Tuesday, January 31, 2017

Wazu

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ 
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে

১৩৪। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হুযুর সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যার অযু নষ্ট হয়ে গেছে সে পুনরায় অযু না করা পর্যন্ত তার নামায হবে না। হাজরামাউতের এক ব্যক্তি হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ)-কে বললেন, হদস কি? উত্তরে তিনি বলেন, পায়খানার রাস্তা দিয়ে ছোট অথবা বড় হাওয়া বের হওয়া।

১৩৫। হাদসীঃ হযরত নোআইমুল মুজমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ)-এর সাথে মসজিদের ছাদে উঠি। তখন আবু হোরায়রা (রাঃ) অযু করলেন এবং বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, কেয়ামত দিবসে আমার উম্মতদেরকে অযুর নিদর্শনস্বরুপ 'গুররে মুহাজ্জাল' বলে ডাকা হবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তাদের্ উজ্জ্বল্য বাড়াবার ক্ষমতা তারা যেন তা বাড়িয়ে নেয় (অযুর অঙ্গগুলো অত্যধিক উজ্জ্বল হওয়াকে গুররে মুহাজ্জাল বলে)।

১৩৬। হাদীসঃ হযরত আব্বাদ ইবনে তামীম তাঁর চাচা আবদুল্লাহ থেকে হাদীস রেওয়ায়াত করেন, তিনি এক সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন, যার নামাযের মধ্যে অযু নষ্ট হওয়ার সন্দেহ উপস্থিত হয়। উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এরুপ সন্দেহ উপস্থি হলে তার নামায ছেড়ে আসার প্রয়োজন নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত সে পেছনের রাস্তা থেকে কোন আওয়াজ না শুনে অথবা কোন গন্ধ না পায়।

১৩৭। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিদ্রা গেলেন, নিদ্রার কারণে নাকের আওয়াজও বের হল। তারপর তিনি নামায আদায় করলেন। আবার কোন কোন সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাত হয়ে নিদ্রা গেলেন, এমনকি নাকের আওয়াজও বের হয়েছে, তারপর দাঁড়িয়ে নামায আদায় করেছেন।

অপর সূত্রে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক রাতে আমার খালাম্মা হযরত মায়মুনা (রাঃ)-এর ঘরে রাত্রি যাপন করলাম। রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায আদায় করলেন, রাতের কিছু অংশ চলে যাওয়ার পর নিদ্রা থেকে উঠলেন। ঘরে লটকানো ছোট মশক থেকে সংক্ষিপ্ত অযু করলেন (বর্ণনাকারী এ স্থলে 'সংক্ষিপ্তকরণ' অথবা 'কমকরণ' উভয় শব্দই বর্ণনা করেছেন)। তারপর দাড়িয়ে নামায আরম্ভ করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নামায পড়তে দেখে আমিও তাঁর ন্যায় সংক্ষিপ্ত অযু করলাম, তারপর তাঁর বাম দিকে দাঁড়িয়ে গেলাম (এ স্থলে সুফিয়াম কোন কোন সময় "ইয়াসার" এর পরিবর্তে 'শেমাল' শব্দও ব্যবহার করেছেন)। অত:পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর ডান দিকে ঘুড়িয়ে নিয়ে আসলেন। তারপর আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী নামায আদায় করলেন। অত:পর কাত হয়ে শুয়ে পড়লেন, তাঁর নাকের আওয়াজও বের হল। এমন সময় মুয়াজ্জিন ফজরের নামাযের আযান দিলে তিনি বিছানা হতে উঠে এসে তাদেরকে নিয়ে নামায আদায় কররেন, কিন্তু অযু করলেন না।
আমরা আমর (রাঃ)-কে বললাম, লোকেরা বলে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চক্ষু ঘুম যায়, কিন্তু তাঁর কলব ঘুমায় না্ আমর বলেন, আমি ওয়ায়েদ ইবনে ওমায়ের (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি আম্বিয়ায়ে কেরামের স্বপ্ন ওহী। তারপর তিনি পাঠ করলেন,  اِنِّىْ اَرٰى فِى الْمَنَا مِ اَنِّىْ اَذَبَحُكَ (আমি স্বপ্নে দেখি তোমাকে জবাই করছি।)

অযুর অঙ্গগুলো যথাযথভাবে ধৌত করা

১৩৮। হাদীসঃ হযরত উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফাতের ময়দান থেকে ফিরার পথে যখন (শে'ব) পাহাড়ী রাস্তায় আসলেন, তখন বাহন থেকে নীচে নামলেন, তারপর প্রস্রাব করে অযু কররেন, কিন্তু পূর্ণ অযু করে করলেন না। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ নামায! বললেন, নামায তোমার সামনে। অতঃপর তিনি বাহনে আরোহণ করলেন। যখন 'মোযদালাফায়' আসলেন তখন পুনরায় বাহন থেকে নীচে নেমে আসলেন। তারপর অযু করলেন। এ সময় পূর্ণভাবে অযু করলেন। অতঃপর নামাযের একামত দেয়া হল। তিনি মাগরিবের নামায আদায় করলেন। প্রত্যেকেই স্বীয় উট তথায় বসালেন। তারপর এশার নামাযের জন্য একামত দেয়া হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে নিয়ে এশার নামায আদায় করেন। মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে আর কোন নামায আদায় করেননি।

