بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে
যাকাত পর্ব
মহান আল্লাহ বলেন- وَاَقِيْمُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتُوا الذَّكٰوةَ
অর্থঃ তোমরা নামায কায়েম কর এবং যাকাত দাও।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী কারীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে আবু সুফিয়ান আমাকে বলেছেন,নবী কারীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নামায কায়েম করতে , যাকাত প্রদান করতে, আত্মীয় স্বজনদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে এবং পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করতে নির্দেশ দিতেন।
১৩২৩। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী কারীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মাআয (রাঃ)-কে 'ইয়ামান' দেশে পাঠাবার সময় তাঁকে (অসিয়ত স্বরুপ) বলেন, তুমি প্রথমে তাদেরকে আহবান জানাবে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই এবং আমি (মুহাম্মদ সঃ) আল্লাহর রাসূল। যদি তারা এ কথা মেনে নেয় তবে তাদেরকে বলবে, মহান আল্লাহ তাদের উপর প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। যদি তরার এও মেনে নেয়, তবে তাদেরকে জানিয়ে দিবে, আল্লাহ তাদের ধন সম্পত্তিতে যাকাত ফরয করেছেন। যাকাত তাদের মধ্যকার ধনীদের কাছ থেকে সংগৃহীত হয়ে তাদের দরিদ্রের মাঝে বন্টিত হবে।
১৩২৪। হাদীসঃ হযরত আবু আইউব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবী কারীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আপনি আমাকে বেহেশতে যাবার উপায় স্বরুপ একটি কাজের কথা বলে দিন। জনৈক ব্যক্তি বলে উঠলেন, বাহ! তার কি হয়েছে? তার কি হচ্ছে। নবী কারীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে জরুরী প্রশ্ন করেছে। চমৎকার প্রশ্ন তার। নবী কারীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি এক আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না, যথারীতি নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক অটুট রাখবে।
১৩২৫। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা জনৈক বেদুঈন নবী কারীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে এসে বলল, আপনি আমাকে এমন একটি কাজের কথা বলুন যা করলে আমি বেহেশতে প্রবেশ করতে পারব। নবী কারীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না, ফরয নামায কায়েম করবে, ফরয যাকাত আদায় করবে এবং রমযানের রোযা রাখবে।
অতঃপর বেদুঈন বলল, যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম করে বলছি, আমি এর অতিরিক্ত কিছু করব না। অর্থাৎ আদেশ পালন করতে ব্যতিক্রম করব না অসম্পূর্ণ বা সীমা অতিক্রম উভয় দিকের ত্রুটিহীনরুপে ঐ কার্যগুলো সম্পাদন করব। আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, লোকটি চলে গেলে নবী কারীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে কোন জান্নাতীকে দেখে আনন্দ্ লাভ করতে চায়, সে যেন একে দেখে নেয়।
১৩২৬। হাসীসঃ হযরত আবু হাইয়্যান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আবু যুরআ (রঃ)- রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেন। অর্থাৎ আদেশ পালন করতে ব্যতিক্রম করব না। অসম্পূর্ণ বা সীমা অতিক্রম উভয় দিকের ত্রুটিহীনরুপে ঐ কার্যগুলো সম্পাদন করব।
১৩২৭। হাদীসঃ হযরত ইবনে 'আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, 'আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে আরয করলো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা রাবীআ গোত্রের লোক, আমাদের ও আপনার (মদীনার) মাঝে মুযার গোত্রের কাফিররা প্রতিবন্ধক হয়ে রয়েছে। আমরা আপনার নিকট কেবল নিষিদ্ধ মাস(যুদ্ধ বিরতির মাস) ব্যতীত নির্বিঘ্নে আসতে পারি না। কাজেই এমন কিছু আমলের নিদের্শ দিন যা আমরা আপনার নিকট থেকে শিখে (আমাদের গোত্রের) অনুপস্থিতদেরকে সেদিকে দাওয়াত দিতে পারি। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদেরকে চারটি বিষয়ের আদেশ করছি ও চারটি বিষয় থেকে নিষেধ করছি। (পালনীয় বিষয়গুলো হলোঃ) আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা তথা সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহা নেই। (রাবী বলেন) এ কথা বলার সময় রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একক নিদের্শক) তাঁর হাতের আঙ্গুলী বদ্ধ করেন, নামায কায়েম করা, যাকাত আদায় করা ও তোমরা গণীমতের এক-পঞ্চমাংশ আদায় করবে এবং আমি তোমাদেরকে নিষেধ করছি যে, শুষ্ক কদুর খোলস, সবুজ রং প্রলেপযুক্ত পাত্র, খেজুর কান্ড নির্মিত পাত্র, তৈলজ পদার্থ প্রলেপযুক্ত মাটির পাত্র ব্যবহার করতে।
১৩২৮। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের পর আবু বকর (রাঃ)-এর খিলাফতকালে আরবের কিছু সংখ্যক লোক মুরতাদ হয়ে যায়। তখন উমর (রাঃ) [আবু বকর (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে] বললেন, আপনি (সে সব) লোকদের বিরুদ্ধে কিভাবে যুদ্ধ করবেন (যারা সম্পূর্ণ ধর্ম ত্যাগ করেনি বরং যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে মাত্র)? অথচ রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমি লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি। যে পর্যন্ত তারা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু' না বলে। আর যে ব্যক্তি এটা বলল, সে তার জান মাল আমার পক্ষ থেকে নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামের বিধান লংঘন করলে (শাস্তি দেওয়া যাবে), আর তার অন্তরের গভীরে (হৃদয়াভ্যন্তরে কুফরী বা পাপ লুকানো থাকলে এর) হিসাব-নিকাশ আল্লাহরি যিম্মায়। আবু বকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম তাদের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই আমি যুদ্ধ করবো যারা নামায ও যাকাতের মধ্যে পাথর্ক্য করবে, কেননা যাকাত হল সম্পদের উপর আরোপিত হক। আল্লাহর কসম, যদি তারা একটি মেষ শাবক যাকাত দিতেও অস্বীকার করে যা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তারা দিত, তাহলে যাকাত না দেওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে আমি অবশ্যই যুদ্ধ করব। উমর (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম, আল্লাহ আবু বকর (রাঃ)-এর হৃদয় বিশেষ জ্ঞানালোক উদ্ভাসিত করেছেন বিধায় তাঁর এ দৃঢ়তা, এতে আমি বুঝতে পারলাম তাঁর সিদ্ধান্তই যথার্থ।
অনুচ্ছেদ নং ২ঃ যাকাত দেওয়ার ব্যাপারে বায়আত তথা অঙ্গীকার গ্রহণ। মহান আল্লাহ বলেন-
...............
অর্থঃ যদি কাফেররা তওবা করে, নামায কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে, তা হলে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই । (সূরা তাওবা: ১১)
১৩২৯। হাদীসঃ হযরত জারীর বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে নামায কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা এবং প্রত্যেক মুসলমানের জন্য কল্যাণকামী হওয়ার বায়আত করেছি।
অনুচ্ছেদ নং ৩ঃ যাকাত না দেওয়ার গোনাহ ও শাস্তি। মহান আল্লাহর বাণী-
.......
অর্থঃ যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য সঞ্চিত করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে কঠিন শাস্তির সুসংবাদ প্রদান করুন। যে দিন সেসব (স্বর্ণ রৌপ্য) দোযখের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং তাদ্বারা তাদের ললাট; পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে এবং বলা হবে, এ সব কিছু তাই যা তোমরা দুনিয়াতে নিজেদের জন্য সঞ্চয় করে রেখেছিলেন, সুতরাং যা তোমরা সঞ্চিত করে রেখেছিলেন এখন তার স্বাদ গ্রহণ কর। (সূরা তওবাঃ আয়াত ৩৪-৩৫)
১৩৩০। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, উটের যা হক (যাকাত) রয়েছে, যদি উটের মালিক তা আদায় না করে, তবে কেয়ামতের দিন সে উট পূর্বের চেয়ে অধিক মোটা তাজা অবস্থায় তার মালিকের নিকট উপস্থিত হবে এবং খুর দ্বারা তাকে পিষ্ট করতে থাকবে। তদ্রুপ বকরীর যা হক রয়েছে, তার মালিক যদি তা আদায় না করে তবে কেয়ামতে ঐ বকরী পূর্বাপেক্ষা অধিক শক্তিশালী অবস্থায় মালিকের নিকট উপস্থিত হয়ে খুর দ্বারা তাকে দলন করতে এবং শিং দ্বারা গুঁতাতে থাকবে। নবী করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, সেটির হক সমূহের একটি হল, পানি পান করাবার স্থানে দোহন করা।
নবী করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, কেয়ামতের দিন তোমাদের কাউকে যেন চিৎকাররত অবস্থায় বকরী কাঁধে বহন করে উপস্তিত হতে না হয় এবং বলতে না হয়, হে মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমায় রক্ষা করুন। আর আমাকেও যেন বলতে না হয়, আল্লাহর শাস্তি থেকে তোমাকে রক্ষা করার জন্য আজ আমি কিছুই করতে পারি না। আমি তো আল্লাহর হুকুম আগেই জানিয়ে দিয়েছি।
আর তোমাদের কাউকে যেন চিৎকাররত কোন উট কাঁধে বহন করে উপস্থিত হতে না হয় এবং বলতে না হয়, হে মুহাম্মদ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে সাহায্য করুন এবং আমাকেও বলতে না হয়, তোমার ব্যাপারে আজ আমার কিছুই করার এখতিয়ার নেই। আমি তো পূর্বেই আল্লাহর হুকুম জানিয়ে দিয়েছি।
অনুচ্ছেদ নং ৪ঃ যে মালের যাকাত আদায় করা হয় তা 'কানয' বা সঞ্চয়ের পর্যায়ে পড়ে না। কেননা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচ উকিয়ার (রুপা) কমে যাকাত নেই।
১৩৩৩। হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচ আওকিয়ার কমে (রৌপ্যে) যাকাত নেই। পাঁচটি উটের কমে যাকাত নেই এবং পাঁচ ওয়াসাকের কমে (শস্যে) যাকাত নেই।
১৩৩৪। হাদীসঃ হযরত ইয়াযীদ ইবনে ওয়াহহাব (রঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাবাযা নামক স্থান দিয়ে চলার পথে আবু যার (রাঃ)-এর সাথে আমার সাক্ষাত হলো। আমি তাঁকে বললাম, আপনি এখানে কি কারণে আসলেন? তিনি বললেন, আমি সিরিয়ায় অবস্থানকালে নিম্নোক্ত আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে আমার ও মু'আবিয়া (রাঃ)-এর মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। আয়াতটি হলো-
............................
