بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে
ঈমান পর্ব
অনুচ্ছেদ নং ১ঃ
ঈমান পর্ব
অনুচ্ছেদ নং ১ঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী "ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত"
ঈমান হলো ইসলামের প্রতি মৌখিক স্বীকৃতি দান এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা। আর এটা বাড়ে কমে। (ইমাম বুখারী (র.) এই হাদীসের উপর কুরআনের বেশ কিছু সংখ্যক আয়াত দ্বারা প্রমাণ পেশ করেন) যেমন-
(১) অর্থ: তাদের ঈমানের সাথে যেন আরো ঈমান বেড়ে যায়।
(২) অর্থ: আর আমি তাদের হিদায়াত (ঈমান) বাড়িয়ে দিয়েছি।
(৩) অর্থ: আর আল্লাহ তায়াল তাদের হেদায়াত বৃদ্ধি করে দেন, যারা সঠিক পথে অবিচল থাকে। (সূরা মারইয়াম-৭৬)
(৪) অর্থ: আর যারা হেদায়াতের পথে থাকে, তিনি তাদের হেদায়াত বৃদ্ধি করে দেন এবং তাদের আল্লাহভীতি দান করেন। (সূরা মুহাম্মদ-১৭)
(৫) অর্থ: আর যারা ঈমান এনেছে, তাদের ঈমান তিনি আরো বাড়িয়ে দেন।
(৬) অর্থ: এটা তোমাদের মধ্যেকার ঈমান বৃদ্ধি করে দেয়? সুতরাং যারা ঈমান এনেছে, তাদের ঈমানকে বাড়িয়ে দেয়। (সুরা তওবা, আয়াত-১২৪)
(৭) অর্থ: তোমরা তাদেরকে (কাফেরদের বিশাল সৈন্যদেরকে) ভয় কর" (লোকদের) এই কথা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে দিল (সূরা আল ইমরান-আয়াত-১৭৩)
(৮) অর্থ: আর এই কথাটাই তাদের ঈমান ও আত্মসর্ম্পণকে আরো বৃদ্ধি করে দিল।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
অর্থ: "আল্লাহর জন্য ভালবাসা ও আল্লাহর জন্য শত্রুতা করা ঈমানের অংশ।"
হযরত উমর ইবনে আব্দুর আযীম (র.) আদী ইবনে আদীর কাছে লিখে পাঠিয়েছেন। নিশ্চই ঈমানের অনেক মৌলিক বিষয় ওয়াজিব, হদ তথা নিষেধ ও সুন্নত কাজ রয়েছে, যে এসব বিষয় পরিপূর্ণ পালন করে, সে ঈমানকে পূর্ণ করল, আর যে তা পরিপূর্ণ করেনি, সে ঈমানকে পূর্ণ করেনি। সুতরাং আমি যদি জীবিত থাকি, তাহলে অচিরেই আমি সেসব বিষয় তোমাদের বলবো, যাতে তোমরা তার প্রতি আমল করতে পারো। আর যদি মরে যাই, তাহলেও আমি তোমাদের সাথে থাকতে আকাঙ্খী নই। (অর্থাৎ লোভী নই)
ইসলামের বুনিয়াদ
অনুচ্ছেদ নং ২ঃ তোমাদের দোয়াই হলো তোমাদের ঈমান। মহান আল্লাহর বাণী-.. শব্দের পারিবাষিক অর্থ হলো "ঈমান"
৮। হাদীসঃ হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ইসলাম পাঁচটি স্থম্ভের উপর প্রতিষ্ঠত, আর তা হল- (১) আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল, এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা। (২) নামায প্রতিষ্ঠা করা। (৩) যাকাত প্রদান করা। (৪) হজ্জ্ব আদায় করা । (৫) রমযানের রোযা রাখা।
৯। হাদীসঃ হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ঈমানের-শাখা প্রশাখাসমূহ ষাটের চেয়েও বেশি এবং রজ্জা ঈমানের একটি শাখা।
অনুচ্ছেদ নং ৩ঃ ঈমানের বিভিন্ন বিষয়। মহান আল্লাহর বাণী-
তোমরা স্বীয় মুখ পূর্ব ও পশ্চিমে ফেরালেই কোনো নেকী হবে না। বরং নেকী হলো (ঐ ব্যক্তির জন্য) যে, আল্লাহ তায়ালা শেষ দিবস, ফেরেস্তাগণ, কিতাব ও নবীগণের উপর ঈমান আনবে এবং যে আল্লাহর মহব্বতের খাতির আত্মীয় স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, মুসাফীর ও দানপ্রার্থীকে এবং দাসত্ব থেকে মুক্তি দেয়ার ক্ষেত্রে অর্থ সম্পদ দান করবে। আর নামায প্রতিষ্ঠা করবে ও যাকাত প্রদান করবে এবং যখন ওয়াদা করবে তা যথাযথ পূর্ণ করবে এবং দারিদ্র, দু:খ, কষ্ট ও জিহাদের সময় ধৈর্য্যধারণ করবে। আর (যারা এরুপ করবে) তারাই সত্যবাদী এবং তারাই মুত্তাকী। (সূরা বাকারাহ-১৭৭) অবশ্যই মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে। (সূরা মুমিনুন)
হযরত ইবরাহীম (আ.) বলেছেন, যাতে আমার অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। অর্থাৎ আমার মনের বিশ্বাস যাতে বেড়ে যায়) হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেন, আমার সাথে বসুন কিচুক্ষণ ঈমান আনি। (ঈমান নিয়ে আলোচনা করি) হযরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ইয়াকীন (বিশ্বাস) পুরোটাই ঈমান এর অন্তর্ভূক্ত। হযরত ইবনে উমর (রা.) বলেছেন, কোন বান্দা প্রকৃত তাকওয়া (ঈমান) লাভ করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার অন্তর যেটা সন্দেহ সৃষ্টি করে সেটা না ছাড়বে। মুজাহিদ (রঃ) বলেন ....... এই আয়াতের অর্থ হলো: হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি তোমাকে ও নূহ (আঃ) কে একই দ্বীনের হুকুম করেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন ...... এর অর্থ হচ্ছে, পন্থা ও রাস্তা।
প্রকৃত মুসলিম কে?
১০। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, প্রকৃত মুসলমান সে ব্যক্তি, যিনি অপর মুসলমানকে স্বীয় জবান এবং হাতের অন্যায় থেকে রক্ষা করেন। অর্থাৎ কথা ও কাজে অন্যকে কষ্ট দেন না। প্রকৃত মুহাজির ঐ ব্যক্তি যিনি আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ পরিহার করেন। অর্থাৎ গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকেন।
অনুচ্ছেদ নং ৫ঃ ইসলামের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম জিনিস কী?
ইসলামের কোন চরিত্র উত্তম?
১১। হাদীসঃ হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) বলেন, সাহাবায়ে কেরাম একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ইসলামের কোন চরিত্র সর্বাপেক্ষা উত্তম? উত্তরে তিনি বললেন, অন্য মুসলমানকে স্বীয় কথা ও কাজ দ্বারা কষ্ট না দেয়া।
অনুচ্ছেদ নং ৬ঃ অন্যকে খানা খাওয়ানো ইসলামের অন্তর্ভূক্ত।
১২। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন, ইসলামের কোন চরিত্র উত্তম? উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পরিচিত অপরিচিত নির্বিশেষে সকলকে খানা খাওয়ানো এবং সালাম প্রদান করা।
অনুচ্ছেদ নং ৭ঃ ঈমানের একটি কাজ হলো, অপর ভাইয়ের জন্য ঐ জিনিস পছন্দ করা যা নিজের জন্য পছন্দ হয়।
১৩। হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ পূর্ণাঙ্গ ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে, অপর মুসলমান ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ করে।
অনুচ্ছেদ নং ৮ঃ রাসূল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসা ঈমানের অংশ।
১৪। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এ আল্লাহর শপথ যার হাতে আমার জীবন। তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ কামেল মোমেন হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা ও সন্তান-সন্ততি হতে অধিক প্রিয় না হই।
১৫। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে কেউ পূর্ণাঙ্গ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং সকল মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় না হই (অর্থাৎ দুনিয়ার সবকিছু হতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বেশি মহব্বত করাই প্রকৃত ঈমানের আলামত)।
অনুচ্ছেদ নং ৯ঃ ঈমানের স্বাদ।
ঈমানের স্বাদ
১৬। হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রেওয়ায়াত করেন, তিনি বলেছেন; ঐ ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ উপভোগ করতে সক্ষম, যার মধ্যে এ তিনটি চরিত্র বিদ্যমান (১) যার কাছে অপরাপর সমুদয় বস্তু হতে স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি প্রিয়, (২) যে কাউকে ভালসাসে তো আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসে, (৩) ঈমান গ্রহণের পর পুনরায় কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়া এমনভাবে অপছন্দ করে, যেমন সে অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপছন্দ করে।
অনুচ্ছেদ নং ১০ঃ আনসারী সাহাবীদের প্রতি ভালবাসা ঈমানের নিদর্শন।
১৭। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে ইরশাদ করেন, মদীনার আনসারকে ভালবাসা ঈমানের এবং আনসারদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা মোনাফেকী চিহ্ন।
১৮। হাদীসঃ হযরত ওবাদা বিন সামেত (রাঃ) যিনি একজন বদরী সাহাবী, তিনি আকাবার রাতের একজন নকীবও ছিলেন, তিনি বলেন, ঐ রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে (যাঁরা তাঁর আশেপাশে বসা ছিলেন) লক্ষ্য করে বলেছেন, তোমরা আমার কাছে এ কথার উপর বায়আত (অঙ্গীকার) গ্রহণ কর যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদতে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, যেনা করবে না, তোমাদের সন্তান সন্ততিদেরকে হত্যা করবে না, মিথ্যা অপবাদ রটাবে না, যা তোমরা কারো উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে করে থাক। কোন ভাল কাজে নাফরমানী করবে না। তোমাদের মধ্যে যারা এ ওয়াদাগুলো পূরণ করবে তাদের প্রতিদান আল্লাহর কাছে পাবে। কেউ যদি ভুলবশতঃ এরুপ কোন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে আর এ জন্য দুনিয়াতে তাকে কোন প্রকার শাস্তি প্রদান করা হয়, তা হলে উক্ত শাস্তি তার জন্য কাফফারা গণ্য হবে। আর যদি কেউ এরুপ কোন অপরাধ করার পর দুনিয়াতে আল্লাহ পাক তা গোপন রাখেন, তবে তা আল্লাহর উপর ন্যস্ত। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করতে পারেন, অন্যথায় শাস্তিও দিতে পারেন। হযরত ওবাদা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা উপরোক্ত কথার উপর তাঁর নিকট বায়আত গ্রহণ করলাম।
ফেতনা ফাসাদ থেকে দূরে থাকা ঈমানের আলামত
অনুচ্ছেদ নং ১২ঃ ফেতনা থেকে দূরে থাকা দ্বীনের কাজ।
১৯। হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, সে সময় বড়ই নিকটে, যে সময় মুসলমানগণ ফেতনা ফাসাদ থেকে বাঁচার জন্যে নিজের উত্তম সম্পদ বকরীগুলো নিয়ে পাহাড়ের চূড়া অথবা আরো ঊর্ধ্বে গিয়ে আত্মগোপন করবে। অর্থাৎ নিজেকে ফেতনা ফাসাদ থেকে দূরে রাখা ঈমানের আলামত।
অনুচ্ছেদ নং ১৩ঃ রাসূল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী: "আমি আল্লাহর ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে বেশী অবগত।" আর ...... তথা আল্লাহকে জানা বা চেনা মনের কাজ। কারণ আল্লাহ তায়াল বলেছেন-
অর্থঃ কিন্তু তিনি তোমাদের মনের কৃতকর্মের কারণে তোমাদের পাকড়াও করবেন। (সূরা বাকারা-আয়াত: ২২৫)
২০। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সাহাবীদেরকে কোন কাজের আদেশ করতেন, তখন তাদেরকে এমন কাজের আদেশ করতেন যা তাদের সাধ্যাধীন হয়। সাহাবীগণ বলতেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার মত নই, যেহেতু মহান আল্লাহ আপনার (আউয়াল আখের) সব গুনাহ ক্ষমা কে রদিয়েছেন (তাই আপনার তো কোন আমলের প্রয়োজন নেই)। এ কথায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুবই রাগান্বিত হতেন। এমন কি তাঁর চেহারা মোবারকে তার চিহ্ন প্রতিভাত হত। তারপর তিনি বলতেন, আমি তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা আল্লাহভীরু এবং 'আল্লাহ সম্পর্কে বেশি পরিজ্ঞাত।
অনুচ্ছেদ নং ১৪ঃ আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপসন্দ করার ন্যায় যে কুফুরির মধ্যে ফিরে যেতে অপসন্দ করে, তা ঈমানের অংশ।
২১। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে রেওয়ায়াত করেন, ঐ ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ উপভোগ করতে সক্ষম, যার মধ্যে এ তিনটি চরিত্র বিদ্যমান- (১) যার কাছে সমুদয় বস্তু থেকে স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক প্রিয়। (২) যে কাউকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসে। (৩) যে ঈমান গ্রহণের পর কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়া এমনভাবে অপছন্দ করে, যেমন অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপছন্দ করে।
অনুচ্ছেদ নং ১৫ঃ ঈমানদারদের কার্যকলাপে পারস্পারিক শ্রেষ্ঠত্ব।
২২। হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেছেন, হিসাব নিকাশের পর বেহেশতীগণ বেহেশতে এবং দোযখীগণ দোযখে প্রবেশ করবে। কিছুকাল পর আল্লাহ বলবেন, যাদের অন্তরে সরিষা পরিমাণ ইমাণ বিদ্যমান ছিল, তাদেরকেও দোযখ থেকে বের কর। অতঃপর গুনাহগার বান্দাগণ দোযকের শাস্তি ভোগ করে একেবারে কালো বর্ণ হয়ে বের হয়ে আসবে। তারপর তাদেরকে বেহেশতে প্রবেশের উপযুক্ত করার জন্য বৃষ্টির পানিতে অথবা মারেকের বর্ণনা মতে "হায়াতের নদীতে" ঢেলে দেয়া হবে। অতঃপর তারা এমনভাবে পরিপুষ্ট ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়ে উঠবে, যেমনিভাবে ঢলে পার্শ্বস্থিত জমিতে তরতাজা সতেজ বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম হয়ে থাকে। তোমরা কি দেখছ না সে চারা গাছগুলো কেমন সতেজ ও সৌন্দর্যমন্ডিত হয়ে থাকে!