১৩৯। হাদীসঃ হযরত আব্বাস (রাঃ) এক সময় অযু করলেন। তিনি তাঁর মুখমন্ডল ধৌত করলেন। প্রথমে এক অঞ্জলি পানি নিয়ে তা দ্বারা কুলি করলেন, নাকেও পানি দিলেন। তারপর এক অঞ্জলি পানি নিয়ে উক্ত পানি দ্বারা এভাবে করলেন, অর্থাৎ এক হাত অন্য হাতের সাথে মিলালেন, তা দ্বারা মুখমন্ডল ধৌত করলেন। তারপর এক অঞ্জলি পানি নিয়ে ডান হাতে ঢেলে দিয়ে তা ধৌত করলেন। তারপর এক অঞ্জলি পানি নিয়ে তা দ্বারা বাম হাত ধৌত করলেন, তাপর মাথা মাসেহ করলেন। অত:পর এক অঞ্জলি পানি নিয়ে তা ডান পায়ে ঢেলে দিয়ে ধৌত করলেন। তারপর এক অঞ্জলি পানি নিয়ে বাম পা ধৌত করলেন। অত:পর বললেন, আমি এমনিভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অযু করতে দেখেছি।
১৪০। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত হাদীসখানা পৌছিয়ে বলেন,  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ যদি বিবিরি সাথে সঙ্গমের জন্য আসে এবং সঙ্গমের পূর্বে বলে-
অর্থঃ আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি, হে আল্লাহ! আমাদেরকে শয়তান থেকে রক্ষা কর এবং তুমি আমাদেরকে যা দান করবে তাকেও শয়তান থেকে রক্ষা কর।
১৪১। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হুযুর সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পায়খানায় প্রবেশ করতেন তখন বলতেন-
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে (খুবস ও খাবায়িস) ‘পুরুষ ও স্ত্রী জ্বিনের’ অনিষ্ট হতে নিরাপত্তা কামনা করছি।
১৪২। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানায় প্রবেশ করলেন। আমি তাঁর জন্য পায়খানার কাছে এক লোটা অযুর পানি রাখলাম। পায়খানা থেকে বের হয়ে এসে তিনি তা দেখতে পেয়ে বললেন, কে এ পানি রেখেছে? বলা হল, ইবনে আব্বাস (রাঃ) রেখেছে। তিনি সন্তুষ্ট হয়ে বললেন-হে আল্লাহ! তুমি তাকে ধর্মীয় জ্ঞানে জ্ঞানান্বিত কর।
১৪৩। হাদীসঃ হযরত আবু আইউব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ যদি পায়খানায় আসে, সে যেন কেবলা রোখ হয়ে না বসে এবং সেদিকে পিঠ দিয়েও না বসে। বরং পূর্ব অথবা পশ্চিম দিক হয়ে যেন বসে (এ হুকুম মদীনাবাসীদের জন্য)।
১৪৪। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলতেন, লোকেরা বলত, যখন তোমরা প্রাকৃতিক প্রয়োজন মিটাতে বসবে, তখন কেবলা মুখী হয়ে বসবে না, এমনকি বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকেও নয়। এ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদিন আমি কোন এক প্রয়োজনে আমাদের (হাফসা (রাঃ)-এর) ঘরের উপর ‍উঠলাম। তখন  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখলাম, তিনি বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে মুখ করে দু’ইটের উপর বসে প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করছেন। ইবনে ওমর (রাঃ) ওয়াসে’ ইবনে হাব্বানকে আরো বলেন, তোমরা তো মনে হয় এমন লোক, যারা নিতম্বের উপর নামায পড়ছ? তখন ওয়াসে বললেন, আল্লাহর শপথ! আপনি কি বলছেন, আমি বুঝি না।
হযরত ইমাম মালেক (রহঃ) ইবনে ওমর (রাঃ)-এর কথার ব্যাখ্যায় বলেন, সে এমন ব্যক্তি, যে নামায পড়ে কিন্তু সেজদার সময় যমীন নিতম্ব হতে উঠায় না, মহিলাদের ন্যায় যমীনের সাথে নিতম্ব মিলিয়ে সেজদা করে। অর্থাৎ কেবলার মর্যাদা সম্পর্কে তুমি এখনো অজ্ঞ।
১৪৫। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত,  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিবিগণ প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটাতে যখন খোলা ময়দানে যেতেন, তখন রাত্রি বেলায় ঘর থেকে বের হতেন।
আর হযরত ওমর (রাঃ) রাসূলে পাক সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রায়শই বলতেন, হুযুর! আয্ওয়াজে মোতাহহারাতকে আপনি পর্দা করার হুকুম দিন। কিন্তু  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্দা করার হুকুম দিতে দেরী করেন। ইত্যবসরে এক রাত্রে এশার সময়  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিবি হযরত সওদা বিনতে যাম্আ (রাঃ) ঘর থেকে বের হন। তিনি লম্বা গড়নের মহিলা ছিলেন। হযরত ওমর (রাঃ) তাঁকে দেখতে পেয়ে ডাক দিয়ে বললেন, হে সওদা! আমি আপনাকে চিনে ফেলেছি। হযরত ওমর (রাঃ)-এর উদ্দেশ্য ছিল, যেন পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হয়। এ ঘটনার পরই পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হল।
১৪৬। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ)  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রেওয়ায়াত করেন, তিনি বলেছেন, তোমাদের প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটাবার জন্য ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি আছে।
১৪৭। হাদীসঃ হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার বিশেষ এক প্রয়োজনে হাফসা (রাঃ)-এর ঘরের ছাদে উঠলাম। তখন দেখলাম,  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার দিকে পিঠ দিয়ে শাম-এর দিকে মুখ করে তাঁর প্রয়োজনে বসেছেন।
১৪৮। হাদীসঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমি আমাদের ঘরের ওপর উঠলাম। আমি দেখলাম,  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি ইটের উপর বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বসেছেন।
১৪৯। হাদীসঃ হযরত আতা’ বলেন, আমি হযরত আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন প্রাকৃতিক প্রয়োজনে পূরণের জন্য বের হতেন, তখন আমি এবং এক আনসারী (ছোট বালক, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে পেছনে যেতাম। আমাদের সাথে থাকত পানির পাত্র। যার দ্বারা তিনি পবিত্রতা অর্জন করতেন।
১৫০। হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিন বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বের হতেন তখন আমি এবং আমাদের আর একটি ছেলে তাঁর পিছনে পানির পাত্র নিয়ে যেতাম।
১৫১। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পায়খানায় প্রবেশ করতেন, তখন আমি এবং ছোট এক বালক তাঁর জন্য পানির পাত্র এবং আনাজাহ নামক লাঠি বহন করে নিয়ে যেতাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি দ্বারা ইস্তেঞ্জা করতেন। আনাজাহ বলা হয় এমন লাঠিকে, যা সাধারণ লাঠি হতে বড় এবং বর্শা হতে ছোট, যার মাথায় ছিল বর্শার ন্যায় লৌহ শলাকা।
১৫২। হাদীসঃ হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ পানি পানকালে যেন পানপাত্রে নিঃশ্বাস না ছাড়ে। আর তোমাদের কেউ পায়খানায় আসলে যেন ডান হস্তে লিঙ্গ স্পর্শ না করে এবং ডান হাত দ্বারা ধৌতকার্য সমাধা না করে।
১৫৩। হাদীসঃ হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যদি পেশাব করে, তখন সে যেন ডান হাত দ্বারা লিঙ্গ স্পর্শ না করে, ডান হাত দ্বারা ইস্তোও না করে এবং পানি পান করার সময় পানিতে যেন নিঃশ্বাস না ফেলে।
১৫৪। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা হুযুর সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য বের হন। আমি তাঁর পেছনে চললাম। তিনি এদিক ওদিক নজর করতেন না। আমি তাঁর নিকট পৌছলে তিনি আমাকে বললেন, আমাকে ইস্তেঞ্জার জন্য পাথরের ঢিলা তালাশ করে দাও। অথবা এরুপ কিছু শব্দ বলেছিলেন। কিন্তু হাড্ডি অথবা গোবর নিও না। অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য আমার চাদরের অাঁচলে করে কয়েকখানা পাথর নিয়ে আসলাম এবং সেগুলো তাঁর পার্শ্বে রেখে চলে গেলাম। তিনি প্রয়োজন পূরণ করার পর পাথরগুলো দ্বারা ইস্তেঞ্জার করলেন।
১৫৫। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য গেলেন। আমাকে আদেশ করলেন তিনটি পাথর নিয়ে আসতে। আমি দু’টি প্রস্তরখণ্ড পেলাম, তৃতীয়টি তালাশ করছিলাম। কিন্তু না পেয়ে গোবরের টুকরাসহ তাঁর কাছে আসলাম। তিনি পাথর দু’টি রেখে গোবরের টুকরাটি ফেলে দিয়ে বললেন, এটা নাপাক।
১৫৬। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার একবার করে অযুর অঙ্গগুলো ধৌত করেছেন।
১৫৭। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযুর অঙ্গগুলো দু’বার করে ধৌত করেছেন।
