بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে
তায়াম্মুম পর্ব
মহান আল্লাহর বাণীঃ .....
অর্থঃ এবং তোমরা পানি না পেলে পাক মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে। মাটি দ্বারা মুখমন্ডল ও হাতদ্বয় মোসেহ করো।
৩২৮। হাদসীঃ হযরত উম্মুল মো'মেনীন হযরত আয়েমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমরা বনী মুসতালেক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হয়েছিলাম। আমরা 'বায়দা' অথবা 'য়াতুলজায়েশ' নামক স্থানে পৌছলে তথায় আমার গলার হার ছিড়ে পড়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা তালাশ করার জন্য তথায় অপেক্ষা করেন। সাহাবায়ে কেরামও তার সাথে অপেক্ষা করলেন, কিন্তুু তথায় আশেপাশে কোথাও পানির ব্যবস্থা ছিল না্ তাই লোকজন হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর কাছে এসে বললেন, আপনি কি দেখছেন না, আয়েশা কি করল! সে তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং লোকদেরকে এখানে অবস্থান করাল। অথচ অবস্থা হল, এখানে আশেপাশে কোথাও পানি নেই এবং লোকদের কাছেও কোন পানি নেই । অতঃপর আবু বকর (রাঃ) এমন সময় আমার কাছে আগমন করলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার রানের উপর মাথা রেখে নিদ্রা যাচ্ছিলেন। তখন হযরত আবু বকর (রাঃ) আমাকে রাগতঃস্বরে বললেন, তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং লোকদের যাত্রা বন্ধ করে দিয়েছ। এখানে আশেপাশে কোথাও পানি নেই এবং লোকদের কাছেও নেই।
হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আবু বকর (রাঃ) আমাকে এ অবস্থার জন্য দোষারোপ করতে লাগলেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় অনেক কিছু বললেন, হাতে আমার কোমরে আঘাত করতে লাগলেন। সে সময় নড়াচড়া করতে আমাকে কিছুই নিষেধ করেননি; বরং আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু আমার রানের উপর মাথা রেখে শুয়েছিলেন, তাই আমি নড়াচড়া করিনি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাতঃকালে যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হন, তখন তথায় কোন পানি ছিল না্ মহান আল্লাহ তা'আলা তখন তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করলেন। অতঃপর সাহাবাদের সবাই তায়াম্মুম করলেন। হযরত ওসায়েদ ইবনে হোযায়ের (রাঃ) বললেন, হে আবু বকরের বংশধরগণ ! এটা তোমাদের প্রথম বরকত নয় কি? হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি যে উটে আরোহণ করেছিলাম, যখন আমরা সেটি উঠালাম, তখন দেখতে পেলাম, হারটি নিচে পড়ে রয়েছে।
৩২৯। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মহান আল্লাহ আমাকে এমন পাঁচটি নেয়ামত দান করেছেন, যা আমার পূর্বে অন্য কাউকে দান করেননি। সেগুলো হল (১) শত্রুদের মোকাবিলায় এক মাসের দূরত্ব পর্যন্ত লোকদের উপর প্রভাব ও ভয় ভীতি প্রদান করে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। (২) আমার জন্য এ যমীনকে সেজদার স্থান হিসেবে পবিত্রতম করা হয়েছে। সুতরাং আমার উম্মতের যে কেউ যে স্থানে নামাযের সময় পাবে, তথায় সে নামায আদায় করতে পারে। (৩) আমার জন্য গনীমতের মাল হালাল করা হয়েছে, আমার পূর্বে কারো জন্যে তা হালাল করা হয়নি। (৪) আমাকে শাফাআত করা রসুযোগ প্রদান করা হয়েছে (যা অন্য কাউকে প্রদান করা হয়নি) । (৫) আমার পূর্বেকার নবীগণকে বিশেষ করে তাদের গোত্রের কাছে আর আমাকে বিশ্বের সকল গোত্র ও জাতির কাছে বিশ্বনবী করে প্রেরণ করা হয়েছে।
৩৩০। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক সময় তিনি হযরত আসমা বিনতে আবী বকর (রাঃ) হতে একখানা হার ধার নিয়েছিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে হার ছড়া যেকানে হারানো গেছে, বলে মনে হয়, সে স্থানে পাঠান। তিনি উক্ত হারখানা পেলেন। সে সময় লোকদের উপর নামাযের সময় এসে পড়ল। অথচ তাদের কাছে পানি ছিল না। তাই লোকেরা অযু ব্যতীতই নামায আদায় করেন। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এর অভিযোগ করলেন। অতঃপর মহান আল্লাহ তায়াম্মুমের আয়াত অবতীর্ণ করেন। ওসায়দ ইবনে হোযায়র (রাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে বললেন, আল্লাহ আপনাকে এর প্রতিফল দান করুন। আল্লাহর শপথ! এমন কোন কাজ আপনার উপর আসেনি যা আপনি অপছন্দ করেছেন; বরং সে কাজে আল্লাহ আপনার এবং সকল মুসলমানদের জন্যে এক প্রকার মঙ্গল নিহিত রেখেছেন।
