Tuesday, January 31, 2017

Elem । ইলেম বা জ্ঞান

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ 
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে

এলেম বা জ্ঞানের পর্ব
এলেমের ফজিলত

অনুচ্ছেদ নং ১ঃ জ্ঞানের মর্যাদা। মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন- يَرْفَعُ اللّٰهُ الَّذِ يْنَ اٰ مَنُوْا مِنْكُمْ وَالَّذِيْنَ اُوْتُوْا الْعِلْمَ دَرَجَا تٍ وَاللّٰهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ وَقَوْ لَهُ عَذَّ وَجَلَّ رَبِّ ذِدْنِيُ عِلْمًا
মহান আল্লাহর বাণী- "তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান গ্রহণ করেছে এবং যাদেরকে এলম দান করা হয়েছে, তাদেরকে আল্লাহ উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবেন; আর তোমাদের ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে আল্লাহ অধিক জ্ঞাত।"
আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন, হে আমার পালনকর্তা! আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দাও।

বিশেষ আলোচনায় মগ্ন থাকা কালে এলম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে করণীয়

অনুচ্ছেদ নং ২ঃ বিশেষ আলোচনায় মগ্ন থাকাকালে এলেম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে সে কথা শেষ করে প্রশ্নকারীর জবাব দিবে।
৫৮। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মজলিসে সাহাবাদের সাথে কথাবার্তায় রত ছিলেন। এ সময় হঠাৎ এক গ্রাম্য ব্যক্তি তথায় আগমন করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করল, কেয়ামত কখন সংঘটিত হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কিছু না বলে লোকদের সাথে কথাবার্তায় রত রইলেন। তা দেখে কেউ কেউ বললেন, হুযুর তার প্রশ্ন শুনেছেন, কিন্তু তাঁর তা পছন্দনীয় হয়নি। আবার কেউ কেউ বললেন, তিনি তার কথা অবশ্য্ই শুনেছেন। ইত্যবসরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের সাথে কথা সমাপ্ত করে বললেন, কেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্নকারী কোথায়? প্রশ্নকারী বললেন, হুযুর! আমি এখানে আছি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন আমানতের খেয়ানত করা হবে, তখন কেয়ামতের অপেক্ষা কর। অতঃপর প্রশ্নকারী বললেন, খেয়ানত কিভাবে হবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন অনুপযুক্ত ব্যক্তিদের হাতে নেতৃত্ব প্রদান করা হবে, তখনই কেয়ামতের অপেক্ষা করো।
অনুচ্ছেদ নং ৩ঃ জ্ঞান বা এলেম এর কথা উচ্চস্বরে বলা।

৫৯। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) বলেন, কোন এক সফরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের থেকে পেছনে পড়ে গেলেন। অতঃপর তিনি আমাদের নিকট এসে পৌছলেন। ঐ সফরে আমরা নামাযে দেরী করে ফেলেছিলাম। নামাযের জন্য তাড়াতাড়ি অজু করতে গিয়ে আমাদের পাগুলো হালকাভাবে ধৌত করতে লাগলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অবস্থা দেখে উচ্চস্বরে বলতে লাগলেন, যে সকল পায়ের গোড়ালি হালকাভাবে ধৌত করা হচ্ছে সেগুলোর জন্য দোযখের শাস্তি ও ধ্বংস অবধারিত। এ বাক্য দু'বার অথবা তিন বার বলেন।
অনুচ্ছেদ নং ৪ঃ মুহাদ্দিসের উক্তি ... এই শব্দগুলোর অর্থ: ইমাম হুমাইদী (রাঃ) আমাদের কাছে বলেন; ইবনে উযায়নার কাছে উক্ত তিনটি শব্দ সমার্থবোধক।
ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, ..... (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অামাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন) আর তিনি সত্যবাদী ও সত্য স্বীকৃত।
শফীক (রঃ) এর বর্ণনা অনুযায়ী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন- .... (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এরুপ কথা আমি শুনেছি)।
হুযাইফা (রাঃ) বলেন- ...(রাসূল সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দুটি হাদীস বলেছেন)।
আবুল আলিয়া (রাঃ) এর বর্ণনা অনুযায়ী ইবনে আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বলেন-.... (তিনি তার প্রতিপালক তেকে বর্ণনা করেন)।
আনাস (রাঃ) বলেন-... (নবী সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রব থেকে বর্ণনা করেন)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন-....(নবী সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রব থেকে বর্ণনা করেন)।

৬০। হাদীসঃ হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, বৃক্ষসমূহের মধ্যে এমন এক প্রকার বৃক্ষ আছে, যার পাতা ঝরে পড়ে না। তার উদাহরণ হল মুসলিমের ন্যায়। তোমরা আমকে বল সেটি কোন বৃক্ষ? এতদশ্রবণে সাহাবাগণ জঙ্গলের বৃক্ষের প্রতি তাদের চিন্তা ভাবনা নিবদ্ধ করতে লাগলেন। ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, তখন আমার মনে মনে চিন্তা হল, খেজুর বৃক্ষ হবে, কিন্তু আমি তা বলতে লজ্জাবোধ করলাম। এমন সময় সাহাবাগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি সে বৃক্ষটির নাম বলে দিন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হল খেজুর বৃক্ষ।

৬১। হাদীসঃ হযরত ইবনে 'উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বললেন, গাছ-পালার মধ্যে এমন একটি গাছ আছে যার পাতা ঝরে না। আর তা মুসলিমের উপমা। তোমরা আমাকে বল দেখি কি গাছ? রাবী বলেন, তখন লোকেরা জঙ্গলের বিভিন্ন গাছপালার নাম চিন্তা করতে লাগল। আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমার মনে হল, সেটা হবে খেজুর গাছ। কিন্তু তা বলতে আমি লজ্জাবোধ করছিলাম। তারপর সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনিই আমাদের বলে দিন সেটি কি গাছ? তিনি বললেন, তা হল খেজুর গাছ।

অনুচ্ছেদ নং ৬ঃ মুহাদ্দীসের নিকট হাদীস পাঠ ও পেশ করা। হাসান বসরী, আবু সূফিয়ান সওরী ও ইমাম মালেক (রঃ) বলেন, মুহাদ্দিসের নিকট হাদীস পাঠ করা জায়েয। তাদের মধ্য থেকে কেউ মাহাদ্দিসের নিকট হাদীস পাঠ করার ব্যাপারে যিমাম ইবনে সা'লাবা (রাঃ) এর হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন। হাদীসটি এই হযরত যিমাম ইবনে সালাবা (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন, নামায আদায় করতে হবে এই হুকুম কি আল্লাহ আপনাকে দিয়েছেন? রাসূল সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। ইমাম হুমাইদি (রঃ) বলেন এটি নবী সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হাদীস পাঠের একটি ঘটনা। হযরত যিমাম (রাঃ) স্বীয় গোত্রে এ হাদীস সম্পর্কে সংবাদ দিলেন। ফলে তারা তা অনুমোদন করলেন। ইমাম মালেক (রঃ) লিখিত এমন কিছুকে দলীল রুপে পেশ করেন, যা লোকদের কাছে পড়া হলে তারা বলে, অমুক ব্যক্তি আমাকে সাক্ষী বানিয়েছে। আর তা শিক্ষকের নিকট পড়লে শিক্ষার্থী বলে, অমুক ব্যক্তি আমাকে পড়িয়েছে।

হযরত হাসান বসরী (রঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোনো আলেমের নিকট হাদীস পাঠ করাতে কোনো দোষ নেই। সুফিয়ান সাওরী (রঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যখন মুহাদ্দীসের নিকটে হাদীস পাঠ করা হয়, তখন একথা বলাতে কোন দোষ নেই, যে সে আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেছে। উবাইদুল্লাহ ইবনে মুসা (রঃ) বলেন, আমি আবু আসেমকে মালেক ও সুফিয়ান সাওরীর বরাত দিয়ে বলতে শুনেছি, "আলেমের নিকট হাদীস পাঠ করা ও স্বীয় আলেমের হাদীস পাঠ করা উভয় সমান কথা।

৬২। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা একদা মসজিদে নববীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপবিষ্ট ছিলাম। হঠাৎ এক ব্যক্তি উষ্ট্রে আরোহণ করে তথায় আসেন। তিনি উটটি মসজিদের পাশে বসান, তারপর সেটির দু'পা বেঁধে দেন। অতঃপর উপস্থিত লোকদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের মধ্যে বসা ছিলেন। তখন আমরা তাকে বললাম, আমাদের মধ্যকার সর্বাপেক্ষা সুন্দর ব্যক্তি, যিনি টেক লাগিয়ে বসা আছেন, ইনিই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তখন ঐ ব্যক্তি বললেন, হে ইবনে আবদুল মোত্তালেব! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমার জবাব দিচ্ছি। তারপর লোকটি বলল, আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করছি, এতে আপনি মনে কষ্ট নিবেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি জিজ্ঞেস করতে চাও কর। তারপর লোকটি বললেন, আমি আপনাকে আপনার এবং আপনার পূর্বেকার মানুষদের প্রভুর নামে জিজ্ঞেস করছি, মহান আল্লাহ কি আপনাকে সকলের নবী করে পাঠিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ পাঠিয়েছেন।

তারপর লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, আমি আপনাকে আল্লাহর নামে কসম দিচ্ছি, মহান আল্লাহ কি আপনাকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করার আদেশ করেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। লোকটি আরো বললেন, মহান আল্লাহর নামে কসম দিয়ে আরো জিজ্ঞেস করছি, রমযানে রোযা রাখার জন্য মহান আল্লাহ আপনাকে আদেশ করেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ! লোকটি আরো বললেন, আমি আল্লাহর নামে আপনাকে কসম দিয়ে বলছি, আল্লাহ কি আপনাকে আদেশ করেছেন আমাদের ধনীদের থেকে যাকাত গ্রহণ করে আমাদের গরীবদের মাঝে তা বন্টন করার জন্য? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ! অতঃপর লোকটি বললেন, আপনি যা নিয়ে এসেছেন আমি তার প্রতি ঈমান আনলাম। আমি আমার গোত্রের দূত হিসেবে এসেছি। আমার নাম "যেমাম বিন সা'লাবা", আমি বনু সা'দ বিন বকর গোত্রের লোক।

৬৩। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কোন প্রশ্ন করতে পবিত্র কোরআনে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। আমাদের কাছে পছনন্দনীয় ছিল গ্রাম্য কোন জ্ঞানী ব্যক্তি হুযুর সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাজির হয়ে তাঁকে প্রশ্ন করুক আর আমরা তা শ্রবণ করি। তাই একদা এক গ্রামীণ ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে এসে বলল, হে আল্লাহর নবী! আপনার দূত আমাদের কাছে গিয়ে বলেছেন, আপনি না কি ধারণা করেন, মহান আল্লাহ আপনাকে নবী করে পাঠিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, হ্যাঁ! তিনি সত্য বলেছেন। অতঃপর সে প্রশ্ন করল, আচ্ছা বলুন, এ আসমান কে সৃষ্টি করেছেন?