২৩। হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এক সময় আমি নিন্দ্রামগ্ন ছিলাম। স্বপ্নযোগে দেখতে পেলাম, লোকদেরকে আমার সম্মুখে বিভিন্ন রকম জামা পরিধান করিয়ে উপস্থিত করা হচ্ছে। কারো জামা সিনা পর্যন্ত, কারো জামা আরো একটু নীচ পর্যন্ত বিস্তৃত। হযরত ওমর বিন খাত্তাবকে আমার সম্মুখে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাঁর জামা এত লম্বা যে, তিনি তা নীচ থেকে উপরের দিকে উঠিয়ে রাখছেন। এতদশ্রবণে সাহাবীগণ আরজ করলেন, হুযুর! আপনি এ স্বপ্নের তাবীর কি করেছেন? উত্তরে তিনি ইরশাদ করেন, এ দ্বারা দ্বীন বুঝানো হয়েছে (এতে বুঝা যায়, হযরত ওমর (রাঃ)-এর দ্বীনী মর্যাদা অনেক বেশী)।
অনুচ্ছেদ নং ১৬ঃ লজ্জা ঈমানের অঙ্গ।
২৪। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা এক আনসারী ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি তাঁর ভাইকে লজ্জার ব্যাপারে নসীহত করছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তাকে ছেড়ে দাও, লজ্জা ঈমানের অংশ।
অনুচ্ছেদ নং ১৭ঃ আল্লাহর বাণী:
অর্থঃ যদি তারা তওবা করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত প্রদান করে, তাহলে তাদের পথ মুক্ত করে দাও।
২৫। হাদীসঃ হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মানুষের সাথে জেহাদ করার জন্য আমি অদিষ্ট হয়েছি, যতক্ষণ না সে "আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল"-এ কথার সাক্ষ্য দিবে, নামায কায়েম করবে ও যাকাত প্রদান করবে। মানুষ এগুলো আদায় করার পর তাদের জান মাল আমার থেকে রক্ষা করতে পারবে, তবে ইসলামী বিধি বিধানে এটা প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ যদি সে কাউকে হত্যা করে অথবা অন্তরে কুফর ও নেফাক গোপন রাখে, তখন তার হিসাব আল্লাহর নিকট।
অনুচ্ছেদ নং ১৮ঃ যে বলে ঈমান হলো কাজ। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
অর্থঃ তোমাদের জান্নাত দেয়া হয়েছে তোমাদের কৃত কর্মের কারণে।
অর্থঃ "তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা যা কিছু করেছে, সে সম্পর্কে আমি তাদেরকে অবশ্যই জিজ্ঞেস করবো।" এই আয়াতের ব্যাপারে কতিপয় আলেমগণ বলেছেন যে, এই আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কালোমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ সম্পর্কেই জিজ্ঞাসা করা হবে।
অর্থঃ এ রকম সাফল্যর জন্যই কর্মীদের কাজ করা উচিৎ।
২৬। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, "কোন প্রকার আমল উত্তম" এ প্রসঙ্গে একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করাই উত্তম আমল। পুনরায় প্রশ্ন করা হল, তারপর কোন আমল উত্তম? উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য জেহাদ করা। পুনরায় প্রশ্ন করা হল, তারপর কি? উত্তরে তিনি বললেন হজ্জে মাকবুল উত্তম আমল।
অনুচ্ছেদ নং ১৯ঃ প্রকৃতপক্ষে ইসলাম গ্রহণ না করা শুধু বাহ্যিক বশ্যতা স্বীকার করে অথবা হত্যার ভয়ে ইসলাম গ্রহণ করা (এটার দ্বারা মুমিন হওয়া যায় না ও আখেরাতে কোনো কাজে আসে না) ।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালার বাণী:
অর্থ: কিছু গ্রাম্যলোক বলে-"আমরা ঈমান এনেছি" আপনি বলুন তোমরা (প্রকৃত পক্ষে) ঈমান আননি। তোমরা বরং (একথা) বলো আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি।
আর যখন ইসলাম গ্রহণ প্রকৃতপক্ষে হবে। সে সস্পর্কে আল্লাহ বলেন।
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে ইসলাম হচ্ছে একমাত্র দ্বীন। (সুরা আলে ইমরান-১৯)
২৭। হাদীসঃ হযরত সায়াদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা'লীফে ক্বলবের (অন্তর জয়ের) উদ্দেশ্যে কোন কোন লোককে কিছু ধন সম্পদ প্রদান করেন। সে মজলিসে হযরত সা'দ (রাঃ)ও বসা ছিলেন, তিনি বলেন, ঐ লোকদের মধ্যকার এক ব্যক্তিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুই দিলেন না। অথচ উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে সে লোক আমার অধিক প্রিয় ছিল। তখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, হুযুর! ঐ লোকটি সম্পর্কে আপনার কি অভিমত? আল্লাহর শপথ, আমি তো তাকে মোমেন মনে করি। উত্তরে হুযুর বললেন, তুমি তাকে মুসলিমও মনে করা না কি? এতদশ্রবণে আমি কিছুক্ষণ নিশ্চুপ বসে রইলাম। আমার ধারণা পুনরায় তার সম্পর্কে প্রশ্ন করতে আমাকে বাধ্য করল। সুতরাং আমি বললাম, অমুক ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? আমি তো তাকে মোমেন মনে করি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাকে মুসলিম মনে কর নাকি? এবারও আমি কিছুক্ষণ নিশ্চুপ বসে রইলাম। তারপর তার প্রসঙ্গে আমার ধারণা আমাকে পুনরায় প্রশ্ন করতে বাধ্য করল। তাই আমি পুনরায় প্রশ্ন করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবারও পূর্ববৎ প্রশ্নই রাখলেন। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সম্বোধন করে বললেন, হে সা'দ! আমি কাউকে কিছু দান করি এ ভয়ে, যেন আল্লাহ তাকে দোযখে উপুড় করে নিক্ষেপ না করে। অথচ অন্য ব্যক্তি আমার নিকট তার চাইতে বেশি প্রিয়।
অনুচ্ছেদ নং ২০ঃ সালামের ব্যাপক প্রচলন ইসলামের অঙ্গ।
অর্থঃ আম্মার (রাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি তিনটি গুণ হাসিল করে সে পূর্ণ ঈমান লাভ করে।
(১) তোমার নিজের সম্পর্কে ইনসাফ করা, (২) সকলকে ব্যাপকভাবে সালাম দেয়া এবং (৩) অভাবগ্রস্থ অবস্থায় দান করা।
২৮। হাদীসঃ হযরত আবুদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইসলামের মধ্যে কোন চরিত্র উত্তম। উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি লোকদেরকে কানা খাওয়াবে এবং পরিচিত সবাইকে সালাম দিবে।
অনুচ্ছেদ নং ২১ঃ স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা এবং বিভিন্ন প্রকার অকৃতজ্ঞতা এ সম্পর্কে আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর থেকে ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি হাদীস রয়েছে।
২৯। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন আমাকে দোযখ অবলোকন করানো হল, তখন আমি দেখতে পেলাম, দোযখের অধিকাংশই মহিলা যারা কুফরী (অবাধ্যতা) করত। এতদশ্রবণে জিজ্ঞাসা করা হল, তারা কি আল্লাহর অবাধ্য ছিল? উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা স্বামীর অবাধ্য ছিল। তারা কখনো স্বামীর ইহসান স্বীকার করে না। কারণ তুমি যদি সারা জীবনও স্ত্রীর প্রতি দয়া অনুগ্রহ প্রদর্শন কর, তারপর সে তোমার পক্ষ হতে যদি কোন সময় এতটুকু অন্যায় দূর্ব্যবহারও দেখতে পায়, যা তার অসহনীয়, তখন সে বলে, আমি জীবনে কখনো তোমার কাছ থেকে কোন ভাল ব্যবহার পাইনি। তুমি আমার প্রতি কোন অনুগ্রহ করনি।
অনুচ্ছেদ নং ২২ঃ গুনাহের কাজ মূর্খতা। কেউ শিরক ছাড়া অন্য গুনাহ করলে তাকে কাফের বলা হয় না। এ ব্যাপারে নবী করীম সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। "তুমি এমন লোক যে, তোমার মধ্যে মূর্খতা রয়ে গিয়েছে।"
মহান আল্লাহ বলেন-
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহর সাথে শিরক করলে তিনি মাফ করবেন না। আর তিনি শিরক ছাড়া অন্য গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন যাকে ইচ্ছে তাকে।
অর্থঃ "আর যদি মুমিনদের দুটি দল সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তাহলে তোমরা তোদের মধ্যে সীমাংসা করে দাও। আল্লাহ তায়াল সংঘর্ষকারী দুদলকে মুমিন বলে উল্লেখ করেছেন।
৩০। হাদীসঃ হযরত আহনাফ ইবনে কায়স (রাঃ) বলেন, এক সময় আমি হযরত আলী (রাঃ)-এর সাহায্যার্থে রওয়ানা হলাম। পথিমধ্যে আবু বকর (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত হলে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যাচ্ছ। বললাম, হযরত আলীর সাহায্যার্থে (সিফফীন যুদ্ধে) রওয়ানা হয়েছি। এতদশ্রবণে তিনি আমাকে বললেন, বাড়ি ফিরে যাও। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যখন দু'জন মুসলমান পরস্পর যুদ্ধে মুখোমুখি হয়, তখন তাদের হত্যাকারী ও হত্যাকৃত উভয়েই জাহান্নামী হয়। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! হত্যাকারী তো স্বীয় অপরাধের কারণে জাহান্নামী হবে। তবে হত্যাকৃত ব্যক্তির অপরাধ কি? উত্তরে তিনি বললেন, হত্যাকৃত ব্যক্তি তো হত্যাকরীকে হত্যা করার জন্য সচেষ্ট ছিল।
৩১। হাদীসঃ হযরত মা'রুর (রাঃ) বলেন, একদা মদীনার নিকটবর্তী 'রাবাযা' নামক স্থানে হযরত আবু যার (রাঃ)-এর সাথে আমার দেখা হলে আমি দেখলাম, তাঁর গায়ে একখানা মূল্যবান চাদর রয়েছে। অনুরুপ একখানা চাদর তার ভৃত্যের গায়েও রয়েছে। আমি তাদের এরুপ সমতার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি এক সময় এক ভৃত্যকে গালি দিলাম, এমন কি তার মা'র দিক থেকেও তাকে লজ্জা দিলাম। এ অবস্থা দেখে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে লক্ষ্য করে বলেন, হে আবু যর! তুমি তাকে তার মা'র দিক থেকেও লজ্জা দিলে? তুমি তো এমন ব্যক্তি, তোমার মধ্যে এখনো জহেলী যুগের প্রভাব প্রতিক্রিয়া রয়ে গেছে। হে আবু যর! তোমাদের ভৃত্য তোমাদের ভাই। তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করা হয়েছে। সুতরাং যার ভাই তার অধীনস্থ হবে, সে যাবে খাবে তাকেও তা খাওয়াবে এবং যা পরিধান করবে তা পরিধান করাবে। তাদেরকে কখনো এমন কাজের আদেশ করবে না যা কষ্টদায়ক। হ্যাঁ! যদি কখনো এরুপ হয়ে যায় তখন তাদেরকে সাহায্য করো।
অনুচ্ছেদ নং ২৩ঃ যুলুমের প্রকারভেদ।
