بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে
ওহীর সূচনা পর্ব
Introduction of Wahi
অর্থঃ আমি আপনার নিকট ওহী প্রেরণ করেছি যেমন নূহ (আঃ) ও তাঁর পরবর্তী নবীগণের নিকট প্রেরণ করেছিলাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কিভাবে প্রথম ওহীর অাগমন ঘটে?
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
অর্থঃ আমি আপনার নিকট ওহী প্রেরণ করেছি যেমন নূহ (আঃ) ও তাঁর পরবর্তী নবীগণের নিকট প্রেরণ করেছিলাম।
নিয়াতের বর্ণনা
Description intentions
১। হাদীসঃ হযরত আলকামা ইবনে ওয়াক্কাস আল লাইসী (র:) বলেন, আমি হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা:) কে, একদা মসজিদে নববীর মিম্বরে দাড়িয়ে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইরশাদ করতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, " মানুষের সমুদয় কাজ নিশ্চিতভাবে তার নিয়ত অনুসারেই হয়ে থাকে। আর মানুষ যা নিয়ত করে তার তাই হাসিল হয়। সুতরাং যার হিজরত দুনিয়ার কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য হয়, তা পেয়ে থাকে। আর যদি কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে হিজরত করা হয়, তা হলেও তার হিজরত সে অনুসারেই হয়ে থাকে। (অর্থাৎ নিয়ত অনুযায়ী আমলের ফলাফরল নির্ধারণ হয়ে থাকে)
1. Hadisah
Abu Alqama bin Waqqas al-laisi (R :) I Hazrat Umar bin Al-Khattab (RA
:) Who mosque once stood on the pulpit and heard, he said, I am the
Messenger of Allah-hu sallalla heard Apostle says, he says ,
"according to his intention is definitely the work of all the people.
and the people of his intention to achieve that. so whose migration was
for any purpose, it does not. and if migration is to marry a woman,
although it is he is, according to emigrate. (ie, according to the intention is to determine the period phalapharala)
২। হাসীসঃ উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত, হারেস ইবনে হেশাম (রা: একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার নিকট ওহী কিভাবে আসে? উত্তরে বললেন, কোন কোন সময় আমার নিকট তা ঘন্টাধ্বনির ন্যায় আসে। এ প্রকারের অহী আমার নিকট বড়ই কষ্টদায়ক মনে হয়। উক্ত কষ্টজনিত ক্লান্তি লাঘব হওয়ার পর আমি তা হ্রদয়ঙ্গম করি। আবার কোন কোন সময় ফেরেশতা মানুষের আকৃতিতে আমার কাছে আল্লাহর বাণী পৌছিয়ে থাকেন, আমি তাৎক্ষনিক তা হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হই।
হযরত আয়েশা (রা:) বলেন, "অতি প্রচন্ড শীতের সময়ও ওহী নাযিলকালে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি, তিনি এমন ঘর্মাক্ত হয়ে পড়তেন যে, তার ললাট মোবারক থেকে ঘাম বের হত।"
৩। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ওহী আগমনের সূচনা হয় ঘুমের মধ্যে স্বপ্নাকারে। স্বপ্নে তিনি যা দেখতেন তা-ই দিবালোকের ন্যায় তাঁর কাছে স্পষ্ট হয়ে যেত। কিছুকাল এ অবস্থা চলার পর আপনা থেকেই তাঁর অন্তরে লোকালয় হতে সংশ্রবহীন নির্জনে থাকার প্রেরণা উদিত হয়। তিনি মক্কা নগরী হতে তিন মাইল দূরে হেরা নামক পর্বত গুহায় নির্জনে (ইবাদতের উদ্দেশ্যে) বাস করতে লাগলেন। তিনি পানাহারের জন্য প্রত্যহ বাড়ি এসে সামান্য কিছু নিয়ে যেতেন এবং তথায় একাধিক্রমে অনেক রাত ইবাদত বন্দেগীতে নিয়োজিত থাকতেন। কিছুদিন পর পর বিবি খাদীজার সাথে সাক্ষাতের জন্য বাড়ি আসতেন। পুনরায় কিছু পানাহার সামগ্রী নিয়ে একাধারে ইবাদত বন্দেগীতে রত হওয়ার জন্য হেরা গুহায় চলে যেতেন। এভাবে হেরা গুহায় আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকাকালে হঠাৎ একদিন তাঁর নিকট সত্য আত্মপ্রকাশ করে। অর্থাৎ মহান আল্লাহর পক্ষ হতে ফেরেশতা জিব্রাঈল (আঃ) ওহী নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে বললেন "ইকরা" (হে নবী) "আপনি পড়ুন।" উত্তরে তিনি বললেন, আমি তো পড়তে জানি না।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এতদশ্রবণে জিব্রাঈল (আঃ) আমাকে ধরে এমন জোরে আলিঙ্গন করলেন, যাতে আমার কষ্ট অনুভব হল। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে পুনরায় বললেন, "ইকরা" "আপনি পড়ুন" উত্তরে আমি বললাম, আমি তো পড়তে জানি না। এতদশ্রবণে উক্ত ফেরেশতা পুনরায় আমাকে আলিঙ্গন করলেন। এবারও আমার কষ্ট অনুভব হতে লাগল। তারপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, "আপনি পড়ুন"। উত্তরে আমি পূর্বের ন্যায় বললাম, 'আমি তো কখনো পড়ার অভ্যাস করিনি। এতদশ্রবণে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) তৃতীয় বার আমাকে আলিঙ্গন করে ছেড়ে দিয়ে বললেন-
অর্থঃ পড়ুন আপনার প্রভুর নামে, যিনি আপনার সৃষ্টিকর্তা, যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্তপিন্ড হতে। পড়ুন, আপনার প্রভু অতি মহান!