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, মহান আল্লাহ। আগন্তুকঃ এ যমীন ও পাহাড় পর্বত কে সৃষ্টি করেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামঃ মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। আগন্তুকঃ এর মধ্যকার উপকারী বস্তুসমূহ কে সৃষ্টি করেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামঃ মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। আগন্তুকঃ যিনি এ আসমান যমীন সৃষ্টি করেছেন, যিনি এ পাহাড় পর্বত স্থাপন করেছেন এবং এ মসুদয়ের মধ্যকার উপকারী বস্তুসমূহ সৃষ্টি করেছেন, সে আল্লাহর শপথ, তিনি কি আপনাকে নবী করে প্রেরণ করেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ!

আগন্তুকঃ আপনার দূত বলেন, আমাদের উপর নাকি পাঁচ ওয়াক্ত নামায এবং আমাদের মালের উপর যাকাত ফরয করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামঃ হ্যাঁ, সত্য বলেছে। আগন্তুকঃ ঐ আল্লাহর শপথ, যিনি আপনাকে নবী করে প্রেরণ করেছেন, তিনি কি এ কাজের আদেশ করেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামঃ হ্যাঁ। তিনি আদেশ করেছেন। আগন্তুকঃ আপনার দূত বলেন, বছরে এক মাস রোযা রাখা আমাদের উপর ফরয করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামঃ সে সত্য বলেছে। আগন্তুকঃ যে আল্লাহ আপনাকে নবী কে প্রেরণ করেছেন তার শপথ, তিনি কি আপনাকে এ কাজের আদেশ করেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামঃ হ্যাঁ! আগন্তুকঃ আপনার দূত মনে করেন, আমাদের সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের উপর বায়তুল্লাহর হজ্জ ফরয করা হয়েছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামঃ হ্যাঁ, সে সত্য বলেছে।

আগন্তুকঃ যে আল্লাহ আপনাকে নবী করে পাঠিয়েছেন তার শপথ, সে মহান আল্লাহ কি আপনাকে এ কাজের আদেশ করেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম হ্যাঁ! আগন্তুকঃ ঐ আল্লাহর শপথ যিনি আপনাকে সত্য নবী করে পাঠিয়েছেন, আমি এ সকল কাজের মধ্যে কোন কিছু বাড়াব কমাব না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথা শুনে বললেন, লোকটি যদি সত্য বলে থাকে তা হলে সে এসব আমল দ্বারা অবশ্যই বেহেশতে প্রবেশ করবে।

অনুচ্ছেদ নং ৭ঃ শিক্ষক কর্তৃক নিজ কিতাব দিয়ে তদানুযায়ী হাদীস বর্ণনা করার অনুমতি দান এবং জ্ঞানী ব্যক্তির জ্ঞানের কথা লিখে দেশে দেশে পাঠানো।

৬৪। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একখানা পত্র নিয়ে এক ব্যক্তিকে পাঠালেন এবং তাকে আদেশ করলেন, তিনি যেন তা বাহরাইনের শাসনকর্তা মুনজের-এর হাতে পৌছে দেন। অতঃপর বাহরাইনের শাসনকর্তা উক্ত পত্রখানা পারস্যের অধিপতি খসরু পারভেজ বিন হরমুজ নওশেরওয়ার হাতে পৌছে দিলেন। সে পত্র পাঠান্তে রাগান্বিত হয়ে ছিড়ে টুকরা টুকরা করে ফেলল। ইবনে শিহাব বলেন, আমার ধারণা, ইবনে মুসাইয়্যাব বলেছেন, এ ঘটনা শুনতে পেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসন্তুষ্ট হয়ে তার জন্য বদদোআ করে বললেন, তার রাজত্ব যেন এমনিভাবে টুকরা টুকরা করে দেয়া হয়।

৬৫। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একখানা পত্র লেখলেন অথবা লেখার জন্য মনস্থ করলেন। তখন তাঁকে বলা হল, রোম এবং পারস্যের অধিপতিগণ সীলমোহরকৃত পত্র না হলে পাঠ করবেন না। তাই তিনি একটি রুপার আংটি তৈরি করান। যাতে লেখা ছিল .... (মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ)। বারী বলেন, আমি মনে হয় যেন এখনো তাঁর হাতে আংটির সাদা বর্ণ দেখতে পাচ্ছি।

অনুচ্ছেদ নং ৮ঃ মসজিদের শেষ প্রান্তে বসা এবং মসজিদের কোন খালি জায়গা দেখে সেখানে বসা।

৬৬। হাদীসঃ হযরত আবু ওয়াকেদ লাইসী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে বসা ছিলেন। তাঁর সাথে সাহাবায়ে কেরামও রয়েছেন। হঠাৎ করে তিন ব্যক্তি আগমন করলেন। তন্মধ্যে দু'ব্যক্তি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলেন এবং অপর ব্যক্তি চলে গেলেন। যে দু'জন মজলিসে আগমন করলেন, তাদের একজন মজলিসে খালি জায়গা দেখতে পেয়ে তথায় বসে গেলেন। অপরজন মজলিসের শেষ প্রান্তে বসে পড়লেন। আর তৃতীয় ব্যক্তি স্থান ত্যাগ করে চলে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কথাবার্তা হতে অবসর নিলেন, তখন সাহাবাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এ তিন ব্যক্তি সম্পর্কে খবর দিব না? জেনে রেখো, এ তিন ব্যক্তির অবস্থা হল, একজন আল্লাহর রাসূলের কাছে বসার জন্য জায়গা চেয়েছে, আল্লাহ তাকে জায়গা করে দিয়েছেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি ভিড়ের মধ্যে আল্লাহর রাসূলের কাছে আসতে লজ্জাবোধ করেছে, আল্লাহ তার প্রতি রহমত করেছেন।আর তৃতীয় ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অস্বীকার করেছে, তাই আল্লাহও তার উপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন।

বার্তা পৌছানো হয়েছে

অনুচ্ছেদ নং ৯ঃ রাসূল সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী: যাদের কাছে রাসূল সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী পৌছে, তাদের অনেকেই এমন ব্যক্তির চেয়ে অধিক সংরক্ষণ করতে পারে যারা তা তাদের কাছে শুনেছে।

৬৭। হাদীসঃ হযরত আবু বকর (রাঃ) বিদায় হজেজ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, বিদায় হজ্জের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর উটের উপর বসা ছিলেন, তখন এক ব্যক্তি তাঁর উটের লাগাম ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, বল তো আজকের দিনটি কোন দিন? আমরা সবাই নিশ্চুপ রইলাম। কারণ, আমাদের ধারণা ছিল, হয়ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিনটির মূল নাম বাদ দিয়ে অন্য নামকরণ করবেন। সাহাবাদেরকে নিশ্চুপ দেখে তিনি বললেন, এটা আরাফাতের দিন নয় কি? আমরা সবাই বললাম জি-হ্যাঁ। তিনি পুনরায় বললেন, এটা কোন মাস? আমরা সবাই এবারো নিশ্চুপ রইলাম। কারণ আমাদের ধারণা, হয়ত তিনি অন্য কোন নামে এ মাসের নামকরণ করবেন। তারপর তিনি বললেন, এটা যিলহজ্জ মাস নয় কি? আমরা বললাম জি-হাঁ! অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের জান মাল এবং ইজ্জত আব্রু পরস্পরের জন্য এমনভাবে হারাম করা হয়েছে, যেমন এ মাসে আজকের দিনটিকে এ শহরে হারাম করা হয়েছে। তোমাদের উপস্থিত ব্যক্তিগণ অনুপস্থিত ব্যক্তিদেরকে আমার এ বাণী পৌছে দিবে। কারণ, হতে পারে তোমাদের উপস্থিত ব্যক্তিগণ এমন লোকদের কাছে আমার এ কথাগুলো পৌছাবে, যারা হবে তাদের চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞানী ও হোফাজতকারী।

অনুচ্ছেদ নং ১০ঃ কোনো কিছু বলা ও করার পূর্বে সে সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-...... "জেনে রাখো, আল্লাহ ছাড়া কোনো মা'বুদ নাই"
আল্লাহ জ্ঞান দিয়েই শুরু করেছেন, আর জ্ঞানীরাই (আলেমগণ) হলো নবী (আঃ) দের ওয়ারীস। তারা জ্ঞানের ওয়ারিস হয়েছেন। যে জ্ঞান অর্জন করে, সে অনেক সম্পদ লাভ করে। আর যে ব্যক্তি পথে চলা অবস্থায় জ্ঞান অর্জন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: .... আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলেমগণই তাকে ভয় করে।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন: ...."আর আলেমগণই তা বুঝে"
আল্লাহ বলেন: .... "তখন তারা বলবে" যদি আমরা শুনতাম অথবা বুঝতাম, তাহলে জাহান্নামবাসীদের অন্তর্ভূক্ত হতাম না।"
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: .... "যারা জানে আর যারা জানে না উভয়েই কি সমান?"

আর নবী করীম সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ...
অর্থ: "আল্লাহ যার প্রতি কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তাকে দ্বীন এ ব্যাপারে সর্বাধিক জ্ঞান দান করেন।নিশ্চয়ই অধ্যয়নের মাধ্যমেই জ্ঞান অর্জন হয়। হযরত আবু যর (রাঃ) তার ঘাড়ের দিকে ইংগিত করে বলেছেন, যদি তোমরা এখানে তরবারী রাখো, তারপর যদি আমি ধারণা করি যে, রাসূল সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রবণকৃত এমন কোনো কথা বলবো তোমাদের তরবারী চালানোর পূর্বে। তবে তা অবশ্যই আমি বলে ফেলবো।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন: .. এখানে ... দ্বারা উদ্দেশ্যে হলো আলেমগণ ও ফুকাহায়ে কেরাম এবং একথাও বলা হয় যে, যে ব্যক্তি মানুষকে জ্ঞানের বড় বড় বিষয়ের পূর্বে জ্ঞানের ছোট ছোট বিষয় শিক্ষা দেন , তাকে "রব্বানী" বরা হয়।

৬৮। হাদীসঃ  হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াজ নসীহতে সাহাবায়ে কেরামের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখতেন (প্রতিদিন ওয়াজ নসীহত করতেন না)। কেননা, তিনি আমাদের মনে কষ্ট দেয়া বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করা পছন্দ করতেন না।

অনুচ্ছেদ নং ১১ঃ সাহাবীগণ (রাঃ) যাতে বিরক্ত না হয়ে যান। সে দিকে লক্ষ্য রেখে নবী সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে শিক্ষাদান এবং উপদেশ দেয়ার ব্যাপারে বিরতি দিতেন।

