Wednesday, February 1, 2017

Time Of Salat

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ 

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে

নামাযের ওয়াক্তসমূহের পর্ব

নামাযের সময় ও তার ফজিলত

মহান আল্লাহর বাণী-.......
অর্থঃ নিশ্চয় মো'মোনদের উপর নামায র্নিধারিত সময়ে ফরজ করা হয়েছে।
৪৯৯। হাদীসঃ হযরত ইবনে শিহাব যুহরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, খলীফাতুল মুসলেমীন হযরত ওমর বিন আবদুল আযীয (রঃ) এক সময় আসরের নামায মোস্তাহাব ওয়াক্ত হতে একটু দেরী করে আদায় করেন। অতঃপর হযরত ওরওয়া ইবনুয্ যোবায়র (রঃ) দরবারে উপস্থিত হয়ে তাকে বললেন, হযরত মুগীরা বিন শো'বা (রাঃ) ইরাকের গভর্নর থাকা অবস্থায় এক সময় নামায দেরী করে আদায় করলেন হযরত আবু মাসউদুল আনসারী (রাঃ) তাকে বললেন, হে মুগীরা (রাঃ)! নামায আদায়ে এরুপ দেরী করার কারণ কি? আপনি কি জানেন না (নামায যখন ফরয হয়), তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নামাযের সময় শিক্ষা দানের জন্য হযরত জিব্রাঈল (আঃ) তাশরীফ আনেন। তিনি নামায পড়েন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও তার সাথে নামায পড়েন। তারপর জিব্রাঈল (আঃ) নামায আদায় করলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও তার সাথে নামায আদায় করেন। তারপর জিব্রাঈল (আঃ) তাকে বললেন, এরুপভাবে নামায আদায় করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। অথবা আপনাকে আদেশ করা হয়েছে। তদুত্তরে হযরত ওমর বিন আবদুল আযীম (রঃ) হযরত ওরওয়া (রাঃ)-কে বললেন, হে ওরওয়া! আপনি যা বলছেন, জেনে শুনে বলুন, হযরত জিব্রাঈল (আঃ) কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নামাযের সময় নির্ধারিত করে দিয়েছেন?
 তখন হযরত ওরওয়া (রাঃ) বললেন, বশীর ইবনে আবু মাসউদ তার পিতা আবু মাসউদ (রাঃ) থেকে এরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন (আমি যা বলছি সনদ সহকারেই বলছি)। হযরত ওরওয়া (রাঃ) আরো বললেন, অামাকে হযরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের নামায আদায় করতেন, তখন সূর্য তার হুজরার উপরেই থাকত। তবে তা উপরের দিকে উঠে যাওয়ার আগেই।

নামায কায়েম করার জন্য বায়আত গ্রহণ
মহান আল্লাহর বাণী-ঃ ............
অর্থঃ আল্লাহর রজ্জু অাঁকড়ে ধর তাঁর আনুগত্য সহকারে এবং আল্লাহকে ভয় কর (নামায আদায় কর), তোমরা মুশরিক হয়ো না।

৫০০। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আবদুল কায়স গোত্রের একটি প্রতিনিধি দল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে এসে বলল, আপনার ও আমাদের মাঝে সে রাবীআ গোত্রে থাকায় শাহরে হারাম (নিষিদ্ধ মাসসমূহ) ছাড়া অন্য কোন সময় আমরা আপনার নিকট আসতে পারি না। কাজেই আপনি আমাদের এমন কিছু নির্দেশ দিন যা আমরা নিজেরাও গ্রহণ করব এবং আমাদের যারা পিছনে রয়ে গেছে তাদের প্রতিও আহবান জানাব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদের চারটি বিষয়ে নির্দেশ দিচ্ছি, আর চারটি বিষয় থেকে তোমাদের নিষেধ করছি। নির্দেশিত বিষয়ের মাঝে একটি হল ঈমান বিল্লাহ্ (আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস সথাপন করা)। তারপর তিনি তাদেরকে ব্যাখ্যা করে বুঝালেন যে, 'ঈমান বিল্লাহর অর্থ হল, এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, এক আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই আর আমি আল্লাহর রাসুল; নামায কায়েম করা, যাকাত দেওয়া আর গনীমতের মালের এক-পঞ্চমাংশ দান করা। আর তোমাদের নিষেধ করছি কদুর পাত্র, সবুজ রঙ্গের মাটির পাত্র, বিশেষ ধরনের তৈলাক্ত পাত্র ও গাছের গুড়ি খোদাই করে তৈরি পাত্র ব্যবহার করতে।

৫০১। হাদীসঃ হযরত জরীর ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, যথাসময়ে নামায কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা এবং সকল মুসলমানকে নসীহত করার জন্য আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেছি।

৫০২। হাদীসঃ হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, এক সময় আমরা আমিরুল মো'মোনীন হযরত ওমর (রাঃ)-এর দরবারে বসা ছিলাম। এ সময় তিনি আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ফেতনা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস তোমাদের মধ্যে কার স্মরণ আছে, তখন আমি বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফেতনা সম্পর্কে যা বলেছেন আমার তা স্মরণ আছে। ওমর (রাঃ) বললেন, তা হলে তুমিই উক্ত হাদীস বর্ণনা করার সবচেয়ে অধিক হকদার। তখন আমি বললাম, কোন ব্যক্তি পরিবারবর্গ, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি এবং প্রতিবেশীর মধ্যকার ফেতনা তার নামায, রোযা, সদকা, ভাল কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজের নিষেধ ইত্যাদি মিটিয়ে দেয়। তখন ওমর (রাঃ) তাকে বলেন, হে হোযায়ফা! আমি এরুপ উদ্দেশ্ করিনি; বরং আমি উদ্দেশ্ করেছি সে ফেতনার কথা, যা সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় উত্থিত হতে থাকবে। বা উত্তাল সমুদ্রের ন্যায় যে ফেতনা আঘাত হানতে থাকবে। থখন হযরত হোযায়ফা (রাঃ) বললেন, হে আমীরুল মোমেনীন! সে ফেতনা দ্বারা আপনার কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। যেহেতু সে ফেতনা এবং আপনার মধ্যে এমন একটা দরজা রয়েছে, যা তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে। ওমর (রাঃ) হযরত হোযায়ফা (রাঃ)-কে পুনরায় প্রশ্ন করেলেন, আচ্ছা যে তালাবদ্ধ দরজাটা কি ভেঙ্গে দেয়া হবে, না খুলে দেয়া হবে। হোযায়ফা (রাঃ) বললেন, তা ভেঙ্গে দেয়া হবে। ওমর (রাঃ) বললেন, তা হলে তো সেটা আর কখনো বন্ধ করা যাবে না। অর্থাৎ কেয়ামত পর্যন্ত পর পর ফেতনা চলতে থাকবে।