এ ঘটনার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত আয়াতসমূহ পাঠ করতে করতে বাড়ি ফিরলেন। ভয়ে তার হৃদয় থর থর করে কাঁপতে লাগল।তিনি তার সহধর্মিনী খাদীজা বিনতে খুয়াইলিদ-এর কাছে এসে বললেন, "আমাকে কম্বল জড়িয়ে দাও! আমাকে কম্বল জড়িয়ে দাও।" অতঃপর খাদীজা তাঁকে কম্বল জড়িয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর তাঁর এ ভাব কেটে গেলে তিনি বিবি খাদীজাকে সব বৃত্তান্ত খুলে বলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, তাঁর উপর বিরাট দায়িত্ব অর্পিত হতে যাচ্ছে। তাই তিনি খাদীজাকে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি মনে মনে ভয় করছি, এ বিরাট দায়িত্ব আমি আদায় করতে পারব কি-না? তখন তীক্ষ্ম বৃদ্ধিসম্পন্ন খাদীজা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, আল্লাহর কসম! কিছুতেই নয়, মহান আল্লাহ আপনাকে কখনো অপদস্থ করবেন না। আল্লাহ আপনাকে অবশ্যই সাহায্য করবেন। কেননা মানবতার চরম উৎকর্ষের মূল সব গুণই আপনার মধ্যে বিদ্যমান আছে। আপনি আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করেন, আত্মীয়তার হক আদায় করেন। এতীম, বিধবা, অন্ধ, খঞ্জ তথা অক্ষমদের খাওয়া পরা ও থাকার বন্দোবস্ত করে থাকেন। বেকারদের কর্মসংস্থান করেন। অতিথি সৎকার করে থাকে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুস্থ জনগণের সাহায্যে জীবন উৎসর্গে প্রস্তুত থাকেন (সুতরাং এ অবস্থায় আপনার ভয়ের কোন কারণ নেই)।
এরুপ সান্ত্বনা দেওয়ার পর খাদীজা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সাথে করে বংশের মুরব্বী স্বীয় চাচাতো ভাই ওয়ারাকা বিন নওফেল বিন আসাদ বিন আবদুল ওজ্জার নিকট নিয়ে গেলেন। যিনি জাহেলিয়াত যুগে নাসরানী ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইবরানী ভাষায় কিতাব লেখতেন, সুতরাং সুরইয়ানী ভাষার ইঞ্জিল কিতাব হতে তিনি ইবরানী ভাষায় আল্লাহর ইচ্ছায় সামর্থানুযায়ী অনেক কিছু লেখেছেন (এক কথায় তিনি আসমানী কিতাবে পারদর্শী ছিলেন)। তিনি সে সময় খুব বৃদ্ধবস্থায় উপনীত হওয়ায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদীজা (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে চাচাতো ভাই! আপনি আপনার ভাতিজার কথা শুনুন। তখন ওয়ারাক বিন নওফেল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে লক্ষ্য করে বললেন, হে ভাতিজা! আপনি কি দেখতে পেয়েছেন বলুন! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সব ঘটনা খুলে বললেন, যা তিনি দেখতে পেয়েছিলেন। ঘটনা শুনার পর ওয়ারাকা বিন নওফেল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, "ইনি তো সেই মঙ্গলময় বার্তাবাহক জিব্রাঈল ফেরেশতা। যাকে আল্লাহ হযরত মূসা (আঃ)-এর নিকট প্রেরণ করেছিলেন। আফসোস! আপনার নবুওয়তের প্রচারকালে যদি আমি শক্তিশালী যুবক হতাম যদি আমি সেদিন জীবিত থাকতাম যেদিন আপনার সম্প্রদায় আপনাকে দেশান্তরিত করে ছাড়বে। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশ্চার্যান্বিত হয়ে বললেন, আমার দেশবাসী কি আমাকে বিতাড়িত করবে। উত্তরে ওয়ারাকা বললেন, হ্যাঁ! আপনি যে সত্য ধর্ম নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন, আপনার ন্যায় যাঁরা পূর্বে এরুপ সত্য ধর্ম নিয়ে প্রেরিত হয়েছিলেন, জগদ্বাসী তাঁদের সাথে শত্রুতা না করে ছাড়েনি। আমি আপনার সাথে কথা দিলাম, যদি আমি সেদিন জীবিত থাক, তা হলে অবশ্যই প্রাণপণে আপনার সাহায্য করব। এ ঘটনার অল্পদিন পরই 'ওয়ারাকা' ইন্তেকাল করেন। এরপর প্রায় তিন বছর যাবত ওহী নাযিল বন্ধ ছিল।
৪। হাদীসঃ ইবনে শিহাব বলেন, আমাকে আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান বলেছেন, ওহী বন্ধ থাকাকালীন অবস্থার বর্ণনা প্রসঙ্গে জাবের বিন আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ প্রসঙ্গে ফরমান, একদা আমি পথ চলার সময় আসমানের দিক থেকে বিকট আওয়াজ শুনতে পেয়ে উপর দিকে নজর করে দেখতে পেলাম যে ফেরেশতা হেরা পর্বত গুহায় আমার কাছে এসেছিলেন, সে ফেরেশতাই আসমান যমীনের মধ্যখানে একটি চেয়ারে উপবিষ্ট আছেন। তাঁর এ অবস্থা দেখে আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম। ভয়ার্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরে এসে আমি বললাম, তোমরা আমাকে গায়ে কম্বল জড়িয়ে দাও, গায়ে কম্বল জড়িয়ে দাও। এ অবস্থায় আমার উপর পবিত্র কোরআনের সূরা মুদ্দাসসির হতে ৫ টি আয়াত অবর্তীণ হয়। যথা-
অর্থঃ হে বস্ত্রাবৃত! উঠুন, আপনি লোকদেরকে সতর্ক করে দিন। আপনার প্রভুর মহিমা প্রচার করুন। আপনার পরিচ্ছদ পবিত্র করুন এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন। (পারা ২৯-সূরা-৭৪, আয়াত ১-৫)
৫। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, প্রথম প্রথম যখন ওহী অবতীর্ণ হত, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওষ্ঠদ্বয় নাড়াতে শুরু করতেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ হাদীস বর্ণনাকালে লোকদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমনিভাবে ওষ্ঠদ্বয় নাড়াচাড়া করতেন, আমিও তোমাদেরকে তেমনিভাবে ওষ্ঠদ্বয় নাড়িয়ে দেখাচ্ছি। আর সাঈদ বিন জোবায়ের (রাঃ) বলেন, আমি আমার ওষ্ঠদ্বয় এমনিভাবে নাড়াচ্ছি যেরুপভাবে হযরত ইবনে আব্বাস নাড়াতেন। অতঃপর মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের আয়াত অবর্তীণ করলেন-
অর্থঃ আপনি তাড়াতাড়ি মুখস্থ করার উদ্দেশ্যে আপনার ওষ্ঠদ্বয় নাড়াবেন না, পবিত্র কোরআন আপনার অন্তরে সংরক্ষণ ও পাঠ করানো স্বয়ং আমারই দায়িত্ব।
সুতরাং যখন পবিত্র কোরআন আপনার কাছে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) পাঠ করেন তখন আপনি কেবল ধৈর্য্য সহকারে নিশ্চুপে তা শ্রবণ করুন। তারপর তা বর্ণনা করাবার এবং পাঠ করাবার দায়িত্ব আমার। এরপর থেকে যখনই হযরত জিব্রাঈল (আঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ওহী নিয়ে আসতেন, তিনি তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করতেন। তারপর জিব্রাঈল (আঃ) যখন চলে যেতেন তখন তিনি তা এমনভাবে পাঠ করতেন যেভাবে জিব্রাঈল (আঃ) পাঠ করেছিলেন।