৬৯। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা যে কোন কাজে সহজ সরল পন্থা অবলম্বন করো, জটিলতা সৃষ্টি করো না। লোকদেরকে শুভ সংবাদ প্রদান করো, অশুভ খবর ছাড়য়ো না।

অনুচ্ছেদ নং ১২ঃ কোন ব্যক্তির দ্বারা জ্ঞান চর্চাকারীদের জন্য নির্দিষ্ট দিন ধার্য করা।

৭০। হাদীসঃ হযরত আবী ওয়ায়েল (রঃ) বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রঃ) লোকদেরকে প্রতি বৃহস্পতিবার ওয়াজ নসীহত শুনাতেন। এক ব্যক্তি তাঁকে বললেন, হে আবু আবদুর রহমান! আমরা চাই আপনি প্রতিদিন আমাদেরকে ওয়াজ নসীহত শুনাবেন। তিনি বললেন, আমাদেরকে কি এর জন্য নিষেধ করা হয়নি? আমি তোমাদেরকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করা পছন্দ করি না। আমিও ওয়াজ নসীহতে তোমাদের বিরক্তির প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখি; যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বিরক্তির প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতেন, যাতে আমাদের মনে কো দুশ্চিন্তা স্থান না পায়।

অনুচ্ছেদ নং ১৩ঃ আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের অধিক জ্ঞান দান করেন।

৭১। হাদীসঃ হযরত হোমায়দ ইবনে আবদুর রহমান (রাঃ) বলেন, আমি হযরত মুআবিয়া (রাঃ)-কে একদা খোতবার মধ্যে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ যার কল্যাণের ইচ্ছা করেন তাকে দ্বীনি এলেম দান করেন। আমি বন্টনকারী এবং আল্লাহ হলেন দাতা। এ উম্মত সর্বদা আল্লাহর হুকুমের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যারা তাদের বিরোধিতা করবে, কেয়ামত আসা পর্যন্ত বিরোধীরা কখনো তাদের ক্ষতি করতে পারবে না।

অনুচ্ছেদ নং ১৪ঃ বিদ্যার ক্ষেত্রে অধিক বুঝ অপরিহার্য।

৭২। হাদীসঃ হযরত মুজাহিদ (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক সময় মদীনা পর্যন্ত হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। আমি তাঁকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একটি মাত্র হাদীস ছাড়া অন্য হাদীস বলতে শুনিনি। তিনি বলেন, আমরা এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত ছিলাম। এ সময় খেজুরের কিছু ছড়া আনা হলে তিনি উপস্থিত সাহাবাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, বৃক্ষসমূহের মধ্যে এমন একি বৃক্ষ আছে যার তুলনা মুসলমানদের সাথে হতে পারে (বল তো ঐ বৃক্ষটি কি?) এ সময় আমি বলতে ইচ্ছা করেছিলাম, সেটি হল খেজুর বৃক্ষ। কিন্তু উপস্থিত সভাসদদের মধ্যে আমি ছিলাম সর্বাপেক্ষা বয়:কনিষ্ঠ। তাই লজ্জায় চুপ থাকলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হল খেজুর বৃক্ষ।

অনুচ্ছেদ নং ১৫ঃ জ্ঞান বিজ্ঞান লাবের ব্যাপারে প্রতিযোগীতা মূলক আকাংখা। হযরত উমর (রাঃ) বলেছেন "নেতা হওয়ার পূর্বে জ্ঞান অর্জন করো।
আবু আব্দুল্লাহ (ইমাম বুখারী) বলেছেন, "নেতা হওয়ার পরও জ্ঞান অর্জন করো।" কারণ নবী করীম সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ তাদের বৃদ্ধ বয়সেও ইলম (জ্ঞান) অর্জন করেছেন।

৭৩। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ঈর্ষা নাজায়েয, তবে দু'কারণে জায়েয। কোন ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ ধনসম্পদ দান করেছেন আর সে তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার জন্য ব্যস্ত রয়েছে। আর কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ এলম ও হেকমত দান করেছেন আর সে তা দ্বারা মানুষের মধ্যে ফয়সালা করছে এবং তাদেরকে তা তা'লীম দিচ্ছে।
অনুচ্ছেদ নং ১৬ঃ সমুদ্রের কুলে খিযির এর নিকট মূসা (আঃ) এর গমন। আল্লাহ বলেছেন-

অর্থ: আমি (মুসা) কি আপনার (খিযির) অনুসরণ করবো, যাতে আপনার জ্ঞান আমাকে শিক্ষা দিবেন?

৭৪। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক সময় তিনি "হুর বিন কায়স" আলফাযারীর সাথে হযরত মূসা (আঃ)-এর সাথীর ব্যাপারে জগড়ায় লিপ্ত হন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, তিনি ছিলেন হযরত খিযির (আঃ)। অতঃপর তাঁরা উভয়ে মীমাংসার উদ্দেশ্যে হযরত উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ)-এর কাছে গেলেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) তাঁকে বললেন, আমি এবং আমার এ সাথী হযরত মূসা (আঃ)-এর সে সাথীর ব্যাপারে জগড়ায় লিপ্ত হয়েছি, যার সাক্ষাতের জন্য তিনি আল্লাহর কাছে রাস্তা তালাশ করেছিলেন। আপনি কি নবী করীম সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ ব্যাপারে কিছু আলোচনা করতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি নবী করীম সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ প্রসঙ্গে বলতে শুনেছি, এক সময় হযরত মূসা (আঃ) বনী ইসরাঈলের কিছু নেতুস্থানীয় ব্যক্তির সাথে আলোচনায় রত ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি হযরত মূসা (আঃ)-কে প্রশ্ন করলেন, আপনি কি জানেন, আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী কেউ আছে? উত্তরে মূসা (আঃ) বললেন, না। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা হযরত মূসা (আঃ)-এর কাছে ওহী পাঠালেন, আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী ব্যক্তিও আছেন, তিনি হলেন হযরত খিযির (আঃ)। এ কথা শুনার পর হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহ পাকের কাছে হযরত খিযির (আঃ)-এর কাছে যাওয়ার রাস্তার বিবরণ চাইলে আল্লাহ পাক তাঁর সাক্ষাতের জন্য একটি মাছকে নিদর্শন বানান। আল্লাহ হযরত মূসা (আঃ)-কে জানিয়ে দিলেন, হে মূসা! তুমি এ মাছটি যেথায় হারাবে সেথায় ফিরে যাবে। কারণ সেখানেই তুমি খিযির (আঃ)-এর সাক্ষাত লাভ করতে পারবে। অতঃপর হযরত মূসা (আঃ) তাঁর এক যুবক সাথীকে নিয়ে বর্ণিত মাছটি হারানোর স্থান তালাশে বের হন।
অতঃপর যুবক বন্ধু মূসা (আঃ)-কে বললেন, হে নবী! আমি তো মাছটির কথা ভূলে গেছি। শয়তানই আমাকে এ কথা ভুলিয়ে রেখেছে। মূসা (আঃ) বললেন, আমরা তা ঐ স্থানের তালোশেই নেমেছি। অতঃপর তাঁরা যে পথ ধরে এসেছিলেন সে স্থানে ফিরে গেলেন। সেখানে যাওয়ার পর হযরত খিযির (আঃ)-এর সাথে তাঁদের সাক্ষাত হয়। তারপর তাঁদের মধ্যে ঐ ঘটনাই ঘটল, যা পবিত্র কোরআনে সবিস্তার আলেচিত হয়েছে।

অনুচ্ছেদ নং ১৭ঃ নবী করীম সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী: "হে আল্লাহ! তুমি তাকে কিতাব (কুরআন) শিক্ষা দাও।"

৭৫। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর বক্ষে জড়িয়ে ধরে দোআ করলেন- "হে আল্লাহ! তাকে কিতাব শিক্ষা দিন।"

অনুচ্ছেদ নং ১৮ঃ কখন ছোট ছেলের শ্রবণ সঠিক বলে গৃহীত হবে?

৭৬। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি বিদায় হজ্জের সময় এক গর্দভীর উপর আরোহণ করে এসেছিলাম (তখন আমি বালেগ হওয়ার নিকটবর্তী)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনাতে দেয়ালতে সোতরা হিসেবে না রেখে নামায আদায় করছিলেন। আমি এক কাতারের সম্মুখ দিয়ে চলে গেলাম। তারপর আমি আমার গর্দভীটিকে বিচরণের জন্য ছেড়ে দিয়ে কাতারের মধ্যে শামিল হয়ে গেলাম, কিন্তু কেউ আমার এ কাজের কোন প্রতিবাদ করেনি।

৭৭। হাদীসঃ হযরত মাহমুদ বিন রবী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখ মোবারকের ঐ কুলিটি আমার স্মরণ আছে, যা তিনি পানি পাত্র হতে নিয়ে আমার মুখে ঢেলে দিয়েছিলেন। সে সময় আমার বয়স ছিল পাঁচ বৎসর।

শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের ফযীলত

অনুচ্ছেদ নং ১৯ঃ ইলম অন্বেষণে বের হয়ে যাওয়া। যেমন- হযরত জাবের (রাঃ) ইবনে আব্দুল্লাহ একটি মাত্র হাদীস সংগ্রহ এর জন্য আব্দুল্লাহ ইবনে আনাস এর কাছে (মদীনা থেকে সিরিয়া পর্যন্ত) এক মাসের পথ সফর করেন।

৭৮। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার তিনি হুর ইবনে কায়স ইবনে হিসন আল-ফযারী মূসা (আ:)-এর সঙ্গীর ব্যাপারে বাদানুবাদ করছিলেন। তখন উবাঈ ইবনে কা'ব (রাঃ) তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) তাঁকে ডেকে বললেন, আমি ও আমার এ ভাই মূসা (আঃ)-এর সেই সঙ্গীর ব্যাপারে মতবিরোধ করছি, যাঁর সাথে সাক্ষাত করার জন্য তিনি পথের সন্ধান চেয়েছিলেন-আপনি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর সম্বন্ধে কিছু বলতে শুনেছেন?

