بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে
হৃদয়স্পর্শী হাদীস সম্পর্কিত বর্ণনা
৬০১০। হাদীসঃ"হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দু'টি নিয়ামত এমন আছে, যে দু'টোতে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তা হলো, সুস্থতা আর অবসরতা।
৬০১১। হাদীসঃ"হযরত আনাস (রাঃ) বলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হে আল্লাহ আখেরাতের জীবন ছাড়া প্রকৃত জীবন নেই। অতএব, আনসার ও মুহাজিরদেরকে কল্যাণ দান করুন।
৬০১২। হাদীসঃ হযরত সাহল ইবনে সা'দ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা খন্দকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি খনন করছিলেন এবং আমরা মাটি সরাচ্ছিলাম। তিনি অমাাদের দেখছিলেন। তখন তিনি বলছিলেন, আয় আল্লাহ! আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন। সুতরাং আপনি আনসার ও মুহাজিরদেরকে মাফ করে দিন।
৬০১৩। হাদীসঃ হযরত সাহল ইবনে সা'দ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, জান্নাতে একটি চাবুক রাখার পরিমাণ জায়গা দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তা থেকে উত্তম। আল্লাহর পথে এক সকাল সন্ধ্যা ব্যয় করা দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছু হতে উত্তম।
৬০১৪। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন, পৃথিবীতে মুসাফির বা পথিকের ন্যায় জীবন যাপন কর।
ইবনে ওমর (রাঃ) প্রায়শঃ বলতেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত বেঁচে থাকলে সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকার এবং সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকলে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেঁচে থাকার আশা পোষণ করো না। সুস্থতা থেকে রোগাক্রান্ত অবস্থার জন্য এবং জীবন থেকে মৃত্যুর জন্য কিছু নিয়ে যাও।
অনুচ্ছেদ নং ৪ঃ
আশা-আকাঙ্খা ও অতি আশা করা।
আশা-আকাঙ্খা ও অতি আশা করা।
আল্লাহ তাআলার বাণী-
অর্থঃ যাকে আগুন থেকে রেহাই দেয়া হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে অবশ্যই সফলকাম এবং দুনিয়ার জীবন তো ধোঁকার বস্তু। সূরা আল ইমরানঃ ১৮৫
অর্থঃ তাদেরকে ছেড়ে দেও, তারা খেয়ে নিক এবং ভোগ করে নিক এবং তাদেরকে ভুলিয়ে রাখুক আকাঙ্খা, তারা শীঘ্রই জানতে পারবে। সূরা হিজরঃ ৩
হযরত আলী (রাঃ) বলেন, দুনিয়া পেছনের দিকে চলছে এবং সামনের দিক থেকে আসছে, আর এ দুটি জায়গাই মানুষ একান্তভাবে কামনা করে, তবে তোমরা আখেরাতের কামনাকারীই হয়ে যাও, দুনিয়ার কামনাকারী হয়ো না। আজকের দিনে (দুনিয়ায়) কাজ আছে, হিসেব (গ্রহণ) নাই। আর কাল হিসেব (গ্রহণ) থাকবে কিন্তু কাজ থাকবে না।
৬০১৫। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন একটি চতুর্ভুজ অাঁকেন, তারপর এর মধ্যখান থেকে একটি রেখা (উপরের দিকে) বাড়িয়ে দেন, যা চতুর্ভুজটিকে লম্বালম্বিভাবে ছেদ করে। অতঃপর তার দু'পাশ দিয়ে মাঝের রেখার সাথে কয়েকটি ছোট রেখা মিলান এবং বলেন, এ লম্বা রেখাটি হল মানুষ। আর চতুর্ভুজটি হল তার বয়সের সীমা, যা তাকে ঘিরে আছে। এর বাইরের লাইনটি তার আকাঙ্খা, আর ছোট লাইনগুলো হলো তার বালা-মসিবত (যাতে সে পতিত হতে পারে)। যদি সে একটি বিপদ এড়িয়ে যায়, তবে পরবর্তী বিপদে পতিত হয়। যদি সে এও এড়িয়ে যায় তবে আরেকটিতে পতিত হয় (এমনিভাবে তার হায়াত শেষ হয়ে যায়, কিন্তু আশা আকাঙ্খা থেকেই যায়)।
৬০১৬। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি রেখা অাঁকেন। তারপর বললেন, এটি মানুষের আশা-আকাঙ্খা, আর এটা তার জীবনের নির্দিষ্ট মেয়াদ। সে যখন এ অবস্থায় পৌছে, তখন তার নিকটতম রেখা (অর্থাৎ মৃত্যু) তার দিকে এগিয়ে আসে।
অনুচ্ছেদ নং ৫ঃ যে ব্যক্তি ষাট বছর বয়সে পৌঁছেলো, তাকে আল্লাহ তাআলা ওযর পেশ করার সীমা অতিক্রম করিয়ে দিলেন (দীর্ঘ বয়স দিয়ে)। আল্লাহ তাআলার বাণীঃ
অর্থঃ আমি তোমাদেরকে কি প্রচুর বয়স দেইনি? এর মধ্যে যে শিক্ষা নিতে চাইবে সে ঠিকই উপদেশ গ্রহণ করবে। আর তোমাদের নিকট ভীতি প্রদর্শনকারী (বার্ধ্যকের চিহ্ন) ও এসেছিল। সূরা ফাতেরঃ ৩৯
৬০১৭। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা'আলা সে ব্যক্তির ওজর কবুল করবেন না, যার জীবনের মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছেন, এমন কি ষাট বছরের কোঠায় পৌছে দিয়েছেন।
৬০১৮। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন বৃদ্ধ লোকের অন্তর দু'টি কারণে যৌবনদৃপ্ত থাকে। ১। দুনিয়ার মহব্বত (অর্থাৎ ভোগবিলাস, ধন-সম্পদ ও এর মহব্বত) এবং ২। উচ্চাকাঙ্খা।
৬০১৯। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আদম সন্তানের বয়স বাড়ার সাথে সাথে দু'টি জিনিস বেড়ে যায়-১। সম্পদের মোহ ২। দীর্ঘ জীবনের আকাঙ্খা।
অনুচ্ছেদ নং ৬ঃ এমন কাজ যা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি চাওয়া হয়।
৬০২০। হাদীসঃ হযরত মাহমুদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইতবান ইবনে মালিক আনসারীকে, এরপর বনী সালিমের এক ব্যক্তিকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে আমার এখানে এলেন এবং বললেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে ব্যক্তি 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলবে এবং এ বিশ্বাস নিয়ে কিয়ামতের দিন হাজির হবে, আল্লাহ তা'আলা তার উপর জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।
৬০২১। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, আমি যখন আমার মু'মিন বান্দার কোন প্রিয়তম কিছু দুনিয়া থেকে তুলে নেই আর সে ধৈর্য ধারণ করে, আমার কাছে তার জন্য জান্নাত ব্যতীত অন্য কোন প্রতিদান নেই।
অনুচ্ছেদ নং ৭ঃ দুনিয়ার সৌন্দর্য ও তার প্রতি আকর্ষণ সম্পর্কে সতর্কতা।
৬০২২। হাদীসঃ হযরত আমর ইবনে আওফ (রাঃ), তিনি বনী আমর ইবনে লুওয়াই এর সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বদরের যুদ্ধেও শরীক ছিলেন। তিনি বর্ণনা করেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু উবায়দা ইবনে যাররাহকে জিযিয়া আদায় করার জন্য বাহরাইন পাঠালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহরাইনবাসীদের সাথে সন্ধি করেছিলেন এবং তাদের উপর আলা ইবনে হাযরামী (রাঃ)-কে আমীর নিযুক্ত করেছিলেন। আবু উবায়দা (রাঃ) বাহরাইন থেকে মালামাল নিয়ে আসেন, আনসারগণ তাঁর আগমনের সংবাদ শুনে ফজরের সালাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে শরীক হন। সালাত শেষে তাঁরা তাঁর সামনে এলেন। তিনি তাঁদের দেখে হেসে বললেন, আমি মনে করি তোমরা আবু উবায়দা (রাঃ)-এর আগমনের এবং তিনি যে মাল নিয়ে এসেছেন সে সংবাদ শুনেছ। তাঁরা বললেন, হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ। তিনি বললেন, তোমরা এ সুসংবাদ গ্রহণ করো এবং তোমরা আশা রেখো, যা তোমাদের খুশী করবে। তবে, আল্লাহর কসম। আমি তোমাদের উপর দরিদ্রতার আশংকা করছি না বরং আশংকা করছি যে, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের উপর যেমন দুনিয়া প্রশস্ত করে দেওয়া হয়েছিল, তেমনি তোমাদের উপরও দুনিয়া প্রশস্ত করে দেওয়া হবে। আর তোমরা তেমনি প্রতিযোগিতা করবে যেমন তারা প্রতিযোগিতা করেছিল এবং তোমাদের আখিরাত বিমুখ করে ফেলবে, যেমন তাদের জন্য বিমুখ করেছিল।