হযরত শাকীক (রহঃ) বলেন, আমরা তখন হযরত হোযায়ফা (রাঃ)-কে বললাম, হযরত ওমর (রাঃ) কি সে দরজার কথা জানতেন না? তিনি বললেন, হাঁ, তিনি তা ভাল করেই জানতেন। আজকের দিনের পর রাত্রি আসা সম্পর্কে যেমন সবাই ওয়াকিফহাল। হযরত ওমর (রাঃ)-ও সে ফেতনা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল ছিলেন। আমি হযরত ওমর (রাঃ)-কে এমন একখানা হাদীস শুনিয়েছি, যা আমার কোন মনগড়া কথা নয়। হযরত শাকীক (রহঃ) আরও বলেন, সে দরজা কি? হযরত হোযায়ফা (রাঃ)-কে এ প্রশ্ন করতে আমরা ভয় করলাম। তাই আমারা হযরত মাসরুক (রঃ)-কে অনুরোধ করলে তিনি হযরত হোযায়ফা (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলেন, সে দরজাটি কি? তখন হযরত হোযায়ফা (রাঃ) বললেন, সে দরজা হল আমীরু মো'মোনীন হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)।

৫০৩। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বলেন, একদা আবুল ইয়ামার নামক এক ব্যক্তি এক বেগানা মহিলাকে চুমু খেলেন (এতে তার মনে ভয় ঢুকে গেল: আমি তো বিরাট অন্যায় করে ফেলেছি)। তাই তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে এ ব্যাপার তাকে অবিহিত করেন। অতঃপর মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে আয়াত অবর্তীণ করলেন-
.............
অর্থঃ দিনের দু'প্রান্তে নামায কায়েম কর এবং রাত্রির কিছু অংশেও নামায কায়েম কর। নিশ্চয় নেক কাজসমূহ তার গুনাহ মিটিয়ে দেয়।
এতদশ্রবণে উক্ত সাহাবী আরজ করলেন, ইয়া রাসুল্লাল্লাহ! এ নির্দেশ কি কেবল আমার জন্য না সকলের জন্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, এ নির্দেশ আমার উম্মতের সকলের জন্যই প্রযোজ্য (অর্থাৎ পাঞ্জেগানা নামায যথানিয়মে আদায় করলে বিভিন্ন গুনাহ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়)।
৫০৪। হাদীসঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! মহান আল্লাহর কাছে কোন আমল সর্বাপেক্ষা উত্তম? তিনি ইরশাদ করেন, যথাসময়ে নামায আদায় করা। ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, তারপর কোন আমল উত্তম? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পিতা-মাতার প্রতি সদ্বব্যবহার করা। তারপর তিনি প্রশ্ন করলেন, এরপর কোন আমল উত্তম? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর দ্বীন কায়েম করার জন্য জেহাদ করা। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এ কথাগুলো বলেছেন। আমি যদি আর অতিরিক্ত কোন প্রশ্ন করতাম; তা হলে তিনি আমাকে আরো বলতেন।
৫০৫। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, হে সাহাবাগণ! তোমরা আমাকে বল, যদি তোমাদের কারো বাড়ির সম্মুখে নদী থাকে, আর উক্ত নদীতে সে প্রতিদিন পাঁচ বার করে গোসল করে, ঐ গোসলের পর তার গায়ে কোন ময়লা বাকী থাকবে? সাহাবাগণ বললেন, হুযুর! কোন ময়লাই বাকী থাকবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, উক্ত গোসল হল পাঞ্জেগানা নামাযের উদাহরণ। আল্লাহ পাক পাঞ্জেগানা নামায দ্বারা মানুষের গুনাহগুলো এমনিভাবে মিটিয়ে দেন।
৫০৬। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) (হাজ্জাজ বিন ইউসুফ যখন ইরাকের গর্ভনর, তখন তাকে খলীফা আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যমানায় নামায যে অবস্থায় ছিল, এখন তো তার কিছুই দেখতে পাচ্ছি  না। তাঁকে বলা হল, নামায তো যে অবস্থায় ছিল এখনো সে অবস্থায়ই আছে। তখন হযরত আনাস (রাঃ) বললেন, যা তোমরা করেছ তাতে নামাযের ক্ষতি করনি? অর্থাৎ তোমরা নামায যথাসময়ে আদায় না করে দেরীতে আদায় করছো।
৫০৭। হাদীসঃ হযরত ইমাম যুহরী (রঃ) বলেন, আমি এক সময় দামেশকে হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করতে গেলে দেখতে পেলাম, তিনি কাঁদছেন। আমি তাঁকে বললাম, আপনি কাঁদছেন কেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি এ নামায রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যমানায় যেভাবে পেয়েছি বা দেখেছি; এখন তার কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। এ নামায! এখন তার ক্ষতি করা হচ্ছে।
৫০৮। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ যখন নামায আদায় করে, তখন সে তার প্রভুর সাথে মুখোমুখি গোপন আলাপ করে। সুতরাং নামাযরত অবস্থায় সে যেন তার ডান দিকে থুথু না ফেলে বাম পায়ের নীচে ফেলে।
৫০৯। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা সেজদায় মধ্যপন্থা অবলম্বন কর তোমাদের কেউ যেন বাহুদ্বয় কুকুরের ন্যায় প্রশস্ত না করে। আর নামাযের মধ্যে কারো থুথু ফেলার প্রয়োজন হলে সে যেন তার সম্মুখপানে অথবা ডান দিকে থুথু না ফেলে। যেহেতু সে নামাযরত অবস্থায় প্রভুর সাথে গোপনে আলাপ করে।
৫১০। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা ও ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেছেন, যখন কঠিন গরম পড়ে, তখন যোহরের নামায ঠান্ডা করে বা দেরীতে পড়ো। যেহেতু রৌদ্রের প্রখরতা জাহান্নামের তীব্রতার অনুরুপ।
৫১১। হাদীসঃ হযরত আবু যর গেফারী (রাঃ) বলেন একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মোআযযেন হযরত বেলাল (রাঃ) যোহর নামাযের আযান দেয়ার প্রস্তুতি নিলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, আবরিদ আবরিদ অর্থাৎ একটু ঠান্ডা হতে দাও অথবা বললেন, একটু অপেক্ষা কর, একটু অপেক্ষা কর। হুযুর সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটু ঠাণ্ডার সময় অথবা একটু দেরী করে পড়ো, যাতে আমরা টিলার ছায়া দেখতে পাই।
৫১২। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেছেন, যখন রৌদ্রের প্রখরতা দেখা দেয় তখন নামায একটু ঠাণ্ডা(দেরী) করে পড়ো, যেহেতু রৌদ্রের প্রখরতা জাহান্নামের গরমের তীব্রতা স্বরুপ। তিনি আরো বলেন, এক সময় দোযখ তার প্রভুর কাছে অভিযোগ করল, হে আমার প্রভু! আমার গরমের তীব্রতা এত বেশী মনে হচ্ছে, যেন আমার এক অঙ্গ অন্য অঙ্গকে খেয়ে ফেলছে। অতএব মহান আল্লাহ বৎসরে তাকে দু’টি নিঃশ্বাস ফেলার অনুমতি প্রদান করেন। একটি শীতের মৌসুমে এবং অপরটি গরমের মৌসুমে। গরমের মৌসুমে তোমরা রৌদ্রের যে প্রখরতা এবং শীতের মৌসুমে যে ঠাণ্ডার আধিক্য দেখতে পাচ্ছ, তা এ নিঃশ্বাসের ফলেই।