উবাঈ (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর প্রসঙ্গে বলতে শুনেছি যে, একবার মূসা (আঃ) বনী ইসরাঈলের কোন এক মসজিদে হাজির ছিলেন। তখন তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, 'আপনি কাউকে আপনার তুলনায় অধিক জ্ঞানী বলে জানেন? মূসা (আঃ) বললেন, না। তখন  আল্লাহ তাআলা মূসা (আঃ)-এর কাছে ওহী পাঠালেনঃ হাঁ, আমার বান্দা খিজির। এরপর তিনি তার সাথে সাক্ষাত লাভের রাস্তা জানতে চাইলেন। আল্লাহ তা'আলা তার জন্য মাছকে তার নিশানা বানিয়ে দিলেন। তাকে বলে দেওয়া হল, 'যখন তুমি মাছটি হারিয়ে ফেলবে তখন তুমি প্রত্যাবর্তন করবে। তাহলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তুমি তাঁর সাক্ষাত পাবে। তিনি সমুদ্রে সে মাছের নিশানা অনুসন্ধান করতে লাগলেন। যা হোক, মূসা (আঃ)-কে তাঁর সঙ্গী যুবকটি বললেন, (পবিত্র কুরআনের ভাষায়)

"আপনি কি লক্ষ্য করেছেন আমরা যখন পাথরের কাছে বিশ্রাম করছিলাম তখন আমি মাছের কথা (বলতে) ভুলে গিয়েছিলাম। আর শয়তান তার কথা আমাকে ভূলিয়ে দিয়েছিল (১৮:৩৬)। ... মূসা (আঃ) বললেন, আমরা সে স্থানটির অনুসন্ধান করছিলাম। (১৮:৬৪) তারপর তাঁরা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললেন। শেষে তাঁরা খিযির (আঃ)-কে পেয়ে গেলেন। তাঁদের (পরবর্তী) ঘটনা আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে বর্ণনা করেছেন।

অনুচ্ছেদ নং ২০ঃ যে ইলম অর্জন করে ও যে অপরকে ইলম শিক্ষা দান করে তাদের মর্যাদা।

৭৯। হাদীসঃ হযরত আবু মূসা (আঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহান আল্লাহ আমাকে যে হেদায়াত এবং এলেম সহকারে প্রেরণ করেছেন তার উদাহরণ হল ঐ বৃষ্টির ন্যায়, যে বৃষ্টি এমন এলাকায় পতিত হল, যে স্থানে এমন কিছু উত্তম যমীন রয়েছে, যা পানি গ্রহণ করার ক্ষমতাসম্পন্ন। বৃষ্টির পানি পাওয়ার পর উক্ত যমীন তরতাজা অনেক প্রকার ঘাস উৎপন্ন করল। আর ঐ এলাকায় এমন কিছু শক্ত যমীনও রয়েছে যা পানি গ্রহণ না করে বরং উপরে জমা করে রাখার ক্ষমতাসম্পন্ন। সুতরাং জমাকৃত পানি দ্বারা মহান আল্লাহ লোকদেরকে উপকার প্রদান করলেন এমনভাবে যে, লোকেরা তা হতে নিজেরা পান করল, চতুষ্পদ জন্তুগুলোকেও পান করাল এবং ক্ষেতে খামারে ব্যবহার করল। আর এ বৃষ্টির পানি এমন কিছু পাথরযুক্ত ময়দানেও পতিত হল, যার পানি ধারণ ক্ষমতা নেই এবং তথায় কোন ঘাসও উৎপন্ন হয় না। সুতরাং সে বৃষ্টির উদাহরণ হল উক্ত ব্যক্তির, যাকে মহান আল্লাহ ধর্মীয় জ্ঞানে জ্ঞান দান করেছেন এবং আল্লাহ আমাকে যে হেদায়ত দিয়ে পাঠিয়েছেন তা দ্বারা সে উপকৃত হয়েছে। তাই  সে নিজে তা শিক্ষা গ্রহণ করল এবং অপরকেও শিক্ষা দান করল। আর এ বৃষ্টির উদাহরণ হল সে ব্যক্তির, যে কখনো দ্বীনি জ্ঞানের দিকে লক্ষ্য করেনি এবং মহান আল্লাহ আমাকে যে হেদায়াত দিয়ে পাঠিয়েছেন তা থেকেও সে কিছু কবুল করেনি।

অনুচ্ছেদ নং ২১ঃ ইলম উঠিয়ে দেয়া ও মূর্খতা প্রকাশীত হওয়া জ্ঞানের বিদায় ও মূর্খতার আগমন রাবীআহ বলেছেন। “যার কিছু জ্ঞান আছে, তার জন্য উচিত নয় যে, সে নিজেকে ধ্বংশ করে দিবে। (অন্যকে দান না করে)।

৮০। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কেয়ামতের আলামতসমূহের মধ্যে কিছু আলামত হল-ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে, মূর্খতা প্রতিষ্ঠা পাবে। মদ বেশি বেশি পান করা হবে এবং যেনা ব্যভিচার প্রকাশ পাবে।

৮১। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, আমি তোমাদেরকে এমন এক হাদীস শুনাব, যা আমার পরে তোমাদেরকে কেউ শুনাবে না্ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, কেয়ামতের আলামতসমূহের মধ্য হতে কিছু আলামত হল এলেম কম হবে, মূর্খতা বেশি প্রকাশ পাবে, মহিলাদের সংখ্যা বেশি এবং পুরুষদের সংখ্যা কম হবে, এমনকি প্রতি পঞ্চাশ জন মহিলার জন্য একজন পুরুষ পরিচালক হবেন।

অনুচ্ছেদ নং ২২ঃ জ্ঞানের মর্যাদা।

৮২। হাদীসঃ হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, একদা আমি নিদ্রাবস্থায় স্বপ্নে দেখতে পেলাম, আমার জন্য এক পেয়ালা দুধ নিয়ে আসা হয়েছে। আমি তা হতে পান করলাম, এতে সজীবতা আমার শরীরের সর্বাঙ্গে এমনভাবে বিস্তার লাভ করেছে যা নখের কিনারা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অতঃপর বাকী দুধটুকু আমি ওমর (রাঃ)-কে প্রদান করলাম। এতদশ্রবণে সাহাবাগণ আরজ করলেন, হুযুর! আপনি এর কি ব্যাখ্যা বা তা’বীর করেছেন? বললেন, তা হলো এলেম।

অনুচ্ছেদ নং ২৩ঃ জানোয়ারের উপর অথবা অন্য কিছুর উপর চড়ে দাঁড়িয়ে ফাতাওয়া দান করা।

৮৩। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) বলেন, বিদায় হজ্জে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘মিনায়’ স্বীয় উষ্ট্রীর দন্ডায়মান হলেন, যাতে মানুষ দূর থেকে তাঁকে দেখতে এবং প্রশ্ন করতে পারেন। এ সময় এক ব্যক্তি এসে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি জানি না, তাই কোরবানীর জন্তু জবেহ করার পূর্বে মাথা মুন্ডিয়ে ফেলেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি তো জানি না,তাই মিনায় কংকর নিক্ষেপ করার পূর্বেই কোরবানীর জানোয়ার নহর করে ফেলেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখন কংকর নিক্ষেপ কর, কোন দোষ নেই। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যত প্রশ্ন করা হয়েছিল, তাতে কোন কাজ আগে করা হয়েছে অথবা পরে করা হয়েছে; বরং প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তরেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তা কর, কোন দোষ নেই।

অনুচ্ছেদ নং ২৪ঃ মাথা ও হাতের মাধ্যমে ইংগিত করা ফাতাওয়া প্রদান।

৮৪। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, বিদায় হজ্জে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়েছে। কেউ বলেছে, আমি কংকর নিক্ষেপের পূর্বে জবেহ করেছি, বর্ণনাকারী বলেন, উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতে ইশারা করে বলেছেন, কোন দোস নেই। কেউ বলেছে, আমি জবেহ করার পূর্বে মাতা মুন্ডন করেছি, উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতে ইশারা করে বলেছেন, কোন দোষ নেই।

৮৫। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রেওয়াত করেন, আস্তে আস্তে এলেম উঠিয়ে নেয়া হবে, কুসংস্কার এবং ফেতনা ফাসাদ প্রকাশ পাবে। হত্যার চর্চা বেশি হবে। তারপর মানুষ প্রশ্ন করল, ‘হরজ’ কি? তখন তিনি হাতে ইশারা করে দেখালেন। মনে হয় এর দ্বারা তিনি হত্যার উদ্দেশ্যে করেছেন।

৮৬। হাদীসঃ হযরত আসমা (রাঃ) বলেন, আমি এক সময় হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর কাছে আসলাম, তখন তিনি নামায পড়ছিলেন। অতঃপর আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, লোকদের কি অবস্থা? তিনি আসমানের দিকে ইশারা করলেন। তখন দেখতে পেলাম, সব লোকই নামাযে দাঁড়ানো। তারঃপর তিনি মুখে ‘সোবহানাল্লাহ’ বললেন। আমি পুনারায় জিজ্ঞেস করলাম, কোন আযাব গজবের নিদর্শন আছে কি? তিন মাথা দ্বারা (হাঁসূচক) ইঙ্গিত করলেন। তারপর আমিও তাদের সাথে নামাযে দাড়িয়ে গেলাম। অনেকক্ষণ একই অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকার কারণে আমার বেঁহুশী দেখা দিল। তা দূর হওয়ার পর আমি মাথায় পানি দিতে লাগলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহর হামদ ও সানা আদায় করে বললেন, যে সব কিছু আমি কখনো দেখতে পাইনি, আজ এস্থানে এ মহূর্তে আমাকে সে সবকিছুই দেখানো হয়েছে। এমনকি বেহেশত, দোযখও দোখানো হয়েছে। আর আমার কাছে ওহী করা হয়েছে, অবশ্যই কবরে তোমাদেরকে মসীহে দাজ্জালের ফেতনার মত অথবা তার অনুরুপ ফেতনা দ্বারা পরীক্ষা করা হবে, (আনাস বলেন, এ স্থলে আসমা (রাঃ) ‘মেসাল’ অথবা ‘কারীব’ কোন শব্দ বলেছেন, তাতে আমার সন্দেহ হচ্ছে)। হযরত আসমা (রাঃ) আরো বলেন, কবরে মাইয়্যেতকে ফেরেশতা প্রশ্ন করবে, এ ব্যক্তি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে তোমার কি জানা আছে? তখন ঈমানদার ব্যক্তি হলে উত্তর দিবে, ইনি হলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যিনি আমাদের কাছে বিভিন্ন মোজেযা এবং হেদায়াত সহকারে এসেছিলেন। আমরা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে ঈমান গ্রহণ করেছি। ইনি হলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন তিন বার এ কথা বলবে। অতঃপর ফেরেশতারা তাকে বলবেন, তুমি আরামের সাথে ঘুমাও। আমরা জানতাম, তুমি তাঁর প্রতি বিশ্বাসী ছিলে (আনাস বলেন, এ স্থলে হযরত আসমা (রাঃ) ’মোমেন’ না মো’কেন শব্দ বলেছেন তাতে আমার সন্দেহ রয়েছে। উভয় শব্দের অর্থ একই)।

আর যারা মোনাফেক (সন্দেহ পোষণকারী) তারা উত্তর দিবে, এ ব্যক্তি সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই। তবে আমি লোকদেরকে কিছু বলতে শুনেছি, তাই আমিও বলেছি (এ স্থলে ‘মোনাফেক’ অথবা ‘মুরতাব’ কোন শব্দ হযরত আসমা (রাঃ) বলেছেন তা রাবীর স্মরণ নেই)।

