস্কার নামাযে যেন শরীক হয়। অতঃপর হযরত উম্মে আতিয়া (রাঃ) আগমন করলে আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম, আপনি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ ধরনের কথা বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, আমার পিতা তাঁর উপর কোরবান হোক, আমি এরুপ বলতে শুনেছি। তার উম্মে আতিয়ার অভ্যাস ছিল, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এমন কোন আলোচনা করতে না, যাতে "আমার পিতা তাঁর প্রতি কোরবান হোক" না বলতেন। তিনি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যুবতী, পর্দানশীল এবং হায়েজা মহিলাগণ বের হতে পারবে, তারা ভাল কাজে এবং মুসলমানদের দোআয় শরীক হতে পারবে তবে নামাযের স্থান থকে দূরে থাকবে। হযরত হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, হায়েযা মহিলাগণও কি বের হবেন? তখন হযরত উম্মে আতিয়া (রাঃ) বললেন, যে সকল মহিলার হায়েজ দেখা দেয় তারা কি আরাফাতের ময়দানে এবং এরুপ অন্যান্য স্থানে উপস্থিত হন না?
৩২০। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, ফাতেমা বিনতে আবু হুবায়েশ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি সর্বদা ইস্তেহাযা অবস্থায় থাকি, কখনো পবিত্র হইনা। তাহলে আমি কি নামায ছেড়ে দিব? উত্তরে তিনি বললেন, না। এটা হলো রগনিঃসৃত রক্ত । বরং তুমি হায়েযের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে নামায ছেড়ে দাও। তারপর গোসল করে নামায পড়তে থাক।
৩২১। হাদীসঃ হযরত উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা মেটে ও হলুদ রং হায়েজের মধ্যে গণ্য করতাম না।
৩২২। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত যয়নাব (রাঃ)-এর বোন উম্মে হাবীবা বিনতে জাহাশ (রাঃ)-এর ইস্তেহাযার রোগ দীর্ঘ সাত বৎসর পর্যন্ত লেগে ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি তাকে গোসল করার জন্য আদেশ করেন। আরো বললেন, এটা রগনিঃসৃত রক্ত বিশেষ। অতঃপর হযরত উম্মে হাবীবা (রাঃ) প্রতি নামাযের জন্যই গোসল করতেন।
৩২৩। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, বিদায় হজ্জের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলা হল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! উম্মুল মো'মেনীন হযরত সফিয়া বিনতে হুয়াই হায়েজা হয়েছেন। এতদশ্রবণে তিনি বললেন, বোধহয় সে অামাদেরকে মক্কা থেকে বের হতে বিরত রাখবে। সে কি তোমাদের সাথে তওয়াফে যিয়ারত আদায় করেনি? তখন তাঁরা বললেন, হাঁ। হুযুর সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হলে তোমরা এখন মক্কা থেকে মদীনায় যাত্রা কর।
৩২৪্ হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হায়েজার জন্য অবকাশ দেয়া হয়েছে, তারা তওয়াফে সফরের পূর্বে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবে। এ হাদীস জানার পূর্বে হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) বলতেন, হায়েজা মহিলাগণ তওয়াফে সফরের পূর্বে নিজ দেশ ফিরে যেতে পারবে না। অতঃপর আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, তোমরা নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবে। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম হায়েজা মহিলাদের জন্য অবকাশ দিয়েছেন।
৩২৫। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হায়েজ দেখা দিলে তোমরা নামায ছেড়ে দিবে। আর যখন হায়েজ চলে যাবে তখন রক্ত ধৌত করে নিবে, তারপর নামায আদায় করবে।
৩২৬। হাদীসঃ হযরত সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক মহিলা নেফাসের মুদ্দতের মধ্যে পেট বেদনার কষ্টে মারা গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযার নামায আদায় করেন এবং তার মাঝ বরাবর দাঁড়ান
৩২৭। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন শাদ্দাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি আমার খালা হযরত মায়মুনা (রাঃ)-কে বলত শুনেছি, তিনি হায়েজা ছিলেন, তাই নামায আদায় করতেন না। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামায আদায়ের স্থানের কাছে শুয়ে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট একটি চাটাইয়ে নামায আদায় করছিলেন। যখন সেজদায় যেতেন তখন তাঁর কাপড়ের কিচু অংশ আমার শরীরের সাথে লেগে যেত (এতে তিনি কোন দোষ মনে করেননি)।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.