৫৮১। হাদীসঃ
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, আযানের শব্দ
জোড়া জোড়া এবং একামতের শব্দ বিজোড় বলার জন্য হযরত বেলাল (রাঃ)-কে আদেশ করা হয়েছে। ইসমাঈল (রঃ) বলেন, আমি 'হযরত আয়ুব'-এর কাছে এ ব্যাপারে আলোচনা করলে তিনি বলেন, একামত ব্যতীত। অর্থাৎ বাকীগুলো জোড়া জোড়া বলতে হবে।
৫৮২। হাদীসঃ
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন নামাযের
আযান দেয়া হয়, তখন শয়তান অপাং বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পেছনের
দিকে দৌড়াতে থাকে, যাতে সে আযানের
আওয়াজ না শুনতে পায়। আযান শেষ হলে পুনরায় সে তথায় ফিরে আসে। অনুরুপ যখন নামাযের একমত
দেয়া হয়, তখনো সে পেছনের দিকে দৌড়াতে থাকে। একামত
শেষ হলে পুনরায় সে তথায় ফিরে আসে এবং মুসল্লির অন্তরে ওয়াসওয়াসা দিতে থাকে। শয়তান মুসল্লীর
অন্তরে ওয়াসওয়াসা দিয়ে বলে, তুমি এটা
স্মরণ কর, ওটা স্মরণ কর। যা তার স্মরণে ছিল না এমন
কথাও স্মরণ করতে বলে। যাতে সে কত রাকআত নামায পড়েছিল তা ভুলে যায়। অর্থাৎ মুসল্লী নামাযে
ভুল করে বসে।
৫৮৩। হাদীসঃ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান আনসারী (রাঃ) বলেন,
এক সময় হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) তাঁকে বলেন,
আমি দেখতে পাচ্ছি, তুমি বকরী
এবং মরুভূমিকে ভালবাস। তাই তুমি যখন তোমার বকরীর পালের কাছে অথবা মরুভূমিতে থাক এবং
নামাযের জন্য আযান দাও, তখনো তোমার
আযানের আওয়াজ বড় কর। কারণ আযানের আওয়াজ যতদূর যাবে এবং সে স্থানে জ্বিন, ইনসান ও অন্যান্য যা কিছু থাকবে, প্রত্যেকেই কেয়ামত দিবসে তার জন্য সাক্ষ্য প্রদান করবে। হযরত
আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি এ কথাগুলো
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে শুনেছি।
৫৮৪। হাদীসঃ
হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে যত সম্প্রদায়ের সাথেই যুদ্ধ করতে গেছেন, ভোর না হওয়া পর্যন্ত কোন সম্প্রদায়ের উপরই আক্রমণ রচনা করেনি।
তিনি তথায় গিয়ে অপেক্ষা করতেন, যদি সেখানে
আযানের আওয়াজ শুনতে পেতেন, তা হলে তাদের
উপর আক্রমণ বন্ধ করে দিতেন। আর কোথাও আযানের আওয়াজ শুনতে না পেলে তাদের উপর আক্রমণ
রচনা করতেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা খায়বর
যুদ্ধে গেলাম। আমরা রাত্রি বেলায় তথায় পৌছলাম। যখন ভোর হল এবং তাদের থেকে আযানের আওয়াজ
শুনতে পাওয়া গেল না, তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উপর আক্রমণের উদ্দেশ্যে সওয়ারীতে আরোহণ করেন।
আমিও হযরত আবু তালহা আনসারীর পেছনে তাঁর সওয়ারীর উপর আরোহণ করে বসলাম। এমনকি মাঝে মাঝে
আমার পা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পা মোবারক স্পর্শ করছিল। বর্ণনাকারী
বলেন, খায়বরের অধিবাসীগণ প্রত্যুষে এমন অবস্থায়
আমাদের সম্মুখে বের হয়ে আসল, তাদের হাতে
ছিল শস্য পরিমাপের যন্ত্র বা থলে এবং শস্য ক্ষেতে ব্যবহারযোগ্য কোদাল, কাস্তে ইত্যাদি। এ অবস্থায় যখন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেল, তখন বলে উঠল, আরে মুহাম্মদ! আল্লাহর শপথ! মুহাম্মদ এসে গেছে। তার সাথে সৈন্য
দলও এসেছে।
বর্ণনাকারী
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের অবস্থা দেখে বলে উঠলেন, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, খায়বর ধ্বংস হয়ে গেছে। আরো বললেন,
............
অর্থঃ আমরা
যখন কোন গোত্রের আঙ্গিনায় গিয়ে পৌছি, তখন সে ভীতিপ্রদ
ব্যক্তিদের অবস্থা খুবই ভয়াবহ হয়ে থাকে। অর্থাৎ তারা পরাজিত হতে বাধ্য হয়।
৫৮৫। হাদীসঃ
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
তোমরা যখন আযান শুনতে পাও, তখন আযানের
জবাবে তাই বল, মুয়াযযিন যা বলেন।
৫৮৬। হাদীসঃ
হযরত ঈসা ইবনে তালহা (রঃ) একদিন হযরত মোআবিয়া বিন আবী সুফিয়ান (রাঃ)-কে আযানের জবাবে
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ পর্যন্ত বলতে শুনেছেন, তিনি তাই বলেছেন।
৫৮৭। হাদীসঃ
হযরত ইয়াহইয়া বিন কাসীর (রঃ) বলেন, আমার এক ভাই
ইমাম আওযায়ী (রঃ) আমাকে বর্ণনা করেছেন, মোআযযেন যখন
'হাইয়্যা আলাস সালাহ' বলেন, তখন মোআবিয়া
(রাঃ) ....... (লা- হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ) বলেছেন এবং তিনি বলেন, আমরা তোমাদের নবী করীম সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এরুপ
বলতে শুনেছি।
৫৮৮। হাদীসঃ
হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আযান শ্রবণ করার পর শেষে দোআ পাঠ করবে, তার জন্য কেয়ামত দিবসে আমার সুপারিশ আবশ্যক হয়ে যাবে। দোআ নিম্নরুপ-
..............
অর্থঃ হে
আল্লাহ! এ পরিপূর্ণ আহবান এবং এ নামাযের তুমিই একমাত্র প্রভু। তুমি হযরত রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দান কর, উসিলা, সুমহান মর্যাদা এবং তাঁকে অধিষ্ঠিত কর এমন প্রশংসনীয় স্থানে, যার তুমি অঙ্গীকার করেছ।
৫৮৯। হাদীসঃ
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
আযান দেয়ায় এবং নামাযের প্রথম কাতারে কি বরকত নিহিত রয়েছে যদি মানুষ তা জানত, তা হলে এ জন্য তারা অবশ্যই লটারি করত। এমনিভাবে নামাযের প্রথম
তাকবীরের মধ্যে কি বরকত নিহিত রয়েছে যদি মানুষ তা জানত, তা হলে মানুষ অবশ্যই তাড়াহুড়া করে নামাযের প্রথম তাকবীরে শরীক
হত। তদ্রুপ এশা ও ফজরের নামাযে কি ফযীলত নিহিত রয়েছে যদি মানুষ তা অনুধাবন করত, তা হলে তারা অবশ্যই উক্ত নামাযদ্বয়ে শরীক হত, যদিও ছোট ছেলেমেয়েদের ন্যায় হাত পায়ের উপর ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে
আসতে হত। অর্থাৎ একান্ত দূর্বল ও অসহায় অবস্থায় হলেও মানুষ নামাযের জামাআতে শরীক হত।
৫৯০। হাদীসঃ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হারেসুল বসরী (রঃ) বলেন, একদা বৃষ্টির
দিনে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) জুমআর নামাযে আমাদের মাঝে খোতবা দেন। সে সময়
মোআযযেন যখন 'হাইয়্যা আলাস্ সালাহ' পর্যন্ত পৌছেন, তখন হযরত
ইবনে আব্বাস (রাঃ) মোআযযেনকে আদেশ করলেন, তিনি যেন
উটের কাফেলার কাছে গিয়ে আযান দেন। এতদশ্রবণে উপস্থিত লোকজন একে অপরের দিকে দেখতে লাগলেন।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ কি ধরনের আদেশ করলেন! তখন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) উপস্থিত
লোকদেরকে বলরেন, যিনি আমার চাইতে উত্তম, তিনিও এরুপ করেছেন, আর তখন জুমআর
নামায ছিল ওয়াজিব।
৫৯১। হাদীসঃ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, বেলাল (রাঃ)
রাত্র থাকতেই আযান দিয়ে থাকে। তাই তার আযান শুনার পরও তোমরা রোযার জন্য পানাহার করতে
পার, যতক্ষণ পর্যন্ত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে
মাকতুম (রাঃ) আযান না দেয়। বর্ণনাকারী আরো বলেন,
আবদুল্লাহ (রাঃ) ইবনে উম্মে মাকতুম ছিলেন অন্ধ। যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁকে ভোর হয়েছে
ভোর হয়েছে এরুপ বলা না হত, ততক্ষণ পর্যন্ত
তিনি আযান দিতেন না।
৫৯২। হাদীসঃ
হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন, উম্মুল মোমেনীন
হযরত হাফসা (রাঃ) আমাকে খবর দিয়েছেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইতেকাফ করতেন,
তখন মোআযযেন সোবহে সাদেকের সময় আযান দিলে তিনি ফজরের একামতের পূর্বে হালকাভাবে
দু'রাকআত নামায আদায় করে নিতেন।
৫৯৩। হাদীসঃ
হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাযের পূর্বে আযান একামতের মধ্যবর্তী সময়ে
হালকাভাবে দু'রাকআত নামায আদায় করে নিতেন।
৫৯৪। হাদীসঃ
হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
বেলাল রাত থাকতে ফজরের আযান দেয়। তাই বেলাল আযান দিলেও তোমরা সেহরীর পানাহার করতে
পার, যতক্ষণ পর্যন্ত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে
মাকতুম আযান না দেয় (সে আযান দিলেই তোমরা সেহরীর পানাহার বন্ধ করবে)।
৫৯৫। হাদীসঃ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, হযরত বেলালের
আযান তোমাদের কারো সেহরী খাওয়া নিষেধ করবে না। যেহেতু সে রাত্র থাকতেই ফজরের আযান দেয়, উদ্দেশ্য, তোমাদের মধ্যকার
তাহাজ্জুদ আদায়কারী যেন একটু আরাম করে নিতে, অথবা নিদ্রিত
ব্যক্তিকে নামাযের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে পারে। সে একথা বলবে না যে, ফজর হয়েছে বা সোবহে সাদেক হয়েছে।
৫৯৬। হাদীসঃ
হযরত উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, বেলাল (রাঃ) রাত্র থাকতেই আযান দেয়, তাই আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম ফজরের আযান দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত
তোমরা সেহরীর পানাহার করতে পার।
৫৯৭। হাদীসঃ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল আল-মাযেনী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক আযান ও একামতের মধ্যখানে নামায আছে। এ বাক্য রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন বার বলেছেন। শেষ বারে বলেন, যে ব্যক্তি নামায পড়তে চায় তার জন্যই আযান একামতের মধ্যখানে
নামায।
৫৯৮। হাদীসঃ
হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মোআযযেন যখন আযান দিত, তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবাদের মধ্যকার কিছু লোক দৌড়ে মসজিদের খুঁটিসমূহের
নিকট যেতেন। তাঁরা তথায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনের পূর্ব
পর্যন্ত নফল নামায আদায় করতে থাকতেন। এমনিভাবে তাঁরা মাগরিবের নামাযের পূর্বেও দু'রাকআত নফল নামায আদায় করতনে,
কিন্তু মাগরিবের আযান একামতের মধ্যখানে কিছুই আদায় করতেন না।
৫৯৯। হাদীসঃ
হযরত উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) বলেন, মোআযযেন ফজরের আযান শেষ করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সংক্ষিপ্ত কেরাআতে ফজরের নামাযের পূর্বে দু'রাকআত নামায আদায় করতেন,
আর তা সোবহে সাদেক উদয় হওয়ার পর। অতঃপর তিনি বিছানায় ডান পার্শ্বে কাত হয়ে ফজরের
জামাআতের অপেক্ষায় একটু আরাম করতেন। তারপর মোআযযেন একামতের জন্য আসলে তিনি মসজিদে তাশরীফ
রাখতেন।
৬০০। হাদীসঃ
হযরত আবদুল্লাহ বিন মুগাফফাল (রাঃ) বলেন, প্রত্যেক
আযানের (আযান একামতের) মধ্যবর্তী সময়ে নামায আছে। দ্বিতীয় বারও তিনি এরুপ বললেন। তৃতীয়
বার বললেন, যে ইচ্ছা করে।
৬০১। হাদীসঃ
হযরত মালেক বিন হুয়াইরেস (রাঃ) বলেন, আমি এক সময়
আমার গোত্রের কিছু লোকের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে
আগমন করলাম। আমি তথায় বিশ দিন অবস্থান করি। তিনি ছিলেন দয়ালু এবং রহমাদিল। পরিবারস্থ
লোকদের প্রতি আগ্রহ দেখতে পেয়ে তিনি আমাকে বললেন,
তুমি বাড়িতে ফিরে যাও এবং তাদের মধ্যে আরামে বসবাস করতে থাক। তাদেরকে শরীয়তের আহকাম
শিক্ষা প্রদান কর এবং তোমাদের একজন আযান দিবে আর তোমাদের মধ্যকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি
যেন তোমাদের নামাযের ইমামতি করে।
৬০২। হাদীসঃ
হযরত আবু যর গেফারী (রাঃ) বলেন, আমরা এক সময়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে কোন এক সফরে ছিলাম। যোহরের নামাযের
সময় হলে মোআযযেন আযান দেয়ার ইচ্ছা করল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাকে বললেন, একটু ঠাণ্ডার জন্য অপেক্ষা কর। কিছুক্ষণ
পর মোআযযেন পুনরায় আযান দিতে চাইলে তিনি আবারো বললেন, আরো একটু ঠাণ্ডার জন্য অপেক্ষা কর। পুনরায় মোআযযেন আযান দেয়ার
ইচ্ছা করলে এবারো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আরো ঠাণ্ডা কর, এমনকি টিলার
ছায়া যেন তার বরাবর হয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, রোদের প্রখরতা জাহান্নামের তীব্রতা হতে সৃষ্ট।
৬০৩। হাদীসঃ
হযরত মালেক ইবনে হুয়াইরেস (রাঃ) বলেন, এক সময় দু'ব্যক্তি সফরের ইচ্ছায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
খেদমতে আগমন করলে তিনি তাদেরকে বললেন, যদি তোমরা
সফরে যাও তা হলে নামাযের সময় হলে তোমাদের একজন যেন আযান দেয়, তারপর একামতও বলে। তারপর তোমাদের মধ্যকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি
যেন তোমাদের উভয়ের ইমামতি করে।
৬০৪। হাদীসঃ
হযরত মালেক ইবনুল হুয়াইরেস (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে আগমন করলাম। আমরা সবাই প্রায় একই বয়সের
যুবক ছিলাম। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে বিশ দিনের
মত অবস্থান করি। তিনি ছিলেন দয়ালু ও কোমলমনা ব্যক্তি। তিনি আমাদের সম্পর্কে ধারণা করলেন, আমরা পরিবার পরিজনের প্রতি আগ্রহান্বিত হয়ে পড়েছি। তখন আমরা
পরস্পর আলোচনা করলাম, আমাদের মধ্য
থেকে কাকে রেখে যাব। অতঃপর আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ
ব্যাপারে বললে তিনি আমাদের সকলকেই আদেশ করলেন,
তোমরা তোমাদের পরিবার পরিজনের কাছে চলে যাও। তাদের কাছে অবস্থান কর। তাদেরকে শরীয়তের
আহকাম শিক্ষা দান কর এবং শরীয়তের আহকাম পালন করার আদেশ কর। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো কিছু কাজের
কথা আলোচনা করেছিলেন। আমি তা মুখস্থ করেছিলাম অথবা মুখস্থ করিনি। তন্মধ্যে একটি হল, তিনি আদেশ করেছিলেন, তোমরা এমনভাবে
নামায আদায় করবে, যেমন আমাকে
নামায আদায় করতে দেখছ। তাই যখন নামাযের সময় আসবে তখন তোমাদের মধ্যকার কেউ যেন আযান
দেয় এবং তোমাদের মধ্যকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি যেন নামাযের উমামতি করে।
৬০৫। হাদীসঃ
হযরত নাফে (রঃ) বলেন, এক সময় অধিক
ঠাণ্ডার রাতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) 'দাজনান' নামক এলাকায় এশার নামাযের আযান দিলে তারপর উপস্থিত লোকদেরকে
বললেন, তোমরা এখন তোমাদের বাড়ি ঘরে গিয়ে নামায
আদায় কর। তিনি আমদেরকে আরো বললেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোআযাযেনকে আযান দেয়ার জন্য আদেশ করতেন। অতঃপর আযানের
সাথে সাথেই লোকদেরকে বলতেন, তোমরা ঠাণ্ডার
রাতে অথবা বৃষ্টির রাতে নিজ নিজ ঘরে গিয়ে নামায আদায় কর।
৬০৬। হাদীসঃ
হযরত আবু হুহায়ফা (রাঃ) বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে 'আবতাহ' নামক এলাকায় দেখেছি, হযরত বেলাল (রাঃ) এসে তাঁকে নামাযের কথা জানান। তারপর বেলাল (রাঃ) হাতে একটি ‘আনাযা’ (ছোট লাঠি) নিয়ে বের হন। তিনি তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে গেড়ে তারপর নামাযের জন্য একামত দেন।
৬০৭। হাদীসঃ ৬০৭।
হাদীসঃ হযরত আবু জুহায়ফা (রাঃ) বলেন, তিনি হযরত
বেলাল (রাঃ)-কে আযান দিতে দেখেছেন। হাইয়্যা আসাল্ সালাহ্, হাইয়্যা আলাল ফালাহ বলার সময় তিনি মুখ এদিক ওদিক ঘুরিয়েছেন।