৫১৩। হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, গরমের মৌসুমে যোহরের নামায একটু দেরী করে পড়ো, যেহেতু রৌদ্রের প্রখরতা জাহান্নামের গরমের তীব্রতা স্বরুপ।
৫১৪। হাদীসঃ হযরত আবু যর গেফারী (রাঃ) বলেন, আমরা এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। মোআযযেন যোহরের আযান দেয়ার ইচ্ছা করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, আবরিদ-একটু দেরী কর। তারপর পুনরায় তারপর পুনরায় মোআযযেন আযান দেয়ার ইচ্ছা করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবরেদ-একটু দেরী কর, যাতে আমরা টিলার ছায়া দেখতে পাই। তারপর বললেন, নিশ্চয়ই রৌদ্রের প্রখরতা জাহান্নামের গরমের তীব্রতা স্বরুপ। তাই গরমের সময় নামায একটু দেরী করে পড়ো।
৫১৫। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, সূর্য ঢলে পড়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  হুযুরা থেকে বের হয়ে আসেন। তারপর যোহরের নামায আদায় করে মিম্বরের উপর দাঁড়ান, কেয়ামত দিবসের কথা আলোচনা করেন এবং কেয়ামত দিবসের বড় বড় ঘটনা সম্পর্কেও আলোচনা করেন। তারপর বললেন, কেউ যদি কোন বিষয়ে প্রশ্ন করা ভাল মনে কর, তা হলে আমাকে প্রশ্ন কর। আজ তোমরা আমাকে যে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করবে, আমি তোমাদের প্রত্যেক প্রশ্নেরই উত্তর দেব, যতক্ষণ পর্যন্ত এ স্থানে দণ্ডায়মান আছি। এতদশ্রবণে উপস্থিত সাহাবাগণ খুব বেশি কান্নাকাটি করতে লাগলেন। এদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও বেশি বেশি করে বলতে লাগলেন, তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর, তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর। তখন আবদুল্লাহ ইবনে হোযাফাতুস সাহসী দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ আমার পিতা কে? অর্থাৎ আমার পিতার নাম কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার পিতা হোযাফা। তারপরও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি বেশি করে বলতে লাগলেন, তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর। অতঃপর হযরত ওমর (রাঃ) হাঁটু গেড়ে বসে করজোড়ে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা আল্লাহকে আমাদের প্রভু, পবিত্র ইসলামকে আমাদের দ্বীন এবং হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমাদের নবী মেনে নিয়েছি।
এতদশ্রবণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ করলেন। তারপর বললেন, এক্ষুণি আমার সম্মুখে এ দেয়ালের পার্শ্বে বেহেশত ও দোযখ উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি বেহেশতের মত উত্তম এবং দোযখের মত নিকৃষ্ট আর কোন বস্তু কখনো দেখিনি।
৫১৬। হাদীসঃ হযরত আবু বারযাতুল আসলামী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  এমন সময় ফজরের নামায আদায় করতেন যখন আমাদের একজন অপরজনকে চিনতে পারত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাযে ষাট থেকে একশ আয়াত তেলাওয়াত করতেন এবং যোহরের নামায সূর্য ঢলে পড়লে আদায় করতে। আর আসরের নামায এমন সময় আদায় করতেন, বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে আমাদের যে কেউ নামায শেষে মদীনার শেষ প্রান্তে যেতে পারত, তখনও সূর্যের রং অপরিবর্তিত থাকত। আবু মেনহাল (রঃ) বলেন, মাগরিব সম্পর্কে আবু বারযা (রাঃ) বলেছেন তা আমি ভুলে গেছি। আর এশার নামায রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত দেরী করাতে কোন উৎকণ্ঠা বোধ করতেন না। তারপর বলেন, রাত্রির মধ্যভাগ পর্যন্ত দেরী করাতে উৎকণ্ঠা বোধ করতেন না। রাবী শো’বা (রঃ) বলেন, আমি আবু মেনহালের সাথে পরে সাক্ষাত করলে তিনি এক তৃতীয়াংশের কথাই বলেছেন।
৫১৭। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে যোহরের নামায আদায় করতাম, তখন গরম থেকে বাঁচার জন্য কাপড়ের উপর সেজদা করতাম।
৫১৮। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা মুনাওয়ারায় মাগরিব ও এশা এক সাথে (ভিন্ন সালামে) সাত রাকআত এবং যোহর ও আসর আট রাকআত আদায় করেন। রাবী আইউব বলেন, সম্ভবতঃ এরুপ ঘটনা বৃষ্টির রাতে হতে পারে। তদুত্তরে হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, তাই।
৫১৯। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই আসরের নামায এমন সময় আদায় করতেন, সূর্যের কিরণ তখনো তাঁর হুজরা থেকে বের হয়নি।
৫২০। হাদীসঃ উম্মুল মো’মেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের নামায এমন সময় আদায় করতেন যখন সূর্যের কিরণ তাঁর হুজরার মধ্যেই সীমাবন্ধ থাকত। তখনো সূর্যের ছাড়া তাঁর হুজরা থেকে বের হয়ে পড়ত না।
৫২১। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের নামায আদায় করতেন, সুর্য তখনো আমার হুজরায় প্রকাশ্যভাবে দেখা যেত। এরপর সূর্যের ছায়া আর বিস্তার লাভ করত না ( অর্থাৎ সূর্যের তেজ শেষ হওয়া অবস্থায় হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম আসরের নামায আদায় করতেন)।
৫২২। হাদীসঃ হযরত সাইয়্যার ইবনে সালামা (রাঃ) বলেন, একদা আমি এবং আমার পিতা হযরত আবু বারযাতুল আসলামী (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। আমার পিতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ফরয নামাযসমূহ আদায়ের সময়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘হাযিরা’ বা যোহরে নামায (যাকে তোমরা দিবাভাগের প্রথম নামায বল) সূর্য ঢলে পড়লে আদায় করতেন। আর আসরের নামায এমন সময় আদায় করতেন, নামায শেষে আমাদের কেউ মদীনার শেষ প্রান্তে তার বাড়িতে চলে যাওয়ার পরও দেখা যেত, সূর্যের রং পরিবর্তন হয়নি। আর তিনি মাগরিবের নামায সম্পর্কে কি বলেছেন তা আমি ভুলেগেছি। আর এশার নামায, যাকে তোমরা ‘আতামা’র নামায বল-একটু দেরী করে পড়া আর এশার পূর্বে নিদ্রা যাওয়া এবং পরে কথাবার্তায় লিপ্ত হওয়া অপছন্দ করতেন। ফজরের নামায এমন সময় আদায় করতেন যে, নামায শেষে ফেরার সময় প্রত্যেকই তার পার্শ্বস্থ ব্যক্তিকে চিনতে পারত। ফজরের নামাযে তিনি ষাট থেকে একশ আয়াত তেলাওয়াত করতেন।
৫২৩। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা এমন সময় আসর নামায আদায় করতাম যে, নামায শেষে মানুষ বনী আমর ইবনে আওফ (মদীনা হতে প্রায় দুমাইলের মাথায়)-এর এলাকায় এসে দেখতে পেতেন, তারা তখনো আসরের নামায আদায় করছেন।