অর্থাৎ যারা সোনা-রুপা জমা করে রাখে এবং আল্লাহর রাস্তায় তা ব্যয় করে না...। মুআবিয়া (রাঃ) বলেন, এ আয়াত কেবল আহলে কিতাবদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি বললাম, আমাদের ও তাদের সকলের সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়েছে। এ নিয়ে আমাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এক সময় মু'আবিয়া (রাঃ) উসমান (রাঃ)-এর নিকট আমার নামে অভিযোগ করে পত্র পাঠালেন। তিনি পত্রযোগে আমাকে মদীনায় ডেকে পাঠান। মদীনায় পৌছলে আমাকে দেখতে লোকেরা এত ভিড় করলো যে, এর পূর্বে যেন তারা কখনো আমাকে দেখেনি।উসমান (রাঃ)-এর নিকট ঘটনা বিবৃত করলে তিনি আমাকে বললেন, ইচ্ছা করলে আপনি মদীনার বাইরে নিকটে কোথাও থাকতে পারেন। এ হল আমার এ স্থানে অবস্থানের কারণ। খলীফা যদি কোন হাবশী লোককেও আমার উপর কর্তৃত্ব প্রদান করেন তবুও আমি তাঁর কথা শুনব এবং আনুগত্য করব।
১৩৩৫। হাদীসঃ হযরত আহনাফ ইবনে কায়স (রঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি কুরাইশ গোত্রীয় লোকের সাথে বসেছিলাম, এমন সময় রুক্ষ্ম চুল, মোটা কাপড় ও খসখসে শরীর বিশিষ্ট এক ব্যক্তি তাদের নিকট এসে সালাম দিয়ে বলল, যারা সম্পদ জমা করে রাখে তাদেরকে এমন গরম পাথরের সংবাদ দাও, যা তাদেরকে শাস্তি প্রদানের জন্য জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে রাখে তাদেরকে এমন গরম পাথরের সংবাদ দাও, যা তাদেরকে শাস্তি প্রদানের জন্য জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হচ্ছে। তা তাদের স্তনের বোঁটার উপর স্থাপন করা হবে আর তা কাঁধের পেশী ভেদ করে বের হবে এবং কাঁধের ওপর স্থাপন করা হবে, তা নড়াচড়া করে সজোরে স্তনের বোঁটা ছেদ করে বের হবে। এরপর লোকটি ফিরে গিয়ে একটি স্তম্ভের পাশে বসলো। আমিও তাঁর অনুগমন করলাম ও তাঁর কাছে বসলাম এবং আমি জানতাম না সে কে। আমি তাকে বললাম আমার মনে হয় যে, আপনার বক্তব্য লোকেরা পছন্দ করেনি। তিনি বললেন, তারা কিছুই বুঝে না। কথাটি আমাকে আমার বন্ধু বলেছেন। বারী বলেন, আমি বললাম, আপনার বন্ধু কে? সে বলল, তিনি হলেন রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম। [রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেন] হে আবু যার তুমি কি উহুদ পাহাড় দেখেছ? তিনি বলেন, তখন আমি সূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দিনের কতটুকু অংশ বাকি রয়েছে। আমার ধারণা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোন প্রয়োজনে আমাকে পাঠাবেন। আমি জওয়াবে বললাম, জী-হাঁ। তিনি বললেন, তিনটি দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) ব্যতীত উহুদ পাহাড় সমান স্বর্ণস্তুপ আমার কাছে আসুক আর আমি সেগুলো দান করে দেই তাও আমি নিজের জন্য পছন্দ করি না। [আবু যার (রাঃ) বলেন] তারা তো বুঝে না, তারা শুধু দুনিয়ার সম্পদই একত্রিত করছে। আল্লাহর কসম, না! না! আমি তাদের নিকট দুনিয়ার কোন সম্পদ চাই না এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করা পর্যন্ত দ্বীন সম্পকেও তাদের নিকট কিছু জিজ্ঞাসা করবো না।
অনুচ্ছেদ নং ৫ঃ ধন সম্পদ (হক অনুসারে) সৎপথে ব্যয় করা।
১৩৩৬। হাদীসঃ হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, দু'ব্যক্তি ছাড়া আর কারো ব্যাপারে ঈর্ষা বৈধ নয়। (এক) যাকে মহান আল্লাহ ধন সম্পদ দিয়েছেন এবং তাকে তা সৎকাজে ব্যয় করার যথেষ্ট মনোবলও প্রদান করেছেন। (দুই) সে ব্যক্তি, যাকে মহান আল্লাহ হেকমত (জ্ঞান) দান করেছেন, সে উক্ত জ্ঞান দ্বারা সঠিক মীমাংসা করে এবং লোকদেরকেও শিক্ষা দান করে।
অনুচ্ছেদ নং ৬ঃ দান-খয়রাতে লোক দেখানোর ইচ্ছা। মহান আল্লাহর বাণী-
...............
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ তোমরা খোঁটা ও ক্লেশ দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বিনষ্ট কর না, ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে (শুধু) লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে স্বীয় অর্থ দান করে এবং আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান পোষণ করে না। সুতরাং ঐ ব্যক্তির উপমা এরুপ যেমন এক বৃহৎ মসৃন পাথর, যার উপর কিছু পরিমাণ মাটি জমে থাকে অতঃপর তাতে প্রচন্ড বৃষ্টিপাত হয়; তখন সেটাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দেয়। তদ্রুপ দানের মাধ্যমে তারা যা কিছু অর্জন করেছে তা দ্বারা কপটতা ও লোক দেখানো উদ্দেশ্যে হওয়ার কারণে কোন বিষয়েই তারা সুফল পাবে না এবং আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ দেখান না (সুরা বাকারা ২৬৪)
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, সালদান শব্দের অর্থ এমন বস্তু যার উপর কোন চিহ্ন নেই। ইকরিমা (রঃ) বলেন, ওয়াবিল শব্দের অর্থ প্রচন্ড বৃষ্টিপাত আর তিল্লুন শব্দের অর্থ শিশির বা হালকা বৃষ্টি।
অনুচ্ছেদ নং ৭ঃ হারাম মালের দান খয়রাত আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় নয়, একমাত্র হালালাই গ্রহণীয়।
মহান আল্লাহর বাণীঃ
...........................
অর্থাৎ যে দানের পিছনে ক্লেশ রয়েছে সে দান অপেক্ষা উত্তম বাক্য ও ক্ষমা উৎকৃষ্টতর এবং আল্লাহর মহাসম্পদশালী ও সহিষ্ণু। (বাকারা-২৬৩)
অনুচ্ছেদ নং ৮ঃ বৈধ উপায়ে অর্জিত মাল সম্পদ থেকে দান সদকা করা । মহান আল্লাহর বাণীঃ
...................................
অর্থঃ আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করেন ও দানকে বর্ধিত করেন এবং আল্লাহ পাপিষ্ঠ কাফেরদেরকে ভালবাসেন না। নিশ্চয় যারা ঈমান আনে, সৎকাজ করে, নামাজ কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট পুরষ্কার রয়েছে। (পরকালে) তাদের জন্য (কোনোরুপ বিপদের) আশংকা নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। বাকারা(২৭৬-২৭৭)
১৩৩৭। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি বৈধ উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ বস্তু দান করে (আর আল্লাহ পবিত্র বস্তু ছাড়া কবুল করেন না), আল্লাহ ঐ দান নিজের ডান হাতে গ্রহণ কনে, অতঃপর তিনি তা গ্রহনকারীর জন্য পরিপোষণ করতে থাকেন যেভাবে তোমাদের কেউ নিজের অশ্বশাবক পরিপোষণ করে থাকে। শেষ পর্যন্ত ঐ দান সদকা পাহাড় সমতুল্য হয়ে যায়।
অনুচ্ছেদ নং ৯ঃ গ্রহণকারীর প্রত্যাখ্যানের পূর্বেই দান করা উচিত।
১৩৩৮। হাদীসঃ হযরত হারেসা ইবনে ওহাব (রাঃ) বলেন, আমি নবী করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমরা (তাড়াতাড়ি) দান কর। কেননা তোমাদের উপর এমন এক সময় আসবে, যখন মানুষ যাকাত নিয়ে ঘুরতে থাকবে, অথচ এমন কাউকে খুঁজে পাবে না যে তা গ্রহণ করবে। লোকেরা বলবে, যদি গতকল্য তুমি এ নিয়ে আসতে তবে অবশ্যই আমি তা গ্রহণ করতাম, কিন্তু আজ আমার প্রয়োজন নেই।
১৩৩৯। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত তোমাদের মাঝে ধন সম্পদের এতটা প্রাচুর্য দেখা না দেবে যে, তা (ধনভান্ডার ভর্তি হয়ে) উপচে পড়ছে। এমন কি সম্পদের মালিক তখন ভাবনায় পড়বে, কে তার দান (যাকাত) গ্রহণ করবে এবং সে ঐ সম্পদ (দানের জন্য) পেশ করবে, কিন্তু যার সামনেই তা পেশ করবে সেই বলবে, আমার (ধন সম্পদের) প্রয়োজন নেই।
১৩৪০। হাদীসঃ হযরত আদী ইবনে হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ছিলাম, এমন সময় দু'জন সাহাবী আসলেন, তাদের একজন দারিদ্রের অভিযোগ করছিলেন আর অপরজন রাহাজানির অভিযোগ করছিলেন। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রাহাজানির অবস্থা এই যে, কিছু দিন পর এমন সময় আসবে যখন কাফেলা মক্কা পর্যন্ত বিনা পাহারায় পৌছে যাবে। আর দারিদ্রের অবস্থা এই যে, তোমাদের কেউ সাদকা নিয়ে ঘোরাফিরা করবে, কিন্তু তা গ্রহণ করার মত কাউকে পাবে না। এমন সময় না আসা পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবে না। তারপর (বিচার দিবসে) আল্লাহর নিকট তোমাদের কেউ এমনভাবে খাড়া হবে যে, তার ও আল্লাহর মাঝে কোন আড়াল থাকবে না বা কোন ব্যাখ্যাকারী দোভাষীও থাকবে না। এরপর তিনি বলবেন,আমি কি তোমার নিকট রাসূল প্রেরণ করিনি? সে অবশ্যই বলবে হ্যাঁ, কখন সে ব্যক্তি ডান দিকে তাকিয়ে শুধু আগুন দেখতে পাবে তেমনিভাবে বাম দিকে তাকিয়েও আগুন দেখতে পাবে। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকের উচিত এক টুকরা খেজুর (সাদকা) দিয়ে হলেও যেন আগুন থেকে আত্মরক্ষা করা। যদি কেউ তা না পায় তবে যেন উত্তম কথা দিয়ে হলেও।
১৩৪১। হাদীসঃ হযরত আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মানুষের উপর এমন এক যমানা আসবে, যখন মানুষ যাকাতের স্বর্ণ (মালামাল) নিয়ে ইতস্ততঃ ঘুরতে থাকবে, কিন্তু এমন কাউকে সে খুঁজে পাবে না যে তার কাছ থেকে তা গ্রহণ করবে। আরো দেখা যাবে, পুরুষের সংখ্যা স্বল্পতা এবং নারীদের সংখ্যাধিক্যের কারণে চল্লিশ জন নারী একজন পুরুষের অধীন থাকবে এবং তার আশ্রয় গ্রহণ করবে।
অনুচ্ছেদ নং ১০ঃ এক টুকরা খেজুর কিংবা আরো নগণ্য কিছু দান করে হলেও দোযখের আগুন থেকে বেঁচে থাক। মহান আল্লাহ বলেন-
............................
অর্থঃ যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য মানসিক দৃঢ়তা সহকারে নিজেদের ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ হল এবং তাতে রয়েছে সব প্রকারের ফল ফলাদি। (সূরা বাকারা ২৬৫-২৬৬)
আয়াতের তাৎপর্য এই যে, খালেছ নিয়তে আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় দান খয়রাত উল্লিখিত জমিতুল্য, তাই খালেছ নিয়তে অধিক পরিমাণ আল্লাহর রাস্তায় দান করলে অত্যধিক প্রতিফল লাভে কোন সন্দেহ নেই। আর খালেছ নিয়তে অল্প পরিমাণ দান করলে তাতেও যথেষ্ট প্রতিফল লাভ হবে, যেরুপ উর্বরত জমিতে বৃষ্টি কম হলেও যথেষ্ট পরিমান ফসল লাভ হয়ে থাকে।
১৩৪২। হাদীসঃ হযরত আবু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন যাকাত ও দান সদকা সম্পর্কিত আয়াত অবতীর্ণ হয়, তখন আমরা শ্রমের কাজ করতাম। এমন সময় আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) নামে এক ব্যক্তি এসে বহু অর্থ সম্পদ দান করেন। তখন মোনাফেকরা বলতে লাগল, এ লোকটি রিয়াকার (লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে দান করেছে)। তারপর অপর এক ব্যক্তি (আবু আকীর আনসারী) এসে মাত্র এক সা (তিন সের এগার ছটাক) বস্তু দান করলেন। তখন মোনাফেকরা বলল, মহান আল্লাহ এর (এ সামান্য বস্তুর) মুখাপেক্ষী নন। তখন নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়-
.................................
অর্থঃ যারা সদকা প্রদানে আগ্রহী মোমেনদেরকে বিদ্রুপ করে এবং যারা পরিশ্রম দ্বারা অর্থ উপার্জন করে, তাদেরকে যারা উপহাস করে, মহান আল্লাহ অচিরেই তাদেরকে উপহাস করবেন আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (তওবা ৭৯)
১৩৪৩। হাদীসঃ হযরত আবু মাসউদ আনসারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমাদেরকে দান (সদকা) করার আদেশ করেন, তখন আমাদের কেউ কেউ বাজারে চলে যেত এবং বোঝা বহন করে এক 'মুদ' (দেশীয় ওজনে প্রায় এক সের) মজুরি লাভ করত এবং তা থেকে দান করত। আর আজ তাদের কেউ কেউ লাখপতি।
১৩৪৪। হাদীসঃ হযরত আদী ইবনে হাতেম (রাঃ) বলেন, আমি নবী করীম সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, এক টুকরা খেজুর দান করে হলেও তোমরা দোযখের আগুন থেকে বাঁচ।
১৩৪৫। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ভিখারিণী দু'টি শিশু কন্যা সংগে করে আমার নিকট এসে কিছু চাইল। আমার নিকট একটি খেজুর ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। আমি তাকে তা দিলাম। সে নিজে না খেয়ে খেজুরটি দু'ভাগ করে কন্যা দু'টিকে দিয়ে দিল। এরপর ভিখারিণী বেরিয়ে চলে গেলে সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাাদের নিকট আসলেন। তাঁর নিকট ঘটনা বিবৃত করলে তিনি বললেন, যাকে এরুপ কন্যা সন্তানের ব্যাপারে কোনরুপ পরীক্ষা করা হয় তবে সে কন্যা সন্তান তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে পর্দা হয়ে দাঁড়াবে।
অর্থঃ আমি তোমাদেরকে যে উপজীবিকা দান করেছি মৃত্যুর পূর্বে তা থেকে ব্যয় কর। মহান আল্লাহ আরো বলেন-
......................................