৬০৮। হাদীসঃ
হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) বলেন, এক সময় আমরা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে নামায আদায় করছিলাম। এমন সময়
মসজিদের বাইরে কিছু লোকের শোরগোল শুনা গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
নামায শেষে এর কারণ জিজ্ঞেস করেন। লোকেরা বললেন,
হুযুর! আমরা নামাযে শরীক হওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করছিলাম।
তখন তিনি ইরশাদ ফরমান, তোমরা আর
কখনো এরুপ করো না। তোমরা যখন নামাযে শরীক হতে আসবে,
তখন ধীরস্থীরভাবে আসা তোমাদের অবশ্য কর্তব্য। অতঃপর জামাআতের সাথে নামাযের
যে কয় রাকআত পাবে আদায় করবে। আর যে কয় রাকআত ছুটে গিয়েছে তা পরে আদায় করে নিবে।
৬০৯। হাদীসঃ
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রেওয়ায়াত
করেন, তিনি ইরশাদ করেছেন, তোমরা আযান শ্রবণমাত্রই জামাআতে শরীক হতে চলে আসবে। সে সময় তোমাদের
চলাফেরায় শান্তি, ধীরস্থিরতা
এবং গাম্ভীর্য একান্ত প্রয়োজন। তোমরা তাড়াহুড়া করবে না। শান্ত শিষ্টভাবে আসার পর জামাআতে
যে কয় রাকআত পাবে তা আদায় করবে, আর যে কয়
রাকআত ছুটে গেছে তা পরে পূরণ করে নিবে।
৬১০। হাদীসঃ
হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
নামাযের একামত বলা হলে আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা জামাআতের জন্য দাঁড়াবে না।
৬১১। হাদীসঃ
হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ইকামত হলে
আমাকে না দেখে পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না। ধীরস্থিরতার প্রতি লক্ষ্য রাখা তোমাদের জন্য
একান্ত আবশ্যক।
৬১২। হাদীসঃ
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সময় মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলেন যখন নামাযের একামত
বলা হয়েছে, কাতার ঠিক করা হয়েছে। এমন কি তিনি মোসাল্লায়
দণ্ডায়মান হয়েছিলেন। আমরা সবাই তাকবীর বলার অপেক্ষায় ছিলাম। এমন সময় তিনি আমাদের
দিকে ফিরে বললেন, তোমরা তোমাদের
জায়গায় অপেক্ষা কর। অতঃপর আমরা আমাদের অবস্থায় অপেক্ষা করছিলাম। এমন সময় তিনি হুজরা
মোবারক থেকে আমাদের কাছে তাশরীফ আনলেন। আমরা দেখতে পেলাম, তাঁর মাথা মোবারক থেকে পানি ঝরছে, যেহেতু তিনি গোসল করে এসেছেন।
৬১৩। হাদীসঃ
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সময় নামাযের একামত বলা হল। মুসল্লীগণ কাতারগুলো সোজা করে
নিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা থেকে বের হয়ে এসে মোসাল্লায়
দাঁড়ালেন। তখন তিনি জুনুব অবস্থায় ছিলেন। তিনি আমাদেরকে বললেন, তোমরা তোমাদের জায়গায় অপেক্ষা কর। তিনি পুনরায় হুজরা মোবারকে
গেলেন, তারপর গোসল করলেন। গোসল সেরে হুজরা থেকে
তিনি এমন অবস্থায় বের হয়ে আসলেন যে, তাঁর মাথা
থেকে পানি ঝড়ছে। অতঃপর তিনি সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে নামায আদায় করলেন।
৬১৪। হাদীসঃ
হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, খন্দকের যুদ্ধের
দিন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
খেদমতে আরজ করলেন-ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি এখনো আসরের
নামায আদায় করতে পারিনি। সূর্য তখন প্রায় ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আর সময়টা ছিল রোযাদার
ব্যক্তির ইফতারের সময়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বোতহান নামক
এলাকায় চলে গেলেন। আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, আমিও তাঁর
সাথে ছিলাম। তিনি সেখানে গিয়ে অযু করলেন এবং সূর্য ডুবে যাওয়ার পর আগে আসরের নামায
তারপর মাগরিবের নামায আদায় করলেন।
৬১৫। হাদীসঃ
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, এক সময় এশার
নামাযের জন্য একামত বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মসজিদের
এক কিনারায় এক ব্যক্তির সাথে গোপন আলাপ করছিলেন। আলোচনা শেষ করা পর্যন্ত তিনি নামাযে
দাঁড়ালেন না। ইতিমধ্যে কেউ কেউ মসজিদে ঘুমিয়ে পড়েন।
৬১৬। হাদীসঃ
হযরত হোমায়েদ (রঃ) বলেন, আমি এক সময়
হযরত সাবেতুল বেনানী (রঃ)-কে সে ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম, যিনি একামত বলার পর কারো সাথে কথা বলেন। তার কি হুকুম তখন তিনি আমাকে হযরত আনাস (রাঃ) হতে একখানা
হাদীস বর্ণনা করেন তিনি বলেন, এক সময় নামাযের
একামত বলা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করার সময়
এক ব্যক্তি তাঁর সম্মুখে এসে এমন কোন আলোচনায় মগ্ন হলেন, যাতে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মসজিদে
ঢুকতে দেরী করালেন।
৬১৭। হাদীসঃ
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
সে আল্লাহর শপথ যাঁর হাতে আমার জীবন। আমি ইচ্ছা করছি, লোকদেরকে কাঠ একত্র করার আদেশ করব। তারপর আদেশ করব যাতে নামাযের
জন্য আযান দেয়া হয়। তারপর কোন ব্যক্তিকে আদেশ করব,
সে যেন লোকদের ইমামত করে। তারপর আমি স্বয়ং সে সকল লোকের কাছে যাব যারা জামাআতে
শরীক হয়নি। অতঃপর তাদের ঘরগুলো জ্বালিয়ে দেব। সে আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার জীবন, যদি তাদের কেউ একথা জানত যে,
সে হাড্ডির সাথে সংযুক্ত সুস্বাদু গোশত পাবে,
অথবা বকরীর উত্তম দু’টি খুর পাবে (যা আরবদের কাছে অতি সুস্বাদু
ও লোভনীয় খাদ্য হিসেবে গণ্য), তা হলে তারা
অবশ্যই এশার জামাআতে শরীক হত।
৬১৮। হাদীসঃ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জামাআতে নামাযের
ফযীলত একাকী আদায়কৃত নামাযের থেকে সাতাশ গুণ বেশি।
৬১৯। হাদীসঃ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, একাকী নামায পড়ার চেয়ে জামাতে নামায পড়ার ফযীলত ২৫ গুণ বেশি।
৬২০। হাদীসঃ
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
কোন ব্যক্তির জামাআতের সাথে নামায তার ঘরের অথবা বাজারের নামায অপেক্ষা পঁচিশ গুণ
বেশি মর্যাদাসম্পন্ন। আর তা হল, যখন সে উত্তমভাবে
অযু করবে, তারপর মসজিদে কেবলা নামায আদয়ের উদ্দেশ্যেই
যাবে। মসজিদে যাওয়ার জন্য সে যত কদম রাখবে, প্রত্যেক
কদমের পরিবর্তে তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি এবং একটি গুনাহ ক্ষমা করা হবে। তারপর যতক্ষণ
সে মোসাল্লায় নামাযরত থাকবে, ততক্ষণ ফেরেশতা তার জন্য দোআ করতে থাকবে। আর ফেরেশতার দোআ হল-”হে আল্লাহ! তুমি তার প্রতি দয়া কর। হে আল্লাহ! তুমি তার প্রতি
রহম কর।” আর তোমাদের কেউ যতক্ষণ পর্যন্ত নামাযের
অপেক্ষায় থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার সময়টা নামাযের মধ্যে
গণ্য হবে।
৬২১। হাদীসঃ
হযরত আবু হোরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনিয়েছেন,
তোমাদের প্রত্যেকের জন্য একাকী নামাযের চেয়ে জামাআতের নামাযে পঁচিশ গুণ সওয়াব বেশী।
রাতের ও দিনের ফেরেশতারা ফজরের নামাযে সমবেত হন। আবু হোরাইরা (রাঃ) এরপর বলতেন, যদি চাও (এর প্রমাণ স্বরুপ কুরআনের এ আয়াত) পাঠ কর।.....................
অর্থাৎ ফজরে কুরআন পাঠ হচ্ছে (ফেরেশতাদের উপস্থিতির সময়। শুআইব বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমরের বরাত দিয়ে তাঁর কাছে ’নাফে’ বর্ণনা করেছেন, একাকী নামায পড়ার চেয়ে জামাতের নামাযে সাতাশ গুণ সওয়াব বেশী
হয়।
৬২২। হাদীসঃ
হযরত উম্মে দারদা (হাজিমা রাঃ) বলেন, এক সময় আমার
স্বামী আবু দারদা (রাঃ) রাগান্বিত অবস্থায় আমার কাছে আসলেন। আমি তাঁর অবস্থা দেখে বললাম, আপনাকে কিসে রাগান্বিত করেছে?
তিনি বললেন, আমার জানা মতে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লা-হু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শরীঅত হল জামাআতের সাথে নামায আদায় করা (অথচ অত্র এলাকার লোকজন
বর্তমানে জামাআত প্রায় ছেড়েই দিয়েছে)।
৬২৩। হাদীসঃ
হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, দূরদূরান্ত হতে যারা মসজিদে আগমন করে, তারাই সর্বাপেক্ষা বেশি সওয়াবের অধিকারী। আর যে ব্যক্তি মসজিদে
এসে নামাযের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, এমন কি শেষ
পর্যন্ত সে ইমামের সাথে জামাআতে নামায আদায় করে,
সে ঐ ব্যক্তি হতে বেশি সওয়াবের অধিকারী, যে অপেক্ষা
না করে বরং নামায আদায় করে গিয়ে ঘুমিয়ে থাকে।
৬২৪। হাদীসঃ
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
কেউ যদি পথ চলারসময় রাস্তার উপর কোন প্রকার কাঁটা দেখতে পেয়ে তা দূর করে, আল্লাহ তার এ কাজ কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন।
তারপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, শহীদ পাঁচ
প্রকার। (১) প্লেগ মহামারী রোগে মৃত ব্যক্তি (২) কলো ও প্লেগ রোগে মৃত ব্যক্তি (৩)
পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি (৪) মাটি চাপা পড়ে অথাব অন্য কিছু চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি (৫)
আর যে আল্লাহর রাস্তায় মারা যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো
বলেন, আযান এবং প্রথম কাতারের মধ্যে কি ফযীলত, যদি মানুষ তা জানত, তা হলে তারা
সবকিছু ছেড়ে দিয়ে এর জন্য পেরেশান হয়ে পড়ত। আর প্রখর রোদে যোহরের জামাআতে
হাজির হওয়ার মধ্যে কি ফযীলত যদি মানুষ তা জানত, তা হলে তারা অবশ্যই আগে আগে আসতে চেষ্টা করত। আর এশা ও ফজরের
নামাযের কি ফযীলত যদি মানুষ তা জানত, তা হলে তারা
হাত পায়ের উপর বর করে হলেও এশা এবং ফজরের জামাআতে অবশ্যই আগমন করত।
৬২৫। হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী সালেমা গোত্রের লোকদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, হে সালেমা গোত্রের লোকেরা! তোমরা কি তোমাদের পদচিহ্নগুলোর হিসাব কর না? অর্থাৎ তোমরা যে দূর থেকে মসজিদে আগমন কর, এতে তোমাদেরকে যত বেশি হাঁটতে হবে সওয়াবও ততবেশি হবে।
অন্য সুত্রে হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক সময় বনী সালেমা গোত্রের লোকজন তাদের বাড়িঘরগুলো ভেঙ্গে মসজিদে নববীর নিকটে এনে তৈরী করার ইচ্ছা করলে, রাসূলুল্লাহ মদীনার আশপাশের এলাকা বিরান রাখা অপছন্দ করলেন, তাই ইরশাদ করেন তোমরা কি তোমাদের পদচিহ্নগুলো হিসাব করছ না?
৬২৬। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মোনাফেকের কাছে ফজর ও এশার নামাযই সর্বাপেক্ষা কঠিন। এ দুয়ের কি মাহাত্ম্য যদি তারা জানত, তা হলে নিশ্চয়ই হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা এ দু’নামাযে শরীক হত। আমি মনে মনে সংকল্প করেছি, আমি মোআযযেনকে আযান দেয়ার আদেশ করব, তারপর সে একামত দিবে এবং কাউকে লোকদের ইমামতি করার জন্য আদেশ করব। তারপর আমি একটি অগ্নিশিখা নিয়ে বের হব এবং যারা এখনো নামাযে শরীক হয়নি তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেব।
৬২৭। হাদীসঃ হযরত মালে বিন হুয়াইরেস (রাঃ) নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রেওয়ায়াত করেন, তিনি ইরশাদ করেছেন, যখন নামাযের সময় উপস্থিত হবে, তখন তোমাদের দু’জনের একজন আযান দিবে এবং অপরজন একামত বলবে, তারপর তোমাদের মধ্যকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি ইমামতি করবে।
৬২৮। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যতক্ষণ পর্যন্ত পবিত্র অবস্থায় তার মোসাল্লায় বসা থাকে, ফেরেশতাগণ ততক্ষণ পর্যন্ত তার জন্য দোআ করতে থাকেন। ফেরেশতাগণ বলেন, “হে আল্লাহ! তমি তাকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ! তুমি তার প্রতি রহম কর।” নামাযের কারণে যতক্ষণ পর্যন্ত মুসল্লীকে মসজিদে অবস্থান করতে হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে নামাযের মধ্যে গণ্য করা হয়। একমাত্র নামায ব্যতিত পরিবার পরিজনের কাছে যেতে কেউ তাকে বাধা দেয় না; অর্থাৎ নামাযের মহব্বতে সে মসজিদ ছেড়ে যেতে চায় না।
৬২৯। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রেওয়ায়াত করেন, তিনি ইরশাদ করেছেন, যে দিন আল্লাহর রহমতের ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না, সে দিন সাত প্রকার লোককে মহান আল্লাহ তাঁর রহমতের ছায়ায় স্থান দিবেন। (১) ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ, (২) যৌবনে যে আল্লাহর ইবাদতে রত থাকে, (৩) যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সাথে সংযুক্ত থাকে, (৪) যে দু’ব্যক্তি কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভার্থেই পরস্পরকে ভালবাসে এবং আল্লাহর জন্যই কেবল পরস্পরের ভালবাসায় একত্রিত অথবা পৃথক হয়েছে, (৫) সে ব্যক্তি, কোন সুন্দরী রুপসী সম্ভ্রন্ত বংশোদ্ভূত ভদ্র মহিলা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার জন্য যাকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করে আর সে বলে, আমি আল্লাহর আযাবকে ভয় করি, (৬) যে ব্যক্তি গোপনে দান সদকা করে। এমন কি তার বাম হাত জানে না ডান হাত কি খরচ করছে, (৭) যে ব্যক্তি এক একা আল্লাহকে স্মরণকালে তার নয়নযুগল অশ্রুসিক্ত হয়।
৬৩০। হাদীসঃ হযরত ঈমাইদ (রঃ) থেকে বর্ণিত, এক সময় হযরত আনাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, নবী করীম সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আংটি ব্যবহার করেছেন কি-না? তিনি বলেন, হাঁ। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার নামায অর্ধরাত্র পর্যন্ত দেরী করেন। তারপর নামায আদায় করে আমাদের দিকে ফিরে দাড়িয়ে ইরশাদ করলেন, হে সাহাবাগণ! তোমরা ব্যতীত অন্যরা এতক্ষণে নামায আদায় করে হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছে। আর তোমরা নামাযের মধ্যেই আছ যতক্ষণ থেকে নামাযের অপেক্ষায় আছ। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় আমি এখনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আংটির চমক দেখতে পাচ্ছি, যা ঐ রাতে দেখতে পেয়েছিলাম।
৬৩১। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যা নামাযের জন্য মসজিদে যাতায়াত করে, মহান আল্লাহ তার জন্য প্রতি সকাল সন্ধ্যায় বেহেশতে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করেন।
৬৩২। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, একদা নামাযের একামত দেয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন, সে দু’রাকআত নামায আদায় করছে। নামায শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সাহাবাদের দিকে ফিরে দাঁড়ালেন, তখন লোকেরা তাঁকে ঘিরে দাঁড়ান। তিনি তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, এ লোকটি ফজরের নামায চার রাকআত আদায় করেছে না কি?