৬। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বকালের সর্বযুগের সমস্ত লোকের থেকে বেশি দানশীল ছিলেন। বিশেষত তাঁর দানশীলতা অন্যান্য সময় হতে পবিত্র রমযান মাসে বেশি বেশি পরিলক্ষিত হত, যখন হযরত জিব্রাঈল (আঃ) তার সাক্ষাতে উপস্থিত হতেন এবং তাঁকে পবিত্র কোরআন পাঠ করে শুনাতেন। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহে রমযানে দানশীলতায় প্রবাহিত বায়ুর চেয়েও বেশি বেশি গতিশীল হতেন (অর্থাৎ বেশি বেশি দান করতেন)।
৭। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উতবা ইবনে মাসউদ হতে বর্ণিত, ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আবু সুফিয়ান ইবনে হরব তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন, রোমান সম্রাট হেরাকল তাঁকে ঐ সময় ডেকে পাঠান, যখন তিনি কোরায়শ ব্যবসায়ীদের দলপতি হিসেবে ব্যবসার উদ্দেশ্যে শামদেশে গিয়েছিলেন। এ ঘটনা যখন সংঘটিত হয়েছিল, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হোদায়বিয়ার সন্ধির পর কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছিল। সুতরাং তারা যে সময় হেরাকলের সম্মুখে উপস্থিত ছিলেন, সে সময় হেরাকল 'ইলিয়া বর্তমান (বায়তুল মাকদাসে) উপস্থিত ছিলেন। বাদশাহ যখন তাদেরকে তাঁর সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার জন্য বললেন, তখন তাঁর চারপাশে রোমের নেতৃবর্গ উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি তাদেরকে ডেকে পাঠান এবং দোভাষীকেও ডাকান। অতঃপর বাদশাহ তাদেরকে অর্থাৎ আবু সুফিয়ান এবং তাঁর দলের লোকদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, আরব দেশের ঐ ব্যক্তি-যিনি বর্তমানে নবুওয়তের দাবী করছেন, আপনাদের মধ্যে কেউ তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় আছেন কি? আবু সুফিয়ান বললেন, "হ্যাঁ, আমি তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।" তখন হেরাকল তাঁর সভাসদকে বললেন, তাঁকে এবং তার সাথীদেরকে আমার নিকটে নিয়ে আসুন। অতঃপর আবু সুফিয়ানের সাথীদেরকে তার পেছনে বসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হল। তারপর সম্রাট তাঁর দোভাষীকে নির্দেশ দিলেন, আপনি তাদেরকে বলুন, আমি আবু সুফিয়ানকে নবুওয়তের দাবীদার ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করব, যদি তিনি সে সম্পর্কে মিথ্যা কিছু বলেন, সঙ্গীরা যেন তার মিথ্যাটুকু আমাকে ধরিয়ে দেন। অতঃপর আবু সুফিয়ান (মুসলমান অবস্থায়) বলেন, আল্লাহর শপথ! সঙ্গীগণ কর্তৃক মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হওয়ার লজ্জা আমাকে বাধা প্রদান না করলে আমি রোম সম্রাটের নিকট তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিরুদ্ধে অবশ্যই মিথ্যা বলতাম।
আবু সুফিয়ান বলেন, সর্বপ্রথম তিনি আমাকে যে প্রশ্ন করেন তা হলঃ হেরাকলঃ আপনাদের মধ্যে ঐ লোকটির জন্ম কিরুপ বংশে? আবু সুফিয়ানঃ আমি বললাম, তিনি আমাদের মধ্যে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন সম্ভ্রান্ত বংশে জন্ম গ্রহণ করেছেন। হেরাকলঃ আপনাদের মধ্যে তাঁর পূর্বে অন্য কেউ এরুপ নবুওয়তের দাবী করেছেন কি না? আবু সুফিয়ানঃ আমি বললাম, না (ইতিপূর্বে আর কেউ নবুওয়তের দাবী করেনি। হেরাকলঃ তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে কেউ রাজা-বাদশা ছিলেন কি না? আবু সুফিয়ানঃ আমি বললাম, না। হেরাকলঃ তাঁর অনুসারীদের মধ্যে ধনাঢ্য ব্যক্তিগণ বেশি না গরীব জনসাধারণ? আবু সুফিয়ানঃ আমি বললাম; গরীব জনসাধারণ। হেরাকলঃ তাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে না কমছে? আবু সুফিয়ানঃ আমি বললাম, তাদের সংখ্যা বাড়ছে। হেরাকলঃ কেউ তাঁর ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর এ ধর্মের দোষত্রুটি দেখে পরিত্যাগ করে কি না? আবু সুফিয়ানঃ আমি বললাম, না। হেরাকলঃ এ লোকটি বর্তমানে যা বলছে, আপনারা কি তার পূর্বে কখনো তার প্রতি মিথ্যাবাদিতার অভিযোগ করেছেন? আবু সুফিয়ানঃ আমি বললাম, না। হেরাকলঃ তিনি কি ইতিপূর্বে কখনো ওয়াদা ভঙ্গ করেছেন? আবু সুফিয়ানঃ আমি বললাম, না। তবে সম্প্রতি আমরা তাঁর সাথে একটি সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছি। জানি না তিনি এ ব্যাপারে কি করেন। আবু সুফিয়ান বলেন, এ প্রসঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে এর বেশি বলার সাহস আমার ছিল না। হেরাকলঃ আপনারা কি তাঁর সাথে কোন যুদ্ধ করেছেন? আবু সুফিয়ানঃ আমি বললাম, যুদ্ধের ফলাফল আমাদের মধ্যে ঘূর্ণায়মান, কখনো তিনি বিজয়ী হয়েছেন আবার কখনো আমরা বিজয়ী হয়েছি। হেরাকলঃ তিনি আপনাদের কি কি কাজের আদেশ করে থাকেন? আবু সুফিয়ানঃ আমি বললাম, তিনি আমাদের আদেশ করেন এক আল্লাহর ইবাদত কর, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না, তোমাদের পূর্বপুরুষদের কুসংস্কার ছেড়ে দাও। তিনি আমাদেরকে আরো আদেশ করে থাকেন, নামায কায়েম কর, সত্যবাদী হও, অন্যায় থেকে বিরত থাক, আত্মীয়তার হক আদায় কর ইত্যাদি।
অতঃপর সম্রাট তার প্রতিটি প্রশ্নের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে দোভাষীকে বললেন, আপনি আবু সুফিয়ানকে বলুন-
আমি আপনাকে নবুওয়তের দাবীদার ব্যক্তির বংশ মর্যাদা সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম। উত্তরে আপনি বলেছেন, তিনি আপনাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত বংশোদ্ভূত। নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলগণ এমনিভাবে সম্ভ্রান্ত বংশেই জন্মগ্রহণ করে থাকেন। হেরাকলঃ আমি আপনাকে প্রশ্ন করেছিলাম, আপনাদের মধ্যে ইতিপূর্বে আর কেউ এরুপ কথা বলেছে কিনা? আপনি বলেছেন, না। সুতরাং আমি বলছি, যদি ইতিপূর্বে কেউ এ ধরনের কথা বলত, তা হলে আমি বলতাম, তিনি তার পূর্বসূরি ব্যক্তির কথাই বলছেন। হেরাকলঃ আমি আপনাকে আরো প্রশ্ন করেছিলাম, তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে কেউ রাজা বাদশাহ ছিলেন কি-না? উত্তরে আপনি না বলেছেন। যদি তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে কেউ রাজা বাদশা থাকত, তা-হলে আমি বলতাম, তিনি এমন এক ব্যক্তি, যিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের রাজত্ব তালাশ করছেন। হেরাকলঃ আমি আপনাকে প্রশ্ন করেছিলাম, বর্তমানে তিনি যা বলছেন ইতিপূর্বে আপনার কি কখনো তাঁর উপর মিথ্যাবাদীতার অভিযোগ করেছেন। আপনি উত্তর দিয়েছেন, 'না তাই আমি বিশ্বাস করি, তিনি