৩৩১। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর গোলাম হযরত ওমায়ের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াসার (উম্মুল মো’মেনীন হযরত মায়মুনা (রাঃ)-এর গোলাম) ‘আবু জোহায়েম বিন হারেস বিন সিম্মাতুল আনসারী (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তিনি অমাাদেরকে বললেন, এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বি’রে জামাল নামক স্থান থেকে আগমন করলেন। এ সময় তাঁর সাথে এক ব্যক্তির সাক্ষাৎ হলে সে তাকে সালাম করল, কিন্তু তিনি তার সালামের জবাব দিলেন না। এক দেয়ালের কাছে আসলেন। অতঃপর দেয়ালে হাত মেরে মুখমন্ডল এবং হাতদ্বয় কনুই পর্যন্ত মাসে করলেন। অর্থাৎ তিনি তায়াম্মুম করলেন, তারপর লোকটির সালামের জবাব দিলেন।
৩৩২। হাদীসঃ হযরত সাঈদ ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আবযা (রাঃ) তাঁর পিতা আবদুর রহমান থেকে রেওয়ায়াত করেন, একদা জনৈক ব্যক্তি হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে বললেন, আমি ‘জুনুবী’ হয়েছি, অর্থাৎ আমার গোসল ফরয হয়েছে, কিন্তু আমার কাছে পানি নেই। একখ কি করব? তখন হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসার (রাঃ) হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)-কে বললেন, আপনার কি স্মরণ নেই, আমি এবং আপনি এক সফরে ছিলাম। আমরা যখন জুনুবী হলাম তখন আপনি তো নামাযই পড়লেন না। আর আমি মাটির সাথে উলট-পালট খেলাম তারপর নামায আদায় করলাম। অতঃপর আমি এ ঘটনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে প্রকাশ করলাম। তিনি আমার কথা শুনে বললেন, তোমরা তো এরুপ করলেই যথেষ্ট হত, তারপর তিনি আমাকে তায়াম্মুমের প্রকৃতি দেখাবার জন্য তাঁর হাতদ্বয় মাটিতে মারলেন এবং তাতে ফুঁক দিলেন। অতঃপর তাঁর মুখমন্ডল এবং হাতদ্বয় কনুইসহ মাসেহ করলেন।
৩৩৩। হাদীসঃ হযরত সাঈদ ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আবযা (রাঃ) তাঁর পিতা আবদুর রহমান হতে রেওয়ায়াত করেন, আম্মার (রাঃ) বলেছেন, এভাবে (পূর্বোক্ত হাদীসের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে)। আর হযরত শো’বা বলেন, তিনি হাতদ্বয় যমীনে মেরে মুখের কাছে নিয়ে আসেন। অতঃপর মুখমন্ডল এবং হাতদ্বয় কনুই পর্যন্ত মাসেহ করেন।
৩৩৪। হাদীসঃ হযরত সাঈদ ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আবযা (রাঃ) তাঁর পিতা আবদুর রহমান থেকে রেওয়ায়াত করেন, তিনি হযরত ওমর (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হলে হযরত আম্মার (রাঃ) তাঁকে বললেন, আমরা এক ‘সারিয়্যা’ (ক্ষুদ্র সৈন্য দলে) ছিলাম। আমরা সে যুদ্ধে অধিকাংশই জুনুবী হয়ে পড়লাম। অর্থাৎ আমাদের উপর গোসল ফরয হয়ে গেল। অতঃপর বললেন, হাতদ্বয়ে ফুঁক দিয়েছিলেন।
৩৩৫। হাদীসঃ হযরত সাঈদ ইবনে আবদুর রহমান (রাঃ) তাঁর পিতা আবদুর রহমান থেকে রেওয়ায়াত করেন, হযরত আম্মার (রাঃ) হযরত ওমর (রাঃ)-কে বললেন, আমি মাটির সাথে গড়াগড়ি দিলাম। অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলাম। তিনি অবস্থা জেনে বললেন, তোমার জন্য (তায়াম্মুম) মুখমন্ডল এবং হাতদ্বয় কনুই পর্যন্ত মাসে করাই যথেষ্ট।
৩৩৬। হাদীসঃ হযরত আবদুর রহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম, ‘আম্মার (রাঃ) তাঁকে বললেন...... এরপর রাবী পূর্বের হাদীসটি বর্ণনা করেন।
৩৩৭। হাদীসঃ হযরত সাঈদ ইবনে আবদুর রহমান (রাঃ) তাঁর পিতা আবদুর রহমান (রাঃ) থেকে রেওয়ায়াত করেন, হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসার (রাঃ) বলেছেন, অতঃপর নবী করীম সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের হস্তদ্বয় যমীনে মারলেন। তারপর তা দ্বারা মুখমন্ডল এবং হাতদ্বয় কনুই পর্যন্ত মাসেহ করলেন।