৬৩৩। হাদীসঃ হযরত আসওয়াদ (রাঃ) বলেন, আমরা এক সময় হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। আমরা নিয়মিত নামাযে উপস্থিতি এবং নামাযের প্রতি সম্মান দেখানো সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তখন হযরত আয়েশা (রাঃ) বললেন, ইন্তেকালের পূর্ব মুহূর্তে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন, সে সময় একদিন নামাযের সময় হলে মোআযযেন আযান দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, তোমরা হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে লোকদের নামায পড়াবার জন্য বল। তখন হযরত আয়েশা (রাঃ) বললেন, হযরত আবু বকর (রাঃ) এমন ব্যক্তি, যাঁর অন্তর নরম। তিনি আপনার স্থালাভিষিক্ত হয়ে নামাযে দাঁড়ালে লোকদের নামায পড়াতে সক্ষম হবেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় আবু বকর (রাঃ)-এর ইমামতের কথা বললেন, পুনরায় তাঁকে অনুরুপ উত্তর দেয়া হল। তৃতীয় বারও তিনি এ কথা বললে তাঁকে একই উত্তর দেয়া হল। তখন তিনি রাগান্বিত হয়ে বললেন, তোমরা তো হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর সেই মহিলার (হযরত জুলায়খার মত অর্থাৎ তোমরা আমাকে বিভ্রান্তিতে ফেলতে চাচ্ছ। তোমরা হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে বল, সে যেন লোকদেরকে নিয়ে নামায আদায় করে। অতঃপর হযরত আবু বকর (রাঃ) নামায পড়াবার জন্য বের হলেন ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগ যন্ত্রণা একটু উপশম মনে করলেন। তাই দু’ব্যক্তির কাধে ভর করে (হযরত আলী ও আব্বাস রাঃ) হুজরা মোবারক থেকে বের হন। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমার মনে হয় আমি এখনো দেখতে পাচ্ছি, অসুস্থাতাহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পা মোবারকদ্বয় যেন যমীনের উপর দিয়ে রেখা টেনে গেছে (অর্থাৎ অসুস্থতার কারণে তিনি যমীনে পা রাখতে সক্ষম হননি)।
হযরত আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেয়ে মোসাল্লা হতে পিছু হটার ইচ্ছা করলে তিনি ইঙ্গিত করলেন, আপনি আপনার জায়গায় অবস্থান করুন, অতঃপর তাঁকে নিয়ে হযরত আবু বকরের পার্শ্বে বসানো হল।
রাবী সোলায়মান বলেন, হযরত আ’মাশ (রঃ)-কে প্রশ্ন করা হল, তা হলে মনে হয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায আদায় করেছেন আর হযরত আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এ অনুসরণ করে নামায আদায় করেছেন। আর অন্যান্য মুসল্লীগণ হযরত আবু বকরের নামাযের অনুসরণ করেছেন। তিনি মাথা নেড়ে বললেন, হাঁ, তদ্রুপই হয়েছে। এ হাদীসের রাবী আবু মোআবিয়া আরেকটু বেশি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু বকরের বাম দিকে বসেছিলেন। আর হযরত আবু বকর (রাঃ) দাঁড়িয়ে নামায আদায় করেছেন।
৬৩৪। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসুস্থতা যখন বেড়ে গেল, ব্যথা বেশি হতে চলল, তখন তিনি উম্মাহতুল মো’মেনীনের কাছে অনুমতি চাইলেন যেন অসুস্থাতার সময় আমার হুজরাতে কাটাতে পারেন। উম্মাহাতুল মোমেনীনের সকলের পক্ষ হতে অনুমতি দেয়া হলে তিনি দু’ব্যক্তির কাঁধে ভর করে যমীনের সাথে পা মোবারকদ্বয় হেঁচড়ে বের হলেন। তখন তিনি হযরত আব্বাস (রাঃ) এবং অপর এক ব্যক্তির মধ্যখানে চিলেন। ওবায়দুল্লাহ বলেন, আমি এ ব্যাপারে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে আলোচনা করলাম, যা হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন। তিনি আমাকে বললেন, তুমি কি জান? হযরত আয়েশা (রাঃ) যার উল্লেখ করেননি তিনি তখন আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তিনি আল ইবনে আ’বী তালেব (রাঃ)।
৬৩৫। হাদীসঃ হযরত নাফি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে উমর (রাঃ) একবার প্রচন্ড শীত ও বাতাসের রাতে নামাযের আযান দিলেন। তারপর ঘোষণা করলেন, প্রত্যেকেই নিজ নিজ আবাসে নামায আদায় করে নাও, এরপর তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচন্ড শীত ও বৃষ্টির রাত হলে মুআযযিনকে এ কথা বলার নির্দেশ দিতেন- “প্রত্যেক নিজ নিজ আবাসে নামায আদায় করে নাও।”
৬৩৬। হাদীসঃ হযরত মাহমুদ ইবনে রবী আনসারী (রাঃ)
বলেন, হযরত ইতবান ইবনে মালেক (রাঃ)
স্বীয় গোত্রে ইমামতি করতেন। আর তিনি অন্ধ ছিলেন প্রায়। তিনি এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ওজর তুলে ধরে বললেন, হুযুর! আমি একজন অন্ধপ্রায় ব্যক্তি। বৃষ্টি হলে,
(আমি জামাআতে আসতে পারি না)
অতএব আপনি আমার ঘরের কোন এক স্থানে নামায
পড়ুন। আমি সে স্থানটিকে নামাযের স্থান বানিয়ে নেব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে এসে বললেন, তুমি কোন স্থানটি
আমার জন্য পছন্দ কর? তিনি ঘরের একটি স্থান
দেখালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে স্থানে নামায পড়লেন।
৬৩৭। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হারেস (রাঃ) বলেন, এক বৃষ্টি বাদলের দিনে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) আমাদের মাঝে খোতবা দিলেন। একামতের সময় মোআযেন 'হাইয়্যা আলাস সালাহ' পর্যণ্ত এসে পৌছলে তিনি তাঁকে আদেশ করলেন যেন তিনি বলেন, "আসসালাতু ফির রিহাল" (ঘরে নামায আদায় কর)। এ শুনার পর মুসল্লীগণ একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলেন। যাতে মনে হচ্ছে তারা এ নির্দেশ অপছন্দ করেছেন। তাদের অবস্থা দেখে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, মনে হয় তোমরা আমার এ নির্দেশ অপছন্দ করছ। এরুপ নির্দেশ তো সে মহান ব্যক্তিও করেছেন যিনি আমা অপেক্ষা অতি উত্তম, অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর এরুপ নির্দেশ তো আযীমত হিসেবে গণ্য (অর্থাৎ জুমআ ওয়াজিব, তা জানি, তবে লোকদের সুযোগ সুবিধাহেতু আমি এরুপ নির্দেশ দিয়েছি। আমি তোমাদেরকে বিপদে ফেলতে চাইনি)।
অপর সূত্রে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তোমাদেরকে গুনাহগার বানাতে চাই না, যাতে বৃষ্টির কারণে তোমরা কনুইতে মাটি লাগিয়ে সব কিছু বিনষ্ট করবে।
৬৩৮। হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন হঠাৎ করে আকাশে মেঘ দেখা দিল। এমনকি বৃষ্টিও বর্ষিত হল, যাতে মসজিদে নববীর ছাদ থেকে পানি পড়ে মসজিদ ভিজে গেল। সে সময় মসজিদের ছাদ ছিল খেজুর ডাল দ্বারা আবৃত। বৃষ্টির সময় নামায আদায় করা হলে পরে আমি দেখতে পেলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাটি ও পানির মধ্যে সেজদা করছেন। এমনকি আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ললাট মোবারকে মাটির দাগ দেখতে পাই।
৬৩৯। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, এক আনসারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরজ করলেন, আমি আপনার সাথে জামাআতে শরীক হতে অক্ষম। তিনি ছিলেন খুব মোটা। একদিন তিনি হুযুর সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য নিজের ঘরে খাওয়ার আয়োজন করে তাঁকে দাওয়াত করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাড়ীতে উপস্থিত হলে তিনি একটা চাটাই বিছিয়ে তার এক দিকে পানি ছিটিয়ে দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপর দু'রাকআত নামায আদায় করেন। অতঃপর জারুদ গোত্রের আবদুল হামিদ নামক এক ব্যক্তি হযরত আনাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি 'চাশতের' নামায আদায় করেছিলেন? আনাস (রাঃ) বললেন, আমি কেবল সে দিনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এরুপ নামায আদায় করতে দেখেছি।
৬৪০। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রেওয়াত করেন, তিনি ইরশাদ করেছেন, যদি সন্ধ্যাকালীন খাওয়া উপস্থিত করা হয় আর নামাযের জন্য একামত বলা হয়, তখন প্রথমে খানা খেয়ে নিবে।
৬৪১। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নামাযের পূর্বে যদি সান্ধ্যকালীন খাওয়া উপস্থিত করা হয়, তখন মাগরিবের নামায আদায়ের পূর্বেই খেয়ে নাও। রাতের খাওয়ায় তাড়াহুড়া করো না।
৬৪২। হাদীসঃ হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কারো জন্য যদি রাতের খাওয়া উপস্থিত করা হয়, তারপর নামাযের একামত দেয়া হয়, তা হলে সে যেন প্রথমে খেয়ে নেয়, সে যেন তাড়াহুড়া করে খাওয়া শেষ না করে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ)-এর অভ্যাস ছিল, যদি তাঁর জন্য খাওয়া নিয়ে আসা হত এবং নামাযের একামত দেয়া হত, তখন তিনি খাওয়া শেষ না করা পর্যন্ত জামাআতে শরীক হতেন না। অথচ তিনি ইমামের কেরাআত শুনতে পেতেন।
অন্য সূত্রে হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ যখন খেতে বসে, খাওয়া শেষ না করা পর্যন্ত সে যেন তাড়াহুড়া না করে, যদিও নামাযের একামত দেয়া হয়।
৬৪৩। হাদীসঃ হযরত আমর ইবনে উমাইয়া (রাঃ) বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বকরীর পাঁজরের হাড় থেকে চাকু দ্বারা গোশত কেটে খেতে দেখেছি। এমন সময় নামাযের জন্য আহব্বান করা হলে তিনি খাওয়া থেকে উঠে দাঁড়ান। তারপর হাত থেকে ছুরি রেখে নামায আদায় করে কিন্তু নামাযের জন্য আর কোন অযু করলেন না।
৬৪৪। হাদীসঃ হযরত আসওয়াদ (রাঃ) বলেন, আমি এক সময় হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে কোন কাজ করতেন কি? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কোন সময় পরিবার পরিজনকে ঘরের কাজে সহায়তা করতেন। এমন সময় একামত দেয়া হলে তিনি ঘর থেকে রেরিয়ে আসতেন।
৬৪৫। হাদীসঃ হযরত আবু কেলাবা (রাঃ) বলেন, একদা মালেক বিন হুয়াইরেস (রাঃ) বসরা নগরীতে আমাদের মসজিদে আসেন। অতঃপর তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে নামায পড়ব। অন্যথায় আমি এখন কোন নামায পড়তাম না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যেভাবে নামায পড়তে দেখেছি সেভাবেই পড়ব।
বর্ণনাকারী আইউব (রঃ) বলেন, আমি আবু কেলাবা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে নামায পড়েছেন? তিনি বললেন, আমাদের বৃদ্ধের (আমর ইবনে সালামার) ন্যায়। আর সে বৃদ্ধের অবস্থা ছিল, তিনি প্রথম রাকআতের সেজদা থেকে মাথা উঠাবার পর সোজা হয়ে দু'সেজদার মধ্যখানে আরামে বসতেন।
৬৪৬। হাদীসঃ হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ), বলেন, ইন্তেকালের পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং অসুস্থতা বেশি হয়ে গেল, তখন তিনি ঘরের লোকজনকে বললেন, হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে বল, সে যেন লোকদেরকে নিয়ে নামায পড়ে। হযরত আয়েশা (রাঃ) বললেন, তিনি তো নরম দিলের মানুষ, আপনার স্থানে দাঁড়ালে লোকদেরকে নিয়ে নামায পড়তে সক্ষম হবেন না। তারপরও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আবু বকরকে বল সে যেন লোকদেরকে নিয়ে নামায পড়ে। হযরত আয়েশা (রাঃ) পূর্ববৎ জবাব দিলেন। তৃতীয় বারেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবু বকর (রাঃ)-কে বল সে যেন লোকদেরকে নিয়ে নামায আদায় করে। তারপর আয়েশা (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা তো হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর সময়কার মহিলাদের (জুলায়খার) ন্যায় মনে হচ্ছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দূত হযরত বেলাল (রাঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর কাছে এসে তাঁকে ইমামতি করার জন্য বলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায়ই লোকদেরকে নিয়ে নামায আদায় করেন।
৬৪৭। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর
ইন্তেকালের পূর্বে অসুস্থ অবস্থায় বললেন, আবু বকরকে বল, সে যেন লোকদেরকে নিয়ে
নামায আদায় করে। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললাম, হযরত আবু বকর (রাঃ)
আপনার স্থানে দাঁড়ালে কান্নার কারণে লোকদেরকে কেরাআত শুনাতে পারবেন না। তাই আপনি হযরত
ওমর (রাঃ)-কে আদেশ করুন, তিনি যেন লোকদেরকে
নিয়ে নামায পড়েন। অতঃপর আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি উম্মুল মোমেনীন হযরত হাফসা (রাঃ)-কে বললাম, আপনি তাঁকে বলুন, আবু বকর (রাঃ) যদি আপনার স্থানে দাঁড়ায় তা হলে কান্নার
করণে তিনি লোকদেরকে কেরাআত শুনাতে সক্ষম হবেন না। তাই আপনি হযরত ওমর (রাঃ)-কে আদেশ
করুন তিনি যেন ইমামতি করেন। হযরত হাফসা (রাঃ)-ও হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর কথানুসারে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাই বললেন। তিনি বললেন, তোমরা চুপ কর। তোমরা নিশ্চয় হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে
এর সময়কার মহিলা (জুলায়খা)-এর ন্যায় মনে হচ্ছে (আমাকে ভুলাতে চাচ্ছ)। তোমরা আবু বকর (রাঃ)-কে বল
সে যেন লোকদেরকে নিয়ে নামায আদায় করে। তখন হযরত হাফসা (রাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে বললেন,
আপনার পক্ষ হতে আমি মঙ্গলজনক
কিছু পাচ্ছি না।
৬৪৮। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ)-যিনি ছিলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পূর্ণ অনুসারী এবং তাঁর খাদেম ও সাহাবী তিনি বলেন, যে অসুস্থতায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল ফরমান সে অসুস্থতার সময় হযরত আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্থালাভিষিক্ত হয়ে ইমামতি করতেন। এমনকি 'সোমবার দিন' যখন সাহাবাগণ মসজিদে সারিবদ্ধ হয়ে নামাযের জন্য দাঁড়ান, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা মোবারকের পর্দা উঠিয়ে দাঁড়েয়ে আমাদের দিকে দেখতে লাগলেন। সে সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা মোবারক কোরানের পাতার ন্যায় খুব আলোকোজ্জ্বল দেখাচ্ছিল। তিনি মুচকি হাসলেন। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ অবস্থায় দেখতে পেয়ে খুশিতে বিব্রত হওয়ার নিকটবর্তী হলাম। হযরত আবু বকর (রাঃ)-ও পেছনের দিকে ফিরে দাঁড়ান। তিনি ধারণা করলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা থেকে মসজিদে তাশরীফ রাখতে পারেন। তাই তিন মুসল্লীদের সফের মধ্যে ঢুকে পড়ার চিন্তা করেন। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে ইঙ্গিত করলেন, তোমরা নামায পূর্ণ কর। অতঃপর তিনি পর্দা ছেড়ে দিলেন। সে দিনই তিনি ইন্তেকাল ফরমান।