যখন মানুষের মধ্যে মিথ্যাচারিতার অভিযোগ থেকে মুক্ত, তখন আল্লাহ সম্পর্কে কখনো মিথ্যা বলতে পারেন না। হেরাকলঃ আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, সম্মানিত ধনাঢ্য ব্যক্তিগণ না গরীব জনসাধারণ তাঁর অনুসারী হয়ে থাকেন? আপনি উত্তরে বলেছেন, গরীব জনসাধারণই বেশি বেশি তাঁর অনুসারী হয়ে থাকেন। মূলতঃ গরীব জনসাধারণই নবী রাসূলগণের বেশি অনুসারী হয়ে থাকেন। হেরাকলঃ আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাঁর অনুসারীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে না কমছে? আপনি উত্তরে বলেছেন, দিন দিন তাদের সংখ্যা বাড়ছে। নিশ্চয়ই ঈমানের কাজ পরিপূর্ণ হওয়া পর্যন্ত এরুপই হয়ে থাকে। হেরাকলঃ আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাঁর ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর নাখোশ হয়ে কেউ ধর্মান্তিত হয়েছেন কি না? উত্তরে আপনি বলেছেন, না। প্রকৃতপক্ষে ঈমান এরুপই হয়ে থাকে (যখন অন্তরের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়)। হেরাকলঃ আমি আপনাকে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি কখনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছেন কি-না? আপনি বলেছেন "না"। প্রকৃতপক্ষে রাসূলগণ এরুপই হয়ে থাকেন। তাঁরা কখনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না। হেরাকলঃ আমি আপনাকে আরো প্রশ্ন করেছিলাম, তিনি আপনাদেরকে কিরুপ কাজের আদেশ করে থাকেন। উত্তরে আপনি বলেছেন, তিনি আপনাদেরকে আদেশ করে থাকেন, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। তিনি মূর্তিপুজা করতে নিষেধ করেন। তিনি আপনাদের আরো আদেশ করেছেন নামায কায়েম, সত্যবাদিতা অবলম্বন এবং সকল অন্যায় থেকে বিরত থাকার জন্য। আপনি যা বলেছেন, যদি তা সত্য হয়ে থাকে তা হলে আমি বলছি, তিনি অচিরেই আমার পদতলের এ স্থানেরও মালিক হবেন। আমি অবশ্য জানতাম, তিনি অচিরেই আর্বিভূত হবেন। তবে আমার এরুপ ধারণা ছিল না যে, আমি যদি জানতাম, আমি তাঁর কাছে পৌছতে সক্ষম হব, তা হলে অবশ্যই তাঁর সাক্ষাৎ লাভ করার চেষ্টা করতাম। আর যদি তাঁর সাক্ষাতে ধন্য হতাম তা হলে তাঁর পদযুগল ধৌত করে দিতাম।
অতঃপর সম্রাট হেরাকল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দোয়া পত্রখানা আনালেন, যা তিনি হযরত দাহইয়া কলবী (রাঃ)-এর মাধ্যমে বসরার শাসনকর্তার নিকট প্রেরণ করেছিলেন। অতঃপর বসরার শাসনকর্তা উক্ত পত্রখানা সম্রাট হেরাকলের কাছে প্রদান করেন। সম্রাট উক্ত পত্রখানা পাঠ করেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পত্রের বঙ্গানুবাদঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। পরম দাতা দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। এ পত্র আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ হতে রোম সম্রাট হেরাকল এর প্রতি-
যে হেদায়েতের অনুসরণ করবে তার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আমি আপনাকে ইসলামের প্রতি আহব্বান জানাচ্ছি। যদি ইসলাম গ্রহণ করেন তা হলে নিরাপদে থাকবেন। এর পুরস্কারস্বরুপ আল্লাহ আপনাকে দ্বিগুণ প্রতিদান দিবেন। আর যদি আপনি ইসলাম হতে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেন, তা হলে প্রজাদের সকলের অপরাধও আপনার উপর অর্পিত হবে। অর্থাৎ, আপনি সকলের পাপের ভাগী হবেন।
পত্রে আরো লেখা ছিলঃ হে আহলে কিতাব! তোমরা সব কিছু ছেড়ে এমন এক কালেমার দিকে ত্বারা করে আস যা তোমাদের ও আমাদের মাঝে সমান।
"আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পূজা করো না। তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করো না। আর এক আল্লাহ ছাড়া আমাদের কেউ পরস্পর পরস্পরকে প্রভু বলে গ্রহণ করবে না। যদি তোমরা এটা গ্রহণ না কর, তা হলে তোমরা তাদেরকে বলে দাও, তোমরা এ কথার উপর সাক্ষী থেকো যে, আমরা আল্লাহর অনুগত।"
পত্র পাঠের প্রতিক্রিয়াঃ আবু সুফিয়ান বলেন, সম্রাট হেরাকল তখন যা বলার বললেন এবং পত্র পাঠ থেকে অবসর হলেন। তখন উপস্থিত সভাসদবৃন্দের মধ্যে হৈ চৈ পড়ে গেল। লোকেদের কথাবার্তার আওয়াজ বড় হয়ে গেল।আমাদেরকে তখন তার মজলিস হতে বের করে দেয়া হল। বের করে দেয়ার পর আমি আমার সাথীদেরকে বললাম, 'আবু কাবশার" ঘটনা তো অনেক বেড়ে গেছে। স্বয়ং রোম সম্রাট পর্যন্ত তাকে ভয় করছেন (আবু কাবশা হযরত হালিমা সাদিয়ার স্বামীর উপনাম। এ স্থলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে)।
আবু সুফিয়ান বলেন, এ ঘটনার পর থেকে আমার অন্তরে এরুপ বিশ্বাস জন্মেছিল যে, অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিজয়ী হবেন। এমন কি আল্লাহ তাআলা আমার অন্তরে ইসলামের মহব্বত ঢুকিয়ে দিলেন।
সম্রাটের স্বপ্নঃ ইবনে নাতুর- যিনি বায়তুল মাকদাসের শাসনকর্তা ছিলেন, সম্রাট হেরাকল-এর বন্ধুও বটে, তিনি মুলকে নামে নাসারাদের সর্দারও ছিলেন। তিনি বর্ণনা করেন, এক সময় সম্রাট হেরাকল যখন 'ইলিয়া (বায়তুল মাকদাস) আগমন করলেন, তখন একদিন প্রত্যুষে তিনি খুবই তীক্ষ্ম মেজাজ এবং পেরেশান অবস্থায় উঠলেন। এক সাথী তাঁকে বললেন, হে সম্রাট! আজ আমারা আপনাকে খুব পেরেশান অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি, কারণ কি? ইবনে নাতুর বলেন, সম্রাট হেরাকল একজন গণকও ছিলেন। তারকাসমূহের দিকে তিনি সর্বদা দৃষ্টি রাখতেন। উত্তরে সম্রাট বললেন, আমি আজ রাতে যখন তারকাসমূহের দিকে তাকালাম তখন দেখতে পেলাম, খতনাকারীদের বাদশাহ জয়যুক্ত হয়েছেন। তোমরা বল তো, এ যমানায় কারা খতনা করে থাকে? উত্তরে তার সাথীগণ বললেন, বর্তমান যমানায় ইহুদীগণই তো খতনা করে থাকে। সুতরাং তাদের ব্যাপারে পেরেশান হওয়ার কিছু নেই। বরং আপনি আপনার এলাকার সকল শহরে এ ফরমান পাঠিয়ে দিন যেখানে খতনাকারী ইহুদীরা বসবাস করছে, লোকেরা যেন তাদের সবাইকে হত্যা করে। যখন সম্রাট সভাসদ্যদের সাথে এরুপ আলাপ আলোচনায় রত ছিলেন, ঠিক এ সময় এক ব্যক্তিকে সম্রাট হেরাকলের কাছে নিয়ে আসা হল, যাকে গাসসানের শাসনকর্তা সম্রাটের কাছে পাঠিয়েছেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবস্থা ও খবরাখবর বর্ণনা করতেন। সম্রাট যখন তার খবরাখবর দিলেন, তখন তিনি আদেশ করলেন, তাকে গোপন জায়গায় নিয়ে যাও এবং দেখ তার খতনা হয়েছে কি-না? অতঃপর লোকেরা তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর বলল, হ্যাঁ। তার খতনা করা হয়েছে। তারপর তাকে আরবদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে বলল, আরবরা খতনা করে থাকে। তখন সম্রাট হেরাকল বললেন, ঐ ব্যক্তিই হল এ দরের বাদশাহ, যিনি বর্তমানে আবির্ভূত হয়েছেন।