৩৩৮। হাদীসঃ হযরত ইমরান বিন হোসাইন (রাঃ) বলেন, আমরা এক সফরে নবী করীম সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। আমরা রাত্রে সফর করলাম। সফর করতে করতে রাত্র প্রায় শেষ ভাগে এসে গেল। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে আমরা সবাই নিদ্রামগ্ন হয়ে পড়লাম। ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মুসাফিরের জন্য এ নিদ্রা যে কত আরামদায়ক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সুতরাং সেদিন আমাদের কেউই জাগাতে সক্ষম হয়নি; বরং সূর্যের তাপ অামাদেরকে জাগ্রত করেছে। সর্বপ্রথম আমাদের মধ্যে অমুক জাগ্রত হন, তারপর অমুক, তারপর অমুক। হযরত আবু রাজা প্রত্যেকের নাম উল্লেখ করেছিলেন, কিন্তু হযরত আওফ তাঁদের নাম ভুলে গেছেন। হযরত ওমর (রাঃ) জাগ্রত হয়ে, মানুষের অবস্থা দেখতে পেলেন। তিনি একজন সাহসী বীর পুরুষ ছিলেন। তাই বড় আওয়াজে তাবকীর বলতে লাগলেন। তিনি এমনিভাবে তাকবীর বলতেই রইলেন আর আওয়াজ ক্রমেই বড় করতে লাগলেন। এমন কি তাঁর তাকবীরের আওয়াজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হলেন। তিনি জাগ্রত হলে লোকেরা তাঁর কাছে অভিযোগ নিয়ে আসলেন, যা তাঁদের মধ্যে ঘটেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের অভিযোগ শুনে বললেন, কোন দোষ নেই। তোমরা এখান থেকে সম্মুখে যাত্রা কর।
উক্ত ব্যক্তি বললেন, হুযুর! আমার উপর গোসল ওয়াজিব হয়েছে, পানি নেই, তাই নামায আদায় করতে পারিনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার জন্য তো পবিত্র মাটি আছে, তাই যথেষ্ট। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথা হতে সাহাবাদেরকে নিয়ে যাত্রা করলেন। লোকেরা তাঁর কাছে পিপাসার্ত হওয়ার অভিযোগ করলেন। তিনি তথায় অবতরণ করলেন এবং অমুককে ডাকলেন (আবু রাজা তাঁর নাম উল্লেখ করেছেন, কিন্তু আওফ তা ভুলে গেছেন (তিনি ইমরান, হাদীস বর্ণনাকারী)। তারপর হযরত আলী (রাঃ)-কেও ডাকলেন এবং বললেন, তোমরা উভয়ে যাও, কোথায় পানি আছে তালাশ কর। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমরা উভয়ে পানির তালাশে বের হলাম। হঠাৎ পথিমধ্যে এক মহিলা তার উটের উপর দু’টি মশক পানির্ভতি অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তাঁরা মহিলাকে বললেন, পানি কোথায় আছে। মহিলা বলল, অামি গতকল্য পানির কাছে ছিলাম। আমার সাথী পুরুষ পেছনে রয়ে গেছে। তাঁরা মহিলাকে বললেন, আচ্ছা তুমি আমাদের সাথে চল। মহিলা বলল, কোথায়? তাঁরা বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে। মহিলা বলল, আচ্ছা। যাকে ‘সাবী’ বলা হয়। তাঁরা বললেন, হাঁ। তুমি যা উদ্দেশ্য করেছ সেখানেই চল। অতঃপর তাঁরা উক্ত মহিলাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে নিয়ে আসলেন এবং সব ঘটনা খুলে বললেন। বর্ণনাকারী বলেন, সাহাবায়ে কেরাম তাঁকে উক্ত মশকদ্বয় তার উটের পিঠ থেকে নামাবার জন্য বললেন। এ দিকে নবী করীম সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি পাত্র নিয়ে আসতে নির্দেশ দেন। অতঃপর মশকদ্বয়ের মুখ খুলে সামান্য কিছু পানি নিয়ে (মশকের মুখে কুলি করে) পুনরায় বন্ধ করে দিলেন। অতঃপর মশকদ্বয়ের নীচের ছোট মুখ খুলে সাহাবাদের মধ্যে ঘোষণা করেন, তোমাদের যার ইচ্ছা পানি পান কর এবং অপরকেও পান করাও। অতঃপর উক্ত মহিলা তথা হতে বিদায় হয়ে তার গোত্রের লোকদের কাছে আসল। অথচ তার দেরী হয়ে গিয়েছিল। তাই তারা তাকে বলল, এতক্ষণ তুমি কোথায় ছিলে? সে বলল, এক আশ্চর্য ঘটনা আমাকে দেরী করিয়েছে। ঘটনা হল, পথিমধ্যে দু’ব্যক্তির সাথে আমার দেখা হয়। তারা আমাকে সে লোকটির কাছে নিয়ে গিয়েছিল, যাকে ‘সাবী’ বলা হয়ে থাকে। অতঃপর তারা এরুপ ঘটনা করল। আল্লাহর শপথ, ঐ লৈাকটি সর্বাপেক্ষা বড় যাদুকর বলে মনে হচ্ছে। এ কথা বলে সে তার মধ্যমা এবং শাহাদত অঙ্গুলি দ্বারা আসমান যমীনের দিকে ইশারা করে দেখাল, নিঃসন্দেহে তিনি আল্লাহর রাসূল। অতঃপর মুসলিম সৈন্যদল আশপাশের এলাকার মুশরিকদের মালামাল লুটপাট করতে লাগল, কিন্তু ঐ মহিলার খা্ন্দানের লোকদের উপর এর কিছুই ঘটল না। তারা সবাই নিরাপদ রয়ে গেলে। অতঃপর ঐ মহিলা একদিন তার খান্দানের লোকদেরকে বলল, আমার ধারণা, মুসলিম সৈন্যগণ ইচ্ছাকৃত তোমাদেরকে তাদের লুটপাট হতে রক্ষা করেছে। এখন ইসলামের প্রতি তোমাদের কোন ইচ্ছা আছে? খান্দানের লোকেরা তার কথা মেনে সবাই ইসলাম গ্রহণ করল।
হযরত ইমাম বোখারী (রঃ) বলেন, ‘সাবউন’ শব্দের অর্থ এক ধর্ম ছেড়ে অন্য ধর্ম গ্রহণ করা। আবুল আলিয়া বলেন, ‘সাবী’ আহলে কিতাবদের একটি দল। যারা যাবুর কিতাব তেলাওয়াত করে থাকে। ‘আসবু’ অর্থ আমি ঝুঁকে পড়ব।