৬৪৯। হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, একাধারে তিন দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে তাশরীফ আনতে পারেননি। অতঃপর নামাযের একমত দেয়া হলে আবু বকর (রাঃ) ইমামতের জন্য অগ্রসর হন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা মোবারকের পর্দা ধরে উপরের দিকে উঠালেন। পর্দা উঠাবার সাথে সাথে তাঁর চেহারা মোবারকের সৌন্দর্য আমাদের নজরে ভেসে আসে। তাঁর চেহারার সৌন্দর্যের ন্যায় এমন সুন্দর আমরা আর কখনো দেখতে পাইনি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হস্ত মোবারক দ্বারা হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর দিকে ইঙ্গিত করলেন যেন তিনি ইমামতের জন্য অগ্রসর হন। অতঃপর তিনি হুজরা মোবারকের পর্দা ছেড়ে দেন। মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে আর দেখার সৌভাগ্য হয়নি।
৬৫০। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রোগ যখন খুব বেড়ে গেল, তখন তাঁকে নামাযের জামা'আত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন,
আবু বকরকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে নামায আদায় করে নেয়। আয়েশা
(রাঃ) বলেন, আমি বললাম,
আবু বকর (আঃ) অত্যান্ত কোমল
মনের লোক। কিরাআতের সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়বেন। তিনি বললেন, তাঁকেই নামায আদায় করতে বল। আয়েশা (রাঃ) সে কথার
পুনরাবৃত্তি করলেন। তিনি আবার বললেন, তাঁকেই নামায আদায় করতে বল। তোমরা ইউসুফ (আ)-এর সাথী রমণীদেরই মত।
৬৫১। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় অসুস্থাতার সময় হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে ইমামতি করার জন্য আদেশ করেন। আদেশানুসারে হযরত আবু বকর (রাঃ) লোকদেরকে নিয়ে নামায পড়তেন।
হযরত ওরওয়া (রাঃ) বলেন, এ সময় একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থতা একটু কম অনুভব করলেন। তাই হুজরা থেকে মসজিদে তাশরীফ রাখলেন। তখন আবু বকর (রাঃ) লোকদের ইমামতি করছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেয়ে একটু পেছনে সরে দাঁড়ান। তিনি আবু বকর (রাঃ)-কে ইশারা করলেন, আপনি যেভাবে আছেন সে ভাবেই থাকুন। অতঃপর হুযুর সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে এসে আবু বকর (রাঃ)-এর পার্শ্বে বসে গেলেন। সুতরাং সে দিন হযরত আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামায আর মুসল্লীগণ হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর নামায অনুসরণ করেন।
৬৫২। হাদীসঃ হযরত সাহল ইবনে সা'দ আসসারয়েদী (রাঃ) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবনে আওফ গোত্রের মধ্যকার বিবাদ মীমাংসার জন্য যোহরের সময় তথায় গেলেন। আসরের সময় পর্যন্ত তিনি ফিরে না আসলে মোআযযেন (বেলাল রাঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর কাছে এসে বললেন, আপনি কি লোকদেরকে নিয়ে নামায আদায় করবেন (ইমামতি করবেন)? তা হলে আমি একামত দিব। হযরত আবু বকর (রাঃ) বললেন, হাঁ (আমি ইমামতি করব)। অতঃপর হযরত আবু বকর (রাঃ) মোআযযেনের কথানুসারে ইমামতি করার উদ্দেশ্যে সম্মুখে অগ্রসর হন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে উপস্থিত হওয়ার পর প্রথম কাতারে দাঁড়িয়ে গেলেন। উপস্থিত লোকজন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনে (হাত দ্বারা আওয়াজ দিতে লাগলেন, কিন্তু হযরত আবু বকর (রাঃ) এ দিকে কোন খেয়াল করলেন না। যখন লোকেরা বেশি বেশি আওয়াজ দিতে লাগলেন, তখন আবু বকর (রাঃ) পেছনের দিকে নজর করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে ইশারা করলেন, আপনি স্বস্থানে অবস্থান করুন। এতে হযরত আবু বকর (রাঃ) হাত উঠিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করেন। তারপর পেছনে সরে সফের মধ্যে শামিল হন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মুখে অগ্রসর হয়ে ইমামতি করলেন। নামায শেষে হুযুর সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বলেন, হে আবু বকর! আমি আদেশ করা সত্ত্বেও কেন আপনি স্বস্থানে অপেক্ষা বা ইমামতি করলেন না? হযরত আবু বকর (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে দাঁড়িয়ে আবু কোহাফার ছেলের ইমামতি করা উচিত নয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের লক্ষ্য করে বললেন, তোমাদের কি হয়েছে? তোমরা এত বেশি বেশি হাত দ্বারা আওয়াজ দিয়েছ কেন? তোমাদের স্মরণ রাখা দরকার, যখন নামাযে এরুপ কোন ঘটনা ঘটে, তবে 'সোবাহানাল্লাহ' বলবে। কারণ 'সোবাহানাল্লাহ' বললে ইমাম সে দিকে লক্ষ্য করবে। আর স্মরণ রাখবে, হাত দ্বারা আওয়াজ করা কেবল মহিলাদের জন্য। অর্থাৎ কেবল মহিলাগণই প্রয়োজনে হাত দ্বার আওয়াজ করবেন।
৬৫৩। হাদীসঃ হযরত মালেক বিন হুয়াইরেস (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে বিশ দিন পর্যন্ত অবস্থান করলাম। তিনি ছিলেন অত্যান্ত দয়ালু। তিনি অবস্থা বুঝতে পেরে আমাদেরকে বললেন, তোমরা নিজ দেশে ফিরে যাও। তোমরা নিজ এলাকার লোকদেরকে শরীঅতের হুকুম আহকাম শিক্ষা দিবে। তাদেরকে আদেশ করবে যেন অমুক অমুক সময় অমুক অমুক নামায আদায় করে। যখন নামাযের সময় আসবে তখন তোমাদের একজন যেন আযান দেয় আর তোমাদের মধ্যকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি যেন তোমাদের ইমামতি করে।
৬৫৪। হাদীসঃ হযরত ইতবান ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বাড়ীতে তাশরীফ আনেন। তিনি আমার কাছে অনুমতি চাইলে আমি তাঁকে অনুমতি প্রদান করলাম। তারপর তিনি আমাকে বললেন, আমি তোমার ঘরের কোন স্থানে নামায পড়া তুমি পছন্দ কর? আমি তাঁকে এক স্থানের দিকে ইশারা করলাম, যে স্থানটি আমি পছন্দ করি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমামতির জন্য দাঁড়ান। আমরা তাঁর পেছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াই। নামায শেষে তিনি সালাম ফিরালেন, আমরাও সালাম ফিরাই।
৬৫৫। হাদীসঃ হযরত ওবায়দুল্লাহ বিন আবদুল্লাহ ইবনে উতবাহ (রঃ) বলেন, একদা আমি উম্মুল মো'মেনীন হযরত আরয়েশা (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে বললাম, আপনি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসুস্থতা সম্পর্কে আমাকে কিছু বলবেন? উত্তরে তিনি বললেন, হাঁ অবশ্যই বলব। আয়েশা (রাঃ) তখন বললেন-
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসুস্থতা যখন বেশি হতে লাগল, তখন তিনি আমাদেরকে বললেন, লোকেরা কি নামায পড়েছে? আমরা বললাম, না। বরং হে আল্লাহর রাসূল! তারা আপনার অপেক্ষা করছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, তোমরা একটা মেখযাবে (ঢালনায়) আমার জন্য পানি ভর্তি কর। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমরা তাই করলাম। অতঃপর তিনি গোসল করলেন। তারপর মসজিদে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করলেন, কিন্তু জ্বরের প্রকোপে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে আসলে তিনি পুনরায় আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, মসজিদের লোকজন নামায পড়েছে কি না? আমরা উত্তরে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা আপনার অপেক্ষায় বসে আছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, তোমরা একটা মেখযাবে আমার জন্য পানি ভর্তি কর। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমরা তাই করলাম। অতঃপর তিনি গোসল সেরে মসজিদে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুনরায় অজ্ঞান হয়ে পড়েন এভাবে তিন বার তিনি জ্ঞানহারা হয়ে পড়েন) চতুর্থবারে তিনি জ্ঞান ফিরে পেলে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, মসজিদে লোকসকল নামায পড়েছে কি-না? আমরা বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-তারা তো আপনার জন্যই অপেক্ষমাণ। এদিকে সাহাবাগণ নবী করীম সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে এশার নামায পড়ার উদ্দেশ্যে মসজিদে বসে আছেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর কাছে লোক পাঠালেন, যেন তিনি লোকদেরকে নিয়ে নামায আদায় করেন। হযরত বেলাল (রাঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর কাছে এসে বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে আদেশ করেছেন, আপনি যেন লোকদেরকে নিয়ে নামায পড়েন। তখন হযরত আবু বকর (রাঃ)-যিনি খুব নরম মানস প্রকৃতির লোক ছিলেন, তিনি হযরত ওমর (রাঃ)-কে বললেন, হে ওমর (রাঃ)! আপনি লোকদেরকে নিয়ে নামায আদায় করুন। হযরত ওমর (রাঃ) তাঁকে বললেন, আপনি এ কাজের জন্য সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত ব্যক্তি। অতঃপর হযরত আবু বকর (রাঃ) ঐ কয়দিন পর্যন্ত ইমামতি করলেন, যে কয়দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে হাযির হতে অক্ষম ছিলেন। অতঃপর একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থতা একটু হালকা মনে করলেন। তাই দু'ব্যক্তির কাঁধে ভর করে যোহরের নামাযের জন্য হুজরা মোবারক থেকে মাসজিদে গমনের উদ্দেশ্যে বের হন, যাঁদের একজন ছিলেন হযরত আব্বাস (রাঃ)। সে সময় হযরত আবু বকর (রাঃ) লোকদের নিয়ে নামায আদায় করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেয়ে পেছনের দিকে সরে যেতে চাইলে তাকে ইশারা করে করেন, যেন তিনি পেছনে না সরে যান। বরং তিনি হযরত আব্বাস ও আলী (রাঃ)-কে বললেন, তোমরা আমাকে হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর পার্শ্বে নিয়ে বসাও। তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর পার্শ্বে বসান। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর হযরত আবু বকর (রাঃ) এমন অবস্থায় নামায পড়াতে আরম্ভ করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আর লোকেরা হযরত আব বকর (রাঃ)-এর একতেদা করছিলেন। সে সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসা অবস্থায় ছিলেন। বর্ণনাকারী হযরত ওবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বললাম, হযরত আয়েশা (রাঃ) আমাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, আমি আপনাকে সে হাদীসখানা দেখাব কি? তিনি বললেন, আচ্ছা লও। অতঃপর আমি তাঁর কাছে হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসখানা পেশ করলাম। তিনি তাঁর কোন অংশই অস্বীকার করলেন না। তবে বললেন, হযরত আব্বাস (রাঃ)-এর সাথে যিনি ছিলেন, হযরত আয়েশা (রাঃ) কি তোমার কাছে তাঁর নাম উল্লেখ করেছেন? উত্তরে আমি বললাম, না-তিনি উল্লেখ করেননি। তখন তিনি আমাকে বললেন, দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন হযরত আলী (রাঃ)।
৬৫৬। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ অবস্থায় ঘরে নামায আদায় করলেন, তিনি বসে বসে। আর লোকেরা তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে নামায পড়েন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দিকে ইশারা করলেন, তোমরা বসে বসে নামায আদায় কর। নামায শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন-ইমাম বানানো হয়েছে তার একতেদা করার জন্য। তাই ইমাম যখন রুকু করবে তোমরাও রুকু করবে। ইমাম যখন মাথা উঠাবে তোমারও মাথা উঠাবে। আর ইমাম যখন 'সামিয়াল্লাহ লিমান হামিদা' বরবে, তোমরা তখন 'রাব্বানা লাকাল হামদ' বলবে। আর ইমাম যখন বসে নামায আদায় করবে, তখন তোমরাও সকলে বসে নামায আদায় করবে।
৬৫৭। হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা ঘোড়ায় আরোহণ করার পর সেটির পিঠ থেকে পড়ে ডান পাঁজরে আঘাত পেলেন, এতে তিনি এক ওয়াক্ত নামায বসে বসে আদায় করেন। আমরাও তাঁর পেছনে বসে বসে নামায আদায় করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শেষে যখন আমাদের দিকে ফিরলেন তখন বললেন, ইমাম বানানো হয়েছে তার একতেদা করার জন্য। তাই ইমাম যখন দাঁড়িয়ে নামায পড়বে তোমরাও দাঁড়িয়ে নামায পড়বে। ইমাম যখন রুকু করবে তোমরাও তার অনুসরণে রুকু করবে।
আর যখন তিনি .....(সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা) বলবেন, তোমরা তখন বলবে ....(রাব্বানা লাকাল হামদু)। আর ইমাম যখন বসে বসে নামায আদায় করবে, তখন তোমরা তার অনুসরনে বসে বসে নামায আদায় করবে।
ইমাম বোখারী (রঃ) ইমাম হোয়ায়দী (রঃ)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, (ইমাম বসে বসে নামায পড়লে মোক্তাদীগণও বসে বসে নামায পড়বে) এ হুকুম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পুরাতন রোগের সময় ছিল। অর্থাৎ যখন তিনি পাঁজরে চোট পেয়েছিলেন। কিন্তু এরপর তিনি বসে নামায পড়লেও সাহাবায়ে কেরাম তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করেছেন। তাঁদেরকে বসে পড়ার আদেশ করেননি। এ স্থলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেষোক্ত কর্ম অনুসারেই মাসআলী গৃহীত হবে।
৬৫৮। হাদীসঃ হযরত বারা'আ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি মিথ্যাবাদী নন তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলার পর যতক্ষণ পর্যন্ত সিজদায় না যেতেন, ততক্ষণ আমাদের কেউ পিঠ বাঁকা করতেন না। তিনি সিজদায় যাওয়ার পর আমরা সিজদায় যেতাম।
ইমামের পূর্বে সেজাদ থেকে মাথা উঠাবার গুনাহ
৬৫৯। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রেওয়াত করেন, তোমাদের কেউ কি এ কথা ভয় করে না, যদি কেউ তার ইমামের পূর্বে সেজদা থেকে মাথা উঠায় তা হলে আল্লাহ তার মাথা গাধার মাথা। অথবা তার আকৃতি গাধার আকৃতিতে পরিণত করে দিবেন।