অতঃপর সম্রাট হেরাকল এ ঘটনা তার এক বন্ধুর কাছে লিখে পাঠান, যিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানে তার সমকক্ষ ছিলেন। তারপর সম্রাট হেমসে চলে গেলেন। হেমসে থাকা অবস্থায় তার বন্ধুর পক্ষ হতে পত্রের জবাব এসে পৌছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আবির্ভাব সম্পর্কে সম্রাট হেরাকলের যে ধারণা ছিল, তার বন্ধুর অভিমতেও তদ্রুপই ব্যক্ত করা হল যে, তিনি প্রকৃতপক্ষে নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন।
অতঃপর সম্রাট হেমসের রোমান সর্দারদের স্বীয় মহলে ডাকলেন। খাদেমদেরকে আদেশ করা হল যেন মহলের সকল দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর সম্রাট লোকদের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, হে রোমীয়গণ! যদি তোমরা নিজেদের মঙ্গল কামনা ও সঠিক পথ অনুসন্ধান কর এবং তোমাদের রাজত্ব বহাল থাকুক এরুপ প্রত্যাশা কর, তা হলে আরবের নবীর হাতে বায়আত গ্রহণ কর। সম্রাটের এ কথা বলা শেষ হতে না হতেই লোকজন জংলী গাধার ন্যায় ছুটাছুটি আরম্ভ করে দিল। কিন্তু তারা দেখতে পেল, শাহী মহলের সকল দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাই তারা বের হতে পারল না। সম্রাট যখন তাদের অপছন্দীয় মনোভাব দেখতে পেলেন এবং তাদের ঈমান থেকে নিরাশ হলেন, তখন খাদেমদেরকে বললেন, তাদেরকে পুনরায় আমার কাছে ডেকে আন। অতঃপর তাদেরকে খুশি অনুভূতি এবং ধর্মের প্রতি তোমাদের আসক্তি পরীক্ষা করছি। সুতরাং আমি ধারণা করে নিলাম, তোমরা নিজেদের র্ধমের উপর অটল রয়েছ। এ কথা শুনে সবাই সন্তুষ্ট হয়ে সম্রাটকে সেজদা করে আনুগত্য প্রকাশ করে। এ ছিল সম্রাট হেরাকলের সর্বশেষ অবস্থা।
নবী করীম সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অবর্তীণ প্রথম ওহী
৩। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ওহী আগমনের সূচনা হয় ঘুমের মধ্যে স্বপ্নাকারে। স্বপ্নে তিনি যা দেখতেন তা-ই দিবালোকের ন্যায় তাঁর কাছে স্পষ্ট হয়ে যেত। কিছুকাল এ অবস্থা চলার পর আপনা থেকেই তাঁর অন্তরে লোকালয় হতে সংশ্রবহীন নির্জনে থাকার প্রেরণা উদিত হয়। তিনি মক্কা নগরী হতে তিন মাইল দূরে হেরা নামক পর্বত গুহায় নির্জনে (ইবাদতের উদ্দেশ্যে) বাস করতে লাগলেন। তিনি পানাহারের জন্য প্রত্যহ বাড়ি এসে সামান্য কিছু নিয়ে যেতেন এবং তথায় একাধিক্রমে অনেক রাত ইবাদত বন্দেগীতে নিয়োজিত থাকতেন। কিছুদিন পর পর বিবি খাদীজার সাথে সাক্ষাতের জন্য বাড়ি আসতেন। পুনরায় কিছু পানাহার সামগ্রী নিয়ে একাধারে ইবাদত বন্দেগীতে রত হওয়ার জন্য হেরা গুহায় চলে যেতেন। এভাবে হেরা গুহায় আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকাকালে হঠাৎ একদিন তাঁর নিকট সত্য আত্মপ্রকাশ করে। অর্থাৎ মহান আল্লাহর পক্ষ হতে ফেরেশতা জিব্রাঈল (আঃ) ওহী নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে বললেন "ইকরা" (হে নবী) "আপনি পড়ুন।" উত্তরে তিনি বললেন, আমি তো পড়তে জানি না।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এতদশ্রবণে জিব্রাঈল (আঃ) আমাকে ধরে এমন জোরে আলিঙ্গন করলেন, যাতে আমার কষ্ট অনুভব হল। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে পুনরায় বললেন, "ইকরা" "আপনি পড়ুন" উত্তরে আমি বললাম, আমি তো পড়তে জানি না। এতদশ্রবণে উক্ত ফেরেশতা পুনরায় আমাকে আলিঙ্গন করলেন। এবারও আমার কষ্ট অনুভব হতে লাগল। তারপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, "আপনি পড়ুন"। উত্তরে আমি পূর্বের ন্যায় বললাম, 'আমি তো কখনো পড়ার অভ্যাস করিনি। এতদশ্রবণে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) তৃতীয় বার আমাকে আলিঙ্গন করে ছেড়ে দিয়ে বললেন-
অর্থঃ পড়ুন আপনার প্রভুর নামে, যিনি আপনার সৃষ্টিকর্তা, যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্তপিন্ড হতে। পড়ুন, আপনার প্রভু অতি মহান!
এ ঘটনার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত আয়াতসমূহ পাঠ করতে করতে বাড়ি ফিরলেন। ভয়ে তার হৃদয় থর থর করে কাঁপতে লাগল।তিনি তার সহধর্মিনী খাদীজা বিনতে খুয়াইলিদ-এর কাছে এসে বললেন, "আমাকে কম্বল জড়িয়ে দাও! আমাকে কম্বল জড়িয়ে দাও।" অতঃপর খাদীজা তাঁকে কম্বল জড়িয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর তাঁর এ ভাব কেটে গেলে তিনি বিবি খাদীজাকে সব বৃত্তান্ত খুলে বলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, তাঁর উপর বিরাট দায়িত্ব অর্পিত হতে যাচ্ছে। তাই তিনি খাদীজাকে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি মনে মনে ভয় করছি, এ বিরাট দায়িত্ব আমি আদায় করতে পারব কি-না? তখন তীক্ষ্ম বৃদ্ধিসম্পন্ন খাদীজা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, আল্লাহর কসম! কিছুতেই নয়, মহান আল্লাহ আপনাকে কখনো অপদস্থ করবেন না। আল্লাহ আপনাকে অবশ্যই সাহায্য করবেন। কেননা মানবতার চরম উৎকর্ষের মূল সব গুণই আপনার মধ্যে বিদ্যমান আছে। আপনি আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করেন, আত্মীয়তার হক আদায় করেন। এতীম, বিধবা, অন্ধ, খঞ্জ তথা অক্ষমদের খাওয়া পরা ও থাকার বন্দোবস্ত করে থাকেন। বেকারদের কর্মসংস্থান করেন। অতিথি সৎকার করে থাকে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুস্থ জনগণের সাহায্যে জীবন উৎসর্গে প্রস্তুত থাকেন (সুতরাং এ অবস্থায় আপনার ভয়ের কোন কারণ নেই)।