৬০২৩। হাদীসঃ হযরত উকবা ইবনে আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদিন রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন এবং উহুদের শহীদানের উপর সালাত আদায় করলেন, যেমন তিনি মূর্দার উপর সালাত আদায় করে থাকেন। তারপর মিম্বরে আরোহণ করে বললেন, আমি তোমাদের অগ্রণী। আমি তোমাদের সাক্ষী হব। আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আমি আমার 'হাওয' কে এখন দেখছি। আমাকে তো যমীনের ধনাগারের চাবিসমূহ অথবা যমীনের চাবিসমূহ দেয়া হয়েছে। আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের উপর এ আশংকা করছি না যে, তোমরা আমার পরে মুশরিক হয়ে যাবে, তবে আমি আশংকা করছি যে, তোমরা দুনিয়ার ধন-সম্পদে আসক্ত হয়ে যাবে।
৬০২৪। হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা'আলা তোমাদের জন্য যমীনের বরকত সমূহ প্রকাশিত করে দেবেন, আমি তোমাদের জন্য এ ব্যাপারেই সর্বাধিক আশংকা করছি। জিজ্ঞাসা করা হলো, যমীনের বরকতসমূহ কি? তিনি বললেন, দুনিয়ার জাঁকজমক। তখন এক ব্যক্তি তাঁর কাছে বললেন, ভাল কি মন্দ নিয়ে আসবে? তখন নবী সল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন, যদ্দরুন আমরা ধারণা করলাম যে, এখন তাঁর উপর ওহী নাযিল হচ্ছে। এরপর তিনি তাঁর কপাল থেকে ঘাম মুছে জিজ্ঞাসা করলেন, প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল, আমি । আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, যখন এটি প্রকাশ পেল, তখন আমরা প্রশ্নকারীর প্রশংসা করলাম। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ভাল একমাত্র ভালকেই বয়ে আনে। নিশ্চয়ই এ ধনদৌলত সবুজ শ্যামল সুমিষ্ট। অবশ্য বসন্ত যে সবজি উৎপাদন করে, তা ভক্ষণকারী পশুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় অথবা নিকটে করে দেয়, তবে প্রাণী পেট ভরে খেয়ে সূর্যমুখী হয়ে জাবার কাটে, মল-মূত্র ত্যাগ করে এবং পুনঃ খায় (এর অবস্থা ভিন্ন)। এ পৃথিবীর ধনদৌলত তদ্রুপ সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি তা সৎভাবে গ্রহণ করবে এবং সৎকাজে ব্যয় করবে, তা তার খুবই সাহায্যকারী হবে। আর যে তা অন্যায়ভাবে গ্রহণ করবে, তার অবস্থা হবে ঐ ব্যক্তির মত যে খেতে থাকে আর পরিতৃপ্ত হয় না।
৬০২৫। হাদীসঃ হযরত ইমরান ইবনে হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে আমার যমানার লোকেরাই সর্বোত্তম। তারপর এর পরবর্তী যমানার লোকেরা। তারপর এদের পরবর্তী যমানার লোকেরা। ইমরান (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি দু'বার কি তিনবার বললেন তা আমার স্মরণ নেই- তারপর এমন লোকদের আবির্ভাব হবে যে, তারা সাক্ষ্য দিবে, অথচ তাদের সাক্ষ্য চাওয়া হবে না। তারা খিয়ানতকারী হবে। তাদের আমানতদার মনে করা হবে না। তারা মানত মানবে তা পূরণ করবে না। তাদের দৈহিক হৃষ্টপুষ্টতা প্রকাশিত হবে।
৬০২৬। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, শ্রেষ্ঠ হল আমার যমানার লোক। তারপর উত্তম হল এদের পরবর্তী যমানার লোক, তারপর উত্তম হল এদের পরবর্তী যমানার লোক, তারপর এমন সব লোকের আবির্ভাব হবে, যাদের সাক্ষ্য তাদের কসমের পূর্বেই হবে, আর তাদের কসম তাদের সাক্ষ্যের পূর্বেই হবে।
৬০২৭। হাদীসঃ হযরত কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খাব্বাব (রাঃ) সাতবার তার পেটে উত্তপ্ত লোহার দাগ নেওয়ার পর আমি তাঁকে বলতে শুনেছি যে, যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু কামনা করা নিষিদ্ধ না করতেন, তাহলে আমি মৃত্যু কামনা করতাম। নিশ্চয়ই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবার অনেকেই (দুনিয়ার মোহে পতিত না হয়েই) চলে গিয়েছেন। অথচ দুনিয়া তাঁদের আখিরাতের কোনই ক্ষতিসাধন করতে পারেনি। আর আমরা দুনিয়ার ধনসম্পদ সংগ্রহ করেছি, যার জন্য মাটি ছাড়া আর কোন স্থান পাচ্ছি না।
৬০২৮। হাদীসঃ হযরত কায়স (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার খাব্বাব (রাঃ)-এর কাছে এলাম। তখন তিনি একটা দেয়াল তৈরি করছিলেন। তখন তিনি বললেন, আমাদের যে সাথীরা দুনিয়া থেকে চলে গেছেন, দুনিয়া তাদের কোন ক্ষতি করতে পারেনি। আর আমরা তাদের পর দুনিয়ার ধনসম্পদ সংগ্রহ করেছি, যেগুলোর জন্য আমরা মাটি ছাড়া আর কোন স্থান পাচ্ছি না।
৬০২৯। হাদীসঃ হযরত খাব্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হিজরত করেছিলাম। অতঃপর তিনি হিজরত সম্পকির্ত ঘটনা বলেন।
অনুচ্ছেদ নং ৮ঃ আল্লাহর বাণীঃ
"হে মানুষ! নিশ্চয়ই আল্লাহর ওয়াদা সত্য। সুতরাং তোমাদেরকে যেন দুনিয়ার জীবন ধোঁকা না দেয়---- আগুনের অধিবাসী।" সূরা ফাতিরঃ ৫-৬
৬০৩০। হাদীসঃ হযরত ইবনে আবান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উসমান ইবনে আফফান (রাঃ)-এর কাছে অযূর পানি নিয়ে এলাম। তখন তিনি মাকায়িদ-এ বসা ছিলেন। তিনি উত্তমরুপে অযূ করছেন। তারপর তিনি বললেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ স্থানেই দেখেছি, তিনি উত্তমরুপে অযূ করলেন, এরপর তিনি বললেন, যে ব্যক্তি এ অযূর মতো অযূ করবে, তারপর মসজিদে এসে দু'রাকাআত সালাত আদায় করে সেখানে বসবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। তিনি বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন যে, তোমরা ধোঁকায় পড়ো না।
অনুচ্ছেদ নং ৯ঃ সংলোকের প্রস্থান প্রসঙ্গে।
৬০৩১। হাদীসঃ হযরত মেরদাসুল আসলামী (রাঃ) বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সৎলোকেরা একের পর এক চলে যাবে (মৃত্যুবরণ করবে)। অতঃপর বাকীরা যব অথবা খেজুরের অব্যবহার্য অংশের মত পড়ে থাকবে। আল্লাহ তা'আলা তাদের প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ করবেন না।
অনুচ্ছেদ নং ১০ঃ ধন-সম্পদের পরীক্ষা থেকে বাঁচা প্রসঙ্গে। আল্লাহর বাণীঃ
অর্থঃ নিসন্দেহে তোমাদের ধন-সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি পরীক্ষার উপকরণ। সূরা তাগাবুনঃ ১৫
৬০৩২। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দীনার, দিরহাম, রেশমী চাদর (শাল), পশমী কাপড়ের (চাদর) গোলামরা ধ্বংস হোক। যাদের এসব দেয়া হলে সন্তুষ্ট থাকে আর দেয়া না হলে অসুন্তুষ্ট হয়।
৬০৩৩। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ দু'টি উপত্যকাও যদি আদম সন্তানকে দেয়া হয়, তবু সে তৃতীয়টির আকাঙ্খা করবে। আদম সন্তানের পেট মাটি ছাড়া আর কিছুতেই ভরবে না। যে আল্লাহর কাছে তওবা করবে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন।