৬৬০। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মদীনা মোনওয়ারায় হিজরতের পূর্বে যে সকল সাহাবী মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে এসেছিলেন এবং যাঁরা কোবা নামক স্থানে উপস্থিত হয়েছিলেন, আবু হোযায়ফা (রাঃ)-এর গোলাম 'সালেম' তাঁদের ইমামতি করতেন। যেহেতু তিনি তাঁদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক কোরআন পাঠকারী ছিলেন।
৬৬১। হাদীসঃ হযরত আনাস (ইবনে মালিক) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। তোমরা শোন ও আনগত্য কর, যদিও তোমাদের উপর এমন কোন হাবশীকে আমীর নিযুক্ত করা হয়-যার মাথা কিসমিসের মতো।
৬৬২। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তারা তোমাদের ইমামতি করে। যদি তারা সঠিকভাবে আদায় করে তা হলে তার সাওয়াব তোমরা পাবে। আর যদি ত্রুটি করে, তাহলে তোমাদের জন্য সওয়াব রয়েছে, ক্রটি তাদের (ইমামের) উপরই বর্তাবে।
৬৬৩। হাদীসঃ ইমাম আবু আব্দুল্লাহ (বুখারী) বলেন, মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ, আওযায়ী, যুহরী (রাঃ) হুমাইদ ইবনে আব্দুল রহমানের মাধ্যমে উবায়দুল্লাহ ইবনে আদী ইবনে খিয়ার থেকে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, উবায়দুল্লাহ ইবনে আদী ইবনে খিয়ার উসমান (রাঃ) যখন (বিদ্রোহীদের দ্বারা) অবরুদ্ধ ছিলেন তখন তার কাছে গিয়ে বললেন, আপনিইতো বাস্তবে সবার ইমাম এবং এখন আপনি নিজের অবস্থা নিজেই বুঝেছেন। এখন আমাদের নামাযে ফেতনাবাজরা ইমামতি করছে। এতে আমরা দ্বিধাবোধ করছি। তখন উসমান (রাঃ) বললেন, মানুষ যা করে তার মধ্যে উত্তম হলো নামায। সুতরাং মানুষ যদি ভাল কাজ করে তাহলে তোমরাও তাদের সাথে ভাল কাজ করো্। আর যদি তারা খারাপ কাজ করে তাহলে তার অকল্যাণ বেঁচে থাকার জন্য তা বর্জন করো।
ইমাম যুবাইদী বলেন, ইমাম যুহরী বলেছেন, নারী স্বভাবের পুরুষের পিছনে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া নামায আদায় করো না।
৬৬৪। হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা হযরত আবু যর গেফারী (রাঃ)-কে বললেন, হে আবু যর! কোন হাবশীও যদি আমীর হয়, তবু তার আদেশ শ্রবণ করবে এবং তার কথা মান্য করবে। যদিও তার মাথা শুকনা খেজুরের ন্যায় হয় (হাবশীদের মাথা খুব ছোট এবং কুৎসিত)।
৬৬৫। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি আমার খালা মায়মুনা (রাঃ)-এর ঘরে রাত যাপন করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার নামায আদায় করে আসলেন এবং চার রাকাআত নামায আদায় করে শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর উঠে নামাযে দাঁড়ালেন। তখন আমিও তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে তাঁর ডানপাশে নিয়ে নিলেন এবং পাঁচ রাকাআত নামায আদায় করলেন। এরপর আরও দু'রাকআত নামায আদায় করে নিদ্রা গেলেন। এমনকি আমি তাঁর নাক ডাকার আওয়াজ শুনলাম। তারপর তিনি (উঠে ফজরের) নামাযের জন্য বেরিয়ে গেলেন।
৬৬৬। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (আমার খালা) মায়মুনা (রাঃ)-এর ঘরে ঘুমালাম, নবী সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে রাতে তাঁর কাছে ছিলেন। তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অযু করলেন। তারপর নামাযে দাঁড়ালেন। আমিও তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি ঘুমিয়ে ধরে তাঁর ডানপাশে নিয়ে আসলেন। আর তিনি তের রাকাআত নামায আদায় করলেন। তারপর তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন, এমনকি নাক ডাকতে শুরু করলেন এবং তিনি যখন ঘুমাতেন তাঁর নাক ডাকত। তারপর তাঁর কাছে মুআযযিন এলেন, তিনি বেরিয়ে ফজরের নামায আদায় করলেন এবং (নতুন) অযু করেননি।
৬৬৭। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি আমার খালার (মায়মুনা) (রাঃ) এর কাছে রাত যাপন করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের নামাযে দাঁড়লেন, আমিও তাঁর সঙ্গে নামায আদায় করতে দাঁড়ালাম। আমি তাঁর বামপাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তিনি আমার মাথা ধরে তাঁর ডানপাশে দাঁড় করালেন।
ইমাম যদি নামায লম্বা করে অসুবিধা দেখা দিলে
৬৬৮। হাদীসঃ হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত যে, মুয়ায ইবনে জাবাল (রাঃ) নবী সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে নামায পড়তেন, অতঃপর ফিরে গিয়ে নিজ গোত্রের ইমামতি করতেন।
৬৬৯। হাদীসঃ হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে নামায আদায় করতেন। তারপর মহল্লায় গিয়ে গোত্রের লোকদের ইমামতি করতেন। একদিন তিনি গোত্রের লোকদের নিয়ে এশার নামায আদায় করেন। তাতে কেরাআত হিসেবে সূরা বাকারা পাঠ করেন। তাঁর এ লম্বা কেরাআতের কারণে হযম ইবনে উবাই (রাঃ) নামায থেকে সরে গিলেন। এতে হযরত মাআয (রাঃ) মনে খুব ব্যথা পান। এ খবর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পৌছলে তিনি বললেন, ফেতনা সৃষ্টিকারী, ফেতনা সৃষ্টিকারী, ফেতনা সৃষ্টিকারী-তিন বার বললেন। অতঃপর হযরত মা'আয (রাঃ)-কে আওসাতে মুফাসসাল হতে যে কোন দুটি সূরা পাঠ করার নির্দেশ দেন। বর্ণনাকারী আমর ইবনে দীনার (রঃ) বলেন, উক্ত সুরা দু'টির নাম আমি পরে ভুলে গেছি।
৬৭০। হাদীসঃ হযরত আবু মাসউদ (রাঃ) বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর শপথ, অমুকের কারণে সকালের নামায থেকে আমাকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে। যেহেতু সে নামায খুবই লম্বা করে থাকে। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শ্রবণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরুপ রাগান্বিত হলেন, আমি তাঁকে ঐ দিনকার ন্যায় রাগান্বিত অবস্থায় দেখতে পাইনি। সেদিন তিনি বলেন, হে সাহাবাগণ! তোমাদের মধ্যে কিছু লোক এরুপ আছে যারা মানুষের মধ্যে নৈরাশ্য সৃষ্টিকারী। তোমাদের মধ্যে যে মানুষের ইমামতি করবে সে যেন সংক্ষিপ্ত নামায আদায় করে। যেহেতু মোক্তাদীদের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের লোক যেমন দূর্বল, বৃদ্ধ, প্রয়োজনশীল ইত্যাদি থাকতে পারে।
৬৭১। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন লোকদের নিয়ে নামায আদায় করে, তখন যেন সে সংক্ষেপ করে। কেননা তাদের মাঝে দূর্বল, অসুস্থ ও বৃদ্ধ রয়েছে। আর যদি কেউ একাকী নামায আদায় করে, তখন ইচ্ছামত দীর্ঘ করতে পারে।
৬৭২। হাদীসঃ হযরত আবু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সাহাবী এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! অমুক ব্যক্তির জন্য আমি ফজরের নামাযে অনুপস্থিত থাকি। কেননা, তিনি আমাদের নামায খুব দীর্ঘায়িত করেন। এ শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হলেন। আবু মাসউদ (রাঃ) বলেন, নসীহত করতে গিয়ে সে দিন তিনি যেরুপ রাগান্বিত হয়েছিলেন, সে দিনের মত রাগান্বিত হতে তাঁকে আর কোন দিন দেখিনি। তারপর তিনি বলরেনঃ হে লোকেরা! তোমাদের মধ্যে বিতৃষ্ণা সৃষ্টিকারী রয়েছে। তোমাদের মধ্যে যে কেউ লোকদের উমামতি করে, সে যেন সংক্ষেপ করে। কেননা, তার পিছনে দূর্বল, বৃদ্ধ ও হাজতমন্দ রয়েছে।
৬৭৩। হাদীসঃ হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সাহাবী দু'টি পানি বহনকারী উট নিয়ে আসছিলেন। রাতের অন্ধকার তখন ঘনীভূত হয়ে এসেছে। এ সময় তিনি মু'আয (রাঃ)-কে নামায আদায়রত পান, তিনি তার উট দু'টি বসিয়ে দিয়ে মু'আয (রাঃ)-এর দিকে (নামায আদায় করতে) এগিয়ে এলেন, মু'আয (রাঃ) সূরা বাকারা বা সূরা নিসা পড়তে শুরু করেন। এসে সাহাবী (জামা'আত ছেড়ে) চলে যান। পরে তিনি জানতে পারেন যে, মু'আয (রাঃ) এ জন্য তার সমালোচনা করেছেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে ম'আয (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে মু'আয! তুমি কি লোকদের ফিতনায় ফেলতে চাও? বা তিনি বলেছিলেন, তুমি কি ফিতনা সৃষ্টিকারী? তিনি একথা তিনবার বলেন। তারপর তিনি বললেন তুমিঃ .... এবং ..... (সূরা) দ্বারা নামায আদায় করলে না কেন? কারণ তোমার পিছনে দূর্বল, বৃদ্ধ ও হাজতমন্দ লোক নামায আদায় করে।
৬৭৪। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায সংক্ষিপ্ত করতে তবে পূর্ণাঙ্গ করে আদায় করতেন।
৬৭৫। হাদীসঃ হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি অনেক সময় দীর্ঘ করে নামায আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে দাঁড়াই। পরে শিশুর কান্নাকাটি শুনে নামায সংক্ষেপ করি। কারণ আমি পছন্দ করি না যে, শিশুর মাকে কষ্টে ফেলি।
৬৭৬। হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেয়ে সংক্ষিপ্ত এবং পূর্ণাঙ্গ নামায আর কোন ইমামের পিছনে কখনো পড়িনি। আর তা এ জন্য যে, তিনি শিশুর কান্না শুনতে পেতেন এবং তার মায়ের ফিতনায় পড়ার আশংকায় সংক্ষেপ করতেন।
৬৭৭। হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিন বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি দীর্ঘ করার ইচ্ছা নিয়ে নামায শুরু করি। কিন্তু পরে শিশুর কান্নায় আমার নামায সংক্ষেপ করে ফেলি। কেননা, শিশু কাঁদলে মায়ের মন যে অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ে তা ভেবে আমি নামায সংক্ষিপ্ত করি।
৬৭৮। হাদীসঃ হযরত জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, মু'আয (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংগে নামায আদায় করে
নিজ গোত্রে ফিরে গিয়ে তাদের ইমামতি করতেন।
৬৭৯। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগে আক্রান্ত থাকা কালে একবার বিলাল (রাঃ) তাঁর নিকট এসে নামাযের (সময় হয়েছে বলে) সংবাদ দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবু বকরকে বল, যেন লোকদের নিয়ে নামায আদায় করে। (আয়েশা (রাঃ) বলরেন,) আমি বললাম, আবু বকর (রাঃ) কোমল হৃদয়ের লোক, তিনি আপনার স্থানে দাঁড়ালে কেঁদে ফেলবেন এবং কিরাআত পড়তে পারবেন না। তিনি আবার বললেন, আবু বকরকে বল, নামায আদায় করতে। আমি আবারও সেকথা বললাম। তখন তৃতীয় বা চতুর্থবারে তিনি বল্লেন, তোমরাতো ইউসুফের (আঃ) রমণীদেরই মত। আবু বকরকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে নামায আদায় করে। আবু বকর (রাঃ) লোকদের নিয়ে নামায আদায় করতে লাগলেন, ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'জন লোকের কাঁধে ভর করে বের হলেন। (আয়েশা রাঃ বললেন) আমি যেন এখনও সে দৃশ্য দেখতে পাই, তিনি দু'পা মুবারক মাটির উপর দিয়ে হেঁচড়িয়ে যান। আবু বকর (রাঃ) তাঁকে দেখতে পেয়ে পিছনে সরে আসতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশারায় তাঁকে নামায আদায় করতে বললেন, (তবুও) আবু বকর, (রাঃ) পিছনে সরে আসলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পাশে বসলেন, আবু বকর (রাঃ) তাকবীর শুনাতে লাগলেন।
৬৮০। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (রোগে) পীড়িত হয়ে পড়েছিলেন, বিলাল (রাঃ) এসে নামাযের কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবু বকরকে বল, লোকদের নিয়ে নামায আদায় করতে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আবু বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের ব্যক্তি। তিনি যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন সাহাবগিণকে কিছুই শুনাতে পারবেন না। যদি আপনি উমর (রাঃ)-কে এ নির্দেশ দেন (তবে ভাল হয়)। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন, লোকদের নিয়ে আবু বকর (রাঃ)-কে নামায আদায় করতে বল। আমি হাফসা (রাঃ)-কে বললাম, তুমি তাঁকে একটু বল যে, আবু বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের ব্যক্তি । তিনি যখন আপনার পরিবর্তে সে স্থানে দাঁড়াবেন, তখন সাহাবীগণকে কিছুই শোনাতে পাবেন না। যদি আপনি উমর (রাঃ)-কে এ নির্দেশ দিতেন (তবে ভাল হতো)। এ শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা ইউসূফের রমণীদের মত, আবু বকরকে লোকদের নিয়ে নামায আদায় করতে বলেন। আবু বকর লোকদের নিয়ে নামায শুরু করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে একটু সুস্থবোধ করলেন এবং দু'জন সাহাবীর কাঁধে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে মসজিদে গেলেন। তার দু'পা মুবারক মাটির উপর দিয়ে হেঁচড়ে যাচ্ছিল। আবু বকর (রাঃ) যখন তাঁর আগমন আঁচ করলেন, পিছনে সরে যেতে উদ্যত হলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি ইশারা করলেন (পিছিয়ে না যাওয়ার জন্য)। তারপর তিনি এসে আবু বকর (রাঃ)-এর বামপাশে বসে গেলেন। অবশেষে আবু বকর (রাঃ) দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছিলেন। আর সাহাবীগণ হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর নামাযের অনুসরণ করছিল।
৬৮১। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত
যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'রাকআত আদায় করে নামায
শেষ করে ফেললেন। যূল-ইয়াদাইন (রাঃ) তাঁকে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! নামায কি কম করা হয়েছে,
না আপনি ভুলে গেছেন?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম (অন্যদের লক্ষ্য করে) বললেন যূল-ইয়াদইন কি ঠিকই বলছে? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
দাঁড়ালেন এবং আরও দু'রাকআত নামায আদায়
করলেন, তারপর সালাম ফিরালেন
এবং তাকবীর বলে স্বাভাবিক সিজদার মত অথবা তার চাইতে দীর্ঘ সিজদা করলেন।
৬৮২। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী কারীম সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের নামায
দুরাকআত পড়লে তাঁকে বলা হয়, আপনি মাত্র দুরাকআত পড়েছেন। তখন তিনি
আরও দুরাকআত পড়ে সালাম ফিরিয়ে সেজদা (সাহু) করলেন।
৬৮৩। হাদীসঃ হযরত
উম্মুল মো’মেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (অন্তিম) রোগে
আক্রান্ত অবস্থায় বললেন, আবু বকরকে লোকদের নিয়ে নামায আদায় করতে
বল। আয়েশা (রাঃ)
বলেন, আমি তাঁকে বললাম, আবু
বকর (রাঃ) যখন আপনার স্থলে দাঁড়াবেন,