৩২। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, যখন মহান আল্লাহর বাণী- "যারা ঈমান গ্রহণ করে এবং ঈমানের সাথে জুলুমকে না মিলায়" অবর্তীণ হল, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে কমবেশি জুলুম করে না। তখন আল্লাহ তা'আলা কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত অবর্তীণ করেন (ইন্নাশ শিরকা লাযুলমুন আযীমুন) নিশ্চয়ই শিরক সর্বাপেক্ষা বড় জুলুম।"
৩৩। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মোনাফেকের আলামত তিনটি। (১) যখন কথা বলে মিথ্যা বলে। (২) যখন কোন অঙ্গীকার করে তা ভঙ্গ করে। (৩) যখন তার কাছে কিছু আমানত রাখা হয় তা খেয়ানত করে।
৩৪। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, চারটি চরিত্র এরুপ আছে, যার মধ্যে তা পাওয়া যাবে, সে খালেস মোনাফেক গণ্য হবে। আর যার মধ্যে উক্ত চরিত্রসমূহের যে কোন একটি বিদ্যমান থাকবে তা হলে মনে করতে হবে, তার মধ্যে মোনাফেকীর চিহ্ন বিদ্যমান আছে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তা পরিহার না করে। উক্ত চিহ্নসমূহ হল- (১) যখন আমানত রাখা হয় তখন খেয়ানত করে। (২) যখন কথা বলে মিথ্যা বলে। (৩) যখন ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে। (৪) আর যখন ঝগড়া করে তখন গালমন্দ করে।
অনুচ্ছেদ নং ২৫ঃ কদরের রাতে ইবাদত করা ঈমানের অংশ।
৩৫। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভার্থে বিশ্বাসের সাথে কদরের রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করবে, তার অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
অনুচ্ছেদ নং ২৬ঃ জিহাদ করা ঈমানের অঙ্গ।
৩৬। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা ঐ ব্যক্তির যিম্মাদার হয়ে যান, যে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হয়। মহান আল্লাহ বলেন, "তার যুদ্ধে বের হওয়া একমাত্র আমার উপর ঈমান এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বিশ্বাস করার কারণেই। সুতরাং যুদ্ধে হয়তো আমি তাকে ধন সম্পদ ও গনীমতের মালামালসহ বাড়ি ফিরিয়ে থাকি অথবা শাহাদাতের মাধ্যমে বেহেশতে প্রবেশ করাই"। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টদায়ক মনে না করতাম, তাহলে আমি কখনো যুদ্ধ গমন থেকে বিরত থাকতাম না। আমার কাছে এ অত্যন্ত পচন্দনীয় যে, আমি যুদ্ধে গিয়ে শহীদ হব তারপর জীবিত হব, তারপর শহীদ হব, তাপর পুনরায় জীবিত হব, তারপর পুনরায় মহীদ হব।
অনুচ্ছেদ নং ২৭ঃ রমযান মাসে নফল ইবাদত করা ঈমানের অন্তর্ভূক্ত।
৩৭। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মাহে রমযানের রাতে যে ধর্মীয় বিশ্বাস ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নামায এবং অন্যান্য ইবাদত করে, তার অতীতের সকল সগীরা গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
অনুচ্ছেদ নং ২৮ঃ সওয়াবের আশায় রমযানের রোযা রাখা ঈমানের অঙ্গ।
৩৮। হাদীসঃ হযরত আবু সালমা আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ধর্মীয় বিশ্বাস এবং আল্লাহর রেজামন্দি লাভের উদ্দেশ্যে রমযানের রোযা পালন করে, তার অতীতের সকল সগীরা গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
অনুচ্ছেদ নং ২৯ঃ দ্বীন খুবই সহজ সরল। নবী সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর কাছে বেশী পছন্দীয় দ্বীন হলো একমূখী সহজ-সরল দ্বীন।
৩৯। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, দ্বীন খুব সহজ সরল, কেউ নিজেকে দ্বীনের উপর বিজয়ী করার ইচ্ছা করলে সে অবশ্যই পরাভূত হবে। অর্থাৎ,দ্বীনে বাড়াবাড়ি করো না; বরং সর্বদা মধ্যপন্থা অবলম্বন করা, নিয়মানুবর্তিতা অনুসরণ করা, সওয়াবের সুখবর গ্রহণ কর এবং সকাল সন্ধ্যা ও শেষ রাতের আমল দ্বারা স্বীয় কর্মে সাহায্য কামনা কর।
অনুচ্ছেদ নং ৩০ঃ নামায ঈমানের অঙ্গ। এ ব্যাপারে আল্লাহর বাণী:
অর্থ: আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ঈমান (অর্থাৎ তোমাদের নামায যা তোমরা বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে ফিরে পড়েছিলে) নষ্ট করে দিবেন না।
৪০। হাদীসঃ হযরত বারা বিন আযেব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে আসার পর সর্বপ্রথম স্বীয় নানার/মামার গোত্রীয় আনসারদের সেখানে অবতরণ করেন। মদীনায় অবস্থানকালে তিনি প্রথম ষোল অথবা সতর মাস পর্যন্ত বায়তুল মাকদাসের দিকে ফিরে নামায আদায় করেন। কিন্তু সর্বদা মনে মনে আশা পোষণ করতেন তাঁর কেবলা যেন বায়তুল্লাহ শরীফ নির্ধারিত হয়। অতঃপর একদিন তিনি বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে ফিরে সর্বপ্রথম যে নামায অদাায় করলেন, তা ছিল আসরের নামায। তাঁর সাথে সাহাবীদের একদল লোক উক্ত নামায অাদায় করেন। এদরে মধ্য থেকে এক ব্যক্তি স্বীয় দোত্রের এক মসজিদের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পেলেন, উক্ত মসজিদের মুসল্লিগণ বায়তুল মাকদাসের দিকে ফিরে আসরের নামায আদায় করছেন। তা দেখে উক্ত মুসল্লী তাদেরকে বললেন, আমি আল্লাহর নামে সাক্ষ্য দিচ্ছি, আজকের এ নামায আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মক্কার দিকে ফিরে আদায় করেছি। মুসল্লিগণ এ খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে নামাযের মধ্যে বায়তুল মাকদাস থেকে বায়তুল্লাহর দিকে ফিরে গেলেন। ইহুদীদের কাছে এ ঘটনা বড়ই আশ্চর্য মনে হল। যেহেতু ইতিপূর্বে তিনি বায়তুল মাকদাসের দিকে ফিরে নামায আদায় করতেন। ইহুদীগণও সে দিকেই ফিরত। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বায়তুল্লাহর দিকে ফিরে গেলেন, তখন তারা তা অস্বীকার করল।
যোহায়ের বলেন, আবু ইসহাক আমাদেরকে বারা' বিন আযেব থেকে বর্ণিত তাঁর হাদীসে বর্ণনা করেছেন, বায়তুল মাকদাসের দিক থেকে কেবলা পরিবর্তনের পূর্বে মুসলমানদের কিছু সংখ্যক ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে মারা গেছেন আর কিছু শহীদ হয়েছিলেন, তাদের সম্পর্কে আমরা কি বলব; আমরা তা জানি না । তাই তাদের সম্পর্কে কুরআনের আয়াত অবর্তীণ হল- "মহান আল্লাহ তোমাদের ঈমান নষ্ট করবেন না।" আল্লাহ তার বদলা দিবেন।
অনুচ্ছেদ নং ৩১ঃ মানুষের সুন্দর ভাবে ইসলাম গ্রহণ।
অর্থঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, বান্দা যখন ইসলাম গ্রহণ করে ফলে তার ইসলামটা সুন্দর হয়। আল্লাহ তাহার কৃত সব মন্দকাজ ক্ষমা করে দেন। তারপর (ভাল-মন্দ কাজের এরুপ) প্রতিদান দেয়া হয়। ভালো কাজের বদলে দশগুন থেকে সাত শত গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। আর মন্দ কাজের বদলে ঠিক অনূরুপ মন্দ প্রতিদান দেন। তবে আল্লাহ তাও মাফ করে দিতে পারেন।
৪১। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি তার ইসলামকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে। অর্থাৎ, নেক কাজ করে, তা হলে প্রতি নেকীর জন্য দশ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত লেখা হয়। পক্ষান্তরে প্রতি গুনাহের জন্য কেবলমাত্র তার অনুরুপই লেখা হয়।
অনুচ্ছেদ নং ৩২ঃ দ্বীনের যে কাজ সর্বদা (নিয়মিত) করা হয়, তা আল্লাহর প্রিয়তম।
৪২। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হুজরায় আসলে তাঁর কাছে অন্য এক মহিলাকে দেখতে পেলেন। তিনি তার পরিচয় জানতে চাইলে হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ইনি অমুক মহিলা, যার নাম খাওলা (রাঃ), তারা নামায সম্পর্কে আলোচনা করছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের আলোচনা বন্ধ কর। তোমরা ঐ আমলই করতে থাক যা পূর্বে করছিলে। আল্লাহর শপথ! আল্লাহ কখনো কাউকে বঞ্চিত করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজেকে বঞ্চিত না করে। আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ধর্মীয় কাজ তাই যা সে সর্বদা স্থায়ীভাবে করে। অর্থাৎ নিয়মিত অল্প আমল হলেও তা আল্লাহর নিকট বেশি পছন্দনীয়।
অনুচ্ছেদ নং ৩৩ঃ ঈমানের হ্রাস ও বৃদ্ধি। মহান আল্লাহ বলেন:
......: আমি তাদের হেদায়াত (ঈমান) বৃদ্ধি করে দিয়েছি।
......: আর যারা ঈমান এনেছে, আমি তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি করে দিয়েছি।
......: আজ আমি তোমাদেরর জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম।
৪৩। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন- তিনি ইরশাদ করেন, জাহান্নাম থেকে সব লোককে বের করে নিয়ে আসা হবে, যে কালোমা "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু" স্বীকার করবে এবং তার অন্তরে এক যব পরিমাণ নেকী বা ঈমান থাকবে। ঐ ব্যক্তিকেও জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসা হবে। যে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ স্বীকার করবে এবং তার অন্তরে এক গম পরিমাণ ঈমান থাকবে। অনুরুপভাবে ঐ সকল লোককেও জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসা হবে, যারা কালেমা "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" স্বীকার করবে এবং অন্তরে এক বিন্দু পরিমাণ ঈমান থাকবে।
৪৪। হাদীসঃ হযরত একদা হযরত ওমর (রাঃ)-কে এক ইহুদী বলল, হে আমীরুল মো'মেনীন! আপনাদের কুরআনে এমন একটি আয়াত রয়েছে, যা আপনারা সর্বদা তেলাওয়াত করছেন। যদি আমাদের ইহুদীদের সম্পর্কে এ ধরনের কোন আয়াত অবর্তীণ হত, তাহলে আমরা ঐ দিনটিকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করতাম। তখন ওমর (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, সে কোন আয়াত? ইহুদী বলল, তা হল-আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণতা প্রদান করেছি এবং আমার নেয়ামত তোমাদের উপর পূর্ণ করেছি এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করেছি।