১৫৮। হাদীসঃ হযরত ওসমান (রাঃ)-এর গোলাম হুমরান (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি হযরত ওসমান (রাঃ)-কে দেখেছেন, তিনি এক সময় তাঁকে অযুর পানির পাত্র নিয়ে আসার জন্য বললেন। অতঃপর হযরত ওসমান (রাঃ) উক্ত পানি হতে হাতের কবজি পর্যন্ত তিন বার করে পানি বইয়ে ধৌত করলেন। তারপর উক্ত পাত্রে ডান হাত ঢুকিয়ে কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন। তারপর মুখমণ্ডল তিন বার এবং উভয় হস্ত কনুই পর্যন্ত তিন বার করে ধৌত করলেন। তারপর মাথা মাসেহ করলেন। তারপর পদদ্বয় টাখনু পর্যন্ত তিন বার করে ধৌত করলেন। তারপর বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার অযুর ন্যায় অযু করবে এবং হুজুরের কলবের সাথে দু’রাকাআত নামায আদায় করবে, তার অতীতের সকল সগীরা গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
১৫৯। হাদীসঃ হযরত ইব্রাহীম থেকে অপর এক সনদে হযরত ওরওয়া থেকে বর্ণিত, তিনি হুমরান থেকে রেওয়ায়েত করেন, হযরত ওসমান (রাঃ) অযুর শেষে বলেছেন, আমি তোমাদেরকে একখানা হাদীস শুনাচ্ছি। যদি পবিত্র কোরআনের আয়াত (আমি নিদর্শনসমূহের মধ্য হতে যা অবতীর্ণ করেছি যারা তা গোপন করে) না হত, তা হলে তোমাদেরকে উক্ত হাদীসখানা শুনাতাম না। হাদীসখানা হল “আমি রাসূল সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি উত্তমরুপে অযু করবে এবং নামায আদায় করবে, তার নামায পড়া পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
১৬০। হাদীসঃ হযরত আবু ইদ্রীস হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রেওয়ায়াত করতে শুনেছেন, তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি অযু করবে, সে যেন নাক ঝেড়ে নেয় এবং যে ঢিলা ব্যবহার করবে, সে যেন বে-জোড় ঢিলা ব্যবহার করে।
১৬১। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যখন অযু করবে সে যেন নাকের ছিদ্রে পানি দিয়ে ঝেড়ে পরিষ্কার করে নেয়। আর যে ঢিলা ব্যবহার করবে সে যেন বিজোড় ঢিলা ব্যবহার করে। আর তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে গাত্রোত্থান করে, সে যেন অযুর পাত্রে হাত ঢুকাবার পূর্বেই কবজি পর্যন্ত তিন বার করে ধৌত করে নেয়। কারণ রাত্রে তার হাত কোথায় ছিল সে তা জানে না।
১৬২। হাদীসঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, কোন এক সফরে হুজুর সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের থেকে পেছনে রয়ে গেলেন। আসরের সময় তিনি আমাদের সাথে এসে পৌছলেন। এ সময় আমরা অযু করছিলাম এবং আমরা পায়ে মাসেহ করতে আরম্ভ করলাম(অর্থাৎ হালকাভাবে ধৌত করতে লাগলাম)। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চ স্বরে আমাদেরকে ডেকে বলেন, ......... পায়ের গোড়ালিগুলোর জন্য দোযখের আগুনের শাস্তি হোক (যেগুলোতে পানি পৌছে না)। অর্থাৎ অযুর অঙ্গগুলো ভালোভাবে ধৌত করতে হবে।
১৬৩। হাদীসঃ হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম হুমরান (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি উসমান (রাঃ)-কে অযূর পানি আনাতে দেখলেন। তারপর তিনি সে পাত্র থেকে উভয় হাতের উপর পানি ঢেলে তা তিনবার ধুয়ে ফেললেন। এরপর তাঁর মুখমন্ডল তিনবার এবং উভয় হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন, এরপর মাথা মাসেহ করলেন। এরপর প্রত্যেক পা তিনবার ধোয়ার পর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার এ অযূর ন্যায় অজু করতে দেখেছি এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ অজুর ন্যায় অজু কররে দুরাকাআত নামায আদায় করবে এবং তার মধ্যে কোন বাজে খেয়াল মনে আনবে না, আল্লাহ তা’আলা তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন।
১৬৪। হাদীসঃ হযরত মুহাম্মদ বিন যিয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, লোকেরা অযু করার সময় যখন তিনি তাদের কাছ দিয়ে যেতেন, তখন বলতেন, তোমরা পূর্ণভাবে অজু কর। আমি আবুল কামেস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে সকল পায়ের গোড়ালিতে অযুর পানি পৌছাবে না, তার জন্য দোযখের আগুনের শাস্তি অবধারিত।
১৬৫। হাদীসঃ হযরত ওবায়দ বিন জুরায়জ (রাঃ) একদা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ)-কে বললেন, হে আবু আবদুর রহমান! আপনি এরুপ চারটি কাজ করছেন যা আপনার কোন সাথীকে করতে দেখছি না। তখন তিনি বললেন, হে ইবনে জুরয়েজ! ঐ কাজগুলো কি? উত্তরে তিনি (জুরায়েজ) বললেন!-(১) আমি আপনাকে দেখতে পাচ্ছি, আপনি খানায়ে কাবার রোকনসমূহের মধ্যে কেবলমাত্র ইয়ামানী দু’টি রোকন স্পর্শ করে থাকেন। (২) আপনি কেবলমাত্র সেবতী জুতা পরিধান করেন। (৩) আপনি আপনার কাপড়গুলো হলুদ রং দ্বারা রঞ্জিত করেন। (৪) আমি আরো দেখতে পাচ্ছি, আপনি যখন মক্কায় অবস্থান করেন, অন্যান্য লোকেরা চাঁদ দেখামাত্রই তালবিয়া পাঠ করেন, কিন্তু আপনি তালবিয়ার দিন (আট তারিখ) ছাড়া তালবিয়া পাঠ করেন না, এর কারণ কি? হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রত্যেকটির উত্তর দিয়ে বলেন, ‘আরকান সম্পর্কে ঘটনা হল, আমি জনাব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইয়ামানী দু’টি রোকন ছাড়া অন্য কোন রোকন স্পর্শ করতে কখনো দেখিনি।
আর ‘সেবতী জুতা সম্পর্কে ঘটনা হল, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সেবতী জুতা পরিধান করতে দেখেছি, যার উপর কোন পশম থাকত না। তিনি জুতা পরিহিত অবস্থায় অযু করতেন, তাই আমি তা পরিধান করতে ভালবাসি।
আর তুমি ‘হলুদ রংয়ের কথা বলছ! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হলুদ রং দ্বারা স্বীয় কাপড় রঞ্জিত করতে দেখেছি। তাই আমি উক্ত রং দ্বারা কাপড় রঞ্জিত করতে ভালবাসি। আর তুমি ‘তালবিয়া সম্পর্কে বলেছ! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তালবিয়া পাঠ করতে দেখিনি; বরং যখন উটনী তাঁকে নিয়ে খাড়া না হয়েছে। অর্থাৎ হজ্জের ক্রিয়াকলাপ আরম্ভ করার পরই তিনি তালবিয়া পাঠ করেছেন (তাই আমিও তদ্রুপ করে থাকি)।
১৬৬। হাদীসঃ হযরত উম্মে আতিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মৃত মেয়ে হযরত যয়নাব (রাঃ)-এর গোসল সম্পর্কে মহিলাদেরকে বলেছেন, যেন ডান দিক থেকে গোসল আরম্ভ করেন এবং তার অযুর স্থানগুলো যেন ডান দিক থেকে ধোয়া আরম্ভ করা হয়।
১৬৭্। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যে কোন কাজ ডান দিক থেকে আরম্ভ করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বড় পছন্দনীয় ছিল। যেমন জুতা পরিধান করা, মাথার চুল চিরুনি করা, পবিত্রতা অর্জন করা, এমনিভাবে প্রত্যেক কাজ তিনি ডান দিক থেকে আরম্ভ করতেন।
১৬৮। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি, এক সফরে আসরের নামাযের সময় হলে লোকেরা পানি খোঁজ করতে আরম্ভ করলেন, কিন্তু তারা কোথাও পানি না পেয়ে অবশেষ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে একটি পাত্রে করে সামান্য অযুর পানি নিয়ে আসলেন। অতঃপর রাসুলে পাক সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত পাত্রে স্বীয় হাত মোবারক রাখলেন আর উপস্থিত লোকদেরকে আদেশ করলেন, তোমরা এ পাত্রের পানি দ্বারা অযু করতে থাক। হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি দেখতে পেলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অঙ্গলির নীচ থেকে পানি উথলে উঠছে। এমনকি ঐ পাত্রের পানি দ্বারা উপস্থিত সবাই অযু করে নিলেন(বর্ণিত আছে, তখন উপস্থিত লোকদের সংখ্যা প্রায় ৮০-এর মত ছিল)।
১৬৯। হাদীসঃ হযরত ইবনে সিরীন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি একদা আমার বান্দীকে বললাম, আমার কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একখানা চুল মোবারক আছে, যা হযরত আনাস (রাঃ) অথবা তাঁর বংশধরদের থেকে আমার কাছে পৌছেছে। অতঃপর তিনি বললেন, দুনিয়া অথবা দুনিয়ার যাবতীয় বস্তু হতে অমাার কাছে উক্ত চুল মোবারক অতি প্রিয়।
১৭০্। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘হলক’ করাবার পর হযরত ‘আবু তালহা’ প্রথম ব্যক্তি, যিনি হুজুর সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চুল মোবারক গ্রহণ করেছেন।
১৭১। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কারো কোন পাত্রে কুকুর পানি পান করলে উক্ত পাত্র সাত বার ধৌত করে নিবে।
১৭২। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। এক ব্যক্তি একটি কুকুর এ অবস্থায় দেখতে পেল যে, সে পিপাসার কারণে ভেজা মাটি চেটে খাচ্ছে। তখন লোকটি নিজের (চামড়ার) মোজার মাধ্যমে পানি তুলে তা পান করিয়ে তার পিপাসা দূর করে দিল। আল্লাহ তায়ালা তার কাজে প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। ফলে তাকে জান্নাতে দাখিল করেন।
১৭৩। হাদীসঃ হযরত হামযা ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মসজিদে কুকুর পেশাব করতো। মসজিদের ভিতর দিয়ে আসা যাওয়া করতো। কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম এ কারণে মসজিদকে পানি দ্বারা ধুইতেন না।