৫২৪। হাদীসঃ হযরত আবু উমামা (রাঃ) বলেন, আমরা এক সময় মদীনার শাসনকর্তা হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযূয (রঃ) এর পেছনে যোহরের নামায আদায় করলাম। নামায শেষে আমরা মসজিদে নববী থেকে বের হয়ে সরাসরি হযরত আনাস (রাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলাম, তিনি আসরের নামায আদায় করছেন। আমি তাঁকে বললাম, হে চাচাজান! আপনি এখন কোন নামায পড়ছেন? তিনি বললেন আসরের নামায। তিনি আরো বললেন, এ হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামায, যা আমরা তাঁর সাথে আদায় করতাম। অর্থাৎ তিনি প্রথম ওয়াক্তে আসরের নামায আদায় করতেন।
৫২৫। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে আসরের নামায এমন সময় আদায় করতাম, যদি আমাদের কেউ চলে যেতেন, তিনি কুবা নামক স্থানে এসে পৌছলেও দেখতে পেতেন, তখনো সূর্য উপরে আছে।
৫২৬। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সময় আসরের নামায আদায় করতেন, যখনো সূর্য উপরে দীপ্তিমান অবস্থায় থাকত। আমাদের কেউ নামায শেষে মদীনার আওয়ালীর যেতে চাইলে সেখানে যাওয়ার পরও দেখতে পেতেন, সূর্য তখনো উপরে আছে। আওয়ালীর কোন কোন অংশ মদীনা শহর হতে প্রায় চার মাইলের মত দূরত্বে অবস্থিত ছিল।
৫২৭। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, বিনা ওজরে যারা আসরের নামাযের মোস্তাহাব ওয়াক্ত বিনষ্ট হবে, তার পরিবার পরিজন এবং ধন সম্পদ সবই যেন বিনষ্ট হল।
৫২৮। হাদীসঃ হযরত আবুল মলীহ (রঃ) বলেন, এক যুদ্ধে বৃষ্টি বাদলের দিন আমরা হযরত বোরায়দা (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। সেদিন তিনি আমাদেরকে আদেশ করলেন, তোমরা আসরের নামায তাড়াতাড়ি পড়ো। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি যথাসময়ে আসরের নামায আদায় করবে না, তার সকল আমলই যেন বরবাদ হয়ে গেল।
৫২৯। হাদীসঃ হযরত জরীর ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমরা এক রাত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ করে তিনি চন্দ্রের দিকে নজর করে বললেন, কেয়ামত দিবসে তোমরা তোমাদের প্রভুকে এমন প্রকাশ্যভাবে দেখতে পাবে, যেমন এ চন্দ্র দেখতে পাচ্ছ। তাঁকে দেখাতে তোমাদেরকে কোন ভিড় করতে হবে না। সুতরাং তোমাদের যদি সামর্থ থাকে তা হলে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের পূর্বেকার নামাযে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। তোমরা উক্ত নামাযদ্বয় (ফজর ও আসর) যথাসময়ে আদায় কর। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরআনের আয়াত তেলাওয়াত করলেন-
অর্থাৎ তোমরা সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের পূর্বে তোমাদের প্রভুর প্রশংসা বর্ণনা কর ফজর ও আসর যথাসময়ে আদায় কর।
৫৩০। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, দিনের ও রাত্রের ফেরেশতাগণ দলে দলে তোমাদের কাছে আসা যাওয়া করতে থাকে। তারা ফজর এবং আসর নামাযের সময় একত্রিত হয়। তোমাদের কাছে যারা এসেছিল, তারা যখন আরশে আযীমে গিয়ে হাজিরা দেয়, তখন মহান আল্লাহ জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে তোমাদের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আল্লাহ বলেন, তোমরা আমার বান্দাদেরকে কি অবস্থায় রেখে এসেছ? তারা বলেন, হে আল্লাহ! আমরা যখন তাদর কাছে গিয়েছিলাম তখনো দেখেছি তারা তোমার নামায আদায় করছে। আর যখন ফিরে এসেছি তখনো দেখছি তারা নামায আদায় করছে।
৫৩১। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যদি সূর্যাস্তের পূর্বে আসর নামাযের মাত্র এক রাকআত সময়ও পায়, তবে সে যেন তার নামায পূর্ণ করে নেয়। অনুরুপ ফজর নামাযের সূর্যোদয়ের পূর্বে যদি এক রাকাআত সময়ও পায়, তবে সে যেন তার নামায পূর্ণ করে নেয়।
৫৩২। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) তদীয় সন্তান 'হযরত সালেম' (রঃ)-কে বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেছেন, হে সাহাবীগণ! পূর্বেকার উম্মতদের মধ্যে তোমাদের স্থায়িত্বের উদাহরণ হল আসর নামাযের সময় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের অনুরুপ।
আহলে তাওরাতকে মহান আল্লাহ তাওরাত কিতাব প্রদান করেছেন। অতঃপর তারা তদনুসারে আমল করতে গিয়ে দিনের অর্ধভাগে যখন দূর্বল হয়ে পড়ল, তখন মহান আল্লাহ তাদের কাজের প্রতিদান স্বরুপ এক কীরাত সওয়াব প্রদান করেন। তারপর আহলে ইঞ্জিলকে আল্লাহ ইঞ্জিল কিতাব প্রদান করেন। তারা দুপুর থেকে আসর পর্যন্ত তদনুসারে আমল করে যখন দূর্বল হয়ে পড়ল, তখন এক কীরাত সওয়াব প্রদান করে মহান আল্লাহ তাদেরকেও বিদায় করলেন। অতঃপর আমাদেরকে পবিত্র কোরআন প্রদান করা হল। আমরা 'আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত' আমল করে কাজ শেষ করলাম, তাই মহান আল্লাহ খুশি হয়ে আমাদেরকে প্রতিদান স্বরুপ দু'কীরাত সওয়াব প্রদান করেন।
আমাদের এ অবস্থা দেখে পূর্বোক্ত আহলে কিতাবদ্বয় যখন মহান আল্লাহকে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহ! আপনি এদেরকে দু'কীরাত সওয়াব প্রদান করলেন, আর আমাদেরকে এত অধিক কাজ করা সত্ত্বেও মাত্র এক ক্বীরাত করে সওয়াব দিলেন, অথচ আমরা তো সময়ের দিক থেকে এদের চেয়ে অনেক বেশি আমল করেছি। মহান আল্লাহ বললেন, আমি কি তোমাদেরকে পারিশ্রমিক হতে কম দিয়েছি? তখন তারা বললেন, না, আমাদেরকে কম দেয়া হয়নি। তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার মেহেরবাণী, আমি যাকে ইচ্ছা, তাকেই তা প্রদান করে থাকি।
৫৩৩। হাদীসঃ হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে রেওয়ায়াত করেন, মুসলিম সম্প্রদায় এবং ইহুদী ও নাসারাদের উদাহরণ সে ব্যক্তির ন্যায়, যিনি কিছু সওয়াব বা প্রতিদানের বিনিময়ে একদল লোককে কাজে নিয়োগ করলেন, তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার কাজ করবে। অতঃপর কাজ করতে করতে দ্বিপ্রহরের সময় তারা যখন দূর্বল হয়ে পড়ল, তখন বলল, দেখুন! আমাদের প্রতিদানের প্রয়োজন নেই। আমরা আর আপনার কাজ করতে পারব না।
তখন নিয়োগকর্তা অন্য এক দলকে সে কাজে নিয়োগ দান করলেন এবং বললেন, তোমরা দিনের বাকী অংশে আমার কাজটি কর, আমি তোমাদেরকে তাই প্রদান করব যা তোমাদের আগের দলের সাথে শর্ত করেছিলাম। তারপর তারা কাজ আরম্ভ করল, কিন্তু আসরের পূর্বেই দূর্বল হয়ে পড়ে মালিককে বলল, আমরা যা করেছি তা তোমারই জন্য , আমরা আর তোমার কাজ করতে পারব না।