এরুপ সান্ত্বনা দেওয়ার পর খাদীজা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সাথে করে বংশের মুরব্বী স্বীয় চাচাতো ভাই ওয়ারাকা বিন নওফেল বিন আসাদ বিন আবদুল ওজ্জার নিকট নিয়ে গেলেন। যিনি জাহেলিয়াত যুগে নাসরানী ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইবরানী ভাষায় কিতাব লেখতেন, সুতরাং সুরইয়ানী ভাষার ইঞ্জিল কিতাব হতে তিনি ইবরানী ভাষায় আল্লাহর ইচ্ছায় সামর্থানুযায়ী অনেক কিছু লেখেছেন (এক কথায় তিনি আসমানী কিতাবে পারদর্শী ছিলেন)। তিনি সে সময় খুব বৃদ্ধবস্থায় উপনীত হওয়ায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদীজা (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে চাচাতো ভাই! আপনি আপনার ভাতিজার কথা শুনুন। তখন ওয়ারাক বিন নওফেল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে লক্ষ্য করে বললেন, হে ভাতিজা! আপনি কি দেখতে পেয়েছেন বলুন! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সব ঘটনা খুলে বললেন, যা তিনি দেখতে পেয়েছিলেন। ঘটনা শুনার পর ওয়ারাকা বিন নওফেল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, "ইনি তো সেই মঙ্গলময় বার্তাবাহক জিব্রাঈল ফেরেশতা। যাকে আল্লাহ হযরত মূসা (আঃ)-এর নিকট প্রেরণ করেছিলেন। আফসোস! আপনার নবুওয়তের প্রচারকালে যদি আমি শক্তিশালী যুবক হতাম যদি আমি সেদিন জীবিত থাকতাম যেদিন আপনার সম্প্রদায় আপনাকে দেশান্তরিত করে ছাড়বে। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশ্চার্যান্বিত হয়ে বললেন, আমার দেশবাসী কি আমাকে বিতাড়িত করবে। উত্তরে ওয়ারাকা বললেন, হ্যাঁ! আপনি যে সত্য ধর্ম নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন, আপনার ন্যায় যাঁরা পূর্বে এরুপ সত্য ধর্ম নিয়ে প্রেরিত হয়েছিলেন, জগদ্বাসী তাঁদের সাথে শত্রুতা না করে ছাড়েনি। আমি আপনার সাথে কথা দিলাম, যদি আমি সেদিন জীবিত থাক, তা হলে অবশ্যই প্রাণপণে আপনার সাহায্য করব। এ ঘটনার অল্পদিন পরই 'ওয়ারাকা' ইন্তেকাল করেন। এরপর প্রায় তিন বছর যাবত ওহী নাযিল বন্ধ ছিল।
৪। হাদীসঃ ইবনে শিহাব বলেন, আমাকে আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান বলেছেন, ওহী বন্ধ থাকাকালীন অবস্থার বর্ণনা প্রসঙ্গে জাবের বিন আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ প্রসঙ্গে ফরমান, একদা আমি পথ চলার সময় আসমানের দিক থেকে বিকট আওয়াজ শুনতে পেয়ে উপর দিকে নজর করে দেখতে পেলাম যে ফেরেশতা হেরা পর্বত গুহায় আমার কাছে এসেছিলেন, সে ফেরেশতাই আসমান যমীনের মধ্যখানে একটি চেয়ারে উপবিষ্ট আছেন। তাঁর এ অবস্থা দেখে আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম। ভয়ার্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরে এসে আমি বললাম, তোমরা আমাকে গায়ে কম্বল জড়িয়ে দাও, গায়ে কম্বল জড়িয়ে দাও। এ অবস্থায় আমার উপর পবিত্র কোরআনের সূরা মুদ্দাসসির হতে ৫ টি আয়াত অবর্তীণ হয়। যথা-
অর্থঃ হে বস্ত্রাবৃত! উঠুন, আপনি লোকদেরকে সতর্ক করে দিন। আপনার প্রভুর মহিমা প্রচার করুন। আপনার পরিচ্ছদ পবিত্র করুন এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন। (পারা ২৯-সূরা-৭৪, আয়াত ১-৫)
৫। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, প্রথম প্রথম যখন ওহী অবতীর্ণ হত, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওষ্ঠদ্বয় নাড়াতে শুরু করতেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ হাদীস বর্ণনাকালে লোকদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমনিভাবে ওষ্ঠদ্বয় নাড়াচাড়া করতেন, আমিও তোমাদেরকে তেমনিভাবে ওষ্ঠদ্বয় নাড়িয়ে দেখাচ্ছি। আর সাঈদ বিন জোবায়ের (রাঃ) বলেন, আমি আমার ওষ্ঠদ্বয় এমনিভাবে নাড়াচ্ছি যেরুপভাবে হযরত ইবনে আব্বাস নাড়াতেন। অতঃপর মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের আয়াত অবর্তীণ করলেন-
অর্থঃ আপনি তাড়াতাড়ি মুখস্থ করার উদ্দেশ্যে আপনার ওষ্ঠদ্বয় নাড়াবেন না, পবিত্র কোরআন আপনার অন্তরে সংরক্ষণ ও পাঠ করানো স্বয়ং আমারই দায়িত্ব।
সুতরাং যখন পবিত্র কোরআন আপনার কাছে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) পাঠ করেন তখন আপনি কেবল ধৈর্য্য সহকারে নিশ্চুপে তা শ্রবণ করুন। তারপর তা বর্ণনা করাবার এবং পাঠ করাবার দায়িত্ব আমার। এরপর থেকে যখনই হযরত জিব্রাঈল (আঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ওহী নিয়ে আসতেন, তিনি তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করতেন। তারপর জিব্রাঈল (আঃ) যখন চলে যেতেন তখন তিনি তা এমনভাবে পাঠ করতেন যেভাবে জিব্রাঈল (আঃ) পাঠ করেছিলেন।
৬। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বকালের সর্বযুগের সমস্ত লোকের থেকে বেশি দানশীল ছিলেন। বিশেষত তাঁর দানশীলতা অন্যান্য সময় হতে পবিত্র রমযান মাসে বেশি বেশি পরিলক্ষিত হত, যখন হযরত জিব্রাঈল (আঃ) তার সাক্ষাতে উপস্থিত হতেন এবং তাঁকে পবিত্র কোরআন পাঠ করে শুনাতেন। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহে রমযানে দানশীলতায় প্রবাহিত বায়ুর চেয়েও বেশি বেশি গতিশীল হতেন (অর্থাৎ বেশি বেশি দান করতেন)।
৭। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উতবা ইবনে মাসউদ হতে বর্ণিত, ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আবু সুফিয়ান ইবনে হরব তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন, রোমান সম্রাট হেরাকল তাঁকে ঐ সময় ডেকে পাঠান, যখন তিনি কোরায়শ ব্যবসায়ীদের দলপতি হিসেবে ব্যবসার উদ্দেশ্যে শামদেশে গিয়েছিলেন। এ ঘটনা যখন সংঘটিত হয়েছিল, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হোদায়বিয়ার সন্ধির পর কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছিল। সুতরাং তারা যে সময় হেরাকলের সম্মুখে উপস্থিত ছিলেন, সে সময় হেরাকল 'ইলিয়া বর্তমান (বায়তুল মাকদাসে) উপস্থিত ছিলেন। বাদশাহ যখন তাদেরকে তাঁর সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার জন্য বললেন, তখন তাঁর চারপাশে রোমের নেতৃবর্গ উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি তাদেরকে ডেকে পাঠান এবং দোভাষীকেও ডাকান। অতঃপর বাদশাহ তাদেরকে অর্থাৎ আবু সুফিয়ান এবং তাঁর দলের লোকদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, আরব দেশের ঐ ব্যক্তি-যিনি বর্তমানে নবুওয়তের দাবী করছেন, আপনাদের মধ্যে কেউ তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় আছেন কি? আবু সুফিয়ান বললেন, "হ্যাঁ, আমি তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।" তখন হেরাকল তাঁর সভাসদকে বললেন, তাঁকে এবং তার সাথীদেরকে আমার নিকটে নিয়ে আসুন। অতঃপর আবু সুফিয়ানের সাথীদেরকে তার পেছনে বসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হল। তারপর সম্রাট তাঁর দোভাষীকে নির্দেশ দিলেন, আপনি তাদেরকে বলুন, আমি আবু সুফিয়ানকে নবুওয়তের দাবীদার ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করব, যদি তিনি সে সম্পর্কে মিথ্যা কিছু বলেন, সঙ্গীরা যেন তার মিথ্যাটুকু আমাকে ধরিয়ে দেন। অতঃপর আবু সুফিয়ান (মুসলমান অবস্থায়) বলেন, আল্লাহর শপথ! সঙ্গীগণ কর্তৃক মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হওয়ার লজ্জা আমাকে বাধা প্রদান না করলে আমি রোম সম্রাটের নিকট তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিরুদ্ধে অবশ্যই মিথ্যা বলতাম।