১৭৪। হাদীসঃ হযরত আদী ইবনে হাতেম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে শিকারী কুকুর সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তুমি তোমার শিকারী কুকুরকে শিকার ধরার জন্য প্রেরণ করলে যদি সেটি শিকার ধরে হত্যা করে নিয়ে আসে, তবে তুমি উক্ত শিকারকৃত জন্তুর গোশত খেতে পার। আর যদি সেটি তা হতে কিছু অংশ খেয়ে ফেলে, তা হলে এ গাশত তুমি খেয়ো না। যেহেতু মনে করতে হবে, কুকুরটি নিজের জন্য শিকার করেছে, তোমার জন্য নয়। অতঃপর আমি আরো প্রশ্ন করলাম, হুযুর! আমি আমার শিকারী কুকুরকে শিকার ধরার জন্য পাঠালাম। তারপর সেটির সাথে অন্য একটি কুকুরও দেখতে পেলাম। এখন কি করব? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ অবস্থায় তুমি শিকারকৃত জন্তুটি খেয়ো না। কারণ তুমি তোমার কুকুরটি পাঠাবার সময় ‘তাসমিয়া’ পাঠ করে ছিলে। অন্যের কুকুর পাঠাবার সময় তো তুমি তা পাঠ করনি।
১৭৫। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোন ব্যক্তি নামাযের অপেক্ষায় যতক্ষণ পর্যন্ত মসজিদে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার এ সময় নামাযের মধ্যে গণ্য হবে। কিন্তু শর্ত থাকে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত তার (হদস) অযু নষ্ট না হয়। এক অনারব ব্যক্তি প্রশ্ন করেন, হে আবু হোরায়রা! ‘হদস’ কি? উত্তরে তিনি বললেন, পেছনের রাস্তা দিয়ে আওয়াজ বের হওয়া।
১৭৬। হাদীসঃ হযরত আব্বাদ ইবনে তামীম (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মুসল্লী তার নামায থেকে সরবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে কোন আওয়াজ না শুনে অথবা দূর্গন্ধ না পায়।
১৭৭। হাদীসঃ হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমার বেশি বেশি মযী বের হত। আমি এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করতে লজ্জাবোধ করতাম। তাই আমি “মেকদাদ” (রাঃ)-কে আদেশ করলাম, তিনি যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ মাসআলা সম্পর্কে অবগত হন। তিনি এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মযী বের হলে তবেই অযু করতে হবে।
১৭৮। হাদীসঃ হযরত যায়েদ ইবনে খালেদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত ওসমান (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছেন, সে ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার কি অভিমত? যে বিবির সাথে সঙ্গম করছে, কিন্তু বীর্যপাত করেনি। উত্তরে হযরত ওসমান (রাঃ) বললেন, এ ব্যক্তি প্রথমে নামাযের অযুর ন্যায় অযু করবে, তারপর স্বীয় লিঙ্গ দৌত করে নিবে। হযরত ওসমান (রাঃ) আরো বলেন, আমি এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরুপ শুনেছি। যায়েদ ইবনে খালেদ (রাঃ) বলেন, তারপর আমি এ মাসআলা প্রসঙ্গে হযরত আলী, যোবায়ের, তালহা, উবাই বিন কা’ব (রাঃ) প্রমুককে প্রশ্ন করলে তাঁরাও অনুরুপ আদেশ করেছেন।
১৭৯। হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারী ব্যক্তির কাছে খবর পাঠালে তিনি এমন অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে উপস্থিত হলেন যে, তাঁর মাথার চুল থেকে পানি টপকাচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাকে তাড়াহুড়ার মধ্যে ফেলে দিয়েছি। উত্তরে তিনি বললেন হাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন তোমাকে তাড়াহুড়ার জন্য বাধ্য করা হয় অথবা বীর্যপাত করা না হয় তখন তোমার উপর শুধু অযু করা ওয়াজিব।
১৮০। হাদীসঃ হযরত উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আরাফার ময়দান থেকে ফিরলেন, তখন পাহাড়ী রাস্তার দিকে গেলেন, সেখানে নিজের প্রয়োজন সমাপ্ত করলেন। উসামা (রাঃ) বলেন হুজুর সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু করার সময় আমি তাঁর শরীরে পানি ঢালতে আরম্ভ করলাম। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি নামায পড়বেন? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নামাযের স্থান তোমার সম্মুখে।
১৮১। হাদীসঃ কোন এক সফরে হযরত মুগীরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের প্রাকৃতিক প্রয়োজন মিটাবার জন্য গেলেন। ফিরে আসার পর অযু করার ইচ্ছা করলে আমি অঙ্গসমূহে পানি ঢেলে দিতে থাকি আর তিনি অযু করতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় মুখমন্ডল এবং হস্তদ্বয় কনুই পর্যন্ত ধুলেন, তারপর মাথা মাসেহ করলেন এবং মোজার উপর মাসেহ করলেন।
১৮২। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি একদা উম্মুল মো’মেনীন হযরত মায়মুনা (রাঃ)-এর ঘরে রাত্রিযাপ করেন। হযরত মায়মুনা (রাঃ) ছিলেন তাঁর খালাম্মা। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি বিছানার পার্শ্বে ছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও হযরত, মায়মুনা (রাঃ)-এর বিছানার দৈর্ঘ্যে শুয়ে গেলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিদ্রামগ্ন হলেন। রাত্রি যখন অর্ধেক অথবা তার চাইতে কিছু কম বা বেশি হল, তখন তিনি জাগ্রত হলেন এবং বসে বসে হাত দ্বারা মুখমন্ডল থেকে নিদ্রার প্রখাব দূর করতে লাগলেন। তারপর সূরা ‘আলে ইমরা’-এর শেষ দশ আয়াত তেলাওয়াত করলেন। তারপর ঘরে লটকানো পানির মশক হাতে নিলেন, তা থেকে পানি নিয়ে উত্তমভাবে অযু করলেন এবং নামায পড়তে আরম্ভ করলেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমিও ঘুম থেকে গাত্রোত্থান করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা যা করলেন আমিও তাই করলাম এবং তাঁর পার্শ্বে গিয়ে নামাযের জন্য দাঁড়ালাম। তিনি স্বীয় ডান হাত আমার মাথায় রেখে আমার ডান কান ধরে একটু মললেন (যাতে আমি তাঁর ডান দিকে এসে দাঁড়ালাম)। তারপর তিনি দু’দু রাকআত করে ছয় বারে বার রাকাআত তাহাজ্জুদ নামায অতঃপর বেতেরর নামায আদায় করলেন। তারপর মুয়াজ্জ্নিন আসলেন। শয়ন থেকে উঠে দু’রাকআত সংক্ষিপ্ত নামায আদায় করলেন। তারপর ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন এবং ফজরের নামায আদায় করলেন।
১৮৩। হাদীসঃ হযরত আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ আমি একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) এর কাছে এলাম। তখন সূর্যগ্রহণ লেগেছিল। দেখলাম সব মানুষ দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছে এবং আয়েশা (রাঃ)ও দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছেন। আমি জিজ্ঞাসা করলামলোকদের কী হয়েছেতিনি তাঁর হাত দিয়ে আকাশের দিকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! আমি বললামএটা কি কোন আলামততিনি ইশারা করে বললেনহ্যাঁ। এরপর আমিও নামাযে দাঁড়িয়ে গেলাম। এমনকি আমাকে সংঙ্গীহীনতায় আচ্চন্ন করে ফেলল এবং আমি আমার মাথায় পানি দিতে লাগলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মুসল্লীদের দিকে) ফিরে আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করে বললেন, "যেসব জিনিস আমি ইতিপূর্বে দেখিনি সেসব আমার এই স্থানে আমি দেখতে পেয়েছিএমনকি জান্নাত এবং জাহান্নামও। আর আমার কাছে ওহী পাঠানো হয়েছে যেকবরে তোমাদের পরীক্ষা করা হবে দাজ্জালের ফিতনার ন্যায় অথবা তার কাছাকাছি। বর্ণনাকারী বলেনআসমা (রাঃ) কোনটি বলেছিলেনআমি জানি না। তোমাদের প্রত্যেকের কাছে (ফিরিশতা) উপস্থিত হবে এবং তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, "এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার কি জ্ঞান আছেতারপর 'মুমিন ব্যক্তি বলবে (আসমা 'মুমিনবলেছিলেন না 'মুকিনতা আমি জানি না)-ইনি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি আমাদের কাছে মু'জিযা ও হিদায়াত নিয়ে এসেছিলেন। আমরা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছি, তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁর অনুসরণ করেছি। তারপর তাকে বলা হবেনিশ্চিন্তে ঘুমাও। আমরা জানলাম যে তুমি মু'মিন ছিলে। আর মুনাফিক বা মুরতাব বলবে-আমি জানি না। আসমা এর কোনটি বলেছিলেন তা আমি জানি না-লোকজনকে এর সম্পর্কে কিছু একটা বলতে শুনেছি আর আমিও তা-ই বলেছি।