অনুচ্ছেদ নং ২৫ঃ আব্দুর কায়েস গোত্রের দূতকে ঈমানও ইলম হেফাজত করার এবং তাদের অন্যান্যদেরকে সে সম্পর্কে সংবাদ পৌছানের জন্য রাসূল পাক সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উৎসাহ প্রদান।
মালেক ইবনে হু’য়ায়রিস বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন, “তোমরা তোমাদের পরিবারবর্গের নিকট ফিরে দাও। অতঃপর তাদেরকে ইলম শিক্ষা দাও।

৮৭। হাদীসঃ হযরত আবু জামরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও লোকদের মধ্যে দোভাষীর কাজ করতাম। একদিন ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলে, তিনি বললেন, তোমরা কোন প্রতিনিধি দল? অথবা বললেন, তোমরা কোন গোত্রের? তারা বলল, ‘রাবী’আ গোত্রের। তিনি বললেন, মারহাবা। এ গোত্রের প্রতি অথবা এ প্রতিনিধি দলের প্রতি, এরা কোনুরপ অপদস্ত ও লাঞ্চিত না হয়েই এসেছে। তার বলল, ‘আমরা বহু দূর থেকে আপনার কাছে এসেছি। আর আমাদের ও আপনার মাঝে রয়েছে কাফিরদের এই মুযার গোত্রের বাস।

আমরা শাহর-ই হারাম ছাড়া আপনার কাছে আসতে সক্ষম নই। সুতরাং আমাদের এমন কিছু নির্দেশ দিন, যা অামাদের পশ্চাতে যারা রয়েছে তাদের কাছে পৌছাতে এবং তার ওসীলায় আমরা জান্নাতে দাখিল হতে পারি। তখন তিনি তাদের চারটি কাজের নির্দেশ দিলেন এবং চারটি কাজ থেকে নিষেধ করলেন। তাদের এক আল্লাহর উপর ঈমান আনার নির্দেশ দিলেন, তিনি বললেন, এক আল্লাহর উপর ঈমান আনা কিরুপে হয় জান? তারা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, তা হল এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, নামায কায়েম করা, যাকাত দেওয়া এবং রমযান-এর সিয়াম পালন করা। আর তোমরা গণীমতের মাল থেকে এক পঞ্চমাংশ দান করবে। আর তাদের নিষেধ করলেন শুকনো লাউয়ের খোল, সবুজ কলস এবং আলকাতরার পালিশকৃত পাত্র ব্যবহার করতে।

অনুচ্ছেদ নং ২৬ঃ কোনো নতুন মাসআলার জন্য সফর করা এবং স্বীয় পরিবারকে শিক্ষা দেয়া।

৮৮। হাদীসঃ হযরত ওকবা ইবনুল হারেস (রাঃ) বলেন, তিনি আবু ইহাব ইবনে আজীজ-এর কন্যা বিবি 'গনিয়াহতে বিবাহ করার পর তার কাছে এক মহিলা এসে বললেন, আমি ওকবার স্ত্রী গনিয়াকে বুকের দুগ্ধ পান করিয়েছি (যাতে তারা স্বামী-স্ত্রী দুধ ভাইবোন হয়েছেন)। এ কথা শুনে ওকবা বললেন, আমি তো জানি না আপনি আমাকে দুগ্ধ পান করিয়েছেন এবং আমাকে কখনো এ খবরও দেননি। অতঃপর ওকবা এ খটকাপূর্ণ মাসআলার সমাধান জানার জন্য সফর করে মক্কা থেকে মদীনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলেন। তাঁর কাছে এ মাসআলা উপস্থাপন করার পর তিনি বললেন, তুমি কি ভাবে তার সাথে মিশবে, অথচ বলা হচ্ছে সে তোমার বোন। অতঃপর ওকবা তাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য মহিলাকে বিবাহ করেন।

এলেম শিক্ষার জন্য পর্যায়ক্রমে আগমন করা

অনুচ্ছেদ নং ২৭ঃ পালাক্রমে জ্ঞান অর্জন করা।

৮৯। হাদীসঃ হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, আমি এবং আমার এক প্রতিবেশী-যিনি বনী উমাইয়া বিন যায়েদ গোত্রের আনসারী ছিলেন, যারা মদীনার নিকটবর্তী পূর্ব দিকের এক গ্রামে বাস করতেন। আমরা উভয়ে এলম শিক্ষার জন্য হুযুর সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে আগমন করতাম। একদিন তিনি আসতেন, একদিন আমি আসতাম। যে দিন তিনি আসতে, সে দিন আমি তাঁর কাছে খবর নেয়ার জন্য আসতাম, আজ কোন ওহী এসেছে কিনা বা অন্য কোন খবর আছে কিনা? আর যে দিন আমি আসতাম তিনিও অনুরুপ আমার কাছে খবর জানার জন্য আসতেন।

তিনি বলেন, এক সময় আমার সাথী আনসারী তার নির্ধারিত দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত হলেন (সে দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মুল মোমেনীন থেকে দূরে থাকার ঘটনার কথা শুনতে পেলেন), তিনি তাড়াতাড়ি বাড়ীতে গেলেন, ঘরের দরজা খুব জোরে নাড়া দিলেন এবং বললেন, তিনি (ওমর রাঃ) কি ঘরে আছেন? তার আগমনবার্তা শুনে আমি পেরেশান হয়ে তার কাছে ছুটে আসলাম। আমাকে দেখে তিনি বললেন, ভাই ওমর! আজ তো বিরাট এক ঘটনা ঘটে গেছে। এতদশ্রবণে আমি সাথে সাথে হযরত হাফসা (রাঃ) -এর বাড়ীতে এসে দেখতে পেলাম তিনি কাঁদছেন। আমি তার কান্না দেখে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তোমাকে তালাক দিয়েছেন? তিনি বললেন, আমি জানি না। অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলাম। আমি দাঁড়ানো অবস্থায়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাস করলাম, আপনি কি আপনার বিবিদেরকে তালাক দিয়েছেন? বললেন, না। আমি উক্ত আনসারীর খবরে আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললাম 'আল্লাহু আকবার'।

অনুচ্ছেদ নং ২৮ঃ আপত্তিকর কোনো কিছু দেখলে উপদেশ ও শিক্ষাদানের সময় রাগান্বিত হওয়া।

৯০। হাদীসঃ হযরত আবু মাসউদুল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরাবারে উপস্থি হয়ে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক ব্যক্তি যে ভাবে নামায লম্বা করছেন, তাতে নামাযে শরীক হওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব হচ্ছে। এতদশ্রবণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নসীহত করার জন্য মসজিদে দাঁড়ালেন। রাবী বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কোন দিন ওয়াজ নসীহতে আজকের মত এত অধিক রাগান্বিত হতে দেখিনি। তিনি আমাদেরকে রাগতস্বরে বললেন, হে সাহাবাগণ! তোমরা লোকদেরকে নামাযের জামাআত থেকে দূরে রাখতে চাচ্ছ কেন? যে লোকদেরকে নিয়ে জামাআতে নামায আদায় করবে, সে যেন নামায দীর্ঘায়িত না করে; বরং ছোট ছোট কেরাআতে নামায আদায় করে। যেহতেু জামাআতে শরীকদের মধ্যে অসুস্থ, দূর্বল এবং বিভিন্ন ধরনের লোক রয়েছে।

৯১। হাদীসঃ হযরত যায়েদ খালেদ আল জুহানী (রাঃ) হাতে বর্ণিত, একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হারানো বস্তু সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন, তা পাওয়ার পর কি করা হবে? তিনি বললেন, তার মুখবন্ধ-লেবেল বা মলাট ভালভাবে চিনে লও। তারপর এক বছর পর্যন্ত লোকদেরকে জানাতে থাক। যদি এর মধ্যে কেউ না আসে তা হলে তা দ্বারা তুমি উপকৃত হও। যদি এর পরে কেউ আসে, তবে তুমি অনুরুপ বস্তু তাকে দিয়ে দাও। প্রশ্নকরী পুনারায় বললেন, হারানো উট সম্পর্কে কি করতে হবে? এতদশ্রবণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব রাগান্বিত হলেন। এমন কি তার চেহারা মোবারকের উপরিভাগ অথবা মুখমন্ডল লাল হয়ে গেল এবং বললেন, এতে তোমার কি? উটের সাথে খাদ্য পানীয় রয়েছে। সেটি পানির ঘাট নিচে এবং বৃক্ষ থেকে খেতে পারবে, সেটিকে তার অবস্থায় ছেড়ে দাও। মালিক অবশ্যই তা খোজ করে নিবে। অতঃপর সে ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন, হারানো বকরীর কি হুকুম? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা তোমার অথবা তোমার ভাইয়ের অথবা চিতা বাঘের জন্যে। অর্থাৎ হারানো বকরী পাওয়া গেলে তা ব্যবহার করা যাবে।

৯২। হাদীসঃ হযরত আবু মূসা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এমন কিছু বস্তু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, যা তাঁর কাছে অপছন্দনীয়। এতে তিনি যখন খুব রাগান্বিত হয়ে গেলেন। তখন সাহাবাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, এখন তোমরা আমাকে যা ইচ্ছা তাই প্রশ্ন করতে পার। এমন সময় এক ব্যক্তি বললেন, হুযুর। আমার পিতা কে? উত্তরে তিনি বললেন, তোমার পিতা হোযাফা। তারপর অন্য এক ব্যক্তি দাঁড়েয়ে প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতা কে? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার পিতা শায়বার গোলাম 'সালেম'। অতঃপর হযরত ওমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখমন্ডলের অবস্থা দেখে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা মহান আল্লাহর কাছে তওবা করছি।

অনুচ্ছেদ নং ২৯ঃ ইমাম ও মুহাদ্দীসের নিকট জানু পেতে বসা।

৯৩। হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফা দাঁড়িয়ে বললেন, আমার পিতা কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা হুযাফা । এরপর তিনি বারবার বলতে লাগলেন, তোমরা আমার কাছে প্রশ্ন কর। উমর (রাঃ) তখন হাঁটু গেড়ে বসে বললেন, আমরা আল্লাকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নবী হিসেবে সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করে নিয়েছি। তিনি এ কথা তিনবার বললেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব হলেন।

অনুচ্ছেদ নং ৩০ঃ কথা তিনবার বলা, যাতে বুঝতে পারা। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। "জেনে রাখো (কবীরাহ গুনাহ) হচ্ছে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। একথা তিনবার বলেছেন।
ইবনে উমর (রাঃ) বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বিদায় হজ্জ্বে) তিন বার বলেন আমি কি পৌছিয়ে দিয়েছি?