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে উপজীবিকা দান করেছি তা থেকে ঐদিন (কিয়ামত) আসার পূর্বে ব্যয় কর, যে দিন কোন ক্রয়, বিক্রয় হবে না বন্ধত্ব থাকবে না এবং কোন সুপারিশ চলবে না।
১৩৪৬। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে এসে জিজ্ঞাস করল, হে আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কোন দান সর্বাধিক পূণ্যের? তিনি বললেন, তুমি সুস্থ এবং অর্থের প্রয়োজন থাকা অবস্থায় দারিদ্রের আশংকা করছ, ধনী হওয়ার আকাঙ্খা পোষণ করছ, এমন অবস্থায় যে দান সদকা করবে আর এ সময় পর্যন্ত বিলম্ব করবে না যখন তোমার প্রাণ হবে কষ্ঠাগত, আর তখন তুমি বলবে, অমুককে এত অমুককে এত এত দান করলাম (অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বক্ষণের দান দান নয়), কারণ তা তো কখন অপরের হয়ে যায়।
অনুচ্ছেদ নং ১২ঃ দানশীল ব্যক্তিরা সর্বাগ্রে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
১৩৪৭। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী করীম সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন এক স্ত্রী তাঁকে এক সময় জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের মধ্যে কে সবার আগে আপনার সাথে মিলিত হবেন (মৃত্যু হবে)। হুযুর সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে যে দীর্ঘ হস্তের অধিকারিণী। অতঃপর হুযুর সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিবিগণ একটি কাঠি নিয়ে নিজেদের হাত মেপে দেখেন, তাঁদের মধ্যে হযরত সওদা (রাঃ) সর্বাপেক্ষা দীর্ঘ হস্তের অধিকারিণী দেখা যায়। পরে সবার আগে হযরত যয়নব (রাঃ)-এর মৃত্যু হলে আমরা বুঝতে পারলাম, দীর্ঘ হাতের অর্থ দানশীলতা। কারণ তিনি আমাদের মধ্যে সবার আগে হুযুর সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মিলিত হন (মৃত্যুবরণ করেন)। তিনি দান সদকা করত সর্বাপেক্ষা বেশি ভালবাসতেন।
অনুচ্ছেদ নং ১৩ঃ প্রকাশ্যে দান সদকা করা । মহান আল্লাহ বলেন-
.........................................
অর্থঃ যারা দিনে রাত্রে, প্রকাশ্যে গোপনে নিজেদের ধন সম্পদ দান করে, তাদের জন্য রয়েছে তাদের পালনকর্তার নিকট পুরস্কার, তাদের কোন আশংকার কারণ নেই এবং তারা কখনো চিন্তিত হবে না। (সূরা বাকারা: আয়াত ২৭৪)
অনুচ্ছেদ নং ১৪ঃ গোপন দান করা। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী করীম সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি এতটা গোপনে দান করল যে, তার ডান হাত কি খরচ করল তা তার বাম হাতও জানল না। মহান আল্লাহর বাণীঃ
...........................................
অর্থঃ যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান কর তবে তা উৎকৃষ্ট, আর যদি তোমরা তা গোপনে কর এবং দরিদ্রকে প্রদান কর তবে সেটাও তোমাদের জন্য উত্তম। আর (এ দানের বরকতে) আল্লাহ তায়ালা তোমাদের পাপও মোচন করে দেবেন। আল্লাহ তোমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে পুরোপুরি খবর রাখেন। (বাকারা-২৭১)
অনুচ্ছেদ নং ১৫ঃ সদকাদাতা অজান্তে কোন ধনী ব্যক্তিকে যাকাত বা সদকা দিলে।
১৩৪৮। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (পূর্ববর্তী উম্মাতের মধ্যে) এক ব্যক্তি বলল, আমি কিছু সাদকা করব। সাদকা নিয়ে বের হয়ে (ভুলে) সে এক চোরের হাতে তা দিয়ে দিল। সকালে লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো, চোরকে সাদকা দেওয়া হয়েছে। এতে সে বলল, হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনারই, আমি অবশ্যই সাদকা করব। সাদকা নিয়ে বের হয়ে তা এক ব্যভিচাারিণীর হাতে দিল। সকালে লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, রাতে এক ব্যভিচারীনীকে সাদকা দেওয়া হয়েছে। লোকটি বলল, হে আল্লাহ! সকল প্রসংশা আপনারই (আমার সাদকা) ব্যভিচারিণীর হাতে পৗছল! আমি অবশ্যই সাদকা করব। এরপর সে সাদকা নিয়ে বের হয়ে কোন এক ধনী ব্যক্তির হাতে দিল। সকালে লোকেরা বলতে লাগলো, ধনী ব্যক্তিকে সাদকা দেওয়া হয়েছে। লোকটি বলল, হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনারাই, (আমার সাদকা), চোর, ব্যভিচারীণী ও ধনী ব্যক্তির হাতে গিয়ে পড়লো! পরে স্বপন যোগে তাকে বলা হলো, তোমার সাদকা চোর পেয়েছে, সম্ভবত সে চুরি করা হতে বিরত থাকবে, তোমার সাদকা ব্যভিচারিণী পেয়েছে সম্ভবত এজন্য যে, সে তার ব্যভিচার থেকে পবিত্র থাকবে আর ধনী ব্যক্তি তোমার সাদকা পেয়েছে, সম্ভবত সে শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং আল্লাহর দেওয়া সম্পদ থেকে সাদকা করবে।
অনুচ্ছেদ নং ১৬ঃ অজ্ঞাতে নিজের পুত্রকে দান করা।
১৩৪৯। হাদীসঃ হযরত মা'ন ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিন বলেন, আমি আমার পিতা (ইয়াযীদ) ও আমার দাদা (আখনাস) সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বায়'আত করলাম। তিনি আমার বিবাহের প্রস্তাব করেন এবং আমার বিবাহ সম্পন্ন করে দেন। আমি তাঁর কাছে (একটি বিষয়ে) বিচারপ্রার্থী হই। তা হলো, একদা আমার পিতা ইয়াযীদ কিছু স্বর্ণ মুদ্রা সাদকা করার নিয়তে মসজিদে এক ব্যিক্তির নিকট রেখে (তাকে তা বিরতরণ করার সাধারণ অনুমতি দিয়ে) আসেন। আমি সে ব্যক্তির নিকট তা গ্রহণ করে পিতার নিকট আসলাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! তোমাকে দেওয়ার ইচ্ছা আমার ছিল না। বিষয়টি সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পেশ করলাম। তিনি বললেন, হে ইয়াযীদ! তুমি যে নিয়ত করেছে, তা তুমি পাবে আর হে মা'ন! তুমি যা গ্রহণ করেছ তা তোমারই।
অনুচ্ছে নং ১৭ঃ ডান হাতে দান করা।
১৩৫০। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) নবী করীম সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রেওয়ায়াত করেন, তিনি বলেছেন, সাত ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ তাঁর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন। যেদিন তার ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না।
(১) ন্যায়পরাণ বাদশাহ, (২) ঐ যুবক, যে আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে বড় হয়েছে, (৩) ঐ ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের সাথে লেগে রয়েছে। অর্থাৎ নামাযের জন্য যে সর্বদা ব্যস্ত থাকে, (৪) ঐ দু'ব্যক্তি, যারা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একে অপরকে ভালবেসেছে এবং তাতে অবিচল রয়েছে, কিংবা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে (৫) ঐ ব্যক্তি, যাকে কোন অভিজাত সুন্দরী রমণী ব্যভিচারের দিকে আহবান করে আর তদুত্তরে সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি, (৬) ঐ ব্যক্তি , যে আল্লাহর রাস্তায় কিছু দান করল এবং তা এতটা গোপনে করল যে, তার বাম হাত জানতে পারল না ডান হাত কি দান করেছে, (৭) ঐ ব্যক্তি, যে নির্জনে একাকী বসে বসে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার চোখ দু'টো আল্লাহর ভয়ে অশ্রুপাত করে।
১৩৫১। হাদীসঃ হযরত হারিসা ইবনে ওহাব খুযা'রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমরা সাদকা কর। কেননা অচিরেই তোমাদের উপর এমন সময় আসবে যখন মানুষ সাদকার মাল নিয়ে ঘুরে বেড়াবে, তখন গ্রহীতা বলবে, গতকাল নিয়ে এলে অবশ্যই গ্রহণ করতাম কিন্তু আজ এর কোন প্রয়োজন আমার নেই।
অনুচ্ছেদ নং ১৮ঃ যে ব্যক্তি তার খাদেমকে দান করতে বলল, নিজের হাতে দান করল না। আবু মুসা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, সে (খাদেম) ও দানকারী হিসেবে পরিগণিত হবে।
১৩৫২। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, স্ত্রী যদি তার ঘর থেকে বিপর্যয় সৃষ্টির উদ্দেশ্য ব্যতিরেকে খাদ্যদ্রব্য সাদকা করে তবে এ জন্যে সে সওয়াব পাবে আর উপার্জন করার কারণে স্বামীও সওয়াব পাবে এবং কাজাঞ্চীও অনুরুপ সওয়াব পাবে। তাদের একজনের কারণে অন্যজনের সওয়াবে কোন কম হবে না।
অনুচ্ছেদ নং ১৯ঃ সচ্ছলতা বজায় রেখে দান-খয়রাত করা উচিত। যে ব্যক্তি দান করল অথচ সে নিজেই অভাবী কিংবা তার পরিবার পরিজন অভাবগ্রস্থ, অথবা সে ঋণগ্রস্থ, এমতাবস্থায় (তার জন্য) দান, হেবা (উপঢৌকন) ও গোলাম আযাদ করার চাইতে ঋণ পরিশোধ সর্বাধিক জরুরী। এরুপ দান (আল্লাহর নিকট) প্রত্যাখাত। কেননা অন্যের মাল বিনষ্ট করার অধিকার তার (দানকারীর) নেই। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি লোকদের মাল বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে অন্যের সম্পদ হস্তগত করে আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে ছাড়বেন। হাঁ যদি ঐ ব্যক্তি (দানকারী) ধৈর্যশীল হিসাবে সুপরিচিত হয় এবং নিজের অসচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও অপরকে নিজের ওপর অগ্রাধিকার দিতে সক্ষম হয় (তবে তার কথা স্বতন্ত্র)। যেমন আবু বকর (রাঃ) করেছেন, তিনি যখন নিজের ধন সম্পদ দান করলেন, তখন সব সম্পদ দান করে দিলেন। এমনিভাবে আনসারগণ মুহাজিরদেরকে নিজেদের ওপর অগ্রাধিকার দিয়েছেন। আর (যেহেতু) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহিহ ওয়াসাল্লাম ধন-সম্পদ বিনষ্ট করতে নিষেধ করেছেন সুতরাং দানের নামে লোকদের ধন-সম্পদ বিনষ্ট করার অধিকার দাতার নেই। তবে ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, আমি বললাম হে আল্লাহর রাসুল! আমার তাওবা কবুল হওয়ার কারণে আমি আমার সমস্ত মাল আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উদ্দেশ্যে দান করে দিতে চাই। (কেননা এই মালের কারণেই আমি জিহাদের অংশ গ্রহণ করতে পারিনি) রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিছু মাল তোমার নিজের জন্য রাখ আর সেটাই তোমার জন্য উত্তম। আমি বললাম, আমি আমার খায়বারের (জমীনের) অংশটুকু নিজের জন্য রাখলাম।
১৩৫৩। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রেওয়ায়াত করেন, তিনি ইরশাদ করেছেন, অভাবমুক্ত থেকে যে দান সদকা করা হয়, সেটাই সর্বোত্তম দান এবং নিজের পোষ্য আত্মীয়দের থেকে দান সদকা শুরু কর।
১৩৫৫। হাদীসঃ হযরত ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মিম্বরের উপর থাকা অবস্থায় সাদকা করা ও ভিক্ষা করা থেকে বেঁচে থাকা ও ভিক্ষা করা সম্পর্কে উল্লেখ করে বলেন, উপরের হাত নীচের হাত অপেক্ষা উত্তম। উপরের হাত দাতার, নীচের হাত হলো ভিক্ষুকের।
অনুচ্ছেদ নং ২০ঃ দান খয়রাত করে খোঁটা দেওয়া নিন্দনীয়। মহান আল্লাহ বলেন-
...............................