রোম সম্রাট হেরাকল ও আবু সুফিয়ানের মধ্যকার কথোপকথন
আবু সুফিয়ান বলেন, সর্বপ্রথম তিনি আমাকে যে প্রশ্ন করেন তা হলঃ হেরাকলঃ আপনাদের মধ্যে ঐ লোকটির জন্ম কিরুপ বংশে? আবু সুফিয়ানঃ আমি বললাম, তিনি আমাদের মধ্যে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন সম্ভ্রান্ত বংশে জন্ম গ্রহণ করেছেন। হেরাকলঃ আপনাদের মধ্যে তাঁর পূর্বে অন্য কেউ এরুপ নবুওয়তের দাবী করেছেন কি না? আবু সুফিয়ানঃ আমি বললাম, না (ইতিপূর্বে আর কেউ নবুওয়তের দাবী করেনি। হেরাকলঃ তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে কেউ রাজা-বাদশা ছিলেন কি না? আবু সুফিয়ানঃ আমি বললাম, না। হেরাকলঃ তাঁর অনুসারীদের মধ্যে ধনাঢ্য ব্যক্তিগণ বেশি না গরীব জনসাধারণ? আবু সুফিয়ানঃ আমি বললাম; গরীব জনসাধারণ। হেরাকলঃ তাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে না কমছে? আবু সুফিয়ানঃ আমি বললাম, তাদের সংখ্যা বাড়ছে। হেরাকলঃ কেউ তাঁর ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর এ ধর্মের দোষত্রুটি দেখে পরিত্যাগ করে কি না? আবু সুফিয়ানঃ আমি বললাম, না। হেরাকলঃ এ লোকটি বর্তমানে যা বলছে, আপনারা কি তার পূর্বে কখনো তার প্রতি মিথ্যাবাদিতার অভিযোগ করেছেন? আবু সুফিয়ানঃ আমি বললাম, না। হেরাকলঃ তিনি কি ইতিপূর্বে কখনো ওয়াদা ভঙ্গ করেছেন? আবু সুফিয়ানঃ আমি বললাম, না। তবে সম্প্রতি আমরা তাঁর সাথে একটি সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছি। জানি না তিনি এ ব্যাপারে কি করেন। আবু সুফিয়ান বলেন, এ প্রসঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে এর বেশি বলার সাহস আমার ছিল না। হেরাকলঃ আপনারা কি তাঁর সাথে কোন যুদ্ধ করেছেন? আবু সুফিয়ানঃ আমি বললাম, যুদ্ধের ফলাফল আমাদের মধ্যে ঘূর্ণায়মান, কখনো তিনি বিজয়ী হয়েছেন আবার কখনো আমরা বিজয়ী হয়েছি। হেরাকলঃ তিনি আপনাদের কি কি কাজের আদেশ করে থাকেন? আবু সুফিয়ানঃ আমি বললাম, তিনি আমাদের আদেশ করেন এক আল্লাহর ইবাদত কর, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না, তোমাদের পূর্বপুরুষদের কুসংস্কার ছেড়ে দাও। তিনি আমাদেরকে আরো আদেশ করে থাকেন, নামায কায়েম কর, সত্যবাদী হও, অন্যায় থেকে বিরত থাক, আত্মীয়তার হক আদায় কর ইত্যাদি।
অতঃপর সম্রাট তার প্রতিটি প্রশ্নের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে দোভাষীকে বললেন, আপনি আবু সুফিয়ানকে বলুন-
আমি আপনাকে নবুওয়তের দাবীদার ব্যক্তির বংশ মর্যাদা সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম। উত্তরে আপনি বলেছেন, তিনি আপনাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত বংশোদ্ভূত। নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলগণ এমনিভাবে সম্ভ্রান্ত বংশেই জন্মগ্রহণ করে থাকেন। হেরাকলঃ আমি আপনাকে প্রশ্ন করেছিলাম, আপনাদের মধ্যে ইতিপূর্বে আর কেউ এরুপ কথা বলেছে কিনা? আপনি বলেছেন, না। সুতরাং আমি বলছি, যদি ইতিপূর্বে কেউ এ ধরনের কথা বলত, তা হলে আমি বলতাম, তিনি তার পূর্বসূরি ব্যক্তির কথাই বলছেন। হেরাকলঃ আমি আপনাকে আরো প্রশ্ন করেছিলাম, তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে কেউ রাজা বাদশাহ ছিলেন কি-না? উত্তরে আপনি না বলেছেন। যদি তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে কেউ রাজা বাদশা থাকত, তা-হলে আমি বলতাম, তিনি এমন এক ব্যক্তি, যিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের রাজত্ব তালাশ করছেন। হেরাকলঃ আমি আপনাকে প্রশ্ন করেছিলাম, বর্তমানে তিনি যা বলছেন ইতিপূর্বে আপনার কি কখনো তাঁর উপর মিথ্যাবাদীতার অভিযোগ করেছেন। আপনি উত্তর দিয়েছেন, 'না তাই আমি বিশ্বাস করি, তিনি যখন মানুষের মধ্যে মিথ্যাচারিতার অভিযোগ থেকে মুক্ত, তখন আল্লাহ সম্পর্কে কখনো মিথ্যা বলতে পারেন না। হেরাকলঃ আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, সম্মানিত ধনাঢ্য ব্যক্তিগণ না গরীব জনসাধারণ তাঁর অনুসারী হয়ে থাকেন? আপনি উত্তরে বলেছেন, গরীব জনসাধারণই বেশি বেশি তাঁর অনুসারী হয়ে থাকেন। মূলতঃ গরীব জনসাধারণই নবী রাসূলগণের বেশি অনুসারী হয়ে থাকেন। হেরাকলঃ আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাঁর অনুসারীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে না কমছে? আপনি উত্তরে বলেছেন, দিন দিন তাদের সংখ্যা বাড়ছে। নিশ্চয়ই ঈমানের কাজ পরিপূর্ণ হওয়া পর্যন্ত এরুপই হয়ে থাকে। হেরাকলঃ আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাঁর ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর নাখোশ হয়ে কেউ ধর্মান্তিত হয়েছেন কি না? উত্তরে আপনি বলেছেন, না। প্রকৃতপক্ষে ঈমান এরুপই হয়ে থাকে (যখন অন্তরের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়)। হেরাকলঃ আমি আপনাকে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি কখনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছেন কি-না? আপনি বলেছেন "না"। প্রকৃতপক্ষে রাসূলগণ এরুপই হয়ে থাকেন। তাঁরা কখনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না। হেরাকলঃ আমি আপনাকে আরো প্রশ্ন করেছিলাম, তিনি আপনাদেরকে কিরুপ কাজের আদেশ করে থাকেন। উত্তরে আপনি বলেছেন, তিনি আপনাদেরকে আদেশ করে থাকেন, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। তিনি মূর্তিপুজা করতে নিষেধ করেন। তিনি আপনাদের আরো আদেশ করেছেন নামায কায়েম, সত্যবাদিতা অবলম্বন এবং সকল অন্যায় থেকে বিরত থাকার জন্য। আপনি যা বলেছেন, যদি তা সত্য হয়ে থাকে তা হলে আমি বলছি, তিনি অচিরেই আমার পদতলের এ স্থানেরও মালিক হবেন। আমি অবশ্য জানতাম, তিনি অচিরেই আর্বিভূত হবেন। তবে আমার এরুপ ধারণা ছিল না যে, আমি যদি জানতাম, আমি তাঁর কাছে পৌছতে সক্ষম হব, তা হলে অবশ্যই তাঁর সাক্ষাৎ লাভ করার চেষ্টা করতাম। আর যদি তাঁর সাক্ষাতে ধন্য হতাম তা হলে তাঁর পদযুগল ধৌত করে দিতাম।