৯৪। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম করতেন, তিনবার সালাম করতেন। আর যখন কোন কথা বলতেন তখন তা তিনবার বলতেন।

৯৫। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভ্যাস ছিল, যখন তিনি কোন কথা বলতেন তখন তিন তিন বার করে বলতেন, যাতে শ্রবণকারী তা বুঝতে পারে। আর যখন কোন কওমের কাছে আসতেন তখন তাদেরকে তিন তিন বার করে সালাম বলতেন (যদি প্রথম বারে উত্তর না দেয়া হত তখন এরুপ করতেন। অন্যথায় একবারই বলতেন)।

৯৬। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, কোন এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের থেকে পেছনে রয়ে গেলেন। ইতিমধ্যে আসরের নামাযের ওয়াক্ত হলে আমরা নামায আদায়ের জন্য অজু করতে লাগলাম। তাড়াহুড়া করার কারণে আমাদের পাগুলো হালকাভাবে ধৌত করছিলাম। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেছনে থেকে দুবার অথবা তিন বার উচ্চ স্বরে বললেন, খবরদার! পায়ের গোড়ালিগুলোর জন্য দোযখের আগুনের শাস্তি নেমে না আসুক (পা ভালভাবে ধৌত করার জন্য এরুপ সাবধান করা হয়েছে, যাতে কোন অংশ শুকনা না থাকে)।

অনুচ্ছেদ নং ৩১ঃ স্বীয় দাসী ও পরিবারবর্গকে শিক্ষা দেয়া।

৯৭। হাদীসঃ হযরত আবু বুরদা (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ইরশাদ করেছেন, তিন প্রকারের ব্যক্তির জন্য দু'টি করে নেকী রয়েছে। (১) যে আহলে কিতাব স্বীয় নবীর উপর, তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ঈমান এনেছে। (২) যে ভৃত্য আল্লাহর হক এবং সাথে সাথে তার মনিবের হকও আদায় করে। (৩) এমন ব্যক্তি, যার এমন এক বান্দী ছিল, যার সাথে সে সঙ্গম করত। অতঃপর সে তাকে উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছে, শরীঅাতের মাসআলা-মাসায়েলও উত্তমভাবে শিক্ষা দিয়ে তাকে আযাদ করে তারপর বিবাহ করে রেখেছে, তার জন্যেও দুটি নেকী রয়েছে (রাবী আমের বলেন, আমি তোমাকে এ হাদীসখানা বিনামূল্যেই প্রদান করলাম। এর চাইতে আরো অনেক ছোট হাদীসের জন্য লোকেরা মদীনা পর্যন্ত সফর করতেন।

অনুচ্ছেদ নং ৩২ঃ ইমামের পক্ষ থেকে মহিলাদেরকে উপদেশ ও শিক্ষাদান।

৯৮। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত বেলাল (রাঃ)-কে সাথে নিয়ে বের হন। তিনি খেয়াল করলেন, মহিলাদেরকে তো আমি আমার কথা শুনাতে পারিনি। তাই তিনি মহিলাদের কাছে ওয়াজ নসীহত করলেন। তাদেরকে সদকা করার আদেশ করলেন। ওয়াজ শুনে মহিলাগণ তাদের নাক ও কানের বালী এবং আংটিগুলো সদকা হিসেবে প্রদান করতে আরম্ভ করলেন। অতঃপর হযরত বেলাল সেগুলো চাদরের এক কিনারায় জমা করতে লাগলেন (এতে বুঝা যায় ওয়াজ নসীহত শ্রবণ করার পর কিছু দান করা সওয়াবের কাজ)।

৯৯। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করা হল, কেয়ামতে আপনার সাফাআত দ্বারা কোন ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা সৌভাগ্যবান হবেন? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে আবু হোরায়রা! হাদীস শিক্ষার প্রতি তোমার যে আগ্রহ আমি দেখতে পেয়েছি; এতে আমার ধারণা ছিল, তোমার পূর্বে কেউ আমাকে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করবে না। জেনে রাখো! কেয়ামতে আমার শাফাআত দ্বারা সর্বাপেক্ষা সৌভাগ্যবান ব্যক্তি সেই হবে, যে মনে প্রাণে এখলাসের সাথে বলবে। ........ (অর্থাৎ ঈমানদার ব্যক্তিই সর্বাপেক্ষা লাভবান হবে)।