৩৩৯। হাদীসঃ হযরত আবু ওয়ায়েল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে বললেন, জুনুবী (গোসল ওয়াজিব) ব্যক্তি যদি পানি না পায়, সে কি নামায পড়বে না? তিনি বললেন, হাঁ। আমরা যদি এক মাস পর্যন্তও পানি না পাই; আমরা কি নামায আদায় করব না? আমরা যদি এ ব্যাপারে মানুষদেরকে অবকাশ (সুযোগ) দেই, আর কেউ যদি ঠান্ডা পায়, তা হলে সে এরুপই করবে। অর্থাৎ তায়াম্মুম করে নামায পড়বে। তখন হযরত আবু মূসা (রাঃ) বললেন, তা হলে হযরত আম্মার (রাঃ) হযরত ওমর (রাঃ)-কে যে কথা বলেছিলেন, সে ব্যাপারে আপনার কি অভিমত? ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, আমি তো মনে করি, আম্মার (রাঃ)-এর কথায় হযরত ওমর (রাঃ) সন্তুষ্ট হতে পারেননি।
৩৪০। হাদীসঃ হযরত শাকীক ইবনে সালাম (রাঃ) বলেন, একদা আমি হযরত আবু মূসা আশআরী এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। হযরত আবু মূসা (রাঃ) হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলেন, হে আবু আবদুর রহমান! কেউ যদি জুনুব হয় আর পানি না পায়, তা হলে সে কি করবে? আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, সে পানি না পাওয়া পর্যন্ত নামায পড়বে না। আবু মূসা (রাঃ) বরলেন, তা হলে আপনি হযরত আম্মার (রাঃ)-এর উক্তি সম্পর্কে কি করবেন? যখন নবী করীম সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেন, তোমার জন্য এটাই (তায়াম্মুম) যথেষ্ট। তখন ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, আপনি কি দেখেননি; হযরত ওমর (রাঃ) এতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তখন আবু মূসা (রাঃ) বললেন, আচ্ছা! হযরত আম্মারের কথা বাদ দিন। আপনি কোরআনের তায়াম্মুমের আয়াত সম্পর্কে কি বলবেন? আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এ সম্পর্কে কিছুই বলতে পারলেন না, বরং চুপ রইলেন। তারপর আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, আমরা যদি মাসআলা সম্পর্কে লোকদেরকে অবকাশ দেই; তা হলে হতে পারে কারো ঠান্ডা লাগলে সে পানি ছেড়ে দিবে এবং তায়াম্মু করবে। আবু মূসা (রাঃ) বলেন, তখন আমি শাকীককে বললাম, এ কারণেই হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) তায়াম্মুমের অনুমতি দিচ্ছেন না, তখন তিনি বললে, জি হ্যাঁ।
৩৪১। হাদীসঃ হযরত শাকীক ইবনে সালাম (রাঃ) বলেন, একদা আমি আবু মূসা আশআরী এবং আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। তখন আবু মূসা (রাঃ) ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে বললেন, যদি কেউ জুনুবী হয় এবং এক মাস পর্যন্ত পানি না পায়, সে কি তায়াম্মুম করে নামায আদায় করবে? বর্ণনাকারী বলেন, তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, যদি সে দীর্ঘ এক মাস পর্যন্তও পানি না পায়, তবুও তায়াম্মুম করবে না।
তখন আবু মূসা (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে বললেন, তা হলে আপনি সূরা মায়েদার (যদি তোমরা পানি না পাও, তখন পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর) আয়াত সম্পর্কে কি বলবেন? তখন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, ”যদি এতে লোকদেরকে অবকাশ দেয়া হয়, তা হলে অবস্থা হবে, লোকদের কাছে পানি ঠান্ডা লাগলে তারা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে। তখন আমি বললাম, এ কারণেই কি আপনারা তায়াম্মুম অপছন্দ করনে? অতঃপর হযরত আবু মূসা (রাঃ) বললেন, হযরত আম্মার (রাঃ) হযরত ওমর (রাঃ)-কে যা বলেছিলেন তা আপনি কি শুনেননি? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এক প্রয়োজনে পাঠিয়েছিলেন, অতঃপর আমি জুনুবী হওয়ায় পাক মাটির সাথে গড়াগড়ি খেলাম, যেমন চতুষ্পদ জন্তু গড়াগড়ি খায়। অতঃপর আমি এ ঘটনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অবহিত করলে তিনি বলেন, তোমার জন্য এরুপ করাই যথেষ্ট হত। তারপর তিনি স্বীয় হস্তদ্বয় মাটিতে মারলেন এবং ঝেড়ে নিলেন। তারপর ডান হাত দ্বারা বাম হাতের পিঠ ও বাম হাত দ্বারা ডান হাতের পিঠ মাসেহ করলেন এবং উক্ত হস্ত দ্বারা মুখমন্ডলও মাসেহ করলেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, আপনি কি দেখেননি হযরত ওমর (রাঃ) আম্মার (রাঃ)-এর কথায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি?