১৮৪। হাদীসঃ হযরত ইয়াহইয়া আল-মাযেনী (রঃ) থেকে বর্ণিতএক ব্যক্তি (আমর ইবনে ইয়াহইয়ার দাদা) আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলেনআপনি কি আমাকে দেখাতে পারবেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে অযু করেছেনআবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) বললেনহ্যাঁ। অতঃপর তিনি অযুর পানি আনতে বললেনপানি আনার পর তিনি পাত্র হতে কিছু পানি হাতে নিলেন। তা দ্বারা দু'বার করে হাত ধৌত করলেন। তারপর তিন বার করে কুলি করলেন। নাকে পানি দিলেন এবং তিন বার করে মুখমন্ডল ধৌত করলেন। তারপর দু'বার করে কনুই পর্যন্ত ধৌত করলেন। অতঃপর হাত দ্বারা মাথা মাসেহ করলেন। একবার হস্তদ্বয় মাথার সম্মুখের দিকে তারপর পেছন দিকে নিলেন। অর্থাৎপ্রথম মাথার অগ্রভাগের দিক থেকে আরম্ভ করে কানের লতি পর্যন্ত নিলেনতারপর হস্তদ্বয় যে স্থান থেকে মাসেহ আরম্ভ করেছিলেন তথায় নিয়ে আসলেনতারপর পদদ্বয় ধৌত করলেন।
১৮৫। হাদীসঃ হযরত আমর ইবনে আবী হাসান একদা আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ)-এর কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অযু সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি পানির পাত্র নিয়ে আসতে বললেন। অতঃপর লোকদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অযুর ন্যায় অযু করে দেখালেন।
১৮৬। হাদীসঃ হযরত আবু যুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতএকদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুপুরের সময় আমাদের কাছে তাশরীফ আনলেন। এ সময় তাঁর জন্য অযুর পানি নিয়ে আসা হলতিনি অযু করেন। তাঁর অযু শেষে যে পানি বেঁচে গিয়েছিল উক্ত লোকেরা তা শরীরে মুছতে লাগলেন। অযু শেষে দু'রাকাআত যোহর এবং দু'রাকাআত আসরের নামায আদায় করলেন। তাঁর সম্মুখে সোতরা হিসেবে 'আনাজনামক একটি ছোট লাঠি ছিল।
১৮৭। হযরত আবু মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতএকদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানিভর্তি একটি পাত্র নিয়ে আসতে বললেন। অতঃপর উক্ত পাত্র হতে পানি নিয়ে তিনি হাত ও মুখমন্ডল ধৌত করলেন এবং কুলি করলেন। তারপর তাদের (আবু মূসা ও বেলাল)-কে বললেনতোমরা এ পাত্র হতে পানি পান কর এবং স্বীয় মুখমন্ডল এবং বুকে লাগাও। (এতে বুঝা যায়বুযুর্গদের ব্যবহৃত বস্তু থেকে বরকত গ্রহণ করা বৈধ)
১৮৮। হাদীসঃ হযরত মেসওয়ার (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওযুর পানি নেয়ার জন্য লোকদের মাঝে কাড়াকাড়ি পড়ে যেত।
১৮৯। হাদীসঃ হযরত সায়েব ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতআমার খালা একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে আমাকে নিয়ে গেলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেনইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার ভগ্নীপুত্র অসুস্থ হয়ে পড়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার মাথায় হাত দিয়ে মাসেহ করলেন এবং আমার জন্য বরকতের দোআ করলেন। অতঃপর তিনি অযু করলেন। আমি তাঁর অযুর পানি পান করলাম। তারপর আমি তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম। আমি তাঁর উচু স্কন্ধের মধ্যভাগে "চাতক পাখীর আভার ন্যায় উজ্জ্বলতম" মোহরে নবুওয়াত দেখতে পেলাম।
১৯০। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) একদা একটি পাত্র থেকে পানি ঢেলে নিলেনতারপর উভয় হস্ত ধৌত করলেন। তারপর মুখমন্ডল ধৌত করলেন এবং এক অাঁজলা পানি দ্বারা কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন। তিনি তিন বার এরুপ করলেন। উভয় হস্ত কনুই পর্যন্ত দু'দুবার ধৌত করলেন। তারপর মাথা মাসেহ করলেন (কিন্তু সম্মুখভাগ বা পেছনে কিছুই করলেন না) অবশেষে পদদ্বয় ধৌত করে নিলেন। তারপর বললেনআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এমনিভাবে অযু করতে দেখেছি।
১৯১। হাদীসঃ হযরত আমর ইবনে ইয়াহইয়া (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেনতিনি বলেনএকদা আমি আমর ইবনে আবী হাসানের কাছে উপস্থিত ছিলাম। তিনি আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অযু সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। তিনি এক পাত্র পানি আনতে বললেন। অতঃপর  তিনি উক্ত পানি দ্বারা অযু করে দেখালেন। প্রথমতঃ তিনি উক্ত পাত্র ঝুঁকিয়ে উভয় হাতে এক অঞ্জলি পানি নিলেনতা দ্বারা উভয় হস্ত তিন বার করে ধৌত করলেন। অতঃপর হাত পাত্রে ঢুকিয়ে তিন বার তিন অাঁজলা পানি নিয়ে কুলি করলেননাকে পানি দিলেন এবং নাক জেড়ে নিয়েন। তারপর পুনরায় পাত্রে হাত ঢুকিয়ে তিন বার করে মুখমন্ডল ধৌত করলেন। তারপর পাত্রে হাত ঢুকিয়ে উভয় হস্ত কুনই পর্যন্ত দু'বার করে ধৌত করলেন। তারপর পাত্রে হাত ঢুকিয়ে হাত জেড়ে মাথা মাসেহ করলেন। মাথা মাসেহ করার সময় হস্তদ্বয় একবার সম্মুখের দিকে আর একবার পেছন দিকে নিলেন। অতঃপর পাত্রে হাত ঢুকিয়ে পদদ্বয় ধৌত করলেন।
১৯২। হাদীসঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যমানায় পুরুষ ও মহিলাগণ এক সাথে অজু করতেন (এ ঘটনা পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বের)
১৯৩। হাদীসঃ হযরত জাবের বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি এক সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখার জন্য আসেন। সে সময় আমি বেহুঁশ অবস্থায় ছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে অযু করলেন। তারপর পাত্রে অতিরিক্ত যে পানি ছিল তা আমার শরীরে ছিটিয়ে দিলে আমি জ্ঞান ফিরে ফেলাম। অতঃপর আমি বললামইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর পর আমার মীরাস্ কে পাবেআমার ওয়ারিস তো অপরাপর ব্যক্তিগণ হবেন (অর্থাৎ আমার পিতা বা সন্তান কেউ নেইঅতঃপর ফারায়েজের আয়াতসমূহ অবতীর্ণ হল)
১৯৪। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতএকদা নামাযের সময় হলে যাদের বাড়ীঘর নিকটে ছিলতারা সবাই অযু করার জন্য নিজ নিজ বাড়ীতে চলে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে 'মেখযাবনামক ছোট একটি পানির ঢালনা নিয়ে আসা হল। পাত্রটি এতই চোট ছিল যেতার মধ্যে হাতের কবজি বিস্তার করা খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। অতঃপর উক্ত পাত্রের পানি দ্বারা উপস্থিত সবাই অযু করলেন। হোমায়েদ বলেনআমরা হযরত আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলামআপনারা সংখ্যায় তখন কত ছিলেনতিনি বললেনআমরা সংখ্যায় তখন আশি জন অথবা তার চাইতে কিছু বেশি ছিলাম।
১৯৫। হাদীসঃ হযরত আবু মূসা আশ্আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতএকদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি পানির পাত্র নিয়ে আসতে বললেন। পাত্র নিয়ে আসা হলে তিনি তাতে হাত মোবারকদ্বয় এবং মুখমন্ডল ধৌত করলেন তারপর কুলি করলেন।
১৯৬। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে তাশরীফ আনলেন। আমরা তাঁর জন্য তাম্র নির্মিত একটি পাত্র পানিসহ নিয়ে আসলাম। অতঃপর তিনি অযু করলেন। অযুতে মুখমন্ডল তিন বার করে আর উভয় হস্ত দু'বার করে ধৌত করলেন এবং মাথা মাসেহ করলেন। মাথায় হাত সম্মুখ থেকে পেছনেপেছনে থেকে সম্মুখে ঘুরালেন আর পদযুগল ধৌত করলেন।
১৯৭্। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতযখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং অসুস্থতা খুব বেড়ে গেলতখন তাঁর সেবা শুশ্রুষা ও চিকিৎসার জন্য তিনি আমার হুজরাতে থাকার জন্য বিবিদের সকলের অনুমতি চাইলেন। তাঁরা সবাই অনুমতি দিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'ব্যক্তির কাঁধের উপর ভর করে এমনভাবে বের হয়ে আসলেন যেপা মোবারক মাটির উপর দিয়ে হেঁচড়ে আসাতে মাটিতে দাগ পড়ে গিয়েছিল। ঐ দু'ব্যক্তির একজন হলেন হযরত আব্বাস (রাঃ) এবং অন্য এক ব্যক্তি। হযরত ওবায়দুল্লাহ বলেনআমি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে এ ব্যাপারে খবর দিলে তিনি বললেনতুমি কি জানদ্বিতীয় ব্যক্তি কে ছিলেনআমি বললাম না। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেনতিনি হলেন হযরত আলী ইবনে আবী তালেব (রাঃ)
হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিততাঁর ঘরে প্রবেশ করার পর যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাথা ব্যথা বেশি হয়ে গিয়েছিল তখন তিনি বলেনতোমরা আমার মাথায় এমন সাত মশক পানি ঢাল যেগুলোর মুখ এখনো খোলা হয়নি (অর্থাৎপূর্ণ সাত মশক পানি ঢাল)যাতে আমি সাহাবাদেরকে কিছু অসিয়ত করতে সক্ষম হই।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হযরত হাফসা (রাঃ)-এর ঢালনায় বসানো হল। আমরা তাঁর শরীর মোবারকে ঐ সাত মশক পানি ঢালা আরম্ভ করলাম। তারপর তিনি আমাদেরকে ইশারা করলেনতোমরা কি সব কয়টি মশক ঢালা শেষ করেছঅতঃপর তিনি মসজিদে সাহাবাদের কাছে বের হয়ে গেলেন(সাহাবাদের সহকারে নামায আদায় করলেনতারপর খোতবা দিলেন---)