৬০৩৪। হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, বনী আদমের জন্য যদি এক উপত্যকা পরিমাণ ধনসম্পদ থাকে, তা'হলে সে আরও ধন অর্জনের জন্য লালায়িত থাকবে। বনী আদমের লোভী চোখ মাটি ছাড়া আর কিছুই তৃপ্ত করতে পারবে না। তবে যে তওবা করবে আল্লাহ তা'আলা তার তওবা কবুল করবেন।
৬০৩৫। হাদীসঃ হযরত আব্বাস ইবনে সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে যোবায়র (রাঃ) যখন মক্কার মিম্বরে ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখন বলেন, হে মানুষ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আদম সন্তানকে যদি স্বর্ণে পরিপূর্ণ একটি উপত্যকাও দেয়া হয়, তবে সে দ্বিতীয় আর একটির জন্য আকাঙ্খিত থাকবে। আর দ্বিতীয় একটিও যদি দেয়া হয়, তবে সে তৃতীয় আর একটির জন্য আকাঙ্খিত থাকবে। আদম সনাতনের পেট মাটি ছাড়া আর কিছু দিয়ে ভরবে না। তবে যে তওবা করবে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন।
৬০৩৬। হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি আদম সন্তানের স্বর্ণপরিপূর্ণ একটা উপত্যকা থাকে, তথাপি সে তার জন্য দু'টি উপত্যকার কামনা করবে তার মুখ একমাত্র মাটি ছাড়া অন্য কিছুই ভরতে পারবে না। অবশ্য যে ব্যক্তি তওবা করে, আল্লাহ তা'আলা তার তওবা কবুল করেন। অন্য এক সূত্রে আনাস (রাঃ) উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমাদের ধারণা ছিল যে, সম্ভবত এটি কুরআনেরই আয়াত। অবশেষে (সূরায়ে তাকাসুর) নাযিল হলো।
অনুচ্ছেদ নং ১১ঃ নবী স.-এর বাণী, এ ধন-সম্পদ মিষ্ট-মধুর, শ্যামল-মনোরম এবং আল্লাহর বাণীঃ
অর্থঃ মনোরম করে দেয়া হয়েছে মানুষের জন্য নারী, সন্তান-সন্ততি ------ এগুলো হচ্ছে দুনিয়ার জীবনের (ক্ষণস্থায়ী) সম্পদ"-সূরা আলে ইমরানঃ১৪। ওমর (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য যা মনোরম করে সৃষ্টি করেছেন, সেজন্য আমরা খুশী না হয়ে পরি না। হে আল্লাহ! আপনার কাছে প্রার্থনা, যেন আমরা এগুলো ন্যায্যভাবেই ব্যবহার করতে পারি।
৬০৩৭। হাদীসঃ হযরত হাকীম ইবনে হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে মাল চাইলাম। তিনি আমাকে দিলেন। এরপর আমি আবার চাইলাম। তিনি আমাকে দিলেন। এরপর আমি আবারও চাইলাম। তিনি আমাকে দিলেন। এরপর আমি আবার চাইলাম। তিনি দিলেন। এরপর বললেন, এই ধন-সম্পদ সুফয়ানের বর্ণনামতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে হাকীম! অবশ্যই এই মাল শ্যামল-সবুজ ও সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি তা সন্তুষ্টিচিত্তের গ্রহণ করবে, তার জন্য এটাকে বরকতময় করে ওেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি তা লোভ সহকারে নেবে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে না। বরং সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে খায়, কিন্তু পেট ভরে না। আর (জেনে রেখো) উপরের (দাতার) হাত নিচের (গ্রহীতার) হাত থেকে শ্রেষ্ঠ।
অনুচ্ছেদ নং ১২ঃ যে ব্যক্তি তার নিজের মাল থেকে (ভাল কাজে) ব্যয় করবে, তা-ই তার নিজের জন্য (আখেরাতে)।
৬০৩৮। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে কে এমন আছে যে নিজের সম্পদ থেকে উত্তরাধিকারীদের সম্পদকে ভালবাসে? লোকেরা বলল, ইয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে নিজের সম্পদ থেকে উত্তরাধিকারীদের সম্পদকে বেশি ভালবাসে।
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে আল্লাহর পথে খরচ করবে তাই শুধু তার নিজের সম্পদ। আর যা সে দুনিয়াতে রেখে যাবে তা হবে উত্তরাধিকারীদের।
অনুচ্ছেদ নং ১৩ঃ ধনীরাই (যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না) প্রকৃতপক্ষে দরিদ্র। আল্লাহর বাণীঃ
অর্থঃ যে ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন ও তার সৌন্দর্য পেতে চায় ---- তারা যা কিছু করবে পর্যন্ত। সূরা হুদঃ ১৫-১৬ ।
৬০৩৯। হাদীসঃ হযরত আবু যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাতে আমি একবার বের হলাম। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একাকী চলতে দেখলাম, তাঁর সঙ্গে কোন লোক ছিল না। আমি মনে করলাম, তাঁর সঙ্গে কেউ চলুক হয়ত তিনি তা অপছন্দ করবেন। তাই আমি চাঁদের ছায়াতে তাঁর পেছনে পেছনে চলতে লাগলাম। তিনি পেছনের দিকে তাকিয়ে আমাকে দেখে ফেললেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ কে? আমি বললাম, আমি আবু যার। আল্লাহ তা'আলা আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গিত করুন। তিনি বললেন, ওহে আবু যার, এসো। আমি তাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ চললাম। তারপর তিনি বললেন, প্রাচুর্যের অধিকারীরাই কিয়ামতের দিন স্বল্পাধিকারী হবে। অবশ্য যাদের আল্লাহ সম্পদ দান করেন এবং তারা সম্পদকে তা ডানে, বামে, আগে ও পেছনে ব্যয় করে। আর মঙ্গলজনক কাজে তা লাগায়, (তারা ব্যতীত)। তারপর আমি আরও কিছুক্ষণ তাঁর সঙ্গে চলার পর তিনি আমাকে বললেন, তুমি এখানে বসে থাক। (এ কথা বলে) তিনি আমাকে চতুর্দিকে প্রস্তরঘেরা একটি খোলা জায়গায় বসিয়ে দিয়ে বললেন, আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি এখানেই বসে থেকো। তিনি বলেন, এরপর তিনি প্রস্তরময় প্রান্তরের দিকে চলে গেলেন। এমন কি তিনি আমার দৃষ্টির অগোচরে চলে গেলেন। এবং বেশ কিছুুক্ষণ অতিবাহিত হয়ে গেল। অতঃপর তিনি ফিরে আসার সময় আমি তাঁকে বলতে শুনলাম, যদিও সে চুরি করে, যুদিও সে যিনা করে । তারপর তিনি যখন ফিরে এলেন, তখন আমি আর ধৈর্য্য ধারণ করতে না পেয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে বাধ্য হলাম যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ আমাকে আপনার প্রতি কুরবান করুন। আপনি এই প্রস্তর প্রান্তরে কার সাথে কথা বললেন? কাউকে তো আপনার কথার উত্তর দিতে শুনলাম না। তখন তিনি বললেন, তিনি ছিলেন জিবরাঈল (রাঃ)। তিনি এই কংকরময় প্রান্তরে আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি বললেন, আপনি আপনার উম্মাতদের সুসংবাদ দেবেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ওহে জিবরাঈল! যদিও সে চুরি করে, আর যদিও সে যিনা করে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললামঃ যদিও সে চুরি করে আর যিনা করে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবার আমি বললামঃ যদিও সে চুরি করে আর যিনা করে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। যদি সে শরাবও পান করে।..... আবু দারদা থেকে বর্ণিত হাদীসে (একাথাও) আছে যে, যদি সে মৃত্যুকালে তাওবা করে এবং লা ইলাহা ইল্লাহু বলে,
অনুচ্ছেদ নং ১৪ঃ নবী (সাঃ)-এর বাণীঃ "আমার কাছে উহুদ পাহাড় সমান স্বর্ণ হোক, আমি তা পছন্দ করি না।"