অতঃপর সে ব্যক্তি তৃতীয় এক দলকে পূর্বোক্ত শর্তে বাকী দিনটিতে কাজ করার জন্য নিযুক্ত করলেন। তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত কাজ সমাপ্ত করে। অতঃপর মালিক খুশি হয়ে শেষোক্ত দলটিকে পূর্বোক্ত দলদ্বয়ের সমপরিমাণ (প্রতিদান) দিলেন।
৫৩৫। হাদীসঃ হযরত মুহাম্মদ বিন আমর বিন হাসান বিন আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাজজাজ বিন ইউসুফ যখন (ইরাকে অথবা মদীনায় শাসনকর্তা হিসেবে) আগমন করল, তখন সে দেরীতে নামায আদায করত। তাই আমরা হযরত জাবের বিন আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের নামায হাযেরা অর্থাৎ কঠিন গরমের সময় কিছুটা বিলম্বে আদায় করতেন। আর আসরের নামায এমন সময় আদায় করতেন, যখনো সূর্য পরিস্কার থাকত। তার রংয়ের কোন পরিবর্তন ঘটত না আর সূর্য অস্ত যাওয়ার পর পরই মাগরিবের নামায আদায় করতেন। কোন কোন সময় যখন দেখতেন, সাহাবায়ে কেরাম অধিক সংখ্যক একত্রিত হয়েছেন, তখন তাড়াতাড়িই আদায় করতেন। আর যখন দেখতেন, সাহাবায়ে কেরাম আসতে একটু দেরী করছেন তখন একটু দেরী করে পড়তেন। আর ফজরের নামায রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা সাহাবায়ে কেরাম (গলস্) অন্ধকারে আদায় করতেন।
৫৩৬। হাদীসঃ হযরত সালামা ইবনুল আকওয়া (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাতে মাগরিবের নামায আদায় করতাম, যখন সূর্যের উপরের কিনারা গোপন হয়ে যেত। অর্থাৎ পূর্ণভাবে ডুবে যেত।
৫৩৭। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মদীনা মোনাওয়ারায় একই সময়ে সাত রাকআত (মাগরিব ও এশা) এবং (যোহর ও আসর পর পর) একত্রে আট রাকাআত (বৃষ্টির কারণে ওজরবশতঃ আদায় করেছেন)।
৫৩৮। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন মোযানী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মাগরিবের নামাযের নামকরণে বেদুঈনরা যেন তোমাদের উপর বিজয়ী না হয়। হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, বেদুঈনরা মাগরিবকে এশা বলত (অর্থাৎ মাগরিবকে মাগরিবই বলতে হবে)।
৫৩৯। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন, এক রাত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে এশার নামায আদায় করেন, যাকে লোকেরা 'আতামা' বলত। নামায শেষে তিনি আমাদের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বললেন, আজকের রাত্রি সম্পর্কে তোমাদের অভিমত কি? বর্তমানে যারা এ ধরাধামে জীবিত আছে, এটা নিশ্চিত, ভবিষ্যতে একশ বৎসরের মাথায় এদের কেউই জীবিত থাকবে না।
৫৪০। হাদীসঃ হযরত মুহাম্মদ ইবনে আমর ইবনে হাসান ইবনে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামায সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, মধ্যাহ্ন গড়ালেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের নামায আদায় করতেন এবং সূর্য সতেজ থাকতেই আসর আদায় করতেন, আর সূর্য অস্ত গেলেই মাগরিব আদায় করতেন, আর লোক বেশী হয়ে গেলে ইশার নামায তাড়াতাড়ি আদায় করতেন এবং লোক কম হলে দেরী করতেন, আর ফজরের নামায অন্ধকার থাকতেই আদায় করতেন।
৫৪১। হাদীসঃ ওরওয়া (রাঃ) বলেন, আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) তাঁকে খবর দিয়েছেন, একদা নবী করীম সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার নামায খুব দেরী করে পড়েন। আর তা ছিল মদীনার বাইরে ইসলাম বিস্তার হওয়ার পূর্বেকার ঘটনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখনো হুজরা থেকে বের হননি, দেরী হওয়ায় হযরত ওমর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মহিলারা এবং ছোট ছেলেরা ঘুমিয়ে পড়েছে। এতদশ্রবণে তিনি হুজরা থেকে বেরিয়ে আসেন। তখন মসজিদে উপস্থিত সাহাবাদেরকে লক্ষ্য করে তিনি বললেন, এ মুহূর্তে তোমরা ব্যতীত এ জগদ্বাসী কেউ নামাযের জন্য অপেক্ষা করছে না।
৫৪২। হাদীসঃ হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) বলেন, আমি এবং আমার অন্যান্য সাথীরা (যারা হাবশা থেকে নৌকা যোগে মদীনায় এসেছিল) 'বাকীয়ে বোতহান' নামক এলাকায় অবস্তান করছিলাম। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সময় মদীনা মোনাওয়ারায় অবস্থান করছিলেন। 'বাকীয়ে বোতহানে' অবস্থানকারীদের পক্ষ হতে প্রতিরাতে পালাক্রমে চার/পাঁচ জন করে লোক এশার নামাযে উপস্থিত হতেন। এক রাত্রে আমি এবং আমার সাথীর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ আসে। আমার সাথীর এক কাজে কিছুটা ব্যস্ততা ছিল। সে রাত্রে এশার নামায আদায়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব দেরী করেন। রাত্রি প্রায় অর্ধেক হয়ে গেল। অতঃপর হুযুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা থেকে বের হয়ে এসে সাহবাদেরকে নিয়ে এশার নামায আদায় করেন। নামায আদায় করার পর তিনি উপস্থিত সাহাবাদেরকে বললেন, তোমরা তোমাদের অবস্থায় বসে থাক। তোমরা সবাই শুভ সংবাদ গ্রহণ কর। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহর নেয়ামতসমূহের মধ্য হতে তোমাদের উপর একটি নেয়ামত হল, "তোমরা ব্যতীত এ মুহূর্তে কোন লোকই আল্লাহর নামায আদায় করছে না।" অথবা এরুপ বলেছেন, "এ সময় তোমরা ব্যতীত অন্য কেউই নামায আদায় করছে না।" বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুটো বাক্যের কোনটি বলেছেন, তা আমার সঠিক জানা নেই। আবু মূসা (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে যে কথা শুনতে পেলাম তাতে সন্তুষ্ট হয়ে বাড়ি ফিরলাম।
৫৪৩। হাদীসঃ হযরত আবু বারযাতুল আসলামী (রাঃ) বলেন, এশার নামায আদায়ের পূর্বে নিদ্রা যাওয়া এবং পরে কথাবার্তায় লিপ্ত হওয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুবই অপছন্দ করতেন।
৫৪৪। হাদীসঃ হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন এশার নামায আদায় করতে দেরী করেন। দেরী দেখে হযরত ওমর (রাঃ) এক সময় (আসসালাত) আওয়াজ দিয়ে বললেন, "মহিলা এবং ছোট ছেলেরা ঘুমিয়ে পড়েছে।" এতদশ্রবণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা মোবারক থেকে মসজিদে চলে আসেন। তারপর ইরশাদ করেন, তোমরা ছাড়া এ জগদ্বাসী কেউ এতক্ষণ নামাযের জন্য অপেক্ষা করছে না। বর্ণনাকারী ওরওয়া (রাঃ) বলেন, সে সময় মদীনা মোনাওয়ারা ছাড়া অন্য কোথাও নামায আদায় করা হত না (তখনো মদীনার বাইরে ইসলাম প্রচার হয়নি)। বর্ণনাকারী আরো বলেন, তখন সাহাবায়ে কেরাম (শফক-সূর্যাস্তের পর পশ্চিমাকাশে বিস্তৃত লালিমা) অদৃশ্য হওয়ার পর থেকে রাতের প্রথম এক তৃতীয়াংশের মধ্যে এমার নামায আদায় করতেন।