এতদশ্রবণে হযরত ওমর (রাঃ) বললেন, ঐ আয়াতটি কোন সময় কোথায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর অবর্তীণ হয়েছে তা আমরা জানি। সে দিনটি হল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আরাফাতের ময়দানে দন্ডয়মান ছিলেন। আর তা ছিল জুমআর দিন (হযরত ওমর (রাঃ) এ বাক্য দ্বারা বুঝাতে চেয়েছেন, অবশ্যই এ দিনটি ঈদ থেকে বেশি উৎসব হিসেবে গণ্য করা হয়)।
অনুচ্ছেদ নং ৩৪ঃ যাকাত ইসলামের অংশ।
৪৫। হাদীসঃ হযরত তালহা বিন ওবায়দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, একদা নজদের অধিবাসী 'যেমাম ইবনে সা'লাব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে এমন অবস্থায় হাজির হলেন, তাঁর মাথায় চুল ছিল এলামেলো। আমরা তাঁর মুখের ভাষা বুঝতে পাচ্ছি, কিন্তু কি বলছেন তা বুঝতে পারছি না। এমন কি তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এসে বসলেন। অতঃপর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। উ্ত্তরে তিনি বললেন, ইসলাম হল প্রতিদিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা। তারপর তিনি বললেন, এর অতিরিক্ত আমার উপর নামায আছে? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না। তবে যদি তুমি নফল নামায আদায় কর (করতে পার)। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বললেন এবং রমযানের রোযা রাখা। তিনি বললেন, হুযুর! এর অতিরিক্ত আর কোন প্রকার রোযা আছে কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অতিরিক্ত কোন রোযা নেই। তবে যদি তুমি নফল হিসেবে আদায় কর (করতে পার)। রাবী তালহা বলেন, অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতের কথাও আলোচনা করেন। তারপর তিনি বললেন, এর অতিরিক্ত আর কিছু আছে কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন না। তবে যদি তুমি অতিরিক্ত দান সদকা করতে চাও করতে পার। অতঃপর লোকটি পেছনের দিকে চলে যেতে লাগল আর বলতে লাগল, আমি যা শুনেছি এর চাইতে আর কিছু বাড়াব কমাব না। তার কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটি যদি সত্য বলে থাকে তা হলে সে অবশ্যই কামিয়াব হবে। অর্থাৎ তার কথিত আমল করলে সে অবশ্যই নাজাত লাভ করবে।
অনুচ্ছেদ নং ৩৫ঃ জানাযার (মৃতদেহ) পেছনে চলা ঈমানের অংশ।
৪৬। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের খাতিরে সওয়াবের আশায় কোন মুসলামনের জানাযার পেছনে পেছনে চলে, তারপর জানাযার নামায আদায় ও কাফন করা পর্যন্ত সাথে থাকে, সে দু'ক্বীরাত সওয়াব অর্জন করে বাড়ী ফিরবে। প্রত্যেক ক্বীরাত ওহুদ পাহাড় পরিমাণ হবে। যে ব্যক্তি কেবল জানাযার নামায আদায় শেষে চলে আসবে, সে এক ক্বীরাতের সওয়াব নিয়ে বাড়ী ফিরবে। 'ওসমানুল মুয়াজ্জেন'ও এরুপ বর্ণনা করেছেন।
অনুচ্ছেদ নং ৩৬ঃ মুমিনের আমল তার অজ্ঞাতসারে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা।
এই ব্যাপারে ইবরাহীম তাইমী (রঃ) বলেন: 'আমি আমার কথাকে আমার কাজের সঙ্গে মিলাতে গিয়েই মিথ্যুক হওয়ার আশংকা করেছি।"
ইবনে আবু মুলাইকা (রঃ) বলেন: আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ত্রিশজন সাহাবী (রঃ) পেয়েছি। তাদের প্রত্যেকেই নিজের ব্যাপারে নেফাকের আশংকা করতেন। তাদের কেউ একথা বলতেন না যে, সে জিবরাঈল ও মিকাঈল (আঃ) এর মত ঈমানদার"
হাসান বসরী (রঃ) থেকে উল্লেখ করা হয়। "শুধুমাত্র মুমিনগণই মুনাফেকীর ভয় করে। আর শুধু মুনাফেকরাই এ ব্যাপারে নিরাপদ-নিশ্চিন্তে থাকে।
তওবা না করে গুনাহ ও নেফাকী কাজে লিপ্ত থাকা থেকে বিরত থাকা।
এই ব্যাপারে আল্লাহর বাণী:
অর্থ: "তারা (পূর্বে) যেসব (গুনাহ) করেছে তা অজ্ঞাতসারে আর করেনি। (সুরা আলে ইমরান-১৩৫ আয়াত)
৪৭। হাদীসঃ হযরত জুবায়দ মুরজিয়া হতে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মুসলামনকে গালিগালাজ করা পাপাচার এবং তাকে হত্যা করা কুফরীর মধ্যে গণ্য।
৪৮। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে শবে কদরের খবর দেয়ার জন্য বের হন। অতঃপর তিনি দেখতে পান, দু'জন মুসলমান পরস্পর জগড়ায় লিপ্ত রয়েছেন। তাদের এ অবস্থা দেখে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদেরকে কদরের রাত সম্পর্কে খবর দেয়ার জন্য বের হয়ে দেখতে পেলাম, অমুক অমুক ঝগড়ায় লিপ্ত রয়েছে। তাদের অবস্থা দেখে কদরের রাতের সঠিক এলম আমার বক্ষ থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। হয়ত এটা তোমাদের জন্য ভালই হবে। তাই তোমরা তা শেষ দশ তারিখের সাত, নয় এবং পাঁচ এর মধ্যে তালাশ কর।
(এ ঘটনা মসজিদে নবনীতে হয়েছিল। কদর রাতের নির্ধারিত তারিখ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিল থেকে উঠিয়ে নেয়ায় তিনি সাহাবাদেরকে রমযানের শেষ দশ দিনে ২৭, ২৯ এবং ২৫ তারিখের বিজোড় রাতে শবে কদর তালাশ করার আদেশ করেছেন। তবে সলফে সালেহীনের অধিকাংশের মতে ২৭ শে রমযানের রাতকেই কদরের রাত হিসেবে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
অনুচ্ছেদ নং ৩৭ঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ঈমান, ইসলাম, ইহসান ও কিয়ামতের জ্ঞান সম্পর্কে জিবরাঈল (আ:) এর প্রশ্ন এবং রাসূল সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রশ্নের উত্তর। এরপর তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন-জিবরাঈল (আঃ) এসেছেন, তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত বিষয়ের পুরোটাকেই দ্বীন হিসেবে গণ্য করেছেন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদে কায়েস গোত্রের প্রতিনিধিদের কাছে যা বর্ণনা করেছেন, তাও ঈমানের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ তায়ালার নিম্নোক্ত বাণীর দ্বারাও বুঝা যায় যে, ইসলাম ও দ্বীন একই জিনিস।
অর্থ: যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অনুসন্ধান করবে, সে দ্বীন কখনোই কবুল করা হবে না।
৪৯। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের উদ্দেশ্যে মসজিদে নববীতে তাশরীফ রাখলেন। এমন সময় হযরত জিব্রাইল (আঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে আগমন করে তাঁকে প্রশ্ন করলেন, ঈমান কি? তিনি বললেন, ঈমান হল তুমি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, আখেরাতে তাঁর সাক্ষাত এবং তার রাসূলের উপর এবং পুনরুত্থানের উপর ঈমান আনবে। তারপর তিনি প্রশ্ন করলেন, ইসলাম কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইসলাম হল, তুমি এক আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। নামায কায়েম করবে, ফরয যাকাত প্রদান করবে এবং রমযানের রোযা রাকবে। তারপর আগন্তুক জিজ্ঞেস করলেন, ইহসান কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি এ খেয়ালে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তুমি মহান আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ। যদি তুমি আল্লাহকে দেখতে না পাও, তবে মনে রাখবে, স্বয়ং আল্লাহ তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন।
তারপর আগন্তুক প্রশ্ন করলেন, কেয়ামত কবে হবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রশ্নকৃত প্রশ্নকারী অপেক্ষা এ বিষয়ে বেশি জ্ঞাত নয়। তবে আমি তোমাকে কেয়ামতের আলামত সম্পর্কে খবর দিচ্ছি। তা হল, বান্দী যখন তার মালিকে জন্ম দিবে, যখন নিকৃষ্ট উষ্ট্রের মালিকগণ বড় বড় অট্ট্রালিকা বানিয়ে গৌরব করবে। পাঁচটি বস্তু এমন রয়েছে যার সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেই জ্ঞাত নয়। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করেন-
........ মহান আল্লাহর কাছেই রয়েছে কেয়ামতের এলেম, বৃষ্টি কখন অবর্তীণ হবে, মায়েদের রেহেমে কি রয়েছে, তুমি আগামীকাল কি করবে, কোন স্থানে তোমার মৃত্যু হবে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ সব কিছু জানেন ও শুনেন।
তারপর আগন্তুক পেছনের দিকে চলে গেলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে বললেন, তাঁকে ডেকে আন। কিন্তু সাহাবীগণ তাঁকে পেলেন না। অবশেষে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইনি জিব্রাঈল (আঃ)। তিনি এসেছিলেন মানুষদেরকে তাদের দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান দেয়ার জন্য।
অনুচ্ছেদ নং ৩৮ঃ
৫০। হাদীসঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু সুফিয়ান আমার কাছে বর্ণনা করেন যে, হিরাকল তাঁকে বলেছিল, আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তারা (ঈমানদারগণ) সংখ্যায় বাড়ছে না কমছে? তুমি উত্তর দিয়েছিলেন, তারা সংখ্যায় বাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে ঈমানের ব্যাপারে এরুপই হয়ে থাকে যতক্ষণ না তা পূর্ণতা লাভ করে। আর আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছিলাম, কেউ তাঁর দ্বীন গ্রহণ করার পর তা অপছন্দ করে মুরতাদ হয়ে যায় কি-না? তুমি জবাব দিয়েছ, না। প্রকৃত ঈমান এরুপই, ঈমানের স্বাদ অন্তরের সাথে মিশে গেলে কেউ তা অপছন্দ করে না।
অনুচ্ছেদ নং ৩৯ঃ স্বীয় দ্বীন হেফাজতকারীর মর্যাদা।