১৯৮। হাদীসঃ হযরত আমর ইবনে ইয়াহইয়া তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমার চাচা অজুর পানি বেশি খরচ করতেন। একদিন তিনি আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ)-কে বললেনঃ আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কিভাবে অযু করতে দেখেছেন? তিনি এক গামলা পানি আনালেন। সেটি উভয় হাতের ওপর কাত করে (তা থেকে পানি ঢেলে) হাত দু'খানি তিনবার ধুইলেন, তারপর তার হাত গামলায় ঢুকালেন। তারপর এক আঁজালা পানি দিয়ে তিনবার কুলি করলেন এবং নাক পরিস্কার করলেন। তারপর তাঁর হাত ঢুকালেন। উভয় হাতে এক আঁজলা পানি নিয়ে মুখমন্ডল তিনবার ধুইলেন। তারপর উভয় হাত কনুই পর্যন্ত দু'বার করে ধুইলেন। তারপর উভয় হাতে পানি নিয়ে মাথার সামনে এবং পেছনে মাসেহ করলেন এবং দু'পা ধুইলেন। তারপর বললেন, আমি নবী (সা)-কে এভাবেই অযু করতে দেখেছি।
১৯৯। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি পানির পাত্র আনতে বললেন। অতঃপর এমন একটি পানির পাত্র নিয়ে আসা হল যা খুবই বিস্তৃত কিন্তু তাতে পানি খুবই কম ছিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত পাত্রের মধ্যে স্বীয় আঙ্গুল মোবারকগুলো রাখলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি দেখতে লাগলাম, তাঁর আঙ্গুলসমূহের মধ্য দিয়ে পানি উথলে উঠছিল। আমার ধারণা, উক্ত পানি দ্বারা ৭০ থেকে ৮০ জন অযু করেন।
২০০। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো এক সা' হতে পাঁচ মুদ্দ পানি দ্বারা গোসল করতেন এবং এক মুদ্দ পানি দ্বারা অযু করতেন, চার মুদ্দ সমান এক সা'। এক সা' সমান পৌনে চার সের। সুতরাং এক মুদ্দ সমান চৌদ্দ ছটাক।
২০১। হাদীসঃ হযরত সা'দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রেওয়ায়াত করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোজাদ্বয়ের উপর মাসেহ করেছেন। এ প্রসঙ্গে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হযরত ওমর (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, হযরত সা'দ (রাঃ) যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোন হাদীস রেওয়ায়াত করেন তখন সে সম্পর্কে অন্য কাউকে আর প্রশ্ন করো না।(অর্থাৎ তিনি একজন বিশিষ্ট সাহাবী ও বিশ্বস্ত রাবী)।
২০২। হাদীসঃ হযরত মুগীরা ইবনে শো'বা (রাঃ) তিনি নবী করীম সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম  থেকে রেওয়ায়াত করেন, একদা তিনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বের হলেন। অতঃপর মুগীরা ইবনে শা'বা (রাঃ) এক পাত্র পানি নিয়ে তাঁর পেছনে পেছনে গেলেন। প্রয়োজন সেরে আসার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু করার সময় মুগীরা (রাঃ) তাঁর অঙ্গে পানি ঢেলে দেন, তিনি সে সময় মোজার উপর মাসেহ করেন।
২০৩। হাদীসঃ হযরত আমর ইবনে উমাইয়া যমীরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তাঁর পিতা তাকে বলেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মোজাদ্বয়ের উপর মাসেহ করতে দেখেছেন।
২০৪। হাদীসঃ হযরত আমর ইবনে উমাইয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি, তিনি পাগড়ী এবং মোজার উপর মাসেহ করেছেন।
২০৫। হাদীসঃ হযরত মুগীরা (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। তিনি অযু করার সময় আমি তাঁর পা হতে মোজা খোলার জন্য একটু ঝুঁকে গেলে তিনি আমাকে বললেন, মোজাগুলো আপন অবস্থায় ছেড়ে দাও। যেহেতু আমি পবিত্র অবস্থায় মোজার ভেতর পা ঢুকিয়েছি। অতঃপর তিনি মোজাদ্বয়ের উপর মাসেহ করলেন। অর্থাৎ, পবিত্র অবস্থায় মোজা পরিধান করলে অযুর সময় তা খুলতে হয় না, বরং তার উপর মাসেহ করলেই হবে।
২০৬। হাদীসঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বকরীর কাঁধের গোশত খেলেন, তারপর নামায আদায় করলেন, কিন্তু অযু করলেন না। অর্থাৎ, আগুনে পাকানো জিনিস খেলে অযু করতে হয় না, বরং হাত মুখ ধুয়ে নিলেই চলে।
২০৭। হযরত আমর ইবনে উমাইয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বকরীর কাঁধের গোশত ছুরি দ্বারা কাটতে দেখেছেন, এমন সময় নামাযের আযান দেয়া হলে তিনি ছুরি ফেলে দিয়ে নামায আদায় করলেন, কিন্তু অযু করলেন না।
২০৮। হযরত সুওয়াইদ ইবনে নোমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, খায়বার যদ্ধে সুওয়াইদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে গিয়েছিলেন। তাঁরা খায়বারের নিকটস্থ নিম্ন এলাকা সাহবা নামক স্থানে উপস্থিত হলে আসরের নামায শেষে খানা নিয়ে আসতে বললেন। তখন তাঁদের কাছে ছাতু ছাড়া আর কিছুই ছিল না। সুতরাং হুজুর সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাতু পানির সাথে মিশাবার আদেশ করলেন। অতঃপর তিনি তা খেলেন, আমরাও খেলাম। তারপর মাগরিবের আযান দেয়া হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুলি করলেন; আমরাও কুলি করলাম। অতঃপর নামায আদায় করা হল, কিন্তু তিনি অযু করলেন না (কিছু খেলে অযু নষ্ট হয় না)।
২০৯্। হাদীসঃ হযরত মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে থেকে কাঁধের গোশত খেলেন, তারপর নামায আদায় করলেন, আর অযু করলেন না। 
২১০। হাদীসঃ হযরত আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা দুধ পান করলেন, তারপর কুলি করলেন এবং বললেন, দুধের মধ্যে একটা তৈলাক্ততা আছে (তা্ই দুধ বা তৈলাক্ত বস্তু খেলে কুলি করা উত্তম)।
২১১। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যদি নামাযে নিদ্রামগ্ন হয়ে পড়ে, তখন সে যেন শুয়ে পড়ে, যাতে তার নিদ্রার ভাব কেটে যায়। কারণ নামায অবস্থায় কেউ যদি ঝিমাতে থাকে তখন সে হয়ত ইস্তেগফার করার ইচ্ছা করবে, অথচ নিজের জন্য বদদোয়া করবে (তাই নামাযে ঝিমানো অনুচিত)।
২১২। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নামায অবস্থায় কেউ যদি ঝিমিয়ে পড়ে, সে যেন শুয়ে যায়। তাতে সে কি পড়ছে তা জানতে পারে। (অর্থাৎ, ঘুম থেকে উঠে নামায আদায় করা উত্তম)।
২১৩। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক নামাযের পূর্বে অযু করতেন। আমর ইবনে আমের বলেন, আমি হযরত আনাস (রাঃ)-কে বললাম, আপনারা কি করতেন? তিনি বলেন, হদস্ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের প্রত্যেকের পূর্ব অযুই যথেষ্ট হত।
২১৪। হাদীসঃ হযরত সুওয়াইদ বিন নো'মান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা খায়বার যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হলাম। আমরা 'সাহবা' নামক স্থানে উপস্থিত হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আসরের নামায আদায় শেষে খানা নিয়ে আসতে বললেন। দেখা গেল, ছাতু ছাড়া আর কিছুই নেই। আমরা সবাই খেলাম এবং পান করলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের নামায পড়ার জন্য উঠলেন। তিনি কুলি করলেন, তারপর আমাদেরকে নিয়ে মাগরিবের নামায আদায় করলেন, কিন্তু নতুন অযু করলেন না।
২১৫। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মক্কা অথবা মদীনার কোন এক বাগিচার কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন, এমন সময় তিনি এমন দু'ব্যক্তির আওয়াজ শুনতে পেলেন, যাদেরকে তাদের কবরে আযাব দেয়া হচ্ছে, অথচ তাদেরকে বিরাট কোন অন্যায়ের জন্য আযাব দেয়া হচ্ছে না। তারপর বললেন, তাদের একজন পেশাব থেকে নিজেকে রক্ষা করত না (পবিত্র হত না)। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি পরোক্ষে নিন্দা করত। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি খেজুরের ডাল নিয়ে আসতে বললেন। ডাল আনার পর তিনি তা দু'টুকরা করলেন এবং উভয়ের কবরের উপর এক এক টুকরা গেড়ে দিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হল, কেন আপনি এরুপ করলেন? তিনি বললেন, হতে পারে ডালগুলো না শুকানো পর্যন্ত তাদের আযাব কিছুটা হালাক করা হবে।
২১৬। হাদীসঃ হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য যেতেন। তখন আমি তাঁর পবিত্রতা গ্রহণের জন্য পানি নিয়ে আসতাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত পানি দ্বারা ইস্তেঞ্জা করতেন।
২১৭। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার দু'টি কবরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি বললেন, এদের আযাব দেওয়া হচ্ছে, কোন কঠিন পাপের জন্য তাদের আযাব হচ্ছে না। তাদের একজন পেশাব থেকে সতর্ক থাকত না। আর অপরজন চোগলখুরী করে বেড়াত। তারপর তিনি একখানি কাঁচা খেজুরের ডাল নিয়ে ভেঙ্গে দু'ভাগ করলেন এবং প্রত্যেক কবরের ওপর একখানি পুঁতে দিলেন। সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এরুপ কেন করবেন? তিনি বললেন, হয়তো তাদের থেকে (আযাব) লাঘব করা হবে, যতদিন পর্যন্ত এটি না শুকাবে।
২১৮। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখতে পেলেন, এক বেদুঈন মসজিদে প্রস্রাব করছে। সাহাবাগণ বাধা দিতে গেলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে বারণ করো না। তার প্রস্রাব শেষ হলে পানি নিয়ে আসতে বললেন। অতঃপর প্রস্রাবের উপর পানি ঢেলে দেয়া হল।
২১৯। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা জনৈক বেদুঈন মসজিদে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে লাগল। সাহাবাগণ তাকে বারণ করতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে বললেন, তোমরা তাকে বারণ করো না; বরং তার প্রস্রাবের উপর এক ডোল পানি ঢেলে দাও। যেহেতু তোমাদেরকে শান্তির জন্য প্রেরণ করা হয়েছে, অশান্তির জন্য নয়।
২২০। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা জনৈক বেদুঈন মসজিদে নববীতে আগমন করল। অতঃপর সে মসজিদের এক কিনারায় দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে লাগল। সাহাবাগণ তাকে বারণ করতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারণ করতে নিষেধ করলেন। বেদুঈনের প্রস্রাব করা শেষ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ডোল পানি নিয়ে আসতে বললেন। তারপর তাকে পানি ঢেলে দেয়া হল।
২২১। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা এক শিশুকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে নিয়ে আসা হল। সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাপড়ে প্রস্রাব করে দিলে তিনি পানি নিয়ে আসাতে বললেন। অতঃপর উক্ত পানি তাঁর কাপড়ে ঢেলে দেয়া হল।
২২২। হাদীসঃ হযরত উম্মে কায়স বিনতে মেহসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি একদা তাঁর দুগ্ধপোষ্য শিশু সন্তানকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে নিয়ে যান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোলে বসালে সে তাঁর কোলে প্রস্রাব করে দিল। তিনি পানি নিয়ে আসতে বললেন। অতঃপর তা তাঁর কাপড়ে ছিটিয়ে দিলেন কিন্তু কাপড় ধৌত করলেন না।
২২৩। হাদীসঃ হযরত হোযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক গোত্রের আবর্জনা ফেলার স্থানে আসলেন। অতঃপর তিনি (অসুস্থাতাহেতু) তথায় দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলেন, তারপর পানি নিয়ে আসার জন্য বললেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য পানি নিয়ে আসলে তিনি অযু করলেন।
২২৪। হাদীসঃ হযরত হোযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা আমি এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম পথ চলছিলাম। তিনি কোন এক গোত্রের আবর্জনা ফেলার স্থানে আসলেন, যা তাদের দেয়ালের পেছনে ছিল। তিনি তথায় প্রস্রাব করতে লাগলেন। আমি সেখান থেকে সরে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে ইশারা করলে আমি তাঁর পেচনে এসে দাঁড়িয়ে গেলাম। এমনকি তিনি প্রস্রাব থেকে সেরে উঠা পর্যন্ত আমি তথায় দাঁড়িয়ে রইলাম। 
২২৫। হাদীসঃ হযরত আবু ওয়ায়েল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত আবু মূসা আশ্আরী (রাঃ) প্রস্রাবের ব্যাপারে খুব কঠোরতা অবলম্বন করতেন এবং বলতেন, বনী ইসরাঈলের উপর হুকুম ছিল, যদি কারো কাপড়ে প্রস্রাব লাগত তা হলে যে স্থানে প্রস্রাব লাগত তা কেটে ফেলা হত। হোযায়ফা (রাঃ) বলেন, যদি আবু মূসা এটা বর্ণনা না করতেন! একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক গ্রোত্রের আবর্জনা ফেলারস্থানে আগমন করলেন। তারপর (অসুস্থতাহেতু) তথায় দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলেন।