অর্থঃ যারা নিজেদের ধন সম্পদ আল্লাহর রাহে ব্যয় করে অতঃপর যা ব্যয় করে তার জন্য গ্রহীতাকে খোঁটা দেয় না, ক্লেশ প্রদান করে না, তাদের জন্য তাদের পালনকর্তার নিকট রয়েছে মহা পুরস্কার, তাদের কোনরুপ আশংকা বা ভয় ভীতির কারণ নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাকারা: আয়াত ২৬২)
অনুচ্ছেদ নং ২১ঃ দান-সদকা একদিনও বিলম্ব না করে দ্রুত দান করা।
১৩৫৬। হাদীসঃ হযরত উকবা ইবনে হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের নামায আদায় করে তাড়াতাড়ি ঘরে প্রবেশ করলেন। তারপর দেরী না করে বের হয়ে আসলেন। আমি বললাম বা তাঁকে বলা হলো, তখন তিনি বললেন, ঘরে সাদকার একখন্ড সোনা রেখে এসেছিলাম কিন্তু রাত পর্যন্ত তা ঘরে থাকা আমি পছন্দ করিনি। কাজেই তা বন্টন করে দিয়ে এলাম।
অনুচ্ছেদ নং ২২ঃ দান-খয়রাতের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা এবং এ ব্যাপারে সুপারিশ করা।
১৩৫৭। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ঈদের দিন নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হন এবং দু'রাকাআত নামায আদায় করেন। এর আগে পরে তিনি আর কোন নামায পড়েননি। অতঃপর তিনি মহিলাদেরকে লক্ষ্য করে ওয়াজ নসীহত করেন। এ সময় হযরত বেলাল (রাঃ) তাঁর সাথে ছিলেন। তারপর তিনি তাদেরকে দান সদকা করার আদেশ দেন। তখন মহিলারা তাদের হাতের চুড়ি ও কানবালা খুলে দিতে লাগল।
১৩৫৮। হাদীসঃ হযরত আবু মূসা (আশ'আরী) (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কেউ কিছু চাইলে বা প্রয়োজনীয় কিছু চাওয়া হলে তিনি বলতেন, তোমরা সুপারিশ কর সওয়াব পাবে, আল্লাহ যেন তাঁর ইচ্ছা তাঁর রাসূলের মুখে চূড়ান্ত করেন।
১৩৫৯। হাদীসঃ হযরত আসমা বিনতে আবী বকর (রাঃ) বলেন, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, দান না করে সম্পদ অাঁকড়ে রেখো না। তা হলে তোমাদের ক্ষেত্রেও (না দিয়ে) আটকে রাখা হবে।
১৩৬০। হাদীসঃ হযরত আবদাহ ইবনে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (রাঃ) আসমা (রাঃ)-কে বলেছেন, দান না করে গুনে গুনে কোন কিছু সঞ্চয় করে রেখো না। তা হলে মহান আল্লাহও তোমাকে না দিয়ে জমা করে রাখবেন।
অনুচ্ছেদ নং ২৩ঃ সাধ্যানুসারে দান করা।
১৩৬১। হাদীসঃ হযরত আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি এক সময় রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি তাঁকে বললেন, তুমি সম্পদ জমা করে রেখো না, এরুপ করলে আল্লাহ তোমা থেকে তা আটকে রাখবেন। কাজেই সাধ্যানুসারে দান করতে থাক।
অনুচ্ছেদ নং ২৪ঃ সাদকা গুনাহ মিটিয়ে দেয়।
১৩৬২। হাদীসঃ হযরত হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) বলেন, তোমাদের মধ্যে কে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ফিতনা সম্পর্কিত হাদীস স্মরণ রেখেছে? হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি আরয করলাম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে বলেছেন, আমি ঠিক সেভাবেই তা স্মরণ রেখেছি। উমর (রাঃ) বললেন, তুমি [রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে] বড় দুঃসাহসী ছিলে, তিনি কীভাবে বলেছেন (বলত)? তিনি বলেন, আমি বললাম, (হাদীসটি হলোঃ) মানুষ পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি ও প্রতিবেশী নিয়ে ফিতনায় পতিত হবে আর নামায, সাদকা ও নেক কাজ সেই ফিতনা মিটিয়ে দিবে। সুলায়মান [অর্থাৎ আমাশ (রঃ] বলেন, আবু ওয়াইল কোন কোন সময় নামায, সাদকা এরপর সৎকাজ শব্দের স্থলে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ বলতেন। উমর (রাঃ) বলেন, আমি এ ধরনের ফিতনার কথা জানতে চাইনি, বরং যে ফিতনা সাগরের ঢেউয়ের ন্যায় প্রবল বেগে ছুটে আসবে। হুযায়ফা (রাঃ_ বলেন, আমি বললাম, আমীরুল মু'মিনীন! আপনার জীবনকালে ঐ ফিতনার কোন আংশকা নেই। ফিতনা ও আপনার মাঝে বন্ধ দরজা রয়েছে। উমর (রাঃ) প্রশ্ন করলেন, দরজা কি ভেঙ্গে দেওয়া হবে না কি খুলে দেওয়া হবে? হুযায়ফা (রাঃ) বলেন আমি বললাম, না, বরং ভেঙ্গে দেওয়া হবে। উমর (রা) বললেন, দরজা ভেঙ্গে দেওয়া হলে কোন দিন তা আর বন্ধ করা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, আমি বললাম সত্যই বলেছেন। আবু ওয়াইল (রাঃ) বলেন, দরজা বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? এ কথা হুযায়ফা (রাঃ) এর নিকট প্রশ্ন করে জানতে আমারা কেউ সাহসী হলাম না। তাই প্রশ্ন করতে মাসরুককে অনুরোধ করলাম। মাসরুক (রঃ) হুযায়ফা (রাঃ)-কে প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, দরজা হলেন উমর (রাঃ)। আমরা বললাম, আপনি দরজা বলে যাকে উদ্দেশ্য করেছেন, উমর (রাঃ) কি তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন? তিনি বললেন, হাঁ, আগামীকালের পূর্বে রাতের আগমণ যেমন সুচিন্তিত (তেমনি নিঃসন্দেহে তিনি তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন)। এর কারণ হলো, আমি তাঁকে এমন হাদীস বর্ণনা করেছি, যাতে কোন ভুল ছিল না।
অনুচ্ছেদ নং ২৫ঃ মুসলমান হলে মুশরিক অবস্থায় করা নেকের কাজও তৎসঙ্গে ধরা হয়।
১৩৬৩। হাদীসঃ হযরত হাকীম ইবনে হেযাম (রাঃ) বলেন, আমি একদা হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা অন্ধকার যুগে ধর্মকাজ মনে করে যে দান সদকা, দাসমুক্তি অথবা আত্মীয়তা রক্ষা ইত্যাদি করতাম, তার জন্য কোন প্রতিদান পাওয়া যাবে কি? হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অতীতের সমস্ত পুণ্য কাজ সহই তুমি মুসলমান হয়েছে। অর্থাৎ এ সব কিছুরই প্রতিদান পাওয়া যাবে।
অনুচ্ছেদ নং ২৬ঃ যে খাদেম কোন রুপ ক্ষতি না করে তার মনিবের আদেশে দান করে তার প্রতিদান প্রসঙ্গে।
১৩৬৪। হাদীসঃ হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি কোন মহিলা স্বামীর ক্ষতি সাধন না করে তার ঘর থেকেকিছু দান সদকা করে অথবা কাউকে কিছু খেতে দেয়, তবে সে তার দানের জন্য পুণ্য লাভ করবে এবং খাজাঞ্চীও অনুরুপ পুণ্য লাভ করবে। স্বামী এ জন্য পুণ্য লাভ করবে যেহেতু সে তা উপার্জন করেছে। আর স্ত্রী এ জন্য পাবে যেহেতু সে দান করেছে।
১৩৬৫। হাদীসঃ হযরত আবু মূসা (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে বিশ্বস্ত মুসলিম খাজাঞ্চী (আপন মালিক কর্তৃক) নির্দেশিত পরিমাণ সাদকার সবটুকু নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে সানন্দচিত্তে আদায় করে, কোন কোন সময় তিনি বাস্তবায়িত করে শব্দের স্থলে আদায় করে শব্দ বলেছেন, সে খাজাঞ্চী ও নির্দেশদাতার ন্যায় সাদকা দানকারী হিসাবে গণ্য।
অনুচ্ছেদ নং ২৭ঃ যে স্ত্রী ক্ষতিসাধন না করে স্বামীর ঘর থেকে কিছু দান খয়রাত করে কিংবা ক্ষেতে দেয় তার প্রতিদান প্রসঙ্গে।
১৩৬৬। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কোন স্ত্রীলোক স্বামীর ক্ষতি সাধন না করে স্বামীর ঘরের খাদ্য সামগ্রী থেকে কিছু দান করে , কিংবা যদি কোন স্ত্রী স্বামীর ঘর থেকে কাউকে কিছু খেতে দেয়। তবে সে এর সওয়াব পাবে এবং তার স্বামীও অনুরুপ সওয়াব পাবে, আর খাজাঞ্চীও অনুরুপ সওয়াব পাবে। স্বামী এ জন্য পাবে যে, যেহেতু সে উপার্জন করেছে। আর স্ত্রী এ জন্য পাবে যে, সে দান করেছে।
১৩৬৭। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাসাদের উদ্দেশ্য ব্যতীত স্ত্রী তার ঘরের খাদ্য সামগ্রী থেকে সাদকা করলে সে এর সওয়াব পাবে। উপার্জন করার কারণে স্বামীও সওয়াব পাবে এবং খাজাঞ্চীও সমপরিমাণ সওয়াব পাবে।
অনুচ্ছে নং ২৮ঃ দান-খয়রাতের সুফল। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
..................................
অর্থঃ যে ব্যক্তি দান করে এবং আল্লাহকে ভয় করে আর উত্তম ভিষয়কে সত্য বলে মানে, অচিরেই আমি তার জন্য (শান্তির) সহজ পথকে আরো সহজ করে দিব। কিন্তু যে ব্যক্তি কৃপণতা করে ও বেপরোয়া হয় এবং উক্ত বিষয়ে অসত্য আরেপ করে, সত্বরই আমি তার জন্য (শাস্তির পথকে সুগম করে দেব) (সুরা আলই-লাইল: ৫-১০)
অনুচ্ছেদ নং ২৯ঃ দানশীল ও কৃপণের উপমা।
১৩২৬। হাসীসঃ হযরত আবু হাইয়্যান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আবু যুরআ (রঃ)- রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেন। অর্থাৎ আদেশ পালন করতে ব্যতিক্রম করব না। অসম্পূর্ণ বা সীমা অতিক্রম উভয় দিকের ত্রুটিহীনরুপে ঐ কার্যগুলো সম্পাদন করব।
১৩২৭। হাদীসঃ হযরত ইবনে 'আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, 'আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে আরয করলো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা রাবীআ গোত্রের লোক, আমাদের ও আপনার (মদীনার) মাঝে মুযার গোত্রের কাফিররা প্রতিবন্ধক হয়ে রয়েছে। আমরা আপনার নিকট কেবল নিষিদ্ধ মাস(যুদ্ধ বিরতির মাস) ব্যতীত নির্বিঘ্নে আসতে পারি না। কাজেই এমন কিছু আমলের নিদের্শ দিন যা আমরা আপনার নিকট থেকে শিখে (আমাদের গোত্রের) অনুপস্থিতদেরকে সেদিকে দাওয়াত দিতে পারি। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদেরকে চারটি বিষয়ের আদেশ করছি ও চারটি বিষয় থেকে নিষেধ করছি। (পালনীয় বিষয়গুলো হলোঃ) আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা তথা সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহা নেই। (রাবী বলেন) এ কথা বলার সময় রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একক নিদের্শক) তাঁর হাতের আঙ্গুলী বদ্ধ করেন, নামায কায়েম করা, যাকাত আদায় করা ও তোমরা গণীমতের এক-পঞ্চমাংশ আদায় করবে এবং আমি তোমাদেরকে নিষেধ করছি যে, শুষ্ক কদুর খোলস, সবুজ রং প্রলেপযুক্ত পাত্র, খেজুর কান্ড নির্মিত পাত্র, তৈলজ পদার্থ প্রলেপযুক্ত মাটির পাত্র ব্যবহার করতে।
১৩২৮। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের পর আবু বকর (রাঃ)-এর খিলাফতকালে আরবের কিছু সংখ্যক লোক মুরতাদ হয়ে যায়। তখন উমর (রাঃ) [আবু বকর (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে] বললেন, আপনি (সে সব) লোকদের বিরুদ্ধে কিভাবে যুদ্ধ করবেন (যারা সম্পূর্ণ ধর্ম ত্যাগ করেনি বরং যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে মাত্র)? অথচ রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমি লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি। যে পর্যন্ত তারা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু' না বলে। আর যে ব্যক্তি এটা বলল, সে তার জান মাল আমার পক্ষ থেকে নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামের বিধান লংঘন করলে (শাস্তি দেওয়া যাবে), আর তার অন্তরের গভীরে (হৃদয়াভ্যন্তরে কুফরী বা পাপ লুকানো থাকলে এর) হিসাব-নিকাশ আল্লাহরি যিম্মায়। আবু বকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম তাদের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই আমি যুদ্ধ করবো যারা নামায ও যাকাতের মধ্যে পাথর্ক্য করবে, কেননা যাকাত হল সম্পদের উপর আরোপিত হক। আল্লাহর কসম, যদি তারা একটি মেষ শাবক যাকাত দিতেও অস্বীকার করে যা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তারা দিত, তাহলে যাকাত না দেওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে আমি অবশ্যই যুদ্ধ করব। উমর (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম, আল্লাহ আবু বকর (রাঃ)-এর হৃদয় বিশেষ জ্ঞানালোক উদ্ভাসিত করেছেন বিধায় তাঁর এ দৃঢ়তা, এতে আমি বুঝতে পারলাম তাঁর সিদ্ধান্তই যথার্থ।
অনুচ্ছেদ নং ২ঃ যাকাত দেওয়ার ব্যাপারে বায়আত তথা অঙ্গীকার গ্রহণ। মহান আল্লাহ বলেন-
...............