৫১। হাদীসঃ হযরত নোমান বিন বশীর (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, হালাল ও হারাম প্রকাশ্য। তবে এ দু'য়ের মধ্যে রয়েছে সন্দেহজনক কিছু বস্তু, যা অনেক লোকই জানে না। সুতরাং যে ব্যক্তি এসব সন্দেহযুক্ত বস্তু থেকে নিজেকে রক্ষা করবে, সে যেন স্বীয় দ্বীন ও ইজ্জত রক্ষা করল। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ঐসব সনেদহজনক বস্তুতে জড়িয়ে পড়বে, তার উদাহরণ ঐ রাখালের ন্যায়, যে কোন সরকারী চারণভূমির আশপাশে স্বীয় জানোয়ারগুলো চরায়। হতে পারে হঠাৎ করে তার জানোয়ারগুলো সরকারী চারণভূমিতে ঢুকেও পড়তে পারে। খবরদার! প্রত্যেক বাদশাহরই একটি চারণভূমি থাকে। তাই হে সাহাবীগণ, সাবধান, এ দুনিয়াতে আল্লাহর চারণভূমি হল তাঁর হারামকৃত বস্তুসমূহ। খবরদার! মানুষের শরীরে এমন একটি গোমতের টুকরা রয়েছে, যা ভাল থাকলে পূর্ণ শরীরটাই ভাল থাকবে, আর যখন তা বিনষ্ট হবে তখন পূর্ণ শরীরটাই বিনষ্ট হয়ে যাবে। মনে রাখবে, তা মানুষের ক্বলব। (অর্থাৎ অন্যায়ে জড়িয়ে পড়া থেকে সর্বদা অন্তরকে দূরে রাখতে হবে)।
অনুচ্ছেদ নং ৪০ঃ গণীমতের মালের এক পঞ্চমাংশ দেয়া ঈমানের অংশ।
৫২। হাদীসঃ হযরত আবু জামরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক সময় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম, তিনি আমাকে তাঁর চৌকাঠের উপর বসিয়েছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, আপনি আমার কাছে কিছুদিন অপেক্ষা করুন, তা হলে আমি মালের কিছু অংশ আপনার জন্য নির্দিষ্ট করে দেব। সুতরাং আমি তাঁর কাছে দু'মাস পর্যন্ত অবস্থান করলাম। তখন তিনি আমকে বললেন আবদুল কায়েস গোত্রের দূতগণ যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে আগমন করে, তখন তিনি তাদেরকে প্রশ্ন করলেন, তোমরা কোন গোত্র থেকে এসেছ, অথবা তোমরা কোন গোত্রের দূত? তারা বলল, আমরা রবিয়া গোত্রের। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের জন্য শুভ সংবাদ। এখানে তোমাদের লজ্জা শরমের কিছু নেই। অতঃপর দূতগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা 'আশহুরে হারাম' ছাড়া আপনার কাছে আসার কোন শক্তি নেই। যেহেতু আমাদের এবং আপনার মধ্যে রয়েছে মুযার গোত্রের কাফেরগণ। তো আপনি আমাদেরকে এমন কিছু কাজের নির্দেশ প্রদান করুন যা হক ও বাতিলের মধ্যে পাথর্ক্য করে দেবে। আমাদের পেছনে যারা রয়ে গেছে আমরা তাদেরকে সে সম্পর্কে অবহিত করব এবং সে কাজের দ্বারা আমরা বেহেশতে প্রবেশ করতে সক্ষম হব। তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কিছু পানীয় বস্তু সর্ম্পকেও জানতে চাইল। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে চারটি কাজের আদেশ এবং চারটি বস্তু থেকে নিষেধ করেন। তিনি তাদেরকে এক আল্লাহর উপর ঈমান আনার নির্দেশ দিয়ে বললেন, তোমরা কি জান এক আল্লাহর উপর ঈমান কি? তারা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই এ সম্পর্কে ভাল জানেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর উপর ঈমান হল-আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল- একথার সাক্ষ্য দেয়া এবং নামায কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা এবং রমযানের রোযা রাখা। আর তোমরা গণীমতের মালের এক-পঞ্চমাংশ প্রদান করবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে চারটি কাজ থেকে নিষেধ করেন। তা হল, সবুজ রংয়ের ঘড়া, কদুর বাউস, কাঠের নির্মিত বউল এবং আলকাতরা মিশ্রিত পাত্র (এসকল পাত্রে 'নবীয' ইত্যাদি পান নিষেধ)। আর তিনি বললেন, তোমরা এ সকল আদেশ নিষেধ রক্ষা করবে এবং যারা দেশে রয়ে গেছে তাদেরকে অবহিত করবে।
অনুচ্ছেদ ৪১ঃ নিশ্চই সব কাজ নিয়ত ও সংকল্প অনুযায়ী হয়। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ঐ জিনিসই, যা সে নিয়ত করে। সুতরাং ঈমান, অযু, নামায, যাকাত, হজ্জ, রোযা এবং অন্যান্য বিধানাবলী এই উক্তির মধ্যে অনুর্ভূক্ত হয়ে গেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন। ........
অর্থ: আপনি বলে দিন, প্রত্যেক ব্যক্তিই যেন নিজ নিজ নিয়ত অনুযায়ী কাজ করে।
এই আয়াতে .... শব্দের অর্থ হচ্ছে নিয়ত। আর কোন ব্যক্তির স্বীয় পরিবারের জন্য খরচ করাটা সদকা বলে গণ্য হবে। যদি সে সওয়াবের আশা (নিয়ত) করে। আর নবী সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: (মক্কা বিজয় হওয়ার পর কোন হিজরত নেই) তবে জিহাদ এবং নিয়ত বাকী আছে।
৫৩। হাদীসঃ হযরত ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মানুষের আমল বা কর্ম নিয়ত অনুসারে হয়ে থাকে। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য রয়েছে তা, যা সে নিয়ত করে। সুতরাং যার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হয়ে থাকে, তার হিজরত আল্লাহ ও রাসূলের জন্যই হয়। আর যার হিজরত দুনিয়ার কোন বস্তু পাওয়ার উদ্দেশ্যে অথবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে হয়, তার হিজরত ঐরুপই হয়ে থাকে।
৫৪। হাদীসঃ হযরত আবু মাসউদ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কেউ সন্তান সন্তুতির জন্য কিছু খরচ করলে তা তার জন্য সদকা গণ্য হয়।
৫৫। হাদীসঃ হযরত সায়াদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যদি তোমার সন্তান সন্ততির জন্য কিছু খরচ কর, তবে অবশ্যই তোমাকে তার প্রতিদান দেয়া হবে! এমন কি স্ত্রীর মুখেও যদি তুমি কোন খাদ্যদ্রব্য উঠিয়ে দাও, তবে তার প্রতিদানও তুমি অবশ্যই পাবে।
অনুচ্ছেদ নং ৪২ঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী: দ্বীন হচ্ছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান রাখার ক্ষেত্রে এবং মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও জনসাধারণের জন্য নসীহত (কল্যাণ কামনার পথ) স্বরুপ।
আল্লাহর বাণী: অর্থ: যখন তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য নসীহত (কল্যাণ) কামনা করে (সূরা তাওবা-৯১)
৫৬। হাদীসঃ হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ বাজালী (রাঃ) বলেন, আমি একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করলাম নামায কায়েম, যাকাত প্রদান এবং সকল মুসলমানের জন্য কল্যাণ বাসনা করার উদ্দেশ্যে।
৫৭। হাদীসঃ হযরত যিয়াদ বিন আলাকাহ (রাঃ) বলেন, যে দিন হযরত মুগীরা ইবনে শো'বা (রাঃ) ইন্তেকাল করেন, সে দিন আমি হযরত জরীর ইবনে আবদুল্লাহ বাজারী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি। তিনি সর্বপ্রথম মসজিদে নববীর মিম্বরে দাঁড়িয়ে আল্লাহর হামদ ও সানা পাঠ করেন। তারপর বললেন, তোমাদের কর্তব্য এক আল্লাহকে ভয় করা, যার কোন শরীক নেই। অন্য এক শাসনকর্তা আসা পর্যন্ত তোমাদেরকে মর্যাদা ও শান্তির সাথে থাকতে হবে। অবশ্যই শাসনকর্তা এসে যাবেন। তারপর তিনি বললেন, স্বীয় শাসনকর্তার জন্য মাগফেরাতের দোআ করো, যেহেতু তিনি ক্ষমা পছন্দ করতেন। তারপর বললেন, আমি এক সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্তিত হয়ে আরজ করলাম, আমি আপনার হাতে ইসলামের উপর বায়আত করব। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সকল মুসলমানের প্রতি নসীহত ও ভাল ব্যবহার করার শর্তে বায়আত করালেন। আমি এ শর্তে তাঁর হাতে বায়আত গ্রহণ করি্ হে উপস্থিত জনতা! এ মসজিদের প্রভুর নামে আমি তোমাদেরকে নসীহত করছি। তারপর এস্তেগফার পাঠ করে মিম্বর থেকে অবতরণ করেন।
বেশি বেশি সালাম প্রদান ইসলামের মধ্যে গণ্য
অনুচ্ছেদ নং ২০ঃ সালামের ব্যাপক প্রচলন ইসলামের অঙ্গ।
অর্থঃ আম্মার (রাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি তিনটি গুণ হাসিল করে সে পূর্ণ ঈমান লাভ করে।
(১) তোমার নিজের সম্পর্কে ইনসাফ করা, (২) সকলকে ব্যাপকভাবে সালাম দেয়া এবং (৩) অভাবগ্রস্থ অবস্থায় দান করা।
২৮। হাদীসঃ হযরত আবুদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইসলামের মধ্যে কোন চরিত্র উত্তম। উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি লোকদেরকে কানা খাওয়াবে এবং পরিচিত সবাইকে সালাম দিবে।
অনুচ্ছেদ নং ২১ঃ স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা এবং বিভিন্ন প্রকার অকৃতজ্ঞতা এ সম্পর্কে আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর থেকে ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি হাদীস রয়েছে।
২৯। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন আমাকে দোযখ অবলোকন করানো হল, তখন আমি দেখতে পেলাম, দোযখের অধিকাংশই মহিলা যারা কুফরী (অবাধ্যতা) করত। এতদশ্রবণে জিজ্ঞাসা করা হল, তারা কি আল্লাহর অবাধ্য ছিল? উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা স্বামীর অবাধ্য ছিল। তারা কখনো স্বামীর ইহসান স্বীকার করে না। কারণ তুমি যদি সারা জীবনও স্ত্রীর প্রতি দয়া অনুগ্রহ প্রদর্শন কর, তারপর সে তোমার পক্ষ হতে যদি কোন সময় এতটুকু অন্যায় দূর্ব্যবহারও দেখতে পায়, যা তার অসহনীয়, তখন সে বলে, আমি জীবনে কখনো তোমার কাছ থেকে কোন ভাল ব্যবহার পাইনি। তুমি আমার প্রতি কোন অনুগ্রহ করনি।
অনুচ্ছেদ নং ২২ঃ গুনাহের কাজ মূর্খতা। কেউ শিরক ছাড়া অন্য গুনাহ করলে তাকে কাফের বলা হয় না। এ ব্যাপারে নবী করীম সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। "তুমি এমন লোক যে, তোমার মধ্যে মূর্খতা রয়ে গিয়েছে।"
মহান আল্লাহ বলেন-
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহর সাথে শিরক করলে তিনি মাফ করবেন না। আর তিনি শিরক ছাড়া অন্য গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন যাকে ইচ্ছে তাকে।
অর্থঃ "আর যদি মুমিনদের দুটি দল সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তাহলে তোমরা তোদের মধ্যে সীমাংসা করে দাও। আল্লাহ তায়াল সংঘর্ষকারী দুদলকে মুমিন বলে উল্লেখ করেছেন।