তখন কান্নার কারণে সাহাবীগণকে কিছুই শুনাতে পারবেন না। কাজেই উমর (রাঃ)-কে লোকদের নিয়ে নামায আদায় করতে নির্দেশ দিন। তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার বললেন, আবু বকরকে বল লোকদের নিয়ে নামায আদায় করে নিতে। আয়েশা (রাঃ)
বলেন, তখন আমি হাফসা (রাঃ)-কে বললাম, তুমি তাঁকে বল যে, আবু
বকর (রাঃ) যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন,
তখন কান্নার কারণে সাহাবীগণকে কিছুই শুনাতে পারবেন না। কাজেই উমর (রাঃ)-কে বলুন তিনি যেন সাহাবীগণকে নিয়ে নামায আদায় করেন। হাফসা (রাঃ)
তাই করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চুপ কর! তোমরা ইউসুফের
সাথী নারীদের মত। আবু বকরকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে নামায আদায় করে। এতে হাফসা (রাঃ)
আয়েশা (রাঃ)-কে (অভিমান করে) বললেন, তোমার কাছ থেকে
আমি কখনো আমার জন্য হিতকর কিছু পাইনি।
৬৮৪। হাদীসঃ হযরত
নোমান ইবনে বশীর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হে
সাহাবাগণ! তোমরা অবশ্যই নামাযের কাতারসমূহ সোজা করবে। অন্যথায় মহান
আল্লাহ তোমাদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করে দিবেন।
৬৮৫। হাদীসঃ হযরত
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা
নামাযের কাতারসমূহ সোজা করে দাঁড়াবে। আমি তোমাদেরকে আমার পেছন থেকেও দেখতে পাই।
৬৮৬। হাদীসঃ হযরত
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, নামাযের ইকামত হচ্ছে, এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে মুখ করে তাকালেন এবং বললেন, তোমাদের
কাতারসমূহ সোজা করে নাও আর মিলে দাঁড়াও। কেননা, আমি আমার পিছনের দিক থেকেও তোমাদের দেখতে পাই।
৬৮৭। হাদীসঃ হযরত
আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এ
ব্যক্তি শহীদ যে পানিতে ডুবে মারা যায়, পেটের পীড়ায় মারা যায়,
প্লেগ মহামারীতে মারা যায়, কোন কিছুর নীচে চাপা
পড়ে মারা যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, মানুষ যদি যোহরের ফযীলত সম্পর্কে জানত তা হলে
নিশ্চয়ই তারা আগে আগে যোহরের নামাযে শরীক হওয়ার চেষ্টা করত। অনুরুপ এশা
এবং ফজরের নামাযের ফযীলত সম্পর্কে মানুস যদি অবগত হত, তা
হলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উক্ত নামাযদ্বয়ে শরীক হত। তদ্রুপ নামাযের প্রথম কাতারের ফযীলত সম্পর্কে মানুষ যদি জানত, তা
হলে তারা প্রথম কাতারের জন্য অবশ্যই লটারির ব্যবস্থা করত।
৬৮৮। হাদীসঃ
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অনুসরণ করার জন্যই ইমাম নির্ধারণ কর হয়। কাজেই
তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করবে না। যখন রুকু করেন তখন তোমরাও রুকু করবে। তিনি যখন ...... বলেন, তখন তোমরা .... বলবে।
তিনি যখন
সিজদা করবে তখন তোমরাও সিজদা করবে। তিনি যখন বসে নামায আদায় করেন, তখন তোমরাও সবাই বসে নামায আদায় করবে। আর তোমরা নামাযে কাতার
সোজা করে নিবে, কেননা,
কাতার সোজা করা নামাযের সৌন্দর্যের অন্তর্ভূক্ত।
৬৮৯। হাদীসঃ
হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা তোমাদের
কাতারগুলো সোজা করে নিবে, কেননা, কাতার সোজা করা নামাযের সৌন্দর্যের অন্তর্ভূক্ত।
৬৯০। হাদীসঃ
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার তিনি
(আনাস) মদীনায় আসলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগের তুলনায় আপনি আমাদের সময়ের অপছন্দনীয় কী দেখতে
পাচ্ছেন? তিনি বললেন, অন্য কোন কাজ তেমন অপছন্দনীয় মনে হচ্ছে না। তবে তোমরা (নামাযে)
কাতার ঠিকমত সোজা কর না। উকবাহ ইবনে উবায়েদ বুশাইর ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণনা করেছেন
যে, এ জিনিসটি নিয়েই আনাস (রাঃ) মদীনায় আগমন
করেছিলেন।
৬৯১। হাদীসঃ
হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা তোমাদের কাতার সোজা করে নাও। কেননা, আমি আমার পিছনের দিকে থেকেও তোমাদের দেখতে পাই। (আনাস রাঃ বলেন)
আমাদের প্রত্যেকেই তার পাশ্ববর্তী ব্যক্তির কাধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলাতাম।
৬৯২। হাদীসঃ
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একরাতে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সঙ্গে নামায আদায় করতে গিয়ে তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথার পিছনের দিকে ধরে
তাঁর ডানপাশে নিয়ে এলেন। তারপর নামায আদায় করে শুয়ে পড়লেন। পরে তাঁর মুআযযিন এলো। তিনি
উঠে নামায আদায় করলেন, কিন্তু (নতুনভাবে)
অযু করেননি।
মহিলাগণ একক
কাতারে দাঁড়বে
৬৯৩। হাদীসঃ
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, আমি এবং এক
এতীম (যমীরা বিন আবু যমীরা) আমাদের ঘরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
পিছনে নামায আদায় করেছি। আর আমার মা উম্মে সোলায়েম (রাঃ) আমাদের পেছনের কাতারে একা
দাঁড়িয়েছেন।
হযরত হাসান
বসরী (রঃ) বলেন, ইমাম ও মোক্তাদীর মাঝখানে কোন নদীর ব্যবধান
থাকলেও নামায পড়তে বাধা নেই।
৬৯৪। হাদীসঃ
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত, তিনি বলেন, একরাতে আমি নামায আদায়ের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত বা বাহু তাঁর ডানপাশে দাঁড় করালেন এবং
তিনি তাঁর হাতের ইশারায় বললেন, আমার পিছনের
দিক দিয়ে।
৬৯৫। হাদীসঃ
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে তাঁর হুজরা মোবারকে নামায আদায় করতেন। আর হুজরার
দেয়াল ছিল খুব বেঁটে। নামায আদায়কালে সাহাবাগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
দেখতে পেতেন। তা্ কিছু সংখ্যক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
একতেদা করতঃ নামায আদায় করেন। ভোর হওয়ার পর সাহাবাগণ এ ব্যাপারে আলাপ করেন। দ্বিতীয়
রাত্রেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায আদায় করেন। এ রাত্রে অনেক
সাহাবী তাঁর একতেদা করতঃ নামায আদায় করেন। তাঁরা দু’রাত্র বা তিন রাত্র পর্যন্ত এরুপ করেন। এ ঘটনার পর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৃতীয় রাতে বসে বসে ইবাদত করেন। সাহাবাগণ
দেখতে পেলেন না। ভোর হওয়ার পর তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
কাছে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি ইরশাদ করলেন, আমি ভয় করছি,
রাত্রি বেলার নামায তোমাদের উপর ফরয হয়ে যায় কি না? তাই আমি বসে বসে ইবাদত করছি।
৬৯৬। হাদীসঃ
হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি চাটাই
ছিল। তিনি তা দিনের বেলায় বিছিয়ে রাখতেন এবং রাতের বেলায় তা দিয়ে কামরা বানিয়ে নিতেন।
সাহাবীগণ তাঁর পিছনে কাতার বন্দী হয়ে দাঁড়ান এবং তাঁর পিছনে নামায আদায় করেন।
৬৯৭। হাদীসঃ
হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত (রাঃ) বলেন এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মসজিদে একটি হুজরার ব্যবস্থা করেন। বর্ণনাকারী বলেন,
আমার জানামতে রমযান মাসে একটি চাটাই দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মসজিদে নববীতে একটি হুজরার ব্যবস্থা করেন (যথায় তিনি ই'তেকাফ অবস্থায় ইবাদত করতেন)। উক্ত হুজরায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে
নামায আদায় করতেন। কিছু সংখ্যক সাহাবী রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নামায আদায় করতে দেখে তাঁরাও তাঁর একতেদা করতঃ
নামায আদায় করেন। তিনি যখন সাহাবাদের এ অবস্থা জানতে পারলেন, তখন বসে বসে ইবাদত করতে আরম্ভ করনে। অতঃপর দিবাভাগে হুযুর সাল্লাল্লা-হু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে সাহাবাগণ! তোমাদের ক্রিয়াকলাপ যা আমি দেখছি, সব কিছুই জানতে পেরেছি। তাই হে সাহাবাগণ! তোমাদের জন্য আদেশ
হল, তোমরা ঘরেই নফল নামাযসমূহ আদায় কর। যেহেতু
কোন ব্যক্তির উত্তম নামায হল ফরয ছাড়া ঘরে আদায়কৃত নফলসমূহ।
৬৯৮। হাদীসঃ
হযরত আনাস ইবনে মালিক আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,
একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়ায় চড়েন। ফলে তাঁর ডান পাঁজরে
আচঁড় লাগে। আনাস (রাঃ) বলেন, এ সময় কোন
এক নামায আমাদের নিয়ে তিনি বসে আদায় করেন। আমরাও তাঁর পিছনে বসে নামায আদায় করি। সালাম
ফিরানোর পর তিনি বললেন, ইমাম নির্ধারণ
করা হয় তাঁকে অনুসরণ করার জন্যই। তাই তিনি যখন দাঁড়িয়ে নামায আদায় করেন তখন তোমরাও
দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে। আর তিনি যখন রুকু করেন তখন তোমরাও রুকু করবে। তিনি যখন সিজদা
করেন তখন তোমারও সিজদা করবে। তিনি যখনঃ ............ বলেন, তখন তোমরা ......... বলবে।
৬৯৯। হাদীসঃ
হযরত আনাস ইবনে মালিক আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে আহত হন। তাই তিনি আমাদের নিয়ে বসে নামায আদায় করেন। আমরাও তাঁর
সঙ্গে বসে নামায আদায় করি। তারপর তিনি ফিরে বললেন,
ইমাম অনুসরণের জন্যই বা তিনি বলেছিলেন, ইমাম নির্ধারণ
করা হয় তাঁর অনুসরণের জন্য। তাই যখন তিনি তাকবীর বলেন, তখন তোমারও তাকবীর বলবে,
যখন রুকু করেন তখন তোমরাও রুকু করবে। যখন তিনি উঠেন তখন তোমরাও উঠবে। তিনি যখনঃ
.... বলেন তখন তোমরাও .... বলবে এবং তিনি যখন সিজদা করেন তখন তোমরাও সিজাদ করবে।
৭০০। হাদীসঃ
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
ইমাম নির্ধারণ করা হয়েছে কেবল তাঁর একতেদা করার জন্যই। তাই নামায শুরু করার সময়
ইমাম যখন তাকবীর বলবে, তোমরাও তার
সাথে তাকবীর বলবে। আর ইমাম যখন রুকু করবে, তোমারও তার
সাথে রুকু করবে। আর ইমাম যখন .... (সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা) বলবে, তখন তোমরা .... বলবে (রাব্বানা লাকাল হামদু)। আর ইমাম যখন
সেজদা করবে তোমরাও তার সাথে সেজদা করবে। আর ইমাম যখন বসে বসে নামায আদায় করবে তোমরাও
বসে বসে নামায আদায় করবে।
নামায আরম্ভ
করার সময় 'তাকবীর' বলা ওয়াজিব
৭০১। হাদীসঃ
হযরত সালিম ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায শুরু
করতেন, তখন উভয় হাত তাঁর কাধ বরাবর উঠাতেন। আর
রুকুতে যাওয়ার জন্য তাকবীর বলতেন এবং যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখনও অনুরুপভাবে দু'হাত উঠাতেন ..... ও ..... বলতেন। কিন্তু সিজদার সময় এরুপ করতেন
না।
৭০২। হাদীসঃ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায আরম্ভ করতেন তখন স্বীয় হাত মোবারকদ্বয় কাঁধ
বরাবর উপরের দিকে উঠাতেন, অর্থাৎ
.... করতেন। প্রথম আর যখন রুকুর জন্য তাকবীর বলতেন এবং রুকু থেকে মাথা উঠাতেন, তখনো উভয় হাত মোবারক কাঁধ বরাবর উপরের দিকে উত্তোলন করতেন। তিনি
রুকু থেকে মাথা উঠাবার সময় এরুপ করতে এবং "সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা, বলতেন কিন্তু সিজদায় তিনি এরুপ করতেন না।
৭০৩। হাদীসঃ
হযরত আবু কিলাবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি মালিক
ইবনে হুওয়ায়রিস (রাঃ)-কে দেখেছেন, তিনি যখন
নামায আদায় করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং তাঁর দু'হাত উঠাতেন।
আর যখন রুকু করার ইচ্ছা করতে তখনও তাঁর উভয় হাত উঠাতেন, আবার যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখনও তাঁর উভয় হাত উঠাতেন এবং
তিনি বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরুপ করেছেন।
৭০৪। হাদীসঃ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাকবীর দিয়ে নামায শুরু করতে দেখেছি, তিনি যখন তাকবীর বলতেন তখন তাঁর উভয় হাত উঠাতেন এবং কাঁধ বরাবর
করতেন। আর যখন রুকুর তাকবীর বলতেন তখনও এরুপ করতেন। আবার যখন ..... বলতেন, তখনও এরুপ করতেন এবং ... বলতেন। কিন্তু সিজদায় যেতে এরুপ করতেন
না। আর সিজদার থেকে মাথা উঠাবার সময়ও এরুপ করতেন না।
৭০৫। হাদীসঃ
হযরত নাফি (রঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনে উমর
(রঃ) যখন নামায শুরু করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং দু'হাত উঠাতেন
আর যখন রুকু করতেন তখনও দু'হাত উঠাতেন।
এরপর যখন, বলতেন তখনও দু'হাত উঠাতেন এবং দু'রাকাআত আদায়ের
পর যখন দাঁড়াতেন তখনও দু'হাত উঠাতেন।
ইবনে ওমর এ কথাগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সম্পৃক্ত
করেছেন। অর্থাৎ তিনি এ কথাগুলো বলেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
৭০৬। হাদীস: হযরত সাহল ইবনে সা'দ (রাঃ) বলেন, লোকদেরকে আদেশ করা হত, প্রত্যেকে
যেন নামাযে তার ডান হাত বাম হাতের কবজির উপর রাখে।
৭০৭। হাদীসঃ
হযরত হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা কি
এস্থানে আমার সম্মুখপানে দেখতে পাচ্ছ? (অর্থাৎ সম্মুখস্থ
সব কিছুই তোমরা দেখতে পাচ্ছ)। আল্লাহর শপথ! তোমাদের রুকু, তোমাদের খোদভীতি
(এমনিভাবে) আমার কাছে কোন কিছুই গোপন নেই। আমি তোমাদেরকে আমার পেছন থেকেও নিশ্চিত সম্মুখের
অনুরুপ দেখতে পাই। অর্থাৎ কিছুই আমার কাছে গোপন নয়।
৭০৮। হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা রুকু ও সিজদাগুলো যথাযথভাবে আদায় করবে। আল্লাহর শপথ! আমি
আমার পিছনে থেকে বা রাবী বলেন, আমার পিঠের
পিছনে থেকে তোমাদের দেখতে পাই, যখন তোমরা
রুকু ও সিজাদ কর।
তাকবীর বলার
পর কি পড়তে হবে?
৭০৯। হাদীস)
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু বকর এবং ওমর (রাঃ) সবাই .... (আলহামদু লিল্লাহ
রাব্বিল আ'লামীন) দ্বারা নামায আরম্ভ করতেন।
৭১০। হাদীসঃ
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে তাকবীরে তাহরীমা এবং কেরাআত পাঠের মধ্যখানে
সামান্য কিছুক্ষণ চুপ থাকতেন। এক সময় আমি তাঁকে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার মাতা
পিতা আপনার প্রতি কোরবান হোক! তাকবীরে তাহরীমা এবং কেরাআত পাঠের মধ্যখানে কিছুক্ষণ
নিশ্চুপ থাকার সময় আপনি কি পড়েন? উত্তরে তিনি
ইরশাদ করেন, আমি তখন নিম্নোক্ত দোআ পাঠ করি-
.............................................................