ইয়া’লা ইবনে ওবায়েদ হযরত শাকীক থেকে হযরত আ’মাশ (রাঃ)-এর রেওয়ায়াতে আরো বাড়িয়ে বলেছেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এবং আবু মূসা আশআরী (রাঃ)-এর কাছে ছিলাম। তখন আবু মূসা (রাঃ) যে কথা বলেছিলেন আপনি কি তা শুনেননি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এবং আপনাকে কোন এক খন্ডযুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। জুনুবী হওয়ায় আমি মাটির উপর উলটপালট খেলাম। অতঃপর আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে তাঁকে এ ঘটনা অবহিত করলাম। তখন তিনি বলেছিলেন, তোমার জন্য এটাই যথেষ্ট হত। অতঃপর তিনি স্বীয় মুখমন্ডল এবং হাতদ্বয়ে একবার করে মাসেহ করলেন।
৩৪২। হাদীসঃ হযরত ইমরান ইবনে হোসাইনুল খোযায়ী (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে দলের লোকদের থেকে দূরে একাকী অবস্থায় দেখতে পেলেন, যে তাদের সাথে নামায আদায় করেনি। তিনি সে লোককে ডেকে বললেন, হে অমুক! কওমের সাথে নামায আদায় করতে কিসে তোমায় বারণ রেখেছে? সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার জানাবত দেখা দিয়েছে, অথচ পানি নেই। হুযুর সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমার জন্য পবিত্র মাটি দরকার, তাই তোমার জন্য যথেষ্ট।
৩৩০। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক সময় তিনি হযরত আসমা বিনতে আবী বকর (রাঃ) হতে একখানা হার ধার নিয়েছিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে হার ছড়া যেকানে হারানো গেছে, বলে মনে হয়, সে স্থানে পাঠান। তিনি উক্ত হারখানা পেলেন। সে সময় লোকদের উপর নামাযের সময় এসে পড়ল। অথচ তাদের কাছে পানি ছিল না। তাই লোকেরা অযু ব্যতীতই নামায আদায় করেন। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এর অভিযোগ করলেন। অতঃপর মহান আল্লাহ তায়াম্মুমের আয়াত অবতীর্ণ করেন। ওসায়দ ইবনে হোযায়র (রাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে বললেন, আল্লাহ আপনাকে এর প্রতিফল দান করুন। আল্লাহর শপথ! এমন কোন কাজ আপনার উপর আসেনি যা আপনি অপছন্দ করেছেন; বরং সে কাজে আল্লাহ আপনার এবং সকল মুসলমানদের জন্যে এক প্রকার মঙ্গল নিহিত রেখেছেন।
৩৩১। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর গোলাম হযরত ওমায়ের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াসার (উম্মুল মো’মেনীন হযরত মায়মুনা (রাঃ)-এর গোলাম) ‘আবু জোহায়েম বিন হারেস বিন সিম্মাতুল আনসারী (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তিনি অমাাদেরকে বললেন, এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বি’রে জামাল নামক স্থান থেকে আগমন করলেন। এ সময় তাঁর সাথে এক ব্যক্তির সাক্ষাৎ হলে সে তাকে সালাম করল, কিন্তু তিনি তার সালামের জবাব দিলেন না। এক দেয়ালের কাছে আসলেন। অতঃপর দেয়ালে হাত মেরে মুখমন্ডল এবং হাতদ্বয় কনুই পর্যন্ত মাসে করলেন। অর্থাৎ তিনি তায়াম্মুম করলেন, তারপর লোকটির সালামের জবাব দিলেন।
৩৩২। হাদীসঃ হযরত সাঈদ ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আবযা (রাঃ) তাঁর পিতা আবদুর রহমান থেকে রেওয়ায়াত করেন, একদা জনৈক ব্যক্তি হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে বললেন, আমি ‘জুনুবী’ হয়েছি, অর্থাৎ আমার গোসল ফরয হয়েছে, কিন্তু আমার কাছে পানি নেই। একখ কি করব? তখন হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসার (রাঃ) হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)-কে বললেন, আপনার কি স্মরণ নেই, আমি এবং আপনি এক সফরে ছিলাম। আমরা যখন জুনুবী হলাম তখন আপনি তো নামাযই পড়লেন না। আর আমি মাটির সাথে উলট-পালট খেলাম তারপর নামায আদায় করলাম। অতঃপর আমি এ ঘটনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে প্রকাশ করলাম। তিনি আমার কথা শুনে বললেন, তোমরা তো এরুপ করলেই যথেষ্ট হত, তারপর তিনি আমাকে তায়াম্মুমের প্রকৃতি দেখাবার জন্য তাঁর হাতদ্বয় মাটিতে মারলেন এবং তাতে ফুঁক দিলেন। অতঃপর তাঁর মুখমন্ডল এবং হাতদ্বয় কনুইসহ মাসেহ করলেন।