অর্থঃ যদি কাফেররা তওবা করে, নামায কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে, তা হলে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই । (সূরা তাওবা: ১১)
১৩২৯। হাদীসঃ হযরত জারীর বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে নামায কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা এবং প্রত্যেক মুসলমানের জন্য কল্যাণকামী হওয়ার বায়আত করেছি।
অনুচ্ছেদ নং ৩ঃ যাকাত না দেওয়ার গোনাহ ও শাস্তি। মহান আল্লাহর বাণী-
.......
অর্থঃ যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য সঞ্চিত করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে কঠিন শাস্তির সুসংবাদ প্রদান করুন। যে দিন সেসব (স্বর্ণ রৌপ্য) দোযখের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং তাদ্বারা তাদের ললাট; পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে এবং বলা হবে, এ সব কিছু তাই যা তোমরা দুনিয়াতে নিজেদের জন্য সঞ্চয় করে রেখেছিলেন, সুতরাং যা তোমরা সঞ্চিত করে রেখেছিলেন এখন তার স্বাদ গ্রহণ কর। (সূরা তওবাঃ আয়াত ৩৪-৩৫)
১৩৩০। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, উটের যা হক (যাকাত) রয়েছে, যদি উটের মালিক তা আদায় না করে, তবে কেয়ামতের দিন সে উট পূর্বের চেয়ে অধিক মোটা তাজা অবস্থায় তার মালিকের নিকট উপস্থিত হবে এবং খুর দ্বারা তাকে পিষ্ট করতে থাকবে। তদ্রুপ বকরীর যা হক রয়েছে, তার মালিক যদি তা আদায় না করে তবে কেয়ামতে ঐ বকরী পূর্বাপেক্ষা অধিক শক্তিশালী অবস্থায় মালিকের নিকট উপস্থিত হয়ে খুর দ্বারা তাকে দলন করতে এবং শিং দ্বারা গুঁতাতে থাকবে। নবী করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, সেটির হক সমূহের একটি হল, পানি পান করাবার স্থানে দোহন করা।
নবী করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, কেয়ামতের দিন তোমাদের কাউকে যেন চিৎকাররত অবস্থায় বকরী কাঁধে বহন করে উপস্তিত হতে না হয় এবং বলতে না হয়, হে মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমায় রক্ষা করুন। আর আমাকেও যেন বলতে না হয়, আল্লাহর শাস্তি থেকে তোমাকে রক্ষা করার জন্য আজ আমি কিছুই করতে পারি না। আমি তো আল্লাহর হুকুম আগেই জানিয়ে দিয়েছি।
আর তোমাদের কাউকে যেন চিৎকাররত কোন উট কাঁধে বহন করে উপস্থিত হতে না হয় এবং বলতে না হয়, হে মুহাম্মদ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে সাহায্য করুন এবং আমাকেও বলতে না হয়, তোমার ব্যাপারে আজ আমার কিছুই করার এখতিয়ার নেই। আমি তো পূর্বেই আল্লাহর হুকুম জানিয়ে দিয়েছি।
যাকাত দেওয়ার বায়আত
১৩৩১। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে (বিষের তীব্রতার কারণে) টেকো মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। সাপটি তার মুখের দু'পার্শ্বে কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত মাল। তারপর নবী করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করেন, আল্লাহ যাদেরকে তারা সে সম্পদশালী করেছেন অথচ তারা সে সম্পদ নিয়ে কাপর্ণ্য করছে, তাদের ধারণা করা উচিত নয় যে, সেই সম্পদ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, বরং উহা তাদের জন্য অকল্যাণকর হবে অচিরেই কিয়ামত দিবসে, তারা কার্পণ্য করছে তা দিয়ে তাদের গলদেশ শৃংখলাবদ্ধ করা হবে।অনুচ্ছেদ নং ৪ঃ যে মালের যাকাত আদায় করা হয় তা 'কানয' বা সঞ্চয়ের পর্যায়ে পড়ে না। কেননা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচ উকিয়ার (রুপা) কমে যাকাত নেই।
যাকাত আদায়কৃত মাল সঞ্চিত মালের শামিল নয়
১৩৩২। হাদীসঃ হযরত খালেদ ইবনে আসলাম (রাঃ) বলেন একদা আমরা আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) এর সাথে বের হলাম। এক বেদুঈন তাঁকে বললেন, আপনি আমাকে- .................... (যারা স্বর্ণ রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে...) আয়াতের মর্মার্থ বলে দিন। হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) বললেন, যে ব্যক্তি স্বর্ণ রৌপ্য সঞ্চিত করে রেখেছে এবং তার যাকাত আদায় করেনি, তার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ, অশুভ। আর প্রয়োজনের অতিরিক্তটুকু আল্লাহর পথে ব্যয় করার হুকুম যাকাত সম্পর্কিত নির্দেশ অবতীর্ণ হওয়ার আগেকার। অতঃপর যাকাতের আয়াত অবতীর্ণ করে আল্লাহ তা'আলা মাল পবিত্রকরণের উপকরণ বানিয়ে দিয়েছেন।১৩৩৩। হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচ আওকিয়ার কমে (রৌপ্যে) যাকাত নেই। পাঁচটি উটের কমে যাকাত নেই এবং পাঁচ ওয়াসাকের কমে (শস্যে) যাকাত নেই।
১৩৩৪। হাদীসঃ হযরত ইয়াযীদ ইবনে ওয়াহহাব (রঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাবাযা নামক স্থান দিয়ে চলার পথে আবু যার (রাঃ)-এর সাথে আমার সাক্ষাত হলো। আমি তাঁকে বললাম, আপনি এখানে কি কারণে আসলেন? তিনি বললেন, আমি সিরিয়ায় অবস্থানকালে নিম্নোক্ত আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে আমার ও মু'আবিয়া (রাঃ)-এর মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। আয়াতটি হলো-
............................
অর্থাৎ যারা সোনা-রুপা জমা করে রাখে এবং আল্লাহর রাস্তায় তা ব্যয় করে না...। মুআবিয়া (রাঃ) বলেন, এ আয়াত কেবল আহলে কিতাবদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি বললাম, আমাদের ও তাদের সকলের সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়েছে। এ নিয়ে আমাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এক সময় মু'আবিয়া (রাঃ) উসমান (রাঃ)-এর নিকট আমার নামে অভিযোগ করে পত্র পাঠালেন। তিনি পত্রযোগে আমাকে মদীনায় ডেকে পাঠান। মদীনায় পৌছলে আমাকে দেখতে লোকেরা এত ভিড় করলো যে, এর পূর্বে যেন তারা কখনো আমাকে দেখেনি।উসমান (রাঃ)-এর নিকট ঘটনা বিবৃত করলে তিনি আমাকে বললেন, ইচ্ছা করলে আপনি মদীনার বাইরে নিকটে কোথাও থাকতে পারেন। এ হল আমার এ স্থানে অবস্থানের কারণ। খলীফা যদি কোন হাবশী লোককেও আমার উপর কর্তৃত্ব প্রদান করেন তবুও আমি তাঁর কথা শুনব এবং আনুগত্য করব।
১৩৩৫। হাদীসঃ হযরত আহনাফ ইবনে কায়স (রঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি কুরাইশ গোত্রীয় লোকের সাথে বসেছিলাম, এমন সময় রুক্ষ্ম চুল, মোটা কাপড় ও খসখসে শরীর বিশিষ্ট এক ব্যক্তি তাদের নিকট এসে সালাম দিয়ে বলল, যারা সম্পদ জমা করে রাখে তাদেরকে এমন গরম পাথরের সংবাদ দাও, যা তাদেরকে শাস্তি প্রদানের জন্য জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে রাখে তাদেরকে এমন গরম পাথরের সংবাদ দাও, যা তাদেরকে শাস্তি প্রদানের জন্য জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হচ্ছে। তা তাদের স্তনের বোঁটার উপর স্থাপন করা হবে আর তা কাঁধের পেশী ভেদ করে বের হবে এবং কাঁধের ওপর স্থাপন করা হবে, তা নড়াচড়া করে সজোরে স্তনের বোঁটা ছেদ করে বের হবে। এরপর লোকটি ফিরে গিয়ে একটি স্তম্ভের পাশে বসলো। আমিও তাঁর অনুগমন করলাম ও তাঁর কাছে বসলাম এবং আমি জানতাম না সে কে। আমি তাকে বললাম আমার মনে হয় যে, আপনার বক্তব্য লোকেরা পছন্দ করেনি। তিনি বললেন, তারা কিছুই বুঝে না। কথাটি আমাকে আমার বন্ধু বলেছেন। বারী বলেন, আমি বললাম, আপনার বন্ধু কে? সে বলল, তিনি হলেন রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম। [রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেন] হে আবু যার তুমি কি উহুদ পাহাড় দেখেছ? তিনি বলেন, তখন আমি সূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দিনের কতটুকু অংশ বাকি রয়েছে। আমার ধারণা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোন প্রয়োজনে আমাকে পাঠাবেন। আমি জওয়াবে বললাম, জী-হাঁ। তিনি বললেন, তিনটি দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) ব্যতীত উহুদ পাহাড় সমান স্বর্ণস্তুপ আমার কাছে আসুক আর আমি সেগুলো দান করে দেই তাও আমি নিজের জন্য পছন্দ করি না। [আবু যার (রাঃ) বলেন] তারা তো বুঝে না, তারা শুধু দুনিয়ার সম্পদই একত্রিত করছে। আল্লাহর কসম, না! না! আমি তাদের নিকট দুনিয়ার কোন সম্পদ চাই না এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করা পর্যন্ত দ্বীন সম্পকেও তাদের নিকট কিছু জিজ্ঞাসা করবো না।
অনুচ্ছেদ নং ৫ঃ ধন সম্পদ (হক অনুসারে) সৎপথে ব্যয় করা।
১৩৩৬। হাদীসঃ হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, দু'ব্যক্তি ছাড়া আর কারো ব্যাপারে ঈর্ষা বৈধ নয়। (এক) যাকে মহান আল্লাহ ধন সম্পদ দিয়েছেন এবং তাকে তা সৎকাজে ব্যয় করার যথেষ্ট মনোবলও প্রদান করেছেন। (দুই) সে ব্যক্তি, যাকে মহান আল্লাহ হেকমত (জ্ঞান) দান করেছেন, সে উক্ত জ্ঞান দ্বারা সঠিক মীমাংসা করে এবং লোকদেরকেও শিক্ষা দান করে।
অনুচ্ছেদ নং ৬ঃ দান-খয়রাতে লোক দেখানোর ইচ্ছা। মহান আল্লাহর বাণী-
...............