অর্থঃ হে
আল্লাহ! আমার মধ্যে এবং আমার গুনাহের মধ্যে এমনভাবে দূরত্ব কর, যেমন মাশরেক ও মাগরেবের মধ্যকার দূরত্ব। হে আল্লাহ! সাদা কাপড়
যেমনিভাবে ময়লা থেকে পবিত্র হয়, আমাকেও তেমনিভাবে
গুনাহ থেকে পবিত্র কর। হে আল্লহ! আমার গুনাহসমূহ পানি, বরফ এবং ঠান্ডা দ্বারা ধৌত করে দাও।
৭১১। হাদীসঃ
হযরত আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সালাতুল কুসূফ (সূর্য গ্রহণের
নামায) আদায় করলেন। তিনি নামাযে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর রুকুতে গেলেন এবং
দীর্ঘক্ষণ থাকলেন। তারপর দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে থাকলেন। তারপর আবার রুকুতে
গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ থাকলেন। তারপর দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর আবার
রুকুতে গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ থাকলেন। তারপর দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে থাকলেন। তারপর আবার
রুকুতে গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ রুকুতে থাকলেন। এরপর উঠলেন, পরে সিজদায় গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ রইলেন। আবার সিজদায় গেলেন এবং
দীর্ঘক্ষণ সিজদায় থাকলেন। এরপর আবার দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন।আবার রুকুতে গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ
রুকুতে থাকলেন। এরপর রুকু থেকে উঠে সিজদায় গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ সিজদায় থাকলেন। তারপর
উঠে সিজদায় গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ সিজদায় থাকলেন। এরপর নামায শেষ করে ফিরে দাঁড়িয়ে বললেনঃ
জান্নাত আমার খুবই নিকটে এসে গিয়েছিল এমনকি আমি যদি চেষ্টা করতাম তা হলে জান্নাতের
একগুচ্ছ আঙ্গুর তোমাদের এনে দিতে পারতাম। আর জাহান্নামও আমার একবারে নিকটবর্তী হয়ে
গিয়েছিল। এমনকি আমি বলে উঠলাম, ইয়া রব! আমিও
কি তাদের সাথে? আমি একজন স্ত্রী লোককে পেলাম। আবু হুরায়রা
(রাঃ) বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছিলেন একটি বিড়াল
তাকে খামচাচ্ছে। আমি জিজ্ঞাস করলাম, এ স্ত্রী
লোকটির এমন অবস্থা কেন? ফিরিশাগণ
জবাব দিলেন, সে একটি বিড়ালকে আটকিয়ে রেখেছিল, ফলে বিড়ালটি অনাহারে মারা যায়। উক্ত স্ত্রী লোকটি তাকে খেতেও
দেয়নি এবং তাকে ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে আহার
করতে পারে। নাফি (রঃ) বলেন, আমার মনে
হয়, (ইবনে আবু মুলায়কা (রাঃ) বর্ণনা করেছিলেন, যাতে সে যমীনের পোঁকা মাকড় খেতে পারে।
৭১২। হাদীসঃ
হযরত আবু মা'মার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা খাব্বাব
(রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি জোহর ও আসরের নামাযে কিরাআত পড়তেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা
জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার কি করে বুঝতে পারতেন? তিনি বললেন, তাঁর দাঁড়ির
নড়াচড়া দেখে।
৭১৩। হাদীসঃ
হযরত বারা ইবনে আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, (তিনি মিথ্যাবাদী
ছিলেন না। তিনি বলেন, সাহাবীগণ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে যখন নামায আদায় করতেন, তখন রুকু থেকে মাথা উঠাবার পর কিছুক্ষণ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন-যতক্ষণ
দেখতে পেতেন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদা করছেন।
৭১৪। হাদীসঃ
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যমানায় এক সময় সূর্যগ্রহণ দেখা দিয়েছিল। তাই তিনি
সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে কসুফ নামায আদায় করেন। নামায শেষে সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা আপনাকে
এ স্থানে নামাযে দেখতে পেলাম, মনে হয় যেন
আপনি কিছু হাত দ্বারা ধরছিলেন, তারপর পেছনে
সরে গেছেন (এরুপ করার কারণ কি?) রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এ মুহূর্তে
বেহেশত দেখতে পেয়েছিলাম। আমি বেহেশত থেকে একটি খেজুর ছড়া হাতে নিয়েছিলাম। যদি আমি তা
রেখে দিতাম, তা হলে তোমরা কেয়ামত পর্যন্ত তা খেতে
পারতে।
৭১৫। হাদীসঃ
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, এক সময় রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরককে নিয়ে নামায আদায় করেন। নামায শেষে তিনি
মিম্বরে আরোহণ করেন। তারপর হাত দ্বারা মসজিদের কেবলার দিকে ইশারা করেন। তারপর বললেন, আমি যখন তোমাদের নিয়ে নামায আদায় করছিলাম, তখন এ দেয়ালের কেবলার মধ্যে বেহেশত ও দোযখ ফটোস্বরুপ দেখতে পেলাম।
আজকের মত এরুপ ভাল এবং মন্দ আমি আর কখনো দেখতে পাইনি। তিনি এ বাক্য তিন বার বলেন।
৭১৬। হাদীসঃ
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
লোকদের কি হয়েছে, তারা নামাযে
থাকা অবস্থায় আসমানের দিকে দৃষ্টিপাত করে। এ বাক্য তিনি খুব কঠিনভাবে বলতে লাগলেন।
তারপর বললেন, তোমাদেরকে এরুপ করতে নিষেধ করা হল-অন্যথায়
তোমাদের দৃষ্টি রহিত করে দেয়া হবে। (নামাযের মধ্যে কোন দিকে তাকানো উচিত নয়)।
৭১৭। হাদীসঃ
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি একদা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নামাযরত অবস্থায় এদিক ওদিক নজর করা
প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করি। উত্তরে তিনি ইরশাদ করেন,
এটা শয়তানের কাজ। নামাযের মধ্যে শয়তান মানুষের দৃষ্টি এদিক ওদিক ঘুরিয়ে থাকে।
৭১৮। হাদীসঃ
হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি নকশা করা চাদর পরে নামায আদায় করলেন। নামাযের
পরে তিনি বললেন, এ চাদরের কারুকার্য আমার মনকে নিবিষ্ট
করে রেখেছিল। এটি আবু জাহমের কাছে নিয়ে যাও এবং এর পরিবর্তে একটি "আম্বজানিয়্যাহ"
নিয়ে এসো।
৭১৯। হাদীসঃ
হযরত ইবে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সামনে দাঁড়িয়ে
নামায আদায় করছিলেন, এমতাবস্থায়
মসজিদে কিবলার দিকে থুথু দেখতে পেয়ে তা পরিস্কার করে ফেললেন। তারপর তিনি নামায শেষ
করে বললেন, তোমাদের যখন নামাযে থাকে, তখন আল্লাহ তার সামনে থাকেন। কাজেই নামাযে থাকা অবস্থায় কেউ সামনের দিকে থুথু ফেলবে না।
৭২০। হাদীসঃ
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুসলমাণগণ ফযরের নামাযে রত এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা (রাঃ)-এর হুজরার পর্দা উঠালে তাঁরা চমকে উঠলেন। তিনি তাঁদের
দিকে তাকিয়ে দেখলেন, তাঁরা কাতারবদ্ধ
হয়ে আছেন, তা দেখে তিনি মুচকী হাসলেন। আবু বকর
(রাঃ) তাঁর ইমামতির স্থান ছেড়ে দিয়ে কাতারে শামিল হওয়ার জন্য পিছিয়ে আসতে চাইলেন। তিনি
মনে করেছিলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বের হতে চান। মুসলিমগণও নামায ছেড়ে দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। তিনি ইশারায় তাঁদের বললেন, তোমরা তোমাদের নামায পূরো করো। তারপর তিনি পর্দা ফেলে দিলেন।
সে দিনেরই শেষভাগে তাঁর ইন্তেকাল হয়।
৭২১। হাদীসঃ
হযরত জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) বর্ণিত, তিনি বলেন, কূফাবাসীরা সা'দ (রাঃ)-এর
বিরুদ্ধে উমর (রাঃ)-এর নিকট অভিযোগ করলে তিনি তাঁকে দায়িত্ব অব্যাহতি দেন এবং আম্মার
(রাঃ)-কে তাদের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। কূফার লোকেরা সা'দ (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে গিয়ে এ-ও বলে যে, তিনি ভালরুপে নামায আদায় করতে পারেন না। উমর (রাঃ)-তাঁকে ডেকে
পাঠালেন এবং বললেন, হে আবু ইসহাক!
তারা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে, আপনি নাকি
ভালরুপে নামায আদায় করতে পারেন না। সা'দ (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
নামাযের অনুরুপই নামায আদায় করে থাকি। তাতে কোন ত্রুটি করি না। আমি ইশার নামায আদায়
করতে প্রথম দু'রাকাআতে একটু দীর্ঘ ও শেষের দু'রাকাআতে সংক্ষেপ করতাম। উমর (রাঃ) বললেন, হে আবু ইসহাক! আপনার সম্পর্কে আমার এ-ই ধারণা। তারপর উমর (রাঃ)
কূফার অধিবাসীদের জন্য এক বা একাধিক ব্যক্তিকে সা'দ (রাঃ)-এর
সঙ্গে কূফায় পাঠান। সে ব্যাক্তি প্রতিটি মসজিদে গিয়ে সা'দ (রাঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল এবং তাঁরা সকলেই তাঁর ভূয়সী প্রশংসা
করলেন। অবশেষে সে ব্যক্তি বনু আবাস গোত্রের মসজিদে উপস্থিত হয়। এখানে উসামা ইবনে কাতাদাহ
নামে এক ব্যক্তি যাকে সাদাহ বলে ডাকা হত-দাঁড়িয়ে বলল, যেহেতু তুমি আল্লাহর নামে শপথ দিয়ে জিজ্ঞেস করেছ, সাদ (রাঃ) কখনো সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে যান না, গনীমতের মাল সমভাবে বন্টন করেন না এবং বিচারে ইনসাফ করেন না।
তখন সা'দ (রাঃ) বললেন, মনে রেখো, আল্লাহর কসম!
আমি তিনটি দু'আ করছিঃ ইয়া আল্লাহ! যদি তোমার এ বান্দা
মিথ্যাবাদী হয়, লোক দেখানো এবং আত্মপ্রচারের জন্য দাঁড়িয়ে
থাকে, তাহলে-১. তার হায়াত বাড়িয়ে দিন, ২. তার অভাব বাড়িয়ে দিন এবং ৩. তাকে ফিতনার সম্মুখীন করুন। পরবর্তীকালে
লোকটিকে (তার অবস্থা সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলত, আমি বয়সে বৃদ্ধ, ফিতনায় লিপ্ত।
সা'দ (রাঃ)-এর দু'আ আমার উপর লেগে আছে। বর্ণনাকারী আবদুল মালিক (রঃ) বলেন, পরে আমি সে লোকটিকে দেখেছি,
অতি বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তার উভয় ভ্রু চোখের উপর ঝুলে পড়েছে এবং সে পথে মেয়েদের
উত্যক্ত করত এবং তাদের চিমটি কাটতো।
নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করা
৭২২। হাদীসঃ
হযরত ওবাদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
যে ব্যক্তি নামাযে সূরা ফাতেহা পাঠ করবে না,
তার নামায পূর্ণ হবে না।
৭২৩। হাদীসঃ
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে তাশরীফ রাখলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি
মসজিদে প্রবেশ করে নামায আদায় করে। নামায শেষে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে সালাম করলে তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, তুমি পুনরায় নামায আদায় কর,
যেহেতু তুমি যে নামায পড়েছ তা না পড়ার ন্যায়। এ কথা শুনে লোকটি ফিরে গিয়ে পূর্ববৎ
নামায আদায় করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে আবার সালাম
করল। এবারও তিনি তাকে বললেন, তুমি ফিরে
যাও এবং পুনরায় নামায আদায় কর। যেহেতু তুমি নামায পড়নি। তিন বার তিনি তাকে একথা বলেন।
অতঃপর সে আরজ করল, সে আল্লাহর
শপথ যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন। আমি তো এর চেয়ে উত্তম নামায জানি না, তাই আমাকে তা তা'লীম দিন।
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি যখন নামাযে দাঁড়াবে তখন তাকবীর বলবে। তারপর তোমার সম্ভব
অনুসারে কোরআন মজীদ থেকে তেলাওয়াত আদায় করবে। কেরাআত শেষে শান্ত শিষ্টভাবে রুকু থেকে
মুথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর শান্তশিষ্টভাবে সেজদা করবে। অতঃপর শান্ত শিষ্টভাবে
সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসবে। এমনিভাবে পুরো নামাযে সকল ক্রিয়া সম্পাদন করবে।
৭২৪। হযরত
জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, সা'দ (রাঃ) বলেন, আমি তাদেরকে
নিয়ে বিকালের দু'নামায (জোহর
ও আসর) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামাযের ন্যায় নামায আদায় করতাম।
এতে কোন ত্রুটি করতাম না। প্রথম দু'রাকাআতে কিরাত
দীর্ঘায়িত এবং শেষ দু'রাকাআতে তা
সংক্ষিপ্ত করতাম। উমর (রাঃ) বলেন, তোমার সম্পর্কে
এরুপই ধারণা।
৭২৫। হাদীসঃ
হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ননা করেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোহরের নামাযে প্রথম দু'রাকআতে সুরা ফাতেহার পর আরো দুটি সূরা মিলিয়ে পড়তেন। প্রথম রাকআতে
একটু লম্বা আর দ্বিতীয় রাকআতে তার চেয়ে ছোট কেরাআত পাঠ করতেন। কোন কোন সময় আয়াত পাঠ
শুনা যেত। আর আসরের নামাযে সূরা ফাতেহার পর দু'টি সূরা মিলিয়ে
পাঠ করতেন। প্রথম রাকআতের কেরাআত আর দ্বিতীয় রাকআতে তার চাইতে ছোট কেরাআত পাঠ করতেন।
আসরের নামাযে কেরাআত
৭২৬। হাদীসঃ
হযরত আবু মা'মার (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা খাব্বাব
(রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুহর ও আসরের নামাযে কিরাআত পড়তেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা
প্রশ্ন করলাম, আপনার কি করে তা বুঝতেন? তিনি বললেন, তাঁর দাঁড়ি
(মুবারকের) নড়াচড়ায়।
৭২৭। হাদীসঃ
হযরত আবু মামার (রাঃ) বলেন, আমি খাব্বাব
বিন আরত (রাঃ)-কে বললাম, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যোহর ও আসরের নামাযে কেরাআত পাঠ করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ! পাঠ
করতেন। আমি তাঁকে আবার বললাম, আপনারা কিভাবে
বুঝতে পারতেন, তিনি কেরাআত পাঠ করেন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দাড়ি মোবারকের
নড়াচড়া দ্বারা তা বুঝতে পারতাম।
৭২৮। হাদীসঃ
হযরত আবু কাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর ও আসরের প্রথম
রাকাআতে সূরা ফাতিহার সাথে একটি সূরা পড়তেন। আর কখনো কোন আয়াত শুনিয়ে পড়তেন।
৭২৯। হাদীসঃ
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উম্মুল ফাযল (রাঃ) তাঁকে সূরাটি তিলাওয়াত করতে শুনে বললেন, বেটা। তুমি এ সুরা তিলাওয়াত করে আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মাগরিবে এ সূরাটি পড়তে শেষবারের মত শুনেছিলাম।
৭৩০। হাদীসঃ
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত মারওয়ান
ইবনে হাকাম (রঃ) থেকে বণিত, তিনি বলেন, একদা যায়িদ ইবনে সাবিত (রাঃ) আমাকে বললেন, কি ব্যাপার, মাগরিবের
নামাযে তুমি যে কেবল ছোট ছোট সূরা তিলাওয়াত কর?