অনুচ্ছেদ নং ৩৪ঃ দ্বীনি ইলম কিভাবে উঠিয়ে নেয়া হবে?
আবু বকর ইবনে হাযম এর কাছে উমর ইবনে আবউল আযীয লিখেছেন। "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
১০০। হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম- কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের থেকে 'এলেম' সমূলে উঠিয়ে নিবেন না; বরং আলেমদের মৃত্যু দ্বারা এলম উঠিয়ে নেয়া হবে। যখন দুনিয়াতে কোন আলেম বাকী থাকবে না, তখন লোকেরা মূর্খদেরকে তাদের সর্বদার বানাবে। যখন তাদেরকে কোন মাস্আলা জিজ্ঞাসা করা হবে তখন এলম ছাড়া ফতোয়া প্রদান করবে, যাতে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অন্যকেও পথভ্রষ্ট করবে (অর্থাৎ কোন বিষয়ে না জেনে শুনে ফতোয়া প্রদান করা ঠিক নয়। এতে এলম বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে)।
১০১। হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সময় মুসলিম মহিলাগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলা্ইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরজ করলেন, পুরুষগণ আপনার নিকট আসার ব্যাপারে আমাদের উপর বিজয়ী হয়ে গেছেন। তাই আমাদের এলেম শিক্ষার জন্য আপনার পক্ষ হতে ভিন্ন কোন দিন নির্ধারিত করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলা্ইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য একটি দিনের ওয়াদা করলেন এবং নির্দিষ্ট দিনে তাদের সাক্ষাতে গেলেন। তাদেরকে কিছু নসীহত করলেন এবং কিছু কাজের আদেশ দিলেন। সে দিন তিনি তাদেরকে যা বলেছিলেন; তন্মধ্যে একটি উপদেশ ছিল, তোমাদের মধ্যে কোন মহিলার যদি তিনটি সন্তানই শৈশবকালে মারা যায়, তা হলে উক্ত সন্তানরা তার জন্য দোযখের আযাব থেকে ঢাল স্বরুপ হবে। এক মহিলা প্রশ্ন করলেন, যদি দু'সন্তান মারা যায়? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলা্ইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দু'জন হলেও (মহিলাদেরকে শিক্ষার উদ্দেশ্যে পৃথক ব্যবস্থা করা শরীয়তসম্মত)।
১০২। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবী মুলাইকা বলেন, উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর অভ্যাস ছিল, তিনি কোন কিছু শুনলে তা বুঝে না আসা পর্যন্ত পুনরায় জিজ্ঞেস করতেন। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলা্ইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার হিসাব নেয়া হবে তাকে অবশ্যই শাস্তি প্রদান করা হবে। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ কি বলেননি-"তাদের খুব সাধারণ হিসাব নেয়া হবে।" উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলা্ইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বাক্য তো ক্ষমা হিসেবে বলা হয়েছে, কিন্তু যার কঠিন হিসাব নেয়া হবে সে অবশ্যই ধ্বংস হবে।
১০৩। হাদীসঃ মদীনার শাসনকর্তা আমর ইবনে সাঈদ যখন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যোবায়ের (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে পবিত্র মক্কা নগরীতে সৈন্য প্রেরণ করছিলেন, তখন আবু শুরাইহ (রাঃ) তাকে বললেন, হে আমর! যদি অনুমতি দেন তা হলে আমি আপনাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এমন একখানা হাদীস শুনাব, যা তিনি মক্কা বিজয়ের পরের দিন প্রাতঃকালে ইরশাদ করেছিলেন। যে হাদীসখানা আমার কর্ণদ্বয় শুনেছে, অন্তর তা স্মরণ রেখেছে এবং আমার চক্ষুদ্বয় তাঁকে বলতে দেখেছে।
সেদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করার পর ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ এ পবিত্র মক্কা নগরীকে হারাম করেছেন, কিন্তু লোকেরা তা হারাম করেনি। সুতরাং যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ এবং শেষ বিচার দিবসের প্রতি ঈমান রাখে, তার জন্য জায়েয নয় তথায় কোন রক্তপাত করা, কোন বৃক্ষ কর্তন করা। যদি কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুদ্ধের কারণে সুযোগ গ্রহণ করতে চায়; তবে তোমরা তাকে বলে দিও, মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলের জন্য অনুমতি দিয়েছিলেন। অতঃপর আজ তার হুরমত গতকাল্যের ন্যায় ফিরে এসেছে। উপস্থিত ব্যক্তিদের উচিত তারা যেন আমার এ কথা অনুপস্থিতদের কাছে পৌছে দেয়। রাবী আবু শুরাইহ-এর কাছে প্রশ্ন করা হল, তারপর আমর ইবনে সাঈদ কি বলেছেন? তিনি বলেন, আমর বলেছিল, যে আবু শুরাইহ! এ প্রসঙ্গে আমি তোমার চাইতে বেশি পরিজ্ঞাত। যে ব্যক্তি অন্যকে খুন করবে বা চুরি করে পালিয়ে মক্কায় আশ্রয় নেবে, এ ধরনের নাফরমানকে মক্কা রক্ষা করে না।
১০৪। হাদীসঃ হযরত আবু বাকরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, তিনি বলেছেন, তোমাদের জ্ঞান, তোমাদের মাল(মুহাম্মদ ইবনে সিরীন বলেন, আমার ধারণা তিনি আরো বলেছেন) তোমাদের ইজ্জত সম্মান, তোমাদের উপর এমনভাবে হারাম করা হয়েছে, যেমন আজকের এ দিন, এ মাস তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে। খবরদার! তোমাদের উপস্থিতগণ অনুপস্থিতদের কাছে আমার এ খবর পৌছে দিবে। 'মুহাম্মদ ইবনে সিরীন (রঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য বলেছেন। সে সাহাবাগণ! তোমরা মনোযোগ সহকারে শুন! আমি কি তোমাদের কাছে আল্লাহর হুকুম আহকাম পৌছিয়েছি? দু'বার তিনি এ কথা বলেন।
১০৫। হাদীসঃ হযরত রবঈদ ইবনে হেরাস (রাঃ) বলেন, আমি হযরত আলী (রাঃ) বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমার প্রতি মিথ্যারোপ করো না। যে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে সে দোযখে প্রবেশ করবে।
১০৬। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যোবায়র (রাঃ) বলেন, আমি আমার পিতার কাছে জানতে চাইলাম, আব্বা! আপনাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এমনভাবে হাদীস বর্ণনা করতে দেখছি না, যেমন অমুক অমুক বর্ণনা করে থাকেন। উত্তরে তিনি বললেন, জেনে রেখো, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পৃথক হইনি; বরং আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, যে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
১০৭। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, তোমাদের কাছে বেশি বেশি হাদীস বর্ণনা থেকে একটি কথাই আমাকে ফিরিয়ে রাখছে। তা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
১০৮। হাদীসঃ হযরত সালাম ইবনুল আকওয়া (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আমি যা বলিনি কেউ যদি এমন কথা আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে, তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
১০৯। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা আমার নামে নামকরণ করো, কিন্তু আমার উপনামে উপনামকরণ করো না। যে আমাকে স্বপ্নযোগে দেখতে পেল সে প্রকৃতই আমাকে দেখতে পেল। কারণ শয়তান কখনো আমার সুরত ধরতে পারে না। যে ইচ্ছাকৃত আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
১১০। হাদীসঃ হযরত আবু হোযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি একদা হযরত আলী (রাঃ)-কে বললাম, আপনার কাছে কি কোন কিতাব (আহলে বায়তের জন্য লিখিত কোন বিশেষ ফরমান) আছে? উত্তরে তিনি বললেন, না; তবে আল্লাহর কিতাব আছে। অথবা এমন জ্ঞান যা কোন মুসলমান ব্যক্তিকে দেয়া হয়। অথবা যা এ সহীফাতে আছে। আমি বললাম, এ সহীফাতে কি লেখা আছে? তিনি বললেন, দিয়াতের আহকাম, কয়েদীদেরকে ছাড়াবার আহকাম এবং মুসলমানকে কোন কাফেরের পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না, এ সমস্ত আহকাম লেখা আছে।
১১১। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, মক্কা বিজয়ের সময় 'খোযাআ' গোত্রের লোকেরা 'বনী লাইস'-এর এক ব্যক্তিকে পূর্ব হত্যার দায়ে হত্যা করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ সংবাদ দেয়া হলে তিনি স্বীয় উটের উপর আরোহণ করে খোতবা দিয়ে বললেন, আল্লাহ তা'আলা মক্কা থেকে যুদ্ধবিগ্রহ (অথবা হাতী) বন্ধ করে দিয়েছেন (ইমাম বোখারী বলেন, প্রত্যেক বর্ণনাকারীই এ স্থলে সন্দেহজনক শব্দ দ্বারা বর্ণনা করেছেন। আবু নোআইম এ স্থলে হত্যা বা হাতী বর্ণনা করেছেন, অন্যরা শুধু হাতী বলেছেন)।
মক্কা বাসীদের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মোমেনদেরকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল, মক্কাকে আমার পূর্বে কারো জন্য হালাল করা হয়নি। আমার পরেও হালাল করা হবে না। আর আমার জন্যও কেবল দিনের কিছু অংশে হালাল করা হয়েছিল। হুশিয়ার! এখন থেকে মক্কাকে পুনরায় হারাম করা হয়েছে। মক্কার কোন কাঁটা, কোন বৃক্ষ কর্তন করা যাবে না, পথিমধ্যে পড়ে থাকা কোন বস্তু উঠিয়ে নেয়া যাবে না। তবে যার তা প্রচার করার ইচ্ছা সে উঠিয়ে নিতে পারে। আর যাকে হত্যা করা হবে তার ওয়ারিসদের দু'টি পন্থার যে কোন একটি পন্থা গ্রহণ করা উত্তম। হয়ত দিয়াত গ্রহণ করবে, অন্যথায় হত্যাকারীকে কেসাস্ হিসাবে হত্যা করা হবে।
অতঃপর ইয়ামেনবাসী এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে লেখিয়ে দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, অমুকের এটা লেখে দাও। তারপর কোরায়শ গ্রোত্রের এক ব্যক্তি বললেন, হুযুর 'ইযখির' ঘাস কাটার অনুমতি দিন। কারণ আমরা তা আমাদের ঘরে এবং কবরে ব্যবহার করে থাকি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ ইযখির। অর্থাৎ ইযখির ঘাস কাটা যাবে।
১১২। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তাঁর সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে আমার চেয়ে আর কেউ বেশি হাদীস বর্ণনাকারী নেই। তবে আবদুল্লাহ বিন আমার (রাঃ) থেকে তা হতে পারে। কারণ তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসমূহ লেখে রাখতেন, আর আমি লেখে রাখতাম না।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে
১১৩। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তেকালের পূর্বে যখন তাঁর অসুস্থতা বেশি হয়ে গেল, তখন বললেন, আমার কাছে লেখার সামগ্রী লও। আমি তোমাদেরকে এমন কথা লেখিয়ে দিব যার পরে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। এতদশ্রবণে হযরত ওমর (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসুস্থতা প্রাধান্য পেয়েছে। আর আমাদের কাছে আল্লাহর কিতাব আছে, তাই যথেষ্ট। সাহাবায়ে কেরামের মাঝে এ ব্যাপারে মতপার্থক্য দেখা দিল। এমনকি তাঁদের কথা কাটাকাটির কারণে আওয়াজ বেড়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের অবস্থা দেখে বললেন, তোমরা এ স্থান থেকে চলে যাও। আমার কাছে তোমাদের ঝগড়া করা উচিত নয়। তখন আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ কথা বলতে বলতে বের হলেন। মসিবত, বড় মসিবত, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর লেখার ইচ্ছার মধ্যে বাধা সৃষ্টি করেছে।
১১৪। হাদীসঃ হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক রাত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে বললেন, সোবহানাল্লাহ! আজ রাতে কত ফেতনা (বিপদাপদ) অবতীর্ণ করা হল, কত ভাণ্ডার খুলে দেয়া হল। কক্ষবাসীদেরকে জাগিয়ে দাও। এরুপ অনেক মহিলা আছে যারা দুনিয়াতে বেশি বেশি মূল্যবান কাপড় দ্বারা সতর ঢেকে রাখে। অথচ স্বীয় অন্যায়ের কারণে কেয়ামতে তারা উলঙ্গ থাকবে।
১১৫। হাদীসঃ হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ জীবনে এক রাতে আমাদেরকে নিয়ে এশার নামায আদায় করেন। সালাম ফিরাবার পর তিনি দাঁড়িয়ে বললেন, তোমরা কি এ রাত দেখতে পাচ্ছ না? এ রাতের একশত বছরের মাথায় বর্তমানে যারা দুনিয়াতে আছে, তারা কেউ থাকবে না। সবাই মরে যাবে। তারপর নতুন এক দল আসবে। কেয়ামত পর্যন্ত এ অবস্থাই চলতে থাকবে।
১১৬। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা আমি আমার খালা হযরত মায়মুনা (রাঃ)- এর ঘরে রাত যাপন করেছিলাম (যিনি হারেসের মেয়ে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিবি)। ঐ রাত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও অামার খালা আম্মার ঘরে রাত যাপন করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে এশার নামায আদায় শেষে ঘরে এসে চার রাকআত নামায আদায় কে নিদ্রা গেলেন। তারপর ঘুম থেকে উঠে বললেন, ছোট বাচ্চাটি কি ঘুমিয়ে গেছে? অথবা এরুপ কোন বাক্য বললেন, তারপর অযু শেষে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন। রাবী বলেন, আমিও অযু করে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তাঁর বাম দিকে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি আমাকে বাম দিক থেকে ডান দিকে নিয়ে আসলেন, তারপর পাঁচ রাকআত পরে আরো দু'রাকআত নামায আদায় করলেন। অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়ে পড়লেন। এমন কি আমি তাঁর নাকের ডাক শুনতে পেলাম। কিছুক্ষণ পর তিনি ফজর নামাযের জন্য বের হয়ে মসজিদে চলে গেলেন।
১১৭। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, লোকেরা বলে, আবু হোরায়রা বেশি বেশি হাদীস রেওয়ায়াত করে। যদি পবিত্র কোরআনে দু'খানা আয়াত অবতীর্ণ না হত, তা হলে আমি কোন হাদীস বর্ণনা করতাম না। তারপর তিনি কোরআনের আয়াত তেলাওয়াত করলেন। আমি যে সব সুষ্পষ্ট যুক্তি ও পথনির্দেশ নাযিল করেছি, তা পবিত্র কোরআনে বিশদ বর্ণনা করার পরও যারা সেগুলো গোপন রাখে, তাদেরকেই আল্লাহ লা;নত করেন এবং লা;নতকারীগণও লা'নত করে। কিন্তু যারা তওবা করে আত্মসংশোধন করে এবং সব কথা প্রকাশ করে দেয়, আমি তাদের তওবা কবুল করে থাকি। যেহেতু আমি তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।
তিনি আরো বলেন, অবস্থা এরুপ ছিল যে, আমাদের মুহাজির ভাইগণ বাজারে বেচা কেনায় রত থাকতেন। আর আনসার ভাইগণ সর্বদা ক্ষেত খামারে ব্যস্ত থাকতেন। আর আবু হোরায়রা (রাঃ) আত্মতৃপ্তি সহকারে সর্বদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাথে থাকতেন। তিনি এমন স্থানে উপস্থিত হতেন, যথায় অন্যরা উপস্থিত হতে পারতেন না এবং তিনি এমন এমন হাদীস হেফজ করেছেন যা অন্যদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই তিনি বেশি বেশি হাদীস রেওয়ায়েত করতে সক্ষম হয়েছেন।
১১৮। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আপনার কাছ থেকে অনেক অনেক হাদীস শ্রবণ করি, কিন্তু প্রায়ই ভুলে যাই। এতদশ্রবণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার চাদর বিছিয়ে দাও। আমি তাঁর কথানুসারে চাদর বিছিয়ে দিলাম। অতঃপর তিনি উভয় হস্ত দ্বারা এক মুষ্টি কি যেন আমার কপড়ে রাখলেন। তারপর বললেন, এটা (তোমার বক্ষের সাথে) জড়িয়ে নাও। আমি কথানুসারে আমার বক্ষের সাথে চাদরখানা জড়িয়ে নিলাম। এরপর থেকে আমি আর কোন দিন কিছু ভুলিনি।
১১৯। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দু'ডোল এলম হেফজ করেছি। তার মধ্যে থেকে এক ডোল আমি তোমাদের কাছে সাধারণভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি, কিন্তু যদি আমি দ্বিতীয় ডোল এলেম বর্ণনা করি, তা হলে আমার এ (হলকুম) কণ্ঠনালী কেটে দেয়া হবে। অর্থাৎ আমাকে হত্যা করা হবে।
১২০। হাদীসঃ হযরত জরীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত; বিদায় হজ্জের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকদেরকে চুপ করাও। তারপর তিনি বললেন, তোমরা আমার ইন্তেকালের পর কুফরীর দিকে ফিরে যেয়ো না, যাতে একে অপরকে হত্যা করবে।
১২১। হাদীসঃ
১২২। হাদীসঃ হযরত আবু মূসা আশ্আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে প্রশ্ন করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ কাকে বলে? যেহেতু আমাদের কেউ যুদ্ধ করেন রাগের বশবর্তী হয়ে। আবার কেউ যুদ্ধ করেন আত্মমর্যাদাবোধ প্রাকাশার্থে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি মাথা উঠিয়ে দেখলেন। আবু মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতি মাথা উঠিয়ে দেখার কারণ হল, সে দণ্ডায়মান ছিল। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি এ কারণে জেহাদ করবে যে, আল্লাহর কালেমা উন্নত হোক, তার জেহাদই হবে 'জেহাদ ফী সাবীলিল্লাহ'।
১২৩। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি মিনায় কংকর নিক্ষেপ করার সময় নবী কারীম সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি, তাঁকে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করছেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি কংকর নিক্ষেপ করার পূর্বে নহর (কোরবানী) করে ফেলেছি। উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন; এখন কংকর নিক্ষেপ কর, কোন দোষ নেই। অপর এক ব্যক্তি প্রশ্ন করছেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি; নহর করার পূর্বেই মাথা মুণ্ডিয়ে ফেলেছি। উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখন কোরবানী কর; কোন দোষ নেই। এমনিভাবে হুযুরকে সেদিন কোন প্রশ্ন করা হয়নি বরং হয়ত আগে করা হয়েছে অথবা পরে করা হয়েছে, প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তরেই তিনি বলেছেন, তা তুমি কর, কোন দোষ নেই।
১২৪। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি একদা হুযুর সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মদীনার অনাবাদী এলাকায় যাচ্ছিলাম। তাঁর হাতে ছিল খেজুরের একটি কাষ্ঠখণ্ড, যার উপর তিনি ভর করতেন। এক সময় তিনি ইহুদীদের কিছু লোকের সম্মুখ দিয়ে যাচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেয়ে তারা একে অপরকে বলতে লাগল, তাঁকে (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামরুহ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হোক। আবার কেউ বলল, তাঁকে কোন প্রশ্নই করো না। হতে পারে তিনি এমন কথা বলবেন যা তোমাদের নিকট অপছন্দনীয় হবে, কিন্তু অপর একজন বলল, আমি অবশ্যই তাঁকে প্রশ্ন করব। তারপর সে বলল, হে আবুল কাসেম রুহ কি জিনিস? এ প্রশ্নে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবস্থা দেখে বুঝতে পারলাম, নিশ্চয়ই তাঁর উপর ওহী অবতীর্ণ হচ্ছে। তাই আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঐ অবস্থা কেটে গেল, তখন তিনি কোরআনের এ আয়াত পাঠ করলেন-
অর্থঃ ওরা আপনাকে রুহ সম্পর্কে প্রশ্ন করছে। আপনি তাদেরকে বলে দিন, 'রুহ' আমার রবের একটি নির্দেশ মাত্র। আর তোমাদেরকে সামান্য এলম-ই প্রদান করা হয়েছে।
১২৫। হাদীসঃ হযরত আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদিন আবদুল্লাহ ইবনে যোবায়র (রাঃ) আমাকে বললেন, হযরত আয়েশা (রাঃ) তোমাদের কাছে অনেক অনেক গোপন কথা বর্ণনা করেছেন। সুতরাং পবিত্র কা'বা সম্পর্কে তিনি তোমার কাছে কি কোন হাদীস বর্ণনা করেছেন? তখন আমি বললাম, তিনি আমাকে কা'বা সম্পর্কে বলেছেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, হে আয়েশা! তোমার সম্প্রদায়ের লোকদের যমানা যদি নতুন না হত (ইবনে যোবায়র (রাঃ) এর ব্যাখ্যায় বলেন, তাদের ইসলাম গ্রহণের যমানা যদি নতুন না হত), তা হলে আমি কা'বার বর্তমান নির্মাণ ভেঙ্গে তার দু'টি দরজা বানিয়ে দিতাম। এক দরজা দিয়ে মানুষ প্রবেশ করবে এবং অপর দরজা দিয়ে বের হবে। সুতরাং আবদুল্লাহ ইবনে যোবায়র (রাঃ) সেভাবেই খানায়ে কাবা তৈরি করেছিলেন।
১২৬। হাদীসঃ  আবু তোফায়েল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত আলী (রাঃ) বলেন, 'মানুষের কাছে সেই ধরনের কথা বল, যা তারা বুঝতে পারে। তোমরা কি পছন্দ কর যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি মিথ্যা আরেপা করা হোক?