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ তোমরা খোঁটা ও ক্লেশ দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বিনষ্ট কর না, ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে (শুধু) লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে স্বীয় অর্থ দান করে এবং আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান পোষণ করে না। সুতরাং ঐ ব্যক্তির উপমা এরুপ যেমন এক বৃহৎ মসৃন পাথর, যার উপর কিছু পরিমাণ মাটি জমে থাকে অতঃপর তাতে প্রচন্ড বৃষ্টিপাত হয়; তখন সেটাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দেয়। তদ্রুপ দানের মাধ্যমে তারা যা কিছু অর্জন করেছে তা দ্বারা কপটতা ও লোক দেখানো উদ্দেশ্যে হওয়ার কারণে কোন বিষয়েই তারা সুফল পাবে না এবং আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ দেখান না (সুরা বাকারা ২৬৪)
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, সালদান শব্দের অর্থ এমন বস্তু যার উপর কোন চিহ্ন নেই। ইকরিমা (রঃ) বলেন, ওয়াবিল শব্দের অর্থ প্রচন্ড বৃষ্টিপাত আর তিল্লুন শব্দের অর্থ শিশির বা হালকা বৃষ্টি।
অনুচ্ছেদ নং ৭ঃ হারাম মালের দান খয়রাত আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় নয়, একমাত্র হালালাই গ্রহণীয়।
মহান আল্লাহর বাণীঃ
...........................
অর্থাৎ যে দানের পিছনে ক্লেশ রয়েছে সে দান অপেক্ষা উত্তম বাক্য ও ক্ষমা উৎকৃষ্টতর এবং আল্লাহর মহাসম্পদশালী ও সহিষ্ণু। (বাকারা-২৬৩)
অনুচ্ছেদ নং ৮ঃ বৈধ উপায়ে অর্জিত মাল সম্পদ থেকে দান সদকা করা । মহান আল্লাহর বাণীঃ
...................................
অর্থঃ আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করেন ও দানকে বর্ধিত করেন এবং আল্লাহ পাপিষ্ঠ কাফেরদেরকে ভালবাসেন না। নিশ্চয় যারা ঈমান আনে, সৎকাজ করে, নামাজ কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট পুরষ্কার রয়েছে। (পরকালে) তাদের জন্য (কোনোরুপ বিপদের) আশংকা নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। বাকারা(২৭৬-২৭৭)
১৩৩৭। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি বৈধ উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ বস্তু দান করে (আর আল্লাহ পবিত্র বস্তু ছাড়া কবুল করেন না), আল্লাহ ঐ দান নিজের ডান হাতে গ্রহণ কনে, অতঃপর তিনি তা গ্রহনকারীর জন্য পরিপোষণ করতে থাকেন যেভাবে তোমাদের কেউ নিজের অশ্বশাবক পরিপোষণ করে থাকে। শেষ পর্যন্ত ঐ দান সদকা পাহাড় সমতুল্য হয়ে যায়।
অনুচ্ছেদ নং ৯ঃ গ্রহণকারীর প্রত্যাখ্যানের পূর্বেই দান করা উচিত।
১৩৩৮। হাদীসঃ হযরত হারেসা ইবনে ওহাব (রাঃ) বলেন, আমি নবী করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমরা (তাড়াতাড়ি) দান কর। কেননা তোমাদের উপর এমন এক সময় আসবে, যখন মানুষ যাকাত নিয়ে ঘুরতে থাকবে, অথচ এমন কাউকে খুঁজে পাবে না যে তা গ্রহণ করবে। লোকেরা বলবে, যদি গতকল্য তুমি এ নিয়ে আসতে তবে অবশ্যই আমি তা গ্রহণ করতাম, কিন্তু আজ আমার প্রয়োজন নেই।
১৩৩৯। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত তোমাদের মাঝে ধন সম্পদের এতটা প্রাচুর্য দেখা না দেবে যে, তা (ধনভান্ডার ভর্তি হয়ে) উপচে পড়ছে। এমন কি সম্পদের মালিক তখন ভাবনায় পড়বে, কে তার দান (যাকাত) গ্রহণ করবে এবং সে ঐ সম্পদ (দানের জন্য) পেশ করবে, কিন্তু যার সামনেই তা পেশ করবে সেই বলবে, আমার (ধন সম্পদের) প্রয়োজন নেই।
১৩৪০। হাদীসঃ হযরত আদী ইবনে হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ছিলাম, এমন সময় দু'জন সাহাবী আসলেন, তাদের একজন দারিদ্রের অভিযোগ করছিলেন আর অপরজন রাহাজানির অভিযোগ করছিলেন। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রাহাজানির অবস্থা এই যে, কিছু দিন পর এমন সময় আসবে যখন কাফেলা মক্কা পর্যন্ত বিনা পাহারায় পৌছে যাবে। আর দারিদ্রের অবস্থা এই যে, তোমাদের কেউ সাদকা নিয়ে ঘোরাফিরা করবে, কিন্তু তা গ্রহণ করার মত কাউকে পাবে না। এমন সময় না আসা পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবে না। তারপর (বিচার দিবসে) আল্লাহর নিকট তোমাদের কেউ এমনভাবে খাড়া হবে যে, তার ও আল্লাহর মাঝে কোন আড়াল থাকবে না বা কোন ব্যাখ্যাকারী দোভাষীও থাকবে না। এরপর তিনি বলবেন,আমি কি তোমার নিকট রাসূল প্রেরণ করিনি? সে অবশ্যই বলবে হ্যাঁ, কখন সে ব্যক্তি ডান দিকে তাকিয়ে শুধু আগুন দেখতে পাবে তেমনিভাবে বাম দিকে তাকিয়েও আগুন দেখতে পাবে। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকের উচিত এক টুকরা খেজুর (সাদকা) দিয়ে হলেও যেন আগুন থেকে আত্মরক্ষা করা। যদি কেউ তা না পায় তবে যেন উত্তম কথা দিয়ে হলেও।
১৩৪১। হাদীসঃ হযরত আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মানুষের উপর এমন এক যমানা আসবে, যখন মানুষ যাকাতের স্বর্ণ (মালামাল) নিয়ে ইতস্ততঃ ঘুরতে থাকবে, কিন্তু এমন কাউকে সে খুঁজে পাবে না যে তার কাছ থেকে তা গ্রহণ করবে। আরো দেখা যাবে, পুরুষের সংখ্যা স্বল্পতা এবং নারীদের সংখ্যাধিক্যের কারণে চল্লিশ জন নারী একজন পুরুষের অধীন থাকবে এবং তার আশ্রয় গ্রহণ করবে।
অনুচ্ছেদ নং ১০ঃ এক টুকরা খেজুর কিংবা আরো নগণ্য কিছু দান করে হলেও দোযখের আগুন থেকে বেঁচে থাক। মহান আল্লাহ বলেন-
............................
অর্থঃ যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য মানসিক দৃঢ়তা সহকারে নিজেদের ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ হল এবং তাতে রয়েছে সব প্রকারের ফল ফলাদি। (সূরা বাকারা ২৬৫-২৬৬)
আয়াতের তাৎপর্য এই যে, খালেছ নিয়তে আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় দান খয়রাত উল্লিখিত জমিতুল্য, তাই খালেছ নিয়তে অধিক পরিমাণ আল্লাহর রাস্তায় দান করলে অত্যধিক প্রতিফল লাভে কোন সন্দেহ নেই। আর খালেছ নিয়তে অল্প পরিমাণ দান করলে তাতেও যথেষ্ট প্রতিফল লাভ হবে, যেরুপ উর্বরত জমিতে বৃষ্টি কম হলেও যথেষ্ট পরিমান ফসল লাভ হয়ে থাকে।
১৩৪২। হাদীসঃ হযরত আবু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন যাকাত ও দান সদকা সম্পর্কিত আয়াত অবতীর্ণ হয়, তখন আমরা শ্রমের কাজ করতাম। এমন সময় আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) নামে এক ব্যক্তি এসে বহু অর্থ সম্পদ দান করেন। তখন মোনাফেকরা বলতে লাগল, এ লোকটি রিয়াকার (লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে দান করেছে)। তারপর অপর এক ব্যক্তি (আবু আকীর আনসারী) এসে মাত্র এক সা (তিন সের এগার ছটাক) বস্তু দান করলেন। তখন মোনাফেকরা বলল, মহান আল্লাহ এর (এ সামান্য বস্তুর) মুখাপেক্ষী নন। তখন নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়-
.................................
অর্থঃ যারা সদকা প্রদানে আগ্রহী মোমেনদেরকে বিদ্রুপ করে এবং যারা পরিশ্রম দ্বারা অর্থ উপার্জন করে, তাদেরকে যারা উপহাস করে, মহান আল্লাহ অচিরেই তাদেরকে উপহাস করবেন আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (তওবা ৭৯)
১৩৪৩। হাদীসঃ হযরত আবু মাসউদ আনসারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমাদেরকে দান (সদকা) করার আদেশ করেন, তখন আমাদের কেউ কেউ বাজারে চলে যেত এবং বোঝা বহন করে এক 'মুদ' (দেশীয় ওজনে প্রায় এক সের) মজুরি লাভ করত এবং তা থেকে দান করত। আর আজ তাদের কেউ কেউ লাখপতি।
১৩৪৪। হাদীসঃ হযরত আদী ইবনে হাতেম (রাঃ) বলেন, আমি নবী করীম সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, এক টুকরা খেজুর দান করে হলেও তোমরা দোযখের আগুন থেকে বাঁচ।
১৩৪৫। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ভিখারিণী দু'টি শিশু কন্যা সংগে করে আমার নিকট এসে কিছু চাইল। আমার নিকট একটি খেজুর ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। আমি তাকে তা দিলাম। সে নিজে না খেয়ে খেজুরটি দু'ভাগ করে কন্যা দু'টিকে দিয়ে দিল। এরপর ভিখারিণী বেরিয়ে চলে গেলে সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাাদের নিকট আসলেন। তাঁর নিকট ঘটনা বিবৃত করলে তিনি বললেন, যাকে এরুপ কন্যা সন্তানের ব্যাপারে কোনরুপ পরীক্ষা করা হয় তবে সে কন্যা সন্তান তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে পর্দা হয়ে দাঁড়াবে।
সুস্ততা এবং অর্থের প্রয়োজন থাকা অবস্থায় দান করার ফযীলত
অনুচ্ছেদ নং ১১ঃ কোন প্রকারের দান-খয়রাত উত্তম এং সুস্থ ও অর্থের প্রয়োজন থাকা অবস্থায় দান করার ফযীলত। মহান আল্লাহ বলেন-...............................অর্থঃ আমি তোমাদেরকে যে উপজীবিকা দান করেছি মৃত্যুর পূর্বে তা থেকে ব্যয় কর। মহান আল্লাহ আরো বলেন-
......................................
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে উপজীবিকা দান করেছি তা থেকে ঐদিন (কিয়ামত) আসার পূর্বে ব্যয় কর, যে দিন কোন ক্রয়, বিক্রয় হবে না বন্ধত্ব থাকবে না এবং কোন সুপারিশ চলবে না।
১৩৪৬। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে এসে জিজ্ঞাস করল, হে আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কোন দান সর্বাধিক পূণ্যের? তিনি বললেন, তুমি সুস্থ এবং অর্থের প্রয়োজন থাকা অবস্থায় দারিদ্রের আশংকা করছ, ধনী হওয়ার আকাঙ্খা পোষণ করছ, এমন অবস্থায় যে দান সদকা করবে আর এ সময় পর্যন্ত বিলম্ব করবে না যখন তোমার প্রাণ হবে কষ্ঠাগত, আর তখন তুমি বলবে, অমুককে এত অমুককে এত এত দান করলাম (অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বক্ষণের দান দান নয়), কারণ তা তো কখন অপরের হয়ে যায়।
অনুচ্ছেদ নং ১২ঃ দানশীল ব্যক্তিরা সর্বাগ্রে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
১৩৪৭। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী করীম সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন এক স্ত্রী তাঁকে এক সময় জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের মধ্যে কে সবার আগে আপনার সাথে মিলিত হবেন (মৃত্যু হবে)। হুযুর সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে যে দীর্ঘ হস্তের অধিকারিণী। অতঃপর হুযুর সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিবিগণ একটি কাঠি নিয়ে নিজেদের হাত মেপে দেখেন, তাঁদের মধ্যে হযরত সওদা (রাঃ) সর্বাপেক্ষা দীর্ঘ হস্তের অধিকারিণী দেখা যায়। পরে সবার আগে হযরত যয়নব (রাঃ)-এর মৃত্যু হলে আমরা বুঝতে পারলাম, দীর্ঘ হাতের অর্থ দানশীলতা। কারণ তিনি আমাদের মধ্যে সবার আগে হুযুর সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মিলিত হন (মৃত্যুবরণ করেন)। তিনি দান সদকা করত সর্বাপেক্ষা বেশি ভালবাসতেন।
অনুচ্ছেদ নং ১৩ঃ প্রকাশ্যে দান সদকা করা । মহান আল্লাহ বলেন-
.........................................