৫৪৫। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, এক রাত্রে বিশেষ কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মসজিদে তাশরীফ রাখতে বারণ রাখল, যাতে তিনি এশার নামাযে দেরী করে ফেলেন। এমনকি আমি মসজিদে নিদ্রামগ্ন হয়ে পড়লাম। তারপর আমি জাগ্রত হলাম, আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। তারপর পুনরায় জাগ্রত হলাম। এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে তাশরীফ রাখলেন এবং ইরশাদ করলেন, এখন তোমরা ব্যতীত জগদ্বাসী কেউই নামাযের জন্য অপেক্ষা করছে না। আর নামাযের সময়ের পূর্বে ইবনে ওমর (রাঃ) নিদ্রা যাওয়াকে ভয় করতেন না, যেহেতু এশার পূর্বে তিনি জাগ্রত হতেন। তাই তিনি নামায আগে পড়া হয়েছে না দেরী করা হয়েছে এ কথার প্রাধান্য দেননি। ইবনে জুরায়েজ বলেন, আমি 'আতা'  ইবনে আবী রাবাহ (রাঃ) কে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, এক রাতে তিনি নামাযের অপেক্ষায় থেকে ঘুমিয়ে পড়ার পর জাগ্রত হন, তারপর পুনরায় ঘুমিয়ে পড়লেন, আবার জাগ্রত হন। এমন সময় হযরত ওমর (রাঃ) আসসালাত করে আওয়াজ দিলেন। হযরত আতা (রাঃ) বলেন, ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, এমন অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা মোবারক থেকে বের হয়ে আসেন। আমার মনে হয়, এখনো আমি দেখতে পাচ্ছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাথা মোবারক থেকে পানি টপকাচ্ছে আর তিনি মাথায় নিজ হাত মোবারক রেখেছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যদি আমার ইম্মতের অসুবিধা না হত, তা হলে আমি তাদেরকে এমনি সময়ে এশার নামায আদায় করার জন্য আদেশ করতাম।
ইবনে জুবায়েজ (রাঃ) বলেন, আমি হযরত আতাকে বার বার প্রশ্ন করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে তাঁর মাথা মোবারকে নিজ হাত রেখেছিলেন? হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) তাঁকে যেভাবে বলেছেন তিনি যেন আমাকে সেভাবে বলেন।
এ প্রশ্ন করার পর হযরত আতা (রাঃ) তাঁর হাতের আঙ্গুলগুলো একটু ফাঁক করলেন। তারপর আঙ্গুলের মাথাগুলো মাথার কিনারায় রাখলেন, তারপর আঙ্গুলগুলো মাথার মধ্যে চালাতে চালাতে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুল মুখমন্ডলের দিকের কানপট্টি এবং দাড়ির কিনারা স্পর্শ করল, যাতে করে সে আঙ্গুলগুলো দ্বারা কোন কিছু বাড়াচ্ছেন না বা ধরছেনও না; বরং এভাবেই আঙ্গুলগুলো অগ্রসর করতে লাগলেন। তারপর বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টসাধ্য না হত, তা হলে আমি তাদেরকে এশার নামায এমনিভাবে দেরীতে আদায়ের আদেশ করতাম।
৫৪৬। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার নামায অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত দেরী করে আদায় করেন। তারপর ইরশাদ করলেন, এখন অধিকাংশ লোক ঘুমিয়ে পড়েছে, আর তোমরা এখনো নামাযে রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা নামাযের জন্য অপেক্ষা করবে, ততক্ষণ নামাযে গণ্য হবে।
৫৪৭। হাদীসঃ হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে নবী সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমা রাতের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, শোন! এটি যেমন দেখতে পাচ্ছ-তোমাদের প্রতিপালককেও তোমরা তেমনি দেখতে পাবে। তাঁকে দেখতে তোমরা ভিড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই তোমরা যদি সূর্য উঠার আগে নামায ও সূর্য ডুবার আগে নামায আদায়ের সমর্থ হও, তাহলে তাই কর। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ "সূর্যোদয় ও সুর্যাস্তের পূর্বে আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসার তাসবীব পাঠ করুন।
৫৪৮। হাদীসঃ হযরত আবু বকর ইবনে আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি দু'টি ঠান্ডাকালীন নামায আদায় করবে, সে বেহেশতে যাবে। অর্থাৎ ফজর ও আসরের নামায।
৫৪৯। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, যায়েদ ইবনে সাবেত (রাঃ) তাঁকে বর্ণনা করেছেন, তাঁরা এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সেহরী খেলেন, তারপর ফজরের নামাযের জন্য জামাআতে দাঁড়ান। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, আমি তাঁকে বললাম, এ দুয়ের মধ্যে কতক্ষণ অপেক্ষা করা হয়েছিল। তিনি বললেন, তারতীলের সাথে পবিত্র কোরআনের পঞ্চাশ থেকে ষাট আয়াত আদায় করার ব্যবধান ছিল।
৫৫০। হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং যায়েদ ইবনে সাবেত (রাঃ) একসাথে একরাতে সেহরী খেলেন, যখন উভয়ের সেহরী খাওয়া শেষ হলো, তখন নবী সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামায পড়তে দাঁড়ালেন এবং নামায আদায় করলেন। (কাতাদা বললেন)- আমরা আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও যায়েদ ইবনে ছাবেত (রাঃ) এর সেহরী শেষ করে নামায আরম্ভ করার মাঝে কী পরিমাণ ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন যেই সময়ের মধ্যে একজন লোক পঞ্চাশটি আয়াত তেলাওয়াত করতে পারবে।
৫৫১। হাদীসঃ হযরত সাহল ইবনে সা'দ (রাঃ) বলেন, রোযা রাখার জন্য আমি নিজ ঘরে সেহরী খেতাম। তারপর হুযুর সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ফজরের নামায আদায় করার জন্য খুব তাড়াতাড়ি বের হয়ে পড়তাম।
৫৫২। হাদীসঃ হযরত উম্মুল মো'মেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, মো'মেন মহিলাগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ফজরের নামায আদায় করার উদ্দেশ্যে পশমী চাদর গায়ে জড়িয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসতেন। তারপর নামায শেষে পুনরায় নিজ বাড়িতে ফিরে যেতেন। অন্ধকারের কারণে তাদেরকে কেউ চিনতে পারতেন না।