১২৭। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের উপর আরোহিত ছিলেন। হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) তাঁর সাথে হাওদার পেছনে উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি হযরত মুআয (রাঃ)-কে ডেকে বললেন, হে মুআয ইবনে জাবাল! মাআয উত্তর দিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি উপস্থিত, আপনার আনুগত্যের জন্য হাজির। তারপরও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে মুআয! মুআয (রাঃ)ও অনুরুপ উত্তর দিলেন। তিন তিন বার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে তাঁকে সম্বোধন করেন। হযরত মুআয (রাঃ)ও প্রত্যেক বারই উত্তর দেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোন ব্যক্তি যদি খালেস দিলে এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, "আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই এবং হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল", তা হলে আল্লাহ তার উপর দোযখের আগুন হারাম করে দিবেন। হযরত মুআয (রাঃ) আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি লোকদেরকে এ কথা বলে দেব? তা হলে তারা শুভ সংবাদ গ্রহণ করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তুমি তাদেরকে এ কথা বলে দাও, তা হলে তারা এর উপরই ভরসা করবে(আমল ছেড়ে দিবে)। অতঃপর হযরত মুআয (রাঃ) ইন্তেকালের পূর্বে নিজেকে এলম গোপন করার গুনাহ থেকে বাঁচাবার জন্যে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এ হাদীস বর্ণনা করনে।
১২৮। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমার কাছে উল্লেখ করা হয়েছে, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মুআয (রাঃ)-কে বলেছেন, যে মৃত্যুর মাধ্যমে এ অবস্থায় আল্লাহর সাক্ষাৎ করবে যে, সে আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করে না, সে অবশ্যই বেহেশতী হবে। অতঃপর মুআয (রাঃ) বললেন, আমি কি লোকদেরকে এ শুভ সংবাদ দেব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, তা হলে মানুষ এর উপরই ভরসা করবে (অবশ্য পরে এ খবর দেয়া হয়েছে)।
১২৯। হাদীসঃ হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা আনাস (রাঃ)-এর মাতা উম্মে সোলায়েম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে উপস্থি হযে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! মহান আল্লাহ হক কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন না। তাই আমার প্রশ্ন 'স্বপ্নদোষ' দেখা দিলে মহিলাদের গোসল করতে হবে কিনা? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, যখন সে পানি (বীর্য)  দেখতে পায়। এত শ্রবণে উম্মে সালামাহ (রাঃ) নিজের মুখ ঢেকে বললেন, মহিলাদেরও কি স্বপ্নদোষ হয়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। তোমার ডান হাতে ধুলায় মলিন হোক। মহিলাদের স্বপ্নদোষ না হলে কিভাবে সন্তান তাদের অনুরুপ হয়ে থাকে?
১৩০। হাদীসঃ হযরত ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, গাছের মধ্যে এমন এক গাছ আছে যার পাতা জরে পড়ে না এবং তা হল মুসলিমের দৃষ্টান্ত। তোমরা আমাকে বল তো সেটা কোন গাছ? তখন লোকজনের খেয়াল জঙ্গলের গাছপালার প্রতি গেল। আর আমার মনে হতে লাগল যে, তা হল খেজুর গাছ। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, 'কিন্তু আমি লজ্জাবোধ করলাম। সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) বললেন, 'ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনিই আমাদের তা বলে দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হল খেজুর গাছ। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, 'অতপর আমি আমার পিতাকে আমার মনে যা এসেছিল তা বললাম। তিনি বললেন, 'তুমি তখন তা বলে দিলে অমুক অমুক জিনিস লাভ করার চাইতে আমি বেশি খুশি হতাম।
১৩১। হাদীসঃ হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমার মযী' অধিক মাত্রায় ছিল। তাই এ মাস্আলা সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য আমি এক সময় হযরত মেকদাদ (রাঃ)-কে আদেশ করলাম তিনি যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করেন। তাই হযরত মেকদাদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে 'মযীর' মাস্আলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, মযী নির্গত হলে অযু করতে হবে। (পুরুষদের খাহেশ বেড়ে গেল প্রথমতঃ পানির ন্যায় যে বীর্য বের হয় তাকে 'মযী' আর স্ত্রীর সাথে মিলনকালে যে বীর্য বের হয় তাকে 'মনি' বলে।)
১৩২। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা জনৈক ব্যক্তি মসজিদে নববীতে দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদেরকে কোথা হতে এহরাম বাঁধার জন্য আদেশ করছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মদীনাবাসী 'যুল-হোলাইফা' হতে আর শাম বাসী 'জুহফা' হতে নজদবাসী ক্বারন' থেকে এহরাম বাঁধবে। ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, সাহাবায়ে কেরামের ধারণা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, ইয়ামানবাসী 'ইয়ালামলাম' থেকে এহরাম বাঁধবে।
১৩৩। হাদীসঃ হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রেওয়ায়াত করেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করলেন, এহরামকারী কি কাপড় পরিধান করবে? তিনি বললেন, এহরামকারী পরিধান করতে পারবে না জামা, পায়জামা, পাগড়ী, বুরনুস-অর্থাৎ সেলাইকৃত কাপড় এবং এমন কাপড় যা 'ওয়ারস' বা জাফরান দ্বারা রং করা হয়েছে। আর এহরামকারীর নিকট জুতা না থাকলে সে মোজা পরিধান করবে, কিন্তু তা টাখনুর নীচে থাকতে হবে।

Related Posts:

  • The battlefield of the Prophet (s:) । নবী করীম (সাঃ)-এর যুদ্ধবিগ্রহ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে নবী করীম (সাঃ)-এর যুদ্ধবিগ্রহ ৩৬৮৭। হাদীসঃ হযরত আবু ইসহাক (রঃ) থেকে … Read More
  • Behavior । আদব আখলাক بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ  পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে আদব আখলাক ৫৫৮৩। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন,… Read More
  • Muhammad (s:) and Companions Status । মুহাম্মাদ (সাঃ) ও সাহাবীদের মর্যাদা بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ  পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের মর্যাদ… Read More
  • Tafsir । তাফসীর بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ  পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে তাফসীর ৪১৫১। হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ ইবনুল মুআল্লা (রাঃ) থেকে বর্… Read More
  • Clothes । পোশাক-পরিচ্ছদ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ  পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে পোশাক-পরিচ্ছদ ৫৪০৪। হাদীসঃ হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্ল… Read More

0 comments:

Post a Comment

Thanks for your comments.