৬০৪০। হাদীসঃ হযরত যায়দ ইবন ওহাব (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু যার (রাঃ) বলেন, একবার আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে মদীনায় কংকরময় প্রান্তরে হেঁটে চলছিলাম। ইতোমধ্যে উহুদ আমাদের সামনে এল। তখন তিনি বললেন, হে আবু যার! আমি বললাম, লাব্বাইকা, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, আমার নিকট এ উহুদ পরিমাণ সোনা হোক, আর তা ঋণ পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে রেখে দেওয়া ব্যতীত একটি দীনারও তা থেকে আমার কাছে জমা থাকুক আর এ অবস্থায় তিন দিন অতিবাহিত হোক তা আমাকে আনন্দিত করবে না। তবে যদি আমি তা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এভাবে তাকে ডান দিকে, বাম দিকে ও পেছনের দিকে বিতরণ করে দেই তা স্বতন্ত্র। এরপর তিনি চললেন। কিছুক্ষণ পর আবার বললেন, জেনে রেখো, প্রাচুর্যের অধিকারীরাই কিয়ামতের দিন স্বল্পাধিকারী হবে। অবশ্য যারা এভাবে, এভাবে, এভাবে ডানে, বামে ও পেছনে ব্যয় করবে, তারা এর ব্যতিক্রম। কিন্তু এরকম লোক অতি অল্পই। তারপর আমাকে বললেন, তুমি এখানে থাক। আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত এখানেই অবস্থান করো। অত"পর তিনি রাতের অন্ধকারে চলে গেলেন। এমনকি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। এরপর আমি একটা উচ্চ শব্দ শুনলাম। এতে আমি শংকিত হয়ে পড়লাম যে, সম্ভবত তিনি কোন শত্রুর সম্মুখীন হয়েছেন। এজন্য আমি তাঁর কাছেই যেতে চাইলাম। কিন্তু তখনই আমার স্মরণ হলো যে, তিনি আমাকে বলে গিয়েছেন যে, আমি না আসা পর্যন্ত তুমি আর কোথাও যেয়ো না। তাই আমি সেদিকে আর গেলাম না। ইতোমধ্যে তিনি ফিরে এলেন। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি একটা শব্দ শুনেছি? তিনি বললেন, ইনি জিবরাঈল (আঃ)। তিনি আমার কাছে এসে বললেন, আপনার উম্মাতের কেউ যদি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক না করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তবে সে জান্নাতে দাখিল হবে। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, যদি সে যিনা করে এবং যদি সে চুরি করে। তিনি বললেন, যদিও সে যিনা করে এবং যদিও চুরি করে।
৬০৪১। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমার নিকট ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকলেও তা থেকে কিছু আমার নিকট ঋণ পরিশোধের জন্য ছাড়া তিন দিন থাকুক, তা আমি পছন্দ করি না।
অনুচ্ছেদ নং ১৫ঃ অন্তরের সচ্ছলতাই (প্রকৃত) সচ্ছলতা। আল্লাহর বাণীঃ
অর্থঃ তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দিয়ে সাহায্য করে যাচ্ছি----- তারা নিজেদের এ কার্যকলাপ করতে থাকবে।"-সূরা মুমিনুনঃ৫৫-৬৩
৬০৪২। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ধনী হওয়ার অর্থ সম্পদের প্রাচুর্য হওয়া নং; বরং প্রকৃত সম্পদশালী সে, যার অন্তর সম্পদশালী।
অনুচ্ছেদ নং ১৬ দরিদ্রতার মর্যাদা।
৬০৪৪। হাদীসঃ হযরত আবু ওয়ায়িল (রঃ) বর্ণনা করেন, একবার আমরা খাব্বাব (রাঃ)-এর মুশ্রুষায় গেলাম। তখন তিনি বললেন, আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে (মদীনায়) হিজরত করেছি; যার সাওয়াব আল্লাহর কাছেই আমাদের প্রাপ্য। এরপর আমাদের মধ্যে কেউ কেউ এ সাওয়াব লাভ করার আগেই বিদায় নিয়েছেন। তন্মধ্যে মুসআব ইবনে উমায়র (রাঃ), তিনি তো উহুদের যুদ্ধে শহীদ হন। তিনি শুধু একখানা চাদর রেখে যান। আমরা কাফনের জন্য এটা দিয়ে তাঁর মাথা ঢাকলে পা বেড়িয়ে যেত এবং পা ঢাকলে মাথা বেরিয়ে পড়তো। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-আমাদের নির্দেশ দিলেন যে, তা দিয়ে মাথাটা ঢেকে দাও এবং পায়ের উপর কিছু 'ইযখির' ঘাস বিছিয়ে দাও। আর আমাদের মধ্যে এমনও অনেক রয়েছেন, যাদের ফল পাকছে এবং তারা তা সরবরাহ করছেন।
৬০৪৫। হাদীসঃ হযরত ইমরান ইবনে হোসাইন (রাঃ) বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি জান্নাতে খোঁজ করে দেখলাম, সেখানে অধিকাংশই দরিদ্র শ্রেণীর (যারা দুনিয়াতে গরীব ছিল)। আর দোযখে খোঁজ করে দেখলাম, তথাকার অধিকাংশই নারী সম্প্রদায়।
৬০৪৬। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো মৃত্যু পর্যন্ত দস্তরখানে বসে খাননি আর পাতলা রুটিও খাননি।
টিকাঃ আরবদের অভ্যাস ছিল, যারা ধনী শ্রেণীর তারা দস্তরখানে রকমারি উপাদেয় খাদ্য একত্রিত করে আহার করত।
৬০৪৭। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন অবস্থায় ইন্তিকাল করলেন যে, তখন কোন প্রাণী খেতে পারে আমার তাকের উপর এমন কিছু ছিল না। তবে আমার তাকে যৎসামান্য যব ছিল। এ থেকে (পরিমাপ না করে) বেশ কিছুদিন আমি খেলাম। একদা মেপে নিলাম, যদ্দরুন তা শেষ হয়ে যায়।
অনুচ্ছেদ নং ১৭ঃ নবী সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবাদের জীবন-জীবিকা এবং পার্থিব ভোগ-বিলাস পরিহার।
৬০৪৮। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলতেনঃ আল্লাহর কসম! যিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, আমি ক্ষুধার জ্বালায় আমার পেটকে মাটিতে রেখে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতাম। আর কোন সময় ক্ষুধার জ্বালায় আমার পেটে পাথর বেধে রাখতাম। একদিন আমি ক্ষুধার যন্ত্রণায় বাধ্য হয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণের বের হওয়ার পথে বসে থাকলাম। আবু বকর (রাঃ) যেতে লাগলে আমি কুরআনের একটা আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম এই উদ্দেশ্যে যে, তিনি তাহলে আমাকে পরিতৃপ্ত করে কিছু খাওয়াবেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন, কিছু করলেন না। কিছুক্ষণ পর উপর (রাঃ) যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে কুরআনের একটি আয়াত সম্বন্ধে প্রশ্ন করলাম। এ সময়ও আমি প্রশ্ন করলাম এ উদ্দেশ্যে যে, তিনি আমাকে পরিতৃপ্ত করে খাওয়াবেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন। আমার কোন ব্যবস্থা করলেন না। তার পরক্ষণে আবুল কাসিম সল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে দেখেই মুচকি হাসলেন এবং আমার প্রাণে কি অস্থিরতা বিরাজমান এং আমার চেহারার অবস্থা থেকে তিনি তা অাঁচ করতে পারলেন। তারপর বললেন, হে আবু হির! আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি হাজির আছি। তিনি বললেন, তুমি আমার সঙ্গে চল। এ বলে তিনি চললেন, আমিও তাঁর অনুসরণ করলাম। তিনি ঘরে ঢুকবার অনুমতি চাইলেন এবং আমাকে ঢুকবার অনুমতি দিলেন। তারপর তিনি ঘরে প্রবেশ করে, একটি পেয়ালার মধ্যে কিছু পরিমাণ দুধ পেলেন। তিনি বললেন, এ দুধ কোথা থেকে এসেছে? তাঁরা বললেন, এটা আপনাকে অমুক পুরুষ অথবা অমুক মহিলা হাদিয়া দিয়েছেন। তখন তিনি বললেন, হে আবু হির! আমি বললাম, লাব্বাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ! তুমি সুফফাবাসীদের কাছে গিয়ে তাদেরকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো। রাবী বলেন, সুফফাবাসীরা ইসলামের মেহমান ছিলেন। তাদের কোন পরিবার ছিল না এবং তাদের কোন সম্পদ ছিল না এবং তাদের কারো উপর নির্ভরশীল হওয়ারও সুযোগ ছিল না। যখন কোন সাদাকা আসত তখন তিনি তা তাদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। তিনি এর থেকে কিছুই গ্রহণ করতেন না। আর যখন কোন হাদিয়া আসত, তখন তার কিছু অংশ তাদেরকে দিয়ে দিতেন এবং এর থেকে নিজেও কিছু রাখতেন। এর মধ্যে তাদেরকে শরীক করতেন। এ আদেশ শুনে আমার মনে কিছুটা হতাশা এলা। মনে মনে ভাবলাম যে, এ সামান্য দুধ দ্বারা সুফফাবাসীদের কি হবে? এ সামান্য দুধ আমার জন্যই যথেষ্ট হতো। এটা পান করে আমি শরীরে কিছুটা শক্তি পেতাম। এরপর যখন তাঁরা এসে গেলেন, তখন তিনি আমকে নির্দেশ দিলেন যে, আমিই যেন তা তাঁদেরকে দেই, আর আমার আশা রইল না যে, এ দুধ থেকে আমি কিছু পাব। কিন্তু আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশ না মেনে কোন উপায় নেই। তাই তাঁদের কাছে গিয়ে তাঁদেরকে ডেকে আনলাম। তাঁরা এসে ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলে তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। তাঁরা এসে ঘরে আসন গ্রহণ করলেন। তিনি বললেন, হে আবু হির! আমি বললাম, আমি হাজির ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, তুমি পেয়ালাটি নাও আর তাদেরকে দাও। আমি পেয়ালা নিয়ে একজনকে দিলাম। তিনিও পরিতৃপ্ত হয়ে পান করে পেয়ালাটি আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। আমি আরেকজনকে পেয়ালাটি দিলাম। তিনিও পরিতৃপ্ত হয়ে পান করে পেয়ালাটি আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। আমি আরেকজনকে পেয়ালাটি দিলাম। তিনিও পরিতৃপ্ত হয়ে পান করে পেয়ালাটি আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। এমন কি আমি এরুপে দিতি দিতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌছলাম। তাঁরা সবাই তৃপ্ত হয়েছিলেন। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে নিয়ে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। আর বললেন, হে আবু হির! আমি বললাম, আমি হাজির, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, এখন তো আমি আর তুমি আছি। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি ঠিক বলছেন। তিনি বললেন, এখন তুমি বসে পান কর। তখন আমি বসে কিছু পান করলাম। তিনি বললেন, তুমি আরও পান কর। আমি আরও পান করলাম। তিনি বারবার আমাকে পান করার নির্দেশ দিতে লাগলেন। এমন কি আমি বলতে বাধ্য হলাম যে, আর না। যে সত্তা আপনাকে সত্য ধর্মসহ পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম। (আমার পেটে) আর পান করার মত জায়গা আমি পাচ্ছি না। তিনি বললেন, তাহলে আমাকে দাও। আমি পেয়ালাটি তাঁকে দিয়ে দিলাম। তিনি আলহামদুলিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ বলে বাকীটা পান করলেন।
৬০৪৯। হাদীসঃ হযরত কায়স (রঃ) বর্ণনা করেন, আমি সা'দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আমিই আরবের সর্বপ্রথম ব্যক্তি, আল্লাহর পথে যে তীর নিক্ষেপ করেছে। আমরা যুদ্ধকালীন নিজেদেরকে যে দুবলাহ গাছের পাতা ও বাবলা ছাড়া খাবারের কিছুই ছিল না, অবস্থায় দেখেছি। কেউ কেউ বকরীর পায়খানার ন্যায় পায়খান করতেন। যা ছিল সম্পূর্ণ শুকনো । অথচ এখন আবার বনূ আসাদ (গোত্র) এসে ইসলামের উপর চলার জন্য আমাকে তিরস্খার করছে। এখন আমি যেন শংকিত আমার সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের জীবন যাপন পদ্ধতি
৬০৫০। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আসার পর তাঁর বংশধরগণ গমের রুটি পরিতৃপ্ত হয়ে উপর্যুপরি তিন দিন পর্যন্ত খাননি। আর এ অবস্থায়ই তার ইন্তেকাল হয়ে গেল।
৬০৫১। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবার পরিজন দৈনিক দু'বেলা আহারের এক বেলা খোরমা খেয়েই কাটিয়ে দিতেন।
৬০৪১। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমার নিকট ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকলেও তা থেকে কিছু আমার নিকট ঋণ পরিশোধের জন্য ছাড়া তিন দিন থাকুক, তা আমি পছন্দ করি না।
অনুচ্ছেদ নং ১৫ঃ অন্তরের সচ্ছলতাই (প্রকৃত) সচ্ছলতা। আল্লাহর বাণীঃ
অর্থঃ তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দিয়ে সাহায্য করে যাচ্ছি----- তারা নিজেদের এ কার্যকলাপ করতে থাকবে।"-সূরা মুমিনুনঃ৫৫-৬৩
৬০৪২। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ধনী হওয়ার অর্থ সম্পদের প্রাচুর্য হওয়া নং; বরং প্রকৃত সম্পদশালী সে, যার অন্তর সম্পদশালী।
অনুচ্ছেদ নং ১৬ দরিদ্রতার মর্যাদা।
৬০৪৩। হাদীসঃ হযরত সাহল ইবনে সা'দ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাশে দিয়ে গেলেন তখন তিনি তার কাছে বসা একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার মন্তব্য কি? তিনি বললেন, এ ব্যক্তি তো একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোক। আল্লাহর কমস! তিনি এমন মর্যাদাবান যে কোথাও বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা গ্রহণযোগ্য। আর কারো জন্য সুপারিশ করলে তা গ্রহণযোগ্য। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আরেক ব্যক্তি অতিক্রম করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন এ ব্যক্তি সম্বন্ধে তোমার অভিমত কি? তিনি বলেলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এ ব্যক্তি তো এক গরীব মুসলমান। এ এমন ব্যক্তি যে, যদি সে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তা গ্রহণযোগ্য হবে না। আর সে যদি কারো সুপারিশ করে, তবে তা কবুলও হবে না। এবং যদি সে কোন কথা বলে, তবে তা শোনার যোগ্য হয় না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ দুনিয়া ভরা আগের ব্যক্তি থেকে এ ব্যক্তি উত্তম।
৬০৪৪। হাদীসঃ হযরত আবু ওয়ায়িল (রঃ) বর্ণনা করেন, একবার আমরা খাব্বাব (রাঃ)-এর মুশ্রুষায় গেলাম। তখন তিনি বললেন, আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে (মদীনায়) হিজরত করেছি; যার সাওয়াব আল্লাহর কাছেই আমাদের প্রাপ্য। এরপর আমাদের মধ্যে কেউ কেউ এ সাওয়াব লাভ করার আগেই বিদায় নিয়েছেন। তন্মধ্যে মুসআব ইবনে উমায়র (রাঃ), তিনি তো উহুদের যুদ্ধে শহীদ হন। তিনি শুধু একখানা চাদর রেখে যান। আমরা কাফনের জন্য এটা দিয়ে তাঁর মাথা ঢাকলে পা বেড়িয়ে যেত এবং পা ঢাকলে মাথা বেরিয়ে পড়তো। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-আমাদের নির্দেশ দিলেন যে, তা দিয়ে মাথাটা ঢেকে দাও এবং পায়ের উপর কিছু 'ইযখির' ঘাস বিছিয়ে দাও। আর আমাদের মধ্যে এমনও অনেক রয়েছেন, যাদের ফল পাকছে এবং তারা তা সরবরাহ করছেন।
৬০৪৫। হাদীসঃ হযরত ইমরান ইবনে হোসাইন (রাঃ) বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি জান্নাতে খোঁজ করে দেখলাম, সেখানে অধিকাংশই দরিদ্র শ্রেণীর (যারা দুনিয়াতে গরীব ছিল)। আর দোযখে খোঁজ করে দেখলাম, তথাকার অধিকাংশই নারী সম্প্রদায়।
৬০৪৬। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো মৃত্যু পর্যন্ত দস্তরখানে বসে খাননি আর পাতলা রুটিও খাননি।