২২৬। হাদীসঃ হযরত আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা জনৈক মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলল, হুযুর! আমাদের মধ্যকার কোন মহিলার যদি হায়েজ দেখা দেয়, আর হায়েজের রক্ত যদি কাপড়ে লেগে যায়, তখন সে কি করবে? উত্তরে হুযুর সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রথমত তা কাপড় থেকে ঘষে তুলে ফেলবে। তারপর পানিতে ভিজিয়ে ভালভাবে মন্থন করবে। অতঃপর পানি দ্বারা ধৌত করে নিবে। তারপর ঐ কাপড় দ্বারা নামায আদায় করবে (এ স্থলে অন্য কাপড় থাকলে তা ব্যবহার করাই উত্তম)।
২২৭। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতফাতেমা বিনতে আবী হোবায়েশ একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেনইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার ইস্তেহাযার রোগ আছেযার কারণে আমি কখনো পবিত্র থাকতে পারি না। তাই অপবিত্রতাহেতু আমি কি নামায পড়া ছেড়ে দেবউত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেননা। তোমার এ রক্ত রগ থেকে আসে। এটা হায়েজের রক্ত নয়। সুতরাং যখন তোমার হায়েজ দেখা দেয় তখন নামায ছেড়ে দিবেআর যখন হায়েজের দিনগুলো শেষ হয়ে যাবেতখন হায়েজের রক্ত ধৌত করে নিবেতারপর নামায আদায় করবে।
হেশাম বলেনআমার পিতা ওরওয়া থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনতুমি প্রত্যেক নামাযের পূর্বে অযু করে নিবে। পুনরায় তোমার হায়েজ দেখা দেয়া পর্যন্ত এমনিভাবে নামায আদায় করবে (ইস্তেহাযা অবস্থায়এ প্রক্রিয়ায় নামায আদায় করতে হবে)
২২৮। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাপড় থেকে মনি ধুয়ে দিতাম। তিনি উক্ত কাপড় পরে যখন নামাযে তাশরীফ নিতেনতখন তাঁর কাপড়ে পানির দাগ দেখা যেত।
২২৯। হাদীসঃ হযরত সোলায়মান বিন ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে 'মনিরহুকুম সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি বলেনআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাপড় থেকে মনি ধৌত করতাম। অতঃপর তিনি যখন নামায পড়ার জন্য বের হতেন তখনো তাঁর কাপড়ে পানি দ্বারা ধোয়ার চিহ্ন দেখা যেত।
২৩০। হাদীসঃ আমর ইবনে মাইমুন (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি সুলাইমান ইবনে ইয়াসারকে কাপড়ে লাগা বীর্য সম্পর্কে বলতে শুনেছিতিনি বলেন। আয়েশা (রাঃ) বলেছেনআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাপড় থেকে বীর্য ধুয়ে দিতাম। তারপর তিনি কাপড়ে ভিজা দাগসহ নামায পড়তে যেতেন।
২৩১। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাপড় থেকে মনি ধৌত করতাম। তারপরও তাঁর কাপড় দৌত করার এক বা একাধিক চিহ্ন কখনো কখনো দেখা যেত।
২৩২। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতএক সময় 'উকল অথবা ওরায়নাগোত্রের কিছু লোক মদীনায় আগমন করলকিন্তু মদীনার আবহাওয়া সহ্য না হওয়ায় তাদের পেটের পীড়া দেখা দেয়। সুতরাং রোগ নিরাময়ের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে দুগ্ধবতী উটের কাছে যাওয়ার জন্য আদেশ করনে। তাদেরকে আরো আদেশ করলেনতারা যেন সেগুলোর দুগ্ধ এবং প্রস্রাব পান করে। আদেশ মতে তারা তথায় চলে গেল। কিছুদিন পর আরোগ্য লাভ করলে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাখালকে হত্যা করে উটগুলো চুরি করে নিয়ে যেতে লাগলভোরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর নিকট খবর পৌছলে তিনি তাদের পেছনে একদল সাহাবাকে পাঠালেন। সাহাবাগণ তাদেরকে পাকড়াও করে দ্বিপ্রহরের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে নিয়ে আসলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশ শাস্তি স্বরুপ তাদের হাত পা কেটে চক্ষুগুলো ফুঁড়ে দেয়া হল। তারপর তাদেরকে উত্তপ্ত বালুর উপর অথবা হাব্বাহ নামক স্থানে ফেলে রাখা হল। তারা পিপাসায় কাতর হয়ে পানি চাইলেও তাদেরকে পানি দেয়া হয়নি। হযরত আবু কেলাবা (রাঃ) থেকে বর্ণিততারা এমন লোক যারা চুরি করেছিলমানুষ খুন করেছিলঈমান গ্রহণের পর কুফরী করেছিল এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করেছিল (তাই তাদের পরিণাম এত ভয়াবহ হয়েছিল)
২৩৩। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ নির্মিত হবার পূর্বে বকরীর খোয়াড়ে নামায আদায় করতেন। ইমাম যুহরী (রহঃ) বলেনপানিতে নাপাক বস্তু পড়ার পর যদি তার স্বাদগন্ধ এবং রং পরিবর্তন না হয়তা হলে উক্ত পানি ব্যবহারে কোন অসুবিধা নেই।
২৩৪। হাদীসঃ হযরত মায়মুনা (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ঐ ইঁদুর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যা ঘৃতের মধ্যে পড়েছে। উত্তরে তিনি ইরশাদ করেনঘৃতের পাত্রে যদি ইঁদুর পড়ে মারা যায় তখন উক্ত মৃত ইঁদুর ফেলে দাও এবং তার পার্শ্বস্থিত কিছু ঘৃতও ফেলে দাও। বাকী ঘৃত লোকেরা খেতে অথবা অন্য কাজে ব্যবহার করতে পার।
২৩৫। হাদীসঃ হযরত মায়মুনা (রঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ঘির মধ্যে ইদুর পড়ে যাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বলেন ইুঁদরটি এবং তার আশপাশ থেকে কিছুটা ফেলে দাও।
২৩৬। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনপ্রতিটি জখম যা কোন মুসলমান আল্লাহর রাস্তায় চলার কারণে পৌছে থাকেকেয়ামত দিবসে তার ঐ অবস্থাই থাকবে বা দেখা যাবে(যেমন তলোয়ার দ্বারা জখম হলে তলোয়ারের জখমের ন্যায়ই দেখা যাবে। আর বর্শা অথবা অন্য কিছু দ্বারা জখম হলে অনুরুপই দেখা যাবে) কেয়ামত দিবসে তা হতে রক্ত ঝরতে থাকবে। তার রং তো রক্তের ন্যায়ই হবেকিন্তু তার খোশবু মেশক আম্বরের ন্যায় মোহিত করতে থাকবে (এ হাদীসে শহীদদের মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে)
২৩৭। হাদীসঃ আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি রাসূল সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, "আমরা সর্বশেষে এবং সর্বাগ্রে"