অর্থঃ যারা দিনে রাত্রে, প্রকাশ্যে গোপনে নিজেদের ধন সম্পদ দান করে, তাদের জন্য রয়েছে তাদের পালনকর্তার নিকট পুরস্কার, তাদের কোন আশংকার কারণ নেই এবং তারা কখনো চিন্তিত হবে না। (সূরা বাকারা: আয়াত ২৭৪)
অনুচ্ছেদ নং ১৪ঃ গোপন দান করা। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী করীম সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি এতটা গোপনে দান করল যে, তার ডান হাত কি খরচ করল তা তার বাম হাতও জানল না। মহান আল্লাহর বাণীঃ
...........................................
অর্থঃ যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান কর তবে তা উৎকৃষ্ট, আর যদি তোমরা তা গোপনে কর এবং দরিদ্রকে প্রদান কর তবে সেটাও তোমাদের জন্য উত্তম। আর (এ দানের বরকতে) আল্লাহ তায়ালা তোমাদের পাপও মোচন করে দেবেন। আল্লাহ তোমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে পুরোপুরি খবর রাখেন। (বাকারা-২৭১)
অনুচ্ছেদ নং ১৫ঃ সদকাদাতা অজান্তে কোন ধনী ব্যক্তিকে যাকাত বা সদকা দিলে।
১৩৪৮। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (পূর্ববর্তী উম্মাতের মধ্যে) এক ব্যক্তি বলল, আমি কিছু সাদকা করব। সাদকা নিয়ে বের হয়ে (ভুলে) সে এক চোরের হাতে তা দিয়ে দিল। সকালে লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো, চোরকে সাদকা দেওয়া হয়েছে। এতে সে বলল, হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনারই, আমি অবশ্যই সাদকা করব। সাদকা নিয়ে বের হয়ে তা এক ব্যভিচাারিণীর হাতে দিল। সকালে লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, রাতে এক ব্যভিচারীনীকে সাদকা দেওয়া হয়েছে। লোকটি বলল, হে আল্লাহ! সকল প্রসংশা আপনারই (আমার সাদকা) ব্যভিচারিণীর হাতে পৗছল! আমি অবশ্যই সাদকা করব। এরপর সে সাদকা নিয়ে বের হয়ে কোন এক ধনী ব্যক্তির হাতে দিল। সকালে লোকেরা বলতে লাগলো, ধনী ব্যক্তিকে সাদকা দেওয়া হয়েছে। লোকটি বলল, হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনারাই, (আমার সাদকা), চোর, ব্যভিচারীণী ও ধনী ব্যক্তির হাতে গিয়ে পড়লো! পরে স্বপন যোগে তাকে বলা হলো, তোমার সাদকা চোর পেয়েছে, সম্ভবত সে চুরি করা হতে বিরত থাকবে, তোমার সাদকা ব্যভিচারিণী পেয়েছে সম্ভবত এজন্য যে, সে তার ব্যভিচার থেকে পবিত্র থাকবে আর ধনী ব্যক্তি তোমার সাদকা পেয়েছে, সম্ভবত সে শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং আল্লাহর দেওয়া সম্পদ থেকে সাদকা করবে।
অনুচ্ছেদ নং ১৬ঃ অজ্ঞাতে নিজের পুত্রকে দান করা।
১৩৪৯। হাদীসঃ হযরত মা'ন ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিন বলেন, আমি আমার পিতা (ইয়াযীদ) ও আমার দাদা (আখনাস) সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বায়'আত করলাম। তিনি আমার বিবাহের প্রস্তাব করেন এবং আমার বিবাহ সম্পন্ন করে দেন। আমি তাঁর কাছে (একটি বিষয়ে) বিচারপ্রার্থী হই। তা হলো, একদা আমার পিতা ইয়াযীদ কিছু স্বর্ণ মুদ্রা সাদকা করার নিয়তে মসজিদে এক ব্যিক্তির নিকট রেখে (তাকে তা বিরতরণ করার সাধারণ অনুমতি দিয়ে) আসেন। আমি সে ব্যক্তির নিকট তা গ্রহণ করে পিতার নিকট আসলাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! তোমাকে দেওয়ার ইচ্ছা আমার ছিল না। বিষয়টি সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পেশ করলাম। তিনি বললেন, হে ইয়াযীদ! তুমি যে নিয়ত করেছে, তা তুমি পাবে আর হে মা'ন! তুমি যা গ্রহণ করেছ তা তোমারই।
অনুচ্ছে নং ১৭ঃ ডান হাতে দান করা।
১৩৫০। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) নবী করীম সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রেওয়ায়াত করেন, তিনি বলেছেন, সাত ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ তাঁর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন। যেদিন তার ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না।
(১) ন্যায়পরাণ বাদশাহ, (২) ঐ যুবক, যে আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে বড় হয়েছে, (৩) ঐ ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের সাথে লেগে রয়েছে। অর্থাৎ নামাযের জন্য যে সর্বদা ব্যস্ত থাকে, (৪) ঐ দু'ব্যক্তি, যারা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একে অপরকে ভালবেসেছে এবং তাতে অবিচল রয়েছে, কিংবা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে (৫) ঐ ব্যক্তি, যাকে কোন অভিজাত সুন্দরী রমণী ব্যভিচারের দিকে আহবান করে আর তদুত্তরে সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি, (৬) ঐ ব্যক্তি , যে আল্লাহর রাস্তায় কিছু দান করল এবং তা এতটা গোপনে করল যে, তার বাম হাত জানতে পারল না ডান হাত কি দান করেছে, (৭) ঐ ব্যক্তি, যে নির্জনে একাকী বসে বসে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার চোখ দু'টো আল্লাহর ভয়ে অশ্রুপাত করে।
১৩৫১। হাদীসঃ হযরত হারিসা ইবনে ওহাব খুযা'রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমরা সাদকা কর। কেননা অচিরেই তোমাদের উপর এমন সময় আসবে যখন মানুষ সাদকার মাল নিয়ে ঘুরে বেড়াবে, তখন গ্রহীতা বলবে, গতকাল নিয়ে এলে অবশ্যই গ্রহণ করতাম কিন্তু আজ এর কোন প্রয়োজন আমার নেই।
অনুচ্ছেদ নং ১৮ঃ যে ব্যক্তি তার খাদেমকে দান করতে বলল, নিজের হাতে দান করল না। আবু মুসা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, সে (খাদেম) ও দানকারী হিসেবে পরিগণিত হবে।
যে দানের সওয়াব তিনজনে পায়
১৩৫২। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম১৩৫২। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, স্ত্রী যদি তার ঘর থেকে বিপর্যয় সৃষ্টির উদ্দেশ্য ব্যতিরেকে খাদ্যদ্রব্য সাদকা করে তবে এ জন্যে সে সওয়াব পাবে আর উপার্জন করার কারণে স্বামীও সওয়াব পাবে এবং কাজাঞ্চীও অনুরুপ সওয়াব পাবে। তাদের একজনের কারণে অন্যজনের সওয়াবে কোন কম হবে না।
অনুচ্ছেদ নং ১৯ঃ সচ্ছলতা বজায় রেখে দান-খয়রাত করা উচিত। যে ব্যক্তি দান করল অথচ সে নিজেই অভাবী কিংবা তার পরিবার পরিজন অভাবগ্রস্থ, অথবা সে ঋণগ্রস্থ, এমতাবস্থায় (তার জন্য) দান, হেবা (উপঢৌকন) ও গোলাম আযাদ করার চাইতে ঋণ পরিশোধ সর্বাধিক জরুরী। এরুপ দান (আল্লাহর নিকট) প্রত্যাখাত। কেননা অন্যের মাল বিনষ্ট করার অধিকার তার (দানকারীর) নেই। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি লোকদের মাল বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে অন্যের সম্পদ হস্তগত করে আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে ছাড়বেন। হাঁ যদি ঐ ব্যক্তি (দানকারী) ধৈর্যশীল হিসাবে সুপরিচিত হয় এবং নিজের অসচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও অপরকে নিজের ওপর অগ্রাধিকার দিতে সক্ষম হয় (তবে তার কথা স্বতন্ত্র)। যেমন আবু বকর (রাঃ) করেছেন, তিনি যখন নিজের ধন সম্পদ দান করলেন, তখন সব সম্পদ দান করে দিলেন। এমনিভাবে আনসারগণ মুহাজিরদেরকে নিজেদের ওপর অগ্রাধিকার দিয়েছেন। আর (যেহেতু) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহিহ ওয়াসাল্লাম ধন-সম্পদ বিনষ্ট করতে নিষেধ করেছেন সুতরাং দানের নামে লোকদের ধন-সম্পদ বিনষ্ট করার অধিকার দাতার নেই। তবে ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, আমি বললাম হে আল্লাহর রাসুল! আমার তাওবা কবুল হওয়ার কারণে আমি আমার সমস্ত মাল আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উদ্দেশ্যে দান করে দিতে চাই। (কেননা এই মালের কারণেই আমি জিহাদের অংশ গ্রহণ করতে পারিনি) রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিছু মাল তোমার নিজের জন্য রাখ আর সেটাই তোমার জন্য উত্তম। আমি বললাম, আমি আমার খায়বারের (জমীনের) অংশটুকু নিজের জন্য রাখলাম।
১৩৫৩। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রেওয়ায়াত করেন, তিনি ইরশাদ করেছেন, অভাবমুক্ত থেকে যে দান সদকা করা হয়, সেটাই সর্বোত্তম দান এবং নিজের পোষ্য আত্মীয়দের থেকে দান সদকা শুরু কর।
অভাবমুক্ত অবস্থায় দান সর্বোত্তম দান
১৩৫৪।হাদীসঃ হযরত হাকীম ইবনে হেযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, উপরের হাত নীচের হাত অপেক্ষা উত্তম। নিজের আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে দান খয়রাত শুরু কর। অভাবমুক্ত থেকে যে দান সদকা করা হয় সেটাই উত্তম দান। যে ব্যক্তি অন্যের কাছে হাত না পেতে পবিত্র থাকতে চায়, মহান আল্লাহ তাকে তা থেকে পবিত্র রাখেন এবং যে স্বনির্ভর থাকতে চায় আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন।১৩৫৫। হাদীসঃ হযরত ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মিম্বরের উপর থাকা অবস্থায় সাদকা করা ও ভিক্ষা করা থেকে বেঁচে থাকা ও ভিক্ষা করা সম্পর্কে উল্লেখ করে বলেন, উপরের হাত নীচের হাত অপেক্ষা উত্তম। উপরের হাত দাতার, নীচের হাত হলো ভিক্ষুকের।
অনুচ্ছেদ নং ২০ঃ দান খয়রাত করে খোঁটা দেওয়া নিন্দনীয়। মহান আল্লাহ বলেন-
...............................