টিকাঃ আরবদের অভ্যাস ছিল, যারা ধনী শ্রেণীর তারা দস্তরখানে রকমারি উপাদেয় খাদ্য একত্রিত করে আহার করত।
৬০৪৭। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন অবস্থায় ইন্তিকাল করলেন যে, তখন কোন প্রাণী খেতে পারে আমার তাকের উপর এমন কিছু ছিল না। তবে আমার তাকে যৎসামান্য যব ছিল। এ থেকে (পরিমাপ না করে) বেশ কিছুদিন আমি খেলাম। একদা মেপে নিলাম, যদ্দরুন তা শেষ হয়ে যায়।
অনুচ্ছেদ নং ১৭ঃ নবী সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবাদের জীবন-জীবিকা এবং পার্থিব ভোগ-বিলাস পরিহার।
৬০৪৮। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলতেনঃ আল্লাহর কসম! যিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, আমি ক্ষুধার জ্বালায় আমার পেটকে মাটিতে রেখে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতাম। আর কোন সময় ক্ষুধার জ্বালায় আমার পেটে পাথর বেধে রাখতাম। একদিন আমি ক্ষুধার যন্ত্রণায় বাধ্য হয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণের বের হওয়ার পথে বসে থাকলাম। আবু বকর (রাঃ) যেতে লাগলে আমি কুরআনের একটা আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম এই উদ্দেশ্যে যে, তিনি তাহলে আমাকে পরিতৃপ্ত করে কিছু খাওয়াবেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন, কিছু করলেন না। কিছুক্ষণ পর উপর (রাঃ) যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে কুরআনের একটি আয়াত সম্বন্ধে প্রশ্ন করলাম। এ সময়ও আমি প্রশ্ন করলাম এ উদ্দেশ্যে যে, তিনি আমাকে পরিতৃপ্ত করে খাওয়াবেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন। আমার কোন ব্যবস্থা করলেন না। তার পরক্ষণে আবুল কাসিম সল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে দেখেই মুচকি হাসলেন এবং আমার প্রাণে কি অস্থিরতা বিরাজমান এং আমার চেহারার অবস্থা থেকে তিনি তা অাঁচ করতে পারলেন। তারপর বললেন, হে আবু হির! আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি হাজির আছি। তিনি বললেন, তুমি আমার সঙ্গে চল। এ বলে তিনি চললেন, আমিও তাঁর অনুসরণ করলাম। তিনি ঘরে ঢুকবার অনুমতি চাইলেন এবং আমাকে ঢুকবার অনুমতি দিলেন। তারপর তিনি ঘরে প্রবেশ করে, একটি পেয়ালার মধ্যে কিছু পরিমাণ দুধ পেলেন। তিনি বললেন, এ দুধ কোথা থেকে এসেছে? তাঁরা বললেন, এটা আপনাকে অমুক পুরুষ অথবা অমুক মহিলা হাদিয়া দিয়েছেন। তখন তিনি বললেন, হে আবু হির! আমি বললাম, লাব্বাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ! তুমি সুফফাবাসীদের কাছে গিয়ে তাদেরকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো। রাবী বলেন, সুফফাবাসীরা ইসলামের মেহমান ছিলেন। তাদের কোন পরিবার ছিল না এবং তাদের কোন সম্পদ ছিল না এবং তাদের কারো উপর নির্ভরশীল হওয়ারও সুযোগ ছিল না। যখন কোন সাদাকা আসত তখন তিনি তা তাদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। তিনি এর থেকে কিছুই গ্রহণ করতেন না। আর যখন কোন হাদিয়া আসত, তখন তার কিছু অংশ তাদেরকে দিয়ে দিতেন এবং এর থেকে নিজেও কিছু রাখতেন। এর মধ্যে তাদেরকে শরীক করতেন। এ আদেশ শুনে আমার মনে কিছুটা হতাশা এলা। মনে মনে ভাবলাম যে, এ সামান্য দুধ দ্বারা সুফফাবাসীদের কি হবে? এ সামান্য দুধ আমার জন্যই যথেষ্ট হতো। এটা পান করে আমি শরীরে কিছুটা শক্তি পেতাম। এরপর যখন তাঁরা এসে গেলেন, তখন তিনি আমকে নির্দেশ দিলেন যে, আমিই যেন তা তাঁদেরকে দেই, আর আমার আশা রইল না যে, এ দুধ থেকে আমি কিছু পাব। কিন্তু আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশ না মেনে কোন উপায় নেই। তাই তাঁদের কাছে গিয়ে তাঁদেরকে ডেকে আনলাম। তাঁরা এসে ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলে তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। তাঁরা এসে ঘরে আসন গ্রহণ করলেন। তিনি বললেন, হে আবু হির! আমি বললাম, আমি হাজির ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, তুমি পেয়ালাটি নাও আর তাদেরকে দাও। আমি পেয়ালা নিয়ে একজনকে দিলাম। তিনিও পরিতৃপ্ত হয়ে পান করে পেয়ালাটি আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। আমি আরেকজনকে পেয়ালাটি দিলাম। তিনিও পরিতৃপ্ত হয়ে পান করে পেয়ালাটি আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। আমি আরেকজনকে পেয়ালাটি দিলাম। তিনিও পরিতৃপ্ত হয়ে পান করে পেয়ালাটি আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। এমন কি আমি এরুপে দিতি দিতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌছলাম। তাঁরা সবাই তৃপ্ত হয়েছিলেন। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে নিয়ে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। আর বললেন, হে আবু হির! আমি বললাম, আমি হাজির, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, এখন তো আমি আর তুমি আছি। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি ঠিক বলছেন। তিনি বললেন, এখন তুমি বসে পান কর। তখন আমি বসে কিছু পান করলাম। তিনি বললেন, তুমি আরও পান কর। আমি আরও পান করলাম। তিনি বারবার আমাকে পান করার নির্দেশ দিতে লাগলেন। এমন কি আমি বলতে বাধ্য হলাম যে, আর না। যে সত্তা আপনাকে সত্য ধর্মসহ পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম। (আমার পেটে) আর পান করার মত জায়গা আমি পাচ্ছি না। তিনি বললেন, তাহলে আমাকে দাও। আমি পেয়ালাটি তাঁকে দিয়ে দিলাম। তিনি আলহামদুলিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ বলে বাকীটা পান করলেন।
৬০৪৯। হাদীসঃ হযরত কায়স (রঃ) বর্ণনা করেন, আমি সা'দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আমিই আরবের সর্বপ্রথম ব্যক্তি, আল্লাহর পথে যে তীর নিক্ষেপ করেছে। আমরা যুদ্ধকালীন নিজেদেরকে যে দুবলাহ গাছের পাতা ও বাবলা ছাড়া খাবারের কিছুই ছিল না, অবস্থায় দেখেছি। কেউ কেউ বকরীর পায়খানার ন্যায় পায়খান করতেন। যা ছিল সম্পূর্ণ শুকনো । অথচ এখন আবার বনূ আসাদ (গোত্র) এসে ইসলামের উপর চলার জন্য আমাকে তিরস্খার করছে। এখন আমি যেন শংকিত আমার সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের জীবন যাপন পদ্ধতি
৬০৫০। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আসার পর তাঁর বংশধরগণ গমের রুটি পরিতৃপ্ত হয়ে উপর্যুপরি তিন দিন পর্যন্ত খাননি। আর এ অবস্থায়ই তার ইন্তেকাল হয়ে গেল।
৬০৫১। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবার পরিজন দৈনিক দু'বেলা আহারের এক বেলা খোরমা খেয়েই কাটিয়ে দিতেন।
৬০৫২। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিছানা চামড়ার তৈরি আর ভেতরে ছিল খেজুর গাছের ছাল।