৫৫৩। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সূর্যোদয়ের পূর্বে কেউ যদি এক রাকআত ফজরের নামায আদায় করার সময় পায়, সে যেন ফজরের নামাযের পূর্ণ সময়ই পেল। তেমনি সূর্যাস্তের পূর্বে যদি এক রাকআত আসরের নামায আদায় করার সময় পায়, সে যেন পূর্ণ আসরের নামাযের সময়ই পেল।
৫৫৪। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোন নামাযে এক রাকাত পায় সে নামাজে সব রাকাতের সওয়াব পাবে।
৫৫৫। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, কয়েকজন পছন্দনীয় সম্মানিত ব্যক্তি-যাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় হলেন হযরত ওমর (রাঃ), তাঁরা আমার কাছে সাক্ষ্য দিয়েছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'সময়ে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন- (১) ফজরের নামায আদায়ের পর থেকে সূর্যোদয়ের পর ফর্সা না হওয়া পর্যন্ত এবং (২) আসরের নামায আদায়ের পর থেকে সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত।
৫৫৬। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমার নিকট কয়েক ব্যক্তি এরুপ বর্ণনা করেছেন।
৫৫৭। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা কখনো সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত-এ দু'সময়ে নামায পড়ার ইচ্ছা করবে না।
অন্য সনদে ইবনে ওমর (রাঃ) আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যখন সূর্যের এক কিনারা উঠে যাবে তখন সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত, তদ্রুপ যখন সূর্যের এক কিনারা ডুবে যাবে তখন সূর্যাস্ত না যাওয়া পর্যন্ত নামায দেরী কর। (অর্থাৎ এ দু'সময়ে নামায পড়া নিষেধ।
৫৫৮। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'প্রকারের বেচাকেনা, দু'প্রকারের পরিধেয় এবং ফজরের নামায আদায় করার পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং আসরের নামায আদায় করার পর থেকে সূর্যান্ত না যাওয়া পর্যন্ত যে কোন প্রকারের নামায নিষেধ করেছেন। পরিধেয় বস্ত্রের মধ্যে এক কাপড় দ্বারা ইশতেমালে সাম্মা (এক চাদর দ্বারা এমনভাবে শরীর ঢেকে নেয়া যে, তার এক আচল ডান দিক থেকে বাম কাঁধের উপর দিয়ে পেছনের দিকে, অনুরুপভাবে বাম দিক থেকে দ্বিতীয় আচল ডান কাঁধের উপর দিয়ে পিছনের ঘাড়ের উপর দিয়ে ছোট শিশুদেরকে চাদর পরিধান করাবার মত বেঁধে দেয়া), এবং ইহতেবা একটি ছোট চাদর এমনভাবে পরিধান করা যাতে সম্মুখ দিক খোলা রেখে কেবল পিঠ এবং দু’পা ঢেকে নেয়া, পেট খালি রাখা, যাতে সতর খুলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে, এ দু'ইভাবে কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন।  আর মুনাবাযা এবং মুলামাসা নামক দু'প্রকারের বেচাকেনা নিষেধ করেছেন।
৫৫৯। হাদীসঃ হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যেন সূর্যোদয় অথবা সূর্যাস্তের সময় নামায আদায় করার চিন্তা না করে। অর্থাৎ এ দু'সময়ে যেন নামায না পড়ে।
৫৬০। হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলে খোদা সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইরশাদ করতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ফজরের নামায আদায় করার পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দু'সময়ের মধ্য কোন নামায নেই।
৫৬১। হাদীসঃ হযরত মোআবিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা বর্তমানে এমন দু'রাকআত নামায পড়ছ, অথচ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে অনেক দিন ছিলাম, আমি কোন দিনই তাঁকে ঐ দু'রাকআত নামায আদায় করতে দেখিনি। তিনি আসরের পর দু'রাকআত নফল নামায আদায় নিষেধ করেছেন।
৫৬২। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'সময়ের নামায থেকে নিষেধ করেছেন। (১) ফজরের নামাযের পর সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত, (২) এবং আসরের নামাযের পর সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত সময়ে নামায পড়া।
৫৬৩। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, আমার সঙ্গীদেরকে যেভাবে নামায পড়তে দেখেছি, আমিও তেমনিভাবে নামায পড়ছি। রাতে দিনে যে কোন সময় যত ইচ্ছা নামায পড়তে আমি কাউকে নিষেধ করছি না। তবে কেবল সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় যেন কেউ নামায না পড়ে (যেহেতু এ দু'সময়ে নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে)।
৫৬৪। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমাদের মাঝ থেকে নিয়ে গেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসর নামাযের পর যে দু'রাকআত নামায সব সময় আদায় করতেন, ইন্তেকালের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি কখনো তা তরক করেননি। আর নামায কঠিন না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর সাথে তাঁর মিলনও হয়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসর নামাযের পর যে দু'রাকআত নামায আদায় করতেন, তা তিনি অধিকাংশ সময় বসে বসে আদায় করতেন। আর তাঁর উম্মতের উপর কঠিন হয়ে যাবে এ ভয়ে তিনি উক্ত দু'রাকআত মসজিদে আদায় করতেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের উপর যে কোন কাজ সহজ হওয়া অধিক পছন্দ করতেন।
৫৬৫। হাদীসঃ হযরত ওরওয়া ইবনে যোবায়র (রাঃ) বলেন, এক সময় আয়েশা (রাঃ) আমাকে বললেন, হে ভগ্নীপুত্র! নবী করীম সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হুজরায় এসে আসর নামাযের পর দু'রাকআত নামায কখনো ছেড়ে দেননি (সর্বদাই আদায় করেছেন)।
৫৬৬। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোপনে অথবা প্রকাশ্যে কখনো দু'রাকআত নামায ছেড়ে দেননি। তা হল, ফজর নামাযের পূর্বে দু'রাকআত এবং আসর নামাযের পূর্বে দু'রাকআত।
৫৬৭। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসর নামাযের পর কোন দিন আমার হুজরা আসতেন না, বরং প্রতিদিনই হুজরায় এসে দু'রাকআত নামায আদায় করতেন।
৫৬৮। হাদীসঃ হযরত আবুল মালীহ (রঃ) বলেন, এক সময় বৃষ্টি বাদলের দিনে আমরা হযরত বোরায়দা (রাঃ)-এর কাছে ছিলাম। তিনি আমাদেরকে বললেন, তোমরা জলদি করে নামায আদায় কর। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আসরের নামায তার মোস্তাহাব ওয়াক্ত হতে দেরী করবে, তার সব আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে।