অর্থঃ যারা নিজেদের ধন সম্পদ আল্লাহর রাহে ব্যয় করে অতঃপর যা ব্যয় করে তার জন্য গ্রহীতাকে খোঁটা দেয় না, ক্লেশ প্রদান করে না, তাদের জন্য তাদের পালনকর্তার নিকট রয়েছে মহা পুরস্কার, তাদের কোনরুপ আশংকা বা ভয় ভীতির কারণ নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাকারা: আয়াত ২৬২)
অনুচ্ছেদ নং ২১ঃ দান-সদকা একদিনও বিলম্ব না করে দ্রুত দান করা।
১৩৫৬। হাদীসঃ হযরত উকবা ইবনে হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের নামায আদায় করে তাড়াতাড়ি ঘরে প্রবেশ করলেন। তারপর দেরী না করে বের হয়ে আসলেন। আমি বললাম বা তাঁকে বলা হলো, তখন তিনি বললেন, ঘরে সাদকার একখন্ড সোনা রেখে এসেছিলাম কিন্তু রাত পর্যন্ত তা ঘরে থাকা আমি পছন্দ করিনি। কাজেই তা বন্টন করে দিয়ে এলাম।
অনুচ্ছেদ নং ২২ঃ দান-খয়রাতের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা এবং এ ব্যাপারে সুপারিশ করা।
১৩৫৭। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ঈদের দিন নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হন এবং দু'রাকাআত নামায আদায় করেন। এর আগে পরে তিনি আর কোন নামায পড়েননি। অতঃপর তিনি মহিলাদেরকে লক্ষ্য করে ওয়াজ নসীহত করেন। এ সময় হযরত বেলাল (রাঃ) তাঁর সাথে ছিলেন। তারপর তিনি তাদেরকে দান সদকা করার আদেশ দেন। তখন মহিলারা তাদের হাতের চুড়ি ও কানবালা খুলে দিতে লাগল।
দানের জন্য সুপারিশকারীও সওয়াব পাবে
১৩৫৮। হাদীসঃ হযরত আবু মূসা (আশ'আরী) (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কেউ কিছু চাইলে বা প্রয়োজনীয় কিছু চাওয়া হলে তিনি বলতেন, তোমরা সুপারিশ কর সওয়াব পাবে, আল্লাহ যেন তাঁর ইচ্ছা তাঁর রাসূলের মুখে চূড়ান্ত করেন।১৩৫৯। হাদীসঃ হযরত আসমা বিনতে আবী বকর (রাঃ) বলেন, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, দান না করে সম্পদ অাঁকড়ে রেখো না। তা হলে তোমাদের ক্ষেত্রেও (না দিয়ে) আটকে রাখা হবে।
১৩৬০। হাদীসঃ হযরত আবদাহ ইবনে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (রাঃ) আসমা (রাঃ)-কে বলেছেন, দান না করে গুনে গুনে কোন কিছু সঞ্চয় করে রেখো না। তা হলে মহান আল্লাহও তোমাকে না দিয়ে জমা করে রাখবেন।
অনুচ্ছেদ নং ২৩ঃ সাধ্যানুসারে দান করা।
১৩৬১। হাদীসঃ হযরত আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি এক সময় রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি তাঁকে বললেন, তুমি সম্পদ জমা করে রেখো না, এরুপ করলে আল্লাহ তোমা থেকে তা আটকে রাখবেন। কাজেই সাধ্যানুসারে দান করতে থাক।
অনুচ্ছেদ নং ২৪ঃ সাদকা গুনাহ মিটিয়ে দেয়।
১৩৬২। হাদীসঃ হযরত হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) বলেন, তোমাদের মধ্যে কে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ফিতনা সম্পর্কিত হাদীস স্মরণ রেখেছে? হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি আরয করলাম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে বলেছেন, আমি ঠিক সেভাবেই তা স্মরণ রেখেছি। উমর (রাঃ) বললেন, তুমি [রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে] বড় দুঃসাহসী ছিলে, তিনি কীভাবে বলেছেন (বলত)? তিনি বলেন, আমি বললাম, (হাদীসটি হলোঃ) মানুষ পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি ও প্রতিবেশী নিয়ে ফিতনায় পতিত হবে আর নামায, সাদকা ও নেক কাজ সেই ফিতনা মিটিয়ে দিবে। সুলায়মান [অর্থাৎ আমাশ (রঃ] বলেন, আবু ওয়াইল কোন কোন সময় নামায, সাদকা এরপর সৎকাজ শব্দের স্থলে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ বলতেন। উমর (রাঃ) বলেন, আমি এ ধরনের ফিতনার কথা জানতে চাইনি, বরং যে ফিতনা সাগরের ঢেউয়ের ন্যায় প্রবল বেগে ছুটে আসবে। হুযায়ফা (রাঃ_ বলেন, আমি বললাম, আমীরুল মু'মিনীন! আপনার জীবনকালে ঐ ফিতনার কোন আংশকা নেই। ফিতনা ও আপনার মাঝে বন্ধ দরজা রয়েছে। উমর (রাঃ) প্রশ্ন করলেন, দরজা কি ভেঙ্গে দেওয়া হবে না কি খুলে দেওয়া হবে? হুযায়ফা (রাঃ) বলেন আমি বললাম, না, বরং ভেঙ্গে দেওয়া হবে। উমর (রা) বললেন, দরজা ভেঙ্গে দেওয়া হলে কোন দিন তা আর বন্ধ করা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, আমি বললাম সত্যই বলেছেন। আবু ওয়াইল (রাঃ) বলেন, দরজা বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? এ কথা হুযায়ফা (রাঃ) এর নিকট প্রশ্ন করে জানতে আমারা কেউ সাহসী হলাম না। তাই প্রশ্ন করতে মাসরুককে অনুরোধ করলাম। মাসরুক (রঃ) হুযায়ফা (রাঃ)-কে প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, দরজা হলেন উমর (রাঃ)। আমরা বললাম, আপনি দরজা বলে যাকে উদ্দেশ্য করেছেন, উমর (রাঃ) কি তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন? তিনি বললেন, হাঁ, আগামীকালের পূর্বে রাতের আগমণ যেমন সুচিন্তিত (তেমনি নিঃসন্দেহে তিনি তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন)। এর কারণ হলো, আমি তাঁকে এমন হাদীস বর্ণনা করেছি, যাতে কোন ভুল ছিল না।
অনুচ্ছেদ নং ২৫ঃ মুসলমান হলে মুশরিক অবস্থায় করা নেকের কাজও তৎসঙ্গে ধরা হয়।
১৩৬৩। হাদীসঃ হযরত হাকীম ইবনে হেযাম (রাঃ) বলেন, আমি একদা হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা অন্ধকার যুগে ধর্মকাজ মনে করে যে দান সদকা, দাসমুক্তি অথবা আত্মীয়তা রক্ষা ইত্যাদি করতাম, তার জন্য কোন প্রতিদান পাওয়া যাবে কি? হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অতীতের সমস্ত পুণ্য কাজ সহই তুমি মুসলমান হয়েছে। অর্থাৎ এ সব কিছুরই প্রতিদান পাওয়া যাবে।
অনুচ্ছেদ নং ২৬ঃ যে খাদেম কোন রুপ ক্ষতি না করে তার মনিবের আদেশে দান করে তার প্রতিদান প্রসঙ্গে।
১৩৬৪। হাদীসঃ হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি কোন মহিলা স্বামীর ক্ষতি সাধন না করে তার ঘর থেকেকিছু দান সদকা করে অথবা কাউকে কিছু খেতে দেয়, তবে সে তার দানের জন্য পুণ্য লাভ করবে এবং খাজাঞ্চীও অনুরুপ পুণ্য লাভ করবে। স্বামী এ জন্য পুণ্য লাভ করবে যেহেতু সে তা উপার্জন করেছে। আর স্ত্রী এ জন্য পাবে যেহেতু সে দান করেছে।
১৩৬৫। হাদীসঃ হযরত আবু মূসা (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে বিশ্বস্ত মুসলিম খাজাঞ্চী (আপন মালিক কর্তৃক) নির্দেশিত পরিমাণ সাদকার সবটুকু নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে সানন্দচিত্তে আদায় করে, কোন কোন সময় তিনি বাস্তবায়িত করে শব্দের স্থলে আদায় করে শব্দ বলেছেন, সে খাজাঞ্চী ও নির্দেশদাতার ন্যায় সাদকা দানকারী হিসাবে গণ্য।
অনুচ্ছেদ নং ২৭ঃ যে স্ত্রী ক্ষতিসাধন না করে স্বামীর ঘর থেকে কিছু দান খয়রাত করে কিংবা ক্ষেতে দেয় তার প্রতিদান প্রসঙ্গে।
১৩৬৬। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কোন স্ত্রীলোক স্বামীর ক্ষতি সাধন না করে স্বামীর ঘরের খাদ্য সামগ্রী থেকে কিছু দান করে , কিংবা যদি কোন স্ত্রী স্বামীর ঘর থেকে কাউকে কিছু খেতে দেয়। তবে সে এর সওয়াব পাবে এবং তার স্বামীও অনুরুপ সওয়াব পাবে, আর খাজাঞ্চীও অনুরুপ সওয়াব পাবে। স্বামী এ জন্য পাবে যে, যেহেতু সে উপার্জন করেছে। আর স্ত্রী এ জন্য পাবে যে, সে দান করেছে।
১৩৬৭। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাসাদের উদ্দেশ্য ব্যতীত স্ত্রী তার ঘরের খাদ্য সামগ্রী থেকে সাদকা করলে সে এর সওয়াব পাবে। উপার্জন করার কারণে স্বামীও সওয়াব পাবে এবং খাজাঞ্চীও সমপরিমাণ সওয়াব পাবে।
অনুচ্ছে নং ২৮ঃ দান-খয়রাতের সুফল। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
..................................
অর্থঃ যে ব্যক্তি দান করে এবং আল্লাহকে ভয় করে আর উত্তম ভিষয়কে সত্য বলে মানে, অচিরেই আমি তার জন্য (শান্তির) সহজ পথকে আরো সহজ করে দিব। কিন্তু যে ব্যক্তি কৃপণতা করে ও বেপরোয়া হয় এবং উক্ত বিষয়ে অসত্য আরেপ করে, সত্বরই আমি তার জন্য (শাস্তির পথকে সুগম করে দেব) (সুরা আলই-লাইল: ৫-১০)
ফেরেশতারা দোয়া করে হে আল্লহ! দানকারীকে পুরস্কৃত কর।
১৩৬৮। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতিদিন প্রত্যুষে যখন আল্লাহর বান্দারা ঘুম থেকে উঠে, তখন দু'জন ফেরেশতা আসমান থেকে নেমে আসে। তাদের একজন বলতে থাকে, হে আল্লাহ! দানশীল ব্যক্তিকে পুরস্কৃত কর। অপরজন বলতে থাকে, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস কর।অনুচ্ছেদ নং ২৯ঃ দানশীল ও কৃপণের উপমা।
১৩৬৯. হাদীসঃ হযর আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কৃপণ ও সাদকা দানকারীর দৃষ্টান্ত এমন দু'ব্যক্তির মত যাদের পরিধানে দুটি লোহার বর্ম রয়েছে। অপর সনদে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূল সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, কৃপণ ও সাদকা দানকারীর দৃষ্টান্ত এমন দু'ব্যক্তির মত, যাদের পরিধানে দুটি লোহার বর্ম রয়েছে যা তাদের বুক থেকে কাঁধ পর্যন্ত বিস্তৃত। দাতা ব্যক্তি যখন দান করে তখন বর্মটি তার সম্পূর্ণ দেহ পর্যন্ত প্রশস্ত হয়ে যায়। এমনকি হাতের আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত ঢেকে ফেলে ও (পায়ের পাতা পর্যন্ত ঝুলন্ত বর্ম) পদচিহ্ন মুছে ফেলে। আর কৃপণ ব্যক্তি যখন যৎসামান্যও দান করতে চায়, তখন যেন বর্মের প্রতিটি আংটা যথাস্থানে এঁটে যায়, সে তা প্রশস্ত করতে চেষ্টা করলেও তা প্রশস্ত হয় না।
১৩৭০. হযরত সাঈদ ইবনে বুরদার দাদা হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী করীম সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, প্রত্যেক মুসলমানেরই দান সদকা করা কর্তব্য। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যার কিছু নেই সে কি করবে? উত্তরে তিনি বললেন, তখন নিজ হাতে কাজ করবে। ফলে সে নিজেও লাভবান হবে এবং অপরকেও দান করতে পারবে। অতঃপর সাহাবাগণ বললেন, যদি সে তাতেও অক্ষম হয় তখন? হুযুর সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে সে অভাবী ও দুদশাগ্রস্তদের কাজে সাহায্য করবে। তারা বললেন, যদি সে তাতেও সক্ষম না হয়? উত্তরে তিনি বললেন, তবে সে যেন সৎ কাজ করে এবং অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকে। এটাই তার জন্য সদকা হিসাবে গণ্য হবে।
ছদকার গোশত হাদিয়া দেয়া
১৩৭১. হাদীসঃ হযরত উম্মে 'আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নুসায়বা নাম্নী আনসারী মহিলার জন্য একটি বকরী (সাদকা স্বরুপ) পাঠানো হলো। তিনি বকরীর কিছু অংশ আয়েশা (রাঃ)-কে (হাদিয়া স্বরুপ) পাঠিয়ে দিলেন। রাসূলাল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কাছে কিছু আছে কি? আয়েশা (রাঃ) বললেন, নুসায়রা কর্তৃক বকরীর গোশত ব্যতীত আর কিছুই নেই। তখন তিনি বললেন, তাই নিয়ে এসো, কেননা বকরী যথাস্থানে পৌছে গেছে (সাদকা গ্রহীতার নিকট)।
১৩৭২। হাদীসঃ হযরত আবু সা'ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচ যাওদ (পাঁচটি) উটের কম সংখ্যকের উপর যাকাত নেই, পাঁচ উকিয়া-এর কম পরিমাণ রুপার উপর যাকাত নেই এবং পাঁচ ওয়াসক-এর কম পরিমাণ উৎপন্ন দ্রব্যের উপর সাদকা (উশর/নিসফে উশর) নেই।
১৩৭৩। হাদীসঃ হযরত আবু সা'ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলাল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীসটি শুনেছি।
১৩৭৪। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবু বকর (রাঃ) আনাস (রাঃ)-এর কাছে আল্লাহ তাঁর রাসূল সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.