৩৩৩। হাদীসঃ হযরত সাঈদ ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আবযা (রাঃ) তাঁর পিতা আবদুর রহমান হতে রেওয়ায়াত করেন, আম্মার (রাঃ) বলেছেন, এভাবে (পূর্বোক্ত হাদীসের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে)। আর হযরত শো’বা বলেন, তিনি হাতদ্বয় যমীনে মেরে মুখের কাছে নিয়ে আসেন। অতঃপর মুখমন্ডল এবং হাতদ্বয় কনুই পর্যন্ত মাসেহ করেন।
৩৩৪। হাদীসঃ হযরত সাঈদ ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আবযা (রাঃ) তাঁর পিতা আবদুর রহমান থেকে রেওয়ায়াত করেন, তিনি হযরত ওমর (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হলে হযরত আম্মার (রাঃ) তাঁকে বললেন, আমরা এক ‘সারিয়্যা’ (ক্ষুদ্র সৈন্য দলে) ছিলাম। আমরা সে যুদ্ধে অধিকাংশই জুনুবী হয়ে পড়লাম। অর্থাৎ আমাদের উপর গোসল ফরয হয়ে গেল। অতঃপর বললেন, হাতদ্বয়ে ফুঁক দিয়েছিলেন।
৩৩৫। হাদীসঃ হযরত সাঈদ ইবনে আবদুর রহমান (রাঃ) তাঁর পিতা আবদুর রহমান থেকে রেওয়ায়াত করেন, হযরত আম্মার (রাঃ) হযরত ওমর (রাঃ)-কে বললেন, আমি মাটির সাথে গড়াগড়ি দিলাম। অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলাম। তিনি অবস্থা জেনে বললেন, তোমার জন্য (তায়াম্মুম) মুখমন্ডল এবং হাতদ্বয় কনুই পর্যন্ত মাসে করাই যথেষ্ট।
৩৩৬। হাদীসঃ হযরত আবদুর রহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম, ‘আম্মার (রাঃ) তাঁকে বললেন...... এরপর রাবী পূর্বের হাদীসটি বর্ণনা করেন।
৩৩৭। হাদীসঃ হযরত সাঈদ ইবনে আবদুর রহমান (রাঃ) তাঁর পিতা আবদুর রহমান (রাঃ) থেকে রেওয়ায়াত করেন, হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসার (রাঃ) বলেছেন, অতঃপর নবী করীম সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের হস্তদ্বয় যমীনে মারলেন। তারপর তা দ্বারা মুখমন্ডল এবং হাতদ্বয় কনুই পর্যন্ত মাসেহ করলেন।
৩৩৮। হাদীসঃ হযরত ইমরান বিন হোসাইন (রাঃ) বলেন, আমরা এক সফরে নবী করীম সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। আমরা রাত্রে সফর করলাম। সফর করতে করতে রাত্র প্রায় শেষ ভাগে এসে গেল। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে আমরা সবাই নিদ্রামগ্ন হয়ে পড়লাম। ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মুসাফিরের জন্য এ নিদ্রা যে কত আরামদায়ক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সুতরাং সেদিন আমাদের কেউই জাগাতে সক্ষম হয়নি; বরং সূর্যের তাপ অামাদেরকে জাগ্রত করেছে। সর্বপ্রথম আমাদের মধ্যে অমুক জাগ্রত হন, তারপর অমুক, তারপর অমুক। হযরত আবু রাজা প্রত্যেকের নাম উল্লেখ করেছিলেন, কিন্তু হযরত আওফ তাঁদের নাম ভুলে গেছেন। হযরত ওমর (রাঃ) জাগ্রত হয়ে, মানুষের অবস্থা দেখতে পেলেন। তিনি একজন সাহসী বীর পুরুষ ছিলেন। তাই বড় আওয়াজে তাবকীর বলতে লাগলেন। তিনি এমনিভাবে তাকবীর বলতেই রইলেন আর আওয়াজ ক্রমেই বড় করতে লাগলেন। এমন কি তাঁর তাকবীরের আওয়াজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হলেন। তিনি জাগ্রত হলে লোকেরা তাঁর কাছে অভিযোগ নিয়ে আসলেন, যা তাঁদের মধ্যে ঘটেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের অভিযোগ শুনে বললেন, কোন দোষ নেই। তোমরা এখান থেকে সম্মুখে যাত্রা কর।
উক্ত ব্যক্তি বললেন, হুযুর! আমার উপর গোসল ওয়াজিব হয়েছে, পানি নেই, তাই নামায আদায় করতে পারিনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার জন্য তো পবিত্র মাটি আছে, তাই যথেষ্ট। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথা হতে সাহাবাদেরকে নিয়ে যাত্রা করলেন। লোকেরা তাঁর কাছে পিপাসার্ত হওয়ার অভিযোগ করলেন। তিনি তথায় অবতরণ করলেন এবং অমুককে ডাকলেন (আবু রাজা তাঁর নাম উল্লেখ করেছেন, কিন্তু আওফ তা ভুলে গেছেন (তিনি ইমরান, হাদীস বর্ণনাকারী)। তারপর হযরত আলী (রাঃ)-কেও ডাকলেন এবং বললেন, তোমরা উভয়ে যাও, কোথায় পানি আছে তালাশ কর। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমরা উভয়ে পানির তালাশে বের হলাম। হঠাৎ পথিমধ্যে এক মহিলা তার উটের উপর দু’টি মশক পানির্ভতি অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তাঁরা মহিলাকে বললেন, পানি কোথায় আছে। মহিলা বলল, অামি গতকল্য পানির কাছে ছিলাম। আমার সাথী পুরুষ পেছনে রয়ে গেছে। তাঁরা মহিলাকে বললেন, আচ্ছা তুমি আমাদের সাথে চল। মহিলা বলল, কোথায়? তাঁরা বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে। মহিলা বলল, আচ্ছা। যাকে ‘সাবী’ বলা হয়। তাঁরা বললেন, হাঁ। তুমি যা উদ্দেশ্য করেছ সেখানেই চল। অতঃপর তাঁরা উক্ত মহিলাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে নিয়ে আসলেন এবং সব ঘটনা খুলে বললেন। বর্ণনাকারী বলেন, সাহাবায়ে কেরাম তাঁকে উক্ত মশকদ্বয় তার উটের পিঠ থেকে নামাবার জন্য বললেন। এ দিকে নবী করীম সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি পাত্র নিয়ে আসতে নির্দেশ দেন। অতঃপর মশকদ্বয়ের মুখ খুলে সামান্য কিছু পানি নিয়ে (মশকের মুখে কুলি করে) পুনরায় বন্ধ করে দিলেন। অতঃপর মশকদ্বয়ের নীচের ছোট মুখ খুলে সাহাবাদের মধ্যে ঘোষণা করেন, তোমাদের যার ইচ্ছা পানি পান কর এবং অপরকেও পান করাও। অতঃপর উক্ত মহিলা তথা হতে বিদায় হয়ে তার গোত্রের লোকদের কাছে আসল। অথচ তার দেরী হয়ে গিয়েছিল। তাই তারা তাকে বলল, এতক্ষণ তুমি কোথায় ছিলে? সে বলল, এক আশ্চর্য ঘটনা আমাকে দেরী করিয়েছে। ঘটনা হল, পথিমধ্যে দু’ব্যক্তির সাথে আমার দেখা হয়। তারা আমাকে সে লোকটির কাছে নিয়ে গিয়েছিল, যাকে ‘সাবী’ বলা হয়ে থাকে। অতঃপর তারা এরুপ ঘটনা করল। আল্লাহর শপথ, ঐ লৈাকটি সর্বাপেক্ষা বড় যাদুকর বলে মনে হচ্ছে। এ কথা বলে সে তার মধ্যমা এবং শাহাদত অঙ্গুলি দ্বারা আসমান যমীনের দিকে ইশারা করে দেখাল, নিঃসন্দেহে তিনি আল্লাহর রাসূল। অতঃপর মুসলিম সৈন্যদল আশপাশের এলাকার মুশরিকদের মালামাল লুটপাট করতে লাগল, কিন্তু ঐ মহিলার খা্ন্দানের লোকদের উপর এর কিছুই ঘটল না। তারা সবাই নিরাপদ রয়ে গেলে। অতঃপর ঐ মহিলা একদিন তার খান্দানের লোকদেরকে বলল, আমার ধারণা, মুসলিম সৈন্যগণ ইচ্ছাকৃত তোমাদেরকে তাদের লুটপাট হতে রক্ষা করেছে। এখন ইসলামের প্রতি তোমাদের কোন ইচ্ছা আছে? খান্দানের লোকেরা তার কথা মেনে সবাই ইসলাম গ্রহণ করল।
হযরত ইমাম বোখারী (রঃ) বলেন, ‘সাবউন’ শব্দের অর্থ এক ধর্ম ছেড়ে অন্য ধর্ম গ্রহণ করা। আবুল আলিয়া বলেন, ‘সাবী’ আহলে কিতাবদের একটি দল। যারা যাবুর কিতাব তেলাওয়াত করে থাকে। ‘আসবু’ অর্থ আমি ঝুঁকে পড়ব।
৩৩৯। হাদীসঃ হযরত আবু ওয়ায়েল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে বললেন, জুনুবী (গোসল ওয়াজিব) ব্যক্তি যদি পানি না পায়, সে কি নামায পড়বে না? তিনি বললেন, হাঁ। আমরা যদি এক মাস পর্যন্তও পানি না পাই; আমরা কি নামায আদায় করব না? আমরা যদি এ ব্যাপারে মানুষদেরকে অবকাশ (সুযোগ) দেই, আর কেউ যদি ঠান্ডা পায়, তা হলে সে এরুপই করবে। অর্থাৎ তায়াম্মুম করে নামায পড়বে। তখন হযরত আবু মূসা (রাঃ) বললেন, তা হলে হযরত আম্মার (রাঃ) হযরত ওমর (রাঃ)-কে যে কথা বলেছিলেন, সে ব্যাপারে আপনার কি অভিমত? ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, আমি তো মনে করি, আম্মার (রাঃ)-এর কথায় হযরত ওমর (রাঃ) সন্তুষ্ট হতে পারেননি।
৩৪০। হাদীসঃ হযরত শাকীক ইবনে সালাম (রাঃ) বলেন, একদা আমি হযরত আবু মূসা আশআরী এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। হযরত আবু মূসা (রাঃ) হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলেন, হে আবু আবদুর রহমান! কেউ যদি জুনুব হয় আর পানি না পায়, তা হলে সে কি করবে? আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, সে পানি না পাওয়া পর্যন্ত নামায পড়বে না। আবু মূসা (রাঃ) বরলেন, তা হলে আপনি হযরত আম্মার (রাঃ)-এর উক্তি সম্পর্কে কি করবেন? যখন নবী করীম সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেন, তোমার জন্য এটাই (তায়াম্মুম) যথেষ্ট। তখন ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, আপনি কি দেখেননি; হযরত ওমর (রাঃ) এতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তখন