৫৬৯। হাদীসঃ হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) বলেন, এক রাত্রে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সফরে রওয়ানা হলাম।  অতঃপর সাহাবাদের কেউ কেউ সফরের কারণে দূর্বল হয়ে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যদি শেষ রাত্রে আমাদেরকে কোথাও যাত্রা বিরতির অনুমতি প্রদান করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার ভয় হচ্ছে, তোমরা হয়ত নামায ছেড়ে ঘুমাবে।  তখন হযরত বেলাল (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আপনাদেরকে জাগিয়ে দেব। অতঃপর সবাই ঘুমিয়ে পড়লেন। হযরত বেলাল (রাঃ)-ও উটের হাওদার সাথে পিঠ লাগিয়ে বসে গেলেন, যাতে করে তাঁর চোখেও গুমের তীব্রতার এসে গেল। এমনকি তিনিও ঘুমিয়ে পড়লেন। উপস্থিত কাফেলার মধ্যে সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত বেলাল (রাঃ)-কে বললেন, হে বেলাল! তুমি যা বলেছিলে, তা কোথায় গেল! বেলাল (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আজকার মত এমন ঘুম কখনো আমার উপর চাপিয়ে দেয়া হয়নি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহান আল্লাহ তোমাদের রুহগুলো যতক্ষণের জন্য ইচ্ছা কবজ করেছিলেন। আবার যখন ইচ্ছা তা তোমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিয়েছেন। হে বেলাল! এখন তুমি উঠ এবং লোকদের নামাযের জন্য আযান দাও। অতঃপর হুযুর সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু করলেন। তারপর সূর্য যখন উপরে উঠে ফর্সা হয়ে গেল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সাহাবাদেরকে নিয়ে নামায আদায় করলেন।
৫৭০। হাদীসঃ হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, খন্দকের যুদ্ধের দিন হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) সূর্যাস্তের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে উপস্থিত হলেন এবং কোরায়শদেরকে গালিগালাজ করতে লাগলেন। তারপর বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ব্যস্ততার কারণে আমি আজ আসরের নামায আদায় করতে পারিনি। এমনকি এখন সূর্য ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর শপথ! আমিও তো আসরের নামায আদায় করিনি। অতঃপর তাঁরা "বোত্হান" নামক ময়দানে চলে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথায় নামাযের অযু করেন। আমরাও অযু করলাম। সূর্যাস্তের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে জামাআতে আসরের নামায, তারপর মাগরিবের নামায আদায় করলেন।
৫৭১। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কেউ যদি নামাযের কথা ভুলে যায়, এমনকি নামাযের ওয়াক্তও চলে যায়, তবে স্মরণ হওয়ার সাথে সাথেই তা আদায় করে নিবে। আর নামায আদায় করাটাই তার কাফফারা। যেহেতু মহান আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করেছেন-........ "আমার স্মরণ উদ্দেশ্যে নামায কায়েম কর।"
৫৭২। হাদীসঃ হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধকালে এক সময় উমর (রাঃ) কুরাইশ কাফিরদের ভৎসনা করতে লাগলেন এবং বললেন, সূর্যাস্তের পূর্বে আমি আসরের নামায আদায় করতে পারিনি, (জাবির (রাঃ) বলেন) তারপর আমরা বুতহান উপত্যকায় উপস্থিত হলাম। সেখানে তিনি সূর্যাস্তের পর সে নামায আদায় করলেন, তারপরে মাগরিবের নামায আদায় করলেন।
৫৭৩। হাদীসঃ হযরত আবু মিনহার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে আবু বারযা আসলামী (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। আমার পিতা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরয নামাযসমূহ কোন সময় আদায় করতেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের নামায, যাকে তোমরা প্রথম নামায বলে থাক, সুর্য ঢলে পড়লে আদায় করতেন। আর তিনি আসরের নামায এমন সময় আদায় করতেন যে, আমাদের কেউ সূর্য সজীব থাকতেই মদনিার শেষ প্রান্তে নিজ পরিজনের কাছে ফিরে আসতে পারত। মাগরিব সম্পর্কে তিনি কি বলেছিলেন, তা আমি ভুলে গেছি। তারপর আবু বারযা (রাঃ) বলেন, ইশার নামায একটু বিলম্বে আদায় করাকে তিনি পছন্দ করতেন। আর ইশার আগে ঘুমানো এবং পরে কথাবার্তা বলা তিনি অপছন্দ করতেন। আর এমন মুহুর্তে তিনি ফজরের নামায শেষ করতেন যে, আমাদের যে কেউ তার পাশ্ববর্তী ব্যক্তিকে চিনতে পারত। এ নামাযে তিনি ষাট থেকে একশ আয়াত তিলাওয়াত করতেন।
৫৭৪। হাদীসঃ হযরত কোররা বিন খালেদ (রঃ) বলেন, আমরা এক রাত্রে হযরত হাসান বসরী (রঃ)-এর জন্য মসজিদে অপেক্ষা করছিলাম। তিনি মসজিদে আসতে অনেক দেরী করে ফেলেন। এমনকি আমরা নিদ্রার কারণে মসজিদ থেকে উঠে চলে যাওয়ার নিকটবর্তী হয়ে পড়েছিলাম। এমন সময় তিনি মসজিদে উপস্থিত হয়ে ওজর পেশ করে বললেন, প্রতিবেশীগণ আমাকে দাওয়াত করেছিল (তাই আসতে দেরী হয়েছে)। তারপর তিনি বললেন, হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেছেন, আমরা এক রাত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য মসজিদে নববীতে অপেক্ষা করতে করতে অর্ধ রাত হয়ে গিয়েছিল। এমন সময় তিনি মসজিদে তাশরীফ আনেন এবং আমাদেরকে নিয়ে এশার নামায আদায় করনে। তারপর আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, হে সাহাবাগণ! অন্য লোকেরা এতক্ষণে নামায আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েছে, আর তোমরা মসজিদে নামাযের অপেক্ষায় ছিলে। তোমরা যতক্ষণ নামাযের অপেক্ষায় ছিলে, তোমাদের ততক্ষণ সময় নামাযের মধ্যেই গণ্য হবে।
৫৭৫। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনের শেষ প্রান্তে (ইন্তেকালের প্রায় মাসখানেক আগে) এক রাত্রে আমাদেরকে নিয়ে এশার নামায আদায় করেন। সালাম ফিরাবার পর তিনি দাঁড়িয়ে আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, আজকের এ রাত সম্পর্কে তোমাদের অভিমত কি? বর্তমানে যারা ধরাধামে জীবিত আছে, আগামী একশ বৎসরের মাথায় এদের কেউ জীবিত থাকবে না অতঃপর লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা পোষণ করেছেন, অথবা ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। অথচ তিনি বলেছিলেন, আজ যারা দু'নিয়াতে জীবিত আছে, একশ বৎসরের মাথায় এদের যুগ শেষ হয়ে যাবে। এমনিভাবে ভবিষ্যতেও প্রত্যেক শতাব্দীর জন্যই এ হুকুম চালু থাকবে।

0 comments:

Post a Comment

Thanks for your comments.