৩০। হাদীসঃ হযরত আহনাফ ইবনে কায়স (রাঃ) বলেন, এক সময় আমি হযরত আলী (রাঃ)-এর সাহায্যার্থে রওয়ানা হলাম। পথিমধ্যে আবু বকর (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত হলে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যাচ্ছ। বললাম, হযরত আলীর সাহায্যার্থে (সিফফীন যুদ্ধে) রওয়ানা হয়েছি। এতদশ্রবণে তিনি আমাকে বললেন, বাড়ি ফিরে যাও। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যখন দু'জন মুসলমান পরস্পর যুদ্ধে মুখোমুখি হয়, তখন তাদের হত্যাকারী ও হত্যাকৃত উভয়েই জাহান্নামী হয়। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! হত্যাকারী তো স্বীয় অপরাধের কারণে জাহান্নামী হবে। তবে হত্যাকৃত ব্যক্তির অপরাধ কি? উত্তরে তিনি বললেন, হত্যাকৃত ব্যক্তি তো হত্যাকরীকে হত্যা করার জন্য সচেষ্ট ছিল।
৩১। হাদীসঃ হযরত মা'রুর (রাঃ) বলেন, একদা মদীনার নিকটবর্তী 'রাবাযা' নামক স্থানে হযরত আবু যার (রাঃ)-এর সাথে আমার দেখা হলে আমি দেখলাম, তাঁর গায়ে একখানা মূল্যবান চাদর রয়েছে। অনুরুপ একখানা চাদর তার ভৃত্যের গায়েও রয়েছে। আমি তাদের এরুপ সমতার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি এক সময় এক ভৃত্যকে গালি দিলাম, এমন কি তার মা'র দিক থেকেও তাকে লজ্জা দিলাম। এ অবস্থা দেখে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে লক্ষ্য করে বলেন, হে আবু যর! তুমি তাকে তার মা'র দিক থেকেও লজ্জা দিলে? তুমি তো এমন ব্যক্তি, তোমার মধ্যে এখনো জহেলী যুগের প্রভাব প্রতিক্রিয়া রয়ে গেছে। হে আবু যর! তোমাদের ভৃত্য তোমাদের ভাই। তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করা হয়েছে। সুতরাং যার ভাই তার অধীনস্থ হবে, সে যাবে খাবে তাকেও তা খাওয়াবে এবং যা পরিধান করবে তা পরিধান করাবে। তাদেরকে কখনো এমন কাজের আদেশ করবে না যা কষ্টদায়ক। হ্যাঁ! যদি কখনো এরুপ হয়ে যায় তখন তাদেরকে সাহায্য করো।
অনুচ্ছেদ নং ২৩ঃ যুলুমের প্রকারভেদ।
৩২। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, যখন মহান আল্লাহর বাণী- "যারা ঈমান গ্রহণ করে এবং ঈমানের সাথে জুলুমকে না মিলায়" অবর্তীণ হল, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে কমবেশি জুলুম করে না। তখন আল্লাহ তা'আলা কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত অবর্তীণ করেন (ইন্নাশ শিরকা লাযুলমুন আযীমুন) নিশ্চয়ই শিরক সর্বাপেক্ষা বড় জুলুম।"
৩৩। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মোনাফেকের আলামত তিনটি। (১) যখন কথা বলে মিথ্যা বলে। (২) যখন কোন অঙ্গীকার করে তা ভঙ্গ করে। (৩) যখন তার কাছে কিছু আমানত রাখা হয় তা খেয়ানত করে।
৩৪। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, চারটি চরিত্র এরুপ আছে, যার মধ্যে তা পাওয়া যাবে, সে খালেস মোনাফেক গণ্য হবে। আর যার মধ্যে উক্ত চরিত্রসমূহের যে কোন একটি বিদ্যমান থাকবে তা হলে মনে করতে হবে, তার মধ্যে মোনাফেকীর চিহ্ন বিদ্যমান আছে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তা পরিহার না করে। উক্ত চিহ্নসমূহ হল- (১) যখন আমানত রাখা হয় তখন খেয়ানত করে। (২) যখন কথা বলে মিথ্যা বলে। (৩) যখন ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে। (৪) আর যখন ঝগড়া করে তখন গালমন্দ করে।
অনুচ্ছেদ নং ২৫ঃ কদরের রাতে ইবাদত করা ঈমানের অংশ।
৩৫। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভার্থে বিশ্বাসের সাথে কদরের রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করবে, তার অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
অনুচ্ছেদ নং ২৬ঃ জিহাদ করা ঈমানের অঙ্গ।
৩৬। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা ঐ ব্যক্তির যিম্মাদার হয়ে যান, যে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হয়। মহান আল্লাহ বলেন, "তার যুদ্ধে বের হওয়া একমাত্র আমার উপর ঈমান এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বিশ্বাস করার কারণেই। সুতরাং যুদ্ধে হয়তো আমি তাকে ধন সম্পদ ও গনীমতের মালামালসহ বাড়ি ফিরিয়ে থাকি অথবা শাহাদাতের মাধ্যমে বেহেশতে প্রবেশ করাই"। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টদায়ক মনে না করতাম, তাহলে আমি কখনো যুদ্ধ গমন থেকে বিরত থাকতাম না। আমার কাছে এ অত্যন্ত পচন্দনীয় যে, আমি যুদ্ধে গিয়ে শহীদ হব তারপর জীবিত হব, তারপর শহীদ হব, তাপর পুনরায় জীবিত হব, তারপর পুনরায় মহীদ হব।
অনুচ্ছেদ নং ২৭ঃ রমযান মাসে নফল ইবাদত করা ঈমানের অন্তর্ভূক্ত।
৩৭। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মাহে রমযানের রাতে যে ধর্মীয় বিশ্বাস ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নামায এবং অন্যান্য ইবাদত করে, তার অতীতের সকল সগীরা গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
অনুচ্ছেদ নং ২৮ঃ সওয়াবের আশায় রমযানের রোযা রাখা ঈমানের অঙ্গ।
৩৮। হাদীসঃ হযরত আবু সালমা আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ধর্মীয় বিশ্বাস এবং আল্লাহর রেজামন্দি লাভের উদ্দেশ্যে রমযানের রোযা পালন করে, তার অতীতের সকল সগীরা গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
অনুচ্ছেদ নং ২৯ঃ দ্বীন খুবই সহজ সরল। নবী সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর কাছে বেশী পছন্দীয় দ্বীন হলো একমূখী সহজ-সরল দ্বীন।
দ্বীন খুবই সহজ সরল
৩৯। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, দ্বীন খুব সহজ সরল, কেউ নিজেকে দ্বীনের উপর বিজয়ী করার ইচ্ছা করলে সে অবশ্যই পরাভূত হবে। অর্থাৎ,দ্বীনে বাড়াবাড়ি করো না; বরং সর্বদা মধ্যপন্থা অবলম্বন করা, নিয়মানুবর্তিতা অনুসরণ করা, সওয়াবের সুখবর গ্রহণ কর এবং সকাল সন্ধ্যা ও শেষ রাতের আমল দ্বারা স্বীয় কর্মে সাহায্য কামনা কর।
অনুচ্ছেদ নং ৩০ঃ নামায ঈমানের অঙ্গ। এ ব্যাপারে আল্লাহর বাণী:
অর্থ: আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ঈমান (অর্থাৎ তোমাদের নামায যা তোমরা বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে ফিরে পড়েছিলে) নষ্ট করে দিবেন না।
৪০। হাদীসঃ হযরত বারা বিন আযেব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে আসার পর সর্বপ্রথম স্বীয় নানার/মামার গোত্রীয় আনসারদের সেখানে অবতরণ করেন। মদীনায় অবস্থানকালে তিনি প্রথম ষোল অথবা সতর মাস পর্যন্ত বায়তুল মাকদাসের দিকে ফিরে নামায আদায় করেন। কিন্তু সর্বদা মনে মনে আশা পোষণ করতেন তাঁর কেবলা যেন বায়তুল্লাহ শরীফ নির্ধারিত হয়। অতঃপর একদিন তিনি বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে ফিরে সর্বপ্রথম যে নামায অদাায় করলেন, তা ছিল আসরের নামায। তাঁর সাথে সাহাবীদের একদল লোক উক্ত নামায অাদায় করেন। এদরে মধ্য থেকে এক ব্যক্তি স্বীয় দোত্রের এক মসজিদের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পেলেন, উক্ত মসজিদের মুসল্লিগণ বায়তুল মাকদাসের দিকে ফিরে আসরের নামায আদায় করছেন। তা দেখে উক্ত মুসল্লী তাদেরকে বললেন, আমি আল্লাহর নামে সাক্ষ্য দিচ্ছি, আজকের এ নামায আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মক্কার দিকে ফিরে আদায় করেছি। মুসল্লিগণ এ খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে নামাযের মধ্যে বায়তুল মাকদাস থেকে বায়তুল্লাহর দিকে ফিরে গেলেন। ইহুদীদের কাছে এ ঘটনা বড়ই আশ্চর্য মনে হল। যেহেতু ইতিপূর্বে তিনি বায়তুল মাকদাসের দিকে ফিরে নামায আদায় করতেন। ইহুদীগণও সে দিকেই ফিরত। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বায়তুল্লাহর দিকে ফিরে গেলেন, তখন তারা তা অস্বীকার করল।
যোহায়ের বলেন, আবু ইসহাক আমাদেরকে বারা' বিন আযেব থেকে বর্ণিত তাঁর হাদীসে বর্ণনা করেছেন, বায়তুল মাকদাসের দিক থেকে কেবলা পরিবর্তনের পূর্বে মুসলমানদের কিছু সংখ্যক ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে মারা গেছেন আর কিছু শহীদ হয়েছিলেন, তাদের সম্পর্কে আমরা কি বলব; আমরা তা জানি না । তাই তাদের সম্পর্কে কুরআনের আয়াত অবর্তীণ হল- "মহান আল্লাহ তোমাদের ঈমান নষ্ট করবেন না।" আল্লাহ তার বদলা দিবেন।
অনুচ্ছেদ নং ৩১ঃ মানুষের সুন্দর ভাবে ইসলাম গ্রহণ।
অর্থঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, বান্দা যখন ইসলাম গ্রহণ করে ফলে তার ইসলামটা সুন্দর হয়। আল্লাহ তাহার কৃত সব মন্দকাজ ক্ষমা করে দেন। তারপর (ভাল-মন্দ কাজের এরুপ) প্রতিদান দেয়া হয়। ভালো কাজের বদলে দশগুন থেকে সাত শত গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। আর মন্দ কাজের বদলে ঠিক অনূরুপ মন্দ প্রতিদান দেন। তবে আল্লাহ তাও মাফ করে দিতে পারেন।
৪১। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি তার ইসলামকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে। অর্থাৎ, নেক কাজ করে, তা হলে প্রতি নেকীর জন্য দশ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত লেখা হয়। পক্ষান্তরে প্রতি গুনাহের জন্য কেবলমাত্র তার অনুরুপই লেখা হয়।
অনুচ্ছেদ নং ৩২ঃ দ্বীনের যে কাজ সর্বদা (নিয়মিত) করা হয়, তা আল্লাহর প্রিয়তম।