আবু মূসা (রাঃ) বললেন, আচ্ছা! হযরত আম্মারের কথা বাদ দিন। আপনি কোরআনের তায়াম্মুমের আয়াত সম্পর্কে কি বলবেন? আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এ সম্পর্কে কিছুই বলতে পারলেন না, বরং চুপ রইলেন। তারপর আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, আমরা যদি মাসআলা সম্পর্কে লোকদেরকে অবকাশ দেই; তা হলে হতে পারে কারো ঠান্ডা লাগলে সে পানি ছেড়ে দিবে এবং তায়াম্মু করবে। আবু মূসা (রাঃ) বলেন, তখন আমি শাকীককে বললাম, এ কারণেই হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) তায়াম্মুমের অনুমতি দিচ্ছেন না, তখন তিনি বললে, জি হ্যাঁ।
৩৪১। হাদীসঃ হযরত শাকীক ইবনে সালাম (রাঃ) বলেন, একদা আমি আবু মূসা আশআরী এবং আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। তখন আবু মূসা (রাঃ) ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে বললেন, যদি কেউ জুনুবী হয় এবং এক মাস পর্যন্ত পানি না পায়, সে কি তায়াম্মুম করে নামায আদায় করবে? বর্ণনাকারী বলেন, তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, যদি সে দীর্ঘ এক মাস পর্যন্তও পানি না পায়, তবুও তায়াম্মুম করবে না।
তখন আবু মূসা (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে বললেন, তা হলে আপনি সূরা মায়েদার (যদি তোমরা পানি না পাও, তখন পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর) আয়াত সম্পর্কে কি বলবেন? তখন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, ”যদি এতে লোকদেরকে অবকাশ দেয়া হয়, তা হলে অবস্থা হবে, লোকদের কাছে পানি ঠান্ডা লাগলে তারা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে। তখন আমি বললাম, এ কারণেই কি আপনারা তায়াম্মুম অপছন্দ করনে? অতঃপর হযরত আবু মূসা (রাঃ) বললেন, হযরত আম্মার (রাঃ) হযরত ওমর (রাঃ)-কে যা বলেছিলেন তা আপনি কি শুনেননি? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এক প্রয়োজনে পাঠিয়েছিলেন, অতঃপর আমি জুনুবী হওয়ায় পাক মাটির সাথে গড়াগড়ি খেলাম, যেমন চতুষ্পদ জন্তু গড়াগড়ি খায়। অতঃপর আমি এ ঘটনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অবহিত করলে তিনি বলেন, তোমার জন্য এরুপ করাই যথেষ্ট হত। তারপর তিনি স্বীয় হস্তদ্বয় মাটিতে মারলেন এবং ঝেড়ে নিলেন। তারপর ডান হাত দ্বারা বাম হাতের পিঠ ও বাম হাত দ্বারা ডান হাতের পিঠ মাসেহ করলেন এবং উক্ত হস্ত দ্বারা মুখমন্ডলও মাসেহ করলেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, আপনি কি দেখেননি হযরত ওমর (রাঃ) আম্মার (রাঃ)-এর কথায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি?
ইয়া’লা ইবনে ওবায়েদ হযরত শাকীক থেকে হযরত আ’মাশ (রাঃ)-এর রেওয়ায়াতে আরো বাড়িয়ে বলেছেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এবং আবু মূসা আশআরী (রাঃ)-এর কাছে ছিলাম। তখন আবু মূসা (রাঃ) যে কথা বলেছিলেন আপনি কি তা শুনেননি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এবং আপনাকে কোন এক খন্ডযুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। জুনুবী হওয়ায় আমি মাটির উপর উলটপালট খেলাম। অতঃপর আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে তাঁকে এ ঘটনা অবহিত করলাম। তখন তিনি বলেছিলেন, তোমার জন্য এটাই যথেষ্ট হত। অতঃপর তিনি স্বীয় মুখমন্ডল এবং হাতদ্বয়ে একবার করে মাসেহ করলেন।
৩৪২। হাদীসঃ হযরত ইমরান ইবনে হোসাইনুল খোযায়ী (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে দলের লোকদের থেকে দূরে একাকী অবস্থায় দেখতে পেলেন, যে তাদের সাথে নামায আদায় করেনি। তিনি সে লোককে ডেকে বললেন, হে অমুক! কওমের সাথে নামায আদায় করতে কিসে তোমায় বারণ রেখেছে? সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার জানাবত দেখা দিয়েছে, অথচ পানি নেই। হুযুর সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমার জন্য পবিত্র মাটি দরকার, তাই তোমার জন্য যথেষ্ট।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.