অতঃপর সম্রাট হেরাকল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দোয়া পত্রখানা আনালেন, যা তিনি হযরত দাহইয়া কলবী (রাঃ)-এর মাধ্যমে বসরার শাসনকর্তার নিকট প্রেরণ করেছিলেন। অতঃপর বসরার শাসনকর্তা উক্ত পত্রখানা সম্রাট হেরাকলের কাছে প্রদান করেন। সম্রাট উক্ত পত্রখানা পাঠ করেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পত্রের বঙ্গানুবাদঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। পরম দাতা দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। এ পত্র আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ হতে রোম সম্রাট হেরাকল এর প্রতি-
যে হেদায়েতের অনুসরণ করবে তার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আমি আপনাকে ইসলামের প্রতি আহব্বান জানাচ্ছি। যদি ইসলাম গ্রহণ করেন তা হলে নিরাপদে থাকবেন। এর পুরস্কারস্বরুপ আল্লাহ আপনাকে দ্বিগুণ প্রতিদান দিবেন। আর যদি আপনি ইসলাম হতে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেন, তা হলে প্রজাদের সকলের অপরাধও আপনার উপর অর্পিত হবে। অর্থাৎ, আপনি সকলের পাপের ভাগী হবেন।
পত্রে আরো লেখা ছিলঃ হে আহলে কিতাব! তোমরা সব কিছু ছেড়ে এমন এক কালেমার দিকে ত্বারা করে আস যা তোমাদের ও আমাদের মাঝে সমান।
"আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পূজা করো না। তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করো না। আর এক আল্লাহ ছাড়া আমাদের কেউ পরস্পর পরস্পরকে প্রভু বলে গ্রহণ করবে না। যদি তোমরা এটা গ্রহণ না কর, তা হলে তোমরা তাদেরকে বলে দাও, তোমরা এ কথার উপর সাক্ষী থেকো যে, আমরা আল্লাহর অনুগত।"
পত্র পাঠের প্রতিক্রিয়াঃ আবু সুফিয়ান বলেন, সম্রাট হেরাকল তখন যা বলার বললেন এবং পত্র পাঠ থেকে অবসর হলেন। তখন উপস্থিত সভাসদবৃন্দের মধ্যে হৈ চৈ পড়ে গেল। লোকেদের কথাবার্তার আওয়াজ বড় হয়ে গেল।আমাদেরকে তখন তার মজলিস হতে বের করে দেয়া হল। বের করে দেয়ার পর আমি আমার সাথীদেরকে বললাম, 'আবু কাবশার" ঘটনা তো অনেক বেড়ে গেছে। স্বয়ং রোম সম্রাট পর্যন্ত তাকে ভয় করছেন (আবু কাবশা হযরত হালিমা সাদিয়ার স্বামীর উপনাম। এ স্থলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে)।
আবু সুফিয়ান বলেন, এ ঘটনার পর থেকে আমার অন্তরে এরুপ বিশ্বাস জন্মেছিল যে, অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিজয়ী হবেন। এমন কি আল্লাহ তাআলা আমার অন্তরে ইসলামের মহব্বত ঢুকিয়ে দিলেন।
সম্রাটের স্বপ্নঃ ইবনে নাতুর- যিনি বায়তুল মাকদাসের শাসনকর্তা ছিলেন, সম্রাট হেরাকল-এর বন্ধুও বটে, তিনি মুলকে নামে নাসারাদের সর্দারও ছিলেন। তিনি বর্ণনা করেন, এক সময় সম্রাট হেরাকল যখন 'ইলিয়া (বায়তুল মাকদাস) আগমন করলেন, তখন একদিন প্রত্যুষে তিনি খুবই তীক্ষ্ম মেজাজ এবং পেরেশান অবস্থায় উঠলেন। এক সাথী তাঁকে বললেন, হে সম্রাট! আজ আমারা আপনাকে খুব পেরেশান অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি, কারণ কি? ইবনে নাতুর বলেন, সম্রাট হেরাকল একজন গণকও ছিলেন। তারকাসমূহের দিকে তিনি সর্বদা দৃষ্টি রাখতেন। উত্তরে সম্রাট বললেন, আমি আজ রাতে যখন তারকাসমূহের দিকে তাকালাম তখন দেখতে পেলাম, খতনাকারীদের বাদশাহ জয়যুক্ত হয়েছেন। তোমরা বল তো, এ যমানায় কারা খতনা করে থাকে? উত্তরে তার সাথীগণ বললেন, বর্তমান যমানায় ইহুদীগণই তো খতনা করে থাকে। সুতরাং তাদের ব্যাপারে পেরেশান হওয়ার কিছু নেই। বরং আপনি আপনার এলাকার সকল শহরে এ ফরমান পাঠিয়ে দিন যেখানে খতনাকারী ইহুদীরা বসবাস করছে, লোকেরা যেন তাদের সবাইকে হত্যা করে। যখন সম্রাট সভাসদ্যদের সাথে এরুপ আলাপ আলোচনায় রত ছিলেন, ঠিক এ সময় এক ব্যক্তিকে সম্রাট হেরাকলের কাছে নিয়ে আসা হল, যাকে গাসসানের শাসনকর্তা সম্রাটের কাছে পাঠিয়েছেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবস্থা ও খবরাখবর বর্ণনা করতেন। সম্রাট যখন তার খবরাখবর দিলেন, তখন তিনি আদেশ করলেন, তাকে গোপন জায়গায় নিয়ে যাও এবং দেখ তার খতনা হয়েছে কি-না? অতঃপর লোকেরা তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর বলল, হ্যাঁ। তার খতনা করা হয়েছে। তারপর তাকে আরবদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে বলল, আরবরা খতনা করে থাকে। তখন সম্রাট হেরাকল বললেন, ঐ ব্যক্তিই হল এ দরের বাদশাহ, যিনি বর্তমানে আবির্ভূত হয়েছেন।
অতঃপর সম্রাট হেরাকল এ ঘটনা তার এক বন্ধুর কাছে লিখে পাঠান, যিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানে তার সমকক্ষ ছিলেন। তারপর সম্রাট হেমসে চলে গেলেন। হেমসে থাকা অবস্থায় তার বন্ধুর পক্ষ হতে পত্রের জবাব এসে পৌছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আবির্ভাব সম্পর্কে সম্রাট হেরাকলের যে ধারণা ছিল, তার বন্ধুর অভিমতেও তদ্রুপই ব্যক্ত করা হল যে, তিনি প্রকৃতপক্ষে নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন।
সম্রাটের পক্ষ হতে রোমীয়দের কাছে ইসলামের দাওয়াত
অতঃপর সম্রাট হেমসের রোমান সর্দারদের স্বীয় মহলে ডাকলেন। খাদেমদেরকে আদেশ করা হল যেন মহলের সকল দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর সম্রাট লোকদের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, হে রোমীয়গণ! যদি তোমরা নিজেদের মঙ্গল কামনা ও সঠিক পথ অনুসন্ধান কর এবং তোমাদের রাজত্ব বহাল থাকুক এরুপ প্রত্যাশা কর, তা হলে আরবের নবীর হাতে বায়আত গ্রহণ কর। সম্রাটের এ কথা বলা শেষ হতে না হতেই লোকজন জংলী গাধার ন্যায় ছুটাছুটি আরম্ভ করে দিল। কিন্তু তারা দেখতে পেল, শাহী মহলের সকল দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাই তারা বের হতে পারল না। সম্রাট যখন তাদের অপছন্দীয় মনোভাব দেখতে পেলেন এবং তাদের ঈমান থেকে নিরাশ হলেন, তখন খাদেমদেরকে বললেন, তাদেরকে পুনরায় আমার কাছে ডেকে আন। অতঃপর তাদেরকে খুশি অনুভূতি এবং ধর্মের প্রতি তোমাদের আসক্তি পরীক্ষা করছি। সুতরাং আমি ধারণা করে নিলাম, তোমরা নিজেদের র্ধমের উপর অটল রয়েছ। এ কথা শুনে সবাই সন্তুষ্ট হয়ে সম্রাটকে সেজদা করে আনুগত্য প্রকাশ করে। এ ছিল সম্রাট হেরাকলের সর্বশেষ অবস্থা।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.