৪২। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হুজরায় আসলে তাঁর কাছে অন্য এক মহিলাকে দেখতে পেলেন। তিনি তার পরিচয় জানতে চাইলে হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ইনি অমুক মহিলা, যার নাম খাওলা (রাঃ), তারা নামায সম্পর্কে আলোচনা করছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের আলোচনা বন্ধ কর। তোমরা ঐ আমলই করতে থাক যা পূর্বে করছিলে। আল্লাহর শপথ! আল্লাহ কখনো কাউকে বঞ্চিত করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজেকে বঞ্চিত না করে। আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ধর্মীয় কাজ তাই যা সে সর্বদা স্থায়ীভাবে করে। অর্থাৎ নিয়মিত অল্প আমল হলেও তা আল্লাহর নিকট বেশি পছন্দনীয়।
অনুচ্ছেদ নং ৩৩ঃ ঈমানের হ্রাস ও বৃদ্ধি। মহান আল্লাহ বলেন:
......: আমি তাদের হেদায়াত (ঈমান) বৃদ্ধি করে দিয়েছি।
......: আর যারা ঈমান এনেছে, আমি তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি করে দিয়েছি।
......: আজ আমি তোমাদেরর জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম।
পূর্ণ বস্তুর কোন অংশ ত্যাগ করলে সেটা অসম্পূর্ণ হয়ে পড়ে
৪৩। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন- তিনি ইরশাদ করেন, জাহান্নাম থেকে সব লোককে বের করে নিয়ে আসা হবে, যে কালোমা "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু" স্বীকার করবে এবং তার অন্তরে এক যব পরিমাণ নেকী বা ঈমান থাকবে। ঐ ব্যক্তিকেও জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসা হবে। যে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ স্বীকার করবে এবং তার অন্তরে এক গম পরিমাণ ঈমান থাকবে। অনুরুপভাবে ঐ সকল লোককেও জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসা হবে, যারা কালেমা "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" স্বীকার করবে এবং অন্তরে এক বিন্দু পরিমাণ ঈমান থাকবে।
ইসলামের একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বীন
৪৪। হাদীসঃ হযরত একদা হযরত ওমর (রাঃ)-কে এক ইহুদী বলল, হে আমীরুল মো'মেনীন! আপনাদের কুরআনে এমন একটি আয়াত রয়েছে, যা আপনারা সর্বদা তেলাওয়াত করছেন। যদি আমাদের ইহুদীদের সম্পর্কে এ ধরনের কোন আয়াত অবর্তীণ হত, তাহলে আমরা ঐ দিনটিকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করতাম। তখন ওমর (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, সে কোন আয়াত? ইহুদী বলল, তা হল-আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণতা প্রদান করেছি এবং আমার নেয়ামত তোমাদের উপর পূর্ণ করেছি এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করেছি।
এতদশ্রবণে হযরত ওমর (রাঃ) বললেন, ঐ আয়াতটি কোন সময় কোথায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর অবর্তীণ হয়েছে তা আমরা জানি। সে দিনটি হল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আরাফাতের ময়দানে দন্ডয়মান ছিলেন। আর তা ছিল জুমআর দিন (হযরত ওমর (রাঃ) এ বাক্য দ্বারা বুঝাতে চেয়েছেন, অবশ্যই এ দিনটি ঈদ থেকে বেশি উৎসব হিসেবে গণ্য করা হয়)।
অনুচ্ছেদ নং ৩৪ঃ যাকাত ইসলামের অংশ।
যাকাত ইসলামের একটি রোকন
৪৫। হাদীসঃ হযরত তালহা বিন ওবায়দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, একদা নজদের অধিবাসী 'যেমাম ইবনে সা'লাব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে এমন অবস্থায় হাজির হলেন, তাঁর মাথায় চুল ছিল এলামেলো। আমরা তাঁর মুখের ভাষা বুঝতে পাচ্ছি, কিন্তু কি বলছেন তা বুঝতে পারছি না। এমন কি তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এসে বসলেন। অতঃপর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। উ্ত্তরে তিনি বললেন, ইসলাম হল প্রতিদিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা। তারপর তিনি বললেন, এর অতিরিক্ত আমার উপর নামায আছে? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না। তবে যদি তুমি নফল নামায আদায় কর (করতে পার)। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বললেন এবং রমযানের রোযা রাখা। তিনি বললেন, হুযুর! এর অতিরিক্ত আর কোন প্রকার রোযা আছে কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অতিরিক্ত কোন রোযা নেই। তবে যদি তুমি নফল হিসেবে আদায় কর (করতে পার)। রাবী তালহা বলেন, অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতের কথাও আলোচনা করেন। তারপর তিনি বললেন, এর অতিরিক্ত আর কিছু আছে কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন না। তবে যদি তুমি অতিরিক্ত দান সদকা করতে চাও করতে পার। অতঃপর লোকটি পেছনের দিকে চলে যেতে লাগল আর বলতে লাগল, আমি যা শুনেছি এর চাইতে আর কিছু বাড়াব কমাব না। তার কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটি যদি সত্য বলে থাকে তা হলে সে অবশ্যই কামিয়াব হবে। অর্থাৎ তার কথিত আমল করলে সে অবশ্যই নাজাত লাভ করবে।
অনুচ্ছেদ নং ৩৫ঃ জানাযার (মৃতদেহ) পেছনে চলা ঈমানের অংশ।
৪৬। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের খাতিরে সওয়াবের আশায় কোন মুসলামনের জানাযার পেছনে পেছনে চলে, তারপর জানাযার নামায আদায় ও কাফন করা পর্যন্ত সাথে থাকে, সে দু'ক্বীরাত সওয়াব অর্জন করে বাড়ী ফিরবে। প্রত্যেক ক্বীরাত ওহুদ পাহাড় পরিমাণ হবে। যে ব্যক্তি কেবল জানাযার নামায আদায় শেষে চলে আসবে, সে এক ক্বীরাতের সওয়াব নিয়ে বাড়ী ফিরবে। 'ওসমানুল মুয়াজ্জেন'ও এরুপ বর্ণনা করেছেন।
অনুচ্ছেদ নং ৩৬ঃ মুমিনের আমল তার অজ্ঞাতসারে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা।
এই ব্যাপারে ইবরাহীম তাইমী (রঃ) বলেন: 'আমি আমার কথাকে আমার কাজের সঙ্গে মিলাতে গিয়েই মিথ্যুক হওয়ার আশংকা করেছি।"
ইবনে আবু মুলাইকা (রঃ) বলেন: আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ত্রিশজন সাহাবী (রঃ) পেয়েছি। তাদের প্রত্যেকেই নিজের ব্যাপারে নেফাকের আশংকা করতেন। তাদের কেউ একথা বলতেন না যে, সে জিবরাঈল ও মিকাঈল (আঃ) এর মত ঈমানদার"
হাসান বসরী (রঃ) থেকে উল্লেখ করা হয়। "শুধুমাত্র মুমিনগণই মুনাফেকীর ভয় করে। আর শুধু মুনাফেকরাই এ ব্যাপারে নিরাপদ-নিশ্চিন্তে থাকে।
তওবা না করে গুনাহ ও নেফাকী কাজে লিপ্ত থাকা থেকে বিরত থাকা।
এই ব্যাপারে আল্লাহর বাণী:
অর্থ: "তারা (পূর্বে) যেসব (গুনাহ) করেছে তা অজ্ঞাতসারে আর করেনি। (সুরা আলে ইমরান-১৩৫ আয়াত)
৪৭। হাদীসঃ হযরত জুবায়দ মুরজিয়া হতে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মুসলামনকে গালিগালাজ করা পাপাচার এবং তাকে হত্যা করা কুফরীর মধ্যে গণ্য।
৪৮। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে শবে কদরের খবর দেয়ার জন্য বের হন। অতঃপর তিনি দেখতে পান, দু'জন মুসলমান পরস্পর জগড়ায় লিপ্ত রয়েছেন। তাদের এ অবস্থা দেখে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদেরকে কদরের রাত সম্পর্কে খবর দেয়ার জন্য বের হয়ে দেখতে পেলাম, অমুক অমুক ঝগড়ায় লিপ্ত রয়েছে। তাদের অবস্থা দেখে কদরের রাতের সঠিক এলম আমার বক্ষ থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। হয়ত এটা তোমাদের জন্য ভালই হবে। তাই তোমরা তা শেষ দশ তারিখের সাত, নয় এবং পাঁচ এর মধ্যে তালাশ কর।
(এ ঘটনা মসজিদে নবনীতে হয়েছিল। কদর রাতের নির্ধারিত তারিখ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিল থেকে উঠিয়ে নেয়ায় তিনি সাহাবাদেরকে রমযানের শেষ দশ দিনে ২৭, ২৯ এবং ২৫ তারিখের বিজোড় রাতে শবে কদর তালাশ করার আদেশ করেছেন। তবে সলফে সালেহীনের অধিকাংশের মতে ২৭ শে রমযানের রাতকেই কদরের রাত হিসেবে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
অনুচ্ছেদ নং ৩৭ঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ঈমান, ইসলাম, ইহসান ও কিয়ামতের জ্ঞান সম্পর্কে জিবরাঈল (আ:) এর প্রশ্ন এবং রাসূল সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রশ্নের উত্তর। এরপর তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন-জিবরাঈল (আঃ) এসেছেন, তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত বিষয়ের পুরোটাকেই দ্বীন হিসেবে গণ্য করেছেন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদে কায়েস গোত্রের প্রতিনিধিদের কাছে যা বর্ণনা করেছেন, তাও ঈমানের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ তায়ালার নিম্নোক্ত বাণীর দ্বারাও বুঝা যায় যে, ইসলাম ও দ্বীন একই জিনিস।
অর্থ: যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অনুসন্ধান করবে, সে দ্বীন কখনোই কবুল করা হবে না।
৪৯। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের উদ্দেশ্যে মসজিদে নববীতে তাশরীফ রাখলেন। এমন সময় হযরত জিব্রাইল (আঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে আগমন করে তাঁকে প্রশ্ন করলেন, ঈমান কি? তিনি বললেন, ঈমান হল তুমি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, আখেরাতে তাঁর সাক্ষাত এবং তার রাসূলের উপর এবং পুনরুত্থানের উপর ঈমান আনবে। তারপর তিনি প্রশ্ন করলেন, ইসলাম কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইসলাম হল, তুমি এক আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। নামায কায়েম করবে, ফরয যাকাত প্রদান করবে এবং রমযানের রোযা রাকবে। তারপর আগন্তুক জিজ্ঞেস করলেন, ইহসান কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি এ খেয়ালে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তুমি মহান আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ। যদি তুমি আল্লাহকে দেখতে না পাও, তবে মনে রাখবে, স্বয়ং আল্লাহ তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন।