৬০৫৩। হাদীসঃ হযরত কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আনাস ইবনে মালিক (রাঃ)-এর কাছে এমন অবস্থায় যেতাম যে, তাঁর বাবুর্চি (মেহমান আপ্যায়নের জন্য) দন্ডায়মান। আনাস (রাঃ) বলতেন, আপনারা খান। আমি জানি না যে, নবী রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকালের সময় পর্যন্ত একটা চাপাতি রুটিও চোখে দেখেছেন। আর তিনি কখনও একটি ভুনা ছাগল নিজ চোখে দেখেননি।
৬০৫৪। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, কোন কোন সময় মাসেও আমাদের ঘরে (খাবার তৈরির জন্য) আগুন জ্বলত না। আমরা শুধু খোরমা এবং পানি খেয়েই কাটিয়ে দিতাম। কখনো কিছু গোশত দেয়া হত, যা আমরা রান্না করে খেতাম।
৬০৫৫। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি একবার উরওয়া (রাঃ)-কে বললেন, বোন পুত্র! আমরা দু'মাসের মধ্যে তিনবার নয়া চাঁদ দেখতাম। কিন্তু এর মধ্যে আল্লাহর রাসূলের গৃহগুলোতে (রান্নার জন্য) আগুন জ্বালানো হতো না। আমি বললাম, আপনাদের জীবন ধারণের কি ছিল? তিনি বললেন, কালো দু'টি জিনিস। খেজুর আর পানি। অবশ্য রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতিবেশী কয়েকজন আনসার সাহাবীর অনেকগুলো দুগ্ধবতী প্রাণী ছিল। তারা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা দিত। তখন আমরা তা পান করে নিতাম।
৬০৫৬। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করতেনঃ ইয়া আল্লাহ! মুহাম্মদ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবারকে প্রয়োজনীয় জীবিকা দান করুন।
অনুচ্ছেদ নং ১৮ঃ মধ্যমপন্থা অবলম্বন এবং নিয়মিত কাজ করা।
৬০৫৭। হাদীসঃ হযরত মাসরুক (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কাজ বেশি পছন্দ করতেন? তিনি বলেন, যে কাজ সার্বক্ষণিক ও নিয়মিতভাবে করা হত। আমি জিজ্ঞেস করলাম, রাতের বেলা তিনি কখন জাগতেন? বললেন, মোরগের ডাক শুনে (শেষ তৃতীয়াংশে) জাগতেন।
৬০৫৮। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সে কাজই সবচেয়ে পছন্দনীয় ছিল, যা সার্বক্ষণিক ও নিয়মিত করা হত।
৬০৫৯। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কস্মিনকালেও তোমাদের কাউকে নিজের আমল নাজাত দেবে না। তাঁরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনাকেও না? তিনি বললেন, আমাকেও না। তবে আল্লাহ তা'আলা আমাকে রহমত দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। তোমরা যথারীতি আমল কর, ঘনিষ্ঠ হও। তোমরা সকালে, বিকালে এবং রাতের শেষাংশে আল্লাহর কাজ কর। মধ্যম পন্থা অবলম্বন। অাঁকড়ে ধর মধ্যমপন্থাকে, অবশ্যই সফলকাম হবে।
৬০৬০। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা ঠিকভাবে ও মধ্যম পন্থায় নেক আমল করতে থাক। আর জেনে রাখ যে, তোমাদের কাউকে তার আমল বেহেশতে নেবে না এবং আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় আমল হলো, যা নিয়মিত করা হয়। তা অল্পই হোক না কেন।
৬০৬১। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করা হল, কোন কাজ আল্লাহর নিকট পছন্দনীয়? তিনি বললেন, যে কাজ সার্বক্ষণিক ও নিয়মিত করা হয়, যদি তা (পরিমাণে) কমও হয়। তিনি আরো বলেন, তোমরা সাধ্যের বাইরে কোন কাজ নিজের উপর টেনে নিও না।
৬০৬২। হাদীসঃ হযরত আলকামা (রঃ) বর্ণনা করেন, আমি মুসলিম-জননী আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, হে উম্মুল মু'মিনীন! নবী সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমল কি রকম ছিল? তিনি কি জোন আমলের জন্য কোন দিন নির্দিষ্ট করতেন? তিি নবললেন, না। তাঁর আমল ছিল নিয়মিত। নবী সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন সক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তোমাদের কেউ কি সে সক্ষমতার অধিকারী?
৬০৬৩। হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) নবী সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বললেন, তোমরা ঠিক ঠিকভাবে মধ্যম পন্থায় আমল করতে থাক। আর সুসংবাদ নাও। কিন্তু (জেনে রেখো) কারো আমল তাকে জান্নাতে নেবে না। তাঁরা বললেন, তবে কি আপনাকেও না? তিনি বললেন, আমাকেও না। তবে আল্লাহ তা'আলা আমাকে মাগফিরাত ও রহমতে ঢেকে রেখেছেন।
৬০৬৪। হাদীসঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। এরপর মিম্বরে উঠে মসজিদের কিবলার দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন, যখন আমি তোমাদের নিয়ে সালাত আদায় করছিলাম, তখন এ প্রাচীরের সম্মুখে আমাকে জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য দেখানো হলো। আমি আজকের মত ভাল ও মন্দ আর কোন দিন দেখিনি। এ শেষ কথাটি তিনি দু'বার বললেন।
অনুচ্ছেদ নং ১৯ঃ (আল্লাহর) ভয়ের সাথে (মাগফিরাতের) আশা। সুফিয়ান র. বলেন, কুরআনে এর চেয়ে কঠিন আয়াত আমার কাছে আর নেই।
অর্থঃ তোমরা কোন জিনিসের ওপর (প্রতিষ্ঠিত) নও। যতক্ষণ না তোমরা তাওরাত, ইঞ্জিল, আর যা আল্লাহর নিকট থেকে অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রতিষ্ঠিত না করো।" সূরা আল মায়েদাঃ ৬৮
৬০৬৫। হাদীসঃ
৬০৬৫। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। আল্লাহ তা'আলা রহমত সৃষ্টির দিন একশটি রহমত সৃষ্টি করেছেন। নিরানব্বইটি তাঁর কাছে রেখে দিয়েছেন এবং একটি রহমত সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে ছেড়ে দিয়েছেন। যদি কাফির আল্লাহর কাছে যে পূর্ণ রহমত আছে, সে সম্পর্কে জানতে পারে, তাহলে সে জান্নাতের ব্যাপারে নিরাশ হবে না। আর কোন মুমিন যদি আল্লাহর কাছে শাস্তি সম্পর্কে জানে তা হলে সে জাহান্নামের অগ্নি থেকে নিজেকে বে-পরওয়া হবে না।
অনুচ্ছেদ নং ২০ঃ আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ থেকে আত্মসংযম। আল্লাহর বাণীঃ
অর্থঃ যারা আত্মসংযমী দৈর্যশীলদেরকে বেবহিসাব প্রতিদান দেয়া হবে"-সূরা আয যুমারঃ ১০। ওমর রা. বলেন, যখন আমরা আত্মসংযমী ছিলাম, আমাদের তখনকার জীবনই সুন্দর ছিল।
৬০৬৬। হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণনা করেন, একবার আনসারদের কিছু সংখ্যক লোক নবী সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে সাহায্য চাইলেন। তাদের যে যা চাইলেন, তিনি তা-ই দিলেন, এমন কি তাঁর কাছে যা কিছু ছিল তা শেষ হয়ে গেল। যখন তাঁর দু'হাত দিয়ে দান করার পর সবকিছু শেষ হয়ে গেল, তখন তিনি বললেন, আমার কাছে যা কিছু মালামাল থাকে, তা থেকে আমি কিছুই সঞ্চয় করি না। অবশ্য যে, নিজেকে মুখাপেক্ষিতামুক্ত রাখতে চায়, আল্লাহ তাকে তাই রাখেন; আর যে ব্যক্তি দৈর্য ধারণ করে তিতিন তাকে ধৈর্যশীলি রাখেন। আর যে ব্যক্তি পরনির্ভর হতে চায় না, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। সবর অপেক্ষা বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কস্মিনকালেও তোমাদেরকে দান করা হবে না।
৬০৬৭। হাদীসঃ হযরত মুগীরা বিন শো'বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত (নফল) নামায পড়তেন। এমন কিতাঁর পদদ্বয় ফুলে যেত। তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাস করা হলে তিনি বললেন, আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?