অথচ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দীর্ঘ সূরার মধ্যে দীর্ঘতমটি
থেকে পাঠ করতে শুনেছি।
৭৩১। হাদীসঃ
হযরত মুহাম্মদ ইবনে জোবায়ের ইবনে মুতয়েম (রাঃ) বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মাগরিবের নামাযে সূরা আততুর
(অথবা তার কিচু অংশ) পাঠ করতে শুনেছি।
৭৩২। হাদীসঃ
হযরত আবু রাফি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর সঙ্গে ইশার নামায আদায় করলাম।
সেদিন তিনি .... সূরাটি তিলাওয়াত করে সিজদা করলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি আবুল কাসিম সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে এ
সিজদা করেছি, তাই তার মিলিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ
সূরায় সিজদা করব।
৭৩৩। হাদীসঃ
হযরত বারা বিন আযেব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সময় সফরে ছিলেন। আমি তাঁকে এশার নামাযের দু'রাকআতের কোন এক রাকআতে ..... (ওয়াততীনি ওয়াযযাইতুন) সূরা পাঠ
করতে শুনেছি।
৭৩৪। হাদীসঃ
হযরত আবু রাফি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর সঙ্গে ইশার নামায আদায় করলাম।
সেদিন তিনি .... সূরাটি তিলাওয়াত করে সিজদা করলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি আবুল কাসিম সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে এ
সিজদা করেছি, তাই তাঁর মিলিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ
সূরায় সিজদা করব।
৭৩৫। হাদীসঃ
হযরত বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইশার নামাযে
...... পড়তে শুনেছি। আমি কাউকে তাঁর চাইতে সুন্দর কণ্ঠ অথবা কিরাআত শুনিনি।
৭৩৬। হাদীসঃ
হযরত জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইমর (রাঃ) সা'দ (রাঃ)-কে
বললেন, আপনার বিরুদ্ধে তারা (কুফাবাসীরা) সর্ব
বিষয়ে অভিযোগ করেছে, এমনকি নামায
সম্পর্কেও। সা'দ (রাঃ) বললেন, আমি প্রথম দু'রাকাআতে কিরাআত
দীর্ঘ করে থাকি এবং শেষের দু'রাকাআতে তা
সংক্ষেপে করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে যেরুপ নামায আদায়
করেছি, অনুরুপই নামায আদায়ের ব্যাপারে আমি ত্রুটি
করিনি। উমর (রাঃ) বললেন, আপনি ঠিকই
বলেছেন, আপনার ব্যাপারে ধারণা তো এরুপই কিংবা
(তিনি বলেছিলেন) আপনার সম্পর্কে আমার এরুপই ধারণা।
৭৩৭। হাদীসঃ
হযরত সাইয়ার ইবনে সালাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও আমার পিতা আবু বারযা আসরামী (রাঃ)-নিকট উপস্থিত হয়ে নামাযসমূহের
সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের নামায সুর্য ঢলে গেলেই আদায় করতেন। আর আসর
(এমন সময় যে, নামাযের শেষে) কোন ব্যক্তি সূর্য সজীব
থাকতে থাকতেই মদীনার প্রান্তসীমায় ফিরে আসতে পারত। মাগরিব সম্পর্কে তিনি কি বলেছিলেন, তা আমি ভুলে গেছি। আর তিনি ইশা রাতের তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্ব
করতে কোন দ্বিধা করতেন না। এবং ইশার আগে ঘুমানো ও পরে কথাবার্তা বলা তিনি পছন্দ করতেন
না। আর তিনি ফজর আদায় করতেন এমন সময় যে, নামায শেষে
ফিরে যেতে লোকেরা তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিকে চিনতে পারত। এর দু'রাকাআতে অথবা রাবী বলেছেন,
এক রাকাআতে তিনি ষাট থেকে একশ আয়াত পড়তেন।
ফজরের নামাযের কেরাআত
৭৩৮। হাদীসঃ
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলতেন, প্রত্যেক
নামাযে কেরাআত পাঠ করা হয়, সে সকল নামাযে
আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কেরাআত পাঠ করতে শুনেছি, আমরা তোমাদেরকে তা শুনিয়েছে। আর যে সকল নামাযে তিনি আমাদের থেকে
গোপন করে কেরাআত পাঠ করেছেন, আমরাও
সে সকল নামাযে তোমাদের থেকে তা গোপন করে পাঠ করছি। যদি তোমরা নামাযে সূরা ফাতেহার পর
কোন সূরা মিলিয়ে পাঠ না কর অথবা না বাড়াও,
তাতে নামায আদায় হয়ে যাবে। আর যদি কোন সূরা বাড়িয়ে পাঠ কর তবে তা উত্তম হবে।
৭৩৯। হযরত
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন সাহাবীকে
সঙ্গে নিয়ে উকায বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। আর দুষ্ট জিনদের উর্ধলোকের সংবাদ সংগ্রহের
পথে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয় এবং তাদের দিকে অগ্নিপিন্ড নিক্ষিপ্ত হয়। কাজেই শয়তানরা
তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসে। তারা জিজ্ঞাসা করল, তোমাদের কি হয়েছে? তারা বলল, আমাদের এবং আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে
এবং আমাদের দিকে অগ্নিপিন্ড ছুড়ে মারা হয়েছে। তখন তারা বলল, নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ একটা কিছু ঘটেছে বলেই তোমাদের এবং আকাশের
সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই, পৃথিবীর পূর্ব এবং পশ্চিম অঞ্চল পর্যন্ত বিচরণ করে দেখ, কী কারণে তোমাদের ও আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা
সৃষ্টি হয়েছে? তাই তাদের যে দলটি তিহামার দিকে গিয়েছিল, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে অগ্রসর
হল। তিনি তখন উকায বাজারের পথে নাখলা নামক স্থানে সাহাবীগণকে নিয়ে ফজরের নামায আদায়
করছিলেন। তারা যখন কুরআন শুনতে পেল, তখন সেদিকে
মনোনিবেশ করল। তারপর তারা বলে উঠল, আল্লাহর শপথ!
এটি তোমাদের ও আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এমন সময় যখন
তারা সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসল এবং বলল, হে আমাদের
সম্প্রদায়! আমরা এক বিষ্ময়কর কুরআন শুনেছি, যা সঠিক পথ
নির্দেশ করে। ফলে আমরা এতে ঈমান এনেছি এবং কখনো আমরা আমাদের প্রতিপালকের সঙ্গে কাউকে
শরীক স্থির করব না। এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি............. সূরা নাযিল করেন। মূলত তাঁর নিকট জিনদের বক্তব্যই
ওহীরুপে নাযিল করা হয়েছে।
৭৪০। হাদীসঃ
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
যে সকল নামাযে প্রকাশ্যে কেরাআত পাঠ করতে আদিষ্ট হয়েছেন, সে সকল নামাযে প্রকাশ্যে,
পক্ষান্তরে যে সকল নামাযে গোপনে পাঠ করতে আদিষ্ট হয়েছেন সে সকল নামাযে গোপনে পাঠ
করেছেন। তিনি আরো বলেন, তোমাদের প্রভু
ভূল করার নয়। আর তোমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
অনুসরণের মধ্যে উত্তম আদর্শ।
৭৪১। হাদীসঃ
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আনসারদের
কোনো এক ব্যক্তি মসজিদে কোবাতে আনসারদের ইমামতি করতো। যেসব নামাযে উচ্চস্বরে কেরাত
পাঠ হয়, সেই নামাযে প্রথমে সূরায়ে "ইখলাস"
পড়তো এবং অন্য একটি সূরাহ পড়তো। আর সে এরুপ প্রত্যেক রাকআতেই করতো। তাই তার সাথীরা
তার সাথে আলোচনার পর বললো, আপনি তো এই
সূরাটি পড়েন। কিন্তু আমরা দেখি যে, আপনি এটাকে
যথেষ্ট মনে করেন না। এমনকি তার সাথে আরো একটি সূরা পড়েন। হয়তো আপনি এটা পড়েন। অথবা
এটা ছেড়ে অন্য একটা সূরা পড়েন। তিনি (ইমাম) বললেন,
আমি তা পরিত্যাগ করতে পারবো না। এভাবে ইমামতি করা তোমাদের পছন্দ হলে আমি করবো।
অন্যথায় আমি তোমাদের ইমামতি করা ছেড়ে দেবো। লোকেরা তাকে নিজেদের মধ্যে সর্ব উত্তম ব্যক্তি
বলে জানতো। সে ছাড়া তাদের অন্য কেউ ইমামতি করুক-এটাও তারা চায় না। পরে এক সময়ে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে আসলেন। তাই লোকেরা রাসূল সাল্লাল্লা-হু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করলো। তিনি লোকটিকে ডেকে বললেন, হে ব্যক্তি! তোমার সাথীরা তোমাকে যেভাবে ইমামতি করতে বলে সেভাবে
করতে তোমার কিসের বাঁধা? আর কি কারণেই
বা তুমি একটি নির্দিষ্ট সূরা প্রত্যেক রাকআতে পাঠ করো। তিনি (ইমাম) বললেন, আমি এই সূরাটিকে ভালবাসি। একথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লা-হু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ওর প্রতি
ভালবাসাই তোমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।
৭৪২। হাদীসঃ
হযরত আবু ওয়াইল (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর নিকট এসে বলল, গতরাতে আমি মুফাসসাল সূরাগুলো এক রাকাআতেই তিলাওয়াত করেছি। তিনি
বললেন, তাহলে নিশ্চয়ই কবিতার ন্যায় দ্রুত পড়েছ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরস্পর সমতূল্য যে সব সূরা মিলিয়ে পড়তেন, সেগুলো সম্পর্কে আমি জানি। এ বলে তিনি মুফাসসাল সূরাসমূহের বিশটি
সুরার কথা উল্লেখ করে বলেন, নবী করীম
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাকআতে এর দুটি করে সূরা পড়তেন।
৭৪৩। হাদীসঃ
হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের নামাযে প্রথম দু'রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে আরো দু'টি সূরা মিলিয়ে পাঠ করতেন। আর শেষ দু'রাকআতে কেবল সূরা ফাতেহাই পাঠ করতেন। কোন কোন সময় আমাদেরকে শুনিয়ে
শুনিয়ে পাঠ করতেন। আর তিনি দ্বিতীয় রাকআত অপেক্ষা প্রথম রাকআতে একটু লম্বা কেরআত পাঠ
করতেন, যা দ্বিতীয় রাকআতে করতেন না। তিনি আসর
এবং ফজরের নামাযে এমনি করতেন।
৭৪৪। হাদীসঃ
হযরত আবু মা'মার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা খাব্বাব
(রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুহর ও আসরের নামাযে কিরাআত পড়তেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা
জিজ্ঞাসা করলাম, কি করে বুঝলেন? তিনি বললেন, তাঁর দাঁড়ি
মুবারক নড়াচড়া দেখে।
৭৪৫। হাদীসঃ
হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোহর ও আসরের নামাযে প্রথম দু'রাকাআতে সূরা ফাতিহার সাথে আরেকটি সূরা পড়তেন। কখনো কোন কোন
আয়াত শুনিয়ে পড়তেন এবং তিনি প্রথম রাকাআতে কিরাআত দীর্ঘ করতেন।
৭৪৬। হাদীসঃ
হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোহরের নামাযের প্রথম রাকাআতে কিরাআত দীর্ঘ করতেন
এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সংক্ষিপ্ত করতেন এবং এরুপ করতেন ফযরের নামাযেও।
৭৪৭। হযরত
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নামাযে ইমাম
যখন আমীন বলেন, তখন তোমরাও আমীন বলো। কেননা যার আমীন
বলাটা ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যাবে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া
হবে।
৭৪৮। হাদীসঃ
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
নামাযে তোমাদের কেউ যখন আমীন বলে, তখন আসমানের
ফেরেশতাগণও তার সাথে আমীন বলেন। আর এ দু'য়ের একটি
যখন অপরটির সাথে মিলে যায় তখন তার অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।
৭৪৯। হাদীসঃ
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
নামাযে ইমাম যখন .........(গায়রি মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ দোয়াল্লীন) পাঠ করবে, তখন তোমরা সবাই আমীন বলবে। যেহেতু ফেরেশতাদের কথার সাথে যার
কথার সাদৃশ্য হবে, তার অতীতের
সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে(হানাফী মাযহাব মতে মোক্তাদীগণ চুপিসারে আমীন) বলবে।
৭৫০। হাদীসঃ
হযরত আবু বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এমন অবস্থায় পৌছলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন রুকুতে ছিলেন।
তখন কাতার পর্যন্ত পৌছার আগেই তিনি রুকুতে চলে যান। এঘটনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ব্যক্ত করা হলে, তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা তোমার আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে দিন। তবে এরুপ আর করবে
না।
৭৫১। হাদীসঃ
হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বসরায়
আলী (রাঃ)-এর সঙ্গে নামায আদায় করলেন। তারপর বললেন,
ইনি (আলী রাঃ) আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আদায়কৃত
নামাযের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আর তিনি উল্লেখ করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিবার (মাথা)
উঠাতে ও নামাতে তাকবীর বলতেন।
৭৫২। হাদীসঃ
হযরত আবু সালাম (রাঃ) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি তাদের সঙ্গে নামায আদায় করতেন এবং প্রতিবার উঠা বসার সময়
তাকবীর বলতেন। নামায শেষ করে তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে
আমার নামাযই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামাযের সাথে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ।
৭৫৩। হাদীসঃ
হযরত মুতাররিফ ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আমি এবং ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ)-এর পিছনে নামায আদায় করলাম।
তিনি যখন সিজদায় গেলেন তখন তাকবীর বললেন, সিজদা থেকে
যখন মাথা উঠালেন তখনও তাকবীর বললেন, আবার দু'রাকাআতের পর যখন দাঁড়ালেন তখনও তাকবীর বললেন। তিনি যখন নামায
শেষ করলেন তখন ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) আমার হাত ধরে বললেন। ইনি (আলী রাঃ) আমাকে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামায স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বা তিনি বলেছিলেন, আমাদের নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
নামাযের ন্যায় নামায আদায় করেছেন।
৭৫৪। হাদীসঃ
হযরত ইকরিমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মাকামে (ইবরাহীমের নিকট) এক ব্যক্তিকে দেখলাম যে, প্রতিবার উঠা ও ঝুঁকার সময় এবং দাঁড়ানো ও বসার সময় তাকবীর বলছেন।
আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে একথা জানালে তিনি বললেন,
তুমি মাতৃহীন হও, একি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামায নয়?
৭৫৫। হাদীসঃ
হযরত ইকরিমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মক্কা শরীফে এক বৃদ্ধের পিছনে নামায আদায় করলাম। তিনি বাইশবার
তাকবীর বললেন। আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে বললাম, লোকটি তো আহমক। তিনি বললেন,
তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক। এ যে আবুল কাসিম সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সুন্নাত।
সেজদা থেকে দণ্ডায়মান হওয়ার সময় তাকবীর বলা
৭৫৬। হাদীসঃ
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে দাঁড়াবার সময় , তারপর রুকু করার সময় তাকবীর বলতেন। রুকু থেকে পিঠ সোজা করে দাঁড়াবার
সময় ........(সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা) বলতেন। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়েয়ে বলতেন
............... (রাব্বানা লাকাল হামদু)। অতঃপর সেজদায় যাওয়ার সময় বলেন, সেজদা থেকে মাথা উঠাবার সময় তাকবীর বলতেন। পুনরায় সেজদায় যাওয়ার
সময় তাকবীর বলতেন। সেজদা থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াবার সময় তাকবীর বলতেন। এমনিভাবে সব নামাযের
মধ্যেই তিনি ইন্তেকালের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত তাকবীর বলতেন। এমনিভাবে দু'রাকআতের পর তাশাহহুদের বৈঠক থেকে উঠার সময়ও তাকবীর বলতেন (তাকবীর
দ্বারা ....... উদ্দেশ্য)।
৭৫৭। হাদীসঃ
হযরত আবু ইয়াফুর (রাঃ) মোসআব (রাঃ) থেকে বর্ণিত করেছেন, তিনি বলেন, আমি একদা
আমার পিতা হযরত সা'দ (রাঃ)-এর
পার্শ্বে নামায আদায় করলাম। আমি রুকু এবং তাশাহহুদের মধ্যে উভয় হাত মিলিয়ে রানের উপর
রাখলাম, আমার পিতা আমাকে তা থেকে নিষেধ করেন।
তিনি আমাকে বললেন, আমরাও এরুপ
করতাম। অতঃপর আমাদেরকে এ কাজ থেকে নিষেধ করা হয়েছে;
বরং আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে আমরা যেন রুকু এবং তাশাহহুদের মধ্যে আমাদের হাতদ্বয়
ঊরুর উপর রাখি।
সেজদা পূর্ণ না করলে তার হুকুম
৭৫৮। হাদীসঃ
হযরত যায়েদ ইবনে ওহাব (রাঃ) বর্ণনা করেন, হোযায়ফা
(রাঃ) এক সময় জনৈক ব্যক্তিকে নামায পড়তে দেখতে পেলেন, সে তার রুকু এবং সিজদাগুলো পূর্ণভাবে আদায় করছে না। সে নামায
শেষ করলে হযরত হোযায়ফা (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি তো নামায
পড়নি। বর্ণনাকারী আরো বলেন, আমার খেয়াল, তিনি তাকে আরো বলেছেন, তুমি যদি
মারা যাও তা হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নতের উপর তোমার
মৃত্যু হবে না।
৭৫৯। হাদীসঃ
হযরত বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নামাযে দাঁড়ানো ও বসা অবস্থা ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদা এবং সিজদা মধ্যবর্তী সময় এবং রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানো এগুলো
প্রায় সমপরিমাণ ছিল।
৭৬০। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একসময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে তাশরীফ আনলেন, তখন একব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে নামাযে আদায় করলো। তারপর সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম করল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জবাব দিয়ে বললেন, তুমি ফিরে গিয়ে নামায আদায় কর, কেন না তুমি নামায আদায় করনি। লোকটি আবার নামায আদায় করল এবং পুনরায় এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম দিল। তিনি বললেনঃ আবার গিয়ে নামায আদায় কর, কেননা, তুমি নামায আদায় করনি। এভাবে তিনবার ঘটনার পুনরাবৃত্তি। তারপর লোকটি বলল, হে মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমি এর চেয়ে সুন্দর নামায আদায় করতে জানিনা। কাজেই, আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তখন তিনি বললেন, যখন তুমি নামাযে দাঁড়াবে তখন তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যতটুকু তোমার পক্ষে সহজ ততটুকু পড়বে। এরপর রুকুতে যাবে এবং ধীরস্থিরভাবে রুকু আদায় করবে। তারপর রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে। এরপর সিজদা থেকে উঠে স্থিরভাবে বসবে এবং পুনরায় সিজদায় গিয়ে স্থিরভাবে সিজদা করবে। তারপর পূর্ণ নামায এভাবে আদায় করবে।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.