তারপর আগন্তুক প্রশ্ন করলেন, কেয়ামত কবে হবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রশ্নকৃত প্রশ্নকারী অপেক্ষা এ বিষয়ে বেশি জ্ঞাত নয়। তবে আমি তোমাকে কেয়ামতের আলামত সম্পর্কে খবর দিচ্ছি। তা হল, বান্দী যখন তার মালিকে জন্ম দিবে, যখন নিকৃষ্ট উষ্ট্রের মালিকগণ বড় বড় অট্ট্রালিকা বানিয়ে গৌরব করবে। পাঁচটি বস্তু এমন রয়েছে যার সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেই জ্ঞাত নয়। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করেন-
........ মহান আল্লাহর কাছেই রয়েছে কেয়ামতের এলেম, বৃষ্টি কখন অবর্তীণ হবে, মায়েদের রেহেমে কি রয়েছে, তুমি আগামীকাল কি করবে, কোন স্থানে তোমার মৃত্যু হবে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ সব কিছু জানেন ও শুনেন।
তারপর আগন্তুক পেছনের দিকে চলে গেলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে বললেন, তাঁকে ডেকে আন। কিন্তু সাহাবীগণ তাঁকে পেলেন না। অবশেষে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইনি জিব্রাঈল (আঃ)। তিনি এসেছিলেন মানুষদেরকে তাদের দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান দেয়ার জন্য।
অনুচ্ছেদ নং ৩৮ঃ
৫০। হাদীসঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু সুফিয়ান আমার কাছে বর্ণনা করেন যে, হিরাকল তাঁকে বলেছিল, আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তারা (ঈমানদারগণ) সংখ্যায় বাড়ছে না কমছে? তুমি উত্তর দিয়েছিলেন, তারা সংখ্যায় বাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে ঈমানের ব্যাপারে এরুপই হয়ে থাকে যতক্ষণ না তা পূর্ণতা লাভ করে। আর আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছিলাম, কেউ তাঁর দ্বীন গ্রহণ করার পর তা অপছন্দ করে মুরতাদ হয়ে যায় কি-না? তুমি জবাব দিয়েছ, না। প্রকৃত ঈমান এরুপই, ঈমানের স্বাদ অন্তরের সাথে মিশে গেলে কেউ তা অপছন্দ করে না।
অনুচ্ছেদ নং ৩৯ঃ স্বীয় দ্বীন হেফাজতকারীর মর্যাদা।
৫১। হাদীসঃ হযরত নোমান বিন বশীর (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, হালাল ও হারাম প্রকাশ্য। তবে এ দু'য়ের মধ্যে রয়েছে সন্দেহজনক কিছু বস্তু, যা অনেক লোকই জানে না। সুতরাং যে ব্যক্তি এসব সন্দেহযুক্ত বস্তু থেকে নিজেকে রক্ষা করবে, সে যেন স্বীয় দ্বীন ও ইজ্জত রক্ষা করল। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ঐসব সনেদহজনক বস্তুতে জড়িয়ে পড়বে, তার উদাহরণ ঐ রাখালের ন্যায়, যে কোন সরকারী চারণভূমির আশপাশে স্বীয় জানোয়ারগুলো চরায়। হতে পারে হঠাৎ করে তার জানোয়ারগুলো সরকারী চারণভূমিতে ঢুকেও পড়তে পারে। খবরদার! প্রত্যেক বাদশাহরই একটি চারণভূমি থাকে। তাই হে সাহাবীগণ, সাবধান, এ দুনিয়াতে আল্লাহর চারণভূমি হল তাঁর হারামকৃত বস্তুসমূহ। খবরদার! মানুষের শরীরে এমন একটি গোমতের টুকরা রয়েছে, যা ভাল থাকলে পূর্ণ শরীরটাই ভাল থাকবে, আর যখন তা বিনষ্ট হবে তখন পূর্ণ শরীরটাই বিনষ্ট হয়ে যাবে। মনে রাখবে, তা মানুষের ক্বলব। (অর্থাৎ অন্যায়ে জড়িয়ে পড়া থেকে সর্বদা অন্তরকে দূরে রাখতে হবে)।
অনুচ্ছেদ নং ৪০ঃ গণীমতের মালের এক পঞ্চমাংশ দেয়া ঈমানের অংশ।
৫২। হাদীসঃ হযরত আবু জামরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক সময় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম, তিনি আমাকে তাঁর চৌকাঠের উপর বসিয়েছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, আপনি আমার কাছে কিছুদিন অপেক্ষা করুন, তা হলে আমি মালের কিছু অংশ আপনার জন্য নির্দিষ্ট করে দেব। সুতরাং আমি তাঁর কাছে দু'মাস পর্যন্ত অবস্থান করলাম। তখন তিনি আমকে বললেন আবদুল কায়েস গোত্রের দূতগণ যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে আগমন করে, তখন তিনি তাদেরকে প্রশ্ন করলেন, তোমরা কোন গোত্র থেকে এসেছ, অথবা তোমরা কোন গোত্রের দূত? তারা বলল, আমরা রবিয়া গোত্রের। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের জন্য শুভ সংবাদ। এখানে তোমাদের লজ্জা শরমের কিছু নেই। অতঃপর দূতগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা 'আশহুরে হারাম' ছাড়া আপনার কাছে আসার কোন শক্তি নেই। যেহেতু আমাদের এবং আপনার মধ্যে রয়েছে মুযার গোত্রের কাফেরগণ। তো আপনি আমাদেরকে এমন কিছু কাজের নির্দেশ প্রদান করুন যা হক ও বাতিলের মধ্যে পাথর্ক্য করে দেবে। আমাদের পেছনে যারা রয়ে গেছে আমরা তাদেরকে সে সম্পর্কে অবহিত করব এবং সে কাজের দ্বারা আমরা বেহেশতে প্রবেশ করতে সক্ষম হব। তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কিছু পানীয় বস্তু সর্ম্পকেও জানতে চাইল। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে চারটি কাজের আদেশ এবং চারটি বস্তু থেকে নিষেধ করেন। তিনি তাদেরকে এক আল্লাহর উপর ঈমান আনার নির্দেশ দিয়ে বললেন, তোমরা কি জান এক আল্লাহর উপর ঈমান কি? তারা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই এ সম্পর্কে ভাল জানেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর উপর ঈমান হল-আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল- একথার সাক্ষ্য দেয়া এবং নামায কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা এবং রমযানের রোযা রাখা। আর তোমরা গণীমতের মালের এক-পঞ্চমাংশ প্রদান করবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে চারটি কাজ থেকে নিষেধ করেন। তা হল, সবুজ রংয়ের ঘড়া, কদুর বাউস, কাঠের নির্মিত বউল এবং আলকাতরা মিশ্রিত পাত্র (এসকল পাত্রে 'নবীয' ইত্যাদি পান নিষেধ)। আর তিনি বললেন, তোমরা এ সকল আদেশ নিষেধ রক্ষা করবে এবং যারা দেশে রয়ে গেছে তাদেরকে অবহিত করবে।
অনুচ্ছেদ ৪১ঃ নিশ্চই সব কাজ নিয়ত ও সংকল্প অনুযায়ী হয়। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ঐ জিনিসই, যা সে নিয়ত করে। সুতরাং ঈমান, অযু, নামায, যাকাত, হজ্জ, রোযা এবং অন্যান্য বিধানাবলী এই উক্তির মধ্যে অনুর্ভূক্ত হয়ে গেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন। ........
অর্থ: আপনি বলে দিন, প্রত্যেক ব্যক্তিই যেন নিজ নিজ নিয়ত অনুযায়ী কাজ করে।
এই আয়াতে .... শব্দের অর্থ হচ্ছে নিয়ত। আর কোন ব্যক্তির স্বীয় পরিবারের জন্য খরচ করাটা সদকা বলে গণ্য হবে। যদি সে সওয়াবের আশা (নিয়ত) করে। আর নবী সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: (মক্কা বিজয় হওয়ার পর কোন হিজরত নেই) তবে জিহাদ এবং নিয়ত বাকী আছে।
৫৩। হাদীসঃ হযরত ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মানুষের আমল বা কর্ম নিয়ত অনুসারে হয়ে থাকে। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য রয়েছে তা, যা সে নিয়ত করে। সুতরাং যার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হয়ে থাকে, তার হিজরত আল্লাহ ও রাসূলের জন্যই হয়। আর যার হিজরত দুনিয়ার কোন বস্তু পাওয়ার উদ্দেশ্যে অথবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে হয়, তার হিজরত ঐরুপই হয়ে থাকে।
৫৪। হাদীসঃ হযরত আবু মাসউদ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কেউ সন্তান সন্তুতির জন্য কিছু খরচ করলে তা তার জন্য সদকা গণ্য হয়।
৫৫। হাদীসঃ হযরত সায়াদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যদি তোমার সন্তান সন্ততির জন্য কিছু খরচ কর, তবে অবশ্যই তোমাকে তার প্রতিদান দেয়া হবে! এমন কি স্ত্রীর মুখেও যদি তুমি কোন খাদ্যদ্রব্য উঠিয়ে দাও, তবে তার প্রতিদানও তুমি অবশ্যই পাবে।
অনুচ্ছেদ নং ৪২ঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী: দ্বীন হচ্ছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান রাখার ক্ষেত্রে এবং মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও জনসাধারণের জন্য নসীহত (কল্যাণ কামনার পথ) স্বরুপ।
আল্লাহর বাণী: অর্থ: যখন তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য নসীহত (কল্যাণ) কামনা করে (সূরা তাওবা-৯১)
৫৬। হাদীসঃ হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ বাজালী (রাঃ) বলেন, আমি একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করলাম নামায কায়েম, যাকাত প্রদান এবং সকল মুসলমানের জন্য কল্যাণ বাসনা করার উদ্দেশ্যে।
৫৭। হাদীসঃ হযরত যিয়াদ বিন আলাকাহ (রাঃ) বলেন, যে দিন হযরত মুগীরা ইবনে শো'বা (রাঃ) ইন্তেকাল করেন, সে দিন আমি হযরত জরীর ইবনে আবদুল্লাহ বাজারী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি। তিনি সর্বপ্রথম মসজিদে নববীর মিম্বরে দাঁড়িয়ে আল্লাহর হামদ ও সানা পাঠ করেন। তারপর বললেন, তোমাদের কর্তব্য এক আল্লাহকে ভয় করা, যার কোন শরীক নেই। অন্য এক শাসনকর্তা আসা পর্যন্ত তোমাদেরকে মর্যাদা ও শান্তির সাথে থাকতে হবে। অবশ্যই শাসনকর্তা এসে যাবেন। তারপর তিনি বললেন, স্বীয় শাসনকর্তার জন্য মাগফেরাতের দোআ করো, যেহেতু তিনি ক্ষমা পছন্দ করতেন। তারপর বললেন, আমি এক সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্তিত হয়ে আরজ করলাম, আমি আপনার হাতে ইসলামের উপর বায়আত করব। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সকল মুসলমানের প্রতি নসীহত ও ভাল ব্যবহার করার শর্তে বায়আত করালেন। আমি এ শর্তে তাঁর হাতে বায়আত গ্রহণ করি্ হে উপস্থিত জনতা! এ মসজিদের প্রভুর নামে আমি তোমাদেরকে নসীহত করছি। তারপর এস্তেগফার পাঠ করে মিম্বর থেকে অবতরণ করেন।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.