অনুচ্ছেদ নং ২১ঃ আল্লাহর বাণী-
অর্থঃ আর যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।" সূরা আত তালাকঃ৩।
৬০৬৮। হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমার উম্মতের সত্তর হাজার লোক বিনা হিসাবে বেহেশতে যাবে। তারা হবে সে সব লোক, যারা গায়রুল্লাহর নাম নিয়ে ঝাড় ফুঁ করে না, ফাল গ্রহণ করে না এবং সব ব্রাপারেই আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে।
অনুচ্ছেদ নং ২২ঃ অর্থহীন কথাবার্তা নিয়ে বাদ-প্রতিবাদ করার অনিষ্ট
৬০৬৯। হাদীসঃ হযরত ওয়াররাদ (রঃ) থেকে বর্ণিত যিনি হযরত মুগীরা ইবনে শো
বার ব্যক্তিগত করণিক ছিলেন, তিনি বলেন, হযরত মোআবিয়া (রাঃ) হযরত মুগীরা ইবনে শো'বা (রাঃ)-এর নিকট এ বলে একখানা চিঠি লেখলেন, এমন একটি হাদীস আমাকে লেখে পাঠান, যা আপনি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শুনেছেন। অতঃপর মুগীরা (রাঃ) লেখে পাঠালেন, আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রত্যেক নামাযের পর পড়তে শুনেছি-
আল্লাহ চাড়া কোন মা'বুদ নেই। তিনি এক অদ্বিতীয়, তাঁর কোন শরীক নেই। সার্বভৌমত্ব ও সকল প্রশংসা একমাত্র তাঁরই। তিনি সবকিছুর উপর শক্তিমান।
আর তিনি (অর্থহীন কথাবার্তা নিয়ে) বাদ-প্রতিবাদ করতে নিষেধ করেছেন। এছাড়া তিনি অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করা, সম্পদের অপচয় করা, যা দেয়া দরকার তা না দেয়া, অন্যের কাছে কিছু চাওয়া, মাতা-পিতার নাফরমানী করা, কন্যা সন্তানকে জীবিত প্রোথিত করা (ইত্যাদি) নিষেধ করেছেন।
অনুচ্ছেদ নং ২৩ঃ সংযতবাক হওয়া। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং আখেরাতের ওপর ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অন্যথা চুপ থাকে। আল্লাহর বাণী-
অর্থঃ মানুষ যা কিচুই উচ্চারণ করে তার জন্য তৎপর প্রহরী তার কাছেই রয়েছে। সূরা আল কাহাফঃ১৮
৬০৭০। হাদীসঃ হযরত সাহল ইবনে সা'দ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার দু'চোয়ালের মাঝকান (অর্থাৎ জবানের) এবং দু'পায়ের মাঝখানে (অর্থাৎ লজ্জাস্থান)-এর জামানত আমাকে দিবে, আমি তার জান্নাতের জামিন।
৬০৭১। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে নয়তো নীরব থাকে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। আর সে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে।
৭০৭২। হাদীসঃ হযরত আবু শুরাইহ আল খুযারী (রাঃ) থেকে বণির্ত, তিনি বলেন, আমার দু'কান নবী সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছে এবং আমার অন্তর তা সংরক্ষণ করেছে, মেহমানদারী তিন দিন, সৌজন্যসহ। জিজ্ঞাসা করা হলো, সৌজন্য কি? তিনি বললেন, এক দিন ও এক রাত (বিশেষ আতিথেয়তা)। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার মেহমানের সম্মান করে আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে।
৬০৭৩। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলথে মুনেছি আল্লাহর বান্দা কোন কোন সময় (পরিণাম চিন্তা ছাড়াই) এমন কথা বলে ফেলে,যার ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অথচ (ইতিপূর্বে) সে তার থেকে পূর্ব-পশ্চিম পরিমাণ দূরত্বে ছিল।
৬০৭৪। হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয় বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টির কোন কথা উচ্চারণ করে অথচ সে কথার গুরুত্ব সম্পর্কে চেতনা নেই। কিন্তু এ কথার দ্বারা আল্লাহ তার মর্যাদা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেন। আবার বান্দার আল্লাহর অসন্তুষ্টির কোন কথা বলে ফেলে যার পরিণতি সম্পর্কে সে সচেতন নয়, অথচ সে-কথার কারণে সে জাহান্নামে পতিত হবে।
অনুচ্ছেদ নং ২৪ঃ মহামহিম আল্লাহর ভয়ে কান্নাকাটি করা।
৬০৭৫। হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সাত প্রকার লোককে আল্লাহ তা'আলা তাঁর আরশেস ছায়া দ্বারা আচ্ছাদিত করবেন। তাদের মধ্যে এক প্রকার লোক হল, যারা আল্লাহর কথা স্মরণ করে এবং ভয়ে তাদের চোখ দু'টি অশ্রু বর্ষণ করে।
অনুচ্ছেদ নং ২৫ঃ মহামহিম আল্লাহকে ভয় করা।
৬০৭৬। হাদীসঃ হযরত হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের এক ব্যক্তি ছিল, যে তার আমল সম্পর্কে তুচ্ছ ধারণা পোষণ করত। সে তার পরিবারের লোকদেরকে বলল, যখন আমি মারা যাবো, তখন তোমরা আমাকে নিয়ে (জ্বালিয়ে দিবে) অতঃপর প্রচন্গ গরমের দিনে আমার ভস্মগুলো সমুদ্রে ছিটিয়ে দেবে। তার পরিবারের লোকেরা সে অনুযায়ী কাজ করলো। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা সেই ভস্ম একত্রিত করে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি যা করলেন, তা কেন করলে? সে বললো, একমাত্র আপনার ভীতিই আমাকে এটিতে বাধ্য করেছে। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা তাকে ক্ষমা করে দিলেন।
৬০৭৭। হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ কুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সল্লাল্লা-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ব অথবা তোমাদের পূর্ব যুগের এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন। আল্লাহ তা'আলা তাকে ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি দান করেছিলেন। যখন সে মৃত্যুর সম্মুখীন হলো তখন সে তার সন্তানদেরকে জিজ্ঞাসা করলো, আমি তোমাদের কেমন পিতা ছিলাম? তারা বলল উত্তম। সে বললো, যে আল্লাহর কাছে কোন সম্পদ সঞ্চয় রাখেনি, সে আল্লাহর কাছে হাজির হলে তিনি তাকে শাস্তি দেবেন। তোমরা লক্ষ্য রাখবে, আমি মারা গেলে আমাকে জ্বালিয়ে দেবে। আমি যখন কয়লা হয়ে যাব তাকে ছাই ভষ্ম করে ফেলবে। অতঃপর যখন প্রবল তাবাত বইবে, তখন তোমরা তা তাতে উড়িয়ে দেবে। এভাবে সে তাদের নিকট থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নিল। রাবী বলেন, আমার প্রতিপালকের কসম! তারা যথাযথ তাই বরল। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বললেন, অস্তিত্বে এস যাও। হঠাৎ এক ব্যক্তিরুপে দণ্ডদায়মান হলো। তখন তিনি বললেন, হে আমার বান্দা! তুমি এমনটি কেন করলে? সে বললো, তা একমাত্র আপনার ভয়ে। তখন তিনি এর প্রতিদাে দয়া করে তাকে ক্ষমা করে দিলেন।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.