২৩৮। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইরশাদ করতে শুনেছেনআমরা যদিও দুনিয়াতে শেষে আগমন করেছিকিন্তু আখেরাতে সবার আগে আগেই আমাদের সব কিছু সমাধা হবে। এ সম্বন্ধে আরো বর্ণিত হয়েছেতোমরা কেউ নিশ্চল পানিতে অর্থাৎ যে পানি প্রবাহিত হয় না তাতে প্রস্রাব করো না এবং সে পানিতে তোমরা গোলও করো না।
২৩৯। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতএক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহর কাছে নামায আদায় করছিলেন। তখন কাফের সর্দার আবু জাহল এবং তার সঙ্গী ওকবা বিন আবী মোআইত ও অন্যরা তথায় বসা ছিল। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নামায পড়তে দেখে পরস্পর বলাবলি করতে লাগলতোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে অমুক কওমের মধ্যে যে যুবক উটনী জবাই হয়েছে তার বাচ্চাদানী এনে মুহম্মদ যখন সেজাদ করবে তখন তার পিঠের উপর রাখতে পারবেএতদশ্রবণে উপস্থিত লোকদের মধ্যকার সর্বাপেক্ষা বদবকত 'ওকবা বিন আবী মোআইততা নিয়ে আসল এবং অপেক্ষা করতে লাগল। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সেজদায় গেলেন তখন সে উক্ত উজুড়িটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিঠ এবং উভয় স্কন্ধের মধ্যেবর্তী স্থানে রেখে দিল। ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনআমি সবকিছুই দেখছিলামকিন্তু করার কিছুই ছিল না। আমার শক্তি থাকলে হয়ত কিছু করা যেত।
ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঅতঃপর সে বদবখতগুলো হাসতে লাগল এবং একে অপরের উপর দোষ চাপাতে লাগল। হুযুর সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদারত ছিলেন। তিনি মাথা উঠাতে পারছিলেন না। ইত্যবসরে হযরত ফাতেমা (রাঃ) তথায় এসে তাঁর পিঠ থেকে তা ফেলে দিলে তিনি সেজদা থেকে মাথা উঠান। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য এ বদ দোআ করলেন-" হে আল্লাহ! আপনি এ কোরায়শদেরকে পাকড়াও করুন" রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বাক্য তিন বার বলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এরুপ বদদোআপূর্ণ বাক্য শুনতে পেয়ে তাদের কাছে বড়ই মর্মান্তিক মনে হতে লাগল। কারণ তাদের বিশ্বাস ছিলএ শহর অর্থাৎ পবিত্র মক্কায় যে দোআ করা হোক তা অবশ্যই কবুল হয়।
তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাম ধরে পৃথক পৃথকভাবে বললেনহে আল্লাহ! আপনি আবু জাহলকে পাকড়াও করুন। আপনি পাকড়াও করুন ওতবা বিন রবিয়াশায়বা বিন রবিয়াঅলীদ বিন ওতবাইমাইয়া বিন খালফ ও ওকবা বিন আবী মোঅইতকে। আর সপ্তম কোন ব্যক্তির নাম বলেছেন তা আমার স্মরণ নেই (সম্ভবত তার নাম অরীদ ইবনে মুগীরা)
হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনআমি আল্লাহ নামে শপথ করে বলছিরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে দিন যাদের নাম নিয়ে বদদোয়া করেছিলেনআমি তাদের সবাইকে বদরের গর্তে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখছি।
২৪০। হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননবী করীম সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় কাপড়ে থু থু ফেলেছেন।
২৪১। হাদীসঃ হযরত আয়শা (রাঃ) বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেনযে সকল শরাব নেশাকর তা হারাম।
২৪২। হযরত সাহল ইবনে সা'দ সায়েদী (রাঃ) থেকে বর্ণিতমানুষ তার কাছে জিজ্ঞাসা করেছেন (আবু হাযেম বলেনসে সময় তাঁর এবং আমার মধ্যখানে কেউ ছিলেন না) হযরত সাহলকে প্রশ্ন করা হয়েছিলওহুদ যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জখমের ওষুধ কি জিনিস দ্বারা করা হয়েছিলহযরত সাহল (রাঃ) বলেনবর্তমানে এ ব্যাপারে আমা হতে বেশি পরিজ্ঞাত অন্য কেউ বাকি নেই। ঘটনা হলহযরত আলী (রাঃ) ঢালে করে পানি নিয়ে আসতেন এবং হযরত ফাতেমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা হতে রক্ত ধৌত করতেন। অতঃপর একটা চাটাই নিয়ে আসা হলতারপর তা জ্বালানো হল এবং ছাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জখমে ভরে দেয়া হল।
২৪৩। হাদীসঃ হযরত আবু বোরদা (রাঃ) তাঁর পিতা আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস (আবু মূসা আশআরী (রাঃ) হতে রেওয়ায়েত করেনআমি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে উপস্থিত হলাম। আমি দেখতে পেলামতিনি স্বহাতে মেসওয়াক করছেন। মেসওয়াক তাঁর মুখে ছিল। তাঁর মুখ থেকে উআওয়াজ বের হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন তিনি বমি করছেন (মেসওয়াক করা সময় জিহ্বার গোড়া পরিষ্কার করতে মুখ থেকে এরুপ আওয়াজ বের হয়)
২৪৪। হাদীসঃ হযরত হোযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে যখন ঘুম থেকে গাত্রোত্থান করতেনতখন মিসওয়াক দ্বারা মুখ মোবারক পরিস্কার করতেন।
২৪৫। হাদীসঃ হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করনেআমি স্বপ্নে দেখলাম মেসওয়াক করছি। তখন আমার কাছে দু'জন ব্যক্তি আসলেনতাদের একজন অপর জন থেকে বয়সে বড়। আমি তাদের মধ্যে বড় ব্যক্তিকে মেসওয়াকটি প্রদান করলে আমাকে বলা হলোবড় ব্যক্তিকে প্রদান কর। অতঃপর আমি বড় ব্যক্তিকে মেসওয়াকটি প্রদান করলাম।
২৪৬। হাদীসঃ হযরত বারা বিন আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনযখন তুমি শয়ন করার জন্যে বিছানায় আসবেতার পূর্বে নামাযের অযুর ন্যায় অযু করে নিবেতারপর ডান পাঁজরের উপর শুয়ে পড়বে। তারপর নিম্নোক্ত দোআ পাঠ করবে-


অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আমাকে আপনার হাতে সোপর্দ করলাম। যাবতীয় ক্রিয়াকলাপসকল আশা ভরসা এবং ভয়ভীতি সহকারে আমি আমার পিঠ আপনার হাতে সোপর্দ করলাম। আপনি ব্যতীত আমার কোন আশ্রয়স্থল এবং পরিত্রাণস্তল নেই। হে আল্লাহ! আপনি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং যে নবী প্রেরণ করেছেনতাঁর উপর আমি ঈমান গ্রহণ করলাম।

0 comments:

Post a Comment